পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে, চিকিৎসাশাস্ত্রের মৌলিক উদ্দেশ্য তিনটি। শারীরিক সুস্থতার সংরক্ষণ, দুর্ভোগ ও কষ্ট লাঘব এবং শরীর হতে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। আলোচ্য অধ্যায়ে দু’ প্রকার চিকিৎসার কথা বলা হয়েছে।
প্রথমত শারীরিক চিকিৎসা, মূলত এটিই এখানে উদ্দেশ্য।
দ্বিতীয়ত অন্তরের চিকিৎসা, যার মৌলিক উপাদান হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আনীত আল্লাহ তা’আলার বাণী মহাগ্রন্থ আল কুরআন।
শারীরিক ব্যাধির চিকিৎসার বিষয়টি হাদীসে বিভিন্নভাবে এসেছে যা ত্বিবিব নবী হিসেবে পরিচিত।
অন্যদের থেকেও বর্ণিত হয়েছে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা অভিজ্ঞতালব্ধ বিষয়। শারীরিক ব্যাধির এ চিকিৎসা আবার দুই ধরনের। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে প্রাণীকুলের প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত কিছু প্রাকৃতিক বিষয়, যেমন ক্ষুধা ও তৃষ্ণা। অন্যটি চিন্তা-ভাবনা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সমাধানযোগ্য।
ইসলামী শারী’আর আলোকে চিকিৎসার আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে ঝাড়ফুঁক। যা বাস্তবসম্মত ও পরীক্ষিত একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। ইমাম বাযযার (রহিমাহুল্লাহ) ’উরওয়াহ্ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে বললাম, আপনি চিকিৎসাশাস্ত্র সম্পর্কীয় প্রচুর জ্ঞান কিভাবে অর্জন করলেন? তিনি বললেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিভিন্ন সময়ের ব্যাধিতে ’আরব চিকিৎসকগণ তাঁর চিকিৎসার প্রাক্কালে আমি এ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছি।
ইমাম সুয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ চিকিৎসাশাস্ত্র সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এ সম্পর্কে বিভিন্ন গ্রন্থও রচিত হয়েছে। চিকিৎসাশাস্ত্রের উৎপত্তি সম্পর্কে অনেক মতামত বিদিত রয়েছে। তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ কথা হচ্ছে এ সম্পর্কিত কতক বিষয় নবীগণ ওয়াহীর মাধ্যমে অবগত হয়েছেন। তবে অধিকাংশ বিষয়ই অভিজ্ঞতালব্ধ।
ইমাম বাযযার ও ত্ববারানী (রহিমাহুমাল্লাহ) ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস হতে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সুলায়মান (আ.) যখনই সালাতে দাঁড়াতেন তিনি তাঁর সম্মুখে একটি বৃক্ষ দেখতে পেতেন। তিনি বৃক্ষটিকে বলতেন, তোমার নাম কী? সেটি তার নাম উল্লেখ করলে, আবারো জিজ্ঞেস করতেন। তুমি কী জন্য? সেটি ঔষধি হলে তিনি তা লিখে রাখতেন ও পরে তা রোপণ করতেন।
অত্র অধ্যায়ের সারমর্ম এই যে, প্রত্যেক মানুষের সুস্থতা ও অসুস্থতা আল্লাহর পক্ষ হতে লিখিত ভাগ্যলিপির অংশ। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
৪৫১৪-[১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা এমন কোন রোগ নাযিল করেননি, যার ঔষধ পয়দা করেননি। (বুখারী)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا أَنْزَلَ اللَّهُ دَاء إِلا أنزل لَهُ دَوَاء» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যাঃ উপর্যুক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসীনে কিরাম বিভিন্ন রিওয়ায়াতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইমাম নাসায়ী, ইবনু হিব্বান ও হাকিমসহ বিভিন্ন বর্ণনায় হাদীসে এসেছে যে, আল্লাহ তা‘আলা যেমন রোগ সৃষ্টি করেছেন, তেমনি এর শিফারও ব্যবস্থা করেছেন। মুসনাদে ইমাম আহমাদ, আল আদাবুল মুফরাদ ও সুনান চতুষ্টয়, তিরমিযী, ইবনু খুযায়মাহ্ সহ মুস্তাদরাকে হাকিম-এ আছে, তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর, আল্লাহ তা‘আলা প্রতিটি রোগেরই শিফা বা আরোগ্যের ব্যবস্থা করেছেন, তবে মৃত্যু ব্যতীত। সুনান আবূ দাঊদের বর্ণনায় আছে, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা প্রতিটি রোগেরই শিফা বা আরোগ্যের ব্যবস্থা করেছেন। অতএব তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর, তবে হারাম পন্থায় নয়। চিকিৎসা গ্রহণ করার দায়িত্ব বান্দার, এটি ব্যবস্থা অবলম্বনের মতো, তবে আরোগ্য বিধান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত।
আলোচ্য হাদীসে রোগ-ব্যাধির সমস্যায় চিকিৎসা গ্রহণের বৈধতার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তবে আরোগ্য সম্পূর্ণভাবে আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে সম্পন্ন হয়। এখানে চিকিৎসক ও পথ্যের কোন ক্ষমতা নেই, তবে এগুলো মাধ্যম ও অবলম্বন মাত্র। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, চিকিৎসা গ্রহণ আল্লাহর প্রতি নির্ভরতাকে নাকচ করে দেয় না। আমরা ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় যেমন খাবার ও পানি গ্রহণ করি, ঠিক রোগ-ব্যাধিতে চিকিৎসা গ্রহণের ব্যাপারটিও ঠিক অনুরূপ। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৬৭৮)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৫১৫-[২] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক রোগের জন্য ঔষধ রয়েছে। সুতরাং সঠিক ঔষধ যখন রোগের জন্য ব্যবহৃত হয়, তখন আল্লাহ তা’আলার হুকুমে রোগী রোগমুক্ত হয়ে যায়। (মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لِكُلِّ دَاءٍ دَوَاءٌ فَإِذَا أُصِيبَ دَوَاءٌ الدَّاءَ بَرَأَ بِإِذْنِ اللَّهِ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ রোগ-ব্যাধিতে চিকিৎসা গ্রহণ মুস্তাহাব। এটাই সহাবা, তাবি‘ঈ, মুহাদ্দিসীনে কিরাম, সালাফ-খালাফ তথা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যুগের মানুষের প্রচলিত রীতি হিসেবে সাব্যস্ত। ইমাম কাযী ‘ইয়ায-এর মতে, এ সকল হাদীসের মাধ্যমে দীন ও দুনিয়াবী জ্ঞানের বিষয়টি সাব্যস্ত হয়েছে এবং চিকিৎসাশাস্ত্রের বৈধতাও এর মাধ্যমে স্বীকৃত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বিষয় হলো, এ সকল হাদীসের মাধ্যমে কট্টরপন্থী সূফীদের ‘আক্বীদাহ্ বাতিল হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে। যাদের বিশ্বাস হচ্ছে, তাকদীরের প্রতিটি বিষয় আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক নির্ধারিত। অতএব চিকিৎসা গ্রহণের কোন প্রয়োজন নেই। ‘উলামায়ে কিরাম এ হাদীসটি তাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস বাতিল হওয়ার ব্যাপারে উৎকৃষ্ট দলীল হিসেবে প্রমাণ করেছেন।
চিকিৎসা গ্রহণের বিষয়টিও আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত। তবে চিকিৎসা গ্রহণের নির্দেশটি এজন্য যে, স্বয়ং নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংস হতে মুক্ত রাখা আবশ্যক। যেমন সূরাহ্ আল বাকারায় আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ ‘‘তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না’’- (সূরাহ্ আল বাকারাহ্ ২ : ১৯৫)। চিকিৎসাশাস্ত্রে পন্ডিত ব্যক্তিদের মতে, রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া মানেই শরীরের স্বাভাবিক অবস্থার অবনতি হওয়া। আর চিকিৎসার মাধ্যমে তা আবার পূর্বের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। সঠিক খাবার গ্রহণ ও অন্যান্য নিয়ম বিধি মেনে চলার মাধ্যমে সুস্থতার সংরক্ষণ হয় এবং পথ্যের দ্বারা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে চিকিৎসককে অভিজ্ঞ হওয়াটা জরুরী। তাছাড়া রোগ প্রতিরোধের মূল বিষয়টি নির্ণয় করা চিকিৎসাশাস্ত্রে অতীব জরুরী। এতে ভুল হলে আরোগ্যের জন্য সঠিক পথ্য নির্ণয় করা দুরূহ হয় এবং আরোগ্য বিলম্বিত হয় ও কঠিন হয়ে পড়ে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত চিকিৎসা ব্যবস্থায় শিঙ্গা লাগানো, মধু সেবন করা ও আগুনের ছ্যাঁকা দেয়াকে উত্তম পথ্য হিসেবে নির্ণিত করা হয়েছে। চিকিৎসাশাস্ত্রে অভিজ্ঞদের নিকট এটি একটি অভিনব ও বাস্তবসম্মত চিকিৎসা পদ্ধতি। রোগ-ব্যাধি বিভিন্ন সমস্যার সাথে সংশ্লিষ্ট, যেমন- রক্ত, জন্ডিস, কৃষ্ণবর্ণ ও শেস্নষ্মা। যখন তা রক্তের সাথে সংশ্লিষ্ট হবে তখন রক্ত বের করাই উপযুক্ত চিকিৎসা। বাকী অন্যান্য সমস্যা মলের সাথে সংশ্লিষ্ট। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধুর কথা বলেছেন। আর রক্তের সমস্যার সমাধানে হিজামাহ্ বা শিঙ্গা লাগানের নির্দেশনা দিয়েছেন। পরিশেষে গরম ছেঁকা দেয়ার কথাও বলেছেন।
প্রতিটি রোগেরই পথ্য রয়েছে। আলোচ্য হাদীসে রোগ-ব্যাধিতে চিকিৎসা গ্রহণের বৈধতার স্বীকৃতি বিবৃত হয়েছে। তবে চিকিৎসার মাধ্যমে নির্ধারিত ভাগ্যলিপি, হায়াত বৃদ্ধি হবে না। আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশক্রমে ভাগ্যক্রমে আরোগ্য হবে মাত্র। বিষয়টি সকল মুহাদ্দিসীনে কিরাম, সালাফে সলিহীন ও পরবর্তী যুগের ইমামগণ কর্তৃক স্বীকৃত। তাঁরা আলোচ্য হাদীসের আলোকেই তাঁদের নির্ভরযোগ্য অভিমত পেশ করেছেন।
ইমাম আবূ ‘আবদুল্লাহ আল মাযিরী (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে, আলোচ্য হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থে সংকলিত করেছেন। যেখানে ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে মধু সেবনের নির্দেশনা রয়েছে। তবে কেউ কেউ এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেনঃ চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, মধু কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, এটি আবার কিভাবে ডায়রিয়ার চিকিৎসায় কার্যকর হতে পারে? তেমনিভাবে জ্বরের ক্ষেত্রে পানি ব্যবহারের কারণে ঠাণ্ডা-গরমের মিশ্রণে শরীরে ক্ষতির আশংকা রয়েছে। সম্মানিত ব্যাখ্যাকার বলেনঃ যারা এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেছেন, তাদের জ্ঞানের পরিধি সীমিত বলেই তারা এ ধরনের উদ্ভট মতামত পেশ করেছে। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২২০৪-[৬৯])
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৫১৬-[৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন জিনিসের মধ্যে রোগের নিরাময় রয়েছে, শিঙ্গা লাগানো বা মধু পান করা অথবা তপ্ত লোহা দ্বারা দাগ দেয়া। তবে আমি আমার উম্মাতকে দাগ হতে নিষেধ করেছি। (বুখারী)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الشِّفَاءُ فِي ثَلَاثٍ: فِي شَرْطَةِ مِحْجَمٍ أَوْ شَرْبَةِ عَسَلٍ أَوْ كَيَّةٍ بِنَارٍ وَأَنَا أَنْهَى أُمَّتِي عَنِ الْكَيِّ . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যাঃ আলোচ্য হাদীসে যদিও তিনটি পদ্ধতির বর্ণনা দেয়া হয়েছে, কিন্তু এ তিনটি পদ্ধতির মাঝেই চিকিৎসা পদ্ধতি সীমাবদ্ধ নয়। তবে চিকিৎসা পদ্ধতির মৌলিক তিনটি পদ্ধতি সম্পর্কে এখানে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেননা রোগসমূহ সাধারণত কয়েক প্রকারে সীমাবদ্ধ। রক্ত দূষণ বা রক্ত সমস্যার সমাধানে শিঙ্গা লাগানোর মাধ্যমে এর চিকিৎসার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ‘আরবদের নিকট এই চিকিৎসা পদ্ধতিটি ছিল বহুল প্রচলিত। উষ্ণ অঞ্চলসমূহে এ ধরনের চিকিৎসা কার্যকারিতা অধিক হওয়ার কারণেই তারা এতে সর্বাধিক অভ্যস্ত।
জন্ডিসের চিকিৎসায় যে পথ্যের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তা হলো : লঘুপাক জাতীয় পানীয়। এক্ষেত্রে মধু সর্বোৎকৃষ্ট পথ্য। বৈজ্ঞানিকভাবেও তা পরীক্ষিত। পরবর্তী অধ্যায়ে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা আসবে। সর্বশেষে আগুনে সেঁক দেয়ার বিষয়টি সাব্যস্ত করলেও নির্দেশনা দেয়া হয়নি। আগুনে সেঁক দেয়ার বৈধতা বর্ণিত হয়েছে এই শর্তে যে, তা একটি মাধ্যম মাত্র, আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশেই রোগের শিফা নির্ধারিত।
শায়খ আবূ মুহাম্মাদ আবূ জামরাহ্-এর মতে, আগুনের সেঁক দেয়ায় উপকার ও ক্ষতি উভয়বিধ সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু নিষেধাজ্ঞা এসেছে, সেহেতু এতে ক্ষতির আশংকা বিদ্যমান রয়েছে। পবিত্র কুরআনে যেমন মদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, এতে উপকারিতা রয়েছে তবে উপকারের চাইতে ক্ষতির ভাগটি বেশী, তাই তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, সাধারণত শরীরের অভ্যন্তরে দুই ধরনের দুরবস্থা বিরাজমান থাকার কারণে রোগের সূত্রপাত হয়। এক, গরমের তাপমাত্রা বেশী অথবা ঠাণ্ডার পরিমাণ বেশী থাকার জন্যই রোগ-ব্যাধির জন্ম হয়। তাই বিপরীতধর্মী পথ্য ব্যবহারের মাধ্যমে তা দূরীভূত করতে হয়। যেমন হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জ্বর হচ্ছে জাহান্নামের তাপমাত্রার অংশবিশেষ। অতএব একে পানি দ্বারা নিবৃত্ত কর। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশনা মোতাবেক সহাবায়ে কিরাম পানির মাধ্যমেই জ্বরের চিকিৎসা করতেন। উম্মুল মু’মিনীন আসমা বিনতু আবূ বকর (রাঃ)-এর জীবনীতে তাই পাওয়া যায়।
চিকিৎসাশাস্ত্রের আলোকে বুঝা যায় যে, সময়, অবস্থা ও পরিবেশের প্রভাবে অসুস্থতার চিকিৎসা পদ্ধতির পরিবর্তন হতে পারে। তাছাড়া প্রতিটি মানুষের শারীরিক গঠনের তারতম্যের কারণে পথ্যের কার্যকারিতার ভিন্নতাও পরিলক্ষিত হয়। সে কারণেই দেখা যায়, একই ঔষধে অভিন্ন রোগে আক্রান্ত সব রোগী সুস্থ হয় না। এজন্য চিকিৎসাশাস্ত্রে পাণ্ডিত্য ও অভিজ্ঞতা ব্যতীত চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত নয়। মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানী ইবনু সিনা সহ অন্যান্য পন্ডিতগণও এ অভিমত পেশ করেছেন। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৬৮০)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৫১৭-[৪] জাবির ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আহযাবের (খন্দাকের) যুদ্ধে উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ)-এর শিরারোগে তীর বিদ্ধ হয়েছিল। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (ক্ষত স্থানটিতে) দাগিয়েছেন। (মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَن جابرٍ قَالَ: رُمِيَ أَبِي يَوْمَ الْأَحْزَابِ عَلَى أَكْحَلِهِ فَكَوَاهُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ আলোচ্য হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাই ইবনু কা‘ব-এর নিকট একজন চিকিৎসককে পাঠালে সে তার একটি শিরা কেটে চিকিৎসা করলেন। ইবনু রসলান বলেনঃ চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, চিকিৎসক রোগীর অবস্থানুযায়ী ব্যবস্থা নিবেন। হালকা ব্যবস্থাপত্রের মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব হলে গুরুতর ব্যবস্থা এড়িয়ে যাবেন এবং আহার্য দ্রব্যের ঘাটতির কারণে রোগাক্রান্ত হলে পথ্য ব্যতীতই আহার্য দ্রব্যাদি আহারের পরামর্শ দিবেন। পথ্যের প্রয়োজনে অপারেশনের ব্যবস্থা গ্রহণ যথাযথ নয়। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২২০৭-[৭৪])
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৫১৮-[৫] উক্ত রাবী [জাবির (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ)-এর শিরারগে তীর বিদ্ধ হয়েছিল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে উক্ত স্থানটিতে তীরের ফলক দ্বারা দাগিয়েছেন। অতঃপর তাঁর (সা’দ-এর) হাত ফুলে গিয়েছিল, সুতরাং দ্বিতীয়বার তাকে দাগিয়েছেন। (মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْهُ قَالَ: رُمِيَ سَعْدُ بْنُ مُعَاذٍ فِي أكحله فحمسه النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ بِمِشْقَصٍ ثمَّ ورمت فحمسه الثَّانِيَة. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ আগুনে সেঁক দেয়ার মাধ্যমে চিকিৎসা : আলোচ্য হাদীসে আগুনে সেঁক দেয়ার মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণের বৈধতার বিধান দেয়া হয়েছে। যে সব ক্ষেত্রে আগুনের সেঁকই একমাত্র সমাধান হিসেবে সাব্যস্ত শুধুমাত্র সেক্ষেত্রেই এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। সা‘দ (রাঃ) রক্ত পড়া বন্ধ না হওয়ার কারণে আগুনের সেঁক দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তবে যে ব্যক্তির আগুনে সেঁক দেয়ার কারণে অন্য সমস্যা সৃষ্টির আশংকা রয়েছে, সে ব্যক্তি উপরোক্ত পদ্ধতি গ্রহণে বিরত থাকবেন। যেমন ‘ইমরান বিন হুসায়ন (রাঃ) করেছিলেন। ‘আরবদের নিকট ঔষধের অকার্যকারিতায় আগুনের সেঁক দেয়াই একমাত্র সমাধান। ইবনু কুতায়বাহ্ এর মতে, আগুনে সেঁক দেয়া দুই ধরনের। এক- সুস্থতার জন্য আগুনে সেঁক দেয়া। দুই- আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার পর রক্ত পড়া বন্ধ না হলে সেক্ষেত্রে আগুনে সেঁক দেয়া। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২২০৮-[৭৫])
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৫১৯-[৬] উক্ত রাবী [জাবির (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ)-এর নিকট একজন চিকিৎসক পাঠালেন, সে তার একটি রগ কেটে পরে তা দাগাল। (মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْهُ قَالَ: بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى أُبيِّ بن كَعْب طَبِيبا فَقَطَعَ مِنْهُ عِرْقًا ثُمَّ كَوَاهُ عَلَيْهِ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ চিকিৎসা যে ধরনেরই হোক না কেন তা অভিজ্ঞ ডাক্তারের মাধ্যমে হওয়া উচিত। এটাই প্রকৃত নিয়ম। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৫২০-[৭] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ কালোজিরার মধ্যে একমাত্র মৃত্যু ছাড়া আর সকল রোগের চিকিৎসা নিহিত আছে। ইবনু শিহাব (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ ’’সাম’’ অর্থ মৃত্যু। আর ’’হাববাতুস্ সাওদা’’ অর্থ শূনীয বা কালোজিরা। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَن أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «فِي الْحَبَّةِ السَّوْدَاءِ شِفَاءٌ مِنْ كُلِّ دَاءٍ إِلَّا السَّامَ» . قَالَ ابْنُ شِهَابٍ: السَّامُ: الْمَوْتُ وَالْحَبَّةُ السَّوْدَاءُ: الشُّونِيزُ
ব্যাখ্যাঃ আলোচ্য হাদীসে কালোজিরার ব্যাপক ব্যবহার সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশনা দিয়েছেন। কখনও তা এককভাবে এবং কখনও অন্য কোন খাবার বা পথ্যের সাথে মিশিয়ে তা ব্যবহার করা হয়। কালোজিরার বহুমুখী ব্যবহার আমাদের সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় উষ্ণভাবে ব্যবহার ও উষ্ণতায় বিপরীতভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে তা বেশ উপকারী হিসেবে পরীক্ষিত। ইমাম কিরমানীর মতে, সাধারণভাবে তা সকল রোগের মহৌষধ। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৬৮৮)
চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ বলেছেনঃ কালোজিরা হচ্ছে উষ্ণ ও শুষ্ক প্রকৃতির পথ্য। জ্বর, সর্দি ও কাশিসহ পেটের আর্দ্রতার সমস্যায় এটি বেশ উপকারী। তা গুঁড়া করে গরম পানির সাথে সেবনে প্রস্রাবের সমস্যা দূরীভূত হয়। কালোজিরার গুঁড়া সুতি কাপড়ে নিয়ে শুকলে সর্দি ও ঠাণ্ডা কাশিতে বেশ উপকার হয়। পানির সাথে সামান্য পরিমাণ কালোজিরা খেলে হাঁপানি রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। ভিনেগার (সিরকা)-এর সাথে গরম করে কুলি করলে দাঁতের ব্যথায় বেশ কার্যকর। অন্যান্য হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কালোজিরাকে সাধারণভাবে মৃত্যু বতীত সকল রোগের পথ্য হিসেবে অভিহিত করেছেন।
আবূ বকর ইবনুল ‘আরাবীর মতে, চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের নিকট কালোজিরার মাঝে সকল রোগের আরোগ্যের উপাদান রয়েছে। তবে বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে ভিন্ন পদ্ধতিতে ভিন্ন মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে। শায়খ আবূ মুহাম্মাদ ইবনু আবূ হামযাহ্ বলেছেনঃ আলোচ্য হাদীসের ব্যাপারে কেউ কেউ সমালোচনা করেছেন, তবে তা তাদের মস্তিষ্কপ্রসূত বিষয়। কিন্তু প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথাই বাস্তব সত্য। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অভিজ্ঞতার আলোকে বিষয়টি পরীক্ষিত। সমালোচকদের এ বিষয়ে কোন জ্ঞান নেই। তারা শুধুমাত্র ধারণাপ্রসূত কথাই বলে। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২২০৮-[৭৫])
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৫২১-[৮] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, আমার ভাইয়ের ডায়রিয়া হয়েছে। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে মধু পান করাও। সে মধু পান করাল। সে আবার এসে বলল : আমি তাকে মধু পান করিয়েছি, এতে তার ডায়রিয়া আরো বেড়ে গেছে। এভাবে তিনি তাঁকে তিনবার বললেন (অর্থাৎ- ডায়রিয়া ক্রমশ বেড়ে যাওয়ার কথা জানালো)। অতঃপর সে চতুর্থবার এসে অভিযোগ করল। এবারও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তাকে মধু পান করাও। সে বলল : আমি অবশ্যই তাকে মধু পান করিয়েছি, কিন্তু তার ডায়রিয়া আরো বেড়ে গিয়েছে। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ (তাঁর কালামে) যা বলেছেন, তা সত্য, তোমার ভাইয়ের পেট মিথ্যা (অর্থাৎ- পেটে দূষিত কোন কিছু রয়েছে।) অতঃপর আবার তাকে মধু পান করাল এবং সে আরোগ্য লাভ করল। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: أَخِي اسْتَطْلَقَ بَطْنُهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اسقيه عسَلاً» فَسَقَاهُ ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ: سَقَيْتُهُ فَلَمْ يَزِدْهُ إِلَّا اسْتِطْلَاقًا فَقَالَ لَهُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ. ثُمَّ جَاءَ الرَّابِعَةَ فَقَالَ: «اسْقِهِ عَسَلًا» . فَقَالَ: لَقَدْ سَقَيْتُهُ فَلَمْ يَزِدْهُ إِلَّا اسْتِطْلَاقًا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَدَقَ اللَّهُ وَكَذَبَ بَطْنُ أَخِيكَ» . فَسَقَاهُ فَبَرَأَ
ব্যাখ্যাঃ আলোচ্য হাদীসে ডায়রিয়া বা পেটের পীড়ায় মধুর ব্যবহার সম্পর্কে স্পষ্ট বর্ণনা এবং উপকারিতার প্রমাণ বর্ণিত হয়েছে। কোন বর্ণনায় তিনবার মধু সেবন, আবার অন্য বর্ণনায় চারবারের কথাও বর্ণিত হয়েছে। কোন কোন বর্ণনায় আবার রোগের অবস্থা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। সহীহ মুসলিমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেটের পীড়ার অভিযোগকারী ব্যক্তিকে তিনবার মধু ব্যবহার করার নির্দেশনা দেয়ার পর সে আবার এসে একই অভিযোগ পেশ করলে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় তাকে মধু সেবনের নির্দেশ প্রদান করেন। অতঃপর সে আরোগ্য লাভ করে। আলোচ্য হাদীসের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, কখনও পথ্য সেবনের পর রোগ বৃদ্ধি পেতে পারে। অতএব এতে শংকিত হওয়ার কোন কারণ নেই।
নাস্তিকদের কেউ কেউ এ হাদীসের ব্যাপারে সমালোচনা করেছেন এই বলে যে, মধু লঘুপাক জাতীয় পানীয়। অতএব ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীকে কিভাবে এটি পথ্য হিসেবে সেবনের পরামর্শ দেয়া হলো? এর উত্তরে মুহাদ্দিসীনে কিরাম বলেনঃ তারা এমন বিষয়ে অভিযোগ উত্থাপন করেছে যে বিষয়টি সম্পর্কে তাদের কোন ধারণাই নেই। আল্লাহ তা‘আলা আল কুরআনে উল্লেখ করেছেন : ‘‘তারা সে বিষয়টিকে মিথ্যা বলেছে যে সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা নেই’’- (সূরাহ্ ইউনুস ১০ : ৩৯)।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, বয়স, প্রকৃতি, সময়, খাবার ও পরিবেশভেদে একই রোগের ভিন্ন ভিন্ন চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। হাদীসে উল্লেখিত ব্যক্তির অবস্থা ছিল যে, কোন ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার দরুন তার ডায়রিয়ার সূচনা হয়েছিল। মধু সেবনের কারণে সেই ভাইরাসগুলো পেটের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং পেটের ক্ষতিকর সকল উপাদানগুলোকে বের করে দেয়। সে কারণেই তার ডায়রিয়ার পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। পরিশেষে সকল ক্ষতিকর উপাদান নির্গমনের পর তা আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। ইমাম খত্ত্বাবী-এর মতে, চিকিৎসা পদ্ধতি দু’ ধরনের, একটি হচ্ছে গ্রীক, যা অনুমান নির্ভর। দ্বিতীয়টি হচ্ছে অভিজ্ঞতা নির্ভর। এটি হচ্ছে ‘আরব ও হিন্দ দেশীয় পদ্ধতি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আরবীয় চিকিৎসা পদ্ধতির অনুসরণেই বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপত্র প্রদান করতেন। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৭১৬)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৫২২-[৯] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যেসব জিনিস দ্বারা চিকিৎসা করো, এর মধ্যে শিঙ্গা লাগানো এবং কুস্তব বাহরী (চন্দন কাঠ) ব্যবহার করা সর্বোত্তম। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَمْثَلَ مَا تَدَاوَيْتُمْ بِهِ الْحجامَة والقُسْط البحري»
ব্যাখ্যাঃ আলোচ্য হাদীসে শিঙ্গা লাগানোকে একটি উত্তম চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। বিজ্ঞজনের মতে, হাদীসে উদ্দিষ্ট হচ্ছেন ‘আরব ও হিজায তথা গরম আবহাওয়া অধ্যূষিত অঞ্চলের অধিবাসীগণ। কেননা তাদের রক্ত হচ্ছে পাতলা। হাদীসটির মাধ্যমে আরো বুঝা যায় যে, বয়স্ক ব্যক্তিগণ উদ্দিষ্ট নন। ইমাম ত্ববারী সহীহ সনদে ইবনু সীরীন হতে বর্ণনা করেন যে, কোন ব্যক্তি চল্লিশ বছরে উপনীত হলে তিনি আর শিঙ্গা লাগাবেন না। মুসলিম চিকিৎসকগণের মতে, মাসের মাঝামাঝি সময়ে এবং দ্বিতীয় সপ্তাহের পরবর্তী সময়ে (প্রথমার্ধ ও শেষ সময় ব্যতীত) শিঙ্গা লাগানো উপকারী। ইমাম মুওয়াফফাক আল-বাগদাদীও একই অভিমত পেশ করেছেন। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৬৯৬)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৫২৩-[১০] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ’উযরাহ্ রোগের জন্য তোমাদের শিশুদের জিহবার তালু দাবিয়ে তাদেরকে কষ্ট দিয়ো না; বরং তোমরা কুস্তব (চন্দন কাঠ) ব্যবহার করো। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تُعَذِّبُوا صِبْيَانَكُمْ بِالْغَمْزِ مِنَ الْعُذْرَةِ عَلَيْكُمْ بِالْقُسْطِ»
ব্যাখ্যাঃ ‘উযরাহ্ শিশুদের এক ধরনের গলা ব্যথা রোগ যা রক্ত প্রবাহের কারণে উদ্ভব হয় এবং সে কারণে গলা ব্যথায় শিশুরা কষ্ট পায়। কুস্তব এক ধরনের পথ্য যা গলা ও নাকের মাঝামাঝিতে শিশুদের গলা ব্যথা দূর করতে ব্যবহার করা হয়। পরবর্তী হাদীসে এ ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৫২৪-[১১] উম্মু কায়স (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেন তোমরা শিশু-সন্তানদের তালু দাবিয়ে এভাবে কষ্ট দিচ্ছ? অবশ্যই তোমরা এ রোগের জন্য (অর্থাৎ- আলজিহ্বা ফুলার জন্য) ঊদ হিন্দী (আগর কাঠ) ব্যবহার করো। কেননা এতে সাত রকম রোগের নিরাময় নিহিত আছে। তন্মধ্যে একটি হলো পাঁজরের ব্যথা। বাচ্চাদের আলজিহ্বা ফুলার ব্যথা হলে তা ঘষে পানির সাথে মিশিয়ে ফোঁটা ফোঁটা নাকের ভিতরে দেবে। আর পাঁজরের ব্যথা হলে মুখ দিয়ে খাওয়াতে হবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَن أُمِّ قَيْسٍ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «على مَ تَدْغَرْنَ أَوْلَادَكُنَّ بِهَذَا الْعِلَاقِ؟ عَلَيْكُنَّ بِهَذَا الْعُودِ الْهِنْدِيِّ فَإِنَّ فِيهِ سَبْعَةَ أَشْفِيَةٍ مِنْهَا ذَاتُ الْجَنْبِ يُسْعَطُ مِنَ الْعُذْرَةِ وَيُلَدُّ مِنْ ذَاتِ الْجنب»
ব্যাখ্যাঃ অত্র হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদের গলা ব্যথায় ইন্ডিয়ান কাঠ ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছেন। মুহাদ্দিসীনে কিরাম বা হাদীস বেত্তাগণ ‘ঊদ হিন্দী ব্যবহারের সুন্দর নিয়ম বলে দিয়েছেন। তা হলো, শিশুদের আলজিহবা ফুলে যাওয়ার কারণে ‘উযরাহ্ নামক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিত। এক্ষেত্রে আগর কাঠ গুঁড়া করে সামান্য পরিমাণ নাকে দিলে ‘উযরাহ্ রোগ নিরাময় হয়। আলোচ্য হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতটি রোগের আরোগ্যের কথা বললেও শুধুমাত্র দু’টি রোগের বিষয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। বাকী পাঁচটি বিষয়ের কেন করেননি, এর কারণ ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসীনে কিরাম বলেছেনঃ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে তৎকালীন যুগে ‘আরবদের মাঝে এর ব্যবহার ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল বিধায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি গুরুত্বপূর্ণ রোগের উল্লেখ করে অবশিষ্ট বিষয়গুলো উল্লেখ করেননি।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কতিপয় মানসিক রোগী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ হাদীসের নির্দেশনায় আপত্তি প্রকাশ করেছেন। ইমাম মাযিরী তাদের এই আপত্তির প্রত্যুত্তরে বলেছেনঃ আপত্তি পেশকারীদের অজ্ঞতা সুস্পষ্ট। যেমন আল্লাহ তা‘আলা সূরাহ্ ইউনুসে উল্লেখ করেছেন, ‘‘তারা সে বিষয়টিকে মিথ্যা বলেছে যে সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা নেই’’- (সূরাহ্ ইউনুস ১০ : ৩৯)।
প্রখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানী জালিনূস ও অন্যদের মতে, কুস্তব (কোথ) বুকের ব্যথায় বেশ কার্যকর। প্রাচীন চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, এটি প্রয়োজনমত শরীরের বহিরাংশ ও অভ্যন্তরে ব্যবহৃত হয়, নাস্তিক ও আপত্তি পেশকারীদের ধারণা নিরর্থক ও ভিত্তিহীন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য সাতটি রোগের মাঝে দু’টি উল্লেখ করে বাকী পাঁচটি উল্লেখ করেননি। চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ পরীক্ষাপূর্বক উক্ত পাঁচটি রোগের বর্ণনা দিয়েছেন। রোগগুলো হচ্ছে, মহিলাদের অনিয়মিত ঋতুস্রাব ও প্রস্রাবের সমস্যা, বীর্যের কার্যকারিতা বাতিল, যৌন সমস্যা, কৃমির সমস্যা। তবে তা মধু সহকারে সেব্য। ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতটি রোগের কথা হাদীসে উল্লেখ করেছেন, তবে সাত শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। কুস্তব-এর ব্যবহার শুধুমাত্র সাতটি রোগের চিকিৎসায় সীমাবদ্ধ নয়। মিরক্বাতুল মাফাতীহ
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৫২৫-[১২] ’আয়িশাহ্ ও রাফি’ ইবনু খদীজ (রাঃ)হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জ্বরের উৎপত্তি জাহান্নামের তাপ হতে। সুতরাং তোমরা পানি দ্বারা তা ঠাণ্ডা করো। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْ عَائِشَةَ وَرَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الْحمى من فيج جَهَنَّم فَأَبْرِدُوهَا بِالْمَاءِ»
ব্যাখ্যাঃ জ্বরের ক্ষেত্রে পানি ব্যবহার : ইমাম ইবনু কাইয়িম (রহিমাহুল্লাহ) জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে পানি ঢালার বিষয়ে দু’টি অভিমত পেশ করেছেন। এক. সাধারণ সকল ব্যবহার্য পানি। দুই. যমযমের পানি ব্যবহার। এই অভিমত পেশকারীগণ এ প্রসঙ্গে সহীহুল বুখারীতে সংকলিত আবূ জামরাহ্-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীস দলীল হিসেবে পেশ করেছেন। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৭২৬)
কতিপয় ব্যাখ্যাকার বলেনঃ জ্বর জাহান্নামের আগুনের উত্তাপবিশেষ। জাহান্নাম অস্বীকারকারীদের জন্য ভীতিপ্রদর্শক হিসেবে এবং উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য সুসংবাদবাহী হিসেবে দুনিয়াতে এটি পাঠানো হয়েছে। কেননা, উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য তা গুনাহের কাফ্ফারাহ্ স্বরূপ। গ্রীষ্মের উত্তাপ যেমন জাহান্নামের অংশবিশেষ, জ্বরও অনুরূপ। সেজন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা ঠাণ্ডা পানি দ্বারা শীতল করতে বলেছেন। ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে, জ্বরের উত্তাপ কমানো কয়েকভাবে হতে পারে, পানি পান, গোসল ও প্রচলিত পন্থায় মাথায় পানি দেয়া। কোন বর্ণনায় আবার যমযমের পানি ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে। কতিপয় ব্যাখ্যাকারের মতে, জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য পানি পান সবচেয়ে বেশী উপকারী। কেননা পানি পানের মাধ্যমে শরীরের সর্বত্র তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। ইমাম জাওহারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কেউ কেউ হাদীসটির নির্দেশনা ভুল বুঝার কারণে পানিতে রোগীকে ডুবানোর কথা বলেছেন। তবে ব্যাপারটি তেমন নয়। পূর্বে যা বর্ণিত হয়েছে তাই প্রকৃত নিয়ম।
কোন কোন হাদীসগ্রন্থে জ্বরকে মৃত্যুদূত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যেমন ইমাম বায়হাক্বী (রহিমাহুল্লাহ) হাসান হতে মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেন যে, জ্বর হচ্ছে মৃত্যুদূত। আর পৃথিবীতে মু’মিনের জন্য তা কারাগার স্বরূপ, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা এতে প্রবেশ করান এবং মুক্ত করে দেন, অতএব একে পানি দ্বারা পরিবর্তন করে দাও। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৫২৬-[১৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কারো ওপর বদনযর লাগলে, কোন বিষাক্ত প্রাণী দংশন করলে এবং পাঁজরে খুজলি উঠলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঝাড়ফুঁক করতে অনুমতি দিয়েছেন। (মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَن أنسٍ قَالَ: رَخَّصَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الرُّقْيَةِ مِنَ الْعَيْنِ وَالْحُمَّةِ وَالنَّمْلَةِ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ ইমাম তূরিবিশ্তী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ নিষেধাজ্ঞার পরই সাধারণত অনুমতি আসে। ঝাড়ফুঁকে জাহিলী যুগের অনৈসলামিক ও শির্কী শব্দাবলীর ব্যবহারের শংকায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা নিষেধ করেছিলেন। পরবর্তীতে তা দূরীভূত হওয়ার কারণে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে ঝাড়ফুঁকের অনুমতি প্রদান করা হয়। বদনযর, বিষাক্ত প্রাণী দংশন ও পাঁজরে খুজলীর কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঝাড়ফুঁক করার অনুমতি প্রদান করেছেন। শেষোক্ত দু’টি সমস্যায় পথ্য বিদ্যমান থাকলেও বদনযরের কোন পথ্য নেই। তাই এক্ষেত্রে ঝাড়ফুঁকই একমাত্র সমাধান। বদনযর যেমনিভাবে মানুষের পক্ষ থেকে সংঘটিত হয় তেমনি জীনদের বদনযরেও মানুষের ক্ষতি সাধিত হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুমতি প্রদানের সাথে সাথে ঝাড়ফুঁকের শব্দাবলী ও পদ্ধতিও শিখিয়ে দিয়েছেন। হাদীসের প্রসিদ্ধ গ্রন্থাবলীতে নির্ভরযোগ্য সূত্রে ঝাড়ফুঁকের শব্দাবলী বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। সহীহ মুসলিমে মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ষত ও আহত লোকেদের ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে মাটিতে হাত রেখে চিকিৎসা করতেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৫২৭-[১৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (কারো ওপর) বদনযর লাগলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঝাড়ফুঁক করতে নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَن عَائِشَة قَالَتْ: أَمَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نَسْتَرْقِيَ مِنَ الْعَيْنِ
ব্যাখ্যাঃ বদনযর চাই মানুষের হোক অথবা জিনে্র, ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে চিকিৎসা করা মুস্তাহাব। সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম, আবূ দাঊদ, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহতে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল কুরআনের শেষ তিনটি সূরা পাঠের মাধ্যমে ফুঁ দিয়ে নিজেই ঝাড়ফুঁক করতেন। এ তিনটি সূরার সাথে সূরাহ্ আল কাফিরূনও যোগ করা যায়। মা‘মার বলেন, আমি ইমাম যুহরীকে বললামঃ কিভাবে ফুঁক দিতে হয়? উত্তরে তিনি বললেনঃ দুই হাতে ফুঁ দিয়ে তা চেহারা ও শরীরে মুছতে হবে। কতিপয় ‘উলামায়ে কিরামের মতে, চোখের বদনযর প্রতিরোধে সূরাহ্ আল কলাম-এর ৫১ আয়াত হতে শেষ পর্যন্ত পাঠ করা যায়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৫২৮-[১৫] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর (উম্মু সালামাহ্’র) ঘরে একটি মেয়ে দেখতে পেলেন, তার চেহারায় চিহ্ন ছিল (মুখায়ব বদনযরের দরুন হলুদ বর্ণ দেখাচ্ছিল)। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এর জন্য ঝাড়ফুঁক করো, কেননা তার ওপর নযর লেগেছে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى فِي بَيْتِهَا جَارِيَةً فِي وجهِها سفعة يَعْنِي صُفْرَةً فَقَالَ: «اسْتَرْقُوا لَهَا فَإِنَّ بِهَا النَّظْرَةَ»
ব্যাখ্যাঃ (فَإِنَّ بِهَا النَّظْرَةَ) ‘‘কেননা তার প্রতি নযর লেগেছে’’। নিহায়াহ্ গ্রন্থে এসেছে যে, অর্থাৎ তাকে বদনযর আক্রান্ত করেছে, সুতরাং তাকে ঝাড়ফুঁকের ব্যবস্থা গ্রহণ কর। এর অর্থ হল, তাকে জিনে্র চোখ আক্রান্ত করেছে, এ কথা বলেছেন কোন কোন ব্যাখ্যাকার। এও বলা হয়েছে, জীনদের চোখ তীরের আগার চেয়েও বেশি ধারালো।
‘আল্লামা সুয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ বদনযর মানুষের অথবা জিনে্র পক্ষ থেকেও হতে পারে।
অত্র হাদীসটিতে ঝাড়ফুঁক করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আবার কোন কোন হাদীসে ঝাড়ফুঁক করতে নিষেধও করা হয়েছে। যেমন- রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আমার উম্মাতের সত্তর হাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে। তাদের মধ্য হতে যারা ঝাড়ফুঁক করবে না...। এ বিষয়ে আরো অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এ দুই হাদীসের মধ্যে সমন্বয় করা হয় এভাবে যে, ঐ ঝাড়ফুঁক অপছন্দনীয় যা ‘আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় হয়, যা আল্লাহর নামসমূহ ও গুণাবলীসমূহ ছাড়া হয় এবং তার নাযিলকৃত বাণীবিহীন হয় (আর কুফরী কালাম দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা নিষেধ)। আর এর বিপরীতে কুরআন দ্বারা, আল্লাহর নামসমূহ দ্বারা ঝাড়ফুঁক করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। হাদীসে যে ঝাড়ফুঁকের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে তা এ প্রকারের অন্তর্ভুক্ত। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৫২৯-[১৬] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মন্তর তথা ঝাড়ফুঁক করা হতে নিষেধ করেছেন। (এ নিষেধের পর) ’আমর ইবনু হাযম-এর বংশের কয়েকজন লোক এসে বলল : হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কাছে এমন একটি মন্ত্র আছে, যার দ্বারা আমরা বিচ্ছুর দংশনে ঝাড়ফুঁক করে থাকি। অথচ আপনি মন্তর পড়া হতে নিষেধ করেছেন। অতঃপর তারা মন্ত্রটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পড়ে শুনাল। তখন তিনি বললেনঃ আমি তো এটার মধ্যে দোষের কিছু দেখছি না। অতএব, তোমাদের যে কেউ নিজের কোন ভাইয়ের কোন উপকার করতে পারে, সে যেন অবশ্যই তার উপকার করে। (মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الرُّقَى فَجَاءَ آلُ عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّهُ كَانَتْ عِنْدَنَا رُقْيَةٌ نَرْقِي بِهَا مِنَ الْعَقْرَبِ وَأَنْتَ نَهَيْتَ عَنِ الرُّقَى فَعَرَضُوهَا عَلَيْهِ فَقَالَ: «مَا أَرَى بِهَا بَأْسًا مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يَنْفَعَ أَخَاهُ فَلْيَنْفَعْهُ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসটি হতে বুঝা যায় যে, যে ঝাড়ফুঁকের মধ্যে কোন কুফরী কালাম, শির্কী শব্দ না থাকে, সে ঝাড়ফুঁক দ্বারা মানুষের চিকিৎসা করা বৈধ। আর যে ঝাড়ফুঁকের শব্দ গুলো বুঝা যায় না, তাতে শির্ক থাকার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং এ জাতীয় শির্কী মন্ত্র দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা হারাম। এ থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। পক্ষান্তরে যে মন্ত্র শির্কমুক্ত তা দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা উত্তম কাজ। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘‘তোমাদের যে কেউ নিজের কোন ভাইয়ের কোন উপকার করতে পারে, সে যেন অবশ্যই তার উপকার করে, নিঃসন্দেহে শির্কমুক্ত ঝাড়ফুঁক একটি বড় উপকারমূলক কাজ, যা মানুষের জীবনের ক্ষেত্রে উপকারে আসে।’’ সুতরাং শির্কমুক্ত ঝাড়ফুঁক করে সমাজকে শির্কমুক্ত করে সুস্থ সমাজ গঠন করা প্রত্যেক ঝাড়ফুঁককারীর জন্য জরুরী। [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৫৩০-[১৭] ’আওফ ইবনু মালিক আশজা’ঈ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জাহিলী যুগে আমরা মন্ত্র পড়ে ঝাড়ফুঁক করতাম। সুতরাং (ইসলাম গ্রহণের পর) আমরা জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রসূল! এ সমস্ত মন্তর সম্পর্কে আপনার মতামত কি? তখন তিনি বললেনঃ আচ্ছা, তোমাদের মন্তরগুলো আমাকে পড়ে শুনাও। (তবে কথা হলো) মন্ত্র দিয়ে ঝাড়ফুঁক করতে কোন আপত্তি নেই, যদি তার মধ্যে শির্কী কিছু না থাকে। (মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَن عوفِ بن مَالك الْأَشْجَعِيّ قَالَ: كُنَّا نَرْقِي فِي الْجَاهِلِيَّةِ فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ تَرَى فِي ذَلِكَ؟ فَقَالَ: «اعْرِضُوا عَلَيَّ رُقَاكُمْ لَا بَأْسَ بِالرُّقَى مَا لم يكن فِيهِ شرك» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ (لَا بَأْسَ بِالرُّقَى مَا لم يكن فِيهِ شرك) ‘‘ঝাড়ফুঁক করা দোষের কিছু নয়, যদি তার মধ্যে শির্কী কিছু না থাকে’’। ঝাড়ফুঁক করার অনুমতি প্রদান ও নিষেধ করার কারণ হলো এটা। এ হাদীসটির মধ্যে দলীল আছে যে, যে ঝাড়ফুঁকের মাঝে কোন ক্ষতি নেই, শারী‘আতের দৃষ্টিতে যে ঝাড়ফুঁক করা নিষেধ না, সে ঝাড়ফুঁক করা জায়িয এবং উত্তম কাজ। যদিও তার শব্দগুলো আল্লাহর নাম ও তাঁর কালাম তথা কুরআনের শব্দ না হয়। তবে শর্ত হলো ঝাড়ফুঁকের শব্দগুলো সুন্দর অর্থবোধক হতে হবে, যা বুঝে আসে। আর যদি তার অর্থ বুঝা না যায় তবে তা শির্কমুক্ত হওয়া থেকে নিরাপদ নয়। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৩৮৮)
ঝাড়ফুঁক করা মুসলিম সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজের একটি। ধর্মপ্রাণ সকল মুসলিম নর-নারী ঝাড়ফুঁক বিশ্বাস করে, ভক্তি করে। এ সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে এক শ্রেণীর ভন্ড-প্রতারক কব্র-মাজার পূজারীরা। তারা ঝাড়ফুঁকের নামে ভক্তদের কাছ থেকে বহু অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। অথচ সে ঝাড়ফুঁকের অনেকাংশে কুফরী, শির্কীতে ভরপুর। সমাজ হতে, রাষ্ট্র হতে শির্ক দূর করতে হলে এ জাতীয় কুফরী, শির্কী ঝাড়ফুঁক দূর করতে হবে। [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৫৩১-[১৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নযর লাগা একটি বাস্তব সত্য। যদি কোন জিনিস তাকদীর পরিবর্তন করতে সক্ষম হত, তবে বদনযরই তা করতে পারত। আর যদি তোমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধোয়া পানি চাওয়া হয়, তবে অবশ্যই ধুয়ে দেবে। (মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الْعَيْنُ حَقٌّ فَلَوْ كَانَ شَيْءٌ سَابَقَ الْقَدَرِ سَبَقَتْهُ الْعَيْنُ وَإِذَا اسْتُغْسِلْتُمْ فاغسِلوا» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ (الْعَيْنُ حَقٌّ) অর্থাৎ চোখের প্রভাব সত্য। এখানে চোখের প্রভাব বলতে বদনযর উদ্দেশ্য। বদনযরের মাধ্যমে মানুষের ক্ষতি সাধিত হয়। বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের অনেক ক্ষতি হয়। বদনযর থেকে বাঁচার জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দুই নাতি হাসান-হুসায়ন (রাঃ)-কে ছোট বেলায় ঝাড়ফুঁক করতেন। [সম্পাদক]
(سَبَقَتْهُ الْعَيْنُ) অর্থাৎ- ‘‘অবশ্যই বদনযর তাকদীরকে পরিবর্তন করত’’। তবে তাকদীর পরিবর্তন হবে না। কারণ মহান আল্লাহ সৃষ্টির পূর্বেই তাকদীরকে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। হাফিয ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ চোখের প্রভাব বুঝানোর জন্য হাদীসটিতে মুবালাগাহ্ বা আধিক্যতা বুঝানো হয়েছে। বদনযর তাকদীরের কোন পরিবর্তন করতে পারবে না। কেননা আল্লাহর জ্ঞানে তাকদীর পূর্ব থেকেই নির্ধারিত, সুতরাং তা পরিবর্তনশীল নয়। মোট কথা যদি কোন জিনিসের ক্ষমতা থাকতো তাকদীরকে পরিবর্তন করতে, তবে অবশ্যই বদনযরের সে ক্ষমতা ছিল। যেহেতু তাকদীর পরিবর্তন হবে না তাহলে কিভাবে বদনযরে তাকে পরিবর্তন করবে?
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীস থেকে তাকদীরের অস্বিত্বের প্রমাণ হয়। এটা কুরআন সুন্নাহর দলীল এবং আহলুস্ সুন্নাহর ইজমা দ্বারা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। এর অর্থ হলো সকল জিনিস মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত তাকদীর দ্বারা হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলার নির্ধারণের বাইরে কোন কাজ সংঘটিত হয় না। সুতরাং চোখ বা অন্য কোন কিছুর কোন ধরনের ক্ষতি করতে পারবে না। অতএব চোখ বা অন্য কোন কিছুর কোন ধরনের ক্ষতি বা ভালো-মন্দ তাকদীরের নির্ধারিত বিষয়ের উপর সংঘটিত হয়ে থাকে। অতএব বদনযর থেকে আরোগ্য লাভ করা এবং বদনযরে ক্ষতি হওয়াটাও তাকদীরের নির্ধারিত বিষয় অনুযায়ী হয়ে থাকে। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০৬২)
(وَإِذَا اسْتُغْسِلْتُمْ فَاغْسِلُوْا) ‘‘আর যদি তোমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধোয়ার পানি চাওয়া হয়, তবে অবশ্যই ধুয়ে দিবে’’। ‘আরবদের মধ্যে প্রচলিত ছিল, যে ব্যক্তির বদনযর লাগত, তার হাত, পা এবং দেহের নিচের অঙ্গ ধুয়ে যার উপরে নযর লাগিয়েছে তাকে সেই পানি দিয়ে গোসল করাতো, ফলে সে বদনযর থেকে আরোগ্য লাভ করতো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজটির অনুমোদন দিয়েছেন এবং যার নযর লেগেছে, তাকে নির্দেশ দিয়েছেন সে যেন নিজের অঙ্গ ধুয়ে পানি দেয়াতে সে যেন অস্বীকৃতি না জানায়। এ কাজ করাতে যে বদনযরে আক্রান্ত হয়েছে তার সন্দেহ দূর হয়ে যাবে। আর বাহ্যিকভাবে এ কাজ (অঙ্গ ধূয়ে পানি দেয়া) ওয়াজিব। কারণ এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশ। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০৬২; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)