পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা
১৭৩২-[১১] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শোকে মাতমকারিণী ও তা শ্রবণকারিণীদের অভিসম্পাত করেছেন। (আবূ দাঊদ)[1]
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ النَّائِحَةَ وَالْمُسْتَمِعَةَ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসটি মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করা হারাম হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট দলীল। অর্থাৎ এই হাদীসটি এ কথা প্রমাণ করে যে, মৃত ব্যক্তির জন্য উচ্চৈঃস্বরে বিলাপ সহ ক্রন্দন করা সম্পূর্ণ হারাম। আলোচ্য হাদীসে বিশেষ করে মহিলার কথা বলার করণ হল, সাধারণত এ ধরনের উচ্চৈঃস্বরে বিলাপ করে ক্রন্দন করা মহিলাদের অভ্যাস। উক্ত হাদীসে আরো বলা হয়েছে যে, কেউ যেন এরূপ কান্না শোনার জন্য বসে না থাকে অর্থাৎ উক্ত হাদীসে দুই শ্রেণীর মানুষের ওপর আল্লাহ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অভিশাপের কথা বলা হয়েছে। যারা বিলাপ করে কাঁদে এবং যারা তা উপভোগের জন্য বসে থাকে।
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা
১৭৩৩-[১২] সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিনের কাজ বড় বিস্ময়কর। সে সুখের সময় যেমন আল্লাহর প্রশংসা ও শুকর করে, আবার বিপদেও তেমনি আল্লাহর প্রশংসা ও ধৈর্যধারণ করে। মু’মিনকে প্রতিটি কাজের জন্যই প্রতিদান দেয়া হয়। এমনকি তার স্ত্রীর মুখে খাবারের লোকমা তুলে দেয়ার সময়েও। (বায়হাক্বী’র শু’আবুল ঈমান)[1]
وَعَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: عَجَبٌ لِلْمُؤْمِنِ: إِنْ أَصَابَهُ خَيْرٌ حمد الله وَشَكَرَ وَإِنْ أَصَابَتْهُ مُصِيبَةٌ حَمِدَ اللَّهَ وَصَبَرَ فالمؤمن يُؤْجَرُ فِي كُلِّ أَمْرِهِ حَتَّى فِي اللُّقْمَةِ يَرْفَعُهَا إِلَى فِي امْرَأَتِهِ. رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شعب الْإِيمَان
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে মু’মিনের চরিত্র সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। সুখ-স্বাচ্ছন্দে ও বিপদে-আপদে মু’মিনের চরিত্রে কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, মু’মিন ব্যক্তি যখন কোন কল্যাণকর বিষয় লাভ করে তখন সে আল্লাহর প্রশংসা ও শুকরিয়া আদায় করবে। যাতে করে সে আরো কল্যাণকর বস্ত্ত লাভ করতে পারে এবং সকল ক্ষতিকর বস্ত্ত থেকে বেঁচে থাকতে পারে। আর যখন তাকে কোন বিপদ পেয়ে বসে তখনও সে আল্লাহর প্রশংসা করে এবং এ বিপদের ক্ষেত্রে ধৈর্যের পরিচয় দেয় যতক্ষণ না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে এ বিপদ দূর করে না দেন।
আল্ ক্বারী বলেন, এ হাদীস এ কথাও প্রমাণ করে যে, ঈমানের দু’টি অংশ। একটি অংশ হল, সবর তথা ধৈর্য। আর অপর অংশ হল, শুকর তথা গুণকীর্তন করা। ইবনু মালিক বলেন, বিপদের সময় শুকরিয়া আদায় করার উদ্দেশ্য হল, এর দ্বারা আল্লাহ বড় ধরনের সাওয়াব দান করবেন। আর সাওয়াব তো অনেক বড় নি‘আমাত।
এ হাদীস আরো প্রমাণ করে যে, মু’মিন তার প্রতিটি কাজে সাওয়াব পাবে এমন কি সে তার পরিবারের জন্য যা ব্যয় করে তারও সাওয়াব পাবে। তবে তার প্রতিটি কাজ শারী‘আত তথা কুরআন ও সহীহ হাদীসের মাপকাঠিতে হতে হবে।
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা
১৭৩৪-[১৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক মু’মিনের জন্য দু’টি দরজা রয়েছে। একটি দরজা দিয়ে তার নেক ’আমল উপরের দিকে উঠে। আর দ্বিতীয়টি দিয়ে তার রিযক্ব (রিজিক/রিযিক) নীচে নেমে আসে। যখন সে মৃত্যুবরণ করে, এ দু’টি দরজা তার জন্য কাঁদে। এ বিষয়ে আল্লাহ তা’আলার এ বাণীটি। তিনি বলেছেন, ’’এ কাফিরদের জন্য না আকাশ কাঁদে আর না জমিন’’- (সূরাহ্ আদ্ দুখান ৪৪: ২৯)। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا مِنْ مُؤْمِنٍ إِلَّا وَله بَابَانِ: بَاب يصعد مِنْهُ علمه وَبَابٌ يَنْزِلُ مِنْهُ رِزْقُهُ. فَإِذَا مَاتَ بَكَيَا عَلَيْهِ فَذَلِكَ قَوْلُهُ تَعَالَى: (فَمَا بَكَتْ عَلَيْهِمُ السَّمَاء وَالْأَرْض)
رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসটি মু’মিন ব্যক্তির গুরুত্ব ও ফাযীলাতের কথা গুরুত্বের সাথে দিক-নির্দেশনা দিচ্ছে। হাদীসটি এদিকে ইঙ্গিত করছে যে, মু’মিন ব্যক্তির জন্য আসমানে দু’টি দরজা রয়েছে। একটি দরজা দিয়ে তার নেক ‘আমলসমূহ আসমানে উত্তোলন করা হয়। অর্থাৎ তা দুনিয়ায় লেখার পর আসমানে লেখার স্থানে। দুনিয়ার মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) দুনিয়ায় বসে লেখে আর আসমানের মালায়িকাহ্ ঐ দরজায় বসে লেখে। আর অপর দরজা দিয়ে মু’মিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে দুনিয়ায় খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকার জন্য রিযক্ব (রিজিক/রিযিক) তথা খাদ্য ব্যবস্থা অবতীর্ণ হয়।
অতঃপর মু’মিন ব্যক্তি যখন ইন্তিকাল করেন, তখন উভয় দরজা তার জন্য ক্রন্দন করতে থাকে। অর্থাৎ তার বিয়োগ বেদনায় ক্রন্দন করে। কেউ বলেন, তারা কাঁদে না বরং কষ্ট পায়।
ইবনু মালিক বলেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের কাছে এটা সুস্পষ্ট বিষয় যে, প্রত্যেকটা জিনিস আল্লাহকে জানে।
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা
১৭৩৫-[১৪] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে যে ব্যক্তির দু’টি সন্তান শৈশবে মারা যাবে, আল্লাহ তা’আলা এ কারণে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (এ কথা শুনে) ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, আপনার উম্মাতের যে ব্যক্তির একটি মারা যাবে? তিনি বললেন, যার একটি শিশু সন্তান মারা যাবে তার জন্যও, হে যথাযোগ্য প্রশ্নকারিণী! ’আয়িশাহ্ (রাঃ) এবার বললেন, যার একটি বাচ্চাও মরেনি, তার জন্য কি শুভ সংবাদ? তিনি বললেন, আমিই আমার উম্মাতের জন্য এ অবস্থানে। কারণ আমার মুসীবাত বা মৃত্যুর চেয়ে আর বড় কোন মুসীবাত তাদের স্পর্শ করতে পারে না। (তিরমিযী; তিনি বলেছেন, এ হাদীস গরীব)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
مَنْ كَانَ لَهُ فرطان من متي أَدْخَلَهُ اللَّهُ بِهِمَا الْجَنَّةَ . فَقَالَتْ عَائِشَةُ: فَمَنْ كَانَ لَهُ فَرَطٌ مَنْ أُمَّتِكَ؟ قَالَ: «وَمَنْ كَانَ لَهُ فَرَطٌ يَا مُوَفَّقَةُ» . فَقَالَتْ: فَمَنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ فَرَطٌ مِنْ أُمَّتِكَ؟ قَالَ: «فَأَنَا فَرَطُ أُمَّتِي لَنْ يُصَابُوا بِمِثْلِي» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
ব্যাখ্যা : আমার বিয়োগ ব্যথার মতো তাদের জন্য আর কোন ব্যথ্যা নেই।
আলোচ্য হাদীসে ঐ সকল মু’মিন পিতা-মাতার ফাযীলাতের কথা বলা হয়েছে, যাদের জীবদ্দশায় তাদের অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান মারা যায়। আলোচ্য হাদীসে فرط (অগ্রদূত) বলার কারণ হল, এরা পিতা-মাতার আগে জান্নাতে প্রবেশ করে। ইমাম ত্বীবী বলেন, فرط বলা হয় এমন লোকদের যারা কাফেলার আগে চলে অগ্রদূত হিসেবে। এ হাদীসে বলা হচ্ছে যে, যে ব্যক্তির এক বা একাধিক নাবালেগ সন্তান তার পূর্বে ইন্তিকাল করবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
আলোচ্য হাদীসে এ কথাগুলো বলা হয়েছে, যার কোন فرط তথা অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান মারা না যাবে তাদের জন্য فرط হবেন স্বয়ং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। অর্থাৎ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাফা‘আত করে তাদেরকে জান্নাতে নিয়ে যাবেন।
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা
১৭৩৬-[১৫] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন বান্দার সন্তান মারা গেলে আল্লাহ তা’আলা মালাকগণকে (ফেরেশতাদেরকে) বলেন, তোমরা আমার বান্দার সন্তানের রূহ কবয করেছ? তারা বলেন, জ্বি হ্যাঁ, করেছি। তারপর তিনি বলেন, তোমরা আমার বান্দার হৃদয়ের ফলকে কবয করেছ? তারা বলেন, জ্বি হ্যাঁ, করেছি। তারপর আল্লাহ বলেন, (এ ঘটনায়) আমার বান্দা কি বলেছে? তারা বলেন, সে তোমার প্রশংসা করেছে এবং ইস্তিরজা’ (ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহি র-জিউন) পড়েছে। এবার আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করো এবং এ ঘরটির নাম রাখো ’বায়তুল হাম্দ’। (আহমাদ ও তিরমিযী)[1]
وَعَن أبي مُوسَى اشعري قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا مَاتَ وَلَدُ الْعَبْدِ قَالَ اللَّهُ تَعَالَى لِمَلَائِكَتِهِ: قَبَضْتُمْ وَلَدَ عَبْدِي؟ فَيَقُولُونَ: نَعَمْ. فَيَقُولُ: قَبَضْتُمْ ثَمَرَةَ فُؤَادِهِ؟ فَيَقُولُونَ: نَعَمْ. فَيَقُولُ: مَاذَا قَالَ عَبْدِي؟ فَيَقُولُونَ: حَمِدَكَ وَاسْتَرْجَعَ. فَيَقُولُ اللَّهُ: ابْنُوا لِعَبْدِي بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ وَسَمُّوهُ بَيت الْحَمد . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে ঐ সব মু’মিন পিতা-মাতাকে ধৈর্যধারণ করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে, যাদের জীবদ্দশায় তাদের ছোট ছোট সন্তান মারা যায়। আলোচ্য হাদীসে বলা হচ্ছে যে, যখন কোন মু’মিন পিতা-মাতার জীবদ্দশায় তাদের সন্তান মারা যায় আর তারা এ ব্যাপারে ধৈর্যধারণ করে এবং আল্লাহর কাছে এর প্রতিদান আশা করে তখন আল্লাহ তা‘আলা ঐ সন্তানের জন্য এমন একটি ঘর নির্মাণ করে দেন, যার নাম রাখা হয় ‘বায়তুল হামদ’ (প্রশংসার ঘর)।
ইমাম ক্বারী (রহঃ) বলেন, হাদীসে ঘরকে হামদের সাথে ইযাফাত করার কারণ হল এই যে, যেহেতু সে বিপদের মধ্যে আল্লাহর প্রশংসা করেছে। আর ঐ ঘরখানা তো প্রশংসারই প্রতিদান। তাই তার নামকরণ করা হয়েছে ‘বায়তুল হামদ’ (প্রশংসার ঘর)।
ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, এখানে মালায়িকাহ্-কে (ফেরেশতাগণকে) এ কথা সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদের বিপদাপদে অধিক ধৈর্যের ভিত্তিতে অধিক মর্যাদা দিতে চান।
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা
১৭৩৭-[১৬] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন বিপদাপন্নকে সান্ত্বনা দেবে, তাকেও বিপদগ্রস্তের সমান সাওয়াব দেয়া হবে। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি গরীব। আমি এ হাদীসটিকে ’আলী ইবনু ’আসিম ছাড়া আর কোন ব্যক্তি হতে মারফূ’ হিসেবে পাইনি। ইমাম তিরমিযী এ কথাও বলেন যে, কোন কোন মুহাদ্দিস এ বর্ণনাটিকে মুহাম্মাদ ইবনু সূকা হতে এ সানাদে ’মাওকূফ’ হিসেবে উদ্ধৃত করেছেন।)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «من عَزَّى مُصَابًا فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لَا نَعْرِفُهُ مَرْفُوعًا إِلَّا مِنْ حَدِيثِ عَلِيِّ بْنِ عَاصِمٍ الرَّاوِي وَقَالَ: وَرَوَاهُ بَعْضُهُمْ عَنْ مُحَمَّد بن سوقة بِهَذَا الْإِسْنَاد مَوْقُوفا
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে এমন ব্যক্তির ফাযীলাতের কথা বলা হয়েছে যে, বিপদগ্রস্ত মানুষকে সান্ত্বনা দেয়। বলা হচ্ছে যে, যখন কোন বিপদগ্রস্ত মু’মিন ব্যক্তিকে অপর কোন মু’মিন ব্যক্তি সান্ত্বনা দেয় তাহলে সে ততটুকু সাওয়াব পাবে যতটুকু সাওয়াব বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে সান্ত্বনা দেয়ার পাশাপাশি দু‘আ করতে হবে, যাতে সে তাড়াতাড়ি বিপদমুক্ত হয়ে যায়। তাকে বুঝাতে হবে যে, তোমার এ বিপদের মাধ্যমে আল্লাহ তোমাকে বড় প্রতিদান দেবেন। তোমার উচিত ধৈর্যধারণ করা। আর এখন তোমার খাদ্য হল শুকর অর্থাৎ তুমি এখন আল্লাহর শুকরের মাধ্যমে তৃপ্তি লাভ কর। তাহলে সান্ত্বনা দানকারী তার মতো সাওয়াব পাবে। কেননা ভাল কাজের নির্দেশ দাতা ভাল কাজ আদায়কারীর সমান সাওয়াব পাই। যা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। তবে এ বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে ধৈর্যধারণ করতে হবে।
কেউ বলেন, বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি ধৈর্য ও শুকরের মাধ্যমে যে সাওয়াব বা প্রতিদান পাবে তাকে সান্তনা দানকারী ব্যক্তিও অনুরূপ প্রতিদান পাবে।
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা
১৭৩৮-[১৭] আবূ বারযাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন সন্তানহারা নারীকে সান্ত্বনা যোগাবে তাকে জান্নাতে খুবই উত্তম পোশাক পরানো হবে। (তিরমিযী, তিনি এ হাদীসটিকে গরীব বলেছেন।)[1]
وَعَنْ أَبِي بَرْزَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ عَزَّى ثَكْلَى كسي بردا فِي الْجَنَّةِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيب
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে সন্তান হারা মাকে সান্ত্বনা দানের গুরুত্বের কথা বলা হয়েছে। আলোচ্য হাদীসে ثكلى বলতে এমন মহিলাকে বুঝানো হয়েছে যে, তার সন্তান হারিয়ে ফেলেছে। কেউ যদি এ ধরনের মহিলাকে সান্ত্বনা দেয়, তাহলে তাকে জান্নাতের মধ্যে উচ্চ মানের পাড়যুক্ত চাদর পরিয়ে দেয়া হবে।
আল্লামা মা'নাবী তার শারহুল জামিউস সাগীর কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, কোন যুবতী নারীকে তার স্বামী বা মাহরাম ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ সান্ত্বনা দিতে পারবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা
১৭৩৯-[১৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু জা’ফার (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জা’ফার-এর ইন্তিকালের খবর আসার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আহলে বায়তকে) বললেন, তোমরা জা’ফারের পরিবার-পরিজনের জন্য খাবার তৈরি করো। কেননা তাদের ওপর এমন এক বিপদ এসে পড়েছে, যা তাদেরকে রান্নাবান্না করে খেতে বাধা সৃষ্টি করবে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ جَعْفَرٍ قَالَ: لَمَّا جَاءَ نَعْيُ جَعْفَرٍ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: صانعوا لِآلِ جَعْفَرٍ طَعَامًا فَقَدْ أَتَاهُمْ مَا يَشْغَلُهُمْ)
رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মাতকে মৃত ব্যক্তির পরিবারের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী দেখা যাচ্ছে যে, অষ্টম হিজরীতে তাবূকের যুদ্ধে যখন জা‘ফার (রাঃ) শাহীদ হন এবং এ খবর তার পরিবারের কাছে পৌঁছে তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত লোকদের বললেন, তোমরা জা‘ফারের পরিবারের জন্য খাবার প্রস্ত্তত কর। কেননা তাদের কাছে যে সংবাদ পৌঁছেছে তারা সে কষ্টের কারণে বিপদের মধ্যে অবস্থান করছে।
মৃত ব্যক্তির নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজনের উচিত মৃত ব্যক্তির পরিবারের জন্য খাবার পাঠানো। কেননা, তারা বিপদের মধ্যে বর্তমান আছে। এ সময় তাদেরকে বুঝিয়ে আদর-যত্ন করে কিছু খাওয়ানো উচিত। কেননা তারা বিপদের মধ্যে খাওয়ার কথা ভুলে যায় এবং খেতে আগ্রহী থাকে না।
ইমাম তিরমিযী বলেন, ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেন, মৃত ব্যক্তির পরিবারের জন্য কিছু পাঠানো মুস্তাহাব। ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, এ হাদীস এ দিকে ইঙ্গিত বহন করেছে যে, মৃত ব্যক্তির পরিবারের জন্য তার নিকট আত্মীয় এবং প্রতিবেশীর পক্ষ থেকে খাদ্য পাঠানো মুস্তাহাব। ইবনু হুমাম বলেন, মৃত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে যিয়াফাত তথা খাবার খাওয়ানো মাকরূহ তথা শারী‘আতের অপছন্দনীয় কাজ, যা নিকৃষ্ট বিদ্‘আতের অন্তর্ভুক্ত। আল্লামা ক্বারী (রহঃ) বলেন, মৃত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে মৃত ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে লোকজন জমা করে খাবার পরিবেশন করা সম্পূর্ণ বিদ্‘আত ও মাকরূহ।