পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাফির রাষ্ট্রপ্রধানদের নিকট পত্র প্রেরণ ও ইসলামের প্রতি আহবান

৩৯২৬-[১] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামের দিকে আহবান জানিয়ে দিহ্ইয়াতুল কালবী (রাঃ)-এর মাধ্যমে এ নির্দেশ দিয়ে (রোম সম্রাট) কায়সারের নামে পত্র প্রেরণ করেন, তা যেন অবশ্যই বাসরার (বর্তমানে ইরাকের) রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে অর্পণ করেন। আর সে যেন তা কায়সারের নিকট পৌঁছে দেয়। পত্রে লিখেছিলেন,

পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি,

আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ হতে রোমের রাষ্ট্রপ্রধান হিরাকল (হিরাক্লিয়াস)-এর প্রতি। যারা হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়েছে, হিদায়াতের অনুসরণ করেছে তাদের ওপর শান্তি বর্ষণ হোক! আমি তোমার নিকট ইসলামের দা’ওয়াত পেশ করছি, ইসলামে প্রবেশ কর, শান্তিতে থাকবে। পুনরায় বলছি, ইসলাম কবুল কর, তবে আল্লাহ তোমাকে দ্বিগুণ পুরস্কার (সাওয়াব) দান করবেন। আর যদি ইসলাম হতে বিমুখ হও, তাহলে সমস্ত প্রজাবৃন্দের পাপের বোঝাও তোমার ওপর ন্যস্ত হবে।

হে কিতাবধারীগণ! তোমরা এমন এক মৌলিক বাক্যের দিকে এসো, যাতে আমরা ও তোমরা সমবিশ্বাসী। আর তাই আমাদের সকলের ওপর কর্তব্য হলো এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ’ইবাদাত করব না এবং তাঁর সাথে অন্য কিছুকে শরীক স্থাপন করব না এবং আমরা পরস্পর একে অন্যকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে রব্ হিসেবে মেনে নিবো না। অতঃপর যদি তারা এ কথাগুলো মেনে না নেয়, তবে বলে দাও তোমরা সাক্ষী থাকো যে, আমরা মুসলিম। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

আর মুসলিম-এর এক বর্ণনার মধ্যে তিনটি বাক্যের পরিবর্তন হয়েছে। যেমন- আল্লাহর রসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষে হতে (অর্থাৎ- ’আবদুল্লাহ’ শব্দ নেই), ইয়ারীসাইয়িন (’হামযা’-এর স্থলে ’ইয়া’) এবং (’’দা-’ইয়াতিল ইসলা-ম’’-এর স্থলে) ’’দি’আ-ইয়াতিল ইসলা-ম’’ রয়েছে (এছাড়া তেমন একটা পার্থক্য নেই)।

بَابُ الْكِتَابِ إِلَى الْكُفَّارِ وَدُعَائِهِمْ إِلَى الْإِسْلَامِ

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَتَبَ إِلَى قَيْصَرَ يَدْعُوهُ إِلَى الْإِسْلَامِ وَبَعَثَ بِكِتَابِهِ إِلَيْهِ دِحْيَةَ الْكَلْبِيَّ وَأَمَرَهُ أَنْ يَدْفَعَهُ إِلَى عَظِيمِ بُصْرَى لِيَدْفَعَهُ إِلَى قَيْصَرَ فَإِذَا فِيهِ: بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ مِنْ مُحَمَّدٍ عَبْدِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ إِلَى هِرَقْلَ عَظِيمِ الرُّومِ سَلَامٌ عَلَى مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى أَمَّا بَعْدُ فَإِنِّي أدْعوكَ بداعيَةِ الْإِسْلَامِ أَسْلِمْ تَسْلَمْ وَأَسْلِمْ يُؤْتِكَ اللَّهُ أَجَرَكَ مَرَّتَيْنِ وَإِنْ تَوَلَّيْتَ فَعَلَيْكَ إِثْمُ الْأَرِيسِيِّينَ وَ (يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَى كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَن لَا نَعْبُدَ إِلَّا اللَّهَ وَلَا نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُولُوا: اشْهَدُوا بِأَنَّا مُسْلِمُونَ)
مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ قَالَ:
مِنْ محمَّدٍ رسولِ اللَّهِ وَقَالَ: «إِثمُ اليريسيِّينَ» وَقَالَ: «بِدِعَايَةِ الْإِسْلَام»

عن ابن عباس: ان النبي صلى الله عليه وسلم كتب الى قيصر يدعوه الى الاسلام وبعث بكتابه اليه دحية الكلبي وامره ان يدفعه الى عظيم بصرى ليدفعه الى قيصر فاذا فيه: بسم الله الرحمن الرحيم من محمد عبد الله ورسوله الى هرقل عظيم الروم سلام على من اتبع الهدى اما بعد فاني ادعوك بداعية الاسلام اسلم تسلم واسلم يوتك الله اجرك مرتين وان توليت فعليك اثم الاريسيين و (يا اهل الكتاب تعالوا الى كلمة سواء بيننا وبينكم ان لا نعبد الا الله ولا نشرك به شيىا ولا يتخذ بعضنا بعضا اربابا من دون الله فان تولوا فقولوا: اشهدوا بانا مسلمون) متفق عليه. وفي رواية لمسلم قال: من محمد رسول الله وقال: «اثم اليريسيين» وقال: «بدعاية الاسلام»

ব্যাখ্যা: (وَإِنْ تَوَلَّيْتَ فَعَلَيْكَ إِثْمُ الْأَرِيسِيِّيْنَ) ‘‘যদি তুমি মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে আরীসিয়্যিনদের গুনাহ তোমার ওপর বর্তাবে।’’ অর্থাৎ তুমি ইসলাম গ্রহণ করতে বিমুখ হও তাহলে তুমি নিজে তো গুনাহগার হবেই। সেই সাথে তোমার যারা অনুসারী তাদের গুনাহসমূহও তোমার ওপর বর্তাবে। এ থেকে এটাও বুঝা যায় যে, তোমার ইসলাম গ্রহণ করার কারণে যদি তোমার অনুসারীগণ ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে এর সাওয়াবও তুমি অর্জন করবে। ‘আল্লামা নববী বলেনঃ (أَرِيسِيِّيْنَ) বলতে কাদের বুঝানো হয় এতে অনেক মতভেদ রয়েছে। তবে বিশুদ্ধ ও প্রসিদ্ধ মত এই যে, তারা হলো রোমের কৃষক সম্প্রদায়। এদের উল্লেখ করার মাধ্যমে সকল অনুসারীদের বুঝানো হয়েছে। কেননা সংখ্যায় তারাই ছিল বেশী। আর আনুগত্যের বেলায়ও তারাই অগ্রগামী। বাদশাহ ইসলাম গ্রহণ করলে তারাও ইসলাম গ্রহণ করবে। আর বাদশাহ ইসলাম গ্রহণ করা হতে বিরত থাকলে তারাও তা থেকে বিরত থাকবে। (শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৭৭৩)

وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِنْ دُوْنِ اللهِ ‘‘আমাদের মাঝে কেউই যেন আল্লাহকে বাদ দিয়ে একে অপরকে রব্ বানিয়ে না নেয়।’’ অর্থাৎ- আমরা এটা বলব না যে, ‘উযায়র আল্লাহর পুত্র, মাসীহ (‘ঈসা (আঃ)) আল্লাহর পুত্র, ইয়াহূদী ‘আলিমগণ যে সমস্ত হালাল হারামের নতুন নতুন বিধান চালু করেছে আমরা তার আনুগত্য করব না। কেননা তারা সকলেই আমাদের মতই মানুষ। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১ম খন্ড, হাঃ ৭)

অত্র হাদীসের শিক্ষা:

(১) কুরআনের দু’ একটি আয়াত নাপাক ব্যক্তিও পাঠ করতে পারে।

(২) কুরআনের কিছু অংশ অমুসলিমদের নিকট প্রেরণ করা বৈধ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাফির রাষ্ট্রপ্রধানদের নিকট পত্র প্রেরণ ও ইসলামের প্রতি আহবান

৩৯২৭-[২] উক্ত রাবী [ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (পারস্য বা ইরানের শাসনকর্তার উদ্দেশে) ’আব্দুল্লাহ ইবনু হুযাফাহ্ আস্ সাহমী -এর মাধ্যমে কিস্রার নিকট লিখিত একটি পত্র পাঠিয়ে এ নির্দেশ দিলেন যে, তিনি যেন তা বাহরাইনের শাসনকর্তার হাতে দেন আর তিনি (বাহরাইনের শাসক) যেন তা কিসরার নিকট পৌঁছে দেন। অতঃপর তিনি পত্রটি কিসরার নিকট পৌঁছালেন। যখন সে (কিসরা) তা পাঠ করল তখন (রাগস্বরে) পত্রটি ছিঁড়ে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ফেলল। রাবী ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহঃ) বলেন, তার এ ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের ফলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের প্রতি বদ্দু’আ করলেন যে, আল্লাহ তা’আলা যেন তাদেরকে একেবারে খন্ড-বিখন্ড, টুকরা-টুকরা করে ফেলে। (বুখারী)[1]

بَابُ الْكِتَابِ إِلَى الْكُفَّارِ وَدُعَائِهِمْ إِلَى الْإِسْلَامِ

وَعَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ بِكِتَابِهِ إِلَى كِسْرَى مَعَ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ حُذَافَةَ السَّهْمِيِّ فَأَمَرَهُ أَنْ يَدْفَعَهُ إِلَى عَظِيمِ الْبَحْرَيْنِ فَدَفَعَهُ عَظِيمُ الْبَحْرَيْنِ إِلَى كِسْرَى فَلَمَّا قَرَأَ مَزَّقَهُ قَالَ ابْنُ الْمُسَيَّبِ: فَدَعَا عَلَيْهِمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُمَزَّقُوا كُلَّ مُمَزَّقٍ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

وعنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم بعث بكتابه الى كسرى مع عبد الله بن حذافة السهمي فامره ان يدفعه الى عظيم البحرين فدفعه عظيم البحرين الى كسرى فلما قرا مزقه قال ابن المسيب: فدعا عليهم رسول الله صلى الله عليه وسلم ان يمزقوا كل ممزق. رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (فَدَعَا عَلَيْهِمْ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ أَنْ يُمَزِّقُوْا كُلَّ مُمَزَّقٍ) রসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য বদ্দু‘আ করলেন এ বলে যে, তাদেরকে যেন ছিন্নভিন্ন করে দেয়া হয়।

তূরিবিশতী বলেনঃ এর অর্থ হলো তাদের মধ্যে যেন সকল প্রকার বিভেদ সৃষ্টি করে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি রসূলের চিঠি ছিঁড়ে ফেলেছিল তার নাম আব্রাবীয ইবনু হুরমুয। তাকে তার পুত্র আনূশিরওয়ান হত্যা করেছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাফির রাষ্ট্রপ্রধানদের নিকট পত্র প্রেরণ ও ইসলামের প্রতি আহবান

৩৯২৮-[৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিসরা, কায়সার, নাজাশী এবং অন্যান্য প্রত্যেক ক্ষমতাধর শাসনকর্তাদের নিকট পত্র পাঠিয়ে আল্লাহর (জীবন বিধানের) দিকে আহবান করেন। রাবী বলেন, যে নাজাশীর মৃত্যুতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাযার সালাত আদায় করেছিলেন, প্রকৃতপক্ষে তিনি এ নাজাশী নন। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْكِتَابِ إِلَى الْكُفَّارِ وَدُعَائِهِمْ إِلَى الْإِسْلَامِ

وَعَنْ أَنَسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَتَبَ إِلَى كِسْرَى وَإِلَى قَيْصَرَ وَإِلَى النَّجَاشِيِّ وَإِلَى كُلِّ جَبَّارٍ يَدْعُوهُمْ إِلَى اللَّهِ وَلَيْسَ بِالنَّجَاشِيِّ الَّذِي صَلَّى عَلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ

وعن انس: ان النبي صلى الله عليه وسلم كتب الى كسرى والى قيصر والى النجاشي والى كل جبار يدعوهم الى الله وليس بالنجاشي الذي صلى عليه النبي صلى الله عليه وسلم. رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (وَإِلَى النَّجَاشِىِّ) নাজাশীর নিকটও চিঠি পাঠান, তার নাম ছিল আসহামাহ্ হাবাশার বাদশাহ।

(وَإِلٰى كُلِّ جَبَّارٍ يَدْعُوهُمْ إِلَى اللّٰهِ) তিনি প্রত্যেক অহংকারী অমুসলিম শাসকের নিকট চিঠি লিখে আল্লাহর দীন ইসলাম কবুল করার দা‘ওয়াত দেন। তিনি অন্য আর যাদের চিঠি লিখেন তাদের মধ্যে মুকাওকিস যিনি মিসর ও ইস্কান্দারিয়ার বাদশাহ ছিলেন, মুনযির ইবনু সারী যিনি ‘উমানের (ওমানের) শাসনকর্তা, ইয়ামামার শাসনকর্তা, আল হারিস ইবনু আবূ শিম্র জারবা ও আবরূহের অধিবাসী এবং উকায়দির তাদের অন্তর্ভুক্ত।

(وَلَيْسَ بِالنَّجَاشِىِّ الَّذِىْ صَلّٰى عَلَيْهِ النَّبِىُّ ﷺ) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে নাজাশীর নিকট চিঠি লিখেন, তিনি সে নাজাশী নন যার সালাতুল জানাযা আদায় করেছিলেন। অতএব আসহামাহ্ এবং যার জানাযা তিনি আদায় করেছিলেন এ দু’ নাজাশী দু’জন পৃথক ব্যক্তি। তবে তারা উভয়েই ইসলাম গ্রহণ করেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

উল্লেখ্য যে, নাজাশী হাবাশার বাদশার উপাধি, তা কোনো ব্যক্তির নাম নয়। যেমন কিসরা পারস্যের বাদশার উপাধি, কায়সার রূমের বাদশার উপাধি, ফির্‘আওন ক্বিবত্বী বাদশাহর উপাধি। আলা ‘আযীয মিসরের বাদশাহর উপাধি। (শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৭৭৪; তুহফাতুল আহওয়াজী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭১৬)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাফির রাষ্ট্রপ্রধানদের নিকট পত্র প্রেরণ ও ইসলামের প্রতি আহবান

৩৯২৯-[৪] সুলায়মান ইবনু বুরায়দাহ্ তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোনো বৃহৎ অথবা ক্ষুদ্র সৈন্যবাহিনীর ওপর কাউকে আমীর (নেতা) নিয়োজিত করতেন, তখন তাকে বিশেষভাবে উপদেশ দিতেন, সে যেন আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে তাকওয়া অবলম্বন করে এবং সফরসঙ্গী মুসলিম সৈন্যদের সাথে সদাচরণ করে। অতঃপর বলতেন, আল্লাহর নাম নিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদে রওয়ানা হও এবং যারা আল্লাহর প্রতি কুফরী (বিদ্রোহ) করে, তাদের সাথে লড়াই কর, জিহাদে যাও। সাবধান! গনীমাতের মালে খিয়ানাত করো না। যখন তুমি কোনো মুশরিক শত্রুর সম্মুখীন হবে, তখন তাদেরকে তিনটি বিষয়ের প্রতি আহবান করবে। যদি তারা কোনো একটি মেনে নেয়, তুমি তখন তার গ্রহণযোগ্যতার স্বীকৃতি নিবে এবং তাদের ওপর আক্রমণ করা হতে বিরত থাকবে।

ক) প্রথমে তাদেরকে ইসলামের প্রতি আহবান করবে, যদি তারা তা গ্রহণ করে, তখন তুমি তার স্বীকৃতি নিবে এবং তাদের ওপর আক্রমণ করা হতে বিরত থাকবে। অতঃপর তাদের স্বদেশ (দারুল হার্ব) হতে মুহাজিরীনদের আবাসভূমিতে (দারুল ইসলামে) চলে আসতে বলবে এবং এটাও জানিয়ে দেবে যে, যদি তারা হিজরত করে, তখন তারাও মুহাজিরীনদের ন্যায় সুযোগ-সুবিধা পাবে, আর মুহাজিরীনদের ন্যায় দায়-দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পিত হবে। কিন্তু তারা যদি স্বদেশ ত্যাগ করতে অস্বীকার করে, তখন তাদেরকে জানিয়ে দিবে যে, তাদের সাথে সেরূপ আচরণই করা হবে, যেরূপ আচরণ অন্যান্য গ্রাম্য মুসলিমদের সাথে করা হবে। অর্থাৎ আল্লাহর সেই বিধান তাদের ওপর কার্যকর করা হবে যা সকল মুসলিমের ওপর কার্যকর করা হয়ে থাকে। কিন্তু গনীমাতের মাল ও ফাই (বিনা যুদ্ধলব্ধ মাল) হতে তারা সাধারণত কোনো অংশ পাবে না। তবে এ ধন-সম্পদের অংশীদার তারা তখনই পাবে, যখন তারা মুসলিমদের সাথে সম্মিলিতভাবে জিহাদে শরীক হবে।

খ) আর যদি তারা তাতে (ইসলাম কবুল করতে) অস্বীকার করে, তখন তাদের ওপর জিয্ইয়াহ্ (কর) ধার্য কর। যদি তারা তা মেনে নেয়, তখন তুমিও তা গ্রহণ কর এবং তাদের ওপর আক্রমণ করা হতে বিরত থাক।

গ) তবে তারা যদি তাতেও অস্বীকার করে, তখন আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে তাদের সাথে যুদ্ধ কর। আর যদি তুমি কোনো দুর্গবাসীদের অবরোধ কর এবং তারা তোমার সাথে আল্লাহ ও তার রসূলের দায়িত্বের উপর কোনো চুক্তিবদ্ধ হতে চায়, তখন তুমি তাদের সাথে আল্লাহ ও তার রসূলের দায়িত্বে কোনো চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ো না; বরং তুমি ও তোমার সঙ্গীদের নিজ দায়িত্বে চুক্তিবদ্ধ হতে পারো। কেননা কোনো কারণে যদি উক্ত চুক্তি ভঙ্গ করতে বাধ্য হও, তখন আল্লাহ ও তার রসূলের নামে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করার চেয়ে তোমার ও তোমার সঙ্গীদের কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করা অনেক সহজসাধ্য। আর যদি তুমি কোনো দূর্গ অবরোধ কর এবং তারা তোমার নিকট আল্লাহর বিধানানুসারে ফায়সালার শর্তে অবরোধ তুলে নিতে আবেদন জানায়, তখন আল্লাহর বিধানের শর্তে তাদেরকে অব্যাহতি দিয়ো না; বরং তোমার সঙ্গীদের দায়িত্বে অব্যাহতি দিবে। কেননা তুমি তো জানো না, আল্লাহর বিধান (ফায়সালা) সঠিকভাবে তাদের ব্যাপারে প্রয়োগ করতে পারবে কিনা। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْكِتَابِ إِلَى الْكُفَّارِ وَدُعَائِهِمْ إِلَى الْإِسْلَامِ

وَعَن سليمانَ بنِ بُريدةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَمَّرَ أَمِيرًا عَلَى جَيْشٍ أَوْ سَرِيَّةٍ أَوْصَاهُ فِي خَاصَّتِهِ بِتَقْوَى اللَّهِ وَمَنْ مَعَهُ مِنَ الْمُسْلِمِينَ خَيْرًا ثُمَّ قَالَ: اغْزُوَا بسمِ اللَّهِ قَاتَلُوا مَنْ كَفَرَ بِاللَّهِ اغْزُوَا فَلَا تَغُلُّوا وَلَا تَغْدِرُوا وَلَا تَمْثُلُوا وَلَا تَقْتُلُوا وَلِيدًا وَإِذَا لَقِيتَ عَدُوَّكَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ فَادْعُهُمْ إِلَى ثَلَاثِ خِصَالٍ أَوْ خِلَالٍ فَأَيَّتَهُنَّ مَا أَجَابُوكَ فَاقْبَلْ مِنْهُمْ وَكُفَّ عَنْهُمْ ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى الْإِسْلَامِ فَإِنْ أَجَابُوكَ فَاقْبَلْ مِنْهُمْ وَكُفَّ عَنْهُمْ ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى التَّحَوُّلِ مِنْ دَارِهِمْ إِلَى دَارِ الْمُهَاجِرِينَ وَأَخْبِرْهُمْ أَنَّهُمْ إِنْ فَعَلُوا ذَلِكَ فَلَهُمْ مَا لِلْمُهَاجِرِينَ وَعَلَيْهِمْ مَا عَلَى الْمُهَاجِرِينَ فَإِنْ أَبَوْا أَنْ يَتَحَوَّلُوا مِنْهَا فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّهُمْ يَكُونُونَ كَأَعْرَابِ الْمُسْلِمِينَ يُجْرَى عَلَيْهِمْ حُكْمُ الله الَّذِي يُجْرَى عَلَيْهِمْ حُكْمُ اللَّهِ الَّذِي يُجْرَى عَلَى الْمُؤْمِنِينَ وَلَا يَكُونُ لَهُمْ فِي الْغَنِيمَةِ وَالْفَيْءِ شَيْءٌ إِلَّا أَنْ يُجَاهِدُوا مَعَ الْمُسْلِمِينَ فَإِنْ هم أَبَوا فعلهم الْجِزْيَةَ فَإِنْ هُمْ أَجَابُوكَ فَاقْبَلْ مِنْهُمْ وَكُفَّ عَنْهُمْ فَإِنْ هُمْ أَبَوْا فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَقَاتِلْهُمْ وَإِذَا حَاصَرْتَ أَهْلَ حِصْنٍ فَأَرَادُوكَ أَنْ تَجْعَلَ لَهُمْ ذِمَّةَ اللَّهِ وَذِمَّةَ نَبِيِّهِ فَلَا تَجْعَلْ لَهُمْ ذِمَّةَ اللَّهِ وَلَا ذِمَّةَ نَبِيِّهِ وَلَكِنِ اجْعَلْ لَهُمْ ذِمَّتَكَ وَذِمَّةَ أَصْحَابِكَ فَإِنَّكُمْ أَنْ تُخْفِرُوا ذِمَمَكُمْ وَذِمَمَ أَصْحَابِكُمْ أَهْوَنُ مِنْ أَنْ تُخْفِرُوا ذِمَّةَ اللَّهِ وَذِمَّةَ رَسُولِهِ وَإِنْ حَاصَرْتَ أَهْلَ حِصْنٍ فَأَرَادُوكَ أَنْ تُنْزِلَهُمْ عَلَى حُكْمِ اللَّهِ فَلَا تُنْزِلْهُمْ عَلَى حُكْمِ اللَّهِ وَلَكِنْ أَنْزِلْهُمْ عَلَى حُكْمِكَ فَإِنَّكَ لَا تَدْرِي: أَتُصِيبُ حُكْمَ اللَّهِ فِيهِمْ أَمْ لَا؟ . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

وعن سليمان بن بريدة عن ابيه قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا امر اميرا على جيش او سرية اوصاه في خاصته بتقوى الله ومن معه من المسلمين خيرا ثم قال: اغزوا بسم الله قاتلوا من كفر بالله اغزوا فلا تغلوا ولا تغدروا ولا تمثلوا ولا تقتلوا وليدا واذا لقيت عدوك من المشركين فادعهم الى ثلاث خصال او خلال فايتهن ما اجابوك فاقبل منهم وكف عنهم ثم ادعهم الى الاسلام فان اجابوك فاقبل منهم وكف عنهم ثم ادعهم الى التحول من دارهم الى دار المهاجرين واخبرهم انهم ان فعلوا ذلك فلهم ما للمهاجرين وعليهم ما على المهاجرين فان ابوا ان يتحولوا منها فاخبرهم انهم يكونون كاعراب المسلمين يجرى عليهم حكم الله الذي يجرى عليهم حكم الله الذي يجرى على المومنين ولا يكون لهم في الغنيمة والفيء شيء الا ان يجاهدوا مع المسلمين فان هم ابوا فعلهم الجزية فان هم اجابوك فاقبل منهم وكف عنهم فان هم ابوا فاستعن بالله وقاتلهم واذا حاصرت اهل حصن فارادوك ان تجعل لهم ذمة الله وذمة نبيه فلا تجعل لهم ذمة الله ولا ذمة نبيه ولكن اجعل لهم ذمتك وذمة اصحابك فانكم ان تخفروا ذممكم وذمم اصحابكم اهون من ان تخفروا ذمة الله وذمة رسوله وان حاصرت اهل حصن فارادوك ان تنزلهم على حكم الله فلا تنزلهم على حكم الله ولكن انزلهم على حكمك فانك لا تدري: اتصيب حكم الله فيهم ام لا؟ . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (اُغْزُوْا فَلَا تَغُلُّوْا) তোমরা যুদ্ধ কর তবে খিয়ানাত করো না। অর্থাৎ গনীমাতের মাল সংরক্ষণ করবে। আমীরের অনুমতি ব্যতীত তা থেকে গ্রহণ করবে না।

(وَلَا تَغْدِرُوْا) বিশ্বাসঘাতকতা করো না। অর্থাৎ- ওয়া‘দা দেয়ার পর তা ভঙ্গ করো না। এও বলা হয়ে থাকে যে, (لَا تَغْدِرُوْا) দ্বারা উদ্দেশ্য ইসলামের দিকে আহবান করার পূর্বে তাদের সাথে যুদ্ধ করবে না।

(وَلَا تَمْثُلُوْا) অঙ্গহানী করো না। ফায়িক গ্রন্থে (لَا تَمْثُلُوْا) এর অর্থ করা হয়েছে, তোমরা তাদের চেহারায় কালিমা লেপন করবে না এবং নাক কাটবে না।

(وَلَا تَقْتُلُوْا وَلِيْدًا) ছোট শিশু হত্যা করো না। ইবনুল হুমাম বলেনঃ পাগল এবং শিশু যদি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে তাহলে তাদের হত্যা করা যাবে। অনুরূপভাবে রাজপুত্র এবং নির্বোধ বাদশাহও হত্যা করা যাবে। কেননা এতে তাদের শক্তি নির্মূল হবে।

(إِنْ فَعَلُوْا ذٰلِكَ فَلَهُمْ مَا لِلْمُهَاجِرِيْنَ وَعَلَيْهِمْ مَا عَلَى الْمُهَاجِرِيْنَ) তারা যদি তা (হিজরত) করে তাহলে তাদের তাই প্রাপ্য যা মুহাজিরগণের প্রাপ্য এবং তাদের ওপর সে দায়িত্ব যে দায়িত্ব মুহাজিরদের। অর্থাৎ- মুশরিকরা যদি ইসলাম গ্রহণ করার পর কাফিরদের এলাকা ছেড়ে মুসলিম দেশে হিজরত করে চলে আসে তাহলে তারা মুহাজিরদের মতই সাওয়াব পাবে এবং ফাই তথা গনীমাতের মালে মুহাজিরদের মতই প্রাপ্য থাকবে। আর এ প্রাপ্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় অব্যাহত ছিল। মুহাজিরগণ যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশে জিহাদের জন্য বেড়িয়ে পড়ত তখন থেকেই তিনি তাদের যাবতীয় ব্যয় বহন করতেন। তাদের সংখ্যা শত্রুদের তুলনায় যথেষ্ট হোক বা না হোক। আমীরের নির্দেশ মাত্র তাদের জিহাদে যাওয়া ওয়াজিব ছিল। কিন্তু যারা মুহাজির ছিলেন না তাদের ক্ষেত্রে তখনই যুদ্ধে যাওয়া ওয়াজিব হত যখন শত্রুর মুকাবিলা করার মতো যথেষ্ট সংখ্যক লোক না থাকত। وَعَلَيْهِمْ দ্বারা উদ্দেশ্য এটাই।

(وَلٰكِنْ أَنْزِلْهُمْ عَلٰى حُكْمِكَ فَإِنَّكَ لَا تَدْرِىْ : أَتُصِيْبُ حُكْمَ اللّٰهِ فِيْهِمْ أَمْ لَا؟) তুমি তাদেরকে তোমার ফায়সালা অনুযায়ী আত্মসমর্পণ করার সুযোগ দিবে। কেননা তোমার জানা নেই যে, তাদের ব্যাপারে তোমার ফায়সালা আল্লাহর ফায়সালা অনুযায়ী হবে কিনা? ইমাম নববী বলেন, আল্লাহর ফায়াসালা অনুযায়ী আত্মসমর্পণের সুযোগ না দেয়ার নিষেধাজ্ঞা হারামের জন্য নয়। বরং এ নিষেধাজ্ঞা তানযীহের জন্য তথা এরূপ করা মাকরূহ। যারা বলেন যে, সকল মুজতাহিদের সিদ্ধান্ত সঠিক নয় বরং মতভেদের ক্ষেত্রে একজন মুজতাহিদদের সিদ্ধান্ত সঠিক অত্র হাদীস তাদের পক্ষে দলীল। (মিরকাতুল মাফাতীহ; শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, ১৭৩১; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬০৯; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৬১৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাফির রাষ্ট্রপ্রধানদের নিকট পত্র প্রেরণ ও ইসলামের প্রতি আহবান

৩৯৩০-[৫] ’আব্দুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো এক অভিযানে শত্রুর মুকাবিলায় অপেক্ষা করতে লাগলেন। অতঃপর সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে গেলে, তখন তিনি লোকেদের উদ্দেশে দাঁড়িয়ে বললেন, হে লোক সকল! তোমরা শত্রুর মুকাবিলার আকাঙ্ক্ষা করো না; বরং আল্লাহর নিকট নিরাপত্তা লাভের প্রার্থনা কর। তবে শত্রুর মুকাবিলা সংঘটিত হয়ে গেলে ধৈর্যধারণ করতে থাক। আর জেনে রাখ! তরবারির ছায়াতলেই জান্নাত অবস্থিত। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ দু’আ করলেন, হে আল্লাহ! তুমি কিতাব (আল কুরআন) অবতরণকারী, মেঘমালা পরিচালনাকারী এবং শত্রুবাহিনী দমনকারী! তুমি তাদের দমন কর এবং তাদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য (জয়যুক্ত) কর। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْكِتَابِ إِلَى الْكُفَّارِ وَدُعَائِهِمْ إِلَى الْإِسْلَامِ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي أوفى: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَعْضِ أَيَّامِهِ الَّتِي لَقِيَ فِيهَا الْعَدُوَّ انْتَظَرَ حَتَّى مَالَتِ الشَّمْسُ ثُمَّ قَامَ فِي النَّاسِ فَقَالَ: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ لَا تَتَمَنَّوْا لِقَاءَ الْعَدُوِّ وَاسْأَلُوا اللَّهَ الْعَافِيَةَ فَإِذَا لَقِيتُمْ فَاصْبِرُوا وَاعْلَمُوا أَنَّ الْجَنَّةَ تَحْتَ ظِلَالِ السُّيُوفِ» ثُمَّ قَالَ: «اللَّهُمَّ مُنْزِلَ الْكِتَابِ وَمُجْرِيَ السَّحَابِ وهازم الْأَحْزَاب واهزمهم وَانْصُرْنَا عَلَيْهِم»

وعن عبد الله بن ابي اوفى: ان رسول الله صلى الله عليه وسلم في بعض ايامه التي لقي فيها العدو انتظر حتى مالت الشمس ثم قام في الناس فقال: «يا ايها الناس لا تتمنوا لقاء العدو واسالوا الله العافية فاذا لقيتم فاصبروا واعلموا ان الجنة تحت ظلال السيوف» ثم قال: «اللهم منزل الكتاب ومجري السحاب وهازم الاحزاب واهزمهم وانصرنا عليهم»

ব্যাখ্যা: (يَا أَيُّهَا النَّاسُ! لَا تَتَمَنَّوْا لِقَاءَ الْعَدُوِّ وَاسْأَلُوا اللّٰهَ الْعَافِيَةَ) হে লোক সকল! তোমরা শত্রুর সাক্ষাতের আকাঙ্ক্ষা করো না বরং আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চাও, অর্থাৎ শত্রুর অনিষ্ট হতে আল্লাহর নিকট নিরাপত্তা কামনা কর।

(فَإِذَا لَقِيْتُمْ فَاصْبِرُوْا) যদি তাদের সাক্ষাৎ ঘটেই যায় তাহলে তোমরা ধৈর্য ধারণ কর। অর্থাৎ যদি শত্রুর মুকাবিলা করতেই হয় তাহলে যে বিপদ ও অনিষ্টের মুখোমুখি তোমাদের হতে হবে তাতে তোমরা অধৈর্য হবে না, বরং ধৈর্য সহকারে তাদের মুকাবিলা করবে। ইমাম নববী বলেনঃ শত্রুর সাক্ষাতের আকাঙ্ক্ষা করতে নিষেধ করার কারণ এই যে, এতে অহংকার ও নিজের ওপর নির্ভরতা এবং শক্তি সামর্থ্যের উপর দৃঢ়তা প্রকাশ পায়, যার কোনটিই বৈধ নয়।

(أَنَّ الْجَنَّةَ تَحْتَ ظِلَالِ السُّيُوْفِ) জান্নাত তরবারির ছায়াতলে অর্থাৎ- মুজাহিদ ব্যক্তির ওপরে শত্রুর তরবারি উত্তোলন তার জান্নাতে যাওয়ার কারণ। নিহায়াহ্-এর গ্রন্থকার বলেন, এর দ্বারা যুদ্ধে শত্রুর তরবারির আঘাতের নিকটবর্তী হওয়ার ইঙ্গিত করা হয়েছে যাতে জিহাদের ময়দানে শত্রুর তরবারি তার উপরে উঠে এবং তার ছায়া তার উপর পতিত হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ; শারহে মুসলিম ১২ খন্ড, হাঃ ১৭৪২; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬২৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাফির রাষ্ট্রপ্রধানদের নিকট পত্র প্রেরণ ও ইসলামের প্রতি আহবান

৩৯৩১-[৬] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আমাদেরকে নিয়ে কোনো গোত্রের বিরুদ্ধে জিহাদে যেতেন, তখন ভোর অবধি আক্রমণ করতেন না। আর ভোর হলে আযানের আওয়াজের অপেক্ষায় থাকতেন, আর যদি আযান শুনতে পেতেন, তখন আক্রমণ করা হতে বিরত থাকতেন। আর আযান না শুনলে আক্রমণ করতেন। রাবী বলেন, আমরা খায়বারের যুদ্ধের জন্য বের হলাম এবং রাতের বেলায় তথায় গিয়ে পৌঁছলাম। যখন ভোর হলো এবং আযান শোনা গেল না তখন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওয়ার হলেন এবং আমি ও ত্বলহা এর পিছনে সওয়ার হলাম। আমার পায়ের সাথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পা মুবারক স্পর্শ করছিল।

(আনাস বলেন) এমন সময় খায়বারের অধিবাসীরা (ক্ষেত-খামারে কাজের উদ্দেশে) কাসেত্ম, কোদাল ও ঝুড়ি ইত্যাদি নিয়ে এগিয়ে এলো এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেয়ে উচ্চস্বরে বলে উঠল, এই যে মুহাম্মাদ! আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ ও তাঁর পঞ্চবাহিনী (সম্পূর্ণ দল) নিয়ে এসে পড়েছে। অতঃপর দৌড়িয়ে দুর্গের ভিতরে আশ্রয় গ্রহণ করল। তিনি (আনাস ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাদের এরূপ অবস্থা প্রত্যক্ষ করলেন, তখন বলে উঠলেন- আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, খায়বারের ধ্বংস নিশ্চিত। এভাবে আমরা যখন কোনো জাতির আঙিনায় অবতীর্ণ হই, তখন যেই জাতিকে পূর্বাহ্নে সতর্ক করা হয়েছে তাদের সকাল দুর্ভাগ্যজনকভাবে খারাপ হয়ে থাকে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْكِتَابِ إِلَى الْكُفَّارِ وَدُعَائِهِمْ إِلَى الْإِسْلَامِ

وَعَنْ أَنَسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا غَزَا بِنَا قَوْمًا لَمْ يَكُنْ يَغْزُو بِنَا حَتَّى يُصْبِحَ وَيَنْظُرَ إِلَيْهِمْ فَإِنْ سَمِعَ أَذَانًا كَفَّ عَنْهُمْ وَإِنْ لَمْ يَسْمَعْ أَذَانًا أَغَارَ عَلَيْهِمْ قَالَ: فَخَرَجْنَا إِلَى خَيْبَرَ فَانْتَهَيْنَا إِلَيْهِمْ لَيْلًا فَلَمَّا أَصْبَحَ وَلَمْ يسمَعْ أذاناً رِكبَ ورَكِبْتُ خلفَ أبي طلحةَ وَإِنَّ قَدَمِي لَتَمَسُّ قَدِمَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: فَخَرَجُوا إِلَيْنَا بَمَكَاتِلِهِمْ ومساحيهم فَلَمَّا رأى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالُوا: مُحَمَّدٌ واللَّهِ محمّدٌ والخميسُ فلَجؤوا إِلَى الْحِصْنِ فَلَمَّا رَآهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ خَرِبَتْ خَيْبَرُ إِنَّا إِذَا نَزَلْنَا بِسَاحَةِ قومٍ فساءَ صباحُ المُنْذَرينَ»

وعن انس: ان النبي صلى الله عليه وسلم كان اذا غزا بنا قوما لم يكن يغزو بنا حتى يصبح وينظر اليهم فان سمع اذانا كف عنهم وان لم يسمع اذانا اغار عليهم قال: فخرجنا الى خيبر فانتهينا اليهم ليلا فلما اصبح ولم يسمع اذانا ركب وركبت خلف ابي طلحة وان قدمي لتمس قدم نبي الله صلى الله عليه وسلم قال: فخرجوا الينا بمكاتلهم ومساحيهم فلما راى النبي صلى الله عليه وسلم قالوا: محمد والله محمد والخميس فلجووا الى الحصن فلما راهم رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «الله اكبر الله اكبر خربت خيبر انا اذا نزلنا بساحة قوم فساء صباح المنذرين»

ব্যাখ্যা: (فَإِنْ سَمِعَ أَذَانًا كَفَّ عَنْهُمْ) যদি আযান শুনতে পেতেন তাহলে তাদের থেকে বিরত থাকতেন, অর্থাৎ সালাতের প্রতি আহবান শুনতে পেলে তিনি তাদের ওপর অক্রমণ করা এবং মাল নেয়া থেকে বিরত থাকতেন।

(وَإِنْ لَمْ يَسْمَعْ أَذَانًا أَغَارَ عَلَيْهِمْ) আর আযান না শুনতে পেলে তাদের ওপর আক্রমণ করতেন।

কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আক্রমণ করার ক্ষেত্রে নিশ্চিত হতেন এবং সতর্কতা অলম্বন করতেন এজন্য যে, ঐ জনপদে কোনো মু’মিন থাকতে পারে। আর হঠাৎ করে কোনো জনপদে আক্রমণ করলে মু’মিনদের অজান্তে তাদের ওপর আক্রমণ হতে পারে। ইমাম খত্ত্বাবী বলেনঃ আযান দীন ইসলামের একটি প্রতীক যা পরিত্যাগ করা অবৈধ। কোনো জনপদের লোকজন আযান পরিত্যাগের ব্যাপারে একমত হলে মুসলিম শাসকের জন্য বৈধ তাদের ওপর আক্রমণ করা।

(إِنَّا إِذَا نَزَلْنَا بِسَاحَةِ قَوْمٍ فَسَآءَ صَبَاحُ المُنْذَرِيْنَ) আমরা যখন কোনো জনপদের আঙ্গিনায় অবতরণ করি তখন ঐ জনপদের কাফির সম্প্রদায়ের সকাল খারাপই হয়। অর্থাৎ- মুসলিম সম্প্রদায় অথবা নাবীগণ যখন কোনো জনপদে আগমন করে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তখন ঐ জনপদের লোকেদের অকল্যাণ হয়। কেননা সতর্ক করা সত্ত্বেও ইসলাম গ্রহণ না করার ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে হত্যা ও আক্রমণের শাস্তি তাদের ওপর এসে উপস্থিত হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাফির রাষ্ট্রপ্রধানদের নিকট পত্র প্রেরণ ও ইসলামের প্রতি আহবান

৩৯৩২-[৭] নু’মান ইবনু মুকররিন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি অসংখ্য জিহাদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে শরীক ছিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যদি দিনের প্রথমভাগে আক্রমণ না করতেন, তবে (দুপুর গড়িয়ে) মৃদু বাতাস প্রবাহিত হওয়া ও সালাতের ওয়াক্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করে যুদ্ধ শুরু করতেন। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْكِتَابِ إِلَى الْكُفَّارِ وَدُعَائِهِمْ إِلَى الْإِسْلَامِ

وَعَن النُّعْمَانِ بْنِ مُقَرِّنٍ قَالَ: شَهِدْتُ الْقِتَالَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَانَ إِذَا لَمْ يُقَاتِلْ أَوَّلَ النَّهَارِ انْتَظَرَ حَتَّى تهب الْأَرْوَاح وتحضر الصَّلَاة. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن النعمان بن مقرن قال: شهدت القتال مع رسول الله صلى الله عليه وسلم فكان اذا لم يقاتل اول النهار انتظر حتى تهب الارواح وتحضر الصلاة. رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (اِنْتَظَرَ حَتّٰى تَهَبُّ الْأَرْوَاحُ وَتَحْضُرُ الصَّلَاةُ) ‘‘তিনি অপেক্ষা করতেন বায়ু প্রবাহের এবং সালাতের সময়ের।’’ অর্থাৎ- তিনি দিনের প্রথম ভাগে যুদ্ধ শুরু না করে থাকলে দুপুরে যুদ্ধ শুরু না করে সূর্য ঢলে গিয়ে সালাতের সময় হলে এবং বায়ু প্রবাহিত হলে তখন যুদ্ধ শুরু করতেন। কারণ কাফিরগণ সূর্যের ‘ইবাদাত করে থাকে। যখন সূর্য ঢলে যায় এবং বায়ু প্রবাহিত হয় তখন সূর্যের তেজ অনেকটা কমে যায় এবং তা অস্তমিত হওয়ার দিকে ঝুকে পড়ে। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলে গিয়ে সালাতের সময় হওয়ার অপেক্ষা করতেন। যেহেতু এ সময়টা আল্লাহর ‘ইবাদাতকারীদের সময় এবং সাজদাকারীর দু‘আ কবূলের সময়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৭ পর্যন্ত, সর্বমোট ৭ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে