৪৪৯৯

পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ছবি সম্পর্কে বর্ণনা

৪৪৯৯-[১১] উক্ত রাবী [’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি এমন স্বপ্নের কথা বর্ণনা করবে, যা সে দেখেনি, তাকে (কিয়ামতের দিন) দু’টি যবের বীজে গিঁট লাগানোর জন্য বাধ্য করা হবে। অথচ সে কিছুতেই গিঁট লাগাতে পারবে না। আর যে ব্যক্তি অন্য লোকেদের আলোচনা কান পেতে শুনবে, অথচ তারা এ ব্যক্তির শোনাটা পছন্দ করে না অথবা তারা এ ব্যক্তি হতে দূরে থাকতে চায়, কিয়ামতের দিন তার কানে গলিত সীসা ঢেলে দেয়া হবে। আর যে লোক (কোন প্রাণীর) ছবি তৈরি করবে, তাকে শাস্তি দেয়া হবে এবং এগুলোতে প্রাণ দান করার জন্য বাধ্য করা হবে, অথচ সে কিছুতেই প্রাণ ফুঁকতে পারবে না। (বুখারী)[1]

بَابُ التَّصَاوِيرِ

وَعَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ تَحَلَّمَ بِحُلْمٍ لَمْ يَرَهُ كُلِّفَ أَنْ يَعْقِدَ بَيْنَ شَعِيرَتَيْنِ وَلَنْ يَفْعَلَ وَمَنِ اسْتَمَعَ إِلَى حَدِيثِ قَوْمٍ وَهُمْ لَهُ كَارِهُونَ أَوْ يَفِرُّونَ مِنْهُ صُبَّ فِي أُذُنَيْهِ الْآنُكُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ صَوَّرَ صُورَةً عُذِّبَ وَكُلِّفَ أَنْ يَنْفُخَ فِيهَا وَلَيْسَ بِنَافِخٍ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

ব্যাখ্যাঃ (مَنْ تَحَلَّمَ بِحُلْمٍ لَمْ يَرَهُ كُلِّفَ...) যে ব্যক্তি স্বপ্নে কোন কিছু না দেখেও মিথ্যা স্বপ্নের দাবী করবে তাকে শাস্তি প্রদান করা হবে যতক্ষণ না সে দু’টি যবের দানা একত্রে জোড় লাগাতে সক্ষম হবে। আর বাস্তবে তা করতে সক্ষম হবে না, যার ফলশ্রুতিতে তার শাস্তি অনবরত চলতেই থাকবে।

‘আল্লামা ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে তাবারীর বরাতে বলেন, জাগ্রত অবস্থায় মিথ্যা বলার পরিণতি কখনো ভয়াবহ হতে পারে। যেমন কাউকে হত্যা বা শাস্তি প্রয়োগ অথবা কারো মাল চুরির মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান। কিন্তু এর চেয়ে আরো কঠোর শাস্তি হবে যদি স্বপ্নে কোন কিছু না দেখেই আল্লাহর নামে মিথ্যা বানিয়ে বলে। যেহেতু হাদীসে এসেছে, الرُّؤْيَا جُزْءٌ مِنَ النُّبُوَّةِ সত্য স্বপ্ন হচ্ছে নুবুওয়াতের অংশ, আর যা নুবুওয়াতের অংশ তা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে।

(وَمَنِ اسْتَمَعَ إِلٰى حَدِيثِ قَوْمٍ وَهُمْ لَهٗ كَارِهُونَ) যারা কারো অপছন্দ সত্ত্বেও তাদের কথা শ্রবণ করবে অথবা কেউ তাদের কথা যেন না শুনে সেজন্য দূর গিয়ে কথা বলে তা সত্ত্বেও কেউ যদি সে কথা শুনার চেষ্টা করে কিয়ামতের দিন তাদের কানে শিসা গলিয়ে ঢেলে দেয়া হবে। এই কঠোর শাস্তির বিধান তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে যারা আড়ি পেতে অন্যের কথা শুনে চোগলখোরী করবে এবং ফিতনা ছড়াবে। কিন্তু যারা অন্যের কথায় আড়ি পেতে তাদের চক্রান্ত এবং ফিতনা থেকে মানুষকে সতর্ক রাখার উদ্দেশ্য রাখবে তাদের ক্ষেত্রে কঠোরতা প্রযোজ্য হবে না। এমনিভাবে যারা প্রকাশ্যে কোন কথা বলে আর অন্যেরা সহজেই তা শুনে ফেলে সে ক্ষেত্রে শ্রোতার কোন অপরাধ হবে না। কেননা তারা এক্ষেত্রে কেউ শুনাতে তাদের অপছন্দ করেনি।

(وَمَنْ صَوَّرَ صُورَةً عُذِّبَ وَكُلِّفَ أَنْ يَنْفُخَ فِيهَا) যারা কোন প্রাণীর ছবি অঙ্কন করবে ক্বিয়ামাতে তাদেরকে শাস্তি প্রদান করা হবে এবং ঐ প্রাণীতে জীবন দিতে বলা হবে। না দেয়া পর্যন্ত তাদের শাস্তি চলতেই থাকবে। যদিও তারা সক্ষম হবে না তথাপি তাদেরকে এই আদেশ করা হবে। তাদের অপারগতা প্রমাণ করার জন্য।

এ হাদীসটি তিনটি বিধানকে অন্তর্ভুক্ত করেছে যেগুলো সম্পাদন করা হারাম।

১. স্বপ্নের ব্যাপারে মিথ্যা কথা বানিয়ে বলা

২. যারা অন্যকে শুনিয়ে কথা বলতে অপছন্দ করে তথাপি কেউ তাদের কথা আড়ি পেতে শুনে।

৩. কোন প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা। (ফাতহুল বারী ১২শ খন্ড, হাঃ ৭০৪২; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)