পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - শুভ ও অশুভ লক্ষণ
"بَاب الفأل والطيرة" ’’শুভ ও অশুভ লক্ষণ’’ الفأل ’হামযা’র সাথে ব্যবহৃত হয়েছে। শব্দটি অধিকাংশ সময় ’হামযা’ ব্যতীত ব্যবহৃত হয়। নিহায়াহ্ গ্রন্থে এসেছে যে, الفأل শব্দটি মাহমূয তথা মাঝে ’হামযা’ দিয়ে ব্যবহৃত হয়েছে। যা ভালো ও মন্দ উভয় প্রকার অর্থ বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। আর الطيرة শব্দটির ’ত্বোয়া’ বর্ণে যের আর ’ইয়া’ বর্ণে যবর আবার কখনও ’ইয়া’ বর্ণে সাকিন যোগেও আসে। এ শব্দটি শুধু মন্দের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। আবার কদাচিৎ আনন্দের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়। কমূস প্রণেতা বলেনঃ الفأل হলো الطيرة-এর বিপরীত। অসুস্থ ব্যক্তি শুনে হে সালিম, হে ত্বালিব, হে ওয়াজিদ! সে এ ডাক শুনে এটাকে ভালো ও মন্দ উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহৃর করতে পারে। আর الطيرة-এর সময় মন্দের ক্ষেত্রে। আমি বলি, ’কমূস’ থেকে যে বিষয়টি শিক্ষণীয় তা হলো, الفأل ভালোর সাথে খাস বা নির্দিষ্ট। আবার কখনও তা মন্দের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। আর الطيرة শব্দটি কেবলমাত্র মন্দের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়। অতএব নির্গত হওয়ার মূলেই শব্দ দু’টি ভিন্নার্থে ব্যবহৃত হয়।
নিহায়াহ্ গ্রন্থ থেকে আরো বুঝা যায় যে, নির্গত হওয়ার মূলেই الفأل শব্দটি ’আম আর الطيرة শব্দটি খাস। কতক ব্যবহারের একটি অপরটির সমার্থবোধক। হাদীসসমূহ থেকে বুঝা যায় যে, الفأل থেকে الطيرة শব্দটি ’আম। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথায় বাহ্যিকভাবে বুঝা যায় যে, لَا طِيَرَةَ وَخَيْرُهَا الْفَأْلُ কোন কুলক্ষণ বা অশুভ লক্ষণ নেই আর তার উত্তম হলো الفأل বা শুভ লক্ষণ।
’আরবের অধিবাসীদের এ অভ্যাস ছিল যে, তারা যখন কোন কাজের জন্য ভ্রমণের ইচ্ছা করত তখন গাছের উপর থেকে কোন পাখিকে উড়াত, যদি পাখিটি ডানদিকে যেত তখন যাত্রা শুভ বলে মনে করত এবং ভ্রমণের জন্য বের হয়ে যেত। আর যদি পাখিটি বাম দিকে উড়ে যেত তাহলে এ ভ্রমণ বা যাত্রাকে অকল্যাণ বা অশুভ বলে মনে করত এবং যাত্রা থেকে বিরত থাকত।
’আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ الفأل এবং الطيرة-এর মাঝে পার্থক্য বুঝা যায়, আনাস থেকে বর্ণিত একটি মারফূ’ হাদীসে لَا عَدْوَى وَلَا طِيَرَةَ وَيُعْجِبُنِي الْفَأْلُ "قَالُوا: وَمَا الْفَأْلُ؟ قَالَ:" كَلِمَةٌ طَيِّبَةٌ রোগে সংক্রামিত হওয়া বলতে কিছুই নেই, কোন কিছুতে অশুভ নেই। তবে الْفَأْلُ আমার ভালো লাগে। সাহাবীগণ বললেন, الفأل কি জিনিস? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ’’ভালো কথা’’। আমি বলি, এটি কতই না চমৎকার কথা যে, ’আমভাবে الطيرة-কে নিষেধ করা হয় তবে তার দুই প্রকারের এক প্রকারকে নির্দিষ্ট করে দেয়া হল। (আর এক প্রকার বৈধ) তা হল- ভালো কথা বলা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
৪৫৭৬-[১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কোন কিছুকে অশুভ গণ্য করো না। অবশ্য কিছু শুভ লক্ষণ গ্রহণ করা উত্তম। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ শুভ লক্ষণ কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের কারো পক্ষ কোন ভালো কথা, যা সে শুনতে পায়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْفَأْلِ وَالطِّيَرَةِ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَا طِيَرَةَ وَخَيْرُهَا الْفَأْلُ» قَالُوا: وَمَا الْفَأْلُ؟ قَالَ: «الْكَلِمَةُ الصَّالِحَة يسْمعهَا أحدكُم»
ব্যাখ্যাঃ (لَا طِيَرَةَ) জাহিলী যুগের লোকেরা কোন সফরে বা প্রয়োজনে বের হওয়ার পূর্বে পাখি উড়াত। পাখি যদি উড়ে ডান দিক দিয়ে যেত তবে তারা এটাকে বারাকাত মনে করত। তখন তারা তাদের সফরে বা প্রয়োজনে বের হত। আর পাখি যদি উড়ে বাম দিকে যেত সেটাকে তারা অশুভ লক্ষণ মনে করত এবং তাদের সফর বা প্রয়োজন থেকে না বের হয়ে ফিরে আসত। আর এ কাজ তাদেরকে কল্যাণ থেকে অনেক সময় ধরে বিরত রাখত। এ কারণে শারী‘আত এটা নিষেধ করেছে এবং তা বাতিল বলে ঘোষণা করেছে। আর সংবাদ দিয়েছে যে, উপকার বা অপকার করার মতো কোন ক্ষমতাই তার নেই। আর এটাই হলো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী (لَا طِيَرَةَ)-এর অর্থ। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২২২৩)
(خَيْرُهَا الْفَأْلُ) অর্থাৎ ভালো কথা দ্বারা সুন্দর আচরণ বুঝানো হয়েছে। طَيْرٌ ‘ত্বয়র’ তথা পাখি থেকে এটা গ্রহণ করা হয়নি। সম্ভবত ব্যাখ্যাকার এ প্রশ্নটি দূর করার ইচ্ছা করে বলেছেন অর্থাৎ الْفَأْلُ خَيْرٌ مِنَ الطِّيَرَةِ শুভ লক্ষণ (ফাল) অশুভ লক্ষণ থেকে বহু উত্তম। এর অর্থ হলো الْفَأْلُ কল্যাণের সাথে সীমাবদ্ধ। যেমন الطِّيَرَةِ অকল্যাণের সাথে সীমাবদ্ধ। অতএব ধারাবাহিকতা এদিক থেকে যে, মধু সিরকা থেকে অধিক মিষ্টি। শীত গ্রীষ্ম থেকে অধিক ঠাণ্ডা।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ (خَيْرُهَا) মুয়ান্নাস যমীরটা الطِّيَرَةِ-এর দিকে ফিরে। আর এখান থেকে জানা যায় যে, তাতে কোন কল্যাণ নেই। এটা মহান আল্লাহর বাণীর মতই- أَصْحَابُ الْجَنَّةِ يَوْمَئِذٍ خَيْرٌ مُسْتَقَرًّا ‘‘সেদিন জান্নাতবাসীগণ থাকবেন উত্তম আবাসস্থলে’’- (সূরাহ্ আল ফুরকান ২৫ : ২৪)। অথবা এটা তাদের কথার মতই الصَّيْفُ أَحَرُّ مِنَ الشِّتَاءِ তথা গ্রীষ্ম শীত থেকে বেশি গরম। এখানে যেমন শীতের মধ্যে কোন গরম নেই ঠিক তেমনি হাদীসের শব্দ لَا طِيَرَةَ وَخَيْرُهَا الْفَأْلُ এখানেও طِيَرَةَ -এর মধ্যে কোন কল্যাণ নেই, বরং কল্যাণ সবটুকুই রয়েছে الْفَأْلُ-এর মধ্যে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
(يسْمعهَا أحدكُم) সেই কথাটি কেউ ভালো মনে করে শুনে। যেমন হারানো জিনিসের মালিক বলল, হে প্রাপ্ত ব্যক্তি। যেমন- ব্যবসায়ী বলর, হে খাবার বিক্রেতা। মুসাফির বলল, হে নিরাপদ ব্যক্তি..... ইত্যাদি।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ الْفَأْلُ-কে অনুমোদন দেয়া ও طِيَرَةَ -কে নিষেধ করার কারণ হলো যখন কোন ব্যক্তি কোন জিনিস দেখে সেটাকে ভালো মনে করল আর তার প্রয়োজন পূরণের জন্য তাকে উৎসাহিত করল। অতএব তার উচিত হলো ঐ কাজটা করে ফেলা। আর এর পরে যদি সে কোন ক্ষতিকর জিনিস দেখল, আর তার প্রয়োজন পূরণে তাকে বিরত রাখল, তাহলে তা গ্রহণ করা তার জন্য বৈধ হবে না। বরং সে তার পথে বেরিয়ে পড়বে। যদি ওটাকে অশুভ মনে করে যাত্রা বন্ধ করে দেয় তাহলে সেই ক্ষেত্রে সেটা الطِّيَرَةِ বলে গণ্য হবে। কারণ সে অশুভ লক্ষণ হিসেবে সেটাকে গণ্য করেছে।
মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّا تَطَيَّرْنَا بِكُمْ ‘‘তোমাদেরকে অশুভ লক্ষণ মনে করি’’ - (সূরাহ্ ইয়াসীন ৩৬ : ১৮)। তিনি আরো বলেন, طَائِرُكُمْ مَعَكُم অর্থাৎ ‘‘তোমাদের অশুভ লক্ষণ গ্রহণের কারণে’’- (সূরাহ্ ইয়াসীন ৩৬ : ১৯)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - শুভ ও অশুভ লক্ষণ
৪৫৭৭-[২] উক্ত রাবী (হুরায়রা (রাঃ) হতে) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রোগের সংক্রমণ বলতে কিছুই নেই, কোন কিছুতে অশুভ নেই। প্যাঁচার মধ্যে কু-লক্ষণ নেই এবং সফর মাসেও কোন অশুভ নেই। তবে কুষ্ঠরোগী হতে পলায়ন করো, যেমন- তুমি বাঘ হতে পালিয়ে থাকো। (বুখারী)[1]
بَابُ الْفَأْلِ وَالطِّيَرَةِ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا عَدْوَى وَلَا طِيَرَةَ وَلَا هَامة وَلَا صقر وفر الْمَجْذُومِ كَمَا تَفِرُّ مِنَ الْأَسَدِ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
ব্যাখ্যাঃ (لَا عَدْوٰى) ‘আল্লামা তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ العَدْوٰى বলা হয়, একজনের রোগ অন্যজনের দিকে অনুপ্রবেশ করাকে। ডাক্তারদেরও এ বিশ্বাস যে, সাত প্রকারের রোগ একজন থেকে অন্যজনের মাঝে অনুপ্রবেশ করে। তা হলো الْجُذَامُ (কুষ্ঠ রোগ), الْجَرَبُ (খুজলী), الْجُدَرِيُّ (মহামারী, বসন্ত), الْحَصْبَة (প্লেগ, মহামারী), الْبَخْرُ (জ্বর), الرَّمَد ( চোখ উঠা)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
শেষাংশে বলা হয়েছে, (وفر من الْمَجْذُومِ كَمَا تَفِرُّ مِنَ الْأَسَدِ) ‘‘আর তুমি পলায়ন কর কুষ্ঠ রোগ হতে, যেমন তুমি বাঘ হতে পলায়ন করে থাকওঃ’’।
অন্য এক বর্ণনায় মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, لا عدوى إذا رايت المجذوم ففِرَّ مِنْ الْمَجْذُومِ كَمَا تَفِرُّ مِنَ الْأَسَدِ ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ বলতে কিছু নেই তবে তুমি যখন কুষ্ঠরোগী দেখবে তখন তুমি পালায়ন কর, যেমন তুমি বাঘ হতে পলায়ন কর। সহীহ মুসলিমে এসেছে, সাক্বীফ গোত্রে এক কুষ্ঠ ব্যক্তি রোগী ছিল, তার কাছে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোক পাঠিয়ে বললেন, আমরা তোমার বায়‘আত নিয়েছি, সুতরাং তুমি ফিরে যাও। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুষ্ঠরোগীর সাথে বসে খেয়েছেন আর বলেছেন, আল্লাহর ওপর বিশ্বাস করছি এবং তার ওপরই ভরসা করছি। ‘উমার ও সাহাবীদের একদল কুষ্ঠরোগীর সাথে খাওয়া যায় এমন মত পোষণ করেছেন এবং তারা মনে করেন যে, কুষ্ঠরোগী থেকে দূরে থাকার নির্দেশ মানসূখ হয়ে গেছে। তবে সঠিক কথা হলো এটি রহিত হয়নি। বরং উচিত হলো উভয় হাদীসের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা। কুষ্ঠরোগী থেকে দূরে থাকার ও পলায়ন করার হাদীস হলো মুস্তাহাব ও সতর্কতামূলক। আর তার সাথে বসে খাওয়ার হাদীস হলো জায়িযের প্রমাণ।
আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ (لَا عَدْوٰى) কোন ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ নেই। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রশ্নের জবাবে আরো বলেন, فمن أعدى الأول ؟ অর্থাৎ তবে প্রথমজনকে কে রোগ অনুপ্রবেশ করাল? এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে, সংক্রামক বা ছোঁয়াচে রোগ নেই তবে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী (وفر من الْمَجْذُومِ كَمَا تَفِرُّ مِنَ الْأَسَدِ) থেকে বুঝা যাচ্ছে সংক্রামক রোগ আছে, এ দুই হাদীসের সমন্বয় করা হয়েছে কয়েকভাবে-
প্রথমটি হলো: একজনের রোগ অন্যজনের শরীরে অনুপ্রবেশ করাকে একেবারে নিষেধ করা হয়েছে। আর কুষ্ঠরোগী থেকে পলায়ন করার নির্দেশ সাধারণত কুষ্ঠরোগীর ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকার জন্য। কেননা একজন সুস্থ শরীর সম্পন্ন ব্যক্তি যখন এ বিপদ দেখে তখন সে এটাকে বড় করে দেখে এবং তার আফসোস বৃদ্ধি পায়। যেমন- হাদীসেও বর্ণিত হয়েছে, لا تديموا النظر إلى المجذومين তোমরা সর্বদা কুষ্ঠরোগীর দিকে নযর দিবে না। সম্ভবত এখানে এ অর্থই নেয়া হয়েছে।
দ্বিতীয়টি হলো: ভিন্ন দু’টি অবস্থার ক্ষেত্রে হ্যাঁ-বোধক ও না-বোধক সম্বোধন করা হয়েছে। যেমন- এসেছে (لَا عَدْوٰى)-এর দ্বারা ঐ ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে যার দৃঢ় বিশ্বাস ও সঠিক তাওয়াক্কুল রয়েছে। যেমন- ব্যক্তি নিজ থেকে عَدْوٰى-এর বিশ্বাসকে প্রতিহত করতে পারে। যেমনিভাবে সে ঐ কুলক্ষণকে প্রতিহত করতে সক্ষম যা সকল মানুষের অন্তরে জাগ্রত হয়। তবে তার দৃঢ় বিশ্বাস তাতে প্রভাবিত হয় না। এটি তার স্বভাবগত প্রকৃতির শক্তির মতো যা ঐ সকল বিষয়কে প্রতিহত করে। সুতরাং তা বাতিল করেছে। আর এ দৃষ্টিকোণ থেকেই সম্ভবত জাবির -এর হাদীসটি ব্যবহৃত হয়েছে- তা হলো, একই পাত্রে কুষ্ঠরোগীর সাথে খাওয়া-দাওয়া করা এবং এ জাতীয় কাজ করা, আর হাদীসে বর্ণিত فِرَّ مِنْ الْمَجْذُومِ এটি মূলত দুর্বল ঈমানের অধিকারী ব্যক্তির জন্য। যার সেই পরিমাণ তাওয়াক্কুল নেই যা দিয়ে সে عَدْوٰى-এর বিশ্বাসকে প্রতিহত করতে পারে। অতএব এটি দিয়ে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে عَدْوٰى-এর দরজাকে চিরতরে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যাতে করে হ্যাঁ-বোধকের জন্য সরাসরি কারণ হয়ে যায়।
তৃতীয়টি হলো: কর্মপদ্ধতি সমূহ- কাযী আবূ বকর বাক্বিল্লানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ جذام তথা কুষ্ঠরোগের ক্ষেত্রে عَدْوٰى তথা একজনের রোগ অন্যজনের শরীরে অনুপ্রবেশ করা প্রমাণিত। যেমন- সাধারণভাবে عَدْوٰى-কে নিষেধ করা হতে খাস বা নির্দিষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, সুতরাং তার কথার অর্থ হলো (لَا عَدْوٰى) অর্থাৎ একজনের রোগ অন্যজনের শরীরে অনুপ্রবেশ করতে পারে না তবে কুষ্ঠরোগ, শ্বেতরোগ এবং পাঁচড়া রোগ ব্যতীত।
চতুর্থটি হলো: কুষ্ঠরোগী থেকে পলায়ন করার নির্দেশ عَدْوٰى-এর দৃষ্টিকোণ থেকে না বরং অভ্যাসগত দিক থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তা হলো রোগ এক শরীর থেকে অন্য শরীরে পোশাক, একত্রে মিলিত হওয়া এবং ঘ্রাণ নেয়া থেকে ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে অত্যধিক মিলিত হওয়ার ফলে অনেক রোগ অসুস্থ ব্যক্তির শরীর থেকে সুস্থ ব্যক্তির শরীরে অনুপ্রবেশ করে। এটি ইবনু কুতায়বাহ্-এর পদ্ধতি। তিনি বলেন, কুষ্ঠরোগীর বেজায় গন্ধ থেকে যারা তার সাথে দীর্ঘ সময় উঠা-বসা করে, কথা-বার্তা বলে এবং তার সাথে ঘুমায় সে ব্যক্তিও আক্রান্ত হয়। অনুরূপভাবে পুরুষের থেকে অনেক মহিলা আক্রান্ত হয়, আবার এর বিপরীতও হয় এবং তার সন্তানও আক্রান্ত হয়। আর এ কারণেই ডাক্তারগণ مَجْذُومِ থেকে দূরে থাকতে বলেনঃ এটি عَدْوٰى-এর কারণে না বরং গন্ধ প্রভাব ফেলে যে কারণে। এ কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও বলেছেন لا يورد ممرض على مصح অসুস্থ ব্যক্তি কোন সুস্থ ব্যক্তির নিকট গমন করবে না।
পঞ্চমটি হলো: عَدْوٰى-কে নিষেধ করার উদ্দেশ্য হলো কোন জিনিস নিজের থেকে অন্যকে সংক্রামিত করতে পারে না, এ ক্ষমতা তার নেই। যেমনটি বিশ্বাস করত জাহিলী যুগের লোকেরা। তাদের বিশ্বাস ছিল, রোগ নিজ থেকে অন্যের দেহে অনুপ্রবেশ করার ক্ষমতা রাখে। তারা আল্লাহর সাথে রোগকে সম্পর্কিত করত না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সেই বিশ্বাস বাতিল ঘোষণা করেন। এ কারণে তিনি مَجْذُومِ তথা কুষ্ঠরোগীর সাথে বসে খেয়েছেন এটা দেখানোর জন্য যে আল্লাহই অসুস্থ করেন আবার তিনিই আরোগ্য দান করেন। তিনি কুষ্ঠরোগীর নিকটবর্তী হতে নিষেধ করেছেন তাদেরকে এটা বর্ণনা করার জন্য যে, এটা একটা উপকরণ, যা কারও ওপর প্রভাব খাটাতে পারে। নিষেধটা প্রমাণ করে যে, উপকরণ সত্য। আর তার করাটা প্রমাণ করে যে, তা সীমাবব্ধ নয়। আল্লাহ যাকে চান সুস্থ রাখেন আর যাকে চান তার ওপর উপকরণ প্রভাব ফেলে।
ইমাম শাফি‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ)-এর কথা বর্ণনা করার পর ইমাম বায়হাক্বী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, কুষ্ঠরোগ ও ধবল রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসকগণ বিশ্বাস করেন যে, এটি স্বামী-স্ত্রীকে বেশি সংক্রমিক করে (একজনের থেকে অন্যজনের শরীরে অনুপ্রবেশ করে)।
এটা এমন রোগ যা সহবাস করতে বাধা দেয়। একজনের শরীরে এটা হলে সহবাসের কারণে অন্যজনের ও আক্রমণ করে। কোন স্ত্রী এ রোগে আক্রান্ত হলে তার সাথে সহবাস করলে তার স্বামীও আক্রান্ত হয়ে পড়ে। কোন পিতা-মাতা যদি কুষ্ঠ বা ধবল রোগে আক্রান্ত থাকে তবে তাদের সন্তানরা খুবই কম ভালো থাকে। যদিও তারা ভালো থাকে তবে তাদের বংশধরগণের মধ্যে কেউ আক্রান্ত হবে।
ইমাম বায়হাক্বী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (لَا عَدْوٰى) এটি ছিল মূলত জাহিলী যুগে তাদের বিশ্বাসের দৃষ্টিকোণ থেকে। তারা কাজটাকে গায়রুল্লার দিকে সম্পৃক্ত করত। অথচ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে অসুস্থ ব্যক্তির সাথে মিলিত হওয়ার কারণে আক্রান্ত করেন। এ কারণেই হাদীসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ فر من المجذوم فرارك من الأسد لا يورد ممرض على مصح । প্লেগ (মহামারির) ক্ষেত্রে এসেছে, من سمع به بأرض فلا يقدم عليه যে ব্যক্তি কোন স্থানে ঐ রোগের খবর পাবে যে, তারা তাতে আক্রান্ত সেভাবে গমন করবে না। আর এসবই আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীর অনুযায়ী। দুই হাদীসের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য ইবনুস্ সলাহ-ও এই মতের অনুসরণ করেছেন। আর তার পরবর্তীগণ ও তার পূর্বের এক দলও। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৭০৭)
وَلَا هَامَةَ এটি এক প্রকার পাখি যাকে মানুষ অশুভ মনে করে। এটি একটি বড় পাখি। দিনের বেলায় তার চোখ দুর্বল থাকে। এ পাখি রাতের বেলায় উড়ে বেড়ায় এবং ভালো দেখে। ধ্বংস স্তুপে এ পাখি থাকে। তাকে পেঁচা বা পেচকও বলা হয়।
জাহিলী যুগে ‘আরবদের এ বিশ্বাস ছিল যে, মৃতের হাড্ডি পঁচে গলে তা থেকে هَامَةَ বা প্যাঁচার জন্ম হত। আর সে তখন কবর থেকে বেরিয়ে পড়ত এবং ঘোরাঘুরি করত। আর পরিবারের খবর নেয়ার জন্য আসত। এও বলা হয়, জাহিলী যুগে এটিও বিশ্বাস ছিল যে, নিহত ব্যক্তির আত্মা থেকে هَامَةَ বা একটি পাখি জন্ম নেয়, যে বলতে থাকে, আমাকে পানি পান করাও, আমাকে পানি পান করাও। আর যখন তার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ করা হয়, তখন সে উড়ে যায়। ফলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিশ্বাসকে বাতিল ঘোষণা করেছেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর সুনানে বর্ণিত, বাকিয়্যাহ্ বলেনঃ আমি মুহাম্মাদ ইবনু রশীদ-কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর রসূলের কথা لَا هَامَةَ সম্পর্কে। অতঃপর তিনি বলেন, জাহিলী যুগে তাঁরা বলত, কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করার পর তাকে দাফন করা হলে তার কবর থেকে একটি هَامَةَ বা প্যাঁচা বের হয়।
‘আরবরা এটাকে অশুভ বলেনঃ জাহিলী যুগে এটি কারো আঙ্গিনায় পতিত হলে সে ব্যক্তি তার নিজের অথবা পরিবারের কারো মৃত্যু সংবাদ মনে করত। এটি হলো মালিক ইবনু আনাস (রহিমাহুল্লাহ)-এর তাফসীর। আর তাদের দ্বিতীয় কথা হলো ‘আরবরা এটাকে মৃত্যুর হাড় মনে করত। বলা হতো যে, তার আত্মা বের হলে প্যাঁচা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর এটিই হলো অধিকাংশ ‘উলামার মত এবং এটিই প্রসিদ্ধ মত। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
وَلَا صَفَرَ ব্যাখ্যাকার বলেনঃ জাহিলী যুগে ‘আরবদের ‘আক্বীদাহ্ ছিল এই যে, এটি হলো পেটের একটি সাপ অথবা কীট যা ক্ষুধার সময় মানুষকে দংশন করতে থাকে।
ইমাম আবূ দাঊদ (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর সুনান গ্রন্থে বলেন, বাক্বিয়্যাহ্ বলেনঃ আমি মুহাম্মাদ ইবনু রশীদকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, সফর মাস আগমনকে তারা (জাহিলী যুগের ‘আরবরা) কুলক্ষণ মনে করত। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, لَا صَفَرَ। তিনি বলেন, আমি কাউকে বলতে শুনেছি যে, এটি হলো পেটের ব্যথা, যেটাকে তারা অন্যের শরীরে অনুপ্রবেশ করে বলে বিশ্বাস করত।
ইমাম আবূ দাঊদ এবং ইমাম মালিক (রহিমাহুমাল্লাহ) বলেনঃ জাহিলী যুগে তারা যুদ্ধ-বিগ্রহের জন্য সফর মাসকে হালাল করত আবার হারামও করত। সেজন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, لَا صَفَرَ।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ বলা হয়ে থাকে যে, ‘আরবদের বিশ্বাস ছিল পেটের ভিতর এক ধরনের প্রাণী হত, ফলে ক্ষুধার সময় দারুণ যন্ত্রণা করত, এমনকি ঐ ব্যক্তিকে মেরে ফেলত। আর তাদের বিশ্বাস ছিল এই যে, পাঁচড়া থেকে সংক্রামক ছড়িয়ে পড়ে। এ তাফসীরটি সহীহ।
কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ لَا صَفَرَ বলতে তাদের ভুল ধারণাসমূহ যেমন এ মাসে বেশি বেশি বিপর্যয় ও বিপদ হয়, সম্ভবত তা খন্ডন করা হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - শুভ ও অশুভ লক্ষণ
৪৫৭৮-[৩] উক্ত রাবী (আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রোগে সংক্রামিত কিছু নেই। প্যাঁচার মধ্যে কুলক্ষণের কিছু নেই এবং সফর মাসেও অশুভ নেই। তখন এক বেদুঈন বলে উঠল : হে আল্লাহর রসূল! তাহলে উটের এ দশা কেন হয় যে উটের পাল ময়দানের হরিণের মতো বিচরণ করে, এমতাবস্থায় তাদের সাথে চর্ম রোগাক্রান্ত একটি উট এসে মিশে তাদেরকেও চর্মরোগী বানিয়ে দিলো। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আচ্ছা, তাহলে প্রথম উটটির চর্মরোগ কোথা হতে এসেছিল? (বুখারী)[1]
بَابُ الْفَأْلِ وَالطِّيَرَةِ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا عَدْوَى وَلَا هَامَةَ وَلَا صفر» . فَقَالَ أَعْرَابِي: يَا رَسُول فَمَا بَالُ الْإِبِلِ تَكُونُ فِي الرَّمْلِ لَكَأَنَّهَا الظباء فيخالها الْبَعِير الأجرب فيجر بِهَا؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَمن أعدى الأول» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যাঃ (وَلَا صفر) সফর মাসকে কেন্দ্র করে তাদের বিশ্বাসকে নাকোচ করা হয়েছে। তাদের বিশ্বাস ছিল এই যে, এটি পেটের এমন এক রোগ যা সংক্রামিত করে। অথবা পেটের এক প্রকার সাপ যা মানুষকে সংক্রামিত করে। অথবা এটি দ্বারা সফর মাসকে বুঝাত, তবে তাদের বিশ্বাস ছিল সফর মাসে কুলক্ষণ আগমন করে। অথবা এটি ক্ষুধার কারণে পেটের মধ্যের একটি রোগ। অথবা এটি এমন পানির সমাবেশ যেখান থেকে পানি চাওয়া হয়।
(كَأَنَّهَا الظباء) অর্থাৎ অসুখ থেকে নিরাপদ, সবল এবং কর্মচঞ্চলতার দিক থেকে সে যেন হরিণের মতো। এটা বলার কারণ হলো যখন সে মাটিতে থাকে তখন মাঝে মাঝে সেখান থেকে কিছু অংশ সাথে নিয়ে উঠে। (الْبَعِير الأجرب) যে উটের শরীরে পাঁচড়া অথবা চুলকানি থাকে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৩৯০৭)
فَمن أعدى الأول অর্থাৎ যদি তার পাঁচড়া রোগটি সংক্রামকের কারণে হয়ে থাকে তবে প্রথমটিকে কে সংক্রামিত করেছে? এর অর্থ হলো তবে কে তার সাথে পাঁচড়া রোগটি যুক্ত করে ছিল? প্রথম ও শেষ সকলকে মহান আল্লাহর দিকে তথা তাঁর ফায়সালার দিকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ তবে এ রোগটি কে নিয়ে আসলো? বাহ্যিকভাবে বলা যায় যে, প্রথমটিকে কিসে সংক্রামিত করল? যেন সে জবাবে বলে, আল্লাহ তা‘আলা। অর্থাৎ মহান আল্লাহই সংক্রামিত করেন অন্য কেউ সংক্রামিত করতে পারে না। তিনি সমস্যার কারণে সংক্রামকের উল্লেখ করেছেন। যেমন তার কথা, كَمَا تَدِينُ تُدَانُ যেমন কর্ম তেমন ফল অর্থাৎ- ঐ সমস্যা কে দিয়েছেন? (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - শুভ ও অশুভ লক্ষণ
৪৫৭৯-[৪] উক্ত রাবী (হুরায়রা (রাঃ) হতে) বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রোগের সংক্রামক বলতে কিছুই নেই। প্যাঁচার মধ্যে কুলক্ষণের কিছুই নেই। তারকার (উদয় বা অস্ত যাওয়ার) দরুন বৃষ্টি হওয়া ভিত্তিহীন এবং সফর মাসে অশুভ নেই। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْفَأْلِ وَالطِّيَرَةِ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا عَدْوَى وَلَا هَامَةَ وَلَا نَوْءَ وَلَا صفر» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ (وَلَا نَوْءَ) অর্থাৎ বিশেষ কোন তারকার উদয় হওয়া আর তার বিপরীতে কোন তারকার অস্ত যাওয়া। এর একটি তারকা পূর্বদিগন্তে থাকে আর অপরটি থাকে পশ্চিম দিগন্তে। জাহিলী যুগের লোকেদের বিশ্বাস ছিল, বিশেষ কোন তারকা উদিত হলে বৃষ্টি হবে এবং বৃষ্টি হওয়ার নিশ্চয়তা ঐ তারকার সাথেই সংযুক্ত। সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাকোচ করেছেন।
ব্যাখ্যাকার বলেনঃ সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার সাথে সাথে চাঁদের কক্ষপথ থেকে একটি তারকা পড়ে যাওয়াকে النَوْءَ বলা হয়। আর তা হচ্ছে, আঠাশ (২৮) টি তারকা। সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার সাথে সাথে পশ্চিম দিগন্ত থেকে একটি করে তারকা পড়ে যায়। আর একই সময়ে পূর্ব দিগন্ত তার পরিবর্তে অন্য একটি তারকা উদয় হয়।
‘নিহায়াহ্’ গ্রন্থে আছে, النَوْءَ বলা হয় চাদের পরিভ্রমণের কক্ষপথকে। ‘আরবদের ‘আক্বীদাহ্ ছিল, প্রতিটি نَوْءَ তথা বৃষ্টির পূর্বলক্ষণ প্রদর্শনকারী তারকা বৃষ্টি দিবে এবং তার সাথেই তারা বৃষ্টি হওয়ার গ্যারান্টি সংযুক্ত করতো। তারা বলত مُطِرْنَا بِنَوْءِ كَذَا অর্থাৎ আমরা অমুক তারকার মাধ্যমে বৃষ্টি পেয়েছি।
نَوْءَ হিসেবে তাদের নামকরণের কারণ হলো পশ্চিম দিগন্তে যখন কোন তারকা ডুবে গেল তখনই পূর্ব দিগন্তে অন্য একটি তারকা উদিত হল। আবার বলা হয়ে থাকে, نَوْءَ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ডুবে যাওয়া এটি বিপরীতভাবে হবে।
আবূ ‘উবায়দ বলেনঃ نَوْءَ যে ডুবে যাওয়া এটি তিনি এ জায়গায় ব্যতীত আর শোনেননি। نَوْءَ-এর ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। এর কারণ হলো আরবরা বৃষ্টি হওয়াকে نَوْءَ-এর সাথে সম্পৃক্ত করত। আর যে ব্যক্তি এ বিশ্বাস রাখে যে, বৃষ্টি আল্লাহর কাজের একটি তথা আল্লাহর নির্দেশেই দূর হয়ে থাকে। আর তার কথার দ্বারা এ উদ্দেশ্য নেয় যে, مُطِرْنَا بِنَوْءِ كَذَا অর্থাৎ অমুক সময়ে আমরা বৃষ্টি লাভ করব। আর তা হলো তা অমুক তারকার সময়কালে। তাহলে সেটি বৈধ হবে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ নিয়ম চালু করে দিয়েছেন যে, এই এই সময়ে বৃষ্টি আসবে। এটি ‘আল্লামা ত্বীবী উল্লেখ করেছেন।
আর বাহ্যিকভাবে বুঝা যাচ্ছে نَوْءَ-কে স্বাভাবিকভাবে নিষেধ করার কারণ হলো তাদের ভ্রান্ত ‘আক্বীদাহ্। কারণ এ ব্যাপারে এমন কিছু বর্ণিত হয়নি যা প্রমাণ করে এটি জায়িযও আছে। মোটকথা এ হাদীসটির অর্থ হবে এরূপ, তোমরা বলবে না, مُطِرْنَا بِنَوْءِ كَذَا বরং তোমরা বলবে, مُطِرْنَا بِفَضْلِ اللهِ تَعَالٰى আমরা মহান আল্লাহর অনুগ্রহের মাধ্যমে বৃষ্টি পেয়েছি। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - শুভ ও অশুভ লক্ষণ
৪৫৮০-[৫] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, রোগে ছোঁয়াচে লাগা, সফর মাস অশুভ হওয়া বা ভূত-প্রেতের ধারণার কোন অস্তিত্ব নেই। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْفَأْلِ وَالطِّيَرَةِ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَا عَدْوَى وَلَا صَفَرَ وَلَا غُولَ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ (وَلَا غُولَ) জামহূর ‘উলামা বলেনঃ ‘আরবদের বিশ্বাস ছিল যে, এক শ্রেণীর জীন-শয়তান মাঠে ময়দানে বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করে কোন পথিকের উপর সওয়ার হয় (ভর করে), ফলে সে পথহারা অবস্থায় এদিক-সেদিক ঘুরতে থাকে। অবশেষে তাকে ধ্বংস করে ছাড়ে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ধারণাটিকে বাতিল বলেছেন। অন্যরা বলেছেন, হাদীসে কিন্তু এদের অস্তিত্বের অস্বীকার করা হয়নি। এ হাদীসে কেবল ‘আরবদের ভ্রান্ত ধারণা জীন-শয়তান বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করে এ ধারণাকে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। কেননা হাদীসে এসেছে, إِذَا تَغَوَّلَتِ الْغِيلَانُ فَبَادِرُوا بِالْأَذَانِ অর্থাৎ যখন তোমাকে ভূত-প্রেত রাস্তাচ্যুত করে দেয় তাহলে তুমি আযানের প্রতি অগ্রসর হও। অর্থাৎ আযান দিতে থাকে। যাতে তার ক্ষতি হতে মুক্তি লাভ করতে পার। এ হাদীস থেকে তাদের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২২২২; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - শুভ ও অশুভ লক্ষণ
৪৫৮১-[৬] ’আমর ইবনু শারীদ (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সাক্বীফ দলের মধ্যে একজন কুষ্ঠরোগী ছিল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে লোক পাঠিয়ে এ সংবাদ জানিয়ে দিলেন যে, আমি অবশ্যই তোমার বায়’আত নিয়েছি (বায়’আত করার প্রয়োজন নেই)। সুতরাং তুমি চলে যাও। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْفَأْلِ وَالطِّيَرَةِ
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ الشَّرِيدِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: كَانَ فِي وَفْدِ ثَقِيفٍ رَجُلٌ مَجْذُومٌ فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّا قد بايعناك فَارْجِع» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ সহীহুল বুখারীতে অন্য একটি হাদীসে এসেছে, وَفِرَّ مِنَ الْمَجْذُومِ فِرَارَكَ مِنَ الْأَسَدِ তুমি কুষ্ঠরোগী থেকে পলায়ন কর যেভাবে তুমি বাঘ থেকে পালাও। لاعدوى ‘‘কোন সংক্রামক রোগ নেই’’ অধ্যায়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এটি لايورد مُمْرِضٌ عَلَى مُصِحٍّ এর বিপরীত নয়।
কাযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কুষ্ঠরোগীর ঘটনায় বিভিন্ন আসার (সাহাবীগণের বর্ণনা) এসেছে। আর উল্লেখিত হাদীস দু’টি প্রমাণিত হয়েছে। আর জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুষ্ঠ রোগীর সাথে খেয়েছেন। আর তাকে বলেছিলেন, তুমিও খাও আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখে এবং তারই ওপর তাওয়াক্কুল কর।
মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ আমার মুক্ত দাসী আমার সাথে আমার পেস্নটে খেত আমার পাত্রে পান করত এবং আমার বিছানায় ঘুমাত।
কাযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ‘উমার ও অন্যান্য সালাফ বলেন, কুষ্ঠরোগীর সাথে খাওয়া যায়। আর তারা মনে করেন তাকে এড়িয়ে চলার নির্দেশ রহিত হয়ে গেছে। সহীহ কথা হলো, সেটি অধিকাংশের বক্তব্য আর তা হলো এটি রহিত হয়ে যায়নি। বরং উভয় হাদীসের মধ্যে সমন্বয় দরকার। কুষ্ঠরোগী থেকে পালানোর নির্দেশ ও তার থেকে দূরে থাকার নির্দেশ সতর্কতামূলক মুস্তাহাব এটা ওয়াজিব নয়। আর তার সাথে খাওরা এটি জায়িয বর্ণনা করার জন্য। মহান আল্লাহই ভালো জানেন।
কাযী (রহিমাহুল্লাহ) আরো বলেনঃ কতক ‘উলামা বলেন, এ হাদীসটি এবং এ জাতীয় আরো হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হয় যে, যদি কোন মহিলার স্বামীর কুষ্ঠরোগ হয় তবে তার বিবাহ ঠিক রাখা না রাখার ইখতিয়ার বা স্বাধীনতা আছে। কাযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ তারা বলেছেন, তাকে মসজিদে যেতে বাধা দেয়া হবে এবং মানুষের সাথে মিশতেও বাধা দেয়া হবে। মোট কথা বেশি লোকের সমাবেশে তারা অপছন্দ করে তবে তার যোগদান ঠিক নয়। আর জুমু‘আর সালাতের জন্য মসজিদে যেতে তাকে নিষেধ করা যাবে না। (শারহুন নাবাবী ১৪, হাঃ ২২৩১)