পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে সব অপরাধের ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) নেই
৩৫১০-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পশু-প্রাণীর আঘাতের কোনো ক্ষতিপূরণ নেই। খনিতে ক্ষতিপূরণ নেই এবং কূপে (পড়ে গিয়ে মারা গেলেও) কোনো ক্ষতিপূরণ নেই। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يُضْمَنُ مِنَ الْجِنَايَاتِ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْعَجْمَاءُ جَرْحُهَا جُبَارٌ وَالْمَعْدِنُ جُبَارٌ وَالْبِئْرُ جُبَارٌ»
ব্যাখ্যা: الْعَجْمَاءُ শব্দটি اعجم-এর স্ত্রীলিঙ্গ। এর অর্থ চতুস্পদ প্রাণী। নির্বাক হওয়ার কারণে একে عجماء বলে অভিহিত করা হয়। আর যে সমস্ত প্রাণী কথা বলতে পারে না তাকে اعجمى বলা হয়। সহীহ মুসলিমের ভাষ্যকার বলেন- মানুষ ব্যতিরেকে সব প্রাণীই হলো عجماء।
আর جُبَارٌ এর অর্থ নিস্ফল বা অকেজো যার কোনো মূল্য নেই। ইমাম তিরমিযী বলেন, الْعَجْمَاءُ বলা হয় এমন প্রাণীকে যা মালিকের নিকট থেকে ছুটে পালিয়ে যায়। আর جُبَارٌ বলা হয় এমন মূল্যহীন বস্তু যার জরিমানা দিতে হয় না। (ফাতহুল বারী ১২ খন্ড, হাঃ ৬৯১২)
* খত্ত্বাবী বলেনঃ চতুস্পদ জন্তুর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত জিনিসের ক্ষতিপূরণ কারো ওপর বর্তায় না যখন তার সাথে কোনো চালক বা সওয়ারী না থাকে।
* ইমাম নববী বলেনঃ ‘আলিমগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, দিবাভাগে চতুস্পদ জন্তুর অপরাধের কারণে কোনো ক্ষতিপূরণ নেই। তবে যদি তার সাথে কোনো আরোহী বা কোনো নিয়ন্ত্রণকারী থাকে তবে ‘আলিমগণের সর্বসম্মতিক্রমে তার ওপর ক্ষতির দায় বর্তাবে। আর যখন রাত্রিকালে এরূপ কোনো ক্ষতি সাধন করবে তখন তার মালিক ক্ষতির জন্য দায়ী হবে।
ইমাম শাফি‘ঈ ও তাঁর সাথীবর্গ বলেন- যদি মালিক জন্তুকে সংরক্ষণের ব্যাপারে অবহেলা বা শিথিলতা অবলম্বন করে তাহলে তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অন্যথায় দিতে হবে না। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৭৪৫৮১)
সহীহ মুসলিম-এর ভাষ্যকার বলেন- জন্তুর মালিকের অবহেলা ছাড়া যখন প্রাণীটি দিনে বা রাতে কোনো অন্যায় করে বসে অথবা তার সাথে কোনো আরোহী বা নিয়ন্ত্রক না থাকে তাহলে তার ক্ষতির দণ্ড মাফ। তবে যখন তার সাথে চালক থাকে বা আরোহী যে নিয়ন্ত্রণ করে আর জন্তুটি হাত, পা বা মুখ অথবা কোনোভাবে ক্ষতি করে দিলে মালিককে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। চাই সে মালিক হোক বা ভাড়ায় গ্রহণকারী হোক অথবা ধারকারী হোক, ছিনতাইকারী ও আমানত গ্রহণকারী হোক ও প্রতিনিধি হোক।
(جرح العجماء) এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ধ্বংস সাধন করা বা নষ্ট করা। এটা আঘাত করার মাধ্যমে হতে পারে অথবা ক্ষতি করা হতে পারে। এই ক্ষতিটা জানের অথবা মালের হতে পারে। শাফি‘ঈ মতাবলম্বীগণ বলেন- যদি সে ক্ষতিটা إفسادً (তথা ক্ষতিসাধন করা) হিসেবে গণ্য করা হয় তবে সেক্ষেত্রে মালিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে। কেননা তার দায়িত্ব হলো সেটাকে বেঁধে রাখা।
ইমাম মালিক-এর মতে জন্তু রাত্রে অপরাধ করলে তার দায় বর্তাবে মালিকের ওপর। (শারহে মুসলিম ১১ খন্ড হাঃ ১৭১০)
بِئْرٌ শব্দটি একবচন, বহুবচন হলো اَبْؤُرٌ ও أَبَارٌ। এখানে بِئْرٌ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো প্রাচীন কোনো প্রাকৃতিক কূপ, যার মালিক অজ্ঞাত থাকে আর তা মরুভূমিতে থাকে। এতে কোনো মানুষ বা প্রাণী পড়ে গেলে এর জন্য কেউ দায়ী হবে না। অনুরূপভাবে যদি কেউ তার অধীনস্ত জায়গায় অথবা মরুপ্রান্তরে কূপ খনন করে আর তাতে মানুষ বা অন্য কিছু পড়ে ও ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে এতে কোনো ক্ষতিপূরণ নেই। যখন এক্ষেত্রে ক্ষতি সাধন করার বা বিপদের সম্মুখীন করার উদ্দেশ্য না থাকে।
তেমনিভাবে কোনো লোক যদি কাউকে কূপ খননের জন্য মজুর হিসেবে গ্রহণ করে আর তার উপর কূপ ভেঙ্গে পড়ে তাহলে মালিককে এর দায় বহন করতে হবে না। আর যে ব্যক্তি মুসলিমের রাস্তায় অনুরূপভাবে বিনা অনুমতিতে অন্যের জায়গায় কূপ খনন করে এবং তাতে মানুষ ধ্বংস হয়ে যায় তবে এর দায় খননকারীর দিয়াত প্রদানকারীর ওপর ওয়াজিব এবং এর কাফফারা তার মালের মধ্যে রয়েছে। আর যদি মানুষ ব্যতীত অন্য কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে এর দায়পূরণ খননকারীর মাল থেকে আদায় করা ওয়াজিব। (ফাতহুল বারী ১২ খন্ড, হাঃ ৬৯১২)
উপরোক্ত মতের প্রতি সহীহ মুসলিম-এর ভাষ্যকারও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সমর্থন করেন।
(الْمَعْدِنُ جُبَارٌ)-এর অর্থ হলো যদি কেউ তার জায়গায় কোনো খনি খনন করে অথবা প্রান্তরে খনন করে আর কোনো পথিক তাতে পড়ে মারা যায় অথবা সে কোনো মজুর গ্রহণ করে যে খনিতে কাজ করে অতঃপর তার উপর খনি ভেঙ্গে পড়ায় মৃত্যুবরণ করলে মালিককে এর মূল্য দিতে হবে না। যেমন কূপের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ লাগে না। (শারহে মুসলিম ১১ খন্ড, হাঃ ১৭১০)
* ফাতহুল বারীর ভাষ্যকার বলেনঃ সব ধরনের মজুর এই হুকুমের মধ্যে শামিল। যেমন কেউ যদি খেজুর গাছে খেজুর নামানোর জন্য কোনো শ্রমিককে গাছে উঠায়। আর সে গাছ থেকে পড়ে মারা গেলে তার রক্তপণ বৃথা যাবে। অর্থাৎ মালিককে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। (ফাতহুল বারী ১২ খন্ড, হাঃ ৬৯১২)
ركاز তথা গুপ্তধন এক-পঞ্চমাংশত যাকাত প্রদান করতে হবে। ركاز বলা হয় دفين الجاهلية (জাহিলী যুগের প্রোথিত সম্পদকে)। ইমাম নববী বলেনঃ উপরোক্ত ব্যাখ্যাটি আমাদের, আহলে হিজাযের ও জুমহূর ‘উলামার মত।
* কিন্তু ইমাম আবূ হানীফাহ্ ও ইরাকের অধিবাসীগণ বলেনঃ معدن ও ركاز সমার্থবোধক শব্দ, সুতরাং গুপ্তধনের বিধান খনির বিধানের মতই। কিন্তু এই মতটি ঠিক নয়। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসটি তাদের মতকে খন্ডন করেছে। আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দু’টি শব্দকে পৃথক পৃথকভাবে বর্ণনা করেছেন حرف عطف-এর মাধ্যমে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ খন্ড, হাঃ ৪৫৮১)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে সব অপরাধের ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) নেই
৩৫১১-[২] ইয়া’লা ইবনু উমাইয়্যাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে (তাবূক যুদ্ধে) কষ্ট-ত্যাগ স্বীকারকারী সৈন্যদলের সাথে ছিলাম। আমার সাথে এক চাকর ছিল, সে জনৈক ব্যক্তির সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়ার দরুন একজন অপরজনের হাত কামড়ে ধরে। অতঃপর যার হাত কামড়ে ধরেছিল সে তার হাত কামড়ে ধরা মুখ থেকে টেনে বের করতে গিয়ে তার সম্মুখের দু’টি দাঁত ভেঙ্গে যায়। অতঃপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অভিযোগ করেন। এমতাবস্থায় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর দাঁতের জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ ধার্য না করে বললেন, তুমি কি চাও যে, সে তার হাত তোমার মুখে রাখবে আর তুমি ষাঁড় উটের মতো কামড়াতে থাকবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يُضْمَنُ مِنَ الْجِنَايَاتِ
وَعَنْ يَعْلَى بْنِ أُمَيَّةَ قَالَ: غَزَوْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَيْشَ الْعُسْرَةِ وَكَانَ لِي أَجِيرٌ فقاتلَ إِنساناً فعض أَحدهمَا الْآخَرِ فَانْتَزَعَ الْمَعْضُوضُ يَدَهُ مِنْ فِي الْعَاضِّ فَأَنْدَرَ ثَنِيَّتَهُ فَسَقَطَتْ فَانْطَلَقَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَهْدَرَ ثَنِيَّتَهُ وَقَالَ: «أَيَدَعُ يَدَهُ فِي فِيكَ تَقْضِمُهَا كَالْفَحْلِ»
ব্যাখ্যা: (جَيْشَ الْعُسْرَةِ) বলতে তাবূক যুদ্ধকে বুঝানো হয়েছে। العسر শব্দটি اليسر-এর বিপরীত। তাবুকের যুদ্ধকে ‘উসরার যুদ্ধ বলা হয়েছে কারণ এই সময় প্রচণ্ড গরম ছিল এবং এই যুদ্ধে পাথেয় ও বাহন সংখ্যা কম ছিল। প্রচণ্ড তাপে, ফল পাকার সময় ও সুন্দর ছায়া পরিত্যাগ করে যুদ্ধের ময়দানে যাওয়া যোদ্ধাদের নিকট খুবই কঠিন ছিল। তাই এই যুদ্ধকে (جَيْشَ الْعُسْرَةِ) বলা হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৬৯ পৃষ্ঠা)
হাদীসে ইয়া‘লা-এর একজন শ্রমিক অন্য একজন মানুষের সাথে তর্ক-বিতর্কে পড়ে দাঁত পড়ে যাওয়ায় ঘটনার বর্ণনা পাওয়া গেলো। তবে সহীহ মুসলিমের রিওয়ায়াতে আছে যে, খোদ ইয়া‘লা একজন মানুষের সাথে তর্কে পড়ে দাঁত পড়ে যাওয়ায় উক্ত ঘটনা ঘটে। এর সমাধানকল্পে সহীহ মুসলিম-এর ভাষ্যকার হাদীসের হাফিযদের মতের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন- এক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ বিশুদ্ধ মত হলো কামড়ানো ব্যক্তি হলো ইয়া‘লা, ইয়া‘লা-এর শ্রমিক নয়। অথবা এটাও সম্ভাবনা আছে যে, এরূপ ঘটনা দু’টি যার একটি ঘটেছিল খোদ ইয়া‘লা-এর সাথে। দ্বিতীয়টি হলো ইয়া‘লা-এর মজুরের সাথে। (শারহে মুসলিম ১১ খন্ড, হাঃ ১৬৭৩)
হাদীসের গৃহীত বিষয়াদিঃ
১. কেউ কোনো মানুষের হাতে কামড় দিলে মুখের ভিতর থেকে কামড়ে ধরা তার ব্যক্তি হাত টেনে নেয়ায় দাঁত পড়ে যায়, তবে এর কোনো কিসাস নেই বা রক্তমূল্য দিতে হবে না।
২. এই বিধান কোনো প্রাণী বা মানুষ দ্বারা আক্রান্ত সব ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সে তার জীবন, সম্মান, পবিত্রতা ও মাল রক্ষা করবে। এতে যদি সে আক্রমণকারীকে আঘাত করে অথবা নিহত করে তবে তার ওপর এর দায় বর্তাবে না অর্থাৎ তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। কেননা সে নিজেকে রক্ষা করেছে যা তার ওপর ওয়াজিব। আর আক্রমণকারী হচ্ছে সীমালঙ্ঘনকারী, উপরন্তু এর প্রমাণে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখনিঃসৃত বাণী রয়েছেঃ
مَنْ قُتِلَ دُوْنَ نَفْسِه فَهُوَ شَهِيْدٌ وَمَنْ قُتِلَ دُوْنَ اَهْلِه فَهُوَ شَهِيْد
‘‘যে ব্যক্তি নিজের জীবনকে রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয়, সে শহীদ আর যে স্বীয় পরিবারকে রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সে শহীদ।’’
৩. এ হাদীসের বিধানকে একটি নীতি হিসেবে নির্ধারণ করেছেন ‘আলিমগণ আর তা হলো নিজেকে রক্ষা করা সহজতর পন্থাবলম্বনের মাধ্যমে। (যা হাদীসে বিদ্যমান)
বিদ্বানগণ বলেনঃ উপরোক্ত শর্তারোপ শারী‘আতের সামগ্রিক রীতিসমূহ থেকে গৃহীত। (তায়সীরুল ‘আল্লাম শারহে ‘উমদাতুল আহকাম- ২য় খন্ড, ৩০৮ পৃষ্ঠা)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে সব অপরাধের ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) নেই
৩৫১২-[৩] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে লোক তার ধন-সম্পদ রক্ষার্থে নিহত হয়, সে শহীদ। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يُضْمَنُ مِنَ الْجِنَايَاتِ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ قُتِلَ دُونَ مَالِهِ فَهُوَ شهيدٌ»
ব্যাখ্যাঃ ইমাম নববী বলেনঃ যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো ধন-সম্পদ হরণ করে তার সাথে লড়াই করা বৈধ। এটা জুমহূর ‘উলামার মত। কিন্তু যারা ওয়াজিব বলেছেন তাদের সংখ্যা খুবই কম।
মালিকী মাযহাবের কেউ কেউ বলেছেনঃ অল্প জিনিস নিতে চাইলে তার সাথে লড়াই করা জায়িয নয়।
ইমাম কুরতুবী বলেনঃ এর হুকুম নিয়ে মতভেদের কারণ হলো হত্যার অনুমতি যদি ঘৃণ্য কাজকে পরিবর্তন করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তবে এক্ষেত্রে অল্প বা বেশি জিনিসের মাঝে কোনো তফাৎ নেই। কিন্তু যদি ক্ষতিসাধনকে প্রতিহত করা উদ্দেশ্য হয় তবে এর অবস্থা বিভিন্ন রকম হয়।
ইবনুল মুনযির শাফি‘ঈ-এর উদ্ধৃতি বর্ণনা করে বলেন- যার ধন-সম্পদ, জান ও সম্মান কেড়ে নেয়া হয় তার স্বাধীনতা রয়েছে। ইচ্ছা করলে সে তাকে আঘাত করতে পারে অথবা ইচ্ছা হলে সাহায্য প্রার্থনা করতে পারে। এতে সে যদি নিবৃত্ত হয় তবে তার সাথে লড়াই করা ঠিক নয়। অন্যথায় তাকে জীবন দিয়ে হলেও প্রতিহত করবে। তার ওপর কোনো গ্রেফতারী পরওয়ানা, রক্তমূল্য ও কাফফারাহ্ নেই। কিন্তু তাকে হত্যা করার উদ্দেশ্য তার থাকবে না।
ইবনুল মুনযির আরো বলেনঃ তফসিল ছাড়াই বিদ্বানগণের মত হলো মানুষের দায়িত্ব হলো প্রতিরোধ করা, যখন অন্যায়ভাবে তার জান-মাল, ইজ্জত-আব্রুর ইত্যাদির ক্ষতিসাধন করা হয় ও ইসলাম ধর্মকে সাহায্য করা কিংবা রক্ষা করতে বাধা প্রদান করা হয়। কিন্তু যালিম শাসক এই হুকুম থেকে পৃথক। যেহেতু তার কৃতকর্মের উপর সবর করা অর্থাৎ তার অত্যাচারে ধৈর্যধারণ করা ও তার বিদ্রোহ না করার জন্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে। (ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৪৮০)
‘আলক্বামাহ্ বলেনঃ যে ব্যক্তি স্বীয় সম্পদ রক্ষার জন্য আক্রমণকারী মানুষ বা প্রাণীর সাথে যুদ্ধ করে, অতঃপর প্রতিরোধ করতে গিয়ে নিহত হয় তবে সে শহীদ, অর্থাৎ আখিরাতের হুকুমে দুনিয়ার হুকুম নয়। আর আখিরাতে তার জন্য রয়েছে শাহীদের সাওয়াব।
তিনি আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি স্ত্রীর বা নিকটতম আত্মীয়ের সম্ভ্রমহানী প্রতিরোধ করতে গিয়ে এবং মুরতাদের সাথে দীন রক্ষার জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত হলো সেও শহীদ বলে গণ্য হবে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৭৫৯)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে সব অপরাধের ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) নেই
৩৫১৩-[৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি বলল- হে আল্লাহর রসূল! যদি কোনো লোক এসে আমার ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করতে চায়, তখন আমার কী করণীয়? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি তাকে তোমার ধন-সম্পদ থেকে তোমার মাল দিবে না। লোকটি বলল, যদি সে আমার সাথে লড়াই-বিবাদ করতে চায়। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে তুমিও তা-ই কর। অতঃপর লোকটি বলল, যদি সে আমাকে হত্যা করে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাহলে তো তুমি শহীদ। অতঃপর লোকটি বলল, যদি আমি তাকে হত্যা করে ফেলি? তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাহলে সে হবে জাহান্নামী। (মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يُضْمَنُ مِنَ الْجِنَايَاتِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ إِنْ جَاءَ رَجُلٌ يُرِيدُ أَخْذَ مَالِي؟ قَالَ: «فَلَا تُعْطِهِ مَالَكَ» قَالَ: أَرَأَيْتَ إِنْ قَاتَلَنِي؟ قَالَ: «قَاتِلْهُ» قَالَ: أَرَأَيْتَ إِنْ قَتَلَنِي؟ قَالَ: «فَأَنْتَ شَهِيدٌ» . قَالَ: أَرَأَيْتَ إِنْ قَتَلْتُهُ؟ قَالَ: «هُوَ فِي النَّارِ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: شَهِيْدٌ (শহীদ) কাদের বলা হয় বা শহীদ বলার কারণ:
* নযর বিন শুমায়ল বলেনঃ শহীদ অর্থ প্রত্যক্ষধর্মী। আর শহীদ যেহেতু জীবিত থাকে তাই তাকে شَهِيْدٌ বলা হয়। কারণ তাদের রূহ দারুস্ সালাম জান্নাত প্রত্যক্ষ করে। আর অন্যদের রূহ শুধু কিয়ামত দিবসে তা দেখতে পায়।
* ইবনুল আম্বারী বলেনঃ যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা ও ফেরেশতামন্ডলী শাহীদের জন্য জান্নাতের সাক্ষ্য প্রদান করেন তাই তাকে শহীদ বলা হয়। তখন شَهِيْدٌ-এর অর্থ হবে مشهود له (যার জন্য সাক্ষ্য দান করা হয়)।
* কেউ কেউ বলেছেনঃ শহীদগণের আত্মা বের হওয়ার সময় তার সাওয়াব ও মর্যাদা দেখতে পায়, তাই তাকে শহীদ বলা হয়।
* কেউ কেউ বলেনঃ রহমাতের মালাক (ফেরেশতা) তাকে অবলোকন করে বা তার আত্মাকে নিয়ে যায়, তাই তার নাম শহীদ।
* আবার কেউ কেউ বলেনঃ যেহেতু তার সর্বশেষে উত্তম কাজের ও ঈমানের সাক্ষ্য প্রদান করা হয়, তাই তাকে শহীদ বলা হয়।
* কোনো একজন মুহাদ্দিস বলেনঃ শাহীদের একজন সাক্ষী থাকে তা তার শাহাদাতের জন্য সাক্ষ্য দান করে। সে সাক্ষী হলো তার রক্ত। কেননা সে যখন পুনরুত্থিত হবে তখন তার ক্ষতস্থান ঝরাতে থাকবে।
* আযহারী ও অন্যরা অপর একটি মত বর্ণনা করেন : তারা বলেন- শহীদগণ কিয়ামতের দিন উম্মাতের জন্য সাক্ষ্য দানকারীদের অন্যতম হওয়ায় তাকে শহীদ বলা হয়। তবে এই কথায় শাহীদের নিজস্ব কোনো স্বকীয়তা প্রমাণ হয় না। (শারহে মুসলিম ২য় খন্ড, হাঃ ২২৫)
শহীদ তিন প্রকার: প্রথমতঃ যুদ্ধের কারণে কাফিরের সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত ব্যক্তি। এই শ্রেণীর শহীদ আখিরাতের সাওয়াবে ও দুনিয়ার বিধানে তথা তাকে গোসল না দেয়া ও তার জন্য সালাতুল জানাযা আদায় না করা উভয় ক্ষেত্রে শহীদ হিসেবে গণ্য।
দ্বিতীয়তঃ এই শ্রেণীর শহীদ আখিরাতে শাহাদাতের ফযীলত বা সাওয়াবপ্রাপ্ত হবে। কিন্তু দুনিয়াতে শাহীদের বিধান প্রযোজ্য হবে না। যেমন : পেটের পীড়ায় নিহত ব্যক্তি, মহামারিতে নিহত, দেয়াল চাপা পড়ে নিহত; নিজের সম্পদ হিফাযাত করতে গিয়ে নিহত ব্যক্তি যাদেরকে সহীহ হাদীস শহীদ বলে অভিহিত করেছে। এই শ্রেণীর শহীদকে গোসল দিতে হবে ও জানাযা আদায় করাতে হবে। তবে এই শহীদগণ প্রথম শ্রেণীর শহীদদের সাওয়াব লাভ করবে না।
তৃতীয়তঃ যে ব্যক্তি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে গানীমাতের জন্য কাফিরদের সাথে যুদ্ধে নিহত হয়। এই ধরনের ব্যক্তিকে হাদীসে শহীদ নামে অ্যাখ্যা দিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই শ্রেণীর শাহীদের ও পর দুনিয়াতে শাহাদাতের বিধান প্রযোজ্য। সুতরাং তাকে গোসল দেয়া হয় না এবং সালাতুল জানাযা আদায় করা হয় না। আর তার জন্য আখিরাতে পূর্ণ সাওয়াব হবে না। আল্লাহ সর্বাধিক জ্ঞাত। (শারহে মুসলিম ২য় খন্ড, হাঃ ২২৫)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে সব অপরাধের ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) নেই
৩৫১৪-[৫] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি- কোনো ব্যক্তি যদি অনুমতি ব্যতীত তোমার ঘরে উঁকি মারে যাকে তুমি অনুমতি দাওনি আর তুমি যদি তাকে কোনো কঙ্কর নিক্ষেপ করে তার চক্ষু ফুঁড়ে দাও, এতে তোমার কোনো অপরাধ নেই। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يُضْمَنُ مِنَ الْجِنَايَاتِ
وَعَنْهُ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَوِ اطَّلَعَ فِي بَيْتِكَ أحدٌ ولمْ تَأذن لَهُ فخذفته بحصاة ففتأت عَيْنَهُ مَا كَانَ عَلَيْكَ مِنْ جُنَاحٍ»
ব্যাখ্যা: হাদীসে সাব্যস্ত হলো যে, চক্ষু ফুঁড়লে তার কোনো অপরাধ বা দোষ নেই। অন্য একটি হাদীসে প্রখ্যাত সাহাবী আবূ হুরায়রাহ্ -এর বর্ণনায় রয়েছে,
مِنِ اطَّلَعَ فِي بَيْتِ قَوْمٍ بِغَيْرِ إِذْنِهِمْ فَقَدْ حَلَّ لَهُمْ أَنْ يَفْقَئُوا عَيْنَه
বাড়ির লোকেদের অনুমতি ছাড়া কারো বাড়িতে উঁকি দিলে এর ফায়সালা হলো তার (উঁকিদাতার) চক্ষুকে ফুড়িয়ে ফেলবে। কিন্তু যারা মনে করেন- جُنَاحٍ-এর অর্থ إثم তথা গুনাহ অর্থাৎ চক্ষু ফুঁড়লে গুনাহ হবে না তবে এর দিয়াত প্রদান করতে হবে। যেহেতু গুনাহ মাফের দ্বারা দিয়াত রহিত হয় না। কেননা দিয়াতের আবশ্যকতা হাদীসের দৃষ্টিভঙ্গির দাবী। তাদের এই মতের জবাব উপরোক্ত হাদীসে বিদ্যমান।
কারণ সমাধানের প্রমাণ কিসাস ও দিয়াত সাব্যস্ত হওয়াকে বাধা দেয়। আরো একটি আবূ হুরায়রাহ্ -এর হাদীসে রয়েছে যা সর্বাধিক স্পষ্ট ও যাকে ইবনু হিব্বান ও বায়হাক্বী সহীহ বলেছেন। প্রত্যেকে বাশীর বিন নাহীক-এর রিওয়ায়াত উল্লেখ করেন। যথা : কোনো ব্যক্তি লোকজনের বাড়িতে তাদের অনুমতি ছাড়াই উঁকি দিলে তারা তার চক্ষুকে বিদ্ধ করে দেয় তাহলে কোনো কিসাস নেই, রক্তমূল্যও নেই।
(الِاسْتِئْذَانُ) ‘অনুমতি প্রার্থনা’ শুধু গায়ের মাহরামের জন্য খাস নয় বরং তা যে দেখা দিবে তাদের প্রত্যেকের প্রয়োজন যদিও মাতা ও বোন হয়।
সহীহ মুসলিম-এর ভাষ্যকার বলেনঃ অনুমতি প্রার্থনা শারী‘আতের নির্দেশ। যাতে দৃষ্টি নিষিদ্ধ বস্তুর উপরে আপতিত না হয় সেই জন্য শারী‘আত অনুমতি প্রার্থনার প্রবর্তন করেছে। (শারহে মুসলিম ১৪ খন্ড, হাঃ ২১৫৮)
এ হাদীস দ্বারা গোয়েন্দার প্রতি তীর নিক্ষেপের প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। যদি সে হালকা বস্তু দ্বারা সরে না পড়ে তবে এর জন্য ভারি বস্তু ব্যবহার করা জায়িয। এতে সে যদি নিহত হয় বা কোনো অঙ্গের ক্ষতি হয় তবে এর দিয়াত বা কিসাস বাতিল।
সহীহ মুসলিম-এর ভাষ্যকার বলেনঃ এ হাদীসে উঁকিদাতার চোখে হালকা বস্তুর নিক্ষেপণের বৈধতা রয়েছে। তাই যখন মাহরাম মহিলাহীন গৃহে কেউ তাকালে তার প্রতি হালকা বস্তু নিক্ষেপ করায় চক্ষু বিদ্ধ হলে এতে কোনো দিয়াত বা রক্তপণ নেই। (শারহে মুসলিম ১৪ খন্ড, হাঃ ২১৫৭)
মালিকী মাযহাবের অনুসারীগণ ক্বিসাসের বিধান প্রযোজ্য বলে মত ব্যক্ত করেছেন। তারা আরো বলেন যে, চক্ষু অথবা অন্য কোনো অঙ্গ ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা পোষণ করা ঠিক নয়। তারা এর কারণ হিসেবে বলেন যে, অপরাধকে অপরাধ দ্বারা বা পাপকে পাপ দ্বারা জবাব দেয়া ঠিক নয়।
জুমহূর ‘উলামার জবাবে বলেনঃ অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তির অনুমতি নিশ্চিত হলে সেটা তখন পাপ থাকে না। তবে কাজটা উপরোক্ত কারণ থেকে মুক্ত হলে সেটাকে পাপ বলে গণ্য করা হয়, অথচ তারা আক্রমণকারীকে জীবন দিয়ে হলেও প্রতিহত করা জায়িয মর্মে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।
মালিকী মতাবলম্বী হাদীসটির উত্তর প্রদানে বলেন- হাদীস দ্বারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়ার ও ভীতি প্রদর্শন করার ব্যাপারটি বর্ণিত হয়েছে। ইমাম আবূ হানীফাও এই মতটির উপর সমর্থন যুগিয়েছেন।
(মিরকাতুল মাফাতীহ)
কিন্তু মালিকী মাযহাব মতাবলম্বী কারণ বর্ণনা করে বলেন, এই মর্মে ইজমা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে কারো লজ্জাস্থানের প্রতি নজর দেয় তাহলে তার চোখকে ফুঁড়ে দেয়া বৈধ নয়। আর যে ব্যক্তি চক্ষুকে ফুঁড়ে উপড়িয়ে ফেলবে তাকে এর দায় গ্রহণ করতে হবে। ইমাম কুরতুবী উক্ত ইজমা প্রমাণিত হবার ব্যাপারে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছেন। তিনি বলেনঃ নিশ্চয় হাদীসটি সব উকি দিয়ে দর্শনকারীকে শামিল করে। যখন ধারণাবশত উঁকিদাতা এর অন্তর্ভুক্ত তখন অনুসন্ধানী উঁকিদাতা আরো অধিক অন্তর্ভুক্ত।
ইমাম ইবনু হাজার ‘আস্ক্বালানী বলেনঃ এটা বিতর্কিত বিষয়। কেননা বাড়ির অভ্যন্তরে তাকানো কোনো নির্দিষ্ট জিনিসের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করাকে সীমাবদ্ধ করে না। উদাহরণস্বরূপ কারো লজ্জাস্থান বরং তা অন্দরমহলকে উন্মোচন করার শামিল। যাকে বাড়ির মালিক গোপনে রাখতে চায় এবং যার প্রতি কারো নজর দেয়া ঠিক নয়। আর এ কারণে শারী‘আতে গোয়েন্দাগীরিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর এ পথকে বন্ধ করার জন্য এর শাস্তির বিধান রয়েছে। আর দাবীকৃত ইজমা যদি ঠিক হতো তবে এই খাস বিধানের অবতারণা শারী‘আতের মধ্যে থাকত না।
সর্বজনবিদিত ব্যাপার হলো : কোনো বিবেকবান লোকের নিকটে অন্য ব্যক্তি কর্তৃক তার স্ত্রীর বা মেয়ের মুখমণ্ডলের প্রতি নজর দেয়া খুব কঠিন। অনুরূপভাবে স্বীয় স্ত্রীর সাথে অপরিচিত ব্যক্তি কর্তৃক নির্জন বাসকে অবলোকন করা বিশেষ অঙ্গকে খোলা রাখা অবস্থার চেয়ে আরো বড় কঠিন ব্যাপার।
ইমাম কুরতুবী, যার প্রতি নজর দেয়া হয় এমন ব্যক্তির জন্য উঁকিদাতাকে প্রতিহত করা বাধ্যতামূলক করেছেন। ইমাম শাফি‘ঈ-এর দৃষ্টিকোণ থেকে এই সূরাতে এটা শারী‘আতসম্মত নয়। পাথর ছোঁড়ার পূর্বে ভীতিপ্রদর্শন শর্ত কিনা- এই ব্যাপারে দু’টি মত রয়েছে। কেউ বলেছেন, ভীতিপ্রদর্শন শর্ত যেমন আক্রমণকারীকে প্রতিহত করা। তবে সর্বাধিক বিশুদ্ধ মত হলো ভীতিপ্রদর্শন শর্ত নয়।
সহীহ মুসলিম-এর ব্যাখ্যাকারও এই মতের প্রতি ধাবিত হয়েছেন। তিনি বলেন, ভীতিপ্রদর্শনের পরে ছুঁড়ে মারা বৈধ ও অধিক শুদ্ধ।
আড়িপাতা এর অন্তর্ভুক্ত কিনা- এই ব্যাপারে দু’টি মত। অধিক শুদ্ধ মত হলো আড়িপাতা এর শামিল নয়। কেননা গোপন কথা আড়ি পেতে শুনার চেয়ে লজ্জাস্থানের দিকে তাকানো বেশি মারাত্মক।
কিন্তু যার বাড়িতে স্বামী বা স্ত্রী মাহরাম ব্যক্তি অথবা ধন-সম্পদ আছে সে তা পর্যবেক্ষণ করার ইচ্ছা পোষণ করলে তার প্রতি কিছু ছুঁড়ে মারা নিষেধ। কারণ সেটা অস্পষ্ট বিষয়। কেউ বলেন কোনো তফাৎ নেই। কেউ বলেনঃ যদি গৃহে গোপন কোনো কিছু না থাকে আর তথায় অন্য কেউ অবস্থান করে তবে ভীতিপ্রদর্শন করবে। কারণ এতে সে বিরত হবে। অন্যথায় আঘাত করা জায়িয। আর যদি গৃহে শুধু একজন মালিক বা বাসিন্দা থাকে তবে ভীতিপ্রদর্শনের পূর্বে কিছু ছুঁড়ে মারা বৈধ নয়। কিন্তু হ্যাঁ, যদি সে গোপনাঙ্গ খোলা অবস্থায় থাকে তাহলে জায়িয।
কেউ বলেনঃ সর্বাবস্থায় গৃহের অভ্যন্তরে উঁকি দেয়া ব্যক্তিকে কিছু নিক্ষেপ করা বৈধ। (ফাতহুল বারী ১২ খন্ড, হাঃ ৬৯০২)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে সব অপরাধের ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) নেই
৩৫১৫-[৬] সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরজার ছিদ্র দিয়ে উঁকি দিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (হাতে) একটি শলাকা ছিল, যা দিয়ে তিনি মাথা চুলকাচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি যদি নিশ্চিতভাবে জানতাম যে, তুমি (সংগোপনে) আমার দিকে তাকাচ্ছ, তাহলে আমি এর দ্বারা (শলাকা দিয়ে) তোমার চোখ ফুঁড়ে দিতাম। কেননা অনুমতি নেয়ার বিধান এ চোখের কারণেই দেয়া হয়েছে (যাতে কেউ কিছু দেখতে না পায়)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يُضْمَنُ مِنَ الْجِنَايَاتِ
وَعَن سهل بنِ سعد: أَنَّ رَجُلًا اطَّلَعَ فِي جُحْرٍ فِي بَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِدْرًى يَحُكُّ بِهِ رَأْسَهُ فَقَالَ: «لَوْ أَعْلَمُ أَنَّكَ تنظُرُني لطَعَنْتُ بهِ فِي عَيْنَيْكَ إِنَّمَا جُعِلَ الِاسْتِئْذَانُ مِنْ أَجْلِ الْبَصَرِ»
ব্যাখ্যা: مِدْرًى মীম বর্ণে যের ও দাল বর্ণে জযম যোগে। এটা একটা লৌহ খন্ড। যার দ্বারা চুল আঁচড়ানো হয়। কেউ বলেন এটি مِشْطٌ তথা চিরুনীর ন্যায়। কেউ বলেন এটি লোহার কতগুলো কাঠির সমষ্টি যা দেখতে চিরুনীর মতো। আবার কেউ বলেনঃ এটি একটি খড়ি বিশেষ যা দ্বারা মহিলাগণ চুলকে পরিপাটি করে থাকেন। এর বহুবচন مَدَارٰى যারা বলেন এটার অর্থ চিরুনী তাদের জন্য এটা দলীল। (শারহে মুসলিম ১৪ খন্ড, হাঃ ২১৫৬)
তুহফাতুল আহওয়াযীতে বলা হয়েছে, مِدْرٰى হচ্ছে খিলালের ন্যায় লোহা অথবা কাঠের খন্ড। আবার কেউ বলেনঃ এটা কাঠের তৈরি যা চিরুনীর দাঁতের ন্যায় ও যাতে একটি ডাটি বা বাহু রয়েছে। এটা সাধারণত মানুষ অধিকাংশ সময় শরীরের যেখানে তার হাত পৌঁছতে পারে না সেখানে এর দ্বারা চুলকায়। আর যার নিকটে চিরুনী না থাকে সে এর দ্বারা জমাট চুলকে পরিপাটি করে।
খত্বীব তাঁর كفاية গ্রন্থে উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। যাতে রয়েছে مِدْرٰى ও مِشْطٌ এক জিনিস নয়। কারণ তাতে مِدْرٰى ও مِشْطٌ-কে আলাদা আলাদাভাবে উল্লেখ করেছেন। যেমন-
قَالَتْ خَمْسٌ لَمْ يَكُنِ النَّبِيُّ ﷺ يَدَعُهُنَّ فِي سَفَرٍ وَلَا حَضَرٍ الْمَرْأَةُ وَالْمُكْحُلَةُ وَالْمُشْطُ وَالْمِدْرٰى وَالسِّوَاكُ
অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে হোক কিংবা বড়িতে কখনো মহিলা, শুরমাদানী, চিরুনী, শলাকা কাঠি ও মিসওয়াক ছাড়া থাকতেন না। তবে হাদীসের সানাদে আবূ উসায়ইমাহ্ বিন ইয়া‘লা য‘ঈফ রাবী রয়েছেন।
(তুহফাতুল আহওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭০৯)
হাদীসটি চিরুনী ব্যবহার ও চুল আঁচড়ানোর দলীল। ‘আলিমগণ বলেছেনঃ মহিলাদের জন্য চিরুনী করা মুস্তাহাব। তবে পুরুষদের জন্য শর্ত হলো যে, তারা প্রতিদিন অথবা প্রতি দুই দিনে অথবা এরূপ ঘন ঘন চিরুনী করবে না। বরং পূর্বের সিঁথি যখন মুছে যাবে বা মিটে যাবে তখন চিরুনী করবে। (শারহে মুসলিম ১৪ খন্ড, হাঃ ২১৫৬)
ইমাম নববী বলেনঃ الاستأذان অনুমতি প্রার্থনা শারী‘আত কর্তৃক নির্দেশিত হুকুম। এটা প্রবর্তন করার কারণ হলো যাতে দৃষ্টি কোনো নিষিদ্ধ বস্তুর উপর আপতিত না হয়। তাই কারো জন্য কোনো দরজার আস্থানায় ও সুরঙ্গ ফাঁকে বা ছিদ্রে তা দেয়া বৈধ নয়। যাতে সে অপরিচিত মহিলার ওপর দৃষ্টি আপতিত হওয়ার সম্মুখীন হয়।
হাফিয বলেনঃ প্রত্যেকের জন্য শারী‘আতে অনুমতি প্রার্থনার বিধান রয়েছে এমনকি মাহরাম ব্যক্তির ক্ষেত্রেও। যাতে গোপন বিষয় প্রকাশিত না হয়ে যায়। ইমাম বুখারী তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আদাবুল মুফরাদ’-এ উল্লেখ করেছেন : ইবনু ‘উমার তার কোনো বালেগ সন্তানের নিকট বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতেন না।
* ‘আলকামাহ্ এর বর্ণনায় রয়েছে : এক ব্যক্তি ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ)-এর নিকট এসে বলেনঃ আমি আমার মায়ের নিকটে প্রবেশের সময় অনুমতি প্রার্থনা করব? তিনি বললেন, তুমি তোমার মায়ের সর্বাবস্থা অবলোকন করতে পারবে না। অর্থাৎ উচিত নয়।
* মূসা বিন ত্বলহাহ্-এর বর্ণনায় রয়েছে : তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সাথে মায়ের নিকটে প্রবেশ করতে চাইলাম। পিতা প্রবেশ করলে আমি আববার অনুসরণ করলাম। তখন আমার পিতা আমার বুকে ধাক্কা দিয়ে বললেন- তুমি অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে চাও!
* ‘আত্বা-এর রিওয়ায়াতে আছে- তিনি বলেনঃ আমি ইবনু ‘আব্বাস -কে জিজ্ঞেস করলাম, আমার বোনের নিকটেও অনুমতি চাইবো? তিনি বলেন, হ্যাঁ। রাবী বলেন, আমি বললাম সে আমার বাড়িতে থাকে। ইবনু ‘আব্বাস বলেনঃ তুমি কি তাকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখতে চাও? এসব আসারের সানাদ সহীহ। (তুহফাতুল আহওয়াহী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭০৯)
সহীহ মুসলিম-এর ভাষ্যকার বলেনঃ প্রথমে অনিচ্ছায় কারো নজর যদি কোনো অপরিচিত মানুষের ওপর পড়ে যায় তবে এতে কোনো গুনাহ হবে না। এখানে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়া তার জন্য ওয়াজিব। যদি সে দৃষ্টিকে অবনমিত করে তাহলে এতে কোনো পাপ নেই। আর যদি সে দৃষ্টি অব্যাহত রাখে তবে সে পাপী হবে। কেননা এক্ষেত্রে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নজরকে ফিরিয়ে নিতে আদেশ দিয়েছেন। আর কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوْا مِنْ أَبْصَارِهِم
‘‘মু’মিনদের বল তাদের দৃষ্টি অবনমিত করতে আর তাদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করতে।’’ (সূরা আন্ নূর ২৪ : ৩০)
কাযী বলেনঃ ‘আলিমগণ বলেছেন অনাকাঙ্খিতভাবে নজর পড়ার হাদীসে রাস্তাতে মহিলাদের মুখমণ্ডল না ঢেকে রাখার দলীল রয়েছে। আসলে ঢেকে রাখা মুস্তাহাব সুন্নাত। শারী‘আত সঠিক কারণ ব্যতীত পুরুষদের দৃষ্টি অবনমিত রাখা ওয়াজিব। আর শারী‘আত সঠিক কারণগুলো হলো:
১. সাক্ষ্য প্রদানের ক্ষেত্রে। ২. চিকিৎসা নেয়ার ক্ষেত্রে। ৩. বিবাহ করার উদ্দেশে কাউকে দেখার ক্ষেত্রে। ৪. দাসী কেনার সময়। ৫. বেচা-কেনার লেনদেনের সময়।
আরো এরূপ শারী‘আত কারণে। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বৈধ নয়। (শারহে মুসলিম ১৪ খন্ড, হাঃ ২১৫৯)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে সব অপরাধের ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) নেই
৩৫১৬-[৭] ’আব্দুল্লাহ ইবনু মুগফফাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক ব্যক্তিকে কঙ্কর ছুঁড়তে দেখে তিনি বললেন, এভাবে কঙ্কর ছুঁড়ো না। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে কঙ্কর ছুঁড়তে নিষেধ করে বলেছেন, এভাবে কোনো শিকারকে মারা যায় না এবং কোনো শত্রুকেও আক্রমণ করা যায় না; বরং এটা কখনো দাঁত ভেঙ্গে দেয়া যায় এবং চোখ ফুঁড়ে দেয়া যায়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يُضْمَنُ مِنَ الْجِنَايَاتِ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُغَفَّلٍ أَنَّهُ رَأَى رَجُلًا يَخْذِفُ فَقَالَ: لَا تَخْذِفْ فَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنِ الْخَذْفِ وَقَالَ: «إِنَّهُ لَا يُصَادُ بِهِ صَيْدٌ وَلَا يُنْكَأُ بِهِ عَدُوٌّ وَلَكِنَّهَا قَدْ تَكْسِرُ السِّنَّ وَتَفْقَأُ الْعَيْنَ»
ব্যাখ্যা: خذف অর্থ কংকর ছুঁড়ে মারা অথবা খেজুরের আটি ছোঁড়া। কংকর ছুঁড়ে মারা হতে পারে দুই শাহাদাত অঙ্গুলি দ্বারা অথবা বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনির মাধ্যমে। অথবা মধ্যম অঙ্গুলির উপরে ও বৃদ্ধাঙ্গুলির পেটের উপরে রেখে ছুঁড়ে মারা।
কেউ কেউ বলেন, পাথরকে ডান হাতের তর্জনি ও বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির মাঝে রেখে ডান হাতের তর্জনি দ্বারা ছোড়াকে ‘আরবীতে الخذف বলা হয়।
* মুহাল্লাব বলেনঃ শারী‘আতে পাথর নিক্ষেপ করার মাধ্যমে শিকার করার কোনো নির্দেশ নেই। কেননা এটা শিকারের যন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত নয়। বন্দুক দ্বারা শিকার করা বৈধ নয়। কেননা আল্লাহর বাণী: تَنَالُه” أَيْدِيكُمْ وَرِمَاحُكُمْ (সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৯৪) এর মধ্যে বন্দুক পড়ে না। আর ‘আলিমগণ ঐকমত্য পোষণ করেন যে, কংকর ছুঁড়ে ও বন্দুক দিয়ে মারা শিকার খাওয়া হালাল নয়। এক্ষেত্রে আসলে শিকারকে আঘাত করে হত্যা করা হয়। ধারের দ্বারা হত্যা করা হয় না।
হাদীসে বন্দুক দ্বারা শিকার করা নিষেধ রয়েছে। যখন শারী‘আতে এটা নিষিদ্ধ বিষয় তখন কোনো কিছু ছোড়ার মাধ্যমে শিকার করার সুযোগ নেই। উপরন্তু এতে মালিকহীন প্রাণীর ধ্বংস হওয়ার প্রশস্ততা রয়েছে। যা শারী‘আতে নিষিদ্ধ। তবে বন্দুক দ্বারা শিকার করা প্রাণী যাবাহ করা হলে তখন তা হালাল হবে।
ইমাম নববী বন্দুক দ্বারা শিকার করা প্রাণী খাওয়া হালাল মর্মে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়েছেন। তিনি বলেন, এটা একটি শিকারের উপায় ও পদ্ধতি।
বিস্তারিত তদন্ত হলো- হাদীসে যা বর্ণিত হয়েছে তাতে ছুঁড়ে মারার অধিকাংশ ক্ষেত্রই হচ্ছে নিষিদ্ধ। তবে যদি হাদীসে বর্ণিত ক্ষেত্র ছাড়া অন্য কোনো অবস্থা পরিলক্ষিত হলে তা জায়িয। বিশেষভাবে যদি উদ্দিষ্ট শিকারের প্রতি বন্দুক অথবা অনুরূপ যন্ত্র ছাড়া নিক্ষেপ করা না যায় এবং বেশির ভাগ সময় তাকে হত্যা না করে তখন জায়িয।
এ ব্যাপারে হাদীসের ব্যাখ্যায় একটি চমৎকার মত বিবৃত হয়েছে যে, গ্রামে ও শহরে বন্দুক দ্বারা শিকার করা ঠিক নয়। তবে নির্জন প্রান্তরে মাকরূহ নয়। এতে কোনো মানুষের ক্ষতি হওয়াকে নিষেধের কেন্দ্র হিসেবে ধরেছেন।
সহীহুল বুখারীর বর্ণিত এ হাদীসে সুন্নাহ বিরোধীকে ত্যাগ করা ও তার সাথে কথা বলা বর্জন করার বৈধতার প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে ব্যক্তিগত কারণে যে তিন দিনের বেশি কথা বলা থেকে বিরত থাকা যাবে না মর্মে যে বিধান বর্ণিত হয়েছে তা এই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত নয়। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫৪৭৯)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে সব অপরাধের ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) নেই
৩৫১৭-[৮] আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যদি তীর সঙ্গে নিয়ে আমাদের মসজিদে এবং বাজারে আসে, তাহলে সে যেন অবশ্যই তীরের ফলক ধরে রাখে। কেননা, এর দ্বারা কোনো মুসলিমের কোনো ক্ষতিসাধন না হয়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يُضْمَنُ مِنَ الْجِنَايَاتِ
وَعَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا مَرَّ أَحَدُكُمْ فِي مَسْجِدِنَا وَفِي سُوقِنَا وَمَعَهُ نَبْلٌ فَلْيُمْسِكْ عَلَى نِصَالِهَا أَنْ يُصِيبَ أَحَدًا مِنَ الْمُسْلِمِينَ مِنْهَا بِشَيْءٍ»
ব্যাখ্যা: হাদীসে বর্ণিত বিধান ইসলামের সকল দায়িত্বার্পিত ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য। শুধু সাহাবীদের জন্য খাস নয়। আর মসজিদ বলতে শুধু মদীনার মসজিদ নয়। বরং মুসলিমদের সকল মসজিদ উদ্দেশ্য। আর সে কারণ হাদীসের শেষাংশে (أَنْ يُصِيْبَ أَحَدًا مِنَ الْمُسْلِمِينَ) অর্থাৎ যাতে কোনো কিছুর দ্বারা কোনো মুসলিমের ক্ষতি না হয়। বলা হয়েছে, আলোচিত হাদীসে মুসলিমকে হত্যা করা হারাম এবং হত্যার কঠিন পরিণতির কথা বিবৃত হয়েছে। এমনকি যে কোনো কষ্টদায়ক উপকরণাদির চর্চা করা হারাম মর্মে নির্দেশ বর্ণিত হয়েছে। আর এতে অস্ত্রশস্ত্রকে কোষবদ্ধ করা ও বেঁধে শামলিয়ে রাখার দলীল রয়েছে। যেমন বর্শা বা তরবারির ফলা বা ধারকে কিছু দ্বারা আটকিয়ে রাখা।
(ফাতহুল বারী ১৩ খন্ড, হাঃ ৭০৭৫; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৮৪)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে সব অপরাধের ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) নেই
৩৫১৮-[৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মাঝে কেউ যেন তার ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র দ্বারা ইঙ্গিত না করে। কেননা, সে হয়তো জানে না শায়ত্বন তার এই হাতিয়ার দ্বারা তার ওপর আঘাত করিয়ে ক্ষতিসাধন করতে পারে, ফলে সে জাহান্নামের গর্তে নিক্ষিপ্ত হবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يُضْمَنُ مِنَ الْجِنَايَاتِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يُشِيرُ أَحَدُكُمْ عَلَى أَخِيهِ بِالسِّلَاحِ فَإِنَّهُ لَا يَدْرِي لَعَلَّ الشَّيْطَانَ يَنْزِعُ فِي يَدِهِ فَيَقَعُ فِي حُفْرَة من النَّار»
ব্যাখ্যা: يَنْزِعُ শব্দের غين যোগে এর অর্থ প্রসঙ্গে খলীল বলেনঃ نزغ الشيطان بين القوم نزعا এর অর্থ হলো حمل بعضهم على بعض بالفساد অর্থাৎ ফাসাদ সৃষ্টির জন্য কাউকে অন্য কারো বিরুদ্ধে প্ররোচনা করা। যেমন বলা হয়েছে, مِنْ بَعْدِ أَنْ نَزَغَ الشَّيْطَان بيني وَبَين أخوتي ‘‘শায়ত্বন আমার ও আমার ভাইয়ের মাঝে প্ররোচনা দেয়ার পর’’।
আর نزع শব্দের عين যোগে এর অর্থ القلع অর্থাৎ খুলে ফেলা বা সরিয়ে দেয়া। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সম্প্রদায়ের মাঝে উষ্কানি দেয়া। যার কারণে তাদের একজন অন্য একজনের ওপর অস্ত্র উত্তোলন করে। অতঃপর শায়ত্বন তার প্রহারকে বাস্তবায়ন করে।
ইবনুত্ তীন বলেনঃ يَنْزِعُ এর অর্থ হলো «يَقْلَعُه مِنْ يَدِه فَيُصِيبُ بِهِ الْاٰخَرَ» অর্থাৎ শায়ত্বন তার হাত থেকে অস্ত্রকে খুলে সরিয়ে দেয় ফলে তার দ্বারা অন্যজন আক্রান্ত হয় অথবা শায়ত্বন তার হাতকে এই সময় শক্ত করে দেয় যাতে তা লক্ষভ্রষ্ট না হয়।
ইমাম নববী বলেনঃ عين যোগে এর অর্থ হলো শায়ত্বন উক্ত ব্যক্তির হাতের মধ্যে থেকে নিক্ষেপ করে এবং প্রহার বা আঘাতকে নিশ্চিত করে।
আর غين যোগে এর অর্থ হলো الاغراء। তথা উস্কানি দেয়া বা প্ররোচিত করা। অর্থাৎ আঘাতকে ব্যক্তির কাছে সুশোভিত করে তোলা।
(فَيَقَعُ فِىْ حُفْرَةٍ مِنَ النَّارِ) এই বাক্য দ্বারা কোনো ব্যক্তির পাপাচারে নিপতিত হওয়ার ইঙ্গিত বহন করে যা তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করায়।
ইবনু বাত্ত্বল বলেনঃ এর অর্থ তার ওপর শাস্তি কার্যকর হয়। ঐকান্তিক ইচ্ছায় হোক বা রসিকতা করে হোক যাতে ভয়ানক পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। এরূপ হাদীসে নিষেধ রয়েছে। (ফাতহুল বারী ১৩শ খন্ড, হাঃ ৭০৭২; শারহে মুসলিম ১৬শ খন্ড, হাঃ ২৬১৭)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে সব অপরাধের ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) নেই
৩৫১৯-[১০] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রতি লৌহবর্ম দ্বারা ইশারা করল, অতঃপর তা হাত হতে ফেলে না দেয়া পর্যন্ত মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) তাকে অভিশাপ দিতে থাকে। যদিও লোকটি তার আপন ভাই হয়। (বুখারী)[1]
بَابُ مَا يُضْمَنُ مِنَ الْجِنَايَاتِ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَشَارَ إِلَى أَخِيهِ بِحَدِيدَةٍ فَإِنَّ الْمَلَائِكَةَ تَلْعَنُهُ حَتَّى يَضَعَهَا وَإِنْ كَانَ أخاهُ لأبيهِ وَأمه» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: হাদীসে মুসলিমের সম্মান মর্যাদার তাগিদ রয়েছে। আর তাকে ভীতিপ্রদর্শন করা বা ভয় দেখানো অথবা তাকে কষ্ট দেয় এমন কিছু উত্তোলন প্রসঙ্গে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সহোদর ভাইয়ের কথা উল্লেখ করার দ্বারা প্রত্যেকের ব্যাপক নিষেধাজ্ঞাকে স্পষ্ট করার ব্যাপারে জোরদার করা হয়েছে। চাই তা রসিকতা করে হোক বা তামাশা করে হোক বা না হোক। কেননা মুসলিমকে ভয় দেখানো সর্বাবস্থায় হারাম।
ইমাম ত্বীবী বলেনঃ ভাইকে উল্লেখ করার দ্বারা কৌতুক ও অনিচ্ছায় ইঙ্গিতকে পূর্ণতা দান করা হয়েছে। প্রথমত ভাইকে উল্লেখ করে পরে আপন ভাইয়ের কথায় সীমাবদ্ধ করেছেন। এ বিষয়টি জানিয়ে দেয়ার জন্য যে, কেবল ঠাট্টা-তামাশা অনৈতিক ইচ্ছার দিকে প্ররোচিত করে। তাহলে বুঝা গেলো আপন ভাইয়ের ব্যাপারে যখন এই বিধান তখন অন্য মানুষের ক্ষেত্রে সম্মানিত পাঠকদের সিদ্ধান্ত কি হতে পারে?
কোনো ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র উত্তোলন করলে ফেরেশতা অভিসম্পাত করতে থাকেন। [তুহফাতুল আহওয়াযী গ্রন্থকার বর্ণনা করে বলেন, মালায়িকার (ফেরেশতাদের) লা‘নাত করার অর্থ হলো, তাকে রহমাত থেকে বিতাড়িত করার ও দূরে সরানোর বদ্দু‘আ করা।]
অস্ত্র খোলা রাখার ক্ষেত্রে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জোর নিষেধ রয়েছে। যেমন এক বর্ণনায় রয়েছে : نَهٰى رَسُولُ اللّٰهِ ﷺ أَنْ يُتَعَاطَى السَّيْفُ مَسْلُولًا অর্থাৎ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাপ খোলা তরবারি নিয়ে চর্চা করতে নিষেধ করেছেন। এমনকি তরবারি ডেলিভারি করার সময় কোষবদ্ধ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
ইবনুল ‘আরাবী বলেনঃ যখন অস্ত্র দ্বারা ইঙ্গিত করলেই অভিসম্পাতের উপযুক্ত হয়। তাহলে তা দ্বারা আঘাত করলে কি হতে পারে? আসলে ঐকান্তিকভাবে হোক বা তামাশা করে হোক ধমক দেয়ার জন্য অস্ত্র দ্বারা ইশারা করলে লা‘নাতপ্রাপ্ত হবে। (ফাতহুল বারী ১৩ খন্ড, হাঃ ৭০৭২)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে সব অপরাধের ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) নেই
৩৫২০-[১১] ইবনু ’উমার ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তারা উভয়ে বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। (বুখারী)[1]
আর ইমাম মুসলিম (রহঃ) অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, আর যে ব্যক্তি (পণ্য বিক্রয়ে) আমাদের সাথে প্রতারণা করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।
بَابُ مَا يُضْمَنُ مِنَ الْجِنَايَاتِ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ وَأَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ حَمَلَ عَلَيْنَا السِّلَاحَ فَلَيْسَ مِنَّا» . رَوَاهُ البُخَارِيّ وزادَ مُسلم: «ومنْ غشَّنا فليسَ منَّا»
ব্যাখ্যা: হাদীসের মর্মার্থ হলো অন্যায়ভাবে মুসলিমদের সাথে যুদ্ধের জন্য অস্ত্র ধারণ করা তাদেরকে ভয় দেখানোর জন্য অথবা তাদের মাঝে আতংক সৃষ্টি করার জন্য। الحمل শব্দ দ্বারা যুদ্ধের প্রতি পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত করা হয়েছে। ইবনু দাকীকুল ‘ঈদ বলেছেনঃ হাদীসে উল্লেখিত حمل শব্দ উল্লেখের দ্বারা কয়েকটি অর্থের সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন (১) الحمل [উত্তোলন করা] এটি الوضع [নামিয়ে রাখা] এর বিপরীত। এটা যুদ্ধের ইঙ্গিতবাহক।
(২) যুদ্ধ করার জন্য ইচ্ছা পোষণ করা। যা (عَلَيْنَا) শব্দ উল্লেখ করার মাধ্যমে বুঝা যায়।
(৩) প্রহার করার জন্য তরবারি ধারণ করা। মোটকথা, প্রত্যেক ক্ষেত্রে মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ করা হারাম ও কঠোরতার ইঙ্গিত এই হাদীসে বিদ্যমান।
সুনানে নাসায়ীতে বর্ণিত আছেঃ যে ব্যক্তি তরবারি উত্তোলন করলো এবং তা দ্বারা মানুষকে আঘাত করলো, অতঃপর তাকে হত্যা করলে কোনো দিয়াত নেই এবং কোনো কিসাস নেই।
(فَلَيْسَ مِنَّا) এর অর্থ ليس على طريقتنا অথবা ليس متبعًا لطريقتنا অর্থাৎ সে আমাদের রীতির বহির্ভূত। অথবা সে আমাদের পথ-পদ্ধতির অনুসারী নয়। কেননা এক মুসলিমের ওপর অপর মুসলিমের হক হলো তাকে সাহায্য করা অথবা তার পক্ষে যুদ্ধ করা। সে তাকে ভয় দেখানোর জন্য অথবা তাকে হত্যা করার জন্য অথবা তার সাথে যুদ্ধ করার জন্য অস্ত্র ধারণ করতে পারে না।
উপরোক্ত শাস্তি এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় যে, অত্যাচারীকে হত্যা করে অথবা তার সাথে যুদ্ধ করার জন্য হামলা করে। বরং তা অন্যায়কারী বা অন্যায়ভাবে যুদ্ধ করার সূচনাকারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। (ফাতহুল বারী ১৩ খন্ড, হাঃ ৭০৭০)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে সব অপরাধের ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) নেই
৩৫২১-[১২] সালামাহ্ ইবনুল আক্ওয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাদের ওপর যে তরবারি উঠাল, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। (মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يُضْمَنُ مِنَ الْجِنَايَاتِ
وَعَنْ سَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ سَلَّ علينا السَّيفَ فليسَ منَّا» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: এ হাদীস সম্পর্কে আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মাযহাবের মূলনীতি হলো এই যে, যে ব্যক্তি মুসলিমদের বিপক্ষে তা‘বিল ছাড়া হালাল মনে না করে অন্যায়ভাবে অস্ত্র উত্তোলন করে বা ধারণ করে সে পাপী তবে কাফির নয়। কিন্তু যদি সে হালাল মনে করে তাহলে সে কাফির।
হাদীসের ব্যাখ্যায় কেউ কেউ বলেনঃ উপরোক্ত হাদীসটি যে ব্যক্তি ব্যাখ্যা ছাড়াই অস্ত্রধারণকে হালাল মনে করে সে কাফির এবং সে মুসলিম মিল্লাত থেকে বহির্ভূত মর্মার্থের ইঙ্গিত বাহক।
আবার কেউ বলেন, এই হাদীসের অর্থ হলো যে ব্যক্তি পুরোপুরিভাবে মুসলিম মিল্লাতের নীতি-আদর্শের অন্তর্ভুক্ত নয়। সুফ্ইয়ান বিন উয়াইনাহ্ এই ব্যাখ্যাকে অপছন্দ করেছেন। তিনি বলেন, এটা মন্দ ব্যাখ্যা। এসব ব্যাখ্যা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। যাতে অস্ত্রধারণকারীর অন্তরের মধ্যে বিষয়টি সর্বাধিক কার্যকর হয় এবং ধমকের ক্ষেত্রে উপযুক্ত পন্থা হয়। (শারহে মুসলিম ২য় খন্ড, হাঃ ১৬১)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে সব অপরাধের ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) নেই
৩৫২২-[১৩] হিশাম ইবনু ’উরওয়াহ্ (রহঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। একদিন হিশাম ইবনু হাকীম শাম (সিরিয়া) দেশে অনারব গ্রামের কিছু লোকেদের নিকট দিয়ে যাবার সময় দেখলেন যে, তাদেরকে রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে মাথার উপর যায়তূনের তেল ঢালা হচ্ছিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তাদেরকে কি কারণে এরূপ শাস্তি দেয়া হচ্ছে? বলা হলো, রাষ্ট্রীয় কর দিতে অস্বীকৃতির কারণে তাদেরকে এরূপ শাস্তি দেয়া হচ্ছে। হিশাম বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে শুনেছি যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যারা দুনিয়াতে মানুষকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তা’আলা ঐ সমস্ত লোকেদেরকে (আখিরাতে) শাস্তি দিবেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يُضْمَنُ مِنَ الْجِنَايَاتِ
وَعَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ هشامَ بنَ حكيمٍ مَرَّ بِالشَّامِ عَلَى أُنَاسٍ مِنَ الْأَنْبَاطِ وَقَدْ أُقِيموا فِي الشَّمسِ وصُبَّ على رُؤوسِهِمُ الزَّيْتُ فَقَالَ: مَا هَذَا؟ قِيلَ: يُعَذَّبُونَ فِي الخَراجِ فَقَالَ هِشَامٌ: أَشْهَدُ لَسَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ اللَّهَ يُعَذِّبُ الَّذِينَ يُعذبونَ النَّاسَ فِي الدُّنْيَا» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: এ হাদীসের বিধান অন্যায়ভাবে শাস্তি প্রদান করার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সুতরাং ন্যায়সঙ্গতভাবে শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে নয়। যেমন কিসাস নেয়ার ক্ষেত্রে দণ্ড প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে শিক্ষা দেয়া প্রভৃতির ক্ষেত্রে।
ইমাম নববী বলেনঃ (اُنَاسٍ مِنَ الْأَنْبَاطِ) বলতে অনারব কৃষকদেরকে বুঝানো হয়েছে। (শারহে মুসলিম ১৬ খন্ড, হাঃ ২৬১৩)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে সব অপরাধের ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) নেই
৩৫২৩-[১৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি যদি দীর্ঘজীবি হও, তাহলে অতি শীঘ্রই ঐ সমস্ত লোকেদেরকে দেখতে পাবে যাদের হাতে গরুর লেজের ন্যায় চাবুক থাকবে। তাদের সকাল হবে আল্লাহ তা’আলার ক্রোধের মধ্যে আর বিকাল হবে আল্লাহ তা’আলার কঠিন অসন্তুষ্টির মধ্যে। আর অন্য বর্ণনায় আছে, তাদের বিকাল হবে আল্লাহ তা’আলার অভিশপ্তের মধ্যে। (মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يُضْمَنُ مِنَ الْجِنَايَاتِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يُوشِكُ إِنْ طَالَتْ بك مُدَّة أَن ترى أَقْوَامًا فِي أَيْدِيهِمْ مِثْلُ أَذْنَابِ الْبَقَرِ يَغْدُونَ فِي غَضَبِ اللَّهِ وَيَرُوحُونَ فِي سَخَطِ اللَّهِ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «وَيَرُوحُونَ فِي لَعْنَةِ اللَّهِ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যা: ‘‘তাদের হাতে গরুর লেজ সদৃশ কিছু থাকা’’ এর অর্থ হলো তাদের হাতে চাবুক থাকবে। এটাকে ‘আরবীতে سياط বা مقرع বলা হয়। যা চামড়া দ্বারা তৈরিকৃত এবং এর মাথায় মধ্যমা অঙ্গুলির ন্যায় প্রশস্ত গিরা থাকবে। এর দ্বারা রাখালদেরকে উলঙ্গ করে হাকিয়ে নিয়ে যেত।
কেউ কেউ বলেনঃ তারা অন্যায়ভাবে লোকেদের হাকিয়ে নিয়ে যাবে আর লোকেরা তাদের সামনে দ্রুত গতিতে ছুটে চলবে। যেমনভাবে লোলুপ কুকুর মানুষকে তাড়িয়ে নিয়ে যায়।
আল্লাহর غَضَبِ এর চেয়ে سَخَطِ বেশি কঠিন ও ভয়ানক غَضَبِ উল্লেখ করার পর سَخَطِ-কে উল্লেখ করা হয়েছে এজন্য যে, তারা সকাল ও সন্ধ্যায় অন্যায় করার কারণে সর্বদা আল্লাহর ক্রোধের মধ্যে নিমজ্জিত ছিল।
ইমাম ত্বীবী বলেনঃ يَغْدُوْنَ এবং يَرُوْحُوْنَ এর অর্থ হলো সর্বদা অবিরামভাবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِىِّ অর্থাৎ তারা সদা সর্বদা আল্লাহর ক্ষোভের মধ্যে থাকবে আল্লাহ তাদের ওপর সহিষ্ণু আচরণ করবেন না এবং সন্তুষ্ট হবেন না। (সূরা আল কাহ্ফ ১৮ : ২৮)
আর যদি দু’টি সময়কে বিশেষভাবে ধরে নেয়া যায় অর্থাৎ সকাল-সন্ধ্যাকে তবে এর অর্থ হবে। তারা সকালে লোকেদের কষ্ট দেয় ও ভীতিপ্রদর্শন করে এবং তাদের ওপর দয়াপরবশ হয় না।
আর সন্ধ্যায় তাদেরকে কষ্ট দেয়ার কুচিন্তা করে ফলে আল্লাহ তাদের ওপর খুশি নন। (মিরকাতুল মাফাতীহ, পৃষ্ঠা-৭৭)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে সব অপরাধের ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) নেই
৩৫২৪-[১৫] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জাহান্নামীদের মধ্যে দু’টি এমন দল হবে যাদেরকে আমি দেখতে পাব না, কিন্তু তাদের একদল লোকের হাতে গরুর লেজের ন্যায় চাবুক থাকবে। যা দিয়ে তারা লোকেদেরকে অনৈতিকভাবে মারধর করবে। আর দ্বিতীয় দলটি হবে ঐ সমস্ত মহিলারা, যারা কাপড় পরবে অথচ উলঙ্গের ন্যায় দেখা যাবে এবং তারা সদিচ্ছায় পুরুষদের দিকে আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথার চুলের খোঁপা বুখতী উটের হেলে পড়া কুঁজের ন্যায় হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। যদিও তার সুঘ্রাণ দূর-দূরান্ত হতে পাওয়া যাবে। (মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يُضْمَنُ مِنَ الْجِنَايَاتِ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا: قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلَاتٌ مَائِلَاتٌ رؤوسهم كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ لَا يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يَجِدْنَ رِيحَهَا وَإِنَّ رِيحَهَا لَتُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: الكَاسِيَاتٌ ‘‘পরিধানকারিণী’’। এর কয়েকটি অর্থ রয়েছে। যথা-
(১) আল্লাহর নি‘আমাতকে ভোগকারী ও আল্লাহর নি‘আমাতের শুকরিয়া আদায় থেকে মুক্ত।
(২) বস্ত্র পরিধানকারিণী কিন্তু আনুগত্যের প্রতি যত্নবান, আখিরাতকে অগ্রাধিকার দান এবং সৎ ‘আমলশূন্য।
(৩) তার সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য শরীরের কিছু অংশ খোলা রাখা। একেই বলে বস্ত্রাবৃত ও বস্ত্রহীন।
(৪) পাতলা কাপড় পরিধান করে যাতে কাপড়ের নীচের শরীরের অংশ প্রকাশ পায়।
(مُمِيْلَاتٌ مَائِلَاتٌ) এর অর্থ হলো- আল্লাহর আনুগত্য এবং গুপ্তাঙ্গ ও প্রবৃত্তিকে হিফাযাত করা থেকে বিচ্যুত। আর مميلات-এর অর্থ হলো তারা অন্যদেরকে তাদের কর্মকা- শিক্ষা দেয়।
কেউ বলেন, এর অর্থ হলো গর্বভরে হেলেদুলে চলে এমন ব্যক্তি। مائلات এর অর্থ ঘাড় ঝুকানো মহিলা। কেউ কেউ বলেন- এর অর্থ পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট এবং তাদের প্রকাশিত সৌন্দর্য দ্বারা আকর্ষণকারিণী।
كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ-এর অর্থ তাদের মাথা পেচানো ওড়না ও পাগড়ী প্রভৃতি দ্বারা উন্নত। যেটাকে উন্নত ঘাড় বিশিষ্ট উটের ন্যায় পরিদৃষ্ট হয়।
মারুযী বলেনঃ এর অর্থ, তারা পুরুষদেরকে কামনা করে তাদের থেকে অবনমিত হয় না এবং মাথা নোয়াই না।
(لَا يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ) এর মর্মার্থ হচ্ছে, (১) যে হারামকে জেনে বুঝে হালাল মনে করে সে কাফির এবং জাহান্নামে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে। তারা কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
(২) তারা প্রথম থেকেই জান্নাতে প্রবেশ করবে না যেমন সফলকাম ব্যক্তিরা প্রথম থেকেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। (শারহে মুসলিম ১৭ খন্ড, হাঃ ২১২৮)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে সব অপরাধের ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) নেই
৩৫২৫-[১৬] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কোনো ব্যক্তিকে মারধর করে, তাহলে যেন মুখমণ্ডলে না মারে। কেননা, আল্লাহ তা’আলা আদম (আঃ)-কে তার আকৃতিতেই সৃষ্টি করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يُضْمَنُ مِنَ الْجِنَايَاتِ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا قَاتَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَجْتَنِبِ الْوَجْهَ فَإِنَّ اللَّهَ خَلَقَ آدَمَ عَلَى صُورَتِهِ»
ব্যাখ্যা: হাদীসে বর্ণিত নিষেধের মধ্যে দণ্ডে প্রহৃত, অথবা শাস্তির জন্য অথবা আদাবের জন্য প্রহৃত ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা এ ব্যাপারে আবূ বাকর ও অন্যান্য রাবীর বর্ণিত আবূ দাঊদ-এর মধ্যে এক যিনাকারিণী মহিলার ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে তাতে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজম করার নির্দেশ প্রদান করেন এবং বলেনঃ «ارْمُوا وَاتَّقُوا الْوَجْهَ» তোমরা পাথর ছুঁড়ে মারো তবে মুখমণ্ডলে প্রহার থেকে বিরত থাকো। একজন মহিলা যার মৃত্যু অবধারিত তার ক্ষেত্রে যদি এ রকম নির্দেশ থাকে তবে অন্যদের ক্ষেত্রে আরো বেশি বেঁচে থাকা কর্তব্য।
ইমাম নববী বলেনঃ বিদ্বানগণ বলেন, মুখমণ্ডলে আঘাত করা নিষেধ হওয়ার কারণ হলো, মুখমণ্ডল সূক্ষ্ম জায়গা যাতে সৌন্দর্যসমূহ একিভূত হয়েছে। আর অধিকাংশ অনুভব করার অঙ্গসমূহ সেখানে বিদ্যমান। অতএব, যার মুখমণ্ডলে আঘাত করা হয় তার চেহারা নষ্ট হওয়ার ও বিকৃত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর এতে বিকৃতি ঘটলে তার বাহ্যিক অবয়ব বা সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। বরং তার চেহারায় আঘাত করা হলে অধিকাংশ সময় তা ক্ষতি থেকে নিরাপদ নয়। এর একমাত্র কারণ হলো সৌন্দর্য। তবে এর আরেকটি কারণ সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
(فَإِنَّ اللّٰهَ خَلَقَ اٰدَمَ عَلٰى صُوْرَتِه) এই বাক্যে صُوْرَتِه শব্দের «ه» যামীর-এর مرجع নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে অধিকাংশ জনই প্রহৃত ব্যক্তিকে এর مرجع বলে মত প্রকাশ করেন। কেননা এর পূর্বে তার মুখমণ্ডলের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ব্যাপারটি উল্লেখ হয়েছে। যদি এটা তা না হয় তবে পূর্বের বাক্যের সাথে এই বাক্যের সম্পর্ক ঠিক থাকছে না।
* কুরতুবী বলেনঃ কেউ কেউ «ه» যামীরকে আল্লাহর প্রতি প্রত্যাবর্তন করিয়েছেন একটি দলীলের দিকে খেয়াল করে যেটা হলো-
إِنَّ اللّٰهَ خَلَقَ اٰدَمَ عَلٰى صُورَةِ الرَّحْمٰنِ ‘‘আল্লাহ আদম (আঃ)-কে রহমানের (আল্লাহর) আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন।’’
তিনি বলেন, যে ব্যক্তি এর প্রতি ধারণা করে দলীল সাব্যস্ত করেন সে ভুল করেছে।
* হারবুল কিরমানী তাঁর ‘‘কিতাবুস্ সুন্নাহ্’’ গ্রন্থে বলেনঃ আমি ইসহক বিন রহওয়াই-কে বলতে শুনেছি যে, إِنَّ اللّٰهَ خَلَقَ اٰدَمَ عَلٰى صُورَةِ الرَّحْمٰنِ এটা সহীহ।
* ইসহক আল কাওসাজ বলেনঃ আমি আহমাদ (রহঃ)-কে এ হাদীস সম্পর্কে সহীহ বলতে শুনেছি।
* আল মাযিরী বলেনঃ ইবনু কুতায়বাহ্ হাদীসের যাহিরী অর্থ বুঝে ভুল করেছেন।
* ইমাম বুখারী তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থে ‘আল আদাবুল মুফরাদ’-এ ও ইমাম আহমাদ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে একটি মারফূ‘ হাদীসে বর্ণনা করেন যেমন-
لَا تَقُولَنَّ قَبَّحَ اللهُ وَجْهَكَ وَوَجْهَ مَنْ أَشْبَهَ وَجْهَكَ فَإِنَّ اللّٰهَ خَلَقَ اٰدَمَ عَلٰى صُورَتِه
অর্থাৎ- ‘‘যখন তোমাদের কেউ যুদ্ধ করবে তখন সে যেন মুখমণ্ডল থেকে বিরত থাকে, কেননা আল্লাহ আদম (আঃ)-কে তার সুরতে সৃষ্টি করেছেন।’’
এ হাদীস স্পষ্ট হলো যে, যামীর কথিত ব্যক্তির দিকে যাবে।
ইবনু আবূ ‘আসিম ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেন,
إِذَا قَاتَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَجْتَنِبِ الْوَجْهَ فَإِنَّ اللّٰهَ خَلَقَ اٰدَمَ عَلٰى صُورَةِ وَجْهِه
ইমাম নববী এই হুকুম বা বিধানকে হস্তক্ষেপ করেননি। এর যাহিরী অর্থ হলো চেহারায় আঘাত করা হারাম। এই মতটিকে سُوَيْدِ بْنِ مُقَرِّنٍ সাহাবীর হাদীস আরো শক্তিশালী করে দেয়। তথা أَنَّه رَأَى رَجُلًا لَطَمَ غُلَامَه فَقَالَ أَو مَا عَلِمْتَ أَنَّ الصُّورَةَ مُحْتَرَمَةٌ অর্থাৎ- ‘‘তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন সে তার গোলামকে চড় মারছে। সে বলল, তুমি কি জান না যে, নিশ্চয় চেহারা সম্মানিত’’ হাদীসটিকে ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন। (ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৫৯; শারহে মুসলিম ১৫ খন্ড, হাঃ ২৬১২)