পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ছবি সম্পর্কে বর্ণনা
৪৫০৭-[১৯] সা’ঈদ ইবনু আবুল হাসান (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় তাঁর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল, হে ইবনু ’আব্বাস! আমি এমন ব্যক্তি, হস্তশিল্পই যার পেশা। আমি এ সকল ছবি তৈরি করে থাকি। তখন ইবনু ’আব্বাস(রাঃ) বললেনঃ আমি তোমাকে তাই বর্ণনা করব, যা আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে শুনেছি। তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ছবি তৈরি করবে, আল্লাহ তা’আলা নিশ্চয় তাকে শাস্তি দেবেন, যে পর্যন্ত না সে তার মধ্যে প্রাণ ফুঁকবে, অথচ সে কস্মিনকালেও এটাকে প্রাণ দিতে পারবে না। এ কথা শুনে লোকটি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ভীষণভাবে হতাশ হয়ে পড়ল এবং তার মুখমণ্ডলে ফ্যাকাসে হয়ে উঠল। (তার অবস্থা দেখে) ইবনু ’আব্বাস(রাঃ) বললেনঃ আফসোস তোমার প্রতি! যদি তুমি এ পেশা ছাড়া অন্য কিছু করতে না চাও, তাহলে এ সকল গাছ-গাছড়া এবং এমন সব জিনিসের ছবি নির্মাণ করো যার মধ্যে প্রাণ নেই। (বুখারী)[1]
عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي الْحَسَنِ قَالَ: كُنْتُ عِنْدَ ابْنِ عَبَّاسٍ إِذْ جَاءَهُ رَجُلٌ فَقَالَ: يَا ابْنَ عَبَّاسٍ إِنِّي رَجُلٌ إِنَّمَا مَعِيشَتِي مِنْ صَنْعَةِ يَدِي وَإِنِّي أَصْنَعُ هَذِهِ التَّصَاوِيرَ فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: لَا أُحَدِّثُكَ إِلَّا مَا سَمِعْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَمِعْتُهُ يَقُولُ: «مَنْ صَوَّرَ صُورَةً فَإِنَّ اللَّهَ مُعَذِّبُهُ حَتَّى يَنْفُخَ فِيهِ الرُّوحَ وَلَيْسَ بِنَافِخٍ فِيهَا أَبَدًا» . فَرَبَا الرَّجُلُ رَبْوَةً شَدِيدَةً وَاصْفَرَّ وَجْهُهُ فَقَالَ: وَيْحَكَ إِنْ أَبَيْتَ إِلَّا أَنْ تَصْنَعَ فَعَلَيْكَ بِهَذَا الشَّجَرِ وَكُلِّ شَيْءٍ لَيْسَ فِيهِ روح. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যাঃ সা‘ঈদ ইবনু আবুল হাসান বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট ছিলাম। এমতাবস্থায় তার নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল : হে ইবনু ‘আব্বাস! আমি ছবি অঙ্কন করি। তখন ইবনু ‘আব্বাস বললেনঃ আমি তোমাকে এ প্রসঙ্গে সেই হাদীস বলছি যা আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে শুনেছি। আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোন প্রাণীর ছবি অঙ্কন করবে আল্লাহ তাকে ততক্ষণ পর্যন্ত শাস্তি প্রদান করবেন যতক্ষণ না সে ঐ ছবিগুলোতে প্রাণ দিতে পারে। বাস্তবে সে প্রাণ সোচ্চার করতে সক্ষম হবে না। ফলে তার শাস্তি অনবরত চলতেই থাকবে। এ কথা শুনে লোকটি ভয় পেয়ে গেল এবং তার শ্বাস-প্রশ্বাস দীর্ঘ হয়ে গেল এবং চেহারা হলুদ হয়ে গেল। এমতাবস্থায় দেখে ইবনু ‘আব্বাস তাকে বললেন, তোমার ধ্বংস হোক, যদি তুমি এ কাজ করতেই চাও, তাহলে শুধু গাছ পালার ছবি আঁকবে এবং এমন জিনিসের ছবি আঁকবে যার প্রাণ নেই।
এ হাদীস থেকে জানা যায় প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা হারাম এবং এর উপার্জনও হারাম, তবে গাছ এবং যার প্রাণ নেই এমন ছবি অঙ্কন বৈধ। (ফাতহুল বারী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২২২৫; ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৯৬৩)
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ছবি সম্পর্কে বর্ণনা
৪৫০৮-[২০] ’আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন (ওফাতের প্রাক্কালে) অসুস্থ হয়ে পড়লেন, তখন তাঁর সহধর্মিণীদের কেউ (আবিসিনিয়ার) মারিয়্যাহ্ গির্জার কথা উল্লেখ করলেন। (ইসলামের প্রাথমিক যুগে) উম্মু সালামাহ্ ও উম্মু হাবীবাহ্ (রাঃ) হিজরত করে হাবাশাহ্ দেশে গিয়েছিলেন, তাঁরা ঐ গির্জার সৌন্দর্য এবং তাতে যে সকল ছবি ছিল তার বর্ণনা করলেন। (এ কথা শুনে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা উঠিয়ে বললেনঃ তারা এমন এক সম্প্রদায়, যখন তাদের মধ্যে নেক বান্দা মারা যেত, তখন তারা ঐ ব্যক্তির কবরের উপরে মসজিদ বানিয়ে নিত। অতঃপর তথায় তারা এ সকল ছবি বানাত, বস্তুতঃ তারা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: لَمَّا اشْتَكَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَكَرَ بَعْضُ نِسَائِهِ كَنِيسَةً يُقَالُ لَهَا: مَارِيَّةُ وَكَانَتْ أُمُّ سَلمَة وَأم حَبِيبَة أتتا أرضَ الْحَبَشَة فَذَكرنَا مِنْ حُسْنِهَا وَتَصَاوِيرَ فِيهَا فَرَفَعَ رَأْسَهُ فَقَالَ: «أُولَئِكَ إِذَا مَاتَ فِيهِمُ الرَّجُلُ الصَّالِحُ بَنَوْا عَلَى قَبْرِهِ مَسْجِدًا ثُمَّ صَوَّرُوا فِيهِ تِلْكَ الصُّور أُولَئِكَ شرار خلق الله»
ব্যাখ্যাঃ : (لَمَّا اشْتَكَى النَّبِىُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অসুস্থ হয়ে পড়লেন তখন তার কতিপয় স্ত্রী তার নিকটে ইয়াহূদী খ্রীস্টানদের নবী এবং গির্জার কথা আলোচনা করলেন যেগুলোকে মারিয়া বলা হতো, উম্মু সালামাহ্ এবং উম্মু হাবীবাহ্ হাবাশাহ্ (বর্তমানে ইথিওপিয়া) দেশে যাওয়ায় সেখানকার গির্জার সৌনদর্যতা এবং তার ভিতর মূর্তির ছবি সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা উঠিয়ে বললেনঃ শোন, তারা এমন লোক যে, তাদের মধ্যে কোন সৎ লোক মারা গেলে তার কবরে মসজিদ (গির্জা) তৈরি করত, এরপর তাতে তাদের মূর্তি অঙ্কন করে রাখত। অর্থাৎ নেককার ব্যক্তিদের স্মরণ রাখার জন্য এবং তাদের মতো ‘ইবাদাতে উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য ছবি রাখা হয়। যারা এ কাজ করেছে তাদের মৃত্যুর পর শয়তান নতুন প্রজন্মের কাছে তার কর্মকে সুন্দর করে তুলে ধরে এবং বলে তোমাদের পূর্ব পুরুষেরা এই সকল মূর্তির পূজা করত এভাবে তারা মূর্তি পূজায় জড়িয়ে পড়ে।
(أُولٰئِكَ شِرَارُ خَلْقِ اللهِ) এ সমস্ত মূর্তি বা ছবি অঙ্কনকারীরা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট। কেননা তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং অন্যকেও পথভ্রষ্ট করেছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ছবি সম্পর্কে বর্ণনা
৪৫০৯-[২১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন ’আযাব হবে সে ব্যক্তির যে কোন নবীকে কতল করেছে অথবা কোন নবী যাকে কতল করেছেন। অথবা যে ব্যক্তি তার পিতা বা মাতার মধ্যে কাউকে কতল করেছে। আর ছবি প্রস্তুতকারীদের এবং ঐ ’আলিম যে নিজের ’ইলম হতে উপকৃত হয় না (’আমল করে না)।[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ قَتَلَ نَبِيًّا أَوْ قَتَلَهُ نَبِيٌّ أَوْ قَتَلَ أَحَدَ وَالِدَيْهِ وَالْمُصَوِّرُونَ وعالم لم ينْتَفع بِعِلْمِهِ»
ব্যাখ্যাঃ (إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ قَتَلَ نَبِيًّا...) কিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে তাদের যারা নবীকে হত্যা করেছে অথবা যাকে নবী আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধে হত্যা করেছে। যেমনটি অন্য বর্ণনা আছে- اشْتَدَّ غَضَبُ اللهِ عَلَى رَجُلٍ يَقْتُلُهٗ رَسُولُ اللهِ فِي سَبِيلِ اللهِ আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির ওপর কঠোর রাগান্বিত হবেন যাকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধে হত্যা করেছে।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ‘ফী সাবীলিল্লা-হ’ দ্বারা তাদেরকে বাদ দেয়া হয়েছে যাদেরকে তিনি হত্যা করেছেন শাস্তি প্রয়োগ অথবা ক্বিসাসের কারণে। কেননা যাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হত্যা করেছেন সেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হত্যা করতে ইচ্ছুক ছিল।’
(أَوْ قَتَلَ أَحَدَ وَالِدَيْهِ) অথবা যে পিতামাতার কোন একজনকে হত্যা করেছে।
(وَالْمُصَوِّرُونَ) এবং ছবি অঙ্কনকারীগণ। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ছবি সম্পর্কে বর্ণনা
৪৫১০-[২২] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলতেন, শতরঞ্জ (দাবা (পাশা/শতরঞ্জ)) খেলা হলো আজমীদের (অনারবদের) জুয়া।[1]
হাদীসটির সানাদ পাওয়া যায় না। দেখুন- হিদায়াতুর রুআত ইলা তাখরীজি আহাদীসিল মাসাবীহ ওয়াল মিশকাত ৪/২৬৩ পৃঃ।
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ كَانَ يَقُول: الشطرنج هُوَ ميسر الْأَعَاجِم
ব্যাখ্যাঃ (الشطرنج هُوَ ميسر الْأَعَاجِم) শতরঞ্জ বা দাবা (পাশা/শতরঞ্জ) খেলা হলো অনাবরদের জুয়া খেলা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ছবি সম্পর্কে বর্ণনা
৪৫১১-[২৩] ইবনু শিহাব যুহরী (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) বলেছেনঃ পাপী ব্যক্তিই দাবা (পাশা/শতরঞ্জ) খেলায় লিপ্ত হয়।[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সানাদ মাওকূফ, কারণ ‘‘ইবনু শিহাব’’ আবূ মূসা-কে পায়নি। দেখুন- হিদায়াতুর্ রুআত ইলা তাখরীজি আহাদীসিল মাসাবীহ ওয়াল মিশকাত ৪/২৬৩ পৃঃ।
وَعَنِ ابْنِ شِهَابٍ أَنَّ أَبَا مُوسَى الْأَشْعَرِيَّ قَالَ: لَا يلْعَب بالشطرنج إِلَّا خاطئ
ব্যাখ্যাঃ আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) বলেন, পাপী ব্যক্তিই দাবা (পাশা/শতরঞ্জ) খেলায় লিপ্ত হয়।
শারহুস্ সুন্নাহ্ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, দাবা (পাশা/শতরঞ্জ) খেলা বৈধ হওয়া স্বপক্ষে মতভেদ রয়েছে। কেউ তাকে কতিপয় শর্তে অনুমতি দিয়েছেন, তা হলো জুয়া হতে পারবে না, দেরীতে সালাত আদায় করতে পারবে না, জিহবাকে অশ্লীল কথাবার্তা থেকে বিরত রাখবে। যদি কোন একটি করে ফেলে তাহলে অভদ্র সাব্যস্ত হবে এবং তার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে না। ইমাম শাফি‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ) দাবা (পাশা/শতরঞ্জ) খেলা অপছন্দ করতেন এবং ইমাম হুমাম-এর মতে, মাকরূহে তানযীহী এবং একদল ‘আলিমের মতে তা হারাম। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ছবি সম্পর্কে বর্ণনা
৪৫১২-[২৪] উক্ত রাবী [ইবনু শিহাব যুহরী অথবা আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ)]-কে দাবা (পাশা/শতরঞ্জ) খেলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এটা বাতিল (অবৈধ) কাজ। আর আল্লাহ তা’আলা বাতিল কাজ পছন্দ করেন না। (উপরিউক্ত হাদীস চারটি বায়হাক্বী’র ’’শু’আবুল ঈমানে’’ বর্ণনা করেছেন।)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে ‘‘ইবরাহীম ইবনু ইসপদকব’’ নামের একজন বর্ণনাকারী, যার পরিচয় জানা যায়নি। দেখুন- মা‘রিফাতুস্ সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাক্বী দিরাসাতুল ওয়া তাহক্বীক ওয়া তাখরীজ ও তা‘লীক মিন কিতাবিস্ সয়দি ইলা আখিরিল কিতাব, ডক্টরেট থিসিস, ছাত্র : মুহাম্মাদ ইবনু হুসায়ন আল হাযিমী, পৃঃ ১৩৬৬। জামিআতু উম্মিল কুরা।
وَعنهُ أَن سُئِلَ عَنْ لَعِبِ الشَّطْرَنْجِ فَقَالَ: هِيَ مِنَ الْبَاطِلِ وَلَا يُحِبُّ اللَّهُ الْبَاطِلَ. رَوَى الْبَيْهَقِيُّ الْأَحَادِيثَ الْأَرْبَعَةَ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ
ব্যাখ্যাঃ ইবনু শিহাব যুহরী অথবা আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ)-কে দাবা (পাশা/শতরঞ্জ) খেলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন- এটা বাতিল (অবৈধ কাজ) আর আল্লাহ তা‘আলা বাতিল কাজ পছন্দ করেন না। ইমাম মালিক বলেনঃ যারা এই খেলায় অভ্যস্ত, তাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়।
মহান আল্লাহ বলেনঃ ..فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ إِلَّا الضَّلَالُ... ‘‘...প্রকৃত সত্যের পর গুমরাহী ছাড়া আর কী থাকতে পারে?...’’ (সূরাহ্ ইউনুস ১০ : ৩২) (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ছবি সম্পর্কে বর্ণনা
৪৫১৩-[২৫] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়শ এক আনসারীর ঘরে আসা-যাওয়া করতেন। অথচ তাদের নিকটেই অন্য আরেকটি ঘর আছে। এটাতে সে গৃহবাসীর মনঃকষ্ট হলো। তখন তারা বলল : হে আল্লাহর রসূল! আপনি অমুকের ঘরে আসেন, অথচ আমাদের ঘরে আসেন না। উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যেহেতু তোমাদের ঘরে কুকুর আছে। তখন তারা বলল, তাদের ঘরে তো বিড়াল রয়েছে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বিড়াল তো একটি পশু মাত্র। (দারাকুত্বনী)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে ‘‘ঈসা ইবনুল মুসাইয়্যাব’’ নামের একজন বর্ণনাকারী। ইমাম আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মা‘ঈন তাকে য‘ঈফ বলেছেন। মুসতাদরাক লিল হাকিম ৬৪৯, সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাহ্ ১৫১২।
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْتِي دَارَ قَوْمٍ مِنَ الْأَنْصَارِ وَدُونَهُمْ دَارٌ فَشَقَّ ذَلِكَ عَلَيْهِمْ فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ تَأْتِي دَارَ فُلَانٍ وَلَا تَأْتِي دَارَنَا. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لِأَنَّ فِي دَارِكُمْ كَلْبًا» . قَالُوا: إِنَّ فِي دَارِهِمْ سِنَّوْرًا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «السِّنَّوْرُ سَبْعٌ» . رَوَاهُ الدَّارَقُطْنِيُّ
ব্যাখ্যাঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের এক বাড়ীতে যাতায়াত করতেন, অথচ এর নিকটেই আরো বাড়ী ছিল তাদের কাছে যেতেন না। এরূপ অবস্থাদৃষ্টে তারা আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি অমুক বাড়ীতে যান কিন্তু আমাদের বাড়ীতে আসেন না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, কেননা তোমাদের বাড়ীতে কুকুর আছে। তারা বলল, তাদের বাড়ীতে তো বিড়াল আছে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, (السِّنَّوْرُ سَبْعٌ) বিড়াল তো হিংস্র প্রাণী।
ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাটি হয়তো অপছন্দের কারণে বলেছেন অথবা সংবাদ হিসেবে বলেছেন। এভাবে বিড়াল হিংস্র প্রাণী তবে কুকুরের মতো অপবিত্র শয়তান নয়। কুকুর অপবিত্র ও নাপাক জিনিসে যাওয়ার কারণে বাড়ীতে মালাক (ফেরেশতা) প্রবেশ করে না, আবার কোন কোন কুকুরকে শয়তান আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর শয়তান হচ্ছে মালাকের বিপরীত। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)