পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে সব অপরাধের ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) নেই
৩৫২৫-[১৬] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কোনো ব্যক্তিকে মারধর করে, তাহলে যেন মুখমণ্ডলে না মারে। কেননা, আল্লাহ তা’আলা আদম (আঃ)-কে তার আকৃতিতেই সৃষ্টি করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يُضْمَنُ مِنَ الْجِنَايَاتِ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا قَاتَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَجْتَنِبِ الْوَجْهَ فَإِنَّ اللَّهَ خَلَقَ آدَمَ عَلَى صُورَتِهِ»
ব্যাখ্যা: হাদীসে বর্ণিত নিষেধের মধ্যে দণ্ডে প্রহৃত, অথবা শাস্তির জন্য অথবা আদাবের জন্য প্রহৃত ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা এ ব্যাপারে আবূ বাকর ও অন্যান্য রাবীর বর্ণিত আবূ দাঊদ-এর মধ্যে এক যিনাকারিণী মহিলার ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে তাতে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজম করার নির্দেশ প্রদান করেন এবং বলেনঃ «ارْمُوا وَاتَّقُوا الْوَجْهَ» তোমরা পাথর ছুঁড়ে মারো তবে মুখমণ্ডলে প্রহার থেকে বিরত থাকো। একজন মহিলা যার মৃত্যু অবধারিত তার ক্ষেত্রে যদি এ রকম নির্দেশ থাকে তবে অন্যদের ক্ষেত্রে আরো বেশি বেঁচে থাকা কর্তব্য।
ইমাম নববী বলেনঃ বিদ্বানগণ বলেন, মুখমণ্ডলে আঘাত করা নিষেধ হওয়ার কারণ হলো, মুখমণ্ডল সূক্ষ্ম জায়গা যাতে সৌন্দর্যসমূহ একিভূত হয়েছে। আর অধিকাংশ অনুভব করার অঙ্গসমূহ সেখানে বিদ্যমান। অতএব, যার মুখমণ্ডলে আঘাত করা হয় তার চেহারা নষ্ট হওয়ার ও বিকৃত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর এতে বিকৃতি ঘটলে তার বাহ্যিক অবয়ব বা সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। বরং তার চেহারায় আঘাত করা হলে অধিকাংশ সময় তা ক্ষতি থেকে নিরাপদ নয়। এর একমাত্র কারণ হলো সৌন্দর্য। তবে এর আরেকটি কারণ সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
(فَإِنَّ اللّٰهَ خَلَقَ اٰدَمَ عَلٰى صُوْرَتِه) এই বাক্যে صُوْرَتِه শব্দের «ه» যামীর-এর مرجع নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে অধিকাংশ জনই প্রহৃত ব্যক্তিকে এর مرجع বলে মত প্রকাশ করেন। কেননা এর পূর্বে তার মুখমণ্ডলের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ব্যাপারটি উল্লেখ হয়েছে। যদি এটা তা না হয় তবে পূর্বের বাক্যের সাথে এই বাক্যের সম্পর্ক ঠিক থাকছে না।
* কুরতুবী বলেনঃ কেউ কেউ «ه» যামীরকে আল্লাহর প্রতি প্রত্যাবর্তন করিয়েছেন একটি দলীলের দিকে খেয়াল করে যেটা হলো-
إِنَّ اللّٰهَ خَلَقَ اٰدَمَ عَلٰى صُورَةِ الرَّحْمٰنِ ‘‘আল্লাহ আদম (আঃ)-কে রহমানের (আল্লাহর) আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন।’’
তিনি বলেন, যে ব্যক্তি এর প্রতি ধারণা করে দলীল সাব্যস্ত করেন সে ভুল করেছে।
* হারবুল কিরমানী তাঁর ‘‘কিতাবুস্ সুন্নাহ্’’ গ্রন্থে বলেনঃ আমি ইসহক বিন রহওয়াই-কে বলতে শুনেছি যে, إِنَّ اللّٰهَ خَلَقَ اٰدَمَ عَلٰى صُورَةِ الرَّحْمٰنِ এটা সহীহ।
* ইসহক আল কাওসাজ বলেনঃ আমি আহমাদ (রহঃ)-কে এ হাদীস সম্পর্কে সহীহ বলতে শুনেছি।
* আল মাযিরী বলেনঃ ইবনু কুতায়বাহ্ হাদীসের যাহিরী অর্থ বুঝে ভুল করেছেন।
* ইমাম বুখারী তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থে ‘আল আদাবুল মুফরাদ’-এ ও ইমাম আহমাদ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে একটি মারফূ‘ হাদীসে বর্ণনা করেন যেমন-
لَا تَقُولَنَّ قَبَّحَ اللهُ وَجْهَكَ وَوَجْهَ مَنْ أَشْبَهَ وَجْهَكَ فَإِنَّ اللّٰهَ خَلَقَ اٰدَمَ عَلٰى صُورَتِه
অর্থাৎ- ‘‘যখন তোমাদের কেউ যুদ্ধ করবে তখন সে যেন মুখমণ্ডল থেকে বিরত থাকে, কেননা আল্লাহ আদম (আঃ)-কে তার সুরতে সৃষ্টি করেছেন।’’
এ হাদীস স্পষ্ট হলো যে, যামীর কথিত ব্যক্তির দিকে যাবে।
ইবনু আবূ ‘আসিম ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেন,
إِذَا قَاتَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَجْتَنِبِ الْوَجْهَ فَإِنَّ اللّٰهَ خَلَقَ اٰدَمَ عَلٰى صُورَةِ وَجْهِه
ইমাম নববী এই হুকুম বা বিধানকে হস্তক্ষেপ করেননি। এর যাহিরী অর্থ হলো চেহারায় আঘাত করা হারাম। এই মতটিকে سُوَيْدِ بْنِ مُقَرِّنٍ সাহাবীর হাদীস আরো শক্তিশালী করে দেয়। তথা أَنَّه رَأَى رَجُلًا لَطَمَ غُلَامَه فَقَالَ أَو مَا عَلِمْتَ أَنَّ الصُّورَةَ مُحْتَرَمَةٌ অর্থাৎ- ‘‘তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন সে তার গোলামকে চড় মারছে। সে বলল, তুমি কি জান না যে, নিশ্চয় চেহারা সম্মানিত’’ হাদীসটিকে ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন। (ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৫৯; শারহে মুসলিম ১৫ খন্ড, হাঃ ২৬১২)