৪৪৯০

পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - ছবি সম্পর্কে বর্ণনা

৪৪৯০-[২] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) মায়মূনাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চিন্তিত অবস্থায় ভোর করলেন এবং বললেনঃ জিবরীল (আ.) এ রাত্রে আমার সাথে সাক্ষাৎ করবেন বলে ওয়া’দা করেছিলেন, কিন্তু সাক্ষাৎ করেননি। আল্লাহর কসম! তিনি তো কখনো আমার সাথে কথা দিয়ে খেলাফ করেননি। অতঃপর তাঁর মনে পড়ল ঐ কুকুর ছানাটির কথা, যা তাঁর তাঁবুর নিচে ছিল। তখনই তিনি তাকে ঐখান থেকে বের করে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। এরপর তাকে বের করে দেয়া হলো। অতঃপর কুকুরটি যে জায়গায় বসা ছিল, তিনি সে জায়গায় কিছু পানি নিজ হাতে নিয়ে ছিটিয়ে দিলেন। পরে যখন বিকাল হলো জিবরীল (আ.) তার সাথে সাক্ষাৎ করলেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ গত রাত্রে আপনি আমার সাথে সাক্ষাৎ করার ওয়া’দা করেছিলেন। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, কিন্তু আমরা এমন ঘরে প্রবেশ করি না যে ঘরে কুকুর বা ছবি থাকে। পরের দিন সকালে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমস্ত কুকুর মেরে ফেলার জন্য নির্দেশ দিলেন। এমনকি ছোট ছোট বাগানের কুকুরগুলোকেও মারার হুকুম দিলেন তবে বড় বড় বাগানের কুকুরগুলোকে ছেড়ে দেন। (মুসলিম)[1]

بَابُ التَّصَاوِيرِ

وَعَن ابنِ عبَّاسٍ عَنْ مَيْمُونَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أصبحَ يَوْمًا واجماً وَقَالَ: «إِنَّ جِبْرِيلَ كَانَ وَعَدَنِي أَنْ يَلْقَانِيَ اللَّيْلَةَ فَلَمْ يَلْقَنِي أَمَ وَاللَّهِ مَا أَخْلَفَنِي» . ثُمَّ وَقَعَ فِي نَفْسِهِ جِرْوُ كَلْبٍ تَحْتَ فُسْطَاطٍ لَهُ فَأَمَرَ بِهِ فَأُخْرِجَ ثُمَّ أَخَذَ بيدِه مَاء فنضحَ مَكَانَهُ فَلَمَّا أَمْسَى لقِيه جِبْرِيلَ فَقَالَ: «لَقَدْ كُنْتَ وَعَدْتَنِي أَنْ تَلْقَانِي الْبَارِحَةَ» . قَالَ: أَجَلْ وَلَكِنَّا لَا نَدْخُلُ بَيْتًا فِيهِ كَلْبٌ وَلَا صُورَةٌ فَأَصْبَحَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَئِذٍ فَأَمَرَ بِقَتْلِ الْكلاب حَتَّى إِنه يَأْمر بقتل الْكَلْب الْحَائِطِ الصَّغِيرِ وَيَتْرُكُ كَلْبَ الْحَائِطِ الْكَبِيرِ. رَوَاهُ مُسلم

وعن ابن عباس عن ميمونة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم اصبح يوما واجما وقال ان جبريل كان وعدني ان يلقاني الليلة فلم يلقني ام والله ما اخلفني ثم وقع في نفسه جرو كلب تحت فسطاط له فامر به فاخرج ثم اخذ بيده ماء فنضح مكانه فلما امسى لقيه جبريل فقال لقد كنت وعدتني ان تلقاني البارحة قال اجل ولكنا لا ندخل بيتا فيه كلب ولا صورة فاصبح رسول الله صلى الله عليه وسلم يومىذ فامر بقتل الكلاب حتى انه يامر بقتل الكلب الحاىط الصغير ويترك كلب الحاىط الكبير رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ (أصبحَ يَوْمًا واجمًا) একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যুষে চিন্তিত, ব্যথিত ও চুপচাপ উপনীত হলেন। সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, তা দেখে মায়মূনাহ্ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আজকের মতো চিন্তিত অবস্থায় আপনাকে আর কোন দিন দেখিনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেনঃ জিবরীল (আ.) আজ রাতে আমার সাথে দেখা করার ওয়া‘দা করেছিলেন কিন্ত দেখা করেননি। আল্লাহর কসম, তিনি কখনো আমার সঙ্গে ওয়া‘দা ভঙ্গ করেননি।

এ প্রসঙ্গে ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কোন ব্যক্তি তার সঙ্গী অথবা অন্য কাউকে চিন্তিত ও ব্যথিত হতে দেখলে তার কারণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া মুস্তাহাব এবং যথাসম্ভব তাকে সহযোগিতা করা উচিত অথবা তার সাথে ব্যথিত হওয়া উচিত অথবা তার সেই অবস্থা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার উপায় দেখিয়ে দেয়া এবং আল্লাহ ও রসূলের প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে সতর্ক থাকা। এটা কোন শর্তসাপেক্ষে স্থগিত হয়ে যেতে পারে। অথবা মনে হতে পারে এটা কোন সময়সাপেক্ষ অথচ তা সময়ের সাথে সম্পৃক্ত নয় ইত্যাদি। আর এ হাদীসে আরো শিক্ষণীয় হচ্ছে : যদি মানুষের কোন কাজ বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে তার কারণ সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করা, যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত হাদীসের চিন্তা ভাবনা করে খাটেব নীচ থেকে কুকুরের বাচ্চা বের করেছিলেন। যেমনভাবে আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সূরাহ্ আল আ‘রাফ-এ বলেন,

إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُمْ مُبْصِرُونَ

‘‘যারা তাকওয়া অবলম্বন করে শয়তানের স্পর্শে তাদের মনে কুমন্ত্রণা জাগলে তারা আল্লাহ্কে স্মরণ করে, তখন তাদের ঈমান-চক্ষু খুলে যায়।’’ (সূরাহ্ আল আ‘রাফ ৭ : ২০১)

(ثُمَّ وَقَعَ فِي نَفْسِه جِرْوُ كَلْبٍ) অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মনে হলো জিবরীল (আ.)-এর না আসার কারণ হলো এই কুকুরের ছানাটি যা খাটের নীচে মরে ছিল। তখন তিনি উক্ত কুকুর ছানাকে বের করার আদেশ দিলেন এবং তা বের করে আনা হলো। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে পানি নিয়ে উক্ত স্থানে পানি ছিটিয়ে হালকাভাবে ধুয়ে দিলেন। এরপর রাত হলে জিবরীল (আ.) আগমন করলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আপনি গত রাতে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ওয়া‘দা করেছিলেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ, কিন্তু আমরা সেই ঘরে প্রবেশ করি না যেখানে কুকুর এবং প্রাণীর ছবি থাকে।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি দিয়ে নিজ হাতে কুকুরের জায়গাটি পরিষ্কার করেছিলেন। এখান থেকেই একদল ‘আলিম বলেন, কুকুর নাপাক। কারণ হলো স্থানটিতে পানি ছিটানো এবং ধৌত করা। মালিকীগণ বলে থাকেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত স্থানে কুকুরের পেশাব পায়খানার সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বিধায় ধৌত করে ছিলেন।

(فَأَصْبَحَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَئِذٍ فَأَمَرَ بِقَتْلِ الْكلاب) সকাল হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল স্থানের সকল কুকুরকে মেরে ফেলতে আদেশ দিলেন, এমনকি তিনি ছোট ছোট বাগানের কুকুরগুলোকেও মেরে ফেলতে বললেন যেহেতু ছোট বাগানে পাহারা দেয়ার প্রয়োজন নেই। তবে বড় বড় বাগানের কুকুর ছেড়ে দিতে বলেছেন যেহেতু কুকুর ছাড়া বড় বাগান পাহারা দেয়া কষ্টকর। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২১০৫/৮২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২২: পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس )