পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৩৮৫৪-[৬৭] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুনিয়ার মু’মিনগণ তিন ভাগে বিভক্ত- (১) যারা আল্লাহ ও তার রসূলের ওপর দৃঢ়চিত্তে ঈমান আনে, অতঃপর কোনো সন্দেহ-সংশয় পোষণ করে না এবং নিজেদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে। (২) যাদের হাত থেকে প্রতিটি মুসলিমের স্বীয় জান-মালের নিরাপত্তা লাভ করে। (৩) দুনিয়ার মোহ ও লালসা যার অন্তরে জাগ্রত হয়, অতঃপর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের প্রত্যাশায় তা পরিহার করে। (আহমাদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيُّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الْمُؤْمِنُونَ فِي الدُّنْيَا عَلَى ثَلَاثَةِ أَجْزَاءٍ: الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِي يأمنه النَّاس على النَّاسُ عَلَى أَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ ثُمَّ الَّذِي إِذَا أَشْرَفَ عَلَى طَمَعٍ تَرَكَهُ لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ . رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে মু’মিনদেরকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে এবং প্রত্যেক প্রকারের মু’মিনদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন গুণাবলী আলোচনা করা হয়েছে। তাদের প্রথম সারির মু’মিন হলো যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনার পাশাপাশি নিজেদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে।
(اَلْمُؤْمِنُونَ فِى الدُّنْيَا عَلٰى ثَلَاثَةِ أَجْزَاءٍ) এ বাক্যের ব্যাখ্যায় ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ أجزاء (আজ্যা) বলা হয় নির্দিষ্ট কোনো বস্তুর বিভিন্ন অংশ বা ভাগকে। তবে বন্ধুত্ব ও সহানুভূতি বহিঃপ্রকাশের দিক থেকে সকল মু’মিন একটি মাত্র আত্মার মতো। যেন সকলে মিলে একটি সিসেঢালা প্রাচীর।
(الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِاللّٰهِ وَرَسُوْلِه ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوْا) তথা ‘‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান এনেছে এবং কোনরূপ সন্দেহ পোষণ করেনি’’ এ বাক্যে ‘‘কোনো সন্দেহ পোষণ করেনি’’ এর অর্থ হলো, তারা তাদের ঈমান অনুসারে ‘আমল করেছে এবং আল্লাহ ও রসূলের কোনো আদেশ বা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চলেনি। কেননা যারা আল্লাহকে দেয়া প্রতিশ্রুতি যথাযথভাবে পূর্ণ করে তারাই প্রকৃত মু’মিনদের অন্তর্ভুক্ত। ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ ‘‘কোনো সন্দেহ পোষণ করেনি’’ এ কথার ব্যাখ্যা হলো নিম্নোক্ত কুরআনের আয়াত : অর্থাৎ- ‘‘নিশ্চয় যারা বলে আমাদের রব্ হলেন আল্লাহ, অতঃপর তারা এ কথার উপর অটল অবিচল থাকে....’’- (সূরা ফুস্সিলাত ৪১ : ৩০)।
(الَّذِىْ إِذَا أَشْرَفَ عَلٰى طَمَعٍ تَرَكَه لِلّٰهِ عَزَّ وَجَلَّ) এখানে ত্বমা‘ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কুপ্রবৃত্তি- যেদিকে সাধারণত মানুষ অধিকহারে ধাবিত হয়। আর এই কুপ্রবৃত্তি তাকে হাকের অনুসরণ থেকে সদা বিরত রাখার জন্য প্রাণপণ অপচেষ্টা চালায়।
মহান আল্লাহ তা‘আলা এ মর্মে উল্লেখ করেন : অর্থাৎ- ‘‘আর যে ব্যক্তি তার রবের সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করে এবং কুপ্রবৃত্তি হতে নিজেকে দূরে রাখে, জান্নাতই হলো তার বাসস্থান।’’ (সূরা আন্ না-যি‘আ-ত ৭৯ : ৪০-৪১)
উল্লেখিত হাদীসে ত্বমা‘ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো পার্থিব সম্মান ও সম্পদের দিকে ঝুঁকে পড়া এবং আল্লাহর কথা ভুলে যাওয়া। মূলত এসব বৈধ হলেও তা থেকে দূরে থাকাই পূর্ণ মু’মিনের পরিচয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)