পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৪৩-[১৬] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজন মুসলিমের ওপর অপর মুসলিমের ছয়টি কল্যাণকর অধিকার রয়েছে। ১. কোন মুসলিমের সাথে সাক্ষাৎ হলে সালাম দেবে, ২. তাকে কোন মুসলিম ডাকলে (দা’ওয়াত করলে) তার ডাকে সাড়া দেবে, ৩. কোন মুসলিমের হাঁচি এলে হাঁচির জবাব দেবে, ৪. কোন মুসলিম অসুস্থ হলে তার সেবা-শুশ্রূষা করবে। ৫. কোন মুসলিম মৃত্যুবরণ করলে তাঁর জানাযায় অনুগমন করবে এবং ৬. প্রত্যেক মুসলিমের জন্য সে জিনিসই পছন্দ করবে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে। (তিরমিযী ও দারিমী)[1]

وَعَنْ عَلِيٍّ
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لِلْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ سِتٌّ بِالْمَعْرُوفِ: يُسَلِّمُ عَلَيْهِ إِذَا لَقِيَهُ وَيُجِيبُهُ إِذَا دَعَاهُ وَيُشَمِّتُهُ إِذَا عَطَسَ وَيَعُودُهُ إِذَا مَرِضَ وَيَتْبَعُ جِنَازَتَهُ إِذَا مَاتَ وَيُحِبُّ لَهُ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ والدارمي

وعن علي قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: للمسلم على المسلم ست بالمعروف: يسلم عليه اذا لقيه ويجيبه اذا دعاه ويشمته اذا عطس ويعوده اذا مرض ويتبع جنازته اذا مات ويحب له ما يحب لنفسه رواه الترمذي والدارمي

ব্যাখ্যাঃ (لِلْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ سِتٌّ بِالْمَعْرُوفِ) অর্থাৎ এক মুসলিমের ওপর অপর মুসলিমের ছয়টি কল্যাণকর অধিকার রয়েছে। আর তা হলো যে কথা বা কাজ যাতে আল্লাহ তা‘আলা সন্তুষ্ট হন। (يُجِيبُهٗ إِذَا دَعَاهُ) অর্থাৎ যে কেউ আমন্ত্রণ করলে অথবা প্রয়োজনে ডাকলে সাড়া দিবে। يُشَمِّتُهٗ এর অর্থ (আলহামদুলিল্লা-হ বললে) সে তার জন্য يرحمك الله বলে দু‘আ করবে। হাঁচির জবাব দেয়ার হুকুমের ক্ষেত্রে ‘আলিমদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। যেমন হাফিয ইবনু হাজার ‘আসকালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ হাঁচির জবাব দেয়া ওয়াজিব। কারণ, আবূ হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস রয়েছে, فَحَقٌّ عَلٰى كُلِّ مُسْلِمٍ سَمِعَهٗ أَنْ يُشَمِّتَهُ

ইবনু আবূ জামরাহ্ বলেনঃ একদল ‘আলিম এটাকে ফরযে ‘আইন বলে অভিহিত করেছেন। ইমাম ইবনুল কইয়িম (রহিমাহুল্লাহ) এ মতটিকে তাঁর সুনানের মধ্যে জোর দিয়ে বলেছেন। আরেকদল বিদ্বান এটাকে ফরযে কিফায়াহ্ বলেছেন। অতএব যখন কেউ এর জবাব দেয় তখন তা সবার পক্ষ থেকে যথেষ্ট হয়ে যাবে। জামহূর হাম্বালী, হানাফী ও আবুল ওয়ালীদ ইবনু রুশদ প্রমুখ এরূপ মত পেশ করেন। মালিকীদের একদল ও ‘আবদুল ওয়াহ্ব মুস্তাহাব বলেছেন। এ ধরনের মত শাফি‘ঈ মতাবলম্বীদেরও। হাফিয (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ সহীহ হাদীস দ্বারা জবাব দেয়া কিফায়াহ্। ওয়াজিব প্রমাণিত হলেও দ্বিতীয় মতটি দলীলের দিক থেকে অগ্রাধিকারযোগ্য। কারণ হাঁচির জবাবদান যদিও ‘আমভাবে বর্ণিত হয়েছে তবুও এর দ্বারা সবাইকে সম্বোধন করা হয়েছে।

ইবনুল কইয়িম (রহিমাহুল্লাহ) ‘‘যাদুল মা‘আদ’’ গ্রন্থে হাঁচির জবাব সম্পর্কে একাধিক হাদীস নিয়ে এসেছেন তন্মধ্যে প্রথমে বুখারী কর্তৃক বর্ণিত আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْعُطَاسَ وَيَكْرَهُ التَّثَاؤُبَ فَإِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ اللهَ فَحَقٌّ عَلٰى كُلِّ مُسْلِمٍ سَمِعَهٗ أَنْ يُشَمِّتَهٗ হাদীসটি উল্লেখ করে বলেন, হাঁচিদাতা ব্যক্তির আলহাম্দুলিল্লা-হ শ্রবণকারী প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির হাঁচির জবাব দেয়া ফরযে ‘আইন। সবার তরফ থেকে একজনের হাঁচির জবাব দেয়া যথেষ্ট হবে না। তিনি আরো বলেন, এটা ‘আলিমদের একটি মত, যাকে ইবনু যায়দ ও ইবনুল ‘আরাবী মালিকী পছন্দ করেন। তুহফাতুল আহ্ওয়াযীর ভাষ্যকার ইবনুল কইয়িম (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতটিকে গ্রহণ করেন। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭৩৬)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৪৪-[১৭] ’ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে উপস্থিত হয়ে বলল : ’’আসসালা-মু ’আলায়কুম’’। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের জবাব দিলেন। অতঃপর লোকটি বসল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ লোকটির জন্য দশ নেকি লেখা হলো। অতঃপর আরেক ব্যক্তি এসে বলল : ’’আসসালা-মু ’আলায়কুম ওয়া রহমাতুল্ল-হ’’। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালামের জবাব দিলেন। লোকটি বসল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ লোকটির জন্য বিশ নেকি লেখা হলো। অতঃপর আরো এক ব্যক্তি এসে বলল : ’’আসসালা-মু ’আলায়কুম ওয়া রহমাতুল্ল-হি ওয়া বারাকা-তুহ’’। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের জবাব দিলেন। লোকটি বসার পর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ লোকটির জন্য ত্রিশ নেকি লেখা হলো। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]

وعنِ
عمرَان بن حُصَيْن أَنَّ رَجُلًا جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ فَرَدَّ عَلَيْهِ ثُمَّ جَلَسَ. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «عشر» . ثمَّ جَاءَ لآخر فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ فَرَدَّ عَلَيْهِ فَقَالَ: «ثَلَاثُونَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد

وعن عمران بن حصين ان رجلا جاء الى النبي صلى الله عليه وسلم فقال: السلام عليكم فرد عليه ثم جلس. فقال النبي صلى الله عليه وسلم: «عشر» . ثم جاء لاخر فقال: السلام عليكم ورحمة الله وبركاته فرد عليه فقال: «ثلاثون» . رواه الترمذي وابو داود

ব্যাখ্যাঃ প্রতিটি শব্দে দশটি করে নেকী রয়েছে। সালামের জবাব সালাম প্রদানকারীর চাইতে উত্তমভাবে দিতে হয়। হাফিয ইবনু হাজার ‘আসকালানী স্বীয় ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে বলেনঃ যদি সালামদাতা ‘‘ওয়া রহমাতুল্ল-হ’’ পর্যন্ত বলে তবে উত্তরদাতা বৃদ্ধি করে ‘‘ওয়া বারাকা-তুহ’’ পর্যন্ত বলা মুস্তাহাব।

এক্ষণে সালাম প্রদানকারী যদি ‘‘ওয়া বারাকা-তুহ’’ পর্যন্ত বলে তাহলে সালামের জবাবদাতা কিছু বৃদ্ধি করতে পারবে কিনা? অথবা সালামদাতা যদি ‘‘ওয়া বারাকা-তুহ’’ থেকে বৃদ্ধি করে বলে তাহলে সেটা শারী‘আতসম্মত হবে কিনা? ইমাম মালিক স্বীয় মুওয়াত্ত্বা গ্রন্থে বলেনঃ সালামের শেষ হলো ‘‘ওয়া বারাকা-তুহ’’ পর্যন্ত। ইমাম বায়হাক্বী তাঁর ‘‘শু‘আবুল ঈমান’’ গ্রন্থে একটি রিওয়ায়াত নিয়ে এসেছেন, যেখানে তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর নিকটে এসে বলেনঃ السلام عليكم ورحمة الله وبركاته ومغفرته। তখন ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেনঃ ‘‘ওয়া বারাকা-তুহ’’ পর্যন্তই যথেষ্ট। কারণ এর শেষ হলো ‘‘ওয়া বারাকা-তুহ’’। অন্য এক বর্ণনায় ‘উমার  বলেন সালামের শেষ হলো ‘‘ওয়া বারাকা-তুহ’’ পর্যন্ত। এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য এবং উত্তম রাবীর অন্তর্ভুক্ত। (ফাতহুল বারী ১১/৬)

তবে মুওয়াত্ত্বায় বর্ণিত আরেকটি বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে, ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর সালামের জবাবে والغاديات والرائحات বৃদ্ধি করাতে, কিছু বেশি করার বৈধতার প্রমাণ মিলে। অনুরূপভাবে ইমাম বুখারী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ আদাবুল মুফরাদে একটি রিওয়ায়াত উল্লেখ করেন, তাতে ইবনু ‘উমার সালামের জবাবে বৃদ্ধি করতেন যেমন ইবনু ‘উমার -এর মুক্ত দাস বলেন, আমি তার নিকটে একদিন এসে সালাম দিলে এর জবাবে তিনি বৃদ্ধি করে وطيب صلواته বলেন।

ইমাম বায়হাক্বী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর ‘‘শু‘আবুল ঈমান’’ গ্রন্থে একটি হাদীস য‘ঈফ সনদে বর্ণনা করেন। সেখানে যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) বলেন, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সালাম দিতেন তখন আমরা বলতাম, وعليك السلام ورحمة الله وبركاته ومغفرته। উল্লেখ্য ‘‘ওয়া বারাকা-তুহ’’ এর পরে বৃদ্ধি করার হাদীসগুলো সবই য‘ঈফ।

ইমাম ‘আসকালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এসব দুর্বল হাদীসগুলো যখন একত্রিত করা হয় তখন তা শক্তিশালী হয়। ফলে ‘‘ওয়া বারাকা-তুহ’’-এর পরে বৃদ্ধি করার বৈধতা পাওয়া যায়।

(ফাতহুল বারী ১১শ খন্ড, হাঃ ৬; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৬৮৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৪৫-[১৮] মু’আয ইবনু আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে উপরিউক্ত হাদীসের সমার্থক হাদীস বর্ণনা করেন। তিনি নিম্নোক্ত বাক্যগুলো বর্ধিত করেন, অতঃপর আরো এক ব্যক্তি এসে বলল : ’’আসসালা-মু ’আলায়কুম ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু ওয়া মাগফিরাতুহ’’। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এ ব্যক্তির জন্য চল্লিশ নেকি লেখা হলো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বললেনঃ এভাবে সাওয়াব বৃদ্ধি পায়। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن معَاذ
بْنِ أَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَعْنَاهُ وَزَاد ثُمَّ أَتَى آخَرُ فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ وَمَغْفِرَتُهُ فَقَالَ: «أَرْبَعُونَ» وَقَالَ: «هَكَذَا تكون الْفَضَائِل» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن معاذ بن انس عن النبي صلى الله عليه وسلم بمعناه وزاد ثم اتى اخر فقال: السلام عليكم ورحمة الله وبركاته ومغفرته فقال: «اربعون» وقال: «هكذا تكون الفضاىل» . رواه ابو داود

ব্যাখ্যাঃ فَقَالَ:أَرْبَعُونَ অর্থাৎ তার জন্য চল্লিশ নেকী রয়েছে। প্রত্যেক শব্দে দশ নেকী।هَكَذَا تكون الْفَضَائِل এর অর্থ হলো সালামদাতা যতই শব্দ বৃদ্ধি করে ততই নেকী বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হবে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫১৮৭)

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ জেনে রাখা উচিত যে, শ্রেষ্ঠ সালাম হলো السلام عليكم ورحمة الله وبركاته বলা। একজন লোক হলেও এভাবে সালাম দিতে হবে। আর জবাবদাতা বলবে وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته। ন্যূনতম সালাম হলো السلام عليكم যদি বলে السلام عليك অথবা سلام عليك তবুও হয়ে যাবে। আর ন্যূনতম সালামের জবাব হলো وعليك السلام অথবা وعليكم السلام। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৪৬-[১৯] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার নিকট অগ্রগণ্য সে ব্যক্তি, যে প্রথমে সালাম দেয়। (আহমাদ, তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِاللَّهِ مَنْ بَدَأَ السَّلَام» . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد

وعن ابي امامة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ان اولى الناس بالله من بدا السلام» . رواه احمد والترمذي وابو داود

ব্যাখ্যাঃ إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِاللهِ مَنْ بَدَأَ السَّلَام এর মর্মার্থ প্রসঙ্গে ইমাম ত্বীবী বলেন, পরস্পরে সাক্ষাতকারী দুই ব্যক্তির মধ্যে যে ব্যক্তি প্রথমে সালাম দিবে সেই আল্লাহর রহমতের সর্বাধিক নিকটতম ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত হবেন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫১৮৮; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৬৯৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৪৭-[২০] জারীর (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল মহিলার নিকট দিয়ে গেলেন এবং তাদেরকে সালাম দিলেন। (আহমাদ)[1]

وَعَن
جَرِيرٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ عَلَى نِسْوَةٍ فَسَلَّمَ عَلَيْهِنَّ. رَوَاهُ أَحْمَدُ

وعن جرير: ان النبي صلى الله عليه وسلم مر على نسوة فسلم عليهن. رواه احمد

ব্যাখ্যাঃ (فَسَلَّمَ عَلَيْهِنَّ) এ হাদীসের ব্যাখ্যায় মাওলানা সাইয়্যিদ মুহাম্মাদ ‘আবদুল আওয়াল গজনবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীস থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, অপরিচিত নারীকে সালাম দেয়া অথবা সালামের জবাব দেয়া বৈধ। যে কাজ শারী‘আতের অনুকূলে হয় তাতে কোন ফিতনার আশংকা নেই। সাহাবীগণ সর্বদা উম্মুল মু’মিনীনদের সালাম দিতেন। আর তারাও সালামের জবাব দিতেন। এমনকি জিবরীল (আ.) স্বয়ং উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে সালাম পাঠিয়েছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ- বোম্বায় ছাপা, ৪র্থ খন্ড, ১৩ পৃষ্ঠা)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৪৮-[২১] ’আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন একদল লোক যেতে থাকে এবং তাদের মধ্য থেকে কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তিকে বা দলকে সালাম দেয়, তবে এ সালাম গোটা দলের পক্ষ হতে যথেষ্ট হবে। এমনিভাবে কোন মাজলিস হতে কোন এক ব্যক্তি যদি সালামের জবাব দেয়, তবে তার এ জবাবই গোটা মাজলিসের পক্ষ হতে যথেষ্ট। (ইমাম বায়হাক্বী এ বর্ণনাকে ’’শু’আবুল ঈমান’’ গ্রন্থে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি বলে বর্ণনা করেছেন। আর ইমাম আবূ দাঊদ বলেনঃ হাসান ইবনু ’আলী এ হাদীসটিকে মারফূ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং হাসান ইবনু ’আলী ইমাম আবূ দাঊদ-এর উস্তায।)[1]

وَعَنْ
عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: يُجْزِئُ عَنِ الْجَمَاعَةِ إِذَا مَرُّوا أَنْ يُسَلِّمَ أَحَدُهُمْ وَيُجْزِئُ عَنِ الْجُلُوسِ أَنْ يَرُدَّ أَحَدُهُمْ. رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ» مَرْفُوعا. وروى أَبُو دَاوُد وَقَالَ: وَرَفعه الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ وَهُوَ شَيْخُ أَبِي دَاوُدَ

وعن علي بن ابي طالب رضي الله عنه قال: يجزى عن الجماعة اذا مروا ان يسلم احدهم ويجزى عن الجلوس ان يرد احدهم. رواه البيهقي في «شعب الايمان» مرفوعا. وروى ابو داود وقال: ورفعه الحسن بن علي وهو شيخ ابي داود

ব্যাখ্যাঃ কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ সালাম দেয়া সুন্নাত ও মুস্তাহাব ওয়াজিব নয়। এটা সুন্নাতে কিফায়াহ্। সে কারণে একটা দলের তরফ থেকে একজন সালাম দিলে যথেষ্ট হবে। আর যদি প্রত্যেকেই সালাম দেয় তাহলে সেটা হবে সর্বোত্তম। তেমনিভাবে সালামের জবাব দেয়া সর্বসম্মতিক্রমে ফরযে কিফায়াহ্। তবে সবাই যদি সালামের জবাব দেয় তাহলে সেটা হবে সর্বাধিক উত্তম।

(عَنِ الْجُلُوسِ) এখানে উপবিষ্ট বলতে যাদেরকে সালাম দেয়া হয় তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। তারা যে অবস্থায় থাক না কেন। এখানে অধিকাংশ অবস্থার দিকে লক্ষ্য করে جلوس শব্দের সাথে খাস করা হয়েছে। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ একত্রিত হলে বসে থাকে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫২০১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৪৯-[২২] ’আমর ইবনু শু’আয়ব তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর পিতামহ হতে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ছাড়া অন্য জাতির সাথে সাদৃশ্য করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। তোমরা ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানদের সাথে সাদৃশ্য করো না। কেননা ইয়াহূদীরা অঙ্গুলির ইশারায় সালাম দেয়, আর খ্রিষ্টানরা হাতের তালু দ্বারা সালাম করে। [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেন, এ হাদীসের সানাদ দুর্বল।][1]

وَعَنْ
عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا لَا تَشَبَّهُوا بِالْيَهُودِ وَلَا بِالنَّصَارَى فَإِنَّ تَسْلِيمَ الْيَهُودِ الْإِشَارَةُ بِالْأَصَابِعِ وَتَسْلِيمَ النَّصَارَى الْإِشَارَةُ بِالْأَكُفِّ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: إِسْنَاده ضَعِيف

وعن عمرو بن شعيب عن ابيه عن جده رضي الله عنهم ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «ليس منا من تشبه بغيرنا لا تشبهوا باليهود ولا بالنصارى فان تسليم اليهود الاشارة بالاصابع وتسليم النصارى الاشارة بالاكف» . رواه الترمذي وقال: اسناده ضعيف

ব্যাখ্যাঃ (لَيْسَ مِنَّا) এর অর্থ আমাদের তরীকার অনুসারী নয় এবং আমাদের অনুসরণের প্রতি যত্নবান নয়। কাজেই তোমরা তাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ড- কোনরূপ সাদৃশ্যতা অবলম্বন করো না। বিশেষভাবে এ দুই ক্ষেত্রে। কারণ হয়ত তারা সালাম দেয়ার সময় অথবা সালামের জবাবে অথবা উভয় ক্ষেত্রে হাত মুড়িয়ে বেঁধে ইশারা করে থাকত সালাম উচ্চারণ না করেই।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ)-এর হাদীস থাকতে জাবির -এর হাদীসকে একেবারে প্রত্যাখ্যান করা যায় না। আসমা (রাঃ)-এর হাদীসে রয়েছে, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের ভিতর দিয়ে গমন করছিলেন, তখন একদল নারী সেথায় বসে ছিল। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত নাড়িয়ে সালাম প্রদান করলেন। (তিরমিযী হাঃ ২৬৯৭)

এ হাদীসে এটা সম্ভাবনা রয়েছে যে, তিনি হাতের ইশারা ও সালাম উচ্চারণ উভয়টি করেছেন। আবার আবূ দাঊদ-এর বর্ণনায় আসমা (রাঃ)-এর হাদীসে রয়েছে, فسلم علينا অর্থাৎ তিনি আমাদেরকে সালাম দিলেন। অতএব এটা আরো স্পষ্ট হয়ে গেল। বস্তুত যে ব্যক্তি শার‘ঈ পদ্ধতিতে ভালোভাবে সালাম প্রদান করতে সক্ষম তার জন্য ইশারায় সালাম দেয়া নিষিদ্ধ। এছাড়া যে ব্যক্তি ব্যস্ততার কারণে সালামের জবাব উচ্চারণ করতে বাধাপ্রাপ্ত হয় যেমন সালাতরত ব্যক্তি দূরবর্তী ব্যক্তি এবং বোবা ব্যক্তির সালামের জবাব দেয়া অনুরূপভাবে বধির ব্যক্তিকে ইশারায় সালাম দেয়াও জায়িয। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৬৯৫)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৫০-[২৩] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ নিজের কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করে, সে যেন প্রথমে সালাম দেয়। আর যদি তাদের উভয়ের মধ্যখানে বৃক্ষ, দেয়াল বা পাথরের আড়াল পড়ে যায়, অতঃপর পুনরায় সাক্ষাৎ হয়, তবে যেন দ্বিতীয়বার সালাম দেয়। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اتا: «إِذَا لَقِيَ أَحَدُكُمْ أَخَاهُ فَلْيُسَلِّمْ عَلَيْهِ فَإِنْ حَالَتْ بَيْنَهُمَا شَجَرَةٌ أَوْ جِدَارٌ أَوْ حَجَرٌ ثُمَّ لَقِيَهُ فَلْيُسَلِّمْ عَلَيْهِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ

وعن ابي هريرة رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال اتا: «اذا لقي احدكم اخاه فليسلم عليه فان حالت بينهما شجرة او جدار او حجر ثم لقيه فليسلم عليه» . رواه ابو داود

ব্যাখ্যাঃ (أَوْ حَجَرٌ) অর্থাৎ বড় পাথর। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীসে সালাম বিস্তারের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। আর অবস্থান বা ক্ষেত্র পরিবর্তন হলেও প্রত্যেক গমন ও প্রস্থানকারীদেরকে বারবার সালাম প্রদানের প্রতি উদ্ধুদ্ব করা হয়েছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫১৯১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৫১-[২৪] কতাদাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে, তখন গৃহবাসীকে সালাম দেবে। আর যখন ঘর থেকে বের হবে, তখন গৃহবাসীকে সালাম দিয়ে বিদায় গ্রহণ করবে। (ইমাম বায়হাক্বী ’’শু’আবুল ঈমানে’’ মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করেছেন)[1]

وَعَن
قَتَادَة قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا دَخَلْتُمْ بَيْتًا فَسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهِ وَإِذَا خَرَجْتُمْ فَأَوْدِعُوا أَهْلَهُ بِسَلَامٍ» رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ» مُرْسَلًا

وعن قتادة قال: قال النبي صلى الله عليه وسلم: «اذا دخلتم بيتا فسلموا على اهله واذا خرجتم فاودعوا اهله بسلام» رواه البيهقي في «شعب الايمان» مرسلا

ব্যাখ্যাঃ ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যদি বাড়ীতে কেউ না থাকে, তাহলে اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ বলে সালাম দেয়া মুস্তাহাব। যাতে সেখানে যে মালাকের (ফেরেশতার) গোপন সংবাদ রয়েছে তাদের প্রতি সালাম পৌঁছে যায়। উল্লেখ্য যে, এখানে إيداع এর অর্থ হলো توديع যা وداع থেকে গৃহীত। অর্থাৎ সালাম দিয়ে যাত্রা করা। কোন কোন হানাফীর মতে বিদায়ী সালামের জবাব দেয়া মুস্তাহাব। কারণ এটা দু‘আ এবং বিদায়, যেমনটি ‘আলী কারী বলেন।

শায়খ ‘‘লাম্‘আত’’ গ্রন্থে বলেনঃ اودعوا শব্দটি ايداع থেকে নির্গত হয়েছে। এর অর্থ তোমরা গৃহবাসীদের নিকটে সালামকে গচ্ছিত সম্পদ হিসেবে রাখ। অর্থাৎ তোমরা যখন বের হওয়ার সময় গৃহবাসীদেরকে সালাম দিবে তখন যেন তা তাদের নিকটে সালামের কল্যাণ ও বারাকাতকে গচ্ছিত সম্পদ হিসেবে রাখে। আর সেটাকে ভবিষ্যতে মানুষ যেমন কোন সম্পদ নিজ লোকের নিকট রেখে পুনরায় নিয়ে নেয়, তোমরা তাদের নিকট থেকে গচ্ছিত সম্পদরূপে গ্রহণ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ- বোম্বায় ছাপা, ৪র্থ খন্ড, ১৪ পৃষ্ঠা)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ কাতাদাহ (রহঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৫২-[২৫] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে বৎস! যখন তুমি তোমার ঘরে প্রবেশ করো, তখন সালাম দেবে। তোমার সালাম তোমার ও তোমার ঘরের বাসিন্দাদের জন্য বারাকাতের কারণ হবে। (তিরমিযী)[1]

وَعَنْ
أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَا بُنَيِّ إِذَا دَخَلْتَ عَلَى أَهْلِكَ فَسَلِّمْ يَكُونُ بَرَكَةً عَلَيْكَ وَعَلَى أَهْلِ بَيْتك» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن انس ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «يا بني اذا دخلت على اهلك فسلم يكون بركة عليك وعلى اهل بيتك» . رواه الترمذي

ব্যাখ্যাঃ (يَكُونُ بَرَكَةً) এটা جملة مستأنفة অর্থাৎ কারণযুক্ত শুরু বাক্য। এটা আসলে ছিল فانه يكون অর্থাৎ সালাম হলো বারাকাত বৃদ্ধি এবং অধিক কল্যাণ ও দয়া বৃদ্ধির কারণ। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৬৯৮)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৫৩-[২৬] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কথাবার্তা বলার পূর্বেই সালাম দিতে হবে। [তিরমিযী; আর ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীসটি মুনকার।][1]

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «السَّلَامُ قَبْلَ الْكَلَامِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيث مُنكر

وعن جابر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «السلام قبل الكلام» . رواه الترمذي وقال: هذا حديث منكر

ব্যাখ্যাঃ সুন্নাত হলো কথা বলার পূর্বে সালাম দিয়ে শুরু করা। কারণ সালাম দ্বারা আরম্ভ করা নিরাপত্তা ও সুলক্ষণের ইঙ্গিত বাহক। এর দ্বারা সম্বোধিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ হওয়া যায়। আবার আল্লাহর জিকর দ্বারা আরম্ভ হওয়ার বারাকাত হাসিল করা হয়।

কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এটা শুভেচ্ছা। যা শুরুতে করা হয়। সুতরাং কথা দ্বারা আরম্ভ করলে তা বাদ পড়ে যায়। যেমন তাহিয়্যাতুল মসজিদ যাকে বসার পূর্বে আদায় করতে হয়। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৬৯৯)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৫৪-[২৭] ’ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা জাহিলিয়্যাতের যুগে সাক্ষাতের সময় বলতাম : أَنْعَمَ اللهُ بِكَ عَيْنًا (আল্লাহ তোমার চক্ষু শীতল করুন), أَنْعَمَ صَبَاحًا (প্রত্যুষেই তুমি কল্যাণের অধিকারী হও)। অতঃপর যখন ইসলামের আগমন ঘটলো, তখন আমাদেরকে এটা বলতে নিষেধ করা হলো। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ عِمْرَانَ
بْنِ حُصَيْنٍ قَالَ: كُنَّا فِي الْجَاهِلِيَّةِ نَقُولُ: أَنْعَمَ اللَّهُ بِكَ عَيْنًا وَأَنْعَمَ صَبَاحًا. فَلَمَّا كَانَ الْإِسْلَامُ نُهِينَا عَنْ ذَلِكَ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن عمران بن حصين قال: كنا في الجاهلية نقول: انعم الله بك عينا وانعم صباحا. فلما كان الاسلام نهينا عن ذلك. رواه ابو داود

ব্যাখ্যাঃ আবূ দাঊদ-এর ভাষ্যকার ফাতহুল ওয়াদূদে বলেনঃ এটা নিষিদ্ধ হওয়ার ভিত্তি হলো সেটা জাহিলী যুগের অভিবাদন বা শুভেচ্ছা। তবে জাহিলিয়্যাতের যুগে انعم الله بك عينا বাক্যটি প্রসিদ্ধ ছিল। অতঃপর জাহিলী অবস্থার যখন পরিবর্তন হলো তখন জাহিলী শুভেচ্ছার বিধানও অবশিষ্ট থাকল না। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫২১৮)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৫৫-[২৮] গালিব (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা হাসান বাসরী-এর দরজায় বসেছিলাম। তখন জনৈক ব্যক্তি এসে বলল : আমার পিতা আমার পিতামহ হতে হাদীস বর্ণনা করেন যে, (আমার পিতামহ বললেনঃ) আমার পিতা একবার আমাকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পাঠালেন এবং বললেনঃ তুমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে উপস্থিত হয়ে আমার সালাম পৌঁছাবে। আমার পিতামহ বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আমার পিতা আপনাকে সালাম জানিয়েছেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জবাবে বললেনঃ عَلَيْكَ وَعَلٰى أَبِيْكَ السَّلَامُ. ’’তোমার এবং তোমার পিতার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক’’। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن غَالب قَالَ:
إِنَّا لَجُلُوسٌ بِبَابِ الْحَسَنِ الْبَصْرِيِّ إِذْ جَاءَ رَجُلٌ فَقَالَ: حَدَّثَنِي أَبِي عَنْ جَدِّي
قَالَ: بَعَثَنِي أَبِي إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: ائتيه فَأَقْرِئْهُ السَّلَامَ. قَالَ: فَأَتَيْتُهُ
فَقُلْتُ: أَبِي يُقْرِئُكَ السَّلَامَ. فَقَالَ: عَلَيْكَ وَعَلَى أَبِيكَ السَّلَامُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن غالب قال: انا لجلوس بباب الحسن البصري اذ جاء رجل فقال: حدثني ابي عن جدي قال: بعثني ابي الى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: اىتيه فاقرىه السلام. قال: فاتيته فقلت: ابي يقرىك السلام. فقال: عليك وعلى ابيك السلام. رواه ابو داود

ব্যাখ্যাঃ আবূ দাঊদ-এর ভাষ্যকার ফাতহুল ওয়াদূদে বলেন, এ হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সালামের বাহককেও জবাব দেয়া যায়। আবার ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর একটি বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, শুধুমাত্র সালাম প্রেরণকারীকে সালামের জবাব দিয়েছেন। যেমন হাদীসে এসেছে, ان النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قال لها ان جبريل يقرأ عليك السلام فقالت وعليه السلام ورحمة الله নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আয়িশাহ্-কে বললেন, জিবরীল (আ.) তোমাকে সালাম দিয়েছেন। তখন তিনি বললেন, وعليه السلام ورحمة الله। (আবূ দাঊদ হাঃ ৫২২৩)

এক্ষণে দুই হাদীসের সমাধানে বলা যায়, সালামের বাহক ও প্রেরণকারীকে উত্তর দেয়া মুস্তাহাব। আর শুধুমাত্র প্রেরণককে সালামের উত্তর দেয়া জায়িয। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫২২২)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ গালিব (রহঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৫৬-[২৯] আবুল ’আলা ইবনুল হাযরামী হতে বর্ণিত। ’আলা ইবনুল হাযরামী (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কর্মচারী ছিলেন। যখন তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে চিঠি লিখতেন, তখন নিজের নাম দিয়ে আরম্ভ করতেন। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن أبي
الْعَلَاء بن الْحَضْرَمِيّ أَنَّ الْعَلَاءَ الْحَضْرَمِيَّ كَانَ عَامِلَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ إِذَا كَتَبَ إِليه بدأَ بنفسِه. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن ابي العلاء بن الحضرمي ان العلاء الحضرمي كان عامل رسول الله صلى الله عليه وسلم وكان اذا كتب اليه بدا بنفسه. رواه ابو داود

ব্যাখ্যাঃ ‘আলা ইবনুল হাযরামী (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাহরায়নে নিযুক্ত কর্মচারী ছিলেন। প্রথম ও দ্বিতীয় খলীফা আবূ বকর ও ‘উমার (রাঃ) তাকে আমৃত্যু উক্ত পদে ১৪ বছর যাবৎ বহাল রাখেন।

এ হাদীস থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, লেখকের নিজের নাম দ্বারা কোন চিঠি লেখা আরম্ভ করা সুন্নাত। যার প্রমাণ সরাসরি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক হিরাক্বিল বাদশাহর নিকটে প্রদত্ত চিঠি থেকে পাওয়া যায়। তাতে লিখা ছিল بسم الله الرحمن الرحيم من محمد عبد الله ورسوله الى هرقل .....الخ।

হাফিয ইবনু হাজার ‘আসকালানী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর জগদ্বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ফাতহুল বারীতে’ এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেনঃ এতে প্রমাণ হয় যে, নিজের পক্ষ থেকে চিঠি লেখা আরম্ভ করা সুন্নাত। এটা জামহূর মুহাদ্দিসের মত, এমনকি নুহাস (রহিমাহুল্লাহ) এ ব্যাপারে সাহাবীদের ইজমার দাবী করেন। তবে সঠিক হলো এর বিপরীত। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫১২৫)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৫৭-[৩০] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ অন্য কাউকে চিঠি লেখে, তখন তাতে যেন (লেখা শেষে) মাটি লাগিয়ে দেয়। কেননা এটা উদ্দেশ্য পূরণে অধিকতর সফলকারী। [তিরমিযী; আর ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীসটি মুনকার][1]

وَعَنْ جَابِرٌ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذا كتب أحدكُم كتابا فليتر بِهِ فَإِنَّهُ أَنْجَحُ لِلْحَاجَةِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيث مُنكر

وعن جابر ان النبي صلى الله عليه وسلم قال: «اذا كتب احدكم كتابا فليتر به فانه انجح للحاجة» . رواه الترمذي وقال: هذا حديث منكر

ব্যাখ্যাঃ মাজমা' গ্রন্থে বলা হয়েছে, উদ্দেশ্য সাধনে আল্লাহ তা‘আলার ওপর ভরসা রাখার জন্য চিঠিকে মাটিতে ফেলা হয়। অথবা মাটি লাগানো হয়।

ইমাম মুযহির (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ লেখক যেন অধিক নমনীয়তার সাথে সম্বোধন করে। আর মাটিময় করার অর্থ হলো সম্বোধনে অধিক নমনীয়তা প্রদর্শন করা।

কেউ কেউ বলেনঃ মাটি লাগানোর উদ্দেশ্য হলো লিখনী মুছে যাওয়া থেকে রক্ষার জন্য। ভেজা কালিকে শুকিয়ে নেয়া। নিঃসন্দেহে লিখনী স্বঅবস্থায় বিদ্যমান থাকা প্রয়োজন পূরণে অব্যর্থ ব্যবস্থা। আর সেটা মিটে যাওয়া উদ্দেশ্য সাধনের প্রতিবন্ধক স্বরূপ। তিরমিযীর ভাষ্যকার বলেনঃ মাটিযুক্ত করার নির্ভরযোগ্য অর্থ হলো সেটাকে শুকিয়ে নেয়া।

(فَإِنَّهٗ أَنْجَحُ لِلْحَاجَةِ) অর্থাৎ এটা উদ্দেশ্য পূরণে সর্বাধিক নিকটতম ও সহজ উপায়।

(তুহফাতুল আহওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭১৩)

তবে যেহেতু হাদীসটি য‘ঈফ তথা মুনকার, সেহেতু এর উপর ‘আমল করা বৈধ নয়। [সম্পাদক]


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৫৮-[৩১] যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে উপস্থিত হলাম। তখন তাঁর সম্মুখে একজন কাতিব (লেখক) ছিল। আমি তাঁকে লেখকের উদ্দেশে বলতে শুনেছি, ’’কলমটি কানের উপর রাখো। কেননা এরূপ করলে প্রয়োজনীয় কথা বা উদ্দেশ্য স্মরণ হয়’’। [তিরমিযী; আর ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ এ হাদীসটি গরীব ও সানাদ দুর্বল।][1]

عَن زيدٍ بن ثابتٍ
قَالَ: دَخَلْتُ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَبَيْنَ يَدَيْهِ كَاتِبٌ فَسَمِعْتُهُ يَقُولُ: ضَعِ الْقَلَمَ عَلَى أُذُنِكَ فَإِنَّهُ أَذْكَرُ لِلْمَآلِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ وَفِي إِسْنَادِهِ ضعفٌ

عن زيد بن ثابت قال: دخلت على النبي صلى الله عليه وسلم وبين يديه كاتب فسمعته يقول: ضع القلم على اذنك فانه اذكر للمال. رواه الترمذي وقال: هذا حديث غريب وفي اسناده ضعف

ব্যাখ্যাঃ এখানে ‘লেখক’ বলতে রূপক লেখক উদ্দেশ্য। যিনি তার কথাকে রচনা করতে বিলম্ব হলে তখন তিনি তার কলমকে কানে রাখবেন। কারণ এটা লেখকের উদ্দিষ্ট কথা স্মরণ করতে অধিক দ্রুত মাধ্যম। হাতে কলম থাকলে লেখক অল্প চিন্তা করেই তার কথাকে লিখতে উৎসাহী হবে। ফলে তার কথাগুলো সুন্দর গোছালো হবে না। আবার কলমকে মাটিতে রেখে দিলে এটা যেন লেখা থেকে অবসর গ্রহণের মতো। এতে তার এ চিন্তা না করে বসে থাকবে। কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এর অর্থ হলো প্রয়োজনে কানের উপরে কলম রাখা স্মরণের অধিক নিকটবর্তী এবং তা অর্জনের জন্য সর্বাধিক সহজ স্থান। যেটা অন্য স্থানে রাখলে এরূপ হয় না। কারণ কখনো কখনো তার নিকটে সেটা বিনা কষ্টে দ্রুত লাভ করা কঠিন হয়ে পড়ে। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭১৪)


হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৫৯-[৩২] উক্ত রাবী [যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আদেশ করলেন যেন আমি সুরইয়ানিয়্যাহ্ ভাষা শিক্ষা করি। অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে আদেশ করলেন, যেন আমি ইয়াহূদীদের পত্রলিখন পদ্ধতি শিক্ষা করি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেন যে, পত্রালাপ সংক্রান্ত ব্যাপারে ইয়াহূদীদের দিক থেকে আমার সন্তুষ্টি আসে না। যায়দ ইবনু সাবিত(রাঃ) বলেনঃ অর্ধ মাসের মধ্যে আমি (সুরইয়ানিয়্যাহ্ ভাষা) শিখে ফেললাম। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখনই কোন ইয়াহূদীকে চিঠি লিখতেন, তা আমি লিখতাম। আর কোন ইয়াহূদী যখন তাঁর কাছে চিঠি পাঠাত, তাদের চিঠি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সমীপে আমিই পাঠ করতাম। (তিরমিযী)[1]

وَعَنْهُ
قَالَ: أَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ أَتَعَلَّمَ السُّرْيَانِيَّةَ. وَفِي رِوَايَةٍ: إِنَّهُ أَمَرَنِي أَنْ أَتَعَلَّمَ كِتَابَ يَهُودَ وَقَالَ: «إِنِّي مَا آمَنُ يَهُودَ عَلَى كِتَابٍ» . قَالَ: فَمَا مَرَّ بِيَ نِصْفُ شَهْرٍ حَتَّى تَعَلَّمْتُ فَكَانَ إِذَا كَتَبَ إِلَى يَهُودَ كَتَبْتُ وَإِذَا كَتَبُوا إِلَيْهِ قَرَأْتُ لَهُ كِتَابَهُمْ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ

وعنه قال: امرني رسول الله صلى الله عليه وسلم ان اتعلم السريانية. وفي رواية: انه امرني ان اتعلم كتاب يهود وقال: «اني ما امن يهود على كتاب» . قال: فما مر بي نصف شهر حتى تعلمت فكان اذا كتب الى يهود كتبت واذا كتبوا اليه قرات له كتابهم. رواه الترمذي

ব্যাখ্যাঃ কারী (রহিমাহুমাল্লাহ) বলেনঃ সতর্কতার স্বার্থে ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ইসলামী শারী‘আতে যা হারাম তা শিক্ষা গ্রহণ করার বৈধতার দলীল এ হাদীসে বিদ্যমান।

অনুরূপভাবে ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুমাল্লাহ) উক্ত মত পেশ করেন। কারণ শারী‘আয় ভাষা শিক্ষা করা হারাম বলে কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায় না। যেমন সুরইয়ানিয়্যাহ্, হিব্রু, হিন্দী, তুর্কী, ফার্সী প্রভৃতি ভাষা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمِنْ آيَاتِه خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافُ أَلْسِنَتِكُمْ অর্থাৎ ‘‘তার নিদর্শনাবলীর অন্যতম হলো আকাশমণ্ডলী ও জমিন সৃষ্টি এবং বিভিন্ন ভাষা।’’ (সূরাহ্ আর্ রূম ৩০ : ২২)

বরং সমস্ত ভাষাই বৈধ। তবে হ্যাঁ যেগুলো অনর্থক-বেকার সেগুলো পূর্ণ জ্ঞানী লোকেদের নিকটে নিন্দনীয়, কিন্তু যেগুলোর উপকার রয়েছে সেগুলো শিক্ষা করা মুস্তাহাব। যেমনটি আলোচ্য হাদীস থেকে বুঝা যায়।

‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ যিনাদ-এর বর্ণনায় আছে, أَنْ أَتَعَلَّمَ لَهٗ كَلِمَاتٍ مِنْ كِتَابِ يَهُود, আর আ‘মাশ-এর বর্ণনায় রয়েছে أَنْ أَتَعَلَّمَ السُّرْيَانِيَّةَ। হাফিয ইবনু হাজার ‘আসকালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ সম্ভবত সাবিত-এর ঘটনাটি খারিজার ঘটনার সাথে যুক্ত। কারণ, যে ব্যক্তি ইয়াহূদী লেখ্যরীতি সম্পর্কে অবগত হতে চাইবে তাকে তাদের ভাষা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা জরুরী। আর তাদের ভাষা সুর্ইয়ানিয়্যাহ্ কিন্তু প্রসিদ্ধ আছে তাদের ভাষা হলো হিব্রু। সুতরাং এক্ষেত্রে বলা যায়, হয়ত বর্ণনাকারী যায়দ প্রয়োজনের তাকীদে উভয় ভাষা শিক্ষা লাভ করেছিলেন। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭১৫)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৬০-[৩৩] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন কোন মাজলিসে পৌঁছে, সে যেন সালাম করে। অতঃপর যদি বসার প্রয়োজন হয়, তবে বসে পড়বে। অতঃপর যখন প্রস্থানের উদ্দেশে দাঁড়াবে সালাম দেবে। কেননা প্রথমবারের সালাম দ্বিতীয়বারের সালামের চেয়ে উত্তম নয় (অর্থাৎ- উভয় সালামই মর্যাদার দিক দিয়ে সমান)। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا انْتَهَى أَحَدُكُمْ إِلَى مَجْلِسٍ فَلْيُسَلِّمْ فَإِنْ بَدَا لَهُ أَنْ يَجْلِسَ فَلْيَجْلِسْ ثُمَّ إِذَا قَامَ فَلْيُسَلِّمْ فَلَيْسَتِ الْأُولَى بِأَحَقَّ مِنَ الْآخِرَةِ» رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد

وعن ابي هريرة رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «اذا انتهى احدكم الى مجلس فليسلم فان بدا له ان يجلس فليجلس ثم اذا قام فليسلم فليست الاولى باحق من الاخرة» رواه الترمذي وابو داود

ব্যাখ্যাঃ ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ উপস্থিত হওয়ার সময়ে প্রথম সালাম যেন তার অনিষ্ট হতে নিরাপত্তার ঘোষণাস্বরূপ এবং বিদায়কালীন সালাম হলো অনুপস্থিত থেকে তার কোন ক্ষতি থেকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করা। তিনি আরো বলেন, অনুপস্থিতির নিরাপত্তার চাইতে উপস্থিতির সময় যে সালাম দেয়া হয় তা অধিক উপযুক্ত নয়। বরং পরেরটি বেশি উপযুক্ত। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীস প্রমাণ করে যে, প্রস্থানের সময় যখন কোন দলকে সালাম দিবে তখন তার সালামের জবাব দেয়া দলের ওপর ওয়াজিব।

কাযী হুসায়ন ও আবূ সা‘ঈদ মুতাওয়াল্লী (রহিমাহুমাল্লাহ) বলেনঃ প্রস্থানের সময়ে কোন মানুষের সালাম দেয়ার যে প্রথাটি চালু রয়েছে, সেটা হচ্ছে দু‘আ। এর জবাব দেয়া মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। কারণ অভিবাদন সাক্ষাতের সময় হয়ে থাকে। প্রস্থানের সময় হয় না। তবে এ মতের বিরোধিতা করেন ইমাম শাশী। তিনি বলেন, সাক্ষাতের সময় যেমন সালাম দেয়া সুন্নাত, প্রস্থানের সময়েও সালাম দেয়া তেমনি সুন্নাত। সাক্ষাতের সময় যেমন সালামের জবাব দেয়া ওয়াজিব তেমনিভাবে প্রস্থানের সময় জবাব দেয়াও ওয়াজিব। এটাই হলো বিশুদ্ধ মত। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭০৬)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৬১-[৩৪] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রাস্তার উপর বসা ভালো নয়। তবে হ্যাঁ, সে ব্যক্তির জন্য ভালো, যে রাস্তা দেখিয়ে দেয়, সালামের জবাব দেয়, চক্ষু অবনত রাখে এবং বোঝা বহনকারীকে সাহায্য করে। (শারহুস্ সুন্নাহ্, এ বিষয়ে আবূ জুরাই-এর বর্ণিত হাদীস সদাকার মাহাত্ম্য অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে।)[1]

وَعَنْهُ أَنَّ
رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا خَيْرَ فِي جُلُوسٍ فِي الطُّرَقَاتِ إِلَّا لِمَنْ هَدَى السَّبِيلَ وَرَدَّ التَّحِيَّةَ وَغَضَّ الْبَصَرَ وَأَعَانَ عَلَى الْحُمُولَةِ» رَوَاهُ فِي «شَرْحِ السُّنَّةِ»
وَذَكَرَ حَدِيثَ أَبِي جُرَيٍّ فِي «بَاب فضل الصَّدَقَة»

وعنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «لا خير في جلوس في الطرقات الا لمن هدى السبيل ورد التحية وغض البصر واعان على الحمولة» رواه في «شرح السنة» وذكر حديث ابي جري في «باب فضل الصدقة»

ব্যাখ্যাঃ প্রথমত রাস্তায় বসা ঠিক নয়। যদি কোন প্রয়োজনে বসতে হয় তবে রাস্তার হক আদায় করতে হয়। যেমন- কাটা, বিষযুক্ত প্রাণী ইত্যাদি রাস্তা থেকে সরানো। রাস্তায় কোন গর্ত থাকলে তা পূর্ণ করা অথবা আশেপাশে কোন বাধা বিপত্তি থাকা যাতে কোন মুসলিম অন্ধকারে পড়ে যায় এমন কিছুকে দূরীভূত করা। অন্য হাদীসে রাস্তায় না বসতে অস্বীকার করলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে রাস্তার হক দিতে বললেন। তারা বলল, রাস্তার হক কী? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সালামের জবাব দিবে, নিষিদ্ধ বস্তু ও মহিলাদের থেকে দৃষ্টি অবনমিত রাখবে, পিঠে, প্রাণীর উপরে অথবা মাথায় বা অনুরূপভাবে বোঝা বহনকারীকে বোঝার কিছু অংশ বহন করে অথবা পুরো বোঝাকে বহন করে সাহায্য করবে। এটা তার প্রতি সহানুভূতি বা অনুগ্রহ করার শামিল। ভালো কাজের আদেশ দেয়া ও মন্দ কাজ থেকে বাধা দেয়াও রাস্তার হক। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১৯ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৯ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে