পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যে সব অপরাধের ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) নেই
৩৫২৬-[১৭] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অনুমতি ব্যতীত ঘরের পর্দা সরিয়ে অভ্যন্তরে দৃষ্টিপাত করল এবং গৃহকর্তার স্ত্রীকে দেখে ফেলল সে নিজের ওপর শারী’আতের শাস্তি অবধারিত করে ফেলল। কেননা, এভাবে আসা এবং গৃহাভ্যন্তরের দিকে তাকানো তার জন্য জায়িয নেই। আর সে যখন গৃহাভ্যন্তরের দিকে দৃষ্টিপাত করা অবস্থায় তখন যদি ঘরের কোনো পুরুষ এসে তার সামনে উপস্থিত হয়ে তার চক্ষু ফুঁড়ে দেয়, তাহলে আমি আঘাতকারীকে দোষী সাব্যস্ত করব না। আর যে ঘরের দরজায় কোনো পর্দা নেই এবং দরজাও উন্মুক্ত, এমতাবস্থায় যদি কেউ কোনো ঘরের সামনে দিয়ে অতিক্রমকালে দৃষ্টিপাত করে তার কোনো অপরাধ হবে না। কেননা তখন গৃহবাসী অপরাধী হবে। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি গরীব)[1]
عَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ كَشَفَ سِتْرًا فَأَدْخَلَ بَصَرَهُ فِي الْبَيْتِ قَبْلَ أَنْ يُؤْذَنَ لَهُ فَرَأَى عَوْرَةَ أَهْلِهِ فَقَدْ أَتَى حَدًّا لَا يَحِلُّ لَهُ أَنْ يَأْتِيَهُ وَلَوْ أَنَّهُ حِينَ أَدْخَلَ بَصَرَهُ فَاسْتَقْبَلَهُ رَجُلٌ فَفَقَأَ عَيْنَهُ مَا عَيَّرْتُ عَلَيْهِ وَإِنْ مَرَّ الرَّجُلُ عَلَى بَابٍ لَا سِتْرَ لَهُ غَيْرِ مُغْلَقٍ فَنَظَرَ فَلَا خَطِيئَةَ عَلَيْهِ إِنَّمَا الْخَطِيئَةُ عَلَى أَهْلِ الْبَيْتِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيب
ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তি বিনা কোনো অনুমতিতে পর্দা বা প্রতিবন্ধককে উঠিয়ে ফেলে অথবা সরিয়ে দেয়া বাড়ির ভিতরের গোপন বিষয় দেখলো, সে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করলো। এর কারণ হলো এটা তার জন্য হালাল নয়। যেমন কুরআন মাজীদে বর্ণিত হয়েছে- وَمَنْ يَتَعَدَّ حُدُودُ اللّٰهِ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَه (সূরা আত্ তালাক ৬৫ : ১) আর সে কারণ হাদীসের পরবর্তী অংশে বলা হয়েছে, (لَوْ أَنَّه حِينَ أَدْخَلَ بَصَرَه فَاسْتَقْبَلَه رَجُلٌ فَفَقَأَ عَيْنَه مَا عَيَّرْتُ عَلَيْهِ) অর্থাৎ বাড়ির মানুষ তার চোখকে ফুঁড়ে দিলে তার কোনো অপরাধ নেই। তবে যে ব্যক্তির দৃষ্টি এমন দরজায় আপতিত হয় যাতে এমন পর্দা ঝুলানো থাকে না যা দৃষ্টি নিবারণ করে বা তাতে দৃষ্টি নিবারিত হয়। তখন তার কোনো অপরাধ নয়। যদি সে এটা ইচ্ছাকৃত না করে। এক্ষেত্রে অপরাধ হলো বাড়ির লোকজনের। এতে এটাও প্রমাণ হয় যে, বাড়ির লোকজনের ওপর যে কোনো একটি কাজ করা ওয়াজিব। আর তা হলো দরজায় পর্দা ঝুলিয়ে রাখা অথবা দরজা বন্ধ রাখা। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭০৭)
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যে সব অপরাধের ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) নেই
৩৫২৭-[১৮] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উন্মুক্ত তরবারি হাতে পরস্পরের মধ্যে আদান-প্রদান করতে নিষেধ করেছেন। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُتَعَاطَى السَّيْفُ مَسْلُولًا. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (يُتَعَاطٰى) শব্দটি التعاطى থেকে কর্মবাচ্য মাজহূল-এর সীগাহ। এর অর্থ গ্রহণ করা। কোষমুক্ত তরবারি গ্রহণ করা নিষেধ। অনুরূপভাবে ডেলিভারি বা হস্থান্তর করাও মাকরূহ। কারণ গ্রহণ করতে গিয়ে কখনো ভুল হয়ে যায়। ফলে শরীরের কোনো অংশ আঘাতপ্রাপ্ত হয়। অথবা কারো উপর পড়ে গিয়ে সে কষ্টের শিকার হয়। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৭৫; তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২১৬৩)
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যে সব অপরাধের ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) নেই
৩৫২৮-[১৯] হাসান বসরী (রহঃ) সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই আঙ্গুল দিয়ে ফিতা চিরতে নিষেধ করেছেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن الحسنِ
عَنْ سَمُرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى أَنْ يُقَدَّ السَّيْرُ بَيْنَ أُصبعَينِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: يُقَدُّ কর্মবাচ্য মাজহূল-এর সীগাযোগে এর অর্থ লম্বালম্বিভাবে সাধারণভাবে কর্তন করা যেমন চিরে ফেলা। السير বলা হয় চামড়া চিরে ফেলা। দুই আঙ্গুলের দ্বারা চামড়া কর্তন করা ও চিরে দেয়া নিষেধ। যাতে লোহা বা যে কোনো কাটার অস্ত্র তাকে কেটে না দেয়। এই نَهٰى তথা নিষেধাজ্ঞাটা কোষমুক্ত তরবারি গ্রহণ করার নিষেধের সাথে সাদৃশ্য বা মিল রয়েছে। অনুরূপ ব্যাখ্যা ‘ফাতহুল ওয়াদূদ’ গ্রন্থেও রয়েছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৮৬)
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যে সব অপরাধের ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) নেই
৩৫২৯-[২০] সা’ঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক তার দীনের কারণে মৃত্যুবরণ করে, সে শহীদ। যে লোক তার প্রাণ রক্ষার্থে মৃত্যুবরণ করে, সে শহীদ। যে লোক তার ধন-সম্পদ হিফাযাত করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে, সে শহীদ। যে লোক তার পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে সেও শহীদ। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]
وَعَن سعيدِ بنِ زيدٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ قُتِلَ دُونَ دِينِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ وَمَنْ قُتِلَ دُونَ دَمِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ وَمَنْ قُتِلَ دُونَ مَالِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ وَمَنْ قُتِلَ دُونَ أَهْلِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ
ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তি তার মাল রক্ষার জন্য প্রাণী অথবা অন্য কারো সাথে লড়াই করে এবং নিহত হয় সে শহীদ হিসেবে গণ্য হবে। তবে সে আখিরাতের বিধানে শহীদ হবে। অর্থাৎ সে শাহীদের নেকী পাবে। দুনিয়ায় শাহীদের হুকুম প্রযোজ্য হবে না। আর যে ব্যক্তি নিজকে, পরিবার বা নিকটতম আত্মীয়কে অথবা আল্লাহর দীনকে রক্ষা করতে শত্রুকে প্রতিহত করতে গিয়ে নিহত হয় সে শহীদ হবে। কেননা মু’মিন ব্যক্তি যার ব্যক্তিত্ব, রক্ত, পরিবার এবং সম্পদ হলো সম্মানিত ও শ্রদ্ধেয়। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৭৫৯; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৪২১)
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যে সব অপরাধের ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) নেই
৩৫৩০-[২১] ইবনু ’উমার (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, জাহান্নামের সাতটি দরজা রয়েছে- তন্মধ্যে একটি দরজা সে সমস্ত লোকের জন্য যারা আমার উম্মাতের ওপর অথবা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মাতের ওপর অন্যায়ভাবে তরবারি উঠিয়েছে। (তিরমিযী; তিনি বলেছেন, হাদীসটি গরীব)[1]
আর আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসে ’জন্তু-জানোয়ারের আঘাতে মারা গেলে ক্ষতিপূরণ নেই’ প্রসঙ্গে গযব (রাগ) অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে।
-
বিঃ দ্রঃ (وَهٰذَا الْبَابُ خَالٍ مِنَ الْفَصْلُ الثَّالِث) এ অধ্যায়ে তৃতীয় অনুচ্ছেদ নেই।
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ
رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لِجَهَنَّمَ سَبْعَةُ أَبْوَابٍ: بَابٌ مِنْهَا لِمَنْ سَلَّ السَّيْفَ عَلَى أُمَّتِي أَوْ قَالَ: عَلَى أُمَّةِ مُحَمَّدٍ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
وَحَدِيثُ أَبِي هُرَيْرَةَ: «الرِّجْلُ جُبَارٌ» ذُكِرَ فِي «بَابِ الْغَضَب»
هَذَا الْبَاب خَال من الْفَصْل الثَّالِث
ব্যাখ্যা: السل এর অর্থ কোনো জিনিসকে ছিনিয়ে নেয়া এবং স্বাচ্ছন্দে বের করা।
উম্মাতের বিরুদ্ধে তরবারি কোষমুক্ত করা অর্থাৎ তাদের ওপর আক্রমণ করা।
ইমাম তিরমিযী এ হাদীসকে আল্লাহ তা‘আলার বাণী لَهَا سَبْعَةُ أَبْوَابٍ لِكُلِّ بَابٍ مِنْهُمْ جُزْءٌ مَقْسُومٌ ‘‘তার সাতটা দরজা আছে, প্রত্যেক দরজার জন্য তাদের মধ্যে শ্রেণী নির্দিষ্ট আছে’’- (সূরা আল হিজর ১৫ : ৪৪) এর ব্যাখ্যায় বর্ণনা করেন। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৮ম খন্ড, হাঃ ৩১২৩)