পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাভিযানে হত্যার বর্ণনা
৩৯৩৭-[১] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উহুদের দিন জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন। আচ্ছা বলুন! আমি যদি এ যুদ্ধে মারা যাই, তবে আমার অবস্থান কোথায় হবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, জান্নাতে। এমতাবস্থায় তিনি নিজের হাতের খেজুরগুলো (যা খাচ্ছিলেন) ছুঁড়ে ফেলে দিলেন, অতঃপর জিহাদের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে শাহাদাত বরণ করলেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْقِتَالِ فِى الْجِهَادِ
عَن جَابر قَالَ: قَالَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ أُحُدٍ: أَرَأَيْتَ إِنْ قُتِلْتُ فَأَيْنَ أَنَا؟ قَالَ: «فِي الْجنَّة» فَألْقى ثَمَرَات فِي يَده ثمَّ قَاتل حَتَّى قتل
ব্যাখ্যা: হাদীসের শিক্ষণীয় বিষয়, শহীদ ব্যক্তির জন্য জান্নাত প্রমাণিত। কল্যাণের ব্যাপারে দ্রুত অগ্রগামী হওয়া, অন্তরের আনুকূল্যতা ঠিক রাখতে গিয়ে কল্যাণ থেকে বিমুখ হওয়া যাবে না। (শারহে মুসলিম ১৩শ খন্ড, হাঃ ১৮৯৯)
(فَأَيْنَ أَنَا) অর্থাৎ- অতঃপর আমি কি জান্নাতে থাকব নাকি জাহান্নামে? (قَالَ : «فِى الْجنَّة» فَألْقٰى ثَمَرَات فِىْ يَدِه) তিনি বলেন, জান্নাতে। অতঃপর সে নিজ হাতের খেজুরসমূহ ফেলে দিল। অর্থাৎ শাহাদাত বরণ করে জান্নাতে প্রবেশের সৌভাগ্যের দিকে দ্রুত অগ্রসর হওয়ার জন্য হাতের খেজুর ফেলে দিয়ে যুদ্ধে বের হলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাভিযানে হত্যার বর্ণনা
৩৯৩৮-[২] কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যথারীতি অভ্যাস ছিল, তিনি কোনো নির্দিষ্ট যুদ্ধাভিযানে যাওয়ার সংকল্প করলে তা মনের মধ্যে লুকিয়ে রেখে অন্যদিকে ইঙ্গিত করতেন। কিন্তু তাবূক যুদ্ধে যাওয়ার সময় প্রচণ্ড গরমের মৌসুমে সফর, দুর্গম মরুপথ এবং শত্রু সংখ্যার বিশালতার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের সম্মুখে ব্যাপারটি স্পষ্ট করে ব্যক্ত করলেন, যাতে তারা এ দুর্গম অভিযানের জন্য পরিপূর্ণরূপে প্রস্তুতি নিতে পারে (মনোবল না হারায়)। তাই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বীয় লক্ষ্যস্থল সাহাবীদেরকে জানিয়ে দিলেন। (বুখারী)[1]
بَابُ الْقِتَالِ فِى الْجِهَادِ
وَعَن كَعْب بن مالكٍ قَالَ: لَمْ يَكُنْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُرِيدُ غَزْوَةً إِلَّا وَرَّى بِغَيْرِهَا حَتَّى كَانَتْ تِلْكَ الْغَزْوَةُ يَعْنِي غَزْوَةَ تَبُوكَ غَزَاهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَرٍّ شَدِيدٍ وَاسْتَقْبَلَ سَفَرًا بَعِيدًا وَمَفَازًا وَعَدُوًّا كَثِيرًا فَجَلَّى لِلْمُسْلِمِينَ أَمْرَهُمْ لِيَتَأَهَّبُوا أُهْبَةَ غَزْوِهِمْ فَأَخْبَرَهُمْ بِوَجْهِهِ الَّذِي يُرِيدُ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
ব্যাখ্যা: (أُهْبَةَ غَزْوِهِمْ) কুশমীহানী (রহঃ)-এর বর্ণনাতে «أُهْبَةَ عَدُوِّهُم» এসেছে। أُهْبَةَ বলতে ঐ বস্তুকে বোঝায়, সফর এবং যুদ্ধের জন্য লোকেরা যার মুখাপেক্ষী হয়। (ফাতহুল বারী ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৪১৮)
(إِلَّا وَرّٰى بِغَيْرِهَا) নিহায়াহ্ গ্রন্থে আছে- অন্য কিছুর মাধ্যমে মূল বিষয়টিকে আড়াল করে নিতেন, ঐ ব্যাপারে ইঙ্গিত দিতেন বিষয়টিকে সংশয়মুক্ত করে দিতেন যে, তিনি অন্য কিছুর ইচ্ছা করছেন। ইবনুল মালিক বলেন, অর্থাৎ তিনি অন্য কিছুর মাধ্যমে মূল বিষয় আড়াল করে নিতেন, তিনি প্রকাশ করতেন যে, তিনি অন্য কিছুর উদ্দেশ্য করছেন, এতে স্বীয় সঙ্কল্পে দৃঢ়তা শত্রু পক্ষের উদাসীনতা এবং ঐ বিষয় সম্পর্কে গুপ্তচরের অবহিত হওয়া এবং সে ব্যাপারে শত্রুদেরকে সংবাদ দেয়া থেকে নিরাপদ থাকা যেত। উদাহরণ স্বরূপ তিনি মক্কায় যুদ্ধের ইচ্ছা করলেন, কিন্তু তিনি মানুষকে খায়বারের অবস্থা, তার পথসমূহের ধরণ সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। আমি অমুক স্থানের অধিবাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ইচ্ছা করছি এ কথা স্পষ্ট বলতেন না, কেননা এক স্থানের অধিবাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মনস্থ করে ভিন্ন কথা বলা স্পষ্ট মিথ্যা, এটা বৈধ নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাভিযানে হত্যার বর্ণনা
৩৯৩৯-[৩] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যুদ্ধ হলো ছল-কৌশল। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْقِتَالِ فِى الْجِهَادِ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «الْحَرْب خدعة»
ব্যাখ্যা: (خَدْعَةٌ) ‘‘খা’’ বর্ণে, যবর অথবা পেশ দিয়ে আর উভয় ক্ষেত্রে ‘‘দাল’’ বর্ণে সাকিন দিয়ে অথবা ‘‘খা’’ অক্ষরকে পেশ আর ‘‘দাল’’ অক্ষরকে যবর দিয়ে পড়া যায়।
নববী (রহঃ) বলেনঃ ‘আরবী ভাষাবিদগণ এ কথার উপর একমত হয়েছে যে, প্রথম উচ্চারণটি সর্বাধিক স্পষ্ট, এমনকি সা‘লাব বলেন, আমাদের কাছে সংবাদ পৌঁছেছে যে, এটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভাষা। এ ব্যাপারে আবূ যার হারবী এবং কায়যায দৃঢ়তা প্রকাশ করেছেন, আর দ্বিতীয় উচ্চারণটিকে সংরক্ষণ করা হয়েছে (অধিক প্রসিদ্ধ) এভাবে আসীলী এর বর্ণনাতে আছে। এক কথায় শব্দটির বিভিন্ন উচ্চারণ আছে। মুনযিরী অন্য একটি উচ্চারণ বর্ণনা করেছেন তা হলো خَدْعَةٌ শব্দটি خادع এর বহুবচন তখন এর অর্থ হবে যোদ্ধারা ধোঁকার গুণে গুণান্বিত। যেন তিনি বলেছেন, যোদ্ধারা ধোঁকায় পতিত।
নববী (রহঃ) বলেনঃ যুদ্ধে কাফিরদেরকে ধোঁকা দেয়া বৈধ হওয়ার ব্যাপারে সকলে একমত যেভাবেই তা সম্ভব হোক। তবে এতে অঙ্গীকার অথবা নিরাপত্তা ভঙ্গের কারণ থাকলে তা বৈধ হবে না।
ইবনুল ‘আরবী বলেনঃ যুদ্ধে ধোঁকা প্রদান ইঙ্গিত করা ও ওঁৎ পেতে থাকার মাধ্যমে এবং অনুরূপ কিছুর মাধ্যমে সংঘটিত হয়।
ইবনুল মুনীর বলেনঃ যুদ্ধের অর্থ হলো ধোঁকা দেয়া অর্থাৎ উত্তম যুদ্ধ হলো ধোঁকা দেয়া, কেননা এতে পরস্পর অভিমুখী হওয়ার বিপদ ছাড়াই অর্থাৎ লোক ক্ষয় না করে বিজয় অর্জিত হয়।
ওয়াকিদী উল্লেখ করেনঃ (اَلْحَرْبَ خَدْعَةٌ) ‘যুদ্ধ ধোঁকা দান’ এ কথাটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম খন্দাকের যুদ্ধে বলেছেন। (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩০৩০)
মিরকাতুল মাফাতীহে অত্র হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- ধোঁকা দান দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- যুদ্ধের বিষয় একটি ধোঁকা দানের মাধ্যমে শেষ হয়, যুদ্ধের দ্বারা ধোঁকায় পতিত ব্যক্তিকে ধোঁকা দেয়া হয়, অতঃপর তার পা পিচ্ছিল খায়, এমতাবস্থায় সে এর কোনো সংশোধনী পায় না এবং অব্যাহতির সুযোগ পায় না। হাদীস দ্বারা যেন ব্যক্তিকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হলো।
শারহে মুসলিমে আছে, হাদীসে তিনটি বিষয়ে মিথ্যা বলার বৈধতা বিশুদ্ধভাবে সাব্যস্ত হয়েছে, তিনটির একটি হলো- যুদ্ধে মিথ্যা বলা। ত্ববারী বলেনঃ যুদ্ধে মিথ্যা বলা বৈধ বলতে দু’ ধরনের অর্থের সম্ভাবনা রাখে, এমন কথা বলা যা প্রকৃত মিথ্যা নয়, কেননা প্রকৃত মিথ্যা অবৈধ। প্রকৃত মিথ্যা বলা বৈধ, তবে ইঙ্গিতের উপর সীমাবদ্ধ থাকা উত্তম। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞাত। (শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৭৩৯)
দ্রঃ ‘আওনুল মা‘বূদ [৫ম খন্ড, হাঃ ২৬৩৪] এবং তুহফাতুল আহওয়াযী [৫ম খন্ড, হাঃ ১৬৭৫]।
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাভিযানে হত্যার বর্ণনা
৩৯৪০-[৪] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোনো যুদ্ধাভিযানে বের হতেন তখন উম্মু সুলায়ম (রাঃ) (আনাস (রাঃ)-এর মা) এবং অন্যান্য আনসারী মহিলাগণ জিহাদে শামিল থাকতেন। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এ সমস্ত মহিলাগণ সৈন্যদেরকে পানি পান করাতেন এবং আহতদের সেবা-শুশ্রূষা করতেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْقِتَالِ فِى الْجِهَادِ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَغْزُو بِأُمِّ سُلَيْمٍ وَنِسْوَةٍ مِنَ الْأَنْصَارِ مَعَهُ إِذَا غَزَا يَسْقِينَ الْمَاءَ وَيُدَاوِينَ الْجَرْحَى. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: নববী (রহঃ) বলেনঃ উপরোক্ত হাদীসে সেবা-শুশ্রুষা তাদের মাহরাম ও তাদের স্বামীদের জন্য ছিল। আর যে চিকিৎসা তারা ছাড়া অন্যদের জন্য ছিল তাতে ক্ষতস্থান ছাড়া অন্যস্থানে হাতের স্পর্শ হতো না। ইবনুল হুমাম বলেন, চিকিৎসা এবং পানি পান করানোর জন্য যুদ্ধে বৃদ্ধ মহিলাদের নিয়ে যাওয়া উত্তম। আর যদি সহবাসের প্রয়োজন থাকে, তাহলে স্বাধীনা নারীকে না নিয়ে দাসীদের নিয়ে যাওয়া উত্তম। তারা সরাসরি যুদ্ধে জড়াবে না, কেননা এতে মুসলিমদের দুর্বলতা প্রকাশ পায়। তবে একান্ত প্রয়োজন হলে ভিন্ন কথা। যেমন উম্মু সুলায়ম (রাঃ) হুনায়নের যুদ্ধের দিন যুদ্ধ করেছিলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এ যুদ্ধকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। যেমন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, «لَمُقَامُهَا خَيْرٌ مِنْ مُقَامِ فُلَانٍ» অর্থাৎ- ‘‘তার অবস্থান অমুকের অবস্থান অপেক্ষা উত্তম।’’ কতক পরাজিতদেরকে উদ্দেশ্য করছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
‘আওনুল মা‘বূদে অত্র হাদীসের ব্যাখ্যায় খত্ত্বাবী বলেন, এ হাদীসে দয়া ও খিদমাত গ্রহণ স্বরূপ মহিলাদের নিয়ে যুদ্ধে বেরিয়ে যাওয়া বৈধ হওয়ার ব্যাপারে প্রমাণ রয়েছে। (‘আওনুল মা‘বূদে ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫২৮)
অত্র হাদীসের ব্যাখ্যায় তুফহাতুল আহওয়াযীতে আছে, আমরা সম্প্রদায়কে পানি পান করাতাম, তাদের সেবা করতাম, নিহত ও আহতদেরকে মদীনাতে ফিরিয়ে আনতাম। আহমাদ, মুসলিম এবং ইবনু মাজাতে উম্মু ‘আতিয়্যার হাদীসে এসেছে, উম্মু ‘আতিয়্যাহ্ বলেন, আমি আল্লাহর রসূলের সাথে সাতটি যুদ্ধে উপস্থিত ছিলাম, আমি যোদ্ধাদের পেছনে তাদের মাল-পত্রের কাছে থাকতাম, তাদের জন্য খাদ্য তৈরি করতাম, আহতদের চিকিৎসা করতাম, পক্ষাঘাত ব্যক্তিদের পরিচালনা করতাম। এ সকল হাদীসে ঐ ব্যাপারে প্রমাণ রয়েছে যে, এ সকল কল্যাণকর কাজের জন্য মহিলাদের যুদ্ধে নিয়ে যাওয়া বৈধ, জিহাদ মহিলাদের ওপর আবশ্যক নয়। আহমাদ ও বুখারীতে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস এ ব্যাপারে প্রমাণ বহন করছে। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা দেখতে পাচ্ছি জিহাদ সর্বোত্তম ‘আমল। এখন আমরা কি জিহাদ করবো না? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের জন্য সর্বোত্তম জিহাদ হলো কবুল হজ্জ/হজ।
ইবনু বাত্ত্বল বলেন, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, নারীদের ওপর জিহাদ ফরয নয়, তবে «أَفْضَلُ الْجِهَادِ حَجٌّ مَبْرُورٌ» ‘‘সর্বোত্তম জিহাদ কবুল হজ্জ/হজ’’ তাঁর এ উক্তিতে তা নেই। বুখারীর এক বর্ণনাতে এসেছে (جِهَادُكُنَّ الْحَجُّ) ‘তোমাদের জিহাদ হজ্জ/হজ’, তবে তা প্রমাণ করছে না যে, জিহাদে তাদের স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার অধিকার নেই। জিহাদ তাদের জন্য এ কারণে আবশ্যক নয় যে, এতে তাদের পর্দা বিনষ্ট হয়, পর পুরুষদের সংস্পর্শতা লাভ হয়। এ কারণে জিহাদ অপেক্ষা হজ্জ/হজ তাদের জন্য উত্তম। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৫৭৫)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাভিযানে হত্যার বর্ণনা
৩৯৪১-[৫] উম্মু ’আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সাতটি জিহাদে অংশগ্রহণ করেছি। মুজাহিদগণ যখন ময়দানে যুদ্ধরত থাকতেন, তখন আমি তাঁবুতে তাদের যুদ্ধাস্ত্র রক্ষণাবেক্ষণ করতাম, খাবার তৈরি করতাম এবং আহত সৈন্যদের পরিচর্যা ও রোগীর সেবা-শুশ্রূষা করতাম। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْقِتَالِ فِى الْجِهَادِ
وَعَن أُمِّ عطيَّةَ قَالَتْ: غَزَوْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَبْعَ غَزَوَاتٍ أَخْلُفُهُمْ فِي رِحَالِهِمْ فَأَصْنَعُ لَهُمُ الطَّعَامَ وَأُدَاوِي الْجَرْحَى وَأَقُومُ عَلَى المرضى. رَوَاهُ مُسلم
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাভিযানে হত্যার বর্ণনা
৩৯৪২-[৬] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিহাদে মহিলা ও শিশুদেরকে হত্যা করা হতে বিরত থাকতে বলেছেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْقِتَالِ فِى الْجِهَادِ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ قَتْلِ النِّسَاءِ وَالصِّبْيَانِ
ব্যাখ্যা: ইবনুল হুমাম বলেনঃ বুখারী, মুসলিম, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ ‘আবদুল্লাহ বিন ‘উমার থেকে বর্ণনা করেন, (যুদ্ধের ময়দানে) জনৈক মহিলাকে নিহতবস্থায় পাওয়া গেলে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলা ও শিশুদেরকে হত্যা করতে নিষেধ করলেন। তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি মহিলা ও শিশুদেরকে হত্যা করা হারাম হওয়া সর্বজনস্বীকৃত। আবূ বাকর হতে বর্ণিত, তিনি যখন আবূ সুফ্ইয়ান-এর পুত্র ইয়াযীদকে শামে পাঠালেন তখন তাকে উপদেশ দিয়ে বললেনঃ ‘‘তোমরা শিশু, মহিলা ও বৃদ্ধদেরকে হত্যা করবে না’’। তিনি বলেন, তবে আমরা যাদের কথা বলেছি তাদের মধ্য হতে যারা যুদ্ধ করবে তাদের হত্যা করা হবে। নিঃসন্দেহে যেমন পাগল, শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ ও পাদরীদেরকে হত্যা করা যাবে না, তবে বাচ্চা এবং পাগলকে যুদ্ধের অবস্থাতে পাওয়া গেলে তাদের হত্যা করা হবে। আর মহিলা, পাদরী এবং তাদের অনুরূপরা যখন যুদ্ধ করবে তখন তাদেরকে বন্দির পর হত্যা করা হবে, আর রাণী মহিলাকে হত্যা করা হবে যদিও সে যুদ্ধ না করে থাকে। এভাবে বাচ্চা রাজা ও নির্বোধ রাজাকে হত্যা করা হবে, কেননা বাদশার হত্যাতে তাদের আগ্রহের ভাঙ্গন রয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
ইমাম নববী বলেনঃ মহিলা ও শিশুরা যখন যুদ্ধে না জড়াবে তখন তাদেরকে হত্যা করা হারাম হওয়ার ব্যাপারে বিদ্বানগণ একমত। তবে তারা যদি যুদ্ধ করে তাহলে জুমহূর বিদ্বানদের মত হলো- তাদেরকে হত্যা করা হবে, আর কাফির বৃদ্ধরা যদি যুদ্ধের ব্যাপারে কৌশল এঁটে থাকে তাহলে তাদেরকেও হত্যা করা হবে অন্যথায় তাদের এবং পাদরীদের ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। মালিক এবং আবূ হানীফাহ্ বলেন, তাদেরকে হত্যা করা যাবে না। আর শাফি‘ঈ এর মাযহাবে সর্বাধিক বিশুদ্ধ মত হলো- তাদেরকে হত্যা করা হবে। (শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৭৪৪)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাভিযানে হত্যার বর্ণনা
৩৯৪৩-[৭] সা’ব ইবনু জাসসামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো, যদি কোনো মুশরিক পরিবারের ওপর রাতে অতর্কিত আক্রমণকালে মহিলা ও শিশুগণ সেই আক্রমণের শিকার হয়ে আহত বা নিহত হয়- তাদের ব্যাপারে আপনি কি বলেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তারাও তাদের অন্তর্ভুক্ত। অপর এক বর্ণনায় আছে, তারাও তাদের পিতা-মাতাদের অন্তর্ভুক্ত। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْقِتَالِ فِى الْجِهَادِ
وَعَن الصَّعبِ بنِ جِثَّامةَ قَالَ: سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عنْ أهلِ الدَّارِ يَبِيتُونَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ فَيُصَابَ مِنْ نِسَائِهِمْ وَذَرَارِيِّهِمْ قَالَ: «هُمْ مِنْهُمْ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «هُمْ مِنْ آبائِهم»
ব্যাখ্যা: মুসলিমের শারহ-তে আছে, হাদীসে ذَرَارِيِ বলতে মহিলা এবং শিশু বুঝায়। এখানে উদ্দেশ্য শিশু এবং বাচ্চা ছেলে হোক বা মেয়ে হোক। (قَالَ : «هُمْ مِنْهُمْ») মহিলা এবং বাচ্চারা পুরুষদেরই অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ- মহিলা এবং বাচ্চাদেরকে যখন আলাদা করা সম্ভব হবে না তখন তারা পুরুষদের হুকুমের আওতাভুক্ত। সুতরাং হত্যা না করার বিষয়টি শনাক্ত করার উপর নির্ভরশীল। একমতে বলা হয়েছে, মহিলা ও শিশুদেরকে দাস বানানো উদ্দেশ্য। কাযী বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দ্বারা তাদেরকে বন্দি করা ও দাস বানানো বৈধতা উদ্দেশ্য করেছেন। যেমন বলা যায় যদি তারা দিনে যোদ্ধাদের কাছে এসে প্রকাশ্যে তাদের সাথে যুদ্ধ করে অথবা হত্যার ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য ছাড়াই রাত্রের অন্ধকারে তাদেরকে হত্যা করা হয়ে থাকে তাহলে ক্ষতিপূরণ নেই এবং হত্যা করাতে কোনো দোষ নেই। কেননা তারাও কাফির, তাদেরকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকা কেবল ঐ সময় আবশ্যক যখন তা সহজসাধ্য হয়, আর এ কারণেই তারা যদি তাদের মহিলা ও সন্তানদের মাধ্যমে আত্মরক্ষার পথ অবলম্বন করে তাহলে তাদের ব্যাপারে কোনো পরোওয়া করা হবে না।
ইবনুল হুমাম বলেনঃ তাদেরকে তীর নিক্ষেপ করাতে কোনো দোষ নেই, যদিও তাদের মাঝে কোনো মুসলিম বন্দি অথবা ব্যবসায়ী থাকে, বরং যদি তারা মুসলিম বন্দী ও মুসলিম শিশুদের মাধ্যমে আত্মরক্ষা করে, আর তাদেরকে তীর নিক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকলে মুসলিমরা পরাজিত হবে এ কথা বুঝতে পারে অথবা এ কথা বুঝতে না পারে উভয় সমান। তবে মুসলিম বন্দী ও শিশুদেরকে লক্ষ্যবস্তু করা যাবে না। কিন্তু এ অবস্থায় তাদেরকে তীর নিক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকলে মুসলিমদের পরাজয় হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তাদেরকে লক্ষ্যবস্তু বানানো যাবে। এটা হামান বিন যিয়্যাদণ্ডএর উক্তি। এরপরও যদি তারা তীর নিক্ষেপ করে আর এতে কোনো মুসলিম তীরবিদ্ধ হয় তাহলে এক্ষেত্রে হামান বিন যিয়্যাদণ্ডএর মতে দিয়াত এবং কাফফারাহ্ লাগবে। আর শাফি‘ঈ-এর মতে কাফফারা লাগবে এক্ষেত্রে একমত। আর দিয়াতের ক্ষেত্রে দু’ মত। মুহাম্মাদ বলেনঃ ইমাম যখন কোনো দেশ জয় করবে এবং তার জানা থাকবে যে, তাতে মুসলিম অথবা যিম্মি আছে, তাহলে তাদের কাউকে এ সম্ভাবনার কারণে হত্যা করা বৈধ হবে না যে, ঐ লোকটি মুসলিম অথবা যিম্মি।
আর কাফির বৃদ্ধদের মাঝে যদি রণকৌশল সম্পর্কে অভিমত পেশকারী কোনো ব্যক্তি থাকে তাহলে তাদেরকে হত্যা করা হবে, অন্যথায় তাদের ব্যাপারে এবং পাদরীদের ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। মালিক ও আবূ হানীফাহ্ বলেন, তাদেরকে হত্যা করা হবে না, শাফি‘ঈ-এর মাযহাবে সর্বাধিক বিশুদ্ধ হলো তাদেরকে হত্যা করা হবে। এ হাদীসে পাওয়া যায় যে, দুনিয়াতে কাফিরদের সন্তানদের হুকুম তাদের পিতৃপুরুষদের হুকুমের মতো। পক্ষান্তরে যখন তারা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পূর্বে মারা যাবে তখন পরকালীন বিষয়ে তাদের ব্যাপারে তিনটি মত। বিশুদ্ধ মত হলো- নিঃসন্দেহে তারা জান্নাতে থাকবে, দ্বিতীয়ঃ জাহান্নামে। তৃতীয়ঃ তাদের বিষয়ে কোনো ব্যাপারে দৃঢ়তা প্রকাশ করা যাবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
ইবনু বাত্ত্বল এবং অন্যান্য ‘আলিমগণ বলেনঃ এ ব্যাপারে সকল বিদ্বানগণ একমত যে, মহিলা ও শিশুদেরকে হত্যা করা যাবে না। মহিলাদেরকে হত্যা না করা মূলত তাদের দুর্বলতার কারণে, আর শিশুদেরকে হত্যা না করা মূলত কুফরী কর্মের পাপ লিপিবদ্ধের বয়সে উপনীত না হওয়ার কারণে। তাদেরকে অবশিষ্ট রেখে সার্বিক উপকার লাভের কারণে, হয় দাস বানানোর মাধ্যমে অথবা যার ব্যাপারে মুক্তিপণ দেয়া বৈধ তার ব্যাপারে মুক্তিপণ দেয়ার মাধ্যমে। হাযিমী সা‘ব ইবনু জাস্সামাহ্-এর হাদীসের বাহ্যিকতার উপর ভিত্তি করে মহিলা ও শিশুদেরকে হত্যা করা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে মত প্রকাশ করেছেন, তিনি দাবী করেছেন সা‘ব-এর হাদীস নিষেধাজ্ঞার হাদীসসমূহের রহিতকারী। তার এ বক্তব্য গরীব। যতক্ষণ পর্যন্ত খাস হাদীস বর্ণিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ‘আমে্র প্রতি ‘আমল করা বৈধ হওয়ার দলীল অত্র হাদীস। কেননা সাহাবীগণ মুশরিকদের হত্যা করার উপর প্রমাণ বহনকারী ‘আম্ তথা ব্যাপক দলীলসমূহ অবলম্বন করেছেন, অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মহিলা ও শিশুদেরকে হত্যা করা সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেন তখন তারা এ ব্যাপকতাকে খাস হাদীস দ্বারা নির্দিষ্ট করেছেন। (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩০১২)
শারহে মুসলিমে আছে, হাদীসটি রাত্রিতে আক্রমণ করা বৈধ হওয়া এবং যাদের কাছে দা‘ওয়াত পৌঁছেছে তাদেরকে না জানিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ করা বৈধ হওয়ার উপর প্রমাণ আছে। (শারহে মুসলিম ১২তম খন্ড, হাঃ ১৭৪৫)
আওনুল মা‘বূদে আছে, কুসতুলানী বলেনঃ তাদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা উদ্দেশ্য নয়, বরং যখন তাদেরকে হত্যা করা ছাড়া পুরুষদেরকে হত্যা করা সম্ভব হবে না তখন তাদেরকে হত্যা করতে হবে অন্যথায় মহিলা এবং শিশুদেরকে হত্যা করা সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞাজনিত স্পষ্ট হাদীসসমূহের মাঝে সমন্বয় সাধনে মহিলা ও শিশুদেরকে হত্যার পন্থা বর্জন করা সম্ভব হলে তাদেরকে হত্যা করা হতে বিরত থাকতে হবে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬৬৯)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাভিযানে হত্যার বর্ণনা
৩৯৪৪-[৮] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানী নাযীর সম্প্রদায়ের খেজুর বাগান কেটে ফেলতে ও জ্বালিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। এতদসম্পর্কে (প্রখ্যাত ইসলামী কবি) হাসসান ইবনুস্ সাবিত কবিতা আবৃত্তি করেন যার দুই চরণ-
’’বানী লুয়াই সম্প্রদায়ের সম্মানিত নেতৃবর্গের পক্ষে বুওয়াইরাহ্-এর সর্বত্র প্রজ্জ্বলিত আগুন বরই সুখপ্রদ হয়েছে।’’ আর উক্ত ঘটনার প্রেক্ষাপটে কুরআনের এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়, ’’যে সমস্ত খেজুর গাছসমূহ তোমরা কেটে ফেলেছ বা যেগুলো তাদের কা--র উপর স্থির রেখে দিয়েছ, তা তো আল্লাহর সম্মতিক্রমেই করেছ’’- (সূরা আল হাশ্র ৫৯ : ৫)। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْقِتَالِ فِى الْجِهَادِ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَطَعَ نَخْلَ بني النَّضيرِ وحرَّقَ وَلها يقولُ حسَّانٌ:
وَهَانَ عَلَى سَرَاةِ بَنِي لُؤَيٍّ حَرِيقٌ بِالْبُوَيْرَةِ مُستَطيرُ
وَفِي ذَلِكَ نَزَلَتْ (مَا قَطَعْتُمْ مِنْ لِينَةٍ أَوْ تَرَكْتُمُوهَا قَائِمَةً عَلَى أُصُولِهَا فَبِإِذْنِ اللَّهِ)
ব্যাখ্যা: مَا قَطَعْتُمْ مِنْ لِينَةٍ أَوْ تَرَكْتُمُوْهَا قَائِمَةً عَلٰى اُصُوْلِهَا فَبِإِذْنِ اللهِ এ ব্যাপারে বর্ণনা করা হয়েছে, নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাদের খেজুর বাগান কাটতে নির্দেশ করলেন তখন তারা বললঃ হে মুহাম্মাদ! তুমি জমিনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে নিষেধ করতে এখন খেজুর বৃক্ষ কাটা ও তা জালিয়ে দেয়ার কারণ কি? তখন অত্র আয়াত অবতীর্ণ হয়, কাফিরদের ক্রোধ বৃদ্ধি করার উদ্দেশে। তাদের ঘর-বাড়ী ধ্বংস করা, তাদের বৃক্ষসমূহ কর্তন করা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে দলীল গ্রহণ করা হয়েছে এ ঘটনা থেকেই। নববী বলেনঃ কুরআনে উল্লেখিত لِينَةٍ দ্বারা ‘আজ্ওয়া ছাড়া সকল প্রকার খেজুর বৃক্ষ উদ্দেশ্য।
অত্র হাদীসে কাফিরদের বৃক্ষ কাটা ও জ্বালিয়ে দেয়ার বৈধতা প্রমাণ করে। এটি জুমহূরের মত। একমতে বলা হয়েছে, বৈধ হবে না। ইবনুল হুমাম বলেনঃ এটা বৈধ হবে, কেননা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর শত্রুদের ধ্বংস করা এবং তাদের আগ্রহ ভেঙ্গে দেয়া, আর এ পন্থার মাধ্যমে তা অর্জন হয়। সুতরাং তারা তাদের সম্ভাব্যতা অনুযায়ী জ্বালিয়ে দিবে, বৃক্ষ কেটে দিবে, শস্য নষ্ট করবে। তবে এটা ঐ সময় করা হবে যখন এ পন্থা ছাড়া অন্য পন্থায় তাদের পাকড়াওয়ের ব্যাপারে প্রবল ধারণা না জাগবে। আর বাহ্যিক দিক যদি এমন হয় যে, তারা পরাজিত হবে এবং মুসলিমদের বিজয় সুনিশ্চিত তখন এ ধরনের কাজ করা মাকরূহ, কেননা তা অপ্রয়োজনীয় স্থানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির নামান্তর, আর প্রয়োজন ছাড়া তা বৈধ করা হয়নি। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
আওযা‘ঈ এবং আবূ সাওর একে মাকরূহ মনে করেছেন, আর তারা উভয়ে প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন যে, আবূ বাকর এমন কাজ না করতে তার সৈন্যবাহিনীকে উপদেশ দিয়েছেন। এর উত্তরে বলা হয়েছে : আবূ বাকর তা অবশিষ্ট রাখাকে কল্যাণজনক মনে করেছিলেন বিধায় তা অবশিষ্ট রাখতে উপদেশ দিয়েছিলেন, কেননা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন নিশ্চয় তা মুসলিমদের হবে ফলে তিনি তা তাদের জন্য অবশিষ্ট রাখার ইচ্ছা করেছেন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬১২)
ইমাম আহমাদ বলেনঃ যুদ্ধ যদি এমন স্থানে হয় যা থেকে যোদ্ধারা মুক্তি পেতে পারে না অর্থাৎ- সৈন্যবাহিনী কখনো আগুন জ্বালানো এবং বিনাশ সাধনের মুখাপেক্ষক্ষ হয়, এমতাবস্থায় তারা তা থেকে বাঁচতে পারে না তখন এটা বৈধ।। পক্ষান্তরে প্রয়োজনহীনভাবে আগুন জ্বালানো যাবে না, এভাবে যখন তা তাদের জন্য খুবই ক্ষতিকর হবে তখন তা ধ্বংস করা যাবে না। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৫৫২)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাভিযানে হত্যার বর্ণনা
৩৯৪৫-[৯] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আওন হতে বর্ণিত। নাফি’ [ইবনু ’উমার (রাঃ)-এর মুক্ত দাস] তাঁকে লিখে জানান, ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার(রাঃ) তাঁকে বলেছেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানী মুসত্বালিক-এর ওপর অতর্কিতভাবে আক্রমণ করেন, যখন তারা মুরয়সী’ নামক স্থানে নিজেদের গবাদিপশু নিয়ে বিভোর ছিল। ফলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের মধ্যে যুদ্ধ করার সক্ষম লোকেদেরকে হত্যা করেন এবং নারী ও শিশু-কিশোরদেরকে বন্দী করলেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْقِتَالِ فِى الْجِهَادِ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَوْنٍ: أَنَّ نَافِعًا كَتَبَ إِلَيْهِ يُخْبِرُهُ أَنَّ ابْنَ عمر أخبرهُ أَن ابْن عمر أَخْبَرَهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَغَارَ عَلَى بَنِي الْمُصْطَلِقِ غَارِّينِ فِي نَعَمِهِمْ بِالْمُرَيْسِيعِ فَقتل الْمُقَاتلَة وسبى الذُّرِّيَّة
ব্যাখ্যা: (الْمُقَاتِلَةَ) এর দ্বারা এখানে ঐ ব্যক্তি উদ্দেশ্য যে ব্যক্তি যুদ্ধ করার উপযুক্ত। আর সে হলো জ্ঞানবান প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি। (الذُّرِّيَّةَ) এ শব্দ দ্বারা মহিলা ও শিশু উদ্দেশ্য। ইবনুল মালিক বলেনঃ অত্র হাদীসে কাফিরদের উদাসীন থাকাবস্থায় তাদেরকে হত্যা করা, তাদের সম্পদ গ্রাস করা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে দলীল আছে।
ইবনুল হুমাম বলেনঃ বুখারী, মুসলিমে ইবনু ‘আওন থেকে বর্ণিত আছে : আমি নাফি‘র কাছে পত্র লিখলাম, এমতাবস্থায় আমি তাকে যুদ্ধের পূর্বে মানুষকে ইসলামের দিকে দা‘ওয়াত দেয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করি তখন তিনি আমার কাছে লিখলেন, এটা কেবল ইসলামের সূচনালগ্নে ছিল। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানু মুস্ত্বালিকে আক্রমণ করেছিলেন এমতাবস্থায় যে, তারা উদাসীন ছিল, তাদের প্রাণীগুলো পানি পান করছিল, এ আক্রমণে তিনি যোদ্ধদেরকে হত্যা করলেন, মহিলা ও শিশুদেরকে বন্দী করলেন, সেদিন তিনি জুওয়াইবিয়্যাহ্ বিনতু হারিস-কে লাভ করেন। ইবনু ‘উমার এ ব্যাপারে আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন, আর তিনি ঐ বাহিনীতে ছিলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
শারহে মুসলিমে আছে- যে সকল কাফিরদের কাছে ইসলামের দা‘ওয়াত পৌঁছেছে আক্রমণের ব্যাপারে তাদেরকে সতর্ক না করেই তাদের ওপর আক্রমণ চালানো বৈধ হওয়ার ব্যাপারে তিনটি মত। এ কথা মা‘যূরী এবং কাযী বর্ণনা করেন।
একটি হলো- সতর্ক করা আবশ্যক। এ মতটি মালিক এবং অন্যান্যদের মত, এবং এটা দুর্বল মত।। দ্বিতীয়, সতর্ক করা আবশ্যক নয়, আর এটা তার অপেক্ষাও দুর্বল অথবা বাতিল। তৃতীয়, যদি তাদের কাছে দা‘ওয়াত পৌঁছে না থাকে তাহলে আবশ্যক আর পৌঁছে থাকলে আবশ্যক নয়, তবে মুস্তাহাব। আর এটাই বিশুদ্ধ মত, এ মত পোষণ করেছেন ইবনু ‘উমার-এর গোলাম নাফি‘, হাসান বাসরী, সাওরী, লায়স, শাফি‘ঈ, আবূ সাওর, ইবনুল মুনযির ও জুমহূর। ইবনুল মুনযির বলেনঃ এটা অধিকাংশ বিদ্বানদের উক্তি, বিশুদ্ধ হাদীসসমূহ এ অভিমতকেই সমর্থন করে।
অত্র হাদীস প্রমাণ করে, ‘আরবদেরকে দাস বানানো বৈধ, কেননা বানু মুসত্বালিক খুযা‘আহ্ গোত্রের অন্তর্গত ‘আরব বংশোদ্ভূত। এটা ইমাম শাফি‘ঈ-এর নতুন মত, আর এটাই সঠিক। আরও এ মত পোষণ করেছেন ইমাম মালিক, তাঁর সকল সাথীবর্গ, আবূ হানীফাহ্, আওযা‘ঈ এবং জুমহূর বিদ্বানগণ। বিদ্বানদের একটি দল বলেনঃ তাদের দাস বানানো যাবে না এটা ইমাম শাফি‘ঈ-এর প্রবীণ মত। (শারহে মুসলিম ১২তম খন্ড, হাঃ ১৭৩০; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬৩০)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাভিযানে হত্যার বর্ণনা
৩৯৪৬-[১০] আবূ উসায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বদরের যুদ্ধের দিন যখন আমরা সারিবদ্ধ হয়ে কুরায়শদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম এবং তারাও আমাদের মুকাবিলায় সারিবদ্ধ হয়েছিল, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ দিলেন, যখন তারা তোমাদের খুব সন্নিকটবর্তী হবে তখনই তাদের ওপর তীর নিক্ষেপ করবে।
অপর এক বর্ণনায় আছে, যখনই তারা তোমাদের খুব কাছাকাছি এসে যাবে, তখনই তীর ছুঁড়তে থাকবে এবং কিছু তীর সংরক্ষিত রাখবে। (বুখারী)[1]
মিশকাত গ্রন্থকার বলেন, মূল মাসাবীহ গ্রন্থে সা’দ -এর হাদীস যার প্রথম বাক্য ’’তোমরা কি সাহায্যপ্রাপ্ত?’’ তা আমি ’’ফাকীরদের ফযীলত’’ অধ্যায়ে এবং অপর একটি হাদীস বারা হতে বর্ণিত, ’’রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সময় একটি দল পাঠিয়েছিলেন’’ হাদীসটি আমি ইনশা-আল্লা-হ ’’মু’জিযা’’র অধ্যায়ে বর্ণনা করব।
بَابُ الْقِتَالِ فِى الْجِهَادِ
وَعَن أبي أَسِيدٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَنَا يَوْمَ بَدْرٍ حِينَ صَفَفَنَا لِقُرَيْشٍ وَصَفُّوا لَنَا: «إِذَا أَكْثَبُوكُمْ فَعَلَيْكُمْ بِالنَّبْلِ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «إِذَا أَكْثَبُوكُمْ فَارْمُوهُمْ وَاسْتَبْقُوا نَبْلَكُمْ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
وَحَدِيث سعد: «هُوَ تُنْصَرُونَ» سَنَذْكُرُهُ فِي بَابِ «فَضْلِ الْفُقَرَاءِ» . وَحَدِيثُ الْبَرَاءِ: بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَهْطًا فِي بَابِ «الْمُعْجِزَاتِ» إِنْ شَاءَ اللَّهُ تَعَالَى
ব্যাখ্যা: (إِذَا أَكْثَبُوْكُمْ) অর্থাৎ- তারা যখন তোমাদের এ পরিমাণ কাছাকাছি হয় যে, তোমাদের তীরগুলো তাদের কাছে পৌঁছবে। বুখারীর অন্য বর্ণনাতে আছে, (إِذَا أَكْثَبُوْكُمْ فَارْمُوْهُمْ) অর্থাৎ- তোমরা তীর নিক্ষেপে তাড়াতাড়ি করবে না এবং দূর থেকেও নিক্ষেপ করবে না, কেননা কখনো তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
আবূ দাঊদ-এর বর্ণনাতে এসেছে «يَعْنِي غَشَوْكُمْ» অর্থাৎ ‘‘তারা যখন তোমাদেরকে ঘিড়ে নিবে।’’ আর এটা উদ্দেশের সাথে, সর্বাধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। একে সমর্থন করছে ইবনু ইসহক-এর বর্ণনা, ‘‘নিঃসন্দেহে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে নির্দেশ দিলেন এবং বললেন, তারা যখন তোমাদের নিকটবর্তী হবে তখন তীর দ্বারা তাদেরকে তোমাদের থেকে সরিয়ে দিবে। ইবনু ফারিস বলেনঃ অর্থাৎ- তারা যখন তোমাদের কাছাকাছি হবে এবং তোমাদেরকে তাদের ব্যাপারে সক্ষম করে দিবে তখন তোমরা তাদেরকে তীর নিক্ষেপ করবে।
(فَارْمُوْهُمْ وَاسْتَبْقُوْا نَبْلَكُمْ) অর্থাৎ তিনি অবশিষ্টতার অনুসন্ধান করেছেন। দাঊদী বলেন, (ارْمُوْهُمْ) এর অর্থ হলো, তোমরা প্রস্তর নিক্ষেপ কর, কেননা তা যখন দলের মাঝে নিক্ষেপ করা হবে তখন তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হবে না। তিনি বলেন, (اسْتَبْقُوْا نَبْلَكُمْ) এর অর্থ হলো- পারস্পরিক সংঘাত সৃষ্টি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তীর নিক্ষেপ না করে তা সংরক্ষণ কর। এভাবে তিনি বলেন এবং অন্য কেউ বলেন, অর্থাৎ তোমাদের কিছু তীর তাদেরকে নিক্ষেপ করবে, সমস্ত তীর না। আমার কাছে যা স্পষ্ট হচ্ছে তা হলো নিঃসন্দেহে (اسْتَبْقُوْا نَبْلَكُمْ) তাঁর এ উক্তির অর্থ তার (ارْمُوْهُمْ) এ উক্তির সাথে সম্পর্কিত নয়। এটা কেবল মুশরিক বা মুসলিমদের নিকটবর্তী না হওয়া পর্যন্ত তীর নিক্ষেপ বিলম্ব করার ব্যাপারে নির্দেশের মাধ্যমে উদ্দেশ্যকে বর্ণনা করে দেয়ার মত। অর্থাৎ- তারা যখন দূরে থাকবে তখন অধিকাংশ তীর তাদের কাছে পৌঁছবে না। অতএব তারা যখন এমন অবস্থাতে পরিণত হবে যে অবস্থাতে অধিকাংশ তীর নিক্ষেপ করা হলে তীর তাদের কাছে পৌঁছা সম্ভব তখন নিক্ষেপ করবে। (ফাতহুল বারী ৭ম খন্ড, হাঃ ৩৯৮৪)