পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম
৪৬৬২-[৩৫] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন আল্লাহ তা’আলা আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করলেন এবং তাঁর মধ্যে প্রাণ দান করলেন, তখন আদম (আ.) হাঁচি দিলেন এবং আল্লাহ তা’আলার অনুমতিক্রমে তাঁর প্রশংসা করে ’’আলহামদুলিল্লা-হ’’ বললেন। আল্লাহ তা’আলা তাঁকে বললেনঃ হে আদম! আল্লাহ তোমাকে রহম করুন। এখন তুমি ঐ উপবেশনকারী মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাদের) কাছে যাও, যাঁরা বসে আছে। আর তাঁদেরকে বলো ’’আসসালা-মু ’আলায়কুম’’ (তোমাদের প্রতি আল্লাহ শান্তি বর্ষণ করুন)। তিনি গিয়ে বললেনঃ ’’আসসালা-মু ’আলায়কুম’’। মালায়িকাহ্ জবাবে বললেনঃ ’’আলায়কাস্ সালা-মু ওয়া রহমাতুল্ল-হ’’ (তোমার প্রতি আল্লাহর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক)। অতঃপর তিনি তাঁর প্রতিপালকের নিকট ফিরে আসলেন। আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ এটাই তোমার এবং তোমার সন্তানদের পারস্পরিক অভিবাদন। তখন আল্লাহ তা’আলা তাঁকে নিজের দু’হাত দেখিয়ে বললেনঃ তুমি এ দু’টির যে কোন একটি পছন্দ করো। তখন তাঁর উভয় হাত মুষ্টিবদ্ধ ছিল। আদম (আ.) বললেনঃ হে প্রভু! আমি তোমার ডান হাতকে পছন্দ করলাম। আল্লাহ তা’আলার উভয় হাতই ডান হাত এবং কল্যাণকর। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাঁর হাত খুলতেই দেখা গেল, তাতে আদম (আ.)-এর সন্তানগণ রয়েছে।
তখন আদম (আ.) বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক! এরা কারা? আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ এরা তোমার সন্তান। তখন দেখা গেল, প্রত্যেক ব্যক্তির আয়ুষ্কাল তাঁর দু’চোখের মাঝে অর্থাৎ- কপালে লিপিবদ্ধ আছে। তন্মধ্যে উজ্জ্বলতর এক ব্যক্তি রয়েছে। আদম (আ.) জিজ্ঞেস করলেনঃ হে প্রভু! এ ব্যক্তি কে? আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ এ ব্যক্তি তোমার অন্যতম সন্তান ’’দাঊদ’’। তাঁর আয়ু আমি চল্লিশ বছর লিখেছি। আদম (আ.) বললেনঃ ’’হে প্রভু! তাঁর আয়ু বাড়িয়ে দিন’’। আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ আমি তো তাঁর এতটুকু আয়ুষ্কাল লিখে রেখেছি। আদম (আ.) জিজ্ঞেস করলেনঃ হে রব্! আমি আমার আয়ু হতে ষাট বছর দান করলাম। আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ ’’ঠিক আছে, তুমি আর তোমার সন্তান দাঊদ জানে’’ অর্থাৎ- এটা তোমার ব্যাপার। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ অতঃপর আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছানুযায়ী আদম (আ.) জান্নাতে বসবাস করেন। অতঃপর তাঁকে জান্নাত হতে বের করে দেয়া হলো। আদম (আ.) নিজের বয়সের বছরগুলো গণনা করতে লাগলেন, (যখন তাঁর আয়ুষ্কাল নয়শ’ চল্লিশ বছর শেষ হয়ে গেল) তখন তাঁর কাছে মৃত্যুর মালাক (ফেরেশতা) আসলেন। আদম (আ.) তাঁকে বললেনঃ তুমি তো আগে এসেছ, আমার জন্য এক হাজার বছর আয়ুষ্কাল লেখা রয়েছে। মৃত্যুর মালাক বললেন, জ্বি-হ্যাঁ, কিন্তু আপনি আপনার সন্তান দাঊদ (আ.)-কে ষাট বছর আয়ু দান করেছেন। তখন আদম (আ.) অস্বীকার করলেন। এ কারণে তাঁর সন্তানগণও অস্বীকার করে থাকেন এবং আদম (আ.) ভুলে গেছেন, তাই তাঁর সন্তানগণও ভুলে যায়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সেদিন হতে লিখে রাখতে এবং সাক্ষী রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (তিরমিযী)[1]
عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ وَنَفَخَ فِيهِ الرُّوحَ عَطَسَ فَقَالَ: الْحَمْدُ لِلَّهِ فَحَمِدَ اللَّهَ بِإِذْنِهِ فَقَالَ لَهُ رَبُّهُ: يَرْحَمُكَ اللَّهُ يَا آدَمَ اذْهَبْ إِلَى أُولَئِكَ الْمَلَائِكَةِ إِلَى مَلَأٍ مِنْهُمْ جُلُوسٍ فَقُلِ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ. فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ. قَالُوا: عَلَيْكَ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ. ثُمَّ رَجَعَ إِلَى رَبِّهِ فَقَالَ: إِنَّ هَذِهِ تَحِيَّتُكَ وَتَحِيَّةُ بَنِيكَ بَيْنَهُمْ. فَقَالَ لَهُ اللَّهُ وَيَدَاهُ مَقْبُوضَتَانِ: اخْتَرْ أَيَّتَهُمَا شِئْتَ؟ فَقَالَ: اخْتَرْتُ يَمِينَ رَبِّي وَكِلْتَا يَدَيْ رَبِّي يَمِينٌ مُبَارَكَةٌ ثُمَّ بَسَطَهَا فَإِذَا فِيهَا آدَمُ وَذُرِّيَّتُهُ فَقَالَ: أَيْ رَبِّ مَا هَؤُلَاءِ؟ قَالَ: هَؤُلَاءِ ذُرِّيَّتُكَ فَإِذَا كُلُّ إِنْسَانٍ مَكْتُوبٌ عُمْرُهُ بَين عَيْنَيْهِ فَإِذا فيهم رجلٌ أضوؤهُم - أَوْ مِنْ أَضْوَئِهِمْ - قَالَ: يَا رَبِّ مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا ابْنُكَ دَاوُدُ وَقَدْ كَتَبْتُ لَهُ عُمْرَهُ أَرْبَعِينَ سَنَةً. قَالَ: يَا رَبِّ زِدْ فِي عُمْرِهِ. قَالَ: ذَلِكَ الَّذِي كَتَبْتُ لَهُ. قَالَ: أَيْ رَبِّ فَإِنِّي قَدْ جَعَلْتُ لَهُ مِنْ عُمْرِي سِتِّينَ سَنَةً. قَالَ: أَنْتَ وَذَاكَ. قَالَ: ثُمَّ سَكَنَ الْجَنَّةَ مَا شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ أُهْبِطَ مِنْهَا وَكَانَ آدَمُ يَعُدُّ لِنَفْسِهِ فَأَتَاهُ مَلَكُ الْمَوْتِ فَقَالَ لَهُ آدَمُ: قَدْ عَجَّلْتَ قَدْ كَتَبَ لِي أَلْفَ سَنَةٍ. قَالَ: بَلَى وَلَكِنَّكَ جَعَلْتَ لِابْنِكَ دَاوُدَ سِتِّينَ سَنَةً فَجَحَدَ فَجَحَدَتْ ذُرِّيَّتُهُ وَنَسِيَ فَنَسِيَتْ ذُرِّيَّتُهُ قَالَ: «فَمن يؤمئذ أَمر بِالْكتاب وَالشُّهُود» رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যাঃ এ হাদীস থেকে প্রমাণ হয় যে, আল্লাহ তা‘আলার দু’টো হাত রয়েছে। আর এ দু’টি সিফাত হলো আল্লাহ তা‘আলার সত্তার সিফাত বা গুণাবলীর অন্যতম। আল্লাহর সিফাতকে অস্বীকারকারী জাহামিয়া ও মু‘আত্তিলাহ্ এবং মুশাব্বিহগণ বলেন, এ দু’টো অঙ্গ নয়। যারা বলে দুই হাতের অর্থ হলো কুদরত তাদের মত খন্ডন হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, ‘আলিমগণ এ মর্মে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, কুদরত একটি হয়। এর দ্বিবচন হওয়া সঠিক নয়। যাদের নিকটে আল্লাহর সিফাতের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়, তাদের নিকটে তার সিফাত বিদ্যমান থাকে। আর যারা তার সিফাতকে অস্বীকার করে তাদের নিকটে তার কুদরতও থাকে না। দুই হাত থেকে উদ্দেশ্য যে, কুদরত নয় এটার প্রমাণ আরেকটি ঘটনা থেকে পাওয়া যায়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা ইবলীসকে বললেন, আমি যাকে নিজ দুই হাত দ্বারা তৈরি করেছি তাকে সিজদা্ করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? এখান থেকে যেমন একটি বিষয়ের স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায় যা সাজদাকে ওয়াজিব করে। আর তা হলো নিজ হাতে বানানো। অতএব যদি এখানে দুই হাত থেকে উদ্দেশ্য কুদরত হতো তাহলে শয়তান বলত যে, আমার ওপরে আদামের কিসের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে? আমি এবং সে (আদম) দু’জনই তো কুদরত দ্বারা তৈরি হয়েছি। (মিশকাতুল মাসাবীহ- বোম্বায় ছাপা, উর্দূ তরজমা, ৪র্থ খন্ড, ১৮ পৃষ্ঠা)
কারী (রহিমাহুমাল্লাহ) বলেনঃ সালাফদের আল্লাহর গুণাবলীর উপমা দানকে অস্বীকার করা ও তা মেনে নিয়ে পবিত্রতা সাব্যস্ত করা তাওহীদের জন্য অধিকতর নিরাপদ।
‘‘তুহফা’’ গ্রন্থকার বলেনঃ এটাই বিশুদ্ধতম পন্থা। এ হাদীস দ্বারা প্রমাণ হয় যে, সব মানুষের নূর থাকবে। তবে তাদের নূর হবে ভিন্ন ভিন্ন।
(وَقَدْ كَتَبْتُ لَهٗ عُمْرَهٗ) অর্থাৎ আমি তাকে আমার বয়স থেকে দিলাম। এর আসল অর্থ হলো বয়স বৃদ্ধির জন্য আল্লাহর নিকটে আবেদন করা। কারণ আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত এটা কেউ করতে পারে না। এ হাদীসে ষাট বছর প্রদানের কথা উল্লেখ থাকলেও অন্য বর্ণনায় চল্লিশ বছর দেয়ার কথা উল্লেখ হয়েছে। ভিন্ন এ হাদীসের সমাধানে কোন হাদীস বিশারদ বলেন যে, প্রথমে তিনি চল্লিশ বছর দিতে চেয়েছিলেন। পরে আরো বিশ বছর দিয়ে ষাট বছর হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আ.)-কে প্রথমে ত্রিশ দিনের ওয়া‘দা দিয়ে আবার চল্লিশ দিন পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন। (সূরাহ্ আল আ‘রাফ ৭ : ১৪২)
অথবা এটা বর্ণনাকারীর পক্ষ থেকে সন্দেহ হয়ে গেছে। তাই তিনি একবার চল্লিশ বছর বলেছেন এবং অন্যবার ষাট বছর বলেছেন। অথবা কখনো চল্লিশ বছরকে আসল বয়স এবং ষাট বছরকে দান বলেছেন। অথবা কখনো ষাট বছরকে আসল বয়স এবং চল্লিশ বছরকে দান বলেছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
এর উত্তরে আল্লাহর হ্যাঁ-সূচক জবাব দানের দু’টি অর্থ হতে পারে। এক. البراءة অর্থাৎ তার আবেদনকে খারিজ করে দেয়া। দুই. الاجابة অর্থাৎ তার আবেদনকে গ্রহণ করা। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৮ম খন্ড, হাঃ ৩৩৬৮)
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম
৪৬৬৩-[৩৬] আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মহিলাদের এক সমাবেশের নিকট দিয়ে অতিক্রম করলেন এবং আমাদেরকে সালাম করলেন। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ ও দারিমী)[1]
وَعَن أسماءَ
بنت يزيدَ قَالَتْ: مَرَّ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي نِسْوَةٍ فَسَلَّمَ عَلَيْنَا. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه والدارمي
ব্যাখ্যাঃ হুসায়মী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ দূরে থাকায় ফিতনামুক্তি, অতএব যে নিজের ওপরে নিরাপত্তার আস্থা রাখবে সে সালাম দিবে। অন্যথায় চুপ থাকায় নিরাপদ। ইবনু বাত্ত্বল বলেনঃ যখন ফিতনাহ্ থেকে নিরাপদ থাকবে তখন পুরুষকে মহিলাদের এবং মহিলাদেরকে পুরুষদের সালাম দেয়া জায়িয।
মালিকীরা এর পথকে বন্ধ করার জন্য যুবতী ও বৃদ্ধাদের মাঝে পার্থক্য করেছেন।
কুফীরা বলেনঃ মহিলাদের জন্য পুরুষদের সালাম দেয়া নিষেধ। কারণ তারা আযান, ইকামাত ও উচ্চৈঃস্বরে কুরআন তিলাওয়াত করতে নিষিদ্ধ। তবে মাহরামগণ-মাহরামদেরকে সালাম দিতে পারবে। যেমনটি ফাতহুল বারীতে উল্লেখ হয়েছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫১৯৫)
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম
৪৬৬৪-[৩৭] তুফায়ল ইবনু উবাই ইবনু কা’ব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি (তুফায়ল) ইবনু ’উমার (রাঃ)-এর কাছে যাতায়াত করতেন এবং তাঁর সাথে সকাল বেলা বাজারে যেতেন। তিনি বললেনঃ যখন আমরা সকাল বেলা বাজারে যেতাম, তখন ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ)-এর নিয়ম ছিল, তিনি যখনই কোন সাধারণ দোকানদার, বিক্রেতা, মিসকীন এবং অন্য কোন মানুষের নিকট দিয়ে গমন করতেন, তখন তাদেরকে সালাম করতেন। বর্ণনাকারী তুফায়ল বলেন, আমার পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী একদিন আমি ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ)-এর নিকট গেলাম, তখন তিনি আমাকে সাথে করে বাজারের দিকে যেতে শুরু করলেন। আমি তাঁকে বললামঃ আপনি কেনা-বেচার জন্য কোথাও দাঁড়ান না, কোন জিনিসের দাম জিজ্ঞেস করেন না, কোন সওদা করেন না, আর বাজারের কোন মাজলিসেও বসেন না। সুতরাং আপনি আমার সাথে এখানে বসুন, আমরা হাদীস আলোচনা করি। তিনি (তুফায়ল) বলেন, ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) আমাকে বললেনঃ হে প্রকাণ্ড পেটওয়ালা! [তুফায়লের পেট তুলনামূলক কিছুটা বড় ছিল] আমরা সকালবেলা শুধু সালাম করতে যাই। আমরা যাকেই সাক্ষাতে পাই, তাকেই সালাম করি। (মালিক ও বায়হাক্বী শু’আবুল ঈমানে)[1]
وَعَن الطفيلِ
بن أُبي بن كعبٍ: أَنَّهُ كَانَ يَأْتِي ابْنَ عُمَرَ فَيَغْدُو مَعَهُ إِلَى السُّوقِ. قَالَ فَإِذَا غَدَوْنَا إِلَى السُّوقِ لَمْ يَمُرَّ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ عَلَى سَقَّاطٍ وَلَا عَلَى صَاحِبِ بَيْعَةٍ وَلَا مِسْكِينٍ وَلَا أَحَدٍ إِلَّا سَلَّمَ عَلَيْهِ. قَالَ الطُّفَيْلُ: فَجِئْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ يَوْمًا فَاسْتَتْبَعَنِي إِلَى السُّوقِ فَقُلْتُ لَهُ: وَمَا تَصْنَعُ فِي السُّوقِ وَأَنْتَ لَا تَقِفُ عَلَى الْبَيْعِ وَلَا تَسْأَلُ عَن السّلع وتسوم بِهَا وَلَا تَجْلِسُ فِي مَجَالِسِ السُّوقِ فَاجْلِسْ بِنَا هَهُنَا نتحدث. قَالَ: فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ: يَا أَبَا بَطْنٍ - قَالَ وَكَانَ الطُّفَيْلُ ذَا بَطْنٍ - إِنَّمَا نَغْدُو مِنْ أَجْلِ السَّلَامِ نُسَلِّمُ عَلَى مَنْ لَقِينَاهُ. رَوَاهُ مَالك وَالْبَيْهَقِيّ فِي «شعب الْإِيمَان»
ব্যাখ্যাঃ (لَا تَجْلِسْ فِي مَجَالِسِ السُّوقِ) অর্থাৎ আপনি পবিত্র থাকার জন্য এবং বাজারে আগত ব্যক্তিদেরকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য বাজারে বসেন না।
(فَاجْلِسْ بِنَا هَهُنَا نَتَحَدَّثُ) এর মর্মার্থ হলো আমরা তোমার নিকট থেকে হাদীস শুনব। অথবা আমাদের কেউ কারো সাথে দীনী আলোচনা করবে বা দুনিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে কথা বলবে।
(نُسَلِّمُ عَلٰى مَنْ لَقِينَاهُ) সাক্ষাত হয়ে থাকে দুই পক্ষের মাধ্যমে, এখানে সালাম হলো ‘আম, অর্থাৎ সালাম দেয়া ও জবাব দেয়া। কারণ উভয় পক্ষের জন্য পূর্ণ সাওয়াব রয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম
৪৬৬৫-[৩৮] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করেন : (হে আল্লাহর রসূল!) আমার বাগানে অমুক ব্যক্তির একটি খেজুর গাছ আছে। তার এ খেজুর গাছ আমাকে কষ্ট দেয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যক্তিকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেনঃ তুমি তোমার খেজুর গাছটি আমার কাছে বিক্রয় করো। লোকটি বলল : না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তবে আমাকে দান করো। লোকটি বলল : না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবারো বললেনঃ জান্নাতের একটি খেজুর গাছের বিনিময়ে ওটা আমার নিকট বিক্রয় করো। লোকটি এবারও বলল : না। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তোমার তুলনায় অধিক কৃপণ আর কাউকে দেখিনি। কিন্তু হ্যাঁ, যে ব্যক্তি সালাম করতে কৃপণতা করে। (আহমাদ ও বায়হাক্বী’র ’’শু’আবুল ঈমানে’’)[1]
وَعَن جَابر
قَالَ: أَتَى رَجُلٌ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: لِفُلَانٍ فِي حَائِطِي عَذْقٌ وَأَنَّهُ آذَانِي مَكَانُ عَذْقِهِ فَأَرْسَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَنْ بِعْنِي عَذْقَكَ» قَالَ: لَا. قَالَ: «فَهَبْ لِي» . قَالَ: لَا. قَالَ: «فَبِعْنِيهِ بِعَذْقٍ فِي الْجَنَّةِ» ؟ فَقَالَ: لَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا رَأَيْتُ الَّذِي هُوَ أَبْخَلُ مِنْكَ إِلَّا الَّذِي يَبْخَلُ بِالسَّلَامِ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ»
ব্যাখ্যাঃ (أَنَّه آذَانِىْ) অর্থাৎ- সে সময়ে অসময়ে আসে, এর কারণে আমাদের কষ্ট দেয়। فَهَبْ لِي অর্থাৎ যদি তুমি আমার নিকট বিক্রি করতে লজ্জাবোধ কর, তাহলে এভাবে দান করে দাও যাতে আমি বাগানওয়ালাকে দান করে দেই।
(مَا رَأَيْتُ الَّذِىْ هُوَ أَبْخَلُ مِنْكَ) এর অর্থ হলো যে ব্যক্তি সালামের জবাব দেয় না সে তোমার চাইতে অধিক কৃপণ। কারণ সে অল্প কাজের দ্বারা অধিক সাওয়াব অর্জন করে না। বিদ্বানগণ বলেন, এখানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে সুপারিশ হিসেবে আবেদন করেছেন, নির্দেশ হিসেবে নয়। এ ছাড়া সে কিভাবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশকে উপেক্ষা করল? ঐ ব্যক্তি মুসলিম ছিল বলে বুঝা যায়। এর প্রমাণ এই যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি জান্নাতী গাছের বিনিময়ে গাছটি দিয়ে দাও। অবশ্য লোকটি খুব শক্ত মনের ছিল। (মিশকাতুল মাসাবীহ- বোম্বায় ছাপা, উর্দূ অনুবাদ ও ব্যাখ্যা ৪র্থ খন্ড, ২০ পৃষ্ঠা)
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম
৪৬৬৬-[৩৯] ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ প্রথমে সালাম প্রদানকারী অহংকার হতে মুক্ত। [ইমাম বায়হাক্বী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি ’’শু’আবুল ঈমানে’’ বর্ণনা করেছেন।][1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘আবূ ইসহাক’’ নামক বর্ণনাকারীর নাম ‘‘আস্ সাবীয়ী’’, যিনি একজন মুদাল্লিস রাবী। এখানে তিনি ‘‘আন’’ দ্বারা হাদীস বর্ণনা করেছেন। বিস্তারিত দেখুন- য‘ঈফাহ্ ১৭৫১।
وَعَن عَبْدِ
اللَّهِ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الْبَادِئُ بِالسَّلَامِ بَرِيءٌ مِنَ الْكِبْرِ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي «شعب الْإِيمَان»
ব্যাখ্যাঃ (بَرِيءٌ مِنَ الْكِبْرِ) সালাম প্রদানকারী ব্যক্তি অহংকারমূলক কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত ও পবিত্র। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)