পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাভিযানে হত্যার বর্ণনা
৩৯৪৭-[১১] ’আব্দুর রহমান ইবনু ’আওফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বদর যুদ্ধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে রাতের প্রহরেই প্রস্তুত করেছেন। (তিরমিযী)[1]
عَن عبدِ الرَّحمنِ بن عَوفٍ قَالَ: عَبَّأَنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ببدر لَيْلًا. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: (بِبَدْرٍ لَيْلًا) অর্থাৎ- কাতারগুলো সোজা করলেন এবং আমাদের প্রত্যেককে এমন স্থানে দাঁড় করালেন রাতে তার জন্য যা উপযোগী হবে, যাতে দিনের জন্যও তা উপযোগী হয়। (তুহফাতুল আহওযায়ী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৬৭৭)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাভিযানে হত্যার বর্ণনা
৩৯৪৮-[১২] মুহাল্লাব হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (খন্দকের যুদ্ধের সময়) শত্রুরা যদি রাতের বেলায় তোমাদের ওপর আক্রমণ করে, তখন তোমাদের সাংকেতিক ধ্বনি হবেحٰمٓ لَا ينْصَرُوْنَ ’হা-মীম্ লা- ইউনসারূন’। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن الْمُهلب أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنْ بَيَّتَكُمُ الْعَدُوُّ فَلْيَكُنْ شِعَارُكُمْ: حم لَا ينْصرُونَ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (أَنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ قَالَ) আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দাকের যুদ্ধে এটা বলেছেন- এ তথ্যটি সাইয়িদ জামালুদ্দীন উল্লেখ করেছেন, (فَلْيَكُنْ شِعَارُكُمْ)। কাযী বলেন, অর্থাৎ- এ কথাটি তোমাদের প্রতীক যার মাধ্যমে তোমরা তোমাদের সাথীবর্গকে চিনবে, মূলত (شِعَارُ) বলতে ঐ প্রতীক, ব্যক্তি তার বন্ধুকে চেনার জন্য যা স্থাপন করে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
আবূ দাঊদে মাজহূলের শব্দ কর্তৃক بُيِّتُّمْ এসেছে, ‘‘তোমরা যদি রাতে আক্রান্ত হও’’ অর্থাৎ শত্রুরা যদি রাতে তোমাদের হত্যার উদ্দেশে আক্রমণ করে এবং তোমরা শত্রুর সাথে মিশ্রিত হয়ে যাও।
ইবনুল আসীর বলেন, রাতে কাউকে না জানিয়ে কোনো উদ্দেশ্য করা এবং হঠাৎ পাকড়াও করাকে تَبْيِِيْتٌ বলা হয়। (‘আওনুল মা‘বূদে ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৯৪)
(حٰمٓ لَا ينْصَرُوْنَ) খত্ত্বাবী বলেনঃ এর উদ্দেশ্য হলো সংবাদ দেয়া, যদি এ অংশটি দু‘আ অর্থে ব্যবহৃত হত তাহলে অবশ্যই তা (لَا ينْصَرُوْا) এভাবে জযম বিশিষ্ট হত, এটা দ্বারা কেবল সংবাদ প্রদান উদ্দেশ্য, যেন ব্যক্তি বলল, (والله إنهم لا ينصرون) আল্লাহর শপথ নিঃ ন্দেহে তাদেরকে বিজয় দেয়া হবে না।
‘আবদুল্লাহ বিন ‘আব্বাস হতে বর্ণনা করা হয়েছে, নিশ্চয় তিনি বলেন, (حٰمٓ) আল্লাহর নামসমূহ থেকে একটি নাম, যেন ব্যক্তি আল্লাহর শপথ করে বলল, (إنهم لا ينصرون) নিঃসন্দেহে তাদেরকে বিজয় দেয়া হবে না।
নিহায়াহ্ গ্রন্থকার বলেন, এর অর্থ হলো, (اللهم لا ينصرون) হে আল্লাহ! তাদেরকে বিজয় দেয়া হবে না। এর দ্বারা সংবাদ প্রদান উদ্দেশ্য দু‘আ উদ্দেশ্য নয়। একমতে বলা হয়েছে : নিশ্চয় ঐ সূরাগুলো যার শুরুতে (حٰمٓ) আছে তা এমন সূরা যার বিশেষ মর্যাদা আছে। সুতরাং তিনি এটা বুঝালেন যে, এ বাক্য উল্লেখ করা হয়েছে তার বিশেষ মর্যাদার কারণে যাতে তা দ্বারা আল্লাহর সাহায্য কামনার মাধ্যমে বিজয় অর্জন করা যায়। (‘আওনুল মা‘বূদ হাঃ ২৫৯৪)
মিরকাতুল মাফাতীহতে আরও বলা হয়েছে, (لا ينصرون) এমন একটি বাক্য যেন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমরা (حٰمٓ) বল। তখন প্রতি উত্তরে বলা হয়েছে, যখন আমরা এটা বলব তখন কি হবে? তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, (لا ينصرون) তাদেরকে সাহায্য করা হবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাভিযানে হত্যার বর্ণনা
৩৯৪৯-[১৩] সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুহাজিরদের সাংকেতিত চিহ্ন ছিল ’আবদুল্লাহ’ আর আনসারদের সংকেত ছিল ’আব্দুর রহমান’। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن سَمُرةَ بن جُندبٍ قَالَ: كَانَ شِعَارُ الْمُهَاجِرِينَ: عَبْدَ اللَّهِ وَشِعَارُ الْأَنْصَار: عبدُ الرَّحمنِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে মুহাজিরদের উভয়ের প্রতীকী চিহ্নের মাঝে পার্থক্য করার উদ্দেশ্য তাদের উভয়ের মর্যাদার ভিন্নতা প্রকাশ করা, সম্ভবত এটা অন্য কোনো যুদ্ধে ছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
‘আওনুল মা‘বূদে আছে- যুদ্ধে তাদের ঐ প্রতীকী চিহ্ন পার্থক্য করার উদ্দেশ্য যাতে করে কে মুহাজির আর কে আনসার তা সহজেই বুঝতে পারা যায়। (আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড হাঃ ২৫৯২)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাভিযানে হত্যার বর্ণনা
৩৯৫০-[১৪] সালামাহ্ ইবনুল আক্ওয়া’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় আবূ বকর (রাঃ)-এর নেতৃত্বে এক অভিযানে শত্রুর ওপর রাতের বেলায় আক্রমণ করি, তখন আমাদের সংকেত ছিল ’আমিত আমিত’ অর্থাৎ- (হে আল্লাহ!) শত্রুদেরকে ধ্বংস কর (মৃত্যু দাও)। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ سَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ قَالَ: غَزَوْنَا مَعَ أبي بكر زمن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فبيَّتْناهُم نَقْتُلُهُمْ وَكَانَ شِعَارُنَا تِلْكَ اللَّيْلَةَ: أَمِتْ أَمِتْ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (كَانَ شِعَارُنَا تِلْكَ اللَّيْلَةَ : أَمِتْ أَمِتْ) অর্থাৎ- ঐ রাতে আমাদের প্রতীকী চিহ্ন ছিল (أَمِتْ أَمِتْ) গুরুত্বারোপের জন্য শব্দটি বারংবার উল্লেখ করা হয়েছে। অথবা উদ্দেশ্য হলো- এ শব্দটি ঐ শব্দের অন্তর্ভুক্ত যা বারংবার উল্লেখ করা হয়। একমতে বলা হয়েছে, সম্বোধিত সত্বা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। কেননা তিনি মৃত্যুদানকারী, সুতরাং অর্থ হলো- হে সাহায্যকারী! তুমি মৃত্যু দাও’’।
আর শারহুস্ সুন্নাতে আছে, ‘‘হে সাহায্যপ্রাপ্ত ব্যক্তি! তুমি হত্যাযজ্ঞ চালাও, এ ক্ষেত্রে সম্বোধিত ব্যক্তি যোদ্ধা’’। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাভিযানে হত্যার বর্ণনা
৩৯৫১-[১৫] কয়স ইবনু ’উববাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ যুদ্ধের সময় হৈ-হুলেস্নাড় বা হট্টগোল করাটা অপছন্দ করতেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن قيسِ بنِ عُبادٍ قَالَ: كَانَ أَصْحَابُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكْرَهُونَ الصَّوْتَ عِنْدَ الْقِتَالِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (يَكْرَهُوْنَ الصَّوْتَ) ‘‘তারা আওয়াজ অপছন্দ করত।’’ আল্লাহর জিকির ছাড়া তারা সাধারণ আওয়াজ অপছন্দ করতেন। মুযহির বলেনঃ যোদ্ধাদের অভ্যাস তাদের আওয়াজ উঁচু করা, হয় নিজেদের বড়ত্ব প্রকাশ করার জন্য অথবা আওয়াজের আধিক্যতার মাধ্যমে নিজেদের আধিক্যতা প্রকাশ করার জন্য অথবা শত্রুদেরকে ভয় দেখানোর জন্য অথবা ‘‘আমি যুদ্ধ অনুসন্ধানকারী বীর’’ এ কথা বলার মাধ্যমে বীরত্ব প্রকাশের জন্য। সাহাবীগণ এ ধরনের কিছু বলে আওয়াজ উঁচু করাকে অপছন্দ করতেন, কেননা এ ধরনের আওয়াজ দ্বারা সুউচ্চ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় না, বরং তারা তাকবীর ধ্বনি দ্বারা আওয়াজ উঁচু করত, কেননা এতে ইহকাল ও পরকালের সফলতা আছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
নায়ল গ্রন্থকার বলেনঃ অত্র হাদীসে এ প্রমাণ আছে যে, যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আওয়াজ উঁচু করা, বেশি হৈচৈ করা, চিৎকার করা মাকরূহ। সম্ভবত তাদের অপছন্দ করার কারণ এজন্য যে, ঐ সময়ে আওয়াজ করা কখনো ভয় ও ব্যর্থতার ইঙ্গিত বহন করে যা চুপ থাকার বিপরীত। কেননা চুপ থাকা দৃঢ়তার প্রতি নির্দেশক, বীরত্বের বাঁধন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬৫৩)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাভিযানে হত্যার বর্ণনা
৩৯৫২-[১৬] সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যুদ্ধের মাঠে বয়োঃবৃদ্ধ মুশরিকদেরকে হত্যা কর এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের অর্থাৎ শিশু-কিশোরদের হত্যা করো না (জীবিত রাখ)। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن سَمُرَة بن جُنْدُبٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «اقْتُلُوا شُيُوخَ الْمُشْرِكِينَ وَاسْتَحْيُوا شَرْخَهُمْ» أَيْ صِبْيَانَهُمْ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (اُقْتُلُوْا شُيُوْخَ الْمُشْرِكِيْنَ) বাক্য দ্বারা শিশুদের বিপরীত ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে। দুর্বল বৃদ্ধকে হত্যা করা যাবে না, তবে যখন সে পরামর্শদাতা হবে তখন ভিন্ন কথা।
(اسْتَحْيُوْا شَرْخَهُمْ) ‘‘তাদের শিশুদেরকে জীবিত রাখবে’’। নিহায়াহ্ গ্রন্থে যা আছে, তা একে সমর্থন করছে। «الشَّرْخُ» বলতে ঐ সকল শিশু যারা প্রাপ্ত বয়সে পৌঁছেনি, আর «اسْتِحْيَاءِ» এর ব্যাখ্যা হলো দাস বানানোর স্বার্থে তাদের জীবিত রাখা। সুতরাং এটা রূপক অর্থ- আর তাদেরকে অবশিষ্ট রাখা থেকে উদ্দেশ্য হলো- তাদেরকে দাস বানানো ও তাদের দ্বারা সেবা নেয়া উদ্দেশ্য।
আবূ ‘উবায়দ বলেন, «الشُّيُوخِ» দ্বারা তাদের মাঝে ধৈর্যের অধিকারী ব্যক্তি, যুদ্ধ করতে সক্ষম এমন ব্যক্তি উদ্দেশ্য করেছেন, এমন বৃদ্ধদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়নি, যাদেরকে বন্দী করলে তাদের মাধ্যমে সেবা করার উপকার লাভ করা যায় না।
হাদীসে ব্যবহৃত «الشَّرْخُ» শব্দ দ্বারা ধৈর্যের অধিকারী ঐ সকল যুবক উদ্দেশ্য, যারা কর্তৃত্ব ও সেবা করার উপযোগী। আবূ বাকর বলেন, «الشَّرْخُ» বলা হয় যৌবনের সূচনাকে। বিদ্বানগণ এ হাদীসটির যে বিশ্লেষণ করে থাকে তার মাঝে এটাই সর্বোত্তম বিশ্লেষণ। যাতে হাদীসটি এ অধ্যায়ে আনাস-এর যে হাদীস আছে তার বিরোধিতা না করে আর তার থেকে যা বর্ণনা করা হয়েছে তা হলো, «لَا تَقْتُلُوا شَيْخًا فَانِيًا» ‘‘তোমরা দুর্বল বৃদ্ধকে হত্যা করো না’’।
(شُيُوْخَ الْمُشْرِكِيْنَ) অর্থাৎ বীরত্বের অধিকারী, যুদ্ধে পারদর্শী শক্তিশালী পুরুষ, ঐ সকল দুর্বল পুরুষ নয়, যারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি। সুতরাং শিশুদেরকে হত্যা করা ও মহিলাদেরকে হত্যা করা হারাম। (মিরকাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৫৮৩)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাভিযানে হত্যার বর্ণনা
৩৯৫৩-[১৭] ’উরওয়াহ্ [ইবনুয্ যুবায়র] (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উসামাহ্ (ইবনু যায়দ) আমাকে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নির্দেশ দিয়েছেনঃ ’উবনা’ বস্তির ওপর প্রত্যুষে অতর্কিত আক্রমণ কর এবং তাদের সব কিছু (ঘরবাড়ি ও গাছপালা) জ্বালিয়ে দাও। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن عُروَةَ قَالَ: حدَّثني أسامةُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ عَهِدَ إِلَيْهِ قَالَ: «أَغِرْ عَلَى أُبْنَى صباحا وَحرق» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (عَلَى أُبْنَىْ) আসকালান ও রামলার মাঝামাঝি ফিলিসত্মীনের একটি স্থান।
তূরিবিশতী বলেনঃ জুহায়নাহ্ শহরের একটি স্থান। ইবনুল হুমাম বলেনঃ একমতে বলা হয়েছে, নিশ্চয় তা একটি গোত্রের নাম।
(صَبَاحًا) অর্থাৎ তাদের উদাসীন থাকার অবস্থায় হঠাৎ করে, অসতর্ক থাকাবস্থায়।
(وَحَرِّقْ) অন্য বর্ননায় (ثُمَّ حَرِّقْ) এসেছে, অর্থাৎ তাদের শস্য, তাদের বৃক্ষ ও তাদের ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দাও।
ইবনুল হুমাম বলেনঃ ইমাম যখন যুদ্ধ ময়দান হতে ফিরে আসার ইচ্ছা করবে আর তার সাথে যোদ্ধাদের চতুস্পদ জন্তু থাকবে। এমতাবস্থায় শত্রু থেকে অর্জিত চতুস্পদ জন্তু ইসলামী দেশে নিয়ে আসতে সক্ষম না হলে সেগুলো যাবাহ করবে, অতঃপর সেগুলো জ্বালিয়ে দিবে সেগুলো হত্যা করবে না। তা জ্বালিয়ে দেয়া হবে কেবল কাফিরদের উপকার লাভের পথকে বন্ধ করে দেয়ার জন্য। আর তা বিল্ডিং নষ্টকরণের মতো, আর এ মহৎ উদ্দেশে জ্বালিয়ে দেয়া যাবাহের পূর্বে জালিয়ে দেয়ার বিপরীত, কেননা তা নিষেধ করা হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬১৩)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাভিযানে হত্যার বর্ণনা
৩৯৫৪-[১৮] আবূ উসায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শত্রুরা যখন তোমাদের খুব সন্নিকটবর্তী চলে আসে তখন তাদের ওপর তীর বর্ষণ কর। আর তারা তোমাদের ওপর ঝাপিয়ে না পড়া পর্যন্ত তরবারি উন্মুক্ত করো না। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَبِي أُسَيْدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ بَدْرٍ: «إِذَا أَكْثَبُوكُمْ فَارْمُوهُمْ وَلَا تَسُلُّوا السُّيُوفَ حَتَّى يَغْشَوْكُمْ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: (حَتّٰى يَغْشَوْكُمْ) অর্থাৎ তারা যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের নিকটবর্তী না হয়, যাতে তোমাদের তরবারি তাদের নাগালে পেতে পারে। (আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬৬১)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাভিযানে হত্যার বর্ণনা
৩৯৫৫-[১৯] রবাহ ইবনুর্ রবী’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা কোনো এক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বহু সংখ্যক লোকেদেরকে এক জায়গায় জড়ো হতে দেখে জনৈক ব্যক্তিকে লোকেদের ভিড় করার কারণ জানতে পাঠালে লোকটি এসে বলল, একজন মহিলার লাশকে কেন্দ্র করে লোকেরা জড়ো হয়েছে। এ কথা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ মহিলাটি তো এমন নয় যে, সে আমাদের বিরুদ্ধে লড়বে। বর্ণনাকারী বলেন, এ সেনাদলের অগ্রাধিনায়ক ছিলেন খালিদ ইবনু ওয়ালীদ। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জনৈক ব্যক্তিকে এই বলে পাঠালেন- খালিদকে বলে দাও! কোনো মহিলা এবং চাকরদেরকে হত্যা করো না। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن رَبَاح بن الرَّبيعِ قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غزوةٍ فَرَأى الناسَ مجتمعينَ عَلَى شَيْءٍ فَبَعَثَ رَجُلًا فَقَالَ: «انْظُرُوا عَلَى من اجْتمع هَؤُلَاءِ؟» فَقَالَ: عَلَى امْرَأَةٍ قَتِيلٍ فَقَالَ: «مَا كَانَتْ هَذِهِ لِتُقَاتِلَ» وَعَلَى الْمُقَدِّمَةِ خَالِدُ بْنُ الْوَلِيدِ فَبَعَثَ رَجُلًا فَقَالَ: قُلْ لِخَالِدٍ: لَا تَقْتُلِ امْرَأَة وَلَا عسيفا . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (عَسِيْفًا) অর্থাৎ কর্মচারী, খিদমাতে নিয়োজিত ব্যক্তি, আর এর চিহ্ন হলো অস্ত্রমুক্ত থাকা। হাদীসটি অন্য শব্দেও এসেছে, অতঃপর তিনি বলেন, فَقَالَ : مَا كَانَتْ هٰذِه لِتُقَاتِلَ সাবধান, এ মহিলাটি এমন নয় যে, যুদ্ধ করবে? (মিরকাতুল মাফাতীহ)
খত্ত্বাবী বলেনঃ হাদীসটিতে ঐ ব্যাপারে প্রমাণ আছে যে, মহিলা যখন যুদ্ধ করবে তখন তাকে হত্যা করতে হবে, আপনি কি লক্ষ্য করছেন না যে, মহিলাকে হত্যা করা হারাম হওয়ার ক্ষেত্রে যে কারণটি তিনি উল্লেখ করেছেন তা হলো মহিলা যুদ্ধ করে না, সুতরাং যখন সে যুদ্ধ করবে তখন তা মহিলাকে হত্যা করা বৈধ হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করবে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬৬৬)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাভিযানে হত্যার বর্ণনা
৩৯৫৬-[২০] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহর নামে, আল্লাহর সাহায্যে এবং তাঁর রসূলের দীনের উপর রওয়ানা হয়ে যাও। সাবধান! বয়োঃবৃদ্ধ, ছোট শিশু, বালক-বালিকা এবং কোনো মহিলাকে হত্যা করো না। গনীমাতের মালে খিয়ানাত করো না এবং গনীমাতের সমস্ত মাল আমীরের (নেতার) নিকট একত্রিত করবে, পরস্পর সৌহার্দ্যপূর্ণ থাকবে এবং সদাচরণ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকে ভালোবাসেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «انْطَلِقُوا بِاسْمِ اللَّهِ وَبِاللَّهِ وعَلى ملِّة رسولِ الله لَا تقْتُلوا شَيْخًا فَانِيًا وَلَا طِفْلًا صَغِيرًا وَلَا امْرَأَةً وَلَا تَغُلُّوا وَضُمُّوا غَنَائِمَكُمْ وَأَصْلِحُوا وَأَحْسِنُوا فَإِنَّ اللَّهَ يحبُّ المحسنينَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: «الشَّيْخِ الْفَانِي» (অতিবৃদ্ধ) ‘যাকে হত্যা করা হবে না’ এমন ব্যক্তি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ঐ ব্যক্তি যে যুদ্ধ করার ব্যাপারে ক্ষমতা রাখে না, দু’দল একত্রিত হওয়ার সময় শেস্নাগান দিতে পারে না, গর্ভবতীকরণে সক্ষম নয়, কেননা সক্ষম ব্যক্তির মাধ্যমে সন্তান উৎপাদন হয়। অতঃপর মুসলিমদের বিরুদ্ধে যোদ্ধাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এটা যাখীরাহ্ গ্রন্থকার উল্লেখ করেছেন।
শায়খ আবূ বাকর الرَّازِيُّ فِي كِتَابِ الْمُرْتَدِّ فِي شَرْحِ الطَّحَاوِيِّ (আর্ রাযী কিতাবুল মুরতাদ্দি ফী শার্হিত্ব ত্বহাবী)-তে একটু বেশি উল্লেখ করেছেন যে, বৃদ্ধ যখন পূর্ণ জ্ঞানের অধিকারী হবে তখন আমরা তাকে হত্যা করব আর তার মতো ঐ ব্যক্তিকে হত্যা করব যে পূর্ণ জ্ঞান থাকাবস্থায় মুরতাদ হয়ে যাবে। আর যাকে আমরা হত্যা করব না সে হলো ঐ বৃদ্ধ ব্যক্তি, যে ভালো-মন্দের পার্থক্যকারী জ্ঞানীদের সীমা বহির্ভূত। তখন এ ব্যক্তি পাগলের স্তরে থাকবে, বিধায় আমরা তাকে হত্যা করব না। এমন পাগল যখন মুরতাদ হয়ে যাবে তাকেও আমরা হত্যা করব না। ডান হাত যার কর্তিত, যার হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কর্তিত তাকেও আমরা হত্যা করব না।
সীয়ারে কাবীরে উল্লেখ আছে, খ্রীষ্টান ধর্মযাজককে তার গীর্জাতে হত্যা করা যাবে না। আর ইয়াহূদীদের গির্জাসমূহের ঐ সকল অধিবাসীদেরও হত্যা করা যাবে না যারা মানুষের সাথে উঠা-বসা করে না। তবে তারা যদি মানুষের সাথে উঠা-বসা করে তাহলে তাদেরকে হত্যা করতে হবে, যেমন খ্রীষ্টান ধর্মযাজকরা। মালিক তার মুয়াত্ত্বাতে ইয়াহ্য়া বিন সা‘ঈদ থেকে বর্ণনা করেন যে, আবূ বাকর শামের (সিরিয়ার) দিকে সৈন্যবাহিনী পাঠালেন, তখন আবূ বাকর ইয়াযীদ বিন আবূ সুফ্ইয়ান-এর সাথী হয়ে বাড়ী থেকে বের হয়ে তাকে বললেন, ‘‘নিশ্চয় আমি তোমাকে দশটি বিষয়ের ব্যাপারে উপদেশ দিচ্ছি- তুমি শিশু, মহিলা, অতিবৃদ্ধ হত্যা করবে না, ফলদার বৃক্ষ কাটবে না, বকরী হত্যা করবে না, গাভী হত্যা করবে না, তবে খাওয়ার উদ্দেশে যাবাহ করতে পার, কোনো কিছু জ্বালিয়ে দিবে না, আবাদ ভূমিকে নষ্ট করবে না, মা ও সন্তানের মাঝে বিচ্ছিন্ন করবে না, কাপুরুষতার পথ অবলম্বন করবে না ও আত্মাসাৎ করবে না।’’ (মিরকাতুল মাফাতীহ)
‘আওনুল মা‘বূদে (৫ম খন্ড, হাঃ ২৬১১) আছে, (وَلَا اِمْرَأَةً) অর্থাৎ- মহিলা যখন যোদ্ধা অথবা রাণী না হবে।
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাভিযানে হত্যার বর্ণনা
৩৯৫৭-[২১] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের দিন (মুশরিকদের পক্ষে) ’উতবাহ্ ইবনু রবী’আহ্ সর্বপ্রথম সম্মুখে অগ্রসর হলেন। অতঃপর তার অনুসরণ করে পিছু নিল তার পুত্র (ওয়ালীদ) ও তার ভাই (শায়বাহ্)। অতঃপর সে পরস্পর যুদ্ধের জন্য ঘোষণা দিল, কে আছ যে আমাদের মুকাবিলা করবে? তার আহবানে সাড়া দিয়ে কয়েকজন আনসারী যুবক এগিয়ে গেল। ’উতবাহ্ জিজ্ঞেস করল, তোমরা কারা? যুবকেরা তাদের পরিচয় দিল। তখন ’উতবাহ্ বলল, তোমাদের সাথে মুকাবিলা করা আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই; বরং আমরা তো আমাদের চাচাত ভাইদেরকে চাই। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে হামযাহ্! তুমি যাও, হে ’আলী! তুমি যাও এবং হে ’উবায়দাহ্ ইবনু হারিস! তুমি যাও। অতঃপর হামযাহ্ ’উতবার দিকে অগ্রসর হয়ে তাকে হত্যা করলেন। আর আমি শায়বার ওপর ঝাপিয়ে পড়ে তাকে হত্যা করলাম। আর ’উবায়দাহ্ ও ওয়ালীদ-এর মধ্যে পাল্টাপাল্টি আক্রমণ চলতে লাগল এবং পরস্পরের মধ্যে মারাত্মকভাবে হতাহত হতে লাগল। অতঃপর ’আলী বলেন, এ অবস্থা দেখে আমরা তৎক্ষণাৎ ওয়ালীদণ্ডএর ওপর আক্রমণ করে তাকে হত্যা করলাম এবং ’উবায়দাহ্-কে আহত অবস্থায় উঠিয়ে নিয়ে এলাম। (আহমাদ, আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: لَمَّا كَانَ يَوْمُ بَدْرٍ تَقَدَّمَ عُتْبَةُ بْنُ رَبِيعَةَ وَتَبِعَهُ ابْنُهُ وَأَخُوهُ فَنَادَى: مَنْ يُبَارِزُ؟ فَانْتُدِبَ لَهُ شبابٌ مِنَ الْأَنْصَارِ فَقَالَ: مَنْ أَنْتُمْ؟ فَأَخْبَرُوهُ فَقَالَ: لَا حَاجَةَ لَنَا فِيكُمْ إِنَّمَا أَرَدْنَا بَنِي عَمِّنَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قُمْ يَا حَمْزَةُ قُمْ يَا عَلِيُّ قُمْ يَا عُبَيْدَةُ بْنَ الْحَارِثِ» . فَأَقْبَلَ حَمْزَةُ إِلى عتبةَ وَأَقْبَلْتُ إِلَى شَيْبَةَ وَاخْتَلَفَ بَيْنَ عُبَيْدَةَ وَالْوَلِيدِ ضَرْبَتَانِ فَأَثْخَنَ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا صَاحِبَهُ ثُمَّ مِلْنَا عَلَى الْوَلِيدِ فَقَتَلْنَاهُ وَاحْتَمَلْنَا عُبَيْدَةَ. رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: শারহুস্ সুন্নাহ্তে আছে, অত্র হাদীসে কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরস্পর কুস্তির বৈধতা আছে। ইমাম যখন অনুমতি দিবে তখন কুস্তি বৈধ হওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্বানগণ মতানৈক্য করেননি। যখন কুস্তি ইমামের অনুমতিক্রমে না হবে তখন তা বৈধ হওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্বানগণ মতানৈক্য করেছেন। একদল তা বৈধ সাব্যস্ত করেছেন, আর ইমাম মালিক ও শাফি‘ঈ এ মত সমর্থন করেছেন। কেননা আনসারীরা যুদ্ধ ক্ষেত্রের দিকে বেরিয়ে গিয়েছিল, আর যখন একজন তার সাথীর ক্ষেত্রে অক্ষম হয়েছিল তখন হামযাহ্, ‘আলী এবং ‘উবায়দাহ্ (রাঃ) এগিয়ে এসেছিল। এ ব্যাপারে উক্তি করেছেন শাফি‘ঈ, আহমাদ ও ইসহক। আওযা‘ঈ বলেন, কুস্তিতে কেউ কাউকে সাহায্য করবে না, কেননা কুস্তি এমনই হয়ে থাকে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
খত্ত্বাবী বলেনঃ হাদীসের সারমর্ম হলো, নিঃসন্দেহে কুস্তি ইমামের অনুমতি ও বিনা অনুমতি- উভয় অবস্থাতে বৈধ হওয়ার উপরে হাদীসটি প্রমাণ বহন করছে। কেননা হামযাহ্ এবং ‘আলী -এর কুস্তি অনুমতিসাপেক্ষে ছিল, আর আনসারীরা বের হয়ে এসেছিল, এমতাবস্থায় তাদের জন্য কোনো অনুমতি ছিল না। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাজ অস্বীকার করেননি। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬৬২)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাভিযানে হত্যার বর্ণনা
৩৯৫৮-[২২] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে একটি সৈন্যবাহিনীতে পাঠালেন। কিন্তু আমাদের সাথীরা পালিয়ে গেল, ফলে আমরা মদীনায় ফিরে এসে আত্মগোপন করলাম। আর আমরা (মনে মনে) বলতে লাগলাম, আমরা ধ্বংস হয়ে গেছি। অতঃপর আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা তো যুদ্ধ হতে পলায়নকারী। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না, এরূপ নয়, বরং তোমরা তো পুনঃআক্রমণকারী। আমি তোমাদের দলে (পেছনে) রয়েছি। (তিরমিযী)[1]
আবূ দাঊদ-এর বর্ণনাও অনুরূপ। অবশ্য সেখানে হাদীসের শেষ বাক্য হলো, ’’না তোমরা পলায়নকারী নও; বরং পুনঃআক্রমণকারী।’’ বর্ণনাকারী বলেন, আমরা তাঁর নিকটে গেলাম এবং তাঁর হাত চুমু দিলাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমিই মুসলিমদের পশ্চাতের দল। গ্রন্থকার বলেন, শীঘ্রই আমরা উমাইয়্যাহ্ ইবনু ’আব্দুল্লাহ-এর বর্ণিত হাদীস যার শুরু হলো, ’’তারা বিজয় প্রত্যাশা করছিল’’। আর আবুদ্ দারদা-এর বর্ণিত হাদীস যার শুরু ’’তোমরা আমাকে তোমাদের দুর্বলদের মধ্যে সন্ধান কর’’ ইনশা-আল্লা-হ ’’ফাকীর-গরীবদের মর্যাদা’’ অধ্যায়ে বর্ণনা করব।
وَعَن ابنِ عُمر قَالَ: بَعَثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَرِيَّةٍ فَحَاصَ النَّاسُ حَيْصَةً فَأَتَيْنَا الْمَدِينَةَ فَاخْتَفَيْنَا بِهَا وَقُلْنَا: هَلَكْنَا ثُمَّ أَتَيْنَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْنَا: يَا رَسُول الله نَحن الفارون. قَالَ: «بَلْ أَنْتُمُ الْعَكَّارُونَ وَأَنَا فِئَتُكُمْ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ. وَفِي رِوَايَةِ أَبِي دَاوُدَ نَحْوَهُ وَقَالَ: «لَا بَلْ أَنْتُمُ الْعَكَّارُونَ» قَالَ: فَدَنَوْنَا فَقَبَّلْنَا يَده فَقَالَ: «أَنا فِئَة من الْمُسْلِمِينَ»
وَسَنَذْكُرُ حَدِيثَ أُمَيَّةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ: كَانَ يَسْتَفْتِحُ وَحَدِيثُ أَبِي الدَّرْدَاءِ «ابْغُونِي فِي ضُعَفَائِكُمْ» فِي بَابِ «فَضْلِ الْفُقَرَاءِ» إِنْ شَاءَ اللَّهُ تَعَالَى
ব্যাখ্যা: (فَحَاصَ النَّاسُ حَيْصَةً) কাযী বলেনঃ অর্থাৎ ‘‘তারা এড়িয়ে গেল’’। তবে ইবনু ‘উমার যদি النَّاسُ দ্বারা মুসলিম বাহিনীর শত্রুদের উদ্দেশ্য করে থাকেন, তাহলে এখানে حَيْصَةً দ্বারা উদ্দেশ্য হবে আক্রমণ করা, অর্থাৎ তারা একযোগে আমাদের ওপর আক্রমণ করল, চক্কর দিল। অতঃপর আমরা তাদের সাথে পরাজিত হলোম। আর যদি السرية উদ্দেশ্য করেন তাহলে حَيْصَةً দ্বারা উদ্দেশ্য হবে প্রত্যাবর্তন করা, অর্থাৎ- তারা মদীনাতে আশ্রয় গ্রহণের উদ্দেশে শত্রুদের থেকে ফিরে গেল, তথা পলায়ন করল। আর এ অর্থেই মহান আল্লাহর বাণী, ‘‘আর তা থেকে তারা কোনো পলায়নস্থল পাবে না।’’ (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১২১)
জাওহারী-এর উক্তি «حَاصَ عَنْهُ» অর্থাৎ- সে তা থেকে সরে গেল। বন্ধুদেরকে বলা হয় «حَاصُوا عَنِ الْأَعْدَاءِ» অর্থাৎ- শত্রুদের থেকে সরে যাও। আর শত্রুদেরকে বলা হয়, তোমরা পরাজয় বরণ কর।
আর ফায়িক গ্রন্থে আছে, «فَحَاصَ حَيْصَةً» অর্থাৎ- অতঃপর সে পরাজয় বরণ করল। এক বর্ণনাতে আছে, «فَحَاضَ» আর তা হলো সরে যাওয়া, ঢালুতে অবতরণ করা। নিহায়াহ্ গ্রন্থকার বলেনঃ«فَحَاصَ الْمُسْلِمُونَ حَيْصَةً» অর্থাৎ- তারা পলায়নের উদ্দেশে প্রদক্ষক্ষণ করল।
(هَلَكْنَا) অর্থাৎ- আমরা পলায়নের মাধ্যমে অবাধ্যতা প্রকাশ করেছি, অতএব আমরা ধ্বংস হয়ে গিয়েছি। এটা তাদের থেকে এ ধারণাবশত যে, সাধারণত যুদ্ধ থেকে পালায়ন করা কবীরা গুনাহের আওতাভুক্ত। (الْعَكَّارُوْنَ) অর্থাৎ- যুদ্ধের দিকে বারংবার প্রত্যাবর্তনকারী, তার আশে-পাশে চলাফেরাকারী। অনুরূপভাবে নিহায়াতে আছে, এর অর্থ হলো- যুদ্ধের দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।
(وَأَنَا فِئَتُكُمْ) নিহায়াহ্ গ্রন্থে আছে, الْفِئَةُ বলতে মূলত মানুষের দল, যে দল সৈন্যবাহিনীর পেছনে থাকে। অতঃপর তাদের ওপর যদি কোনো ভয় থাকে অথবা পরাজয়ের আশঙ্কা থাকে তাহলে তারা তার কাছে আশ্রয় নেয়।
ফায়িক গ্রন্থে আছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী (أَنَا فِئَتُكُمْ) এক্ষেত্রে মহান আল্লাহর বাণীর (أَوْ مُتَحَيِّزًا إِلَى فِئَةٍ) অর্থাৎ- ‘‘অথবা নিজ দলে আশ্রয় গ্রহণ করার লক্ষ্যক্ষ্য’’- (সূরা আল আনফাল ৮ : ১৬) এ দিকে গিয়েছে। এর মাধ্যমে পলায়নের ক্ষেত্রে তিনি তাদের আপত্তিকে সহজ করেন, অর্থাৎ- তোমরা আমার কাছে আশ্রয় নিয়েছ, সুতরাং তোমাদের কোনো ত্রুটি নেই।
শারহুস্ সুন্নাহ্তে আছে, ‘আবদুল্লাহ বিন মাস্‘ঊদ বলেনঃ যে ব্যক্তি তিনজনের মোকাবেলা করা থেকে পলায়ন করবে তাহলে সে পলায়ন করেনি। আর যে ব্যক্তি দু’জনের বিরুদ্ধে লড়াই করা থেকে পলায়ন করবে, তাহলে সুনিশ্চিত সে পলায়ন করেছে। আর যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে ব্যক্তি দু’জনের মোকাবেলা করা থেকে পলায়ন করবে তার জন্য পলায়নের সময় ইঙ্গিতের মাধ্যমে সালাত আদায় করা বৈধ নয়, কেননা সে অবাধ্য, যেমন চোর অবাধ্য। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
(الْعَكَّارُوْنَ) অর্থাৎ- তোমরা যুদ্ধের দিকে প্রত্যাবর্তনকারী, তার পাশে প্রদক্ষক্ষণকারী, যখন আপনি কোনো কিছুর আশে-পাশে প্রদক্ষক্ষণ করবেন, সেখান থেকে চলে যাওয়ার পর পুনরায় সেখানে ফিরে আসবেন তখন ‘আরবীতে বলা হবে «عكرت على الشيئ»। আসমা‘ঈ বলেন, আমি এক বেদুঈনকে দেখলাম সে তার কাপড় থেকে উকুন বের করছে, অতঃপর বুরগূছ হত্যা করে উকুনটিকে ছেড়ে দিচ্ছে। সুতরাং আমি বললাম, আপনি এমন করছেন কেন? তখন বেদুঈন বলল, আমি অশ্বারোহীকে হত্যা করছি, অতঃপর পদাতিক বাহিনীর পর ঘুরে আক্রমণ করব। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬৪৪)
(بَعَثَنَا رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ فِىْ سَرِيَّةٍ) নিহায়াহ্ গ্রন্থকার বলেন, السَّرِيَّةُ বলতে সৈন্যবাহিনীর একটি অংশকে বুঝায় যা সংখ্যায় সর্বোচ্চ চারশত। যে অংশটিকে শত্রুর কাছে পাঠানো হয়। এর বহুবচন হলো السَّرَايَا একে এ নামে নামকরণ করা হয়েছে, কেননা এরা সৈন্যবাহীর সারাংশ, তাদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিবর্গের অন্তর্ভুক্ত, উৎকৃষ্ট নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের অন্তর্ভুক্ত।
(هَلَكْنَا) অর্থাৎ যুদ্ধ হতে পলায়ন করে আমরা কবীরা গুনাহ করার ফলে ধ্বংস হয়ে গেছি। আবূ দাঊদ-এর বর্ণনাতে আছে- অতঃপর লোকেরা পালিয়ে গেল, আর যারা পালিয়েছিল তাদের মাঝে আমি একজন। এরপর আমরা যখন মদীনায় প্রবেশ করলাম তখন বললাম, আমরা কি করব? আমরা তো যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করেছি, আমরা গজবে পতিত হয়েছি। অতঃপর আমরা বললাম, আমরা মদীনাতে আত্মগোপন করে থাকব, ফলে কেউ আমাদেরকে দেখবে না। তিনি বলেন, এরপর আমরা মদীনায় প্রবেশ করে বললাম, যদি আমরা আমাদের নিজেদেরকে আল্লাহর রসূলের সামনে উপস্থাপন করি, আর যদি আমাদের তাওবাহ্ করার সুযোগ থাকে তাহলে আমরা সেখানে অবস্থান করব আর এছাড়া অন্য কিছু হয় তাহলে আমরা চলে যাব। তিনি বলেন, অতঃপর আমরা আল্লাহর রসূলের অপেক্ষায় ফজরের সালাতের পূর্বে বসলাম, অতঃপর তিনি বেরিয়ে এলে আমরা তাঁর কাছে গিয়ে বললাম, আমরা পলায়নকারী..... শেষ পর্যন্ত। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৭১৬)