পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৬৬-[৫৫] আবূ যার গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হলাম। অতঃপর আবূ যার(রাঃ) দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করলেন। তিনি এতটুকু পর্যন্ত বললেন যে, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাকে উপদেশ দিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমি তোমাকে আল্লাহভীতির উপদেশ দিচ্ছি। কেননা এটা তোমার সকল কাজের অধিক সৌন্দর্যের কারণ হবে। আমি বললামঃ আরো কিছু উপদেশ দিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কুরআন পাঠ ও আল্লাহর স্মরণকে তোমার জন্য আবশ্যিক করে নাও। কেননা এটা তোমার জন্য আকাশে স্মরণযোগ্য এবং জমিনে আলোকস্বরূপ। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আরো কিছু উপদেশ দিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ দীর্ঘ সময় নীরব থাকো। কেননা নিরবতা শয়তানকে দূরীভূত করে এবং তোমার দীনী কাজে তোমার জন্য সহায়ক হয়। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ আরো কিছু উপদেশ দিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ অধিক হাসি থেকে নিরাপদে থাকো। কেননা এটা অন্তরকে মৃত করে ফেলে এবং মুখমণ্ডল ের জ্যোতিকে দূর করে দেয়। আমি বললামঃ আরো কিছু বলুন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তিক্ত হলেও ন্যায় কথা বলবে। আমি অনুরোধ করলামঃ আরো উপদেশ দিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহর রাস্তায় কাজ করতে গিয়ে কোন নিন্দুকের তিরস্কারকে ভয় করো না। আমি বললামঃ আমাকে আরো কিছু বলুন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যখন তোমার অন্তরে অপরের কুৎসা রটানোর ইচ্ছা হয়, তখন এই ভেবে তোমার ইচ্ছাকে থামিয়ে দেবে যে, তোমার মধ্যে ত্রুটি রয়েছে।[1]
وَعَن أبي ذرٍّ قَالَ: دَخَلْتُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرَ الْحَدِيثَ بِطُولِهِ إِلَى أَنْ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَوْصِنِي قَالَ: «أُوصِيكَ بِتَقْوَى اللَّهِ فَإِنَّهُ أَزْيَنُ لِأَمْرِكَ كُلِّهِ» قُلْتُ: زِدْنِي قَالَ: «عَلَيْكَ بِتِلَاوَةِ الْقُرْآنِ وَذِكْرِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ فَإِنَّهُ ذِكْرٌ لَكَ فِي السَّمَاءِ وَنُورٌ لَكَ فِي الْأَرْضِ» . قُلْتُ: زِدْنِي. قَالَ: «عَلَيْكَ بِطُولِ الصَّمْتِ فَإِنَّهُ مَطْرَدَةٌ لِلشَّيْطَانِ وَعَوْنٌ لَكَ عَلَى أَمْرِ دِينِكَ» قُلْتُ: زِدْنِي. قَالَ: «إِيَّاكَ والضحك فَإِنَّهُ يُمِيتُ الْقَلْبَ وَيَذْهَبُ بِنُورِ الْوَجْهِ» قُلْتُ: زِدْنِي. قَالَ: قُلِ الْحَقَّ وَإِنْ كَانَ مُرًّا . قُلْتُ: زِدْنِي. قَالَ: «لَا تَخَفْ فِي اللَّهِ لومة لائم» . قلت: زِدْنِي. لِيَحْجُزْكَ عَنِ النَّاسِ مَا تَعْلَمُ مِنْ نَفْسِكَ
ব্যাখ্যাঃ (قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ أَوْصِنِي قَالَ : أُوصِيكَ بِتَقْوَى اللهِ) আবূ যার (রাঃ) বলেনঃ আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বললেনঃ আমি তোমাকে তাকওয়া তথা আল্লাহকে ভয় করার উপদেশ দিচ্ছি। এটা পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকলের জন্য উপদেশ। যেমন- আল্লাহ বলেনঃ
وَلَقَدْ وَصَّيْنَا الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَإِيَّاكُمْ أَنِ اتَّقُوا اللهَ
‘‘এবং অবশ্যই আমি তোমাদের আগে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদেরকে আর তোমাদেরকেও আদেশ দিয়েছি যে, আল্লাহকে ভয় কর।’’ (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ১৩১)
(فَإِنَّهٗ أَزْيَنُ لِأَمْرِكَ) কেননা তা (তাকওয়া) তোমার দীনের সমস্ত বিষয় বিশ্বাস-কথা-কাজ সবকিছুকে সুসজ্জিত করে তোলে। যেহেতু তাকওয়া প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সর্বপ্রকার শির্ক বর্জন করা, কাবীরাহ্ ও সগীরাহ্ গুনাহ থেকে বিরত থাকা, সন্দেহমূলক বিষয় পরিহার, কুপ্রবৃত্তি থেকে দূরে থাকা, যাবতীয় অন্যায় পরিহার করতে সহায়তা করে।
(قُلْتُ: زِدْنِي) ‘‘আমি বললামঃ সৎকাজ বেশী করে সম্পাদন করতে আমাকে আরো উপদেশ দিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (عَلَيْكَ بِتِلَاوَةِ الْقُرْآنِ) তুমি বেশী করে কুরআন তিলাওয়াত করবে, কেননা তা তাকওয়া অবলম্বনের সহায়ক ‘আমল এবং উচ্চ মর্যাদা লাভের উপায় এবং বেশী করে আল্লাহর জিকর করবে। কেননা কুরআন তিলাওয়াত এবং জিকর- এ দু’টি ‘আমল আসমানে তোমাকে নাম স্মরণ করবে এবং পৃথিবীতে তোমার জন্য আলো হবে।
(قُلْتُ: زِدْنِي) আমি বললাম, আরো উপদেশ দিন যাতে আপনার উল্লেখিত ‘আমলগুলো সম্পাদন করতে সহায়ক হয়। তিনি বললেন- (عَلَيْكَ بِطُولِ الصَّمْتِ) তোমাকে নিরবতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা তা শয়তানকে তাড়াতে সহায়তা করবে এবং তোমার দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে সহায়তা করবে। (قُلْتُ: زِدْنِي) আমি বললাম, আমাকে আরো কিছু উপদেশ দিন। তিনি বললেন, إِيَّاكَ وَكَثْرَةَ الضَّحِكِ তুমি অধিক হাসি থেকে দূরে থাকবে। কেননা অধিক হাস্য অন্তরকে মেরে ফেলে তথা অন্তরে কঠোরতা আনয়ন করে যার দরুন উদাসীনতা সৃষ্টি করে। ফলে আল্লাহর স্মরণ থেকে অন্তর উদাসীন হলে অন্তর মরে যায়।
(وَيَذْهَبُ بِنُورِ الْوَجْهِ) এবং মুখের জ্যোতি চলে যায়। তথা মুখের উজ্জ্বলতা ও সৌন্দর্য দূর হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ (سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِمْ مِنْ أَثَرِ السُّجُودِ) ‘‘...তাদেরকে তুমি দেখবে রুকূ‘ ও সাজদায় অবনত অবস্থায়...’’- (সূরাহ্ আল ফাতহ ৪৮ : ২৯)।
(قُلْتُ: زِدْنِي) আমি বললাম, আমাকে আরো উপদেশ দিন। তিনি বললেন, (قُلِ الْحَقَّ) তুমি সত্য কথা বলবে যদিও সত্য কথা অন্তরে অথবা বাতিলপন্থীদের নিকট তিক্ত মনে হয় তথা বিস্বাদ সৃষ্টি করে।
(قُلْتُ: زِدْنِي) আমি বললাম, আমাকে আরো কিছু উপদেশ দিন। তিনি বললেন, (لَا تَخَفْ فِي اللهِ لومة لائم) তুমি আল্লাহর জন্য এবং তার ‘ইবাদাতের ক্ষেত্রে কারো তিরস্কারকে ভয় করবে না। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে সকলের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে- আল্লাহর পথে অটুট থাকা এবং মানুষের প্রশংসা অথবা তিরস্কারকে উপেক্ষা করে চলা।
যেমনটি আল্লাহ বলেছেনঃ
(وَتَبَتَّلْ إِلَيْهِ تَبْتِيلًا) ‘‘...এবং একাগ্রচিত্তে তাঁর প্রতি মগ্ন হও’’- (সূরাহ্ আল মুয্যাম্মিল ৭৩ : ৮)।
(قُلْتُ: زِدْنِي) আমি বললাম, আমাকে আরো কিছু বলুন। তিনি বললেন, তুমি তোমাকে মানুষের দোষত্রুটি অন্বেষণ থেকে দূরে রাখবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)