পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - অনুমতি প্রার্থনা
৪৬৬৭-[১] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমাদের কাছে আবূ মূসা আল আশ্’আরী(রাঃ) এসে বললেনঃ ’উমার(রাঃ) আমার কাছে জনৈক ব্যক্তিকে পাঠিয়ে আমাকে ডেকে পাঠালেন। আমি যথারীতি তাঁর দরজায় উপস্থিত হলাম এবং তিনবার সালাম দিলাম; কিন্তু আমার সালামের উত্তর দেয়া হলো না বিধায় আমি ফিরে গেলাম। অতঃপর (অন্যত্র) ’উমার(রাঃ) আমাকে বললেনঃ আমাদের কাছে আসতে তোমাকে কিসে বারণ করল? আমি বললাম, আমি এসেছিলাম এবং আপনার দরজায় তিনবার সালাম করেছিলাম, কিন্তু আপনাদের কেউই আমার সালামের জবাব দেননি। তখন আমি ফিরে গেলাম। কেননা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ তিনবার অনুমতি প্রার্থনা করে, আর অনুমতি না মেলে, তবে সে যেন ফিরে আসে। ’উমার(রাঃ) এটা শুনে বললেনঃ এ ব্যাপারে তোমাকে অবশ্যই প্রমাণ পেশ করতে হবে। আবূ সা’ঈদ আল খুদরী(রাঃ) বলেনঃ তখন আমি আবূ মূসা আল আশ্’আরী-এর সাথে ’উমার (রাঃ)-এর নিকট গেলাম এবং সাক্ষ্য দিলাম। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْإِسْتِئْذَانِ
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: أَتَانَا أَبُو مُوسَى قَالَ: إِنَّ عُمَرَ أَرْسَلَ إِلَيَّ أَنْ آتِيَهُ فَأَتَيْتُ بَابَهُ فَسَلَّمْتُ ثَلَاثًا فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيَّ فَرَجَعْتُ. فَقَالَ: مَا مَنَعَكَ أَنْ تَأْتِيَنَا؟ فَقُلْتُ: إِنِّي أَتَيْتُ فَسَلَّمْتُ عَلَى بَابِكَ ثَلَاثًا فَلم تردَّ عليَّ فَرَجَعْتُ وَقَدْ قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا اسْتَأْذَنَ أَحَدُكُمْ ثَلَاثًا فَلَمْ يُؤْذَنْ لَهُ فَلْيَرْجِعْ» . فَقَالَ عُمَرُ: أَقِمْ عَلَيْهِ الْبَيِّنَةَ. قَالَ أَبُو سَعِيدٍ: فَقُمْتُ مَعَهُ فذهبتُ إِلى عمرَ فشهِدتُ
ব্যাখ্যাঃ ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমায়ে উম্মাতের দলীলের আলোকে বিদ্বানগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, অনুমতি নেয়া শারী‘আতসিদ্ধ। সুন্নাত হলো সালাম দেয়া। অনুমতি চাইবে তিনবার। অতএব সালাম ও অনুমতি। উভয়টি করার কুরআনে স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
সালাম আগে দিবে না অনুমতি আগে চাইবে- এ নিয়ে ‘আলিমগণ মতভেদ করেছেন। তবে হাদীসে যা রয়েছে সেটা সঠিক। যার দরুন বিদ পন্ডিতগণ বলেছেন, আগে সালাম দিবে। তারপর অনুমতি চাইবে। যেমন সে বলবে, ‘‘আস্সালা-মু ‘আলায়কুম’’ আমি কি প্রবেশ করতে পারি? কারণ প্রথমে সালাম দেয়ার ব্যাপারে দু’টি সহীহ হাদীস রয়েছে।
২য় মতে আগে অনুমতি চাইবে। অতঃপর সালাম দিবে।
৩য় মতে, মাওয়ারদী বলেনঃ যদি অনুমতি প্রার্থনাকারীর চোখ প্রবেশ করার পূর্বে বাড়ীর লোকের ওপর পড়ে যায় সেক্ষেত্রে আগে সালাম দিবে। নতুবা আগে অনুমতি চাইবে। তিনবারের বেশি অনুমতি চাওয়া যাবে কিনা? এ নিয়ে কয়েকটি মত পাওয়া যায়। এক মতে, তিনবারের অধিক অনুমতি চাওয়া যাবে না। এরপরে ফিরে আসতে হবে। যেমনটি হাদীসের দাবী। আরেক মতে, যদি সে মনে করে যে, অনুমতিদাতা শুনছে কিন্তু অনুমতি দেয় না তখন সে প্রয়োজনে এর সংখ্যা বাড়াতে পারে। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২১৩৫)
তিনবার সালাম দেয়া বা অনুমতি চাওয়ার তত্ত্ব সম্পর্কে ইবনু আবী শায়বাহ্, ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব থেকে বর্ণনা করে বলেন, প্রথমটি হচ্ছে জানানোর জন্য এবং দ্বিতীয়টি হলো চিন্তা করার জন্য আর ৩য়টি হলো সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য। হয় সে অনুমতি দিবে অথবা প্রত্যাখ্যান করবে। (ফাতহুল বারী ১১শ খন্ড, হাঃ ৬২৪৫)
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যারা দাবী করে যে, খবরে ওয়াহিদ দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না তারা এ হাদীসকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করে এবং দাবী করে যে, ‘উমার আবূ মূসার হাদীসকে খবরে ওয়াহিদ হওয়ার কারণে গ্রহণ করেননি। এটা বাতিল মত। অথচ যারা এ হাদীসকে দলীলের উপযুক্ত মনে করে এবং তার প্রতি ‘আমল করে তারা ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। আর এর দলীল স্বয়ং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খুলাফায়ে রাশিদীন, সমস্ত সাহাবী ও পরবর্তী অসংখ্য ব্যক্তিদের নিকট থেকে পাওয়া যায়। ‘উমার আবূ মূসাকে প্রমাণ পেশ করতে বললেন এটা তার কথাকে রদ করার জন্য নয়। বরং ‘উমার বিদ্‘আতী, মিথ্যুক ও মুনাফিকদের মতো লোকেদের রসূলের ব্যাপারে এমন কথা যা তিনি বলেননি এবং কারো স্বার্থে রসূলের নামে মিথ্যা হাদীস বানানোর অপচেষ্টাকে শংকাবোধ করেছেন। এহেন শংকাবোধের রাস্তাকে বন্ধ করার জন্য আবূ মূসা ব্যতীত অন্যদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন। কারণ ‘উমার আবূ মূসা (রাঃ)-এর ব্যাপারে এরূপ ধারণার ঊর্ধ্বে রয়েছেন যে, তিনি রসূলের নামে এমন কথা বলবেন যা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেননি আসলে তিনি এভাবে অন্যদেরকে এ থেকে নিষেধ করেছেন। কারণ যখন অন্যরা আবূ মূসার এ ব্যাপারটি দেখবে অথবা জানতে পারবে তখন যাদের অন্তরে রোগ রয়েছে এবং হাদীস বানিয়ে বলে তারা আবূ মূসার মতো ভয় করবে। ফলে তারা হাদীস তৈরি করা এবং নিশ্চিত বিশ্বাস ছাড়াই হাদীসের প্রতি ঝুকে পড়া থেকে বিরত থাকবে।
এখান থেকে এ কথাও বুঝা যায় যে, খবরে ওয়াহিদ হওয়ার কারণে ‘উমার (রাঃ) আবূ মূসাকে প্রত্যাখ্যান করেননি। আসলে তিনি এ হাদীসের উপর ‘আমল করার জন্য অন্য ব্যক্তির সমর্থন কামনা করেছেন। আর এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, দু’জনের খবরকেও খবরে ওয়াহিদ ধরা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত মুতাওয়াতিরের পর্যায়ে না পৌঁছে। আবূ মূসা -এর ব্যাপারে উমার -এর যে দুর্বল ধারণা ছিল না- এ ব্যাপারে একাধিক দলীল রয়েছে। যেমন ইমাম মুসলিম আবূ মূসা (রাঃ)-এর বিষয়ে বর্ণনা করেন। উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) বলেন, হে ইবনুল খত্ত্বাব! আপনি রসূলের কোন সাহাবীকে শাস্তি দিবেন না। তখন ‘উমার বললেন, সুব্হা-নাল্ল-হ! আমি কিছু শুনেছি যেটার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়াকে ভালো মনে করেছি। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৬৯০)
মুওয়াত্ত্বায় রয়েছে, ‘উমার আবূ মূসা -কে বললেন, মনে রেখ হে আবূ মূসা! আমি তোমাকে অভিযুক্ত করছি না। বরং আমি শংকা করছি যে, মানুষ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে বানোয়াট কথা বলবে। (ফাতহুল বারী ১১শ খন্ড, হাঃ ৬২৪৫)
আবূ মূসা (রাঃ)-এর নিকট থেকে ‘উমার -এর প্রমাণ চাওয়া সম্পর্কে বুখারীর ভাষ্যকার ইমাম কিরমানী বলেনঃ এতে বেখেয়াল বা ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় ‘উমার (রাঃ) তার নিকট থেকে নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন। খবরে ওয়াহিদ হওয়ার কারণে গ্রহণ করেননি, এটা ঠিক নয়। এর দলীল এই যে, ‘উমার (রাঃ) শুধু হাম্বাল ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে ভ্রূণ হত্যার জরিমানা দাসমুক্ত করা সংক্রান্ত খবরে ওয়াহিদকে গ্রহণ করেছেন। এরূপ আরো প্রমাণ আছে যে, ‘উমার খবরে ওয়াহিদকে গ্রহণ করেছেন, যেমন- ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ)-এর নিকট থেকে জিয্ইয়াহ্ সংক্রান্ত খবরে ওয়াহিদও গ্রহণ করেছেন। কিরমানী আরো বলেনঃ এ হাদীসে এটাও স্পষ্ট বুঝা গেল যে, জ্ঞানী ব্যক্তির নিকটে এমন কোন জ্ঞান অজানা থেকে যায় যা তার চাইতে কম জ্ঞানী লোকের নিকট জানা থাকে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫১৭১)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - অনুমতি প্রার্থনা
৪৬৬৮-[২] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ তোমাকে অনুমতি দেয়া হলো, তুমি আমার দরজার পর্দা উঠিয়ে চলে আসবে এবং আমার গোপন কথাবার্তা শুনতে থাকবে, যে পর্যন্ত না আমি তোমাকে নিষেধ করি। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْإِسْتِئْذَانِ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ لِي النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذْنُكَ عَلَيَّ أَنْ تَرْفَعَ الْحِجَابَ وَأَنْ تَسْمَعَ سِوَادِي حَتَّى أَنهَاك»
ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসে প্রবেশের সময় অনুমতির জন্য কোন সংকেত ব্যবহার করার প্রমাণ রয়েছে। অতএব যখন আমীর বিচারক বা অনুরূপ ব্যক্তিবর্গ সাধারণ মানুষের জন্য কিংবা বিশেষ কোন ব্যক্তি বা দলের জন্য প্রবেশের লক্ষ্যে অনুমতি হিসেবে দরজা থেকে পর্দা উঠানো বা অনুরূপ অন্য কোন আলামাত বা সংকেতকে নির্ধারণ করে তখন অনুমতি না নিয়েই সংকেত দেখে প্রবেশ করা জায়িয। তদ্রূপ যখন কোন ব্যক্তি তার কোন চাকর, আমলা, বড় সন্তান-সন্ততি বা অন্যান্য সদস্যদের জন্য দরজায় পর্দা ঝুলানো বা অনুরূপ কোন সংকেত নির্ধারণ করে তখন অনুমতি না নিয়ে প্রবেশ করা নিষেধ। আবার যখন পর্দা উঠিয়ে নিবে তখন প্রবেশ করা সিদ্ধ হবে। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২১৬৯)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - অনুমতি প্রার্থনা
৪৬৬৯-[৩] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতার গৃহীত ঋণের লেনদেনের ব্যাপারে একদিন আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলাম এবং দরজায় করাঘাত করলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ কে? আমি বললামঃ আমি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমি, আমি (তথা পরিচয় কি?)। সম্ভবতঃ তিনি এরূপ বলাকে অপছন্দ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْإِسْتِئْذَانِ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي دَيْنٍ كَانَ عَلَى أَبِي فَدَقَقْتُ الْبَابَ فَقَالَ: «مَنْ ذَا؟» فَقُلْتُ: أَنَا. فَقَالَ: «أَنَا أَنا» . كَأَنَّهُ كرهها
ব্যাখ্যাঃ মুহাল্লাব (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ انا ‘আমি’ এখানে অপছন্দ হওয়ার কারণ হলো, এতে স্পষ্ট পরিচয় ফুটে উঠে না। তবে যদি অনুমতিদাতা অনুমতি প্রার্থীকে চিনতে পারে এবং অন্য কারো সাথে তালগোল পাকিয়ে না যায় তাহলে ভিন্ন কথা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংশয় সৃষ্টি হয়েই থাকে।
মাওয়ারদী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এটা অপছন্দ করার কারণ হলো, সে প্রশ্নের দাবী অনুযায়ী জবাব দেয়নি। কারণ যখন সে দরজায় নক করল তখন তো বুঝা গেল যে, এখানে একজন করাঘাতকারী আছে। অতঃপর যখন সে ‘‘আমি’’ বলে জানান দিতে চাইল যে দরজায় নককারী এখানে, এতে কিন্তু দরজায় আওয়াজ করাতে যতটুকু জানা গিয়েছিল তার চাইতে বেশি কিছু জানতে পারা যায়নি। সঙ্গত কারণে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপছন্দ করেছেন।
খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ انا আমি কথাটি উপযুক্ত জবাব নয় এবং যে উদ্দেশে এটার ব্যবহার হয়েছে তা অর্জন হয়নি। এভাবে বলা উপযুক্ত জবাব ছিল যে, انا جابر ‘‘আমি জাবির’’। যাতে প্রত্যাশিত দাবী অনুযায়ী স্পষ্ট পরিচয় প্রকাশ পেত। যেমন ইমাম বুখারী ‘‘আদাবুল মুফরাদ’’ বুরয়দাহ্-এর হাদীসে বর্ণনা করেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে এসেছেন আর আবূ মূসা (রাঃ) (কুরআন) পড়ছিলেন, তখন আমি আসলাম। অতঃপর তিনি বললেন, এটা কে? আমি বললাম যে, আমি বুরয়দাহ্। অনুরূপ উম্মু হানী একদিন রসূলের দরবারে এসে বললেন, আমি উম্মু হানী। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যখন কেউ তার উপনাম ছাড়া পরিচয় বলতে পারে না তখন এভাবে স্বীয় নাম বলা অপছন্দের কিছু নয়। অতএব যখন কারো ‘‘আমি শায়খ অমুক’’ ‘‘আমি অমুক কারী’’ বা ‘‘আমি কাযী অমুক’’ বলা ছাড়া পার্থক্য করতে না পারে তখন এরূপ বলাতে কোন দোষ নেই।
ইবনু জাওযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ انا ‘আমি’ বলা অপছন্দ হওয়ার কারণ হলো ‘আমি’ বলাতে গর্বের গন্ধ পাওয়া যায়। যেন ‘আমি’ বলা ব্যক্তি বুঝাতে চাচ্ছে যে, আমি এমন ব্যক্তি যার নাম ও বংশ উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। এর বিপরীত মত পোষণ করেন মুগলাত্বয় (مغلطاي)। তিনি বলেন, এ ধরনের মন্তব্য জাবির-এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। যদি জাবির এরূপই হতেন তাহলে তিনি এটা ছেড়ে দেয়ার জন্য শিক্ষা না দিয়ে এতে অভ্যস্ত থাকতেন।
ইবনুল ‘আরাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ জাবির হাদীসে দরজায় করাঘাত করার প্রমাণ রয়েছে। আদাবুল মুফরাদে রয়েছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরজায় নখ দ্বারা আঘাত করা হতো। তবে এটা বলা যায় যে, নখ দ্বারা দরজায় আঘাত করা হলো উন্নত আদব। দরজার নিকটে থাকা ব্যক্তির ক্ষেত্রে এরূপ নখ দ্বারা করাঘাত করা ভালো। আর যদি সে দরজা থেকে এমন দূরে অবস্থান করে যে, নখ দ্বারা আওয়াজ দিলে তার কাছে আওয়াজ পৌঁছে না তখন প্রয়োজনমত অন্য কিছু দ্বারা আঘাত করা মুস্তাহাব। সুহায়লী বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরজায় কড়া না থাকায় সাহাবীগণ নখ দ্বারা আঘাত করতেন। তারা এভাবে করাঘাত করতেন তার সম্মান, মর্যাদা ও আদবের প্রেক্ষিতে। (ফাতহুল বারী ১১শ খন্ড, হাঃ ২৬৫০)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - অনুমতি প্রার্থনা
৪৬৭০-[৪] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তাঁর ঘরে প্রবেশ করলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘরে এক পেয়ালা দুধ পেলেন। তখন আমাকে বললেনঃ হে আবূ হুরায়রা! আহলে সুফফার নিকটে যাও এবং আমার কাছে তাঁদেরকে ডেকে আনো। আমি তখন তাঁদের নিকট এসে তাঁদেরকে ডাকলাম। তাঁরা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে এলেন এবং অনুমতি প্রার্থনা করলেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে অনুমতি দিলেন, অতঃপর তাঁরা প্রবেশ করলেন। (বুখারী)[1]
بَابُ الْإِسْتِئْذَانِ
وَعَن أبي هريرةَ قَالَ: دَخَلْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوَجَدَ لَبَنًا فِي قَدَحٍ. فَقَالَ: «أَبَا هِرٍّ الْحَقْ بِأَهْلِ الصُّفَّةِ فَادْعُهُمْ إِلَيَّ» فَأَتَيْتُهُمْ فَدَعَوْتُهُمْ فَأَقْبَلُوا فَاسْتَأْذَنُوا فَأَذِنَ لَهُمْ فَدَخَلُوا
ব্যাখ্যাঃ এখান থেকে বুঝা গেল, যাকে খাওয়ার জন্য আহবান করা হয় তার জন্য সেই ডাক অনুমতির জন্য যথেষ্ট নয়। বরং নতুনভাবে অনুমতি চাইবে। তবে এটা আরেকটি হাদীসের বিপরীত। যেমন অপর হাদীসে রয়েছে رَسُولُ الرَّجُلِ إِلَى الرَّجُلِ إِذْنُهٗ। আরেক রিওয়ায়াতে আছে, إِذَا دُعِيَ الرَّجُلُ فَهُوَ إِذْنُهٗ অর্থাৎ কোন ব্যক্তিকে দূত মারফত ডাকা হলে সেটা তার জন্য অনুমতি। সে কারণ এর দ্বারা নিশ্চিত হুকুম সাব্যস্ত হয় না। এ দুই বিপরীতমুখী হাদীসের সমাধানে মুহাদ্দিসগণ ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। যেমন মুহাল্লাব বলেনঃ যদি ডাকা এবং আসার মধ্যে সময় দীর্ঘ হয়ে যায় সেক্ষেত্রে নতুনভাবে অনুমতির দরকার। অনুরূপভাবে যদি কারো নিকটে স্বাভাবিকভাবে অনুমতির প্রয়োজনের মতো হয় তবে তখন আবার অনুমতি নিতে হবে। এছাড়া পুনরায় অনুমতির দরকার নেই।
ইবনু তীন (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ হয়তো প্রথম হাদীসটি এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যার নিকটে অনুমতি নেয়ার মতো কেউ নেই। আর ২য়টি এর বিপরীত। তিনি আরো বলেন, সর্বদা অনুমতি নেয়াই সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন। এ দু’ হাদীসের সমন্বয়ে ইমাম ত্বহাবী বলেনঃ যদি আহুত ব্যক্তির সাথে দূত থাকে তার অনুমতি নিতে হবে না। শুধু সাক্ষাতের সালাম যথেষ্ট হবে। আর যদি দূত বিলম্ব করে অর্থাৎ সাথে না থাকে তাহলে অনুমতির প্রয়োজন আছে। কারণ আলোচ্য হাদীসে فَأَقْبَلُوا فَاسْتَأْذَنُوا শব্দ ব্যবহার করা তো প্রমাণ হয় যে, আবূ হুরায়রা তাদের সাথে ছিলেন না। অন্যথায় তিনি অবশ্যই فَأَقْبَلْنَا এভাবে বলতেন। বিধায় তারা পুনরায় অনুমতি চেয়েছেন। (ফাতহুল বারী ১১শ খন্ড, হাঃ ৬২৪৬)