পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - শুভ ও অশুভ লক্ষণ
৪৫৮২-[৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুভ লক্ষণ গ্রহণ করতেন। আর কোন কিছু হতে অশুভ ধারণা গ্রহণ করতেন না এবং তিনি ভালো নামকে পছন্দ করতেন। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَفَاءَلُ وَلَا يَتَطَيَّرُ وَكَانَ يُحِبُّ الِاسْمَ الْحَسَنَ. رَوَاهُ فِي شَرْحِ السّنة
ব্যাখ্যাঃ (يَتَفَاءَلُ) অর্থাৎ তিনি শুভ লক্ষণ অনুসন্ধান করতেন এবং তার অনুসরণ করতেন।
(وَكَانَ يُحِبُّ الِاسْمَ الْحَسَنَ) অর্থাৎ তার দ্বারা তিনি শুভ লক্ষণ গ্রহণ করতেন। এখান থেকে বুঝা যায় যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খারাপ নাম অপছন্দ করতেন এবং তাকে অশুভ লক্ষণ মনে করতেন। এটি তার ঐ ‘আম কথার মতো নয় যে, (وَلَا يَتَطَيَّرُ) আর তিনি অশুভ লক্ষণ গ্রহণ করতেন না। তবে হ্যাঁ তিনি খারাপ নামকে পরিবর্তন করে দিয়ে সুন্দর নাম রেখে দিতেন। যেমন বহু নামের ক্ষেত্রে এরূপ ঘটেছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - শুভ ও অশুভ লক্ষণ
৪৫৮৩-[৮] কত্বান ইবনু কবীসাহ্ (রহঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (ভাগ্যের ভালো-মন্দ নির্ণয়ের জন্য) পাখি উড়ানো বা ঢিল ছোঁড়া বা কোন কিছুতে অশুভ লক্ষণ মান্য করা শির্কের অন্তরভুক্ত। (আবূ দাঊদ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, হাদীসটির সনদে ‘‘হাইয়্যান আবুল আ‘লা’’ নামক বর্ণনাকারীকে নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, তার নাম হাইয়্যান। কেউ বলেন, হায়্যান আবুল আ‘লা; কেউ বলেন, হাইয়্যান ইবনু ‘উমায়র; অন্যরা বলেন, হিব্বান ইবনু মুখারিক- এত উলটপালট হওয়ায় বুঝা যাচ্ছে রাবী সংরক্ষেত নয়। এটিই প্রমাণ করে হাদীসটি য‘ঈফ, বিস্তারিত দেখুন- গয়াতুল মারাম ফী তাখরীজি আহাদীসিল হালাল ওয়াল হারাম ৩০১ নং, ১৮৩-১৮৪ পৃঃ।
وَعَن قَطن بن قَبيصةَ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الْعِيَافَةُ وَالطَّرْقُ وَالطِّيَرَةُ مِنَ الْجِبْتِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (الْعِيَافَةُ) ‘আইন’ বর্ণে যের যোগে। (الْعِيَافَةُ) বলা হয়, কোন পাখিকে উড়িয়ে দেয়া, শুভ লক্ষণ গ্রহণ করা ও তার নামের উপর ভিত্তি করে শিক্ষা গ্রহণ করাকে। যেমন, শকুনের কারণে শাস্তির লক্ষণ মনে করা, কাকের কারণে নির্বাসনের লক্ষণ মনে করা এবং হুদহুদের কারণে হিদায়াতের লক্ষণ মনে করা। (الطِّيَرَةُ) ও উভয়টির মধ্যে পার্থক্য হলো (الطِّيَرَةُ)-এর ক্ষেত্রে কেবল পাখির দ্বারাই অশুভ লক্ষণ মনে করা হয়। আর (الْعِيَافَةُ وَالطَّرْقُ)-এর ক্ষেত্রে শুধু পাখি নয়, বরং বিভিন্ন প্রাণী ও অন্যান্য জিনিসের মাধ্যমেও অশুভ লক্ষণ গণনা করা হয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
ইবনুল ‘আসীর (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ (الْعِيَافَةُ) পাখি উড়ানো, তার নাম দ্বারা তার শব্দ দ্বারা এবং তার অতিক্রম করার দ্বারা শুভ লক্ষণ গ্রহণ করা। আর এটি ‘আরবদের অভ্যাসে প্রচুর পরিমাণে পরিলক্ষিত হতো। এতে তাদের কবিতায় বেশি দেখা যেত। বানূ আসাদ দলের লোকেরা (الْعِيَافَةُ)-কে এভাবেই বর্ণনা করত।
(الطَّرْقُ) ‘ত্ব’ বর্ণে যবর ও ‘র’ বর্ণে সাকিন যোগে। তা হলো সেই কংকর নিক্ষেপ যা মহিলারা করে থাকে। বলা হয়, তা হলো বালুর অংশ। নিহায়াহ্ গ্রন্থে এভাবেই এসেছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৩৯০৩)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - শুভ ও অশুভ লক্ষণ
৪৫৮৪-[৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অশুভ লক্ষণ গ্রহণ করা শির্কী কাজ। এ বাক্যটি তিনি তিনবার উচ্চারণ করেছেন। আর আমাদের মধ্যে কেউ নেই যার মনে অশুভ লক্ষণের ব্যাপারে উদ্রেক না হয়; কিন্তু আল্লাহর ওপরে পূর্ণ তাওয়াক্কুল বা ভরসা করলে তিনি তা দূরীভূত করে দেন। (আবূ দাঊদ ও তিরমিযী)[1]
ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আমি শুনেছি, ইমাম বুখারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ সুলায়মান ইবনু হারব (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীসের শেষাংশটি এটা আমার মতে ইবনু মাস্’ঊদ-এর নিজস্ব কথা।
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الطِّيَرَةُ شِرْكٌ» قَالَهُ ثَلَاثًا وَمَا مِنَّا إِلَّا وَلَكِنَّ اللَّهَ يُذْهِبُهُ بِالتَّوَكُّلِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: سَمِعْتُ مُحَمَّدَ بْنَ إِسْمَاعِيلَ يَقُولُ: كَانَ سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ يَقُولُ فِي هَذَا الْحَدِيثِ: «وَمَا مِنَّا إِلَّا وَلَكِنَّ اللَّهَ يُذْهِبُهُ بِالتَّوَكُّلِ» . هَذَا عِنْدِي قَوْلُ ابْنِ مَسْعُودٍ
ব্যাখ্যাঃ الطِّيَرَةُ شِرْكٌ অর্থাৎ শির্ক হয় তাদের বিশ্বাসের কারণে, তাদের বিশ্বাস হলো নিশ্চয় অশুভ লক্ষণ তাদের জন্য উপকার নিয়ে আসে অথবা তাদের থেকে ক্ষতিকে দূরীভূত করে। এটাকে যখন তারা আবশ্যক ভেবে কাজ করে তখন এ ক্ষেত্রে তারা যেন আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করে ফেলে। আর এটাকে গুপ্ত শির্ক বলে। আর যে ব্যক্তি এ বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন কিছু স্বতন্ত্রভাবে উপকার নিয়ে আসতে পারে অথবা ক্ষতি সাধন করতে পারে তবে সে অবশ্যই প্রকাশ্য শির্ক করল।
কাযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এটাকে কেবল শির্ক হিসেবেই নামকরণ করা হয়েছে। কেননা তারা অপছন্দনীয় বিষয় সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে অশুভ লক্ষণের বস্তুটিকে প্রভাবিতকরণ মনে করত। আর সঠিকভাবে কারণগুলো বিবেচনা করলে গোপন শির্ক হয়। সুতরাং এর সাথে যদি মূর্খতা ও খারাপ ‘আক্বীদাহ্যুক্ত হয় তবে কেমন হবে?
(إِلَّا) অর্থাৎ অশুভ লক্ষণের দিক থেকে কিছু না কিছু ক্ষতি তার হয়। এর কারণ হলো আত্মা তার দিকে ঝুঁকে পড়ে। এখানে মুসতাসনাকে বিলুপ্ত করা হয়েছে, কারণ তা উচ্চারণ করা অপছন্দনীয়।
‘আল্লামা তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ অর্থাৎ অশুভ লক্ষণের দিক থেকে তার সন্দেহের উদ্রেক হওয়ার কারণে। তিনি তার এ কথাকে পূর্ণ করাকে অপছন্দনীয় মনে করেছেন। এর কারণ হলো অপছন্দনীয় অবস্থা তার সাথে সংযুক্ত হচ্ছে। আর কথা বলার আদবের মধ্যে এটিও এক প্রকার যে, কথা বলার সময় খারাপ কথার প্রতি ইঙ্গিত করে উচ্চারণ না করে শেষ করা, যেন সেটি নিজের জন্যও খারাপের দৃষ্টান্ত না হয়। ‘আল্লামা খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এর অর্থ হলো যার (অন্তরে) অশুভ লক্ষণ এসে পড়ে। আর এ বিষয়ে তার অন্তরে অপছন্দ অগ্রবর্তী হয়েছে। কিন্তু কথাকে সংক্ষিপ্ত করার জন্য তা বিলুপ্ত করা হয়েছে এবং শ্রোতার বুঝের উপর নির্ভর করা হয়েছে।
(وَمَا مِنَّا) থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা নয়, এটা ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ -এর কথা। আর এটিই সঠিক কথা। শায়খ ইয্যুদ্দীন ইবনু ‘আবদুস্ সালাম বলেন, (الطيرة والتطير) এর মধ্যে পার্থক্য হলো التطير বলা হয় অন্তরে খারাপ ধারণা পোষণ করাকে। আর الطيرة বলা হয় খারাপ ধারণার উপর ভিত্তি করে কোন কাজ করাকে।
(بِالتَّوَكُّلِ) অর্থাৎ তার ওপর নির্ভর করার কারণে এবং মহান আল্লাহর প্রতি সম্পৃক্ত করার কারণে। মোটকথা হলো কুমন্ত্রণা থেকে শিক্ষার কিছু নেই। যখনই অসর্তকতা চলে আসে, সাথে সাথেই ফিরে আসা আবশ্যক। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৩৯০৬; মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুফাতুল আহ্ওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৬১৪)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - শুভ ও অশুভ লক্ষণ
৪৫৮৫-[১০] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক কুষ্ঠরোগীর হাত ধরে তাকে নিজের খাদ্যপাত্রে খাওয়ায় শরীক করে নিলেন, অতঃপর বললেন, তুমি খাও আল্লাহ তা’আলার ওপরে পূর্ণ ভরসা এবং তাঁর ওপর তাওয়াক্কুল সহকারে। (ইবনু মাজাহ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে ‘‘মুফায্যাল ইবনু ফুযালাহ্’’ নামের বর্ণনাকারী যিনি য‘ঈফ। দেখুন- আল ইলালুল মুতানাহিয়্যাহ্ ইবনুল জাওযী ৮৬৯ পৃঃ, য‘ঈফাহ্ ১১৪৪।
وَعَنْ جَابِرٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخَذَ بِيَدِ مَجْذُومٍ فَوَضَعَهَا مَعَهُ فِي الْقَصْعَةِ وَقَالَ: «كُلْ ثِقَةً بِاللَّهِ وَتَوَكُّلًا عَلَيْهِ» . رَوَاهُ ابْن مَاجَه
ব্যাখ্যাঃ (أَخَذَ بِيَدِ مَجْذُومٍ) আরদাবীলী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা ‘উমার (রাঃ) যে কুষ্ঠরোগীর হাত ধরে প্লেটে বসান এবং এক সাথে খাবার খান তার নাম মু‘আয়ক্বীব ইবনু আবূ ফাতিমা আদ্ দাওসী।
(فِي الْقَصْعَةِ) এখানে দুই দিক থেকে তাওয়াক্কুলের চূড়ান্ত পর্যায় রয়েছে। প্রথমটি হলো তার হাত ধরা। আর দ্বিতীয় হলো তার সাথে খাওয়া।
আবূ যার থেকে ইমাম ত্বহাবী (রহিমাহুল্লাহ) বর্ণনা করেছেন, তুমি কোন অসুস্থ ব্যক্তির সাথে খাবার খাও তোমার রবের প্রতি বিনয়ী ও ঈমান সহকারে।
(كُلْ ثِقَةً بِاللهِ) অর্থাৎ তুমি আমার সাথে খাও, আমি আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রেখেছি। অর্থাৎ তার প্রতি আমি নির্ভর করেছি এবং তার প্রতি সকল বিষয় সোপর্দ করেছি।
ইমাম বায়হাক্বী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুষ্ঠরোগীর হাত ধরলেন এবং তাকে প্লেটে বসিয়ে তার সাথে খেলেন, এটা ঐ ব্যক্তির অধিকার যে অপছন্দীয় বিষয়ের ক্ষেত্রেও ধৈর্য ধরতে পারে এবং নিজের স্বাধীনতাকে বিসর্জন দিতে পারে।
আর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা وَفِرَّ مِنَ الْمَجْذُومِ كَمَا تَفِرُّ مِنَ الْأَسَدِ ‘‘তুমি কুষ্ঠরোগী হতে পলায়ন কর যেমনিভাবে তুমি বাঘ থেকে পলায়ন কর’’। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানী সাক্বীফ গোত্রের কুষ্ঠরোগীকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন, এতে অধিকার আছে সেই ব্যক্তির জন্য যে অপছন্দনীয় বিষয়ের উপর অক্ষম এবং ধৈর্য ধরতে পারে না। শারী‘আতের দৃষ্টিকোণে এটিও জায়িয রয়েছে। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কুষ্ঠরোগীর ঘটনায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিভিন্ন আসার (সাহাবীগণের বর্ণনা) এসেছে। এ থেকে দু’টি হাদীস প্রমাণিত হয়েছে। অর্থাৎ فِرَّ مِنَ الْمَجْذُومِ এ হাদীসটি এবং الْمَجْذُومِ فِي وَفْدِ ثَقِيفٍ ‘‘সাক্বীফ গোত্রের কুষ্ঠরোগী’’। আর জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুষ্ঠরোগীর সাথে বসে খেয়েছেন আর তাকে বলেছেন, তুমি খাও আল্লাহর ওপরে পূর্ণ ভরসা এবং তাঁর ওপর তাওয়াক্কুল সহকারে। মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, আমাদের একটি কুষ্ঠরোগী দাসী ছিল। সে আমার প্লেটে খেত, আমার গ্লাসে পানি পান করত এবং আমার বিছানায় ঘুমাত। নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ‘উমার অন্যান্য সালাফগণ কুষ্ঠরোগীর সাথে খাওয়া যায় মর্মে মত পোষণ করেছেন। আর তারা মনে করেন যে, তার থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেয়ার হাদীস রহিত হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে সঠিক কথা হলো সেই কথা যা অধিকাংশের বক্তব্য। তারা বলেন, এটা রহিত হয়নি। বরং উভয় হাদীসের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। তার থেকে দূরে থাকার নির্দেশ হলো মুস্তাহাব। এটা সতর্কতামূলক তবে ওয়াজিব নয়। আর তার সাথে বসে খাওয়ার বিষয়টি হলো তা জায়িযের দলীল। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৩৯২০; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৮১৭)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - শুভ ও অশুভ লক্ষণ
৪৫৮৬-[১১] সা’দ ইবনু মালিক হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্যাঁচার মধ্যে কুলক্ষণের কিছুই নেই। রোগের মধ্যে সংক্রামক বলতে কিছুই নেই এবং কোন কিছুর মধ্যে অশুভ লক্ষণ নেই। তবে হ্যাঁ, যদি কোন কিছুতে অকল্যাণ থাকে তবে ঘর, ঘোড়া এবং নারীর মধ্যে থাকবে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن سعدِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا هَامَةَ وَلَا عَدْوَى وَلَا طِيَرَةَ وَإِنْ تَكُنِ الطِّيَرَةُ فِي شَيْءٍ فَفِي الدَّارِ وَالْفرس وَالْمَرْأَة» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (وَإِنْ تَكُنِ الطِّيَرَةُ) অর্থাৎ কুলক্ষণ যদি সঠিক হত, অথবা ঘটত, অথবা পাওয়া যেত। এখানে (وَإِنْ تَكُنِ) ইস্তিসনা-এর জায়গায় বা ভূমিকায় এসেছে। অর্থাৎ কোন কিছুতে অকল্যাণ নেই কেবল এ তিনটি জিনিসের ক্ষেত্রে ব্যতীত। এখানে সংবাদ দেয়া হয়েছে যে, এ তিনটিতে বেশি ক্ষেত্রে অকল্যাণ হয়। তবে যেসব হাদীসে কুলক্ষণকে নাকোচ করা হয়েছে এ হাদীস তার বিরোধী নয়। মিরক্বাতুল মাফাতীহে এভাবেই এসেছে। এ তিনটি জীবনের অনিবার্য উপকরণের সাথেও নানা ধরনের বিপদাপদ লেগে থাকে, তবুও কেউ অশুভ লক্ষণের ধারণায় এগুলোকে বর্জন করে না। এজন্য তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যদি তোমাদের করো বাড়ি থাকে আর সে তাতে বসবাস করা অপছন্দ করে অথবা ঘোড়া থাকে সে তাতে আরোহণ করা অপছন্দ করে তবে যেন সে বাড়ী থেকে বেরিয়ে অন্য চলে যায়, তার স্ত্রীকে ত্বলাক দিয়ে দেয় এবং তার ঘোড়াটি বিক্রি করে দেয়। এও বলা হয় যে, বাড়ীর অকল্যাণ হলো তার সংকীর্ণতা এবং খারাপ প্রতিবেশী। আর স্ত্রীর অকল্যাণ হলো সন্তান জন্ম না হওয়া। আর ঘোড়ার অকল্যাণ হলো তার উপর চড়তে না দেয়া। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৩৯১৬-৩৯১৭)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - শুভ ও অশুভ লক্ষণ
৪৫৮৭-[১২] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন প্রয়োজনে ঘর হতে রওয়ানা হতেন, তখন কারো মুখে ’ইয়া- রা-শিদ’ (হে সঠিক পথের অনুসারী!), ’ইয়া- নাজীহ’ (হে সফলতা লাভকারী!) বা এ জাতীয় কোন শব্দ শুনা পছন্দ করতেন। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُعْجِبُهُ إِذَا خَرَجَ لِحَاجَةٍ أَنْ يَسْمَعَ: يَا رَاشِدُ يَا نَجِيحُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
ব্যাখ্যাঃ (يَا رَاشِدُ) ‘‘সরল পথের পথিক’’। (يَا نَجِيحُ) অর্থাৎ যার প্রয়োজন পূর্ণ হয়েছে তথা সফলতা লাভকারী।
যেহেতু হাদীসে বর্ণিত শব্দ বা নাম দু’টি সুন্দর অর্থবোধক, সেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একে ভালোবাসতেন। কারণ তিনি ভালো নাম ভালোবাসতেন এবং খারাপ নাম পরিবর্তন করে দিতেন। আরো একটি কারণ হলো উল্লেখিত নাম দু’টির মধ্যে সুসংবাদ আছে। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুসংবাদ দিতে বলেছেন,
بَشِّرُوا وَلَا تُنَفِّرُوا وَيَسِّرُوا وَلَا تُعَسِّرُوا ‘‘তোমরা সুসংবাদ দাও, দুঃসংবাদ দিও না এবং তোমরা সহজ কর, কঠিন করিও না’’- (মুত্তাফাকুন ‘আলায়হি)। [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - শুভ ও অশুভ লক্ষণ
৪৫৮৮-[১৩] বুরয়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কিছুতে অশুভ লক্ষণ গ্রহণ করতেন না। তাঁর অভ্যাস ছিল, তিনি যখন কোথাও কোন কর্মচারী পাঠাতে ইচ্ছা করতেন, তখন তার নাম জিজ্ঞেস করতেন। যদি তার নাম ভালো হত তাতে তিনি খুশি হতেন এবং খুশির রেখা তাঁর চেহারায় ফুটে উঠত। আর যদি তাঁর নাম মন্দ হত, তখন তাঁর চেহারায় অসন্তুষ্টির ভাব প্রকাশ পেত। যখন তিনি কোন লোকালয়ে প্রবেশ করতেন, তখন তার নাম জিজ্ঞেস করতেন। যদি তার নাম তার পছন্দমতো হত, আনন্দিত হতেন এবং খুশির ভাব তাঁর চেহারায় ফুটে উঠত। কিন্তু যদি তার নাম অপছন্দনীয় হত, তার ভাবও তাঁর চেহারায় পরিলক্ষিত হত। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ بُرَيْدَةَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ لَا يَتَطَيَّرُ مِنْ شَيْءٍ فَإِذَا بَعَثَ عَامِلًا سَأَلَ عَنِ اسْمِهِ فَإِذَا أَعْجَبَهُ اسْمه فَرح بِهِ ورئي بشر ذَلِك على وَجْهِهِ وَإِنْ كَرِهَ اسْمَهُ رُئِيَ كَرَاهِيَةُ ذَلِكَ على وَجْهِهِ وَإِذَا دَخَلَ قَرْيَةً سَأَلَ عَنِ اسْمِهَا فَإِنْ أَعْجَبَهُ اسْمُهَا فَرِحَ بِهِ وَرُئِيَ بِشْرُ ذَلِكَ فِي وَجْهِهِ وَإِنْ كَرِهَ اسْمَهَا رُئِيَ كَرَاهِيَة ذَلِك فِي وَجهه. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (كَانَ لَا يَتَطَيَّرُ مِنْ شَيْءٍ) অর্থাৎ তিনি কোন জিনিসকে কুলক্ষণ মনে করেন না, মানুষ সাধারণত যাকে কুলক্ষণ মনে করে।
(فَإِذَا بَعَثَ عَامِلًا) অর্থাৎ কোন স্থানে কোন শ্রমিককে পাঠানোর ইচ্ছা করেন।
(فِي وَجْهِه) তার নামের দ্বারা অশুভ লক্ষণ মনে করে নয়, বরং শুভ লক্ষণ আনয়ন করার জন্য। তিনি সেই খারাপ নাম পরিবর্তন করে সুন্দর নাম রেখে দিতেন।
ইমাম বাযযার এবং ‘ত্ববারানী’র ‘‘আওসাত্ব’’ কিতাবে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, যখন তোমরা কোন ব্যক্তির কাছে কাউকে প্রেরণ করবে তখন সুন্দর চেহারার কাউকে এবং সুন্দর নামের কাউকে প্রেরণ করবে।
ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ সুন্নাত হলো কোন ব্যক্তি তার ছেলের ও তার খাদেমের জন্য সুন্দর নাম চয়ন করবে। কেননা অপছন্দনীয় নাম কখনও তার তাকদীরের সাথে মিলে যায়। যেমন- কোন ব্যক্তি তার ছেলের নাম রাখল খসারাহ (ক্ষতিগ্রস্ত)। অতঃপর তার জীবনে আল্লাহর বিধান অনুপাতে কখনও ক্ষতি হয়ে গেল। ফলে কতিপয় লোক এরূপ বিশ্বাস রাখবে যে, এটি হয়েছে তার নামের কারণে। সুতরাং লোকেরা তাকে কুলক্ষণ মনে করে তাদের বসার ও মিলিত হওয়ার স্থান থেকে তাকে সরিয়ে দিবে।
‘‘শারহুস্ সুন্নাহ্’’ কিতাবে আছে, মানুষের জন্য অবশ্যই কর্তব্য হলো সে তার সন্তান ও তার খাদেমদের জন্য সুন্দর নাম চয়ন করবে। কেননা অপছন্দনীয় নাম কখনও তাকদীরের সাথে মিলে যায়।
সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব (রহিমাহুল্লাহ) বর্ণনা করেন যে, ‘উমার ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ) এক ব্যক্তিকে প্রশ্ন করেন, তোমার নাম কী? সে বলল, জাযরাহ্। তিনি বললেন, তোমার পিতার নাম কী? সে বলল, ইবনু শিহাব। তিনি বলনেন, তুমি কোথা থেকে এসেছ? সে জবাব দিল, ‘‘হারাকাহ্’’-তে। তিনি বললেন, তোমার বাড়ী কোথায়? সে বলল, হাররাতুন্ নার। তিনি বললেন, এটা কোথায়? সে বলল, ‘লাযা’ এলাকায়। ‘উমার (রাঃ) বললেন, তুমি তোমার পরিবারের কাছে গিয়ে দেখবে তারা পুড়ে গেছে। ‘উমার (রাঃ) যেমন বলেছিলেন ঠিক ঘটেছিলও তাই।
মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ সঠিক দিক থেকে হাদীসটি এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, জাহিলী যুগে তারা তাদের সন্তানদের নাম রাখত খারাপ নামে। যেমন কুকুর, বাঘ, সিংহ। আর তাদের দাসদের নাম রাখত রাশিদ (সঠিক পথের অনুসারী), নাজীহ (সফলতা লাভকারী) ইত্যাদি। তাদের বক্তব্য ছিল এরূপ যে, আমাদের সন্তানেরা আমাদের শত্রু। আর আমাদের খাদেমগণ আমাদের নিজেদের জন্য। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৩৯১৫)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - শুভ ও অশুভ লক্ষণ
৪৫৮৯-[১৪] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক ব্যক্তি এসে বলল : হে আল্লাহর রসূল! (প্রথমে) আমরা এমন একখানা ঘরে বসবাস করছিলাম, যেখানে আমাদের সংখ্যা ও সম্পদ বৃদ্ধি পেল। পরে আমরা সে ঘর পরিত্যাগ করে এমন এক ঘরে এসে উঠলাম, যেখানে আমাদের সংখ্যা ও সম্পদ হ্রাস পেল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা এ ঘর পরিত্যাগ করো। কেননা এটা ভালো নয়। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن أنس قَالَ: قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا كُنَّا فِي دَارٍ كَثُرَ فِيهَا عَدَدُنَا وَأَمْوَالُنَا فَتَحَوَّلْنَا إِلَى دَارٍ قَلَّ فِيهَا عَدَدُنَا وَأَمْوَالُنَا. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ذروها ذميمة» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ ذَرُوْهَا ذَمِيْمَةً অর্থাৎ এটা ভালো না হওয়ার কারণে তোমরা তা পরিত্যাগ কর। ইবনুল ‘আসীর এ কথা বলেছেন। এর অর্থ হলো এটি পরিবর্তন করার মাধ্যমে তোমরা এটি ছেড়ে দাও। কারণ এটি ভালো না। এটির পরিবেশ-বাতাস তোমাদের অনুকূলে না। আরদাবালী তাঁর ‘‘আযহার’’ কিতাবে বলেছেন, তোমরা এটা ছেড়ে দাও এবং এটি পরিবর্তন করে তোমাদের যে মন্দ ধারণা আছে যে, এ বাড়ীতে বিপদ নাযিল হয় সেটি খাঁটি করে নাও।
ইমাম খত্ত্বাবী ও ইবনু ‘আসীর (রহিমাহুমাল্লাহ) বলেনঃ তাদেরকে বাড়ী পরিবর্তনের নির্দেশ দিলেন এজন্য যে, তাদের অন্তরে অপছন্দ সৃষ্টি হয়েছে এ বাড়ীতে থাকার কারণে তাদের বিপদ হচ্ছে, এ চিন্তাকে বাতিল করার জন্য। যখন তারা তাদের এ বাড়ী পরিবর্তন করবে তখন তাদের ধারণা দূর হয়ে যাবে। আর যে সন্দেহে তারা চিন্তাগ্রস্ত হয়েছিল তা দূর হয়ে যাবে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৩৯১৯; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - শুভ ও অশুভ লক্ষণ
৪৫৯০-[১৫] ইয়াহ্ইয়া ইবনু ’আবদুল্লাহ ইবনু বাহীর (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে এমন এক লোক বর্ণনা করেছেন, যিনি ফারওয়াহ্ ইবনু মুসায়ক-কে বলতে শুনেছেন যে, আমি বললামঃ হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কাছে আব্ইয়ান নামে একটা জমিন আছে, যেখানে আমরা (ব্যবসায়িক প্রয়োজনে) কৃষিদ্রব্য ও খাদ্যপণ্য ইত্যাদি আমদানি-রফতানি করে থাকি, তবে সেখানে অসুখন্ডবিসুখ খুব একটা লেগেই থাকে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তুমি ঐ স্থানটি ছেড়ে দাও। কেননা অস্বাস্থ্যকর স্থানে বসবাস করা নিজেকে স্বেচ্ছায় ধ্বংস করার শামিল। (আবূ দাঊদ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘ফারওয়া’’ থেকে এক ব্যক্তি শুনেছেন, কিন্তু কোন্ ব্যক্তি শুনেছেন তার পরিচয় জানা যায় না। দেখুন- য‘ঈফাহ্ ১৭২০।
وَعَنْ يَحْيَى بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بَحِيرٍ قَالَ: أَخْبَرَنِي مَنْ سَمِعَ فَرْوَةَ بْنَ مُسَيْكٍ يَقُولُ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ عِنْدَنَا أَرْضٌ يُقَالُ لَهَا أَبْيَنُ وَهِيَ أَرْضُ رِيفِنَا وَمِيرَتِنَا وَإِنَّ وَبَاءَهَا شَدِيدٌ. فَقَالَ: «دَعْهَا عَنْكَ فَإِنَّ من القَرَف التّلف» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (أَبْيَنُ) এটি ‘হামযা’ বর্ণে যবর ও ‘বা’ বর্ণে সাকিন যোগে البيان মাসদার থেকে اسْمُ تَفْضِيلٍ-এর সিগাহ। এটি মূলত একজন ব্যক্তির নাম ছিল। যার দিকে عدن (‘আদ্ন)-কে সংযুক্ত করা হয়। বলা হয়, ‘আদ্নু আব্ইয়ান। ‘‘নিহায়াহ্’’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, এটি أحمد-এর ওজনে ইয়ামানের দিকে সমুদ্রের পাশের একটি গ্রাম। এও বলা হয় যে, ‘আদ্ন-এর একটি শহরে নাম।
(هِيَ أَرْضُ رِيفِنَا) ইবনুল ‘আসীর বলেনঃ এটা প্রত্যেক এমন জমিকে বলা হয়, যাতে চাষাবাদ ও খেজুর গাছ থাকে।
(مِيرَتِنَا) অর্থাৎ এক শহর থেকে অন্য শহরে আমাদের খাবার আমদানী-রফতানী করার জায়গা। (وَإِنَّ وَبَاءَهَا) অর্থাৎ যেখানে রোগ- ব্যাধি অধিক হয়।
(دَعْهَا عَنْكَ) অর্থাৎ তুমি সেখানে প্রবেশ করা বন্ধ করে দাও। কারণ এ জায়গা যে দেশে মহামারি হয়েছে সেখানকার মতো।
(فَإِنَّ من القَرَف التّلف) এর অর্থ হলো সেখানে রোগ-ব্যাধি বেশি থাকে তথা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে জীবনের ক্ষতি হয়। অতএব যে জায়গায় রোগ-ব্যাধি বেশি থাকে সেখানে গমন করা উচিত নয়।
ইমাম খত্ত্বাবী ও ইবনুল ‘আসীর (রহিমাহুমাল্লাহ) বলেনঃ এটি কুলক্ষণ ও সংক্রামক হিসেবে বলা হয়নি, বরং এটি বলা হয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে। কারণ সুস্থ শরীরের জন্য সুন্দর আবহাওয়া প্রয়োজন। আর অসুন্দর বা দূষিত আবহাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর ও শরীরকে অসুস্থ করে ফেলে। এটি হলো ডাক্তারদের পরামর্শ। আর এ সকল বিষয়ই মহান আল্লাহর নির্দেশ ও ইচ্ছায় হয়ে থাকে। আর আল্লাহর শক্তি ছাড়া অন্য কারো কোন (উপকার বা ক্ষতি করার) শক্তি নেই। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৩৯১৮; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)