পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ছবি সম্পর্কে বর্ণনা
৪৫০১-[১৩] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জিবরীল (আ.) আমার কাছে এসে বললেনঃ আমি গত রাতে আপনার কাছে এসেছিলাম, কিন্তু ঘরের ভিতরে প্রবেশ করতে আমাকে যে জিনিস বিরত রেখেছিল তা হলো গৃহদ্বারের ছবিগুলো এবং ঘরের দরজায় একখানা পর্দা ঝুলানো ছিল, তাতে ছিল অনেকগুলো প্রাণীর ছবি। আর ঘরের ভেতরে ছিল একটি কুকুর। সুতরাং ঐ প্রতিকৃতিগুলোর মাথা কেটে ফেলার নির্দেশ দিন, যা ঘরের দরজায় রয়েছে, তা কাটা হলে তখন তা গাছ-গাছড়ার আকৃতি হয়ে যাবে এবং পর্দাটি সম্পর্কে নির্দেশ দিন, তাকে কেটে দু’টি গদি তৈরি করে নেবে, যা বিছানা এবং পায়ের নিচে থাকবে। আর কুকুরটি সম্পর্কে নির্দেশ দিন, যেন এটাকে অবশ্যই ঘর হতে বের করে দেয়া হয়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই করলেন। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَتَانِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ: أَتَيْتُكَ الْبَارِحَةَ فَلَمْ يَمْنَعْنِي أَنْ أَكُونَ دَخَلْتُ إِلَّا أَنَّهُ كَانَ عَلَى الْبَابِ تَمَاثِيلُ وَكَانَ فِي الْبَيْتِ قِرَامُ سِتْرٍ فِيهِ تَمَاثِيلُ وَكَانَ فِي الْبَيْتِ كَلْبٌ فَمُرْ بِرَأْسِ التِّمْثَالِ الَّذِي عَلَى بَابِ الْبَيْتِ فَيُقْطَعْ فَيَصِيرُ كَهَيْئَةِ الشَّجَرَةِ وَمُرْ بِالسِّتْرِ فَلْيُقْطَعْ فَلْيُجْعَلْ وِسَادَتَيْنِ مَنْبُوذَتَيْنِ تُوطَآنِ وَمُرْ بِالْكَلْبِ فَلْيُخْرَجْ . فَفَعَلَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (أَتَانِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ: أَتَيْتُكَ الْبَارِحَةَ...) জিবরীল আমার কাছে আগমন করে বললেনঃ আমি গত রাতে আপনার নিকটে এসেছিলাম। বাড়ীতে প্রবেশ মুখে দরজায় পর্দার ছবির কারণে প্রবেশ করতে পারিনি। দরজাতে পাতলা পশমি কাপড়ের রঙিন চাদর টাঙানো ছিল এবং ঘরে কুকুর ছিল। জিবরীল (আ.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেনঃ ঘরের পর্দাতে যে প্রাণীর ছবি আছে তার মাথা কেটে ফেলতে বলুন যাতে তা গাছের মতো হয়ে যায়। কেননা গাছ এবং যার প্রাণ নেই এমন ছবি অঙ্কন করা ও তার দ্বারা উপার্জন করা হারাম নয়। গাছ ফলদায়ক হোক বা না হোক এতে কোন পার্থক্য হবে না। ইবনু রাসলান বলেনঃ এটাই সমস্ত ‘আলিমের অভিমত কেবল মুজাহিদ (রহিমাহুল্লাহ) ব্যতিরিকে। তার নিকট ফলদায়ক গাছের ছবি তৈরি করা মাকরূহ, যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذَهَبَ يَخْلُقُ خَلْقًا كَخَلْقِي তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে আছে যে আমার সৃষ্টির মতো সদৃশ কিছু তৈরি করে।
(وَمُرْ بِالسِّتْرِ فَلْيُقْطَعْ فَلْيُجْعَلْ وِسَادَتَيْنِ...) এবং আদেশকরণ পর্দা দিয়ে যেন ২টি বালিশ বা বিছানার চাদর তৈরি করেন যা বিছানোর কাজে ব্যবহৃত হবে এবং তাতে পদাঘাত এবং বসার মাধ্যমে অপমানিত হবে। ‘আল্লামা কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ পর্দা কেটে ২টি বালিশ বা চাদর তৈরি করার অনুমতি থেকে বুঝা যায় যে, প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড় দিয়ে বিছানা বা বালিশ বানানো জায়িয।
ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) ‘‘মা‘আলিমুস্ সুনান’’ গ্রন্থে বলেনঃ এ হাদীসের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, কোন প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড় থেকে যদি মাথা কেটে বা মুছে ফেলে ছবির বিকৃতি ঘটানো যায় তাহলে উক্ত কাপড় ব্যবহারে কোন অসুবিধা নেই। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪১৫৪)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ছবি সম্পর্কে বর্ণনা
৪৫০২-[১৪] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন জাহান্নাম হতে এমন একটি ঘাড় বের হবে যার থাকবে দু’টি চক্ষু যারা দেখবে এবং থাকবে দু’টি কান যারা শুনবে এবং কথা বলার জন্য থাকবে রসনা। বলবে, আমাকে তিন শ্রেণীর লোকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ১. প্রত্যেক উদ্ধত যালিম, ২. ঐ সকল লোক যারা আল্লাহর সাথে অন্যকে মা’বূদ হিসেবে ডাকে এবং ৩. ছবি অঙ্কনকারীগণ। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَخْرُجُ عُنُقٌ مِنَ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَهَا عَيْنَانِ تُبْصِرَانِ وَأُذُنَانِ تَسْمَعَانِ وَلِسَانٌ يَنْطِقُ يَقُولُ: إِنِّي وُكِّلْتُ بِثَلَاثَةٍ: بِكُلِّ جَبَّارٍ عَنِيدٍ وَكُلِّ مَنْ دَعَا مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخر وبالمصوِّرين . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যাঃ (يَخْرُجُ عُنُقٌ مِنَ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ) কিয়ামতের দিন জাহানণাম থেকে একখন্ড আগুন বের হবে যা দেখতে লম্বা গর্দান বিশিষ্ট হবে। তার দু’টি চোখ থাকবে যা দ্বারা দেখবে এবং দু’টি কান থাকবে যা দ্বারা শুনবে এবং জিহবা থাকবে যা কথা বলবে। সে বলবে, আল্লাহ তা‘আলা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে এই তিন শ্রেণীর লোককে জাহান্নামে প্রবেশ করাব এবং সমস্ত লোকের সামনে শাস্তি প্রদান করব : ১. প্রত্যেক অত্যাচারী সীমালঙ্ঘনকারী বাতিলপন্থী ও ২. প্রত্যেক ঐ সমস্ত ব্যক্তি যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে শরীক করতঃ তাকে আহবান করত ৩. এবং প্রাণীর ছবি অঙ্কনকারী।
এ হাদীসে উক্ত তিন শ্রেণীর লোকের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তির ধমকী এবং নিশ্চিত ভীতি প্রদর্শন।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৫৭৪)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ছবি সম্পর্কে বর্ণনা
৪৫০৩-[১৫] আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা মদপান করা, জুয়া খেলা এবং ঢোল বাজানো হারাম করেছেন এবং বলেছেনঃ প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী বস্তু হারাম। কেউ কেউ বলেছেনঃ কূবাহ্ অর্থ ’’তবলা’’। (বায়হাক্বী- শু’আবুল ঈমান)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى حَرَّمَ الْخَمْرَ وَالْمَيْسِرَ وَالْكُوبَةَ وَقَالَ: كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ . قِيلَ: الْكُوبَةُ الطَّبْلُ. رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شعب الْإِيمَان
ব্যাখ্যাঃ (إِنَّ اللهَ تَعَالَى حَرَّمَ الْخَمْرَ وَالْمَيْسِرَ وَالْكُوبَةَ) নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা হারাম করেছেন মদ, জুয়া এবং তবলা বাজানোকে এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন- প্রত্যেক নেশা জাতীয় দ্রব্য হারাম। অর্থাৎ যে জিনিসে অধিক পরিমাণে খেলে নেশা হয় তা অল্প খাওয়াও হারাম। হাদীসে ব্যবহৃত كُوبَةَ শব্দের একাধিক অর্থ হতে পারে। কেউ বলেন, নারদ বা গুটি খেলা। কেউ বলেন, ছোট তবলা। আবার ‘কামূস’ গ্রন্থে আছে- তা হলো গুটি খেলা এবং দাবা (পাশা/শতরঞ্জ) খেলা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ছবি সম্পর্কে বর্ণনা
৪৫০৪-[১৬] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদ, জুয়া, কূবাহ্ ও গুবায়রা হতে নিষেধ করেছেন। গুবায়রা এক প্রকারের মদ যা (আফ্রিকার) হাবশীরা বাজরা হতে প্রস্তুত করত। তা তাদের ভাষায় সুকুর্কাহ্। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَالْكُوبَةِ والغبيراء. الغبيراء: شَرَابٌ يَعْمَلُهُ الْحَبَشَةُ مِنَ الذُّرَةِ يُقَالُ لَهُ: السكركة. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (أَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهٰى عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ) হাদীসটিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাবাশীদের ভুট্টার তৈরি মদ খেতে এবং জুয়া ও তবলা বা নারদ খেলতে নিষেধ করেছেন। নিহায়াহ্ গ্রন্থে রয়েছে, সুকুরকাহ্ এক প্রকার মদ যা ভুট্টা থেকে তৈরি করা হয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ছবি সম্পর্কে বর্ণনা
৪৫০৫-[১৭] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নারদ খেলল, সে আল্লাহ ও তাঁর রসূল-এর নাফরমানী করল। (আহমাদ ও আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدِ فَقَدْ عَصَى اللَّهَ وَرَسُولَهُ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدِ فَقَدْ عَصَى اللهَ وَرَسُولَهٗ) যারা নারদ বা গুটি খেলবে তারা আল্লাহ ও তার রসূলের নাফরমানী করবে। যেহেতু এটা এক প্রকার জুয়া খেলা। এটা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম যেমনটি ইতিপূর্বে বলা হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ছবি সম্পর্কে বর্ণনা
৪৫০৬-[১৮] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে কবুতরের পিছনে দৌড়াচ্ছে (খেলা করছে)। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এক শয়তান আরেক শয়তানের পিছনে ছুটছে। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ ও বায়হাক্বী- শু’আবুল ঈমান)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى رَجُلًا يَتْبَعُ حَمَامَةً فَقَالَ: «شَيْطَانٌ يَتْبَعُ شَيْطَانَةً» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ وَالْبِيهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ
ব্যাখ্যাঃ (أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى رَجُلًا يَتْبَعُ حَمَامَةً...) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে দেখলেন সে একটি কবুতরকে অনুসরণ করে তার পিছে পিছে দৌড়িয়ে খেলছে তখন তিনি বললেন, এক শয়তান আরেক শয়তানের অনুসরণ করছে। তাকে শয়তান বলার কারণ হলো, সে সত্য পথ থেকে দূরে রয়েছে এবং কাজে ব্যস্ত রয়েছে যাতে কোন কল্যাণ নেই। আর তা আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল করছে এবং এমন কাজে ব্যস্ত রয়েছে যা তাকে দীন ও দুনিয়া অন্বেষণ থেকে অন্যদিকে ফিরিয়ে দিচ্ছে।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কবুতরকে ডিম এবং বাচ্চা ফুটানোর কাজে অথবা শখের জন্য অথবা চিঠিপত্র বহন করার জন্য পালন করা জায়িয। কিন্তু তা দ্বারা খেলাধূলা করা মাকরূহ। তবে যদি কবুতর উড়িয়ে লটারী দেয়া হয় তবে তার সামর্থ্য গ্রহণ করা হবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)