পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭২২-[১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আবূ সায়ফ কর্মকারের ঘরে প্রবেশ করলাম। তিনি ছিলেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পুত্র ইব্রাহীমের ধাত্রীর স্বামী। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবরাহীমকে কোলে তুলে নিলেন, চুমু খেলেন ও শুঁকলেন। এরপর আমরা আবার একদিন আবূ সায়ফ-এর ঘরে গেলাম। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তনয় মৃত্যু শয্যায়। (তার এ অবস্থা দেখে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দু’চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল। এ অবস্থা দেখে ’আবদুর রহমান ইবনু ’আওফ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কাঁদছেন! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হে ইবনু ’আওফ! এটা আল্লাহর রহমত। তারপরও তাঁর দু’চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ চোখ পানি বহাচ্ছে, হৃদয় শোকাহত। কিন্তু এরপরও আমাদের মুখ দিয়ে এমন শব্দ বেরুচ্ছে যার জন্য আমাদের পরওয়ারদিগার আমাদের ওপর সন্তুষ্ট। হে ইব্রাহীম! আমরা তোমার বিচ্ছেদে খুবই শোকাহত। (বুখারী, মুসলিম)[1]

اَلْبُكَاءُ عَلَى الْمَيِّتِ

عَنْ أَنَسٍ قَالَ: دَخَلْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى أَبِي سَيْفٍ الْقَيْنِ وَكَانَ ظِئْرًا لِإِبْرَاهِيمَ فَأَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِبْرَاهِيمَ فَقَبَّلَهُ وَشَمَّهُ ثُمَّ دَخَلْنَا عَلَيْهِ بَعْدَ ذَلِكَ وَإِبْرَاهِيمُ يَجُودُ بِنَفْسِهِ فَجَعَلَتْ عَيْنَا رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَذْرِفَانِ. فَقَالَ لَهُ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ: وَأَنْتَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ فَقَالَ: يَا ابْنَ عَوْفٍ إِنَّهَا رَحْمَةٌ ثُمَّ أَتْبَعَهَا بِأُخْرَى فَقَالَ: إِنَّ الْعَيْنَ تَدْمَعُ وَالْقَلْبَ يَحْزَنُ وَلَا نَقُولُ إِلَّا مَا يُرْضِي رَبَّنَا وَإِنَّا بِفِرَاقِك يَا إِبْرَاهِيم لَمَحْزُونُونَ

عن انس قال: دخلنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم على ابي سيف القين وكان ظىرا لابراهيم فاخذ رسول الله صلى الله عليه وسلم ابراهيم فقبله وشمه ثم دخلنا عليه بعد ذلك وابراهيم يجود بنفسه فجعلت عينا رسول الله صلى الله عليه وسلم تذرفان. فقال له عبد الرحمن بن عوف: وانت يا رسول الله؟ فقال: يا ابن عوف انها رحمة ثم اتبعها باخرى فقال: ان العين تدمع والقلب يحزن ولا نقول الا ما يرضي ربنا وانا بفراقك يا ابراهيم لمحزونون

ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছেলে ইব্রাহীম মারা যাওয়ার পর তিনি তাকে চুম্বন করেছিলেন। এ থেকে এ প্রমাণ পাওয়া যায় যে, কোন ব্যক্তি মারা গেলে তাকে চুমু দেয়া জায়িয আছে। এ ছাড়া এ হাদীসে আরো যে বিষয়টি উল্লেখযোগ্য তা হল, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চোখ থেকে পানি পড়েছিল অর্থাৎ ইব্রাহীম মারা যাওয়ার কারণে তিনি কেঁদেছিলেন। এখানে প্রশ্ন দেখা দেয় যে, কারো সন্তান মারা গেলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ধৈর্য ধারণ করার উপদেশ দিতেন। কিন্তু নিজের সন্তান মারা যাওয়ার পর কান্না করলেন কেন? এর উত্তর হচ্ছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই কান্না আফসোস বা হা-হুতাশ করার জন্য ছিল না। বরং এটা ছিল সন্তানের প্রতি দয়া ও মমতার বহিঃপ্রকাশ। এ ধরনের কান্না নিষিদ্ধ নয়। বরং এটা আরো প্রশংসনীয় এজন্য যে, এর দ্বারা ব্যক্তির অন্তরের নম্রতা ও স্নেহশীলতা প্রকাশ পায়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭২৩-[২] উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা (যায়নাব) কাউকে দিয়ে তাঁর কাছে খবর পাঠালেন যে, তাঁর ছেলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করছে, তাই তিনি যেন তাড়াতাড়ি তাঁর কাছে আসেন। (এ কথা শুনে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে সালাম পাঠালেন আর বললেন, যে জিনিস (অর্থাৎ সন্তান) আল্লাহ নিয়ে নেন তা তাঁরই। আর যে জিনিস তিনি দিয়ে রেখেছেন তাও তাঁরই। প্রতিটি জিনিসই তার কাছে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। অতএব অপরিসীম ধৈর্য ও ইহতিসাবের সাথে থাকতে হবে (শোকে দুঃখে বিহ্বল না হওয়া উচিত)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কন্যা আবার তাঁকে কসম দিয়ে তাড়াতাড়ি তাঁর কাছে যাবার জন্য খবর পাঠালেন। এবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা’দ ইবনু ’উবাদাহ্, মা’আয ইবনু জাবাল, উবাই ইবনু কা’ব, যায়দ ইবনু সাবিত সহ কিছু লোককে সাথে নিয়ে ওখানে গেলেন। বাচ্চাটিকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোলে তুলে দেয়া হলো। তখন তার শ্বাস ওঠানামা করছে। বাচ্চার এ অবস্থা দেখে রসূলের চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগল। সা’দ রসূলের চোখে পানি দেখে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এটা কি? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটা রহমত, যা আল্লাহ বান্দার মনে সৃষ্টি করে দেন আর আল্লাহ তাঁর দয়াশীল বান্দাগণের প্রতি দয়া করেন।’’ (বুখারী, মুসলিম)[1]

اَلْبُكَاءُ عَلَى الْمَيِّتِ

وَعَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ قَالَ: أَرْسَلَتِ ابْنَةُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِ: إِنَّ ابْنًا لِي قُبِضَ فَأْتِنَا. فَأَرْسَلَ يُقْرِئُ السَّلَامَ وَيَقُولُ: «إِنَّ لِلَّهِ مَا أَخَذَ وَلَهُ مَا أَعْطَى وَكُلٌّ عِنْدَهُ بِأَجَلٍ مُسَمًّى فَلْتَصْبِرْ وَلْتَحْتَسِبْ» . فَأَرْسَلَتْ إِلَيْهِ تُقْسِمُ عَلَيْهِ لَيَأْتِيَنَّهَا فَقَامَ وَمَعَهُ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ وَمُعَاذُ بْنُ جبل وَأبي بن كَعْب وَزيد ابْن ثَابِتٍ وَرِجَالٌ فَرُفِعَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّبِيُّ وَنَفْسُهُ تَتَقَعْقَعُ فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ. فَقَالَ سَعْدٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا هَذَا؟ فَقَالَ: «هَذِهِ رَحْمَةٌ جَعَلَهَا اللَّهُ فِي قُلُوبِ عِبَادِهِ. فَإِنَّمَا يَرْحَمُ اللَّهُ مِنْ عِبَادِهِ الرُّحَمَاء»

وعن اسامة بن زيد قال: ارسلت ابنة النبي صلى الله عليه وسلم اليه: ان ابنا لي قبض فاتنا. فارسل يقرى السلام ويقول: «ان لله ما اخذ وله ما اعطى وكل عنده باجل مسمى فلتصبر ولتحتسب» . فارسلت اليه تقسم عليه لياتينها فقام ومعه سعد بن عبادة ومعاذ بن جبل وابي بن كعب وزيد ابن ثابت ورجال فرفع الى رسول الله صلى الله عليه وسلم الصبي ونفسه تتقعقع ففاضت عيناه. فقال سعد: يا رسول الله ما هذا؟ فقال: «هذه رحمة جعلها الله في قلوب عباده. فانما يرحم الله من عباده الرحماء»

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এ শিক্ষা দিয়েছেন যে, কেউ মারা গেলে তার আত্মীয়-স্বজনকে কিভাবে সান্ত্বনা দিতে হবে? কারো ঘরে সন্তান জন্মগ্রহণ করলে তার অর্থ এ হয় না যে, সেই কেবল এই সন্তানের মালিক। বরং এই সন্তানের মালিক হচ্ছেন আল্লাহ তা‘আলা। তাই হাদীসে বলা হয়েছে যা আল্লাহর ছিল তা তিনি নিয়ে গেছেন। সুতরাং যার সম্পদ তিনি যদি তা নিয়ে যান, তাহলে সেজন্য পরিতাপ ও আফসোস করার কোন কারণ থাকে না। সে জন্য কেউ মারা গেলে এভাবে মনকে সান্ত্বনা দিতে হবে যে, আল্লাহর সম্পদ আল্লাহ নিয়ে গেছেন। আর সেক্ষেত্রে সবর করতে এবং সাওয়াবের আশা করতে হবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭২৪-[৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা’দ ইবনু ’উবাদাহ্ খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে দেখতে গেলেন। তাঁর সাথে ছিলেন ’আবদুর রহমান ইবনু ’আওফ, সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্বক্বাস ও ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ। তিনি ওখানে প্রবেশ করে সা’দ ইবনু ’উবাদাহকে বেহুঁশ অবস্থায় পেলেন। জিজ্ঞেস করলেন, সে কি মারা গেছে? সাহাবী জবাব দিলেন, জ্বী না, হে আল্লাহর রসূল! তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাঁদতে লাগলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কাঁদতে দেখে সাহাবীগণও কাঁদতে লাগলেন। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সাবধান তোমরা শুনে রাখো অশ্রু বিসর্জন ও মনের শোকের কারণে আল্লাহ তা’আলা কাউকে শাস্তি দেবেন না। তিনি তার মুখের দিকে ইশারা করে বললেন, অবশ্য আল্লাহ এজন্য ’আযাবও দেন আবার রহমতও করেন। আর মৃতকে তার পরিবার-পরিজনের বিলাপের কারণে ’আযাব দেয়া হয়। (বুখারী, মুসলিম)[1]

اَلْبُكَاءُ عَلَى الْمَيِّتِ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: اشْتَكَى سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ شَكْوًى لَهُ فَأَتَاهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعُودُهُ مَعَ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ وَسَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ وَعَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ فَلَمَّا دَخَلَ عَلَيْهِ وَجَدَهُ فِي غَاشِيَةٍ فَقَالَ: (قَدْ قَضَى؟ قَالُوا: لَا يَا رَسُولَ اللَّهِ فَبَكَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا رَأَى الْقَوْمُ بُكَاءَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَكَوْا فَقَالَ: أَلَا تَسْمَعُونَ؟ أَنَّ اللَّهَ لَا يُعَذِّبُ بِدَمْعِ الْعَيْنِ وَلَا بِحُزْنِ الْقَلْبِ وَلَكِنْ يُعَذِّبُ بِهَذَا وَأَشَارَ إِلَى لِسَانِهِ أَوْ يَرْحَمُ وَإِن الْمَيِّت لعيذب ببكاء أَهله

وعن عبد الله بن عمر قال: اشتكى سعد بن عبادة شكوى له فاتاه النبي صلى الله عليه وسلم يعوده مع عبد الرحمن بن عوف وسعد بن ابي وقاص وعبد الله بن مسعود فلما دخل عليه وجده في غاشية فقال: (قد قضى؟ قالوا: لا يا رسول الله فبكى النبي صلى الله عليه وسلم فلما راى القوم بكاء النبي صلى الله عليه وسلم بكوا فقال: الا تسمعون؟ ان الله لا يعذب بدمع العين ولا بحزن القلب ولكن يعذب بهذا واشار الى لسانه او يرحم وان الميت لعيذب ببكاء اهله

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে মৃত ব্যক্তির জন্য তার আত্মীয়-স্বজনের ক্রন্দনের নিয়ম সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজন তার জন্য উচ্চ আওয়াজে বিলাপ ব্যতীত শুধু চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে ক্রন্দন করতে পারবে। মৃত ব্যক্তির জন্য মনে মনে দুঃখ-কষ্ট পাওয়া এটা কোন দোষের নয়। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজন বিভিন্ন প্রকার বিলাপ করে ক্রন্দন করতে পারবে না। যদি কেউ এরূপ করে তাহলে মৃত ব্যক্তিদের শাস্তি দেয়া হয় তবে তা সর্বাবস্থায় নয়। বরং ঐ অবস্থায় যখন সে তার পরিবারকে বা অন্য কাউকে ওয়াসিয়্যাত করবে বা এসব কাজে সন্তুষ্ট থাকবে ফলে পরিবারকে নিষেধ করবে না, তাহলে তাকে এ কারণে ‘আযাব দেয়া হবে, অন্যথায় নয়। এ হাদীস থেকে এ কথাও বুঝা যায় যে, রোগীর সেবা-যত্ন করা মুস্তাহাব তথা অত্যধিক সাওয়াবের কাজ। নেতা তার অধীনস্ত ব্যক্তিদের রোগের সময় তাদের দেখতে যাবে এ থেকে আরো বুঝা যায় যে, রোগীর কাছে বসে ক্রন্দন করা জায়িয তথা বৈধ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭২৫-[৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (মৃত ব্যক্তির শোকে) নিজের মুখাবয়বে আঘাত করে, জামার গলা ছিঁড়ে ফেলে ও জাহিলিয়্যাতের যুগের মতো হা-হুতাশ করে বিলাপ করে, সে আমাদের দলের মধ্যে গণ্য নয়। (বুখারী, মুসলিম)[1]

اَلْبُكَاءُ عَلَى الْمَيِّتِ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَيْسَ مِنَّا مَنْ ضَرَبَ الْخُدُودَ وَشَقَّ الْجُيُوبَ وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ»

وعن عبد الله بن مسعود قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ليس منا من ضرب الخدود وشق الجيوب ودعا بدعوى الجاهلية»

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে ইসলামের দৃষ্টিতে কয়েকটি অপছন্দনীয় কাজের কথা বলা হয়েছে। হাদীসের মধ্যে (ليس منا) এর অর্থ হল, সে আমার সুন্নাত ও পথের অনুসারী নয়। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, তাকে দীন থেকে বের করা। তবে আহলুস্ সুন্নাহর মতে কোন পাপ কাজের দ্বারা কাফির হয় না। তবে এখানে এ কথা দ্বারা যেসব কাজের হারামের দলীল গ্রহণ করা হয়েছে তা হল যারা কষ্টের সময় গন্ডদেশে আঘাত করে, শোকে-দুঃখে কাপড় ছিঁড়ে ফেলে এবং জাহিলী লোকদের মতো দু‘আ করে।

সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে যে, জাহিলী যুগের দু‘আ বলতে ইসলাম আগমনের পূর্বের লোকদের দু‘আকে বুঝানো হয়েছে। মূলত জাহিলী যুগের লোকেরা একজন আরেকজনের জন্য বদ্দু‘আ তথা ধ্বংস ও ক্ষতির জন্য দু‘আ করত। যা অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ। সুতরাং আমাদের এসব ঘৃণিত কাজ হতে বেচে থাকতে হবে। তাহলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত ও পথের অনুসারী হওয়া যাবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭২৬-[৫] আবূ বুরদাহ্ ইবনু আবূ মূসা (রহঃ) হতে বর্ণিত। একবার আমার পিতা আবূ মূসা অজ্ঞান হয়ে গেলেন। এতে (আমার বিমাতা) তাঁর স্ত্রী ’আবদুল্লাহর মা বিলাপ করতে লাগল। অতঃপর তিনি সংজ্ঞা লাভ করলেন এবং ’আবদুল্লাহর মাকে বললেন, তুমি কি জানো না? তারপর তিনি একটি হাদীস বর্ণনা করলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তার সাথে সম্পর্কহীন যে মাথার চুল ছিঁড়ে, উচ্চস্বরে বিলাপ করে এবং জামার গলা ফাঁড়ে। (বুখারী ও মুসলিম; কিন্তু পাঠ মুসলিমের)[1]

اَلْبُكَاءُ عَلَى الْمَيِّتِ

وَعَن أبي بردة قَالَ: أُغمي على أبي مُوسَى فَأَقْبَلَتِ امْرَأَتُهُ أُمُّ عَبْدِ اللَّهِ تَصِيحُ بِرَنَّةٍ ثُمَّ أَفَاقَ فَقَالَ: أَلَمْ تَعْلَمِي؟ وَكَانَ يُحَدِّثُهَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَنَا بَرِيءٌ مِمَّنْ حَلَقَ وَصَلَقَ وَخَرَقَ» . وَلَفظه لمُسلم

وعن ابي بردة قال: اغمي على ابي موسى فاقبلت امراته ام عبد الله تصيح برنة ثم افاق فقال: الم تعلمي؟ وكان يحدثها ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «انا بريء ممن حلق وصلق وخرق» . ولفظه لمسلم

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে বিপদে-আপদে কতিপয় কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিপদে পতিত হয়ে চুল কর্তন করা। এ উদ্দেশে যে, এর দ্বারা সে আরোগ্য লাভ করবে। এ হাদীসে এ নির্দেশও দেয়া হয়েছে যে, বিপদে পড়ে যেন উচ্চৈঃস্বরে বিলাপ করে ক্রন্দন না করে। এর সাথে আরো একটি বিষয়কে নিষেধ করা হয়েছে যে, কেউ যেন বিপদে পড়ে স্বীয় কাপড় ছিঁড়ে না ফেলে। আলোচ্য হাদীস এ সব কাজ করতে নিষেধ করে দিয়েছে। আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যারা এ সব কাজ করে আমি তাদের থেকে পবিত্র বা বিচ্ছিন্ন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭২৭-[৬] আবূ মালিক আল আশ্’আরী (রাঃ)বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে জাহিলিয়্যাত যুগের চারটি বিষয় রয়ে গেছে যা তারা ছাড়ছে না, (১) নিজের গুণের গর্ব, (২) কারো বংশের নিন্দা, (৩) গ্রহ-নক্ষত্র যোগে বৃষ্টি চাওয়া এবং (৪) বিলাপ করা। অতঃপর তিনি বলেন, বিলাপকারিণী যদি তার মৃত্যুর পূর্বে তওবা্ না করে, কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তাকে উঠানো হবে- তখন তার গায়ে থাকবে আলকাতরার জামা ও ক্ষতের পিরান। (মুসলিম)[1]

اَلْبُكَاءُ عَلَى الْمَيِّتِ

وَعَنْ أَبِي مَالِكٍ الْأَشْعَرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَرْبَعٌ فِي أُمَّتِي مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ لَا يَتْرُكُونَهُنَّ: الْفَخْرُ فِي الْأَحْسَابِ وَالطَّعْنُ فِي الْأَنْسَابِ وَالِاسْتِسْقَاءُ بِالنُّجُومِ وَالنِّيَاحَةُ . وَقَالَ: «النَّائِحَةُ إِذَا لَمْ تَتُبْ قَبْلَ مَوْتِهَا تُقَامُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَعَلَيْهَا سِرْبَالٌ مِنْ قطران وَدرع من جرب» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي مالك الاشعري قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: اربع في امتي من امر الجاهلية لا يتركونهن: الفخر في الاحساب والطعن في الانساب والاستسقاء بالنجوم والنياحة . وقال: «الناىحة اذا لم تتب قبل موتها تقام يوم القيامة وعليها سربال من قطران ودرع من جرب» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: এ হাদীসের মধ্যে এমন চারটি বিষয় সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে, যা জাহিলী যুগের মানুষের মধ্যে প্রচলিত ছিল। যেগুলো অত্যন্ত গর্হিত ও গুনাহের কাজ। আর এ কাজগুলো এ উম্মাতের মধ্যে ব্যাপকহারে প্রচলিত হয়ে গেছে। আর তা হল মানুষের ধন-সম্পদ, বীরত্ব ও পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যের কারণে গর্ববোধ করা।

আবার কারো মতে এখানে حسب বলতে এমন সব গুণকে বুঝানো হয়েছে যার কারণে লোকেরা কোন ব্যক্তির প্রশংসা করে। আবার কেউ কেউ বলেন, এখানে حسب দ্বারা কোন ব্যক্তির উন্নত দীনদারিতা ও উত্তম চরিত্রকে বুঝানো হয়েছে। অথবা কোন ব্যক্তির উপর অপর ব্যক্তির মান-মর্যাদাকে বুঝানো হয়েছে।

এখানে দ্বিতীয় যে বিষয়টি সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তির বংশীয় মান-মর্যাদা সম্পর্কে দোষ অন্বেষণ করা। একজনের পূর্বপুরুষদের ওপর অপরজনের পূর্ব-পুরুষদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়া। এর দ্বারা মূলত গর্ব-অহংকার প্রকাশ করা হয় তাই শারী‘আতে এ ধরনের কাজ করা নিষেধ।

এখানে তৃতীয় যে বিষয়টি সম্পর্কে বলা হয়েছে তা হল, তারকার কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করা। অর্থাৎ তারকাকে বৃষ্টির মাধ্যম মনে করা। যেমন জাহিলী যুগের লোকেরা বলত অমুক তারকা আমাদেরকে বৃষ্টি দিয়েছে। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, তাদের বিশ্বাস ছিল তারকাই বৃষ্টির মালিক। এটা স্পষ্ট কুফরী। তাই এটা পরিত্যাগ করতে হবে।

সর্বশেষ যে বিষয়টি সম্পর্কে বলা হয়েছে তা হল, মৃত ব্যক্তির কাছে উচ্চৈঃস্বরে বিলাপ করে ক্রন্দন করা। এ কাজগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭২৮-[৭] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন একজন মহিলার কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে একটি কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছিল। তিনি তাকে বললেন, আল্লাহকে ভয় করো এবং ধৈর্যধারণ করো। মহিলাটি বলল, আপনি আমার কাছ থেকে চলে যান, আমার উপর পতিত বিপদ আপনাকে স্পর্শ করেনি। মহিলাটি তাঁকে চিনতে পারেনি। পরে মহিলাটিকে বলা হলো, ইনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তখন মহিলাটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাড়ীর দরজায় এলো। সেখানে কোন দারোয়ান বা পাহারাদার মোতায়েন ছিল না। সে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ’সবরতো তাকেই বলা হয় যা বিপদের প্রথম অবস্থায় ধারণ করা হয়।’ (বুখারী, মুসলিম)[1]

اَلْبُكَاءُ عَلَى الْمَيِّتِ

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: مَرَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِامْرَأَةٍ تَبْكِي عِنْدَ قَبْرٍ فَقَالَ: «اتَّقِي اللَّهَ وَاصْبِرِي» قَالَتْ: إِلَيْكَ عَنِّي فَإِنَّكَ لَمْ تُصَبْ بِمُصِيبَتِي وَلَمْ تَعْرِفْهُ فَقِيلَ لَهَا: إِنَّهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَأَتَتْ بَابَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمْ تَجِدْ عِنْدَهُ بَوَّابِينَ فَقَالَتْ: لَمْ أَعْرِفْكَ. فَقَالَ: «إِنَّمَا الصَّبْرُ عِنْدَ الصَّدْمَةِ الْأُولَى»

وعن انس قال: مر النبي صلى الله عليه وسلم بامراة تبكي عند قبر فقال: «اتقي الله واصبري» قالت: اليك عني فانك لم تصب بمصيبتي ولم تعرفه فقيل لها: انه النبي صلى الله عليه وسلم. فاتت باب النبي صلى الله عليه وسلم فلم تجد عنده بوابين فقالت: لم اعرفك. فقال: «انما الصبر عند الصدمة الاولى»

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে এ কথা বলা হয়েছে যে, সর্বদা আল্লাহকে ভয় করতে হবে এবং সর্বপ্রকার বিপদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে। এখানে বলা হয়েছে যে, কারো মৃত্যুতে অধিক পরিমাণে বিলাপ করে ক্রন্দন করা যাবে না। বরং এ ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করতে হবে। অধিক পরিমাণে কান্না থেকে বিরত থাকতে হবে। বিপদাপদে সর্বদা ধৈর্য ধারণ করতে হবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭২৯-[৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিমের তিনটি সন্তান মারা গেলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। তবে কসম পুরা করার জন্য (ক্ষণিকের জন্য হলেও) প্রবেশ করানো হবে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

اَلْبُكَاءُ عَلَى الْمَيِّتِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «لَا يَمُوت لمُسلم ثَلَاث مِنَ الْوَلَدِ فَيَلِجُ النَّارَ إِلَّا تَحِلَّةَ الْقَسَمِ»

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا يموت لمسلم ثلاث من الولد فيلج النار الا تحلة القسم»

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে ঐ সব পিতা-মাতার ব্যাপারে জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে, যাদের জীবদ্দশায় তাদের অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ে ইন্তিকাল করে। মনে রাখতে হবে যে, এখানে পিতা-মাতা বলতে মু’মিন পিতা-মাতাকে বুঝানো হয়েছে। কোন কাফির বা মুশরিক এ ধরনের পুরস্কার পাবে না। এ হাদীসে বলা হচ্ছে যে, যে মুসলিমের তিনটি সন্তান তার জীবদ্দশায় মারা যাবে এবং সে এর উপর ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট থাকবে আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করবেন। মুসনাদে আহমাদে আবূ সালাক আল আশজা‘ঈ থেকেও অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন, আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম যে, ইসলাম গ্রহণ করার পর আমার কয়েকটি সন্তান ইন্তিকাল করেছে। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন কোন মুসলিমের সন্তান মারা যায় আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। হাদীসের মধ্যে সন্তান বলতে ছেলে ও মেয়ে উভয়কে বুঝানো হয়েছে। ‘তার কসম পুরো করার জন্য’ এর অর্থ জাহান্নামের উপর নির্মিত পুল অতিক্রম করা।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭৩০-[৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের কিছু সংখ্যক মহিলাকে উদ্দেশ করে বলেন, তোমাদের যে কারো তিনটি সন্তান মৃত্যুবরণ করবে, আর সে (এজন্য) ধৈর্যধারণ করে সাওয়াবের প্রত্যাশা করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (এ কথা শুনে) তাদের একজন বলল, যদি দু’ সন্তান মৃত্যুবরণ করে, হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, হ্যাঁ। দু’জন করলেও। (মুসলিম; মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, এমন তিন সন্তান মারা গেলে যারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি [তাদের জন্য এ সুসংবাদ])[1]

اَلْبُكَاءُ عَلَى الْمَيِّتِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِنِسْوَةٍ مِنَ الْأَنْصَارِ: لَا يَمُوتُ لِإِحْدَاكُنَّ ثَلَاثَةٌ من الْوَلَد فتحتسبه إِلَّا دخلت الْجنَّة. فَقَالَ امْرَأَةٌ مِنْهُنَّ: أَوِ اثْنَانِ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: أَوْ اثْنَانِ . رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَفِي رِوَايَةٍ لَهما: «ثَلَاثَة لم يبلغُوا الْحِنْث»

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لنسوة من الانصار: لا يموت لاحداكن ثلاثة من الولد فتحتسبه الا دخلت الجنة. فقال امراة منهن: او اثنان يا رسول الله؟ قال: او اثنان . رواه مسلم وفي رواية لهما: «ثلاثة لم يبلغوا الحنث»

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে (وَلَدٌ) ‘ওয়ালাদ’ বলতে ছেলে ও মেয়ে উভয়কে বুঝানো হয়েছে। হাদীসটি এ কথার দিকে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করছে যে, যখন কোন মুসলিমের তিনটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান মারা যায় এবং সে সাওয়াব পাবার আশায় এ উপর ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত হল, তাকে মুসলিম হতে হবে এবং আল্লাহর ফায়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকতে হবে।

সন্তানের সংখ্যা তিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং যদি কারো দু’টি সন্তানও মারা যায় তাহলে সেও অনুরূপ পুরস্কার লাভ করবে। অর্থাৎ দুই ও তিন একই পুরস্কার বহন করবে।

আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, হাদীসে যে সন্তানের কথা বলা হচ্ছে তা হল, অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের কথা, অর্থাৎ যাদের ওপর শারী‘আতের বিধান আরোপিত হয়নি এবং যাদের পাপ-পুণ্য লেখার বয়স হয়নি তাদের কথা বলা হচ্ছে। যেমনটা আমরা মুসলিমের বর্ণনায় পাই। তাহলে পরিশেষে আমরা বলতে পারি, যদি কোন মুসলিম নর-নারীর অপ্রাপ্ত বয়স্ক দুই বা তিনটি সন্তান মারা যায় এবং সে এতে ধৈর্য ধারণ করে, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা

১৭৩১-[১০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমি যখন আমার কোন মু’মিন বান্দার প্রিয় জিনিসকে দুনিয়া হতে উঠিয়ে নেই আর বান্দা এজন্য সবর অবলম্বন করে সাওয়াবের প্রত্যাশী হয়, তাহলে আমার কাছে তার জন্য জান্নাতের চেয়ে উত্তম কোন পুরস্কার নেই। (বুখারী)[1]

اَلْبُكَاءُ عَلَى الْمَيِّتِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَقُولُ اللَّهُ: مَا لِعَبْدِي الْمُؤْمِنِ عِنْدِي جَزَاءٌ إِذَا قَبَضْتُ صَفِيَّهُ مِنْ أَهْلِ الدُّنْيَا ثُمَّ احتسبه إِلَّا الْجنَّة . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يقول الله: ما لعبدي المومن عندي جزاء اذا قبضت صفيه من اهل الدنيا ثم احتسبه الا الجنة . رواه البخاري

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে এমন ব্যক্তির ফাযীলাতের কথা বলা হয়েছে যার কোন প্রিয়জন যাকে সে অনেক ভালবাসে যেমন সন্তান বা ভাই, এদের কেউ অপ্রাপ্ত বয়সে মারা গেলে উক্ত ব্যক্তি যদি সাওয়াবের আশায় আল্লাহর ফায়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকে। তাহলে আল্লাহ তা‘আলা উক্ত ব্যক্তিকে উত্তম প্রতিদান দিবেন আর তা হল জান্নাত। আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি অত্যন্ত খুশী থাকবেন।

হাদীসের ভাষ্য মতে বুঝানো হচ্ছে যে, যার প্রিয়জন মারা যাবে তাকে অবশ্যই সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে এবং সাওয়াবের আশা করতে হবে। সাওয়াবের আশা বলতে বুঝানো হয়েছে যে, সে ধরে নিবে যে, এর প্রতিদান সে আল্লাহর নিকট পাবে। তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

আল্লামা ক্বারী (রহঃ) বলেন, তার প্রতিদান স্বরূপ যা রয়েছে তা জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়।

এ হাদীস থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, প্রিয়ভাজন তিন, দুই অথবা একজনও যদি মারা যায় তবে তাঁর প্রতিদান জান্নাত।

আল্লামা হাফিয (রহঃ) বলেন, ইবনু বাত্তাল এর দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন যে, যদি কারো একটি সন্তানও মারা যায় তাহলে সে তিনটি সন্তান মারা যাওয়ার পুরস্কার লাভ করবে। অর্থাৎ সন্তান এক বা একাধিক মারা গেলে তার প্রতিদান জান্নাত।

আলোচ্য হাদীসের আলোকে জানা যায় যে, কোন মুসলিম ব্যক্তির এক বা একাধিক অপ্রাপ্ত বয়স্ক প্রিয়ভাজন তথা সন্তান বা ভাই মারা যায় আর সে এর উপর সাওয়াবের আশায় ধৈর্য ধারণ কবে তবে তার প্রতিদান হল জান্নাত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১০ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে