পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৬৬-[২৯] কায়স ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (ইরাকে অবস্থিত, কূফার সন্নিকটবর্তী) ’হীরা’ শহরে গিয়ে দেখতে পেলাম যে, তারা তাদের নেতাকে সম্মানার্থে সিজদা করছে। এটা দেখে আমি মনে মনে বললাম, নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই সিজদা পাওয়ার সর্বাধিক উপযুক্ত। অতঃপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললাম, আমি হীরা’র সফরে দেখতে পেলাম যে, সেখানকার অধিবাসীরা তাদের নেতাকে সিজদা করে। আমি স্থির করেছি যে, আপনিই সাজদার অধিক হকদার। এ কথা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, (তবে কি আমার মৃত্যুর পরে) তুমি আমার কবরের সম্মুখ দিয়ে গমনকালে কবরকে সিজদা করবে? উত্তরে আমি বললাম, (নিশ্চয়) না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না, (কস্মিনকালেও) করো না। কেননা আমি যদি (আল্লাহ ব্যতিরেকে) অপর কাউকে সিজদা করতে বলতাম তবে স্বামীদের জন্য রমণীদেরকে সিজদা করার নির্দেশ করতাম। (আবূ দাঊদ)[1]
عَنْ قَيْسِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ: أَتَيْتُ الْحِيرَةَ فَرَأَيْتُهُمْ يَسْجُدُونَ لِمَرْزُبَانٍ لَهُمْ فَقُلْتُ: لَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم أَحَق أَن يسْجد لَهُ فَأَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ: إِنِّي أَتَيْتُ الْحِيرَةَ فَرَأَيْتُهُمْ يَسْجُدُونَ لِمَرْزُبَانٍ لَهُمْ فَأَنْتَ أَحَقُّ بِأَنْ يُسْجَدَ لَكَ فَقَالَ لِي: «أَرَأَيْتَ لَوْ مَرَرْتَ بِقَبْرِى أَكُنْتَ تَسْجُدُ لَهُ؟» فَقُلْتُ: لَا فَقَالَ: «لَا تَفْعَلُوا لَو كنت آمُر أحد أَنْ يَسْجُدَ لِأَحَدٍ لَأَمَرْتُ النِّسَاءَ أَنْ يَسْجُدْنَ لِأَزْوَاجِهِنَّ لِمَا جَعَلَ اللَّهُ لَهُمْ عَلَيْهِنَّ مِنْ حق» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: হীরাত ইরাকের কুফা নগরীর উপকণ্ঠে একটি প্রাচীন শহর। এখানকার লোকের তাদের সমাজের প্রধান ও বড় বড় বীর বাহাদুরকে সিজদা করে সম্মান প্রদর্শন করতো। হাদীসের বর্ণনাকারী কয়স (রহঃ) এগুলো স্বচক্ষে দর্শন করে মনে মনে ভাবেন আমাদের নেতা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের এই সিজদা পাওয়ার বেশি হকদার; সুতরাং আমরা মদীনাহ্ পৌঁছে তাকেও সিজদা করবো। সফর থেকে ফিরে এসে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট তার মনের ইচ্ছা ব্যক্ত করে বলেন, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা কি আপনাকে সিজদা করবো না?
সিজদা যেহেতু কারো সম্মান ও দাসত্ব প্রকাশের জন্য করা হয়ে থাকে। আর এই দাসত্ব একমাত্র আল্লাহর জন্যই স্বীকৃত অন্যের জন্য নয়, সুতরাং (এই দাসত্ব ও সম্মানের) সিজদা ও আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য স্বীকৃত নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, হে কায়স! আমার মৃত্যুর পর তুমি যদি আমার কবরের পাশ দিয়ে যাও তবে কি ঐ কবরকে বা ঐ কবরবাসীকে সিজদা করবে? সাহাবী উত্তরে বললেন, না তা করবো না, সাহাবীর এই না বলার পরও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, না তোমরা তা কখনো করো না; আমার মৃত্যুর পর যেমন আমার কবরকে সিজদা করবে না ঠিক তেমনি আমার জীবদ্দশায়ও আমাকে সিজদা করবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঐ নিষেধাজ্ঞা ঐ সাহাবীর জন্য যেমন ছিল ঠিক তেমনি সর্বকালের সকল উম্মাতের জন্য প্রযোজ্য। আল্লাহ তা‘আলার বাণী : ‘‘তোমরা সূর্যকে সিজদা করো না, চন্দ্রকেও না, আল্লাহকে সিজদা করো, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি একান্ত তার ‘ইবাদাত করো।’’ (সূরা হা-মীম আস্ সিজদা ৪১ : ৩৭)
এ আয়াতে কারীমার ব্যাখ্যায় ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ ‘‘তোমরা সিজদা করো ঐ সত্বাকে যিনি চিরঞ্জীব, যার মৃত্যু নেই, আর যার রাজত্বের পতন ঘটে না।’’ আজ তোমরা আমার সম্মান ও বড়ত্বের কারণে আমাকে সিজদা দিবে কাল যখন আমি মৃত্যুবরণ করবো এবং কবরে সমাহিত হবো তখন কি করবে? ধ্বংসশীল ও মরণশীল কোনো কিছুকেই সাজদায় দেয়া যাবে না। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নারী জাতির ওপর স্বামীর অধিকার বা হাকের কথা উল্লেখ করে বলেন, আল্লাহ ছাড়া কাউকে সিজদা দেয়া যদি বৈধ হতো তাহলে নারী জাতিকে নির্দেশ করতাম যে, তারা যেন তাদের স্বামীদেরকে সিজদা করে। আল্লাহ ছাড়া অন্যকে সিজদা বৈধ নয়, তাই নারীকেও তার স্বামীদের সাজদার হুকুম করা হয়নি। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
[পীর বা পীরের কবরে সিজদা দানকারীদের এ হাদীস থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা উচিত] (সম্পাদক)
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৬৭-[৩০] আর আহমাদ মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন।[1]
وَرَوَاهُ أَحْمد عَن معَاذ بن جبل
ব্যাখ্যা: এ হাদীসের ব্যাখ্যা পূর্বের হাদীসের অনুরূপ। এ হাদীসটি জামি‘ আত্ তিরমিযীতে আবূ হুরায়রাহ্ থেকে, মুসনাদ আহমাদে মু‘আয ইবনু জাবাল থেকে এবং হাকিম বুরায়দাহ্ থেকে বর্ণিত হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৬৮-[৩১] ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ স্বামী স্বীয় স্ত্রীকে (প্রয়োজনসাপেক্ষে) প্রহার করলে (কিয়ামত দিবসে) জিজ্ঞাসিত হবে না। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يُسْأَلُ الرَّجُلُ فِيمَا ضَرَبَ امْرَأَتَهُ عَلَيْهِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: স্ত্রীকে প্রহার করার বৈধতা সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ পূর্বের হাদীসে অতিবাহিত হয়েছে। পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে ইসলামী সীমারেখার মধ্য থেকে প্রয়োজনে স্ত্রীকে সামান্য প্রহার করার বৈধতা বিদ্যমান রয়েছে। স্ত্রীকে দীন ও আদব শিক্ষা দেয়ার জন্য, শারী‘আতের বিধান লঙ্ঘনের কারণে প্রহার করা বৈধ। তবে এই প্রহারের অবশ্যই মুখমণ্ডল ও স্পর্শকাতর কোনো অঙ্গে প্রহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অমানুষিক নির্যাতন করা যাবে না, অঙ্গহানি ঘটে এমন প্রহার করা চলবে না। এ জাতীয় শত স্ত্রীকে প্রহারের জন্য কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে স্বামীকে জওয়াবদিহী করতে হবে না। এ ধরনের হালকা প্রহারের দরুন দুনিয়ার আদালতেও তার বিরুদ্ধে বিচার প্রার্থনা করা যাবে না।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ অত্র হাদীসের মধ্যে উল্লেখিত عَلَيْهِ শব্দের «ه» সর্বনামটি পূর্বে উল্লেখিত «مَا» এর দিকে ফিরেছে, এটা النُّشُوزِ এর অর্থ বহনকারী যা কুরআনে উল্লেখ হয়েছে যেমন: وَاللَّاتِىْ تَخَافُونَ نُشُوْزَهُنَّ ‘‘আর যাদের অবাধ্যতার আশংকা করো’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ৩৪)। এই نُشُوزِ বা অবাধ্যতার কারণে তাদের নাসীহাত করতে হবে, তাতে সংশোধন না হলে তাদের বিছানা ত্যাগ করতে হবে এতেও সংশোধন না হলে, বলা হয়েছে: وَاضْرِبُوهُنَّ আর তাদের প্রহার করো।’ [এ প্রহার কি পরিমাণ হবে পূর্বে তা অতিবাহিত হয়েছে] (সম্পাদক)
সুতরাং স্ত্রীর মধ্যে نُشُوزِ বা অবাধ্যচারিতা পাওয়া গেলে স্বামী তার সংশোধনের চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রহার করতে পারবেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৬৯-[৩২] আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ছিলাম, এমন সময়ে জনৈকা রমণী এসে বলল, যখন আমি সালাত আদায় করি তখন আমার স্বামী সফ্ওয়ান ইবনু মু’আত্ত্বল আমাকে প্রহার করে, আমি যখন সওম পালন করি তখন সওম ভেঙ্গে দেয় এবং তিনি সূর্যোদয়ের পূর্বে ফজরের সালাত আদায় করে না। রাবী বলেন, সফ্ওয়ানও সেখানে উপস্থিত ছিলেন, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (অভিযোগের সত্যতা) তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলল, হে আল্লাহর রসূল! তার অভিযোগ হলো সালাত আদায়কালে আমি তাকে প্রহার করি- এর উত্তর হলো, সে সালাতে দু’টি (বা দীর্ঘ) সূরা পাঠ করে, যা আমি তাকে নিষেধ করেছি।
রাবী বলেন, এটা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একটি সূরাই তো লোকেদের জন্য যথেষ্ট। আর তার (পরবর্তী) অভিযোগ- আমি তাকে সওম ভাঙ্গতে বাধ্য করি। অথচ (একাধারে সওম পালনে) এত ধৈর্য ধারণ করতে পারি না, আমি তো একজন যুবক পুরুষ। এটা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোনো স্ত্রীলোক যেন স্বামীর অনুমতি ব্যতীত (নফল) সওম পালন না করে। আর তার (শেষ) অভিযোগ- সূর্যোদয়ের পূর্বে ফজরের সালাত আদায় করি না। এর কারণ হলো, আমাদের পরিবারের লোকেরা দীর্ঘ রাত পর্যন্ত জেগে (জমির পানি নিষ্কাশনে লিপ্ত) থাকার দরুন প্রায়ই সূর্যোদয়ের (সঠিক সময়ের) পূর্বে ঘুম হতে উঠতে পারি না। এ কথা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে সফ্ওয়ান! যখনই ঘুম হতে জাগবে তখনই সালাত আদায় করবে। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ عِنْده فَقَالَت: زَوْجِي صَفْوَانُ بْنُ الْمُعَطَّلِ يَضْرِبُنِي إِذَا صَلَّيْتُ وَيُفَطِّرُنِي إِذَا صُمْتُ وَلَا يُصَلِّي الْفَجْرَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ قَالَ: وَصَفْوَانُ عِنْدَهُ قَالَ: فَسَأَلَهُ عَمَّا قَالَت فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَمَّا قَوْلُهَا: يَضْرِبُنِي إِذَا صَلَّيْتُ فَإِنَّهَا تَقْرَأُ بِسُورَتَيْنِ وَقَدْ نَهَيْتُهَا قَالَ: فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْ كَانَتْ سُورَةً وَاحِدَةً لَكَفَتِ النَّاسَ» . قَالَ: وَأَمَّا قَوْلُهَا يُفَطِّرُنِي إِذَا صُمْتُ فَإِنَّهَا تَنْطَلِقُ تَصُوم وَأَنا رجل شَاب فَلَا أَصْبِر فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَصُومُ امْرَأَةٌ إِلَّا بِإِذْنِ زَوْجِهَا» وَأَمَّا قَوْلُهَا: إِنِّي لَا أُصَلِّي حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ فَإنَّا أهل بَيت قد عرف لنا ذَاك لَا نَكَادُ نَسْتَيْقِظُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ قَالَ: «فَإِذَا اسْتَيْقَظْتَ يَا صَفْوَانُ فَصَلِّ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: মহিলার অভিযোগ যে, আমার স্বামী সফ্ওয়ান ইবনু মু‘আত্ত্বল সালাত আদায় করলে আমাকে মারে এবং সওম (রোযা) পালন করলে আমার সওম ভেঙ্গে দেয়। অর্থাৎ সে দিনের বেলায় জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে আমাকে সওম ভাঙ্গতে বাধ্য করে বা সওম নষ্ট করে দেয়। সূর্য উদয়ের পূর্বে সে ফজরের সালাত আদায় করে না, এটা হাকীকাতেই বা প্রকৃত অর্থেই হতে পারে অথবা কোনো মতে সূর্য উদয়ের পূর্বে আদায়কে মুবালাগাতান বা আধিক্যভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, সূর্য উদয়ের আগে ফযর সালাত আদায় করে না। অভিযোগকারিণী মহিলার স্বামী সফ্ওয়ান সেখানেই উপস্থিত ছিলেন, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবার সফ্ওয়ান -কে তার বক্তব্য কি তা পেশ করতে বললেন। সফ্ওয়ান তার প্রতিটি অভিযোগ স্বীকার করলেন। অতঃপর তার কারণ উল্লেখ করে বললেন, সে রাতে বড় বড় সূরা দিয়ে সালাত আদায় করে, দিনে প্রত্যহ নফল সওম পালন করে- আমি যুবক মানুষ, দিনের বেলায়ও তার সাথে মেলামেশা করতে পারি না, রাতেও পারি না। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মানুষ যদি একটি সূরা পাঠ করতো যথেষ্ট হতো। সালাতের জন্য এটাই যথেষ্ট হতো।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ এর অর্থ হলো যদি শুধু একটি সূরা অর্থাৎ ফাতিহাই পাঠ করতো তা যথেষ্ট হতো।
সওমের ব্যাপারেও তিনি ঘোষণা করলেন, কোনো মহিলা স্বামীর অনুমতি ছাড়া নফল সওম পালন করতে পারবে না। লোকটি ফজরের সালাত বিলম্বে আদায়ের কারণ বর্ণনা করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে সফ্ওয়ান! তুমি যখনই জাগবে সালাত আদায় করে নিবে।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ সফ্ওয়ান-এর ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ওযর গ্রহণ করেছেন, আর স্ত্রীর ত্রুটি না থাকা সত্ত্বেও তার ওযর গ্রহণ করেননি। এটা পুরুষের অধিক হক নারীর ওপর তা অবহিত করার জন্য। (‘আওনুল মা‘বূদ ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২৪৫৬; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৭০-[৩৩] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাজির ও আনসারগণের মাঝে উপস্থিত ছিলেন। তখন একটি উট এসে তাঁকে সিজদা করল। এটা দেখে সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনাকে জীব-জন্তু, গাছপালা সিজদা করে, সুতরাং আপনাকে সিজদা করা আমরা বেশী হকদার। এতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা তোমাদের রবে্র ’ইবাদাত (সিজদা) কর এবং তোমাদের ভাইকে (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যথাযোগ্য) সম্মান কর। আমি যদি (দুনিয়াতে) কারো প্রতি সিজদা করতে নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে তার স্বামীর প্রতি সিজদা করার অনুমতি দিতাম। স্বামী যদি স্ত্রীকে (ন্যায়সঙ্গত ও প্রয়োজনে) হলুদ বর্ণের পর্বত হতে কালো বর্ণের পর্বতে এবং কালো বর্ণের পর্বত হতে সাদা বর্ণের পর্বতে পাথর স্থানান্তরের নির্দেশ করে, তবে তার দায়িত্বনিষ্ঠার সাথে তা পালন করা। (আহমাদ)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ فِي نَفَرٍ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ فَجَاءَ بِعِيرٌ فَسَجَدَ لَهُ فَقَالَ أَصْحَابُهُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ تَسْجُدُ لَكَ الْبَهَائِمُ وَالشَّجَرُ فَنَحْنُ أَحَقُّ أَنْ نَسْجُدَ لَكَ. فَقَالَ: «اعْبُدُوا رَبَّكُمْ وَأَكْرِمُوا أَخَاكُمْ وَلَوْ كُنْتُ آمُرُ أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِأَحَدٍ لَأَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا وَلَوْ أَمَرَهَا أَنْ تَنْقُلَ مِنْ جَبَلٍ أَصْفَرَ إِلَى جَبَلٍ أَسْوَدَ وَمِنْ جَبَلٍ أَسْوَدَ إِلَى جَبَلٍ أَبْيَضَ كَانَ يَنْبَغِي لَهَا أَن تَفْعَلهُ» . رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যা: বিভিন্ন বর্ণনা থেকেই জানা যায় যে, পাথর বৃক্ষাদি এবং চতুস্পদ প্রাণী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সিজদা করতো। এমনি একটি ঘটনা প্রত্যক্ষ করে সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! চতুষ্পদ প্রাণী এবং বৃক্ষাদি আপনাকে সিজদা করছে আর আমরা করছি না? অথচ পিতা-মাতার আদাব-শিষ্টাচার শিক্ষা দানের চেয়ে নবূওয়াতী দীন শিক্ষা দানের শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ক্ষেত্রে আপনি অধিক হকদার। সুতরাং এজন্য কি আমরা আপনাকে সিজদা করবো না? উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘ইবাদাত করবে আল্লাহর, অর্থাৎ ‘ইবাদাতের চূড়ান্ত এবং সর্বোচ্চ অবস্থা হলো সিজদা প্রদান করা, সুতরাং তা খাস একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত, অন্য কারো জন্যই তা প্রযোজ্য নয়।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার ভাইকে সম্মান করবে, অর্থাৎ তাকে অন্তরে ভালোবাসবে এবং তার কথা মেনে চলবে। এর অর্থ হলো তোমরা তোমাদের নাবীর আনুগত্য করবে এবং তাঁর কথা মেনে চলবে, আর তাঁর নিষেধাজ্ঞা থেকে দূরে থাকবে। তাঁর এ অধিকার নেই যে, লোকে তাঁকে সিজদা করবে।
এতে আল্লাহ তা‘আলার এই বাণীর প্রতি ইশারা রয়েছে : ‘‘কোনো মানুষ যাকে আল্লাহ তা‘আলা কিতাব, রাজত্ব ও নবূওয়াত দান করেছেন, তার এ অধিকার নেই যে, সে লোকেদেরকে বলবে, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমার ‘আব্দ বা বান্দা হয়ে যাও; বরং তোমরা সকলেই আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও’’- (সূরা আ-লি ‘ইমরান ৩ : ৭৯)। আল্লাহর এ বাণীর দিকেও ইঙ্গিত রয়েছে : ‘‘তুমি আমাকে যা নির্দেশ করেছো তা ছাড়া আমি তাদের (উম্মাতদের) কিছুই বলিনি, (যা বলেছি তা হলো) তোমরা ঐ আল্লাহর ‘ইবাদাত করো যিনি আমার রব এবং তোমাদের রব।’’ (সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ১১৭)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উটের সিজদা করার ঘটনাবলী ছিল আদত পরিপন্থী ব্যতিক্রম ঘটনা যা আল্লাহর নির্দেশক্রমে সংঘটিত হয়েছিল। ঐ কাজের মধ্যে আল্লাহর রসূলের কোনো ক্ষমতা বা হাত ছিল না। উটও নিজস্ব ইচ্ছায় সিজদা করেনি বরং আল্লাহর আদেশ পালনে বাধ্য হয়েছিল, যেমন মালায়িকার (ফেরেশতাগণের) প্রতি আদামকে সিজদা দানের নির্দেশ হয়েছিল। অতঃপর তারা সিজদা করেছিল।
স্বামীর আনুগত্য ওয়াজিব হওয়া অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে বুঝানোর জন্য সিজদা দেয়ার দৃষ্টান্ত পেশ করা হয়েছে। এ দৃষ্টান্ত মুবালাগাহ্ বা অতিরঞ্জন হিসেবে বলা হয়েছে। স্বামী যদি স্ত্রীকে এক পাহাড়ের পাথর অন্য পাহাড়ে নেয়ার মতো কষ্টকর কাজের নির্দেশও করে তবু তা পালন করা উচিত।
দুই রংয়ের দু’টি পাহাড়ের কথা পূর্ণ মুবালাগাহ্ হিসেবে বলা হয়েছে। কেননা সাদা কালো দু’টি পাহাড় পাশাপাশি পাওয়া যাবে না। পাওয়া গেলেও হয় তো একটি থেকে অন্যটি হবে অনেক দূরে, ঐ এক পাহাড় থেকে অন্যটিতে পাথর স্থানান্তরিত করা হবে ভীষণ কষ্টকর কাজ। স্বামী যদি তাও নির্দেশ করে স্ত্রীকে তাই পালন করতে হবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৭১-[৩৪] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন লোকের সালাত গৃহীত হয় না এবং তাদের নেক আ’মাল ঊর্ধ্বাকাশে পৌঁছায় না। (প্রথমত) পলাতক ক্রীতদাস- যতক্ষণ পর্যন্ত না সে মালিকের কাছে ফিরে আসে। (দ্বিতীয়ত) সে স্ত্রী- যার প্রতি তার স্বামী অসন্তুষ্ট, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার স্বামী মনোতুষ্ট হয়। (তৃতীয়ত) মদ্যাসক্ত ব্যক্তি- যতক্ষণ পর্যন্ত না তার হুঁশ ফিরে আসে। (বায়হাক্বী- শু’আবুল ঈমান)[1]
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ثَلَاثَةٌ لَا تُقْبَلُ لَهُمْ صَلَاةٌ وَلَا تَصْعَدُ لَهُمْ حَسَنَةٌ الْعَبْدُ الْآبِقُ حَتَّى يَرْجِعَ إِلَى مَوَالِيهِ فَيَضَعَ يَدَهُ فِي أَيْدِيهِمْ وَالْمَرْأَةُ السَّاخِطُ عَلَيْهَا زَوْجُهَا وَالسَّكْرَانُ حَتَّى يصحو» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي شعب الْإِيمَان
ব্যাখ্যা : তিন ব্যক্তি বলতে তিন শ্রেণীর মানুষ বা তিন প্রকৃতি ও বর্ণের মানুষ, এতে নারী পুরুষের কোনো ভেদাভেদ নেই। তাদের সালাত কবুল করা হবে না। এর অর্থ পরিপূর্ণভাবে গ্রহণ করা হবে না।
لَا تَصْعَدُ এটি فعل الْمُضَارَعَةِ এর চিহ্ন ي বর্ণে যবর এবং পেশ উভয় যোগে পাঠ করা যায় এতে কর্ম ও কর্তৃবাচ্য হিসেবে অর্থের পার্থক্য বুঝে নিতে হবে।
«لَا تَصْعَدُ لَهُمْ حَسَنَةٌ» তাদের নেক ‘আমল উপরে উঠবে না’ বা তাদের নেকী উপরে উঠানো হবে না, উপরের অর্থ হলো আল্লাহর নিকটে উঠানো। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘তাঁরই দিকে উত্থিত হয় পবিত্র কথাগুলো আর সৎকাজ সেগুলোকে উচ্চে তুলে ধরে।’’ (সূরা আল ফা-ত্বির ৩৫ : ১০)
অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, অর্থাৎ তাদের নেক ‘আমল আসমানে উঠানো হবে না। তিন ব্যক্তি বা তিন শ্রেণীর মধ্যে একজন হলো গোলাম বা দাস যে তার মুনীব বা মালিক থেকে পালিয়ে যায়। দাস প্রথা বর্তমানে নেই, সুতরাং এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা বর্জন করা হলো।
দ্বিতীয় ব্যক্তি হলো ঐ মহিলা যার স্বামী তার ওপর অসন্তুষ্ট। এ মহিলার স্বামী সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তার কোনো ‘ইবাদাত আল্লাহর কাছে পৌঁছবে না, অর্থাৎ আল্লাহ তা গ্রহণ করবেন না। তৃতীয় হলো নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি, নেশার ঘোর থেকে ফিরে তাওবাহ্ না করা পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে তার নেক ‘আমল কবুল হবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৭২-[৩৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, কোন্ রমণী সর্বোত্তম? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে স্বামী স্ত্রীর প্রতি তাকালে তাকে সন্তুষ্ট করে দেয়, স্বামী কোনো নির্দেশ করলে তা (যথাযথভাবে) পালন করে এবং নিজের প্রয়োজনে ও ধন-সম্পদের ব্যাপারে স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধাচরণ করে না। (নাসায়ী ও বায়হাক্বী- শু’আবুল ঈমানে)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قِيلَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيْ النِّسَاءِ خَيْرٌ؟ قَالَ: «الَّتِي تَسُرُّهُ إِذَا نَظَرَ وَتُطِيعُهُ إِذَا أَمَرَ وَلَا تُخَالِفُهُ فِي نَفْسِهَا وَلَا مَالِهَا بِمَا يَكْرَهُ» . رَوَاهُ النَّسَائِيُّ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَان
ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে উত্তম নারীর গুণাবলী বর্ণনা করেছেন। ইসলামের মৌলিক ‘ইবাদাত বন্দেগী যথাযথ পালন সত্ত্বেও অনেক নারী স্বামী সোহাগিনী হতে পারে না। অনেকে স্বামীর অবাধ্য না হলেও আদেশ পালনে যত্নবান ও তৎপর নয়। কেউ বা আবার স্বামীর সম্পদ রক্ষণে দায়িত্বশীল নয়। অনেক সাহাবীর প্রশ্নের প্রেক্ষিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
(১) উত্তম নারী হলো সে, যে তার স্বামীকে আনন্দিত করে সে যখন তার দিকে তাকায়। এর অর্থ হলো : সে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি হয়ে হাস্যোজ্জ্বল কমনীয় চেহারায় বিনম্রপদে স্বামীর সামনে আসে। মধুমাখা মিষ্টি ভাষায় তার সাথে কথা বলে। তার দিকে তাকিয়ে তার কথা শুনে স্বামী আনন্দিত হয়। (২) ‘সে তার স্বামী কোনো আদেশ করলে তা পালন করে।’ এই আদেশ আল্লাহর নাফরমানী এবং পাপমূলক আদেশ হওয়া চলবে না এবং শারী‘আতের আওতা বহির্ভূত হতে পারবে না। (৩) ‘সে তার নিজের জীবন এবং স্বামীর সম্পদের ব্যাপারে এমন কিছু করবে না যা তার স্বামী অপছন্দ করে।’ অর্থাৎ সে নারী তার স্বামীর সম্পদের পূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণকারী হবে, স্বামীর মাল-সম্পদ তার দ্বারা খোয়া যাবে না। স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে খরচ করবে না এবং তার খিয়ানাত করবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৭৩-[৩৬] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যাকে চারটি নি’আমাত দান করা হয়েছে, তাকে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ দান করা হয়েছে- ১- শুকরগুজার অন্তর, ২- জিকির-আযকারে রত জিহবা, ৩- বিপদাপদে ধৈর্যশীল শরীর, ৪- নিজের (ইজ্জত-আব্রু) ও স্বামীর ধন-সম্পদে আমানতদারিতায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ স্ত্রী। (বায়হাক্বী- শু’আবুল ঈমান)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ: أَربع من أعطيهن فقد أعطي خير الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ: قَلْبٌ شَاكِرٌ وَلِسَانٌ ذَاكِرٌ وَبَدَنٌ عَلَى الْبَلَاءِ صَابِرٌ وَزَوْجَةٌ لَا تَبْغِيهِ خَوْنًا فِي نَفسهَا وَلَا مَاله . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي شعب الْإِيمَان
ব্যাখ্যা: আমাদের জীবন ধারণের জন্য যা কিছু ব্যবহার করি সবকিছুই আল্লাহর নি‘আমাত। মানুষ যদি এ নি‘আমাতসমূহ ব্যবহার করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে পারে এবং বিপদে ধৈর্য ধারণ করতে পারে তবে উভয় জগতেই সে সার্থক। এসব নি‘আমাতরাজির মধ্যে ঐ নি‘আমাত আরো শ্রেষ্ঠ নি‘আমাত যার বিনিময়ে আখিরাতে সে আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য হবে। এ জাতীয় নি‘আমাতের মধ্যে এখানে চারটি নি‘আমাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
(১) কৃতজ্ঞ অন্তরঃ অর্থাৎ আল্লাহর নি‘আমাত পেয়ে যে হৃদয় তাঁর শুকরিয়া আদায় করতে পারে এমন হৃদয় আল্লাহ যাকে দান করেছেন সে দুই জগতেরই মহা কল্যাণ লাভ করেছে।
(২) জিকিরকারী জিহবাঃ অর্থাৎ আল্লাহ যাকে তার জিকির আদায়কারী রসনা দান করেছেন সে প্রকাশ্যে গোপনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং যিক্রের মাধ্যমে সে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে ধন্য হয়, এমন ব্যক্তি দুনিয়া ও আখিরাতের প্রকৃত কল্যাণ হাসিল করেছেন।
(৩) বিপদে ধৈর্যশীল শরীরঃ এর অর্থ আল্লাহ তা‘আলা যাকে এমন শরীর দান করেছেন যে শরীর সাংসারিক কষ্ট-ক্লেশের পরও ‘ইবাদাতে ধৈর্যশীল থাকে, রোগ-ব্যাধি, শোক, বিপদ-মুসীবাত ইত্যাদি ধৈর্যের সাথে সহ্য করে এবং তাতে আল্লাহকে ভুলে যায় না।
(৪) এমন স্ত্রী, যে নিজের ব্যাপারে এবং স্বামীর ধন-সম্পদের ব্যাপারে খিয়ানাতের চেষ্টা করে না। অর্থাৎ নিজের ইজ্জত-আব্রু এবং স্বামীর মাল-সম্পদ হিফাযাতে সে সংকল্পবদ্ধ।
এই চারটি নি‘আমাত আল্লাহ যাকে দান করেছেন তাকে দুনিয়া আখিরাতের শ্রেষ্ঠ নি‘আমাত দান করেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)