পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা
১৭১৫-[২৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা (উম্মু কুলসুমের) দাফনের সময় উপস্থিত ছিলাম। আর যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের পাশে বসেছিলেন। এমতাবস্থায় আমি দেখলাম, তাঁর দু’চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের মধ্যে কি কেউ এমন আছে, যে গত রাতে স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়নি? আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ আছি, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি। তিনি বললেন, (মাইয়্যিতকে কবরে রাখার জন্য) তুমিই কবরে নামো। তখন তিনি কবরে নামলেন। (বুখারী)[1]
عَنْ أَنَسٍ قَالَ: شَهِدْنَا بِنْتَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تُدْفَنُ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ عَلَى الْقَبْرِ فَرَأَيْتُ عَيْنَيْهِ تَدْمَعَانِ فَقَالَ: هَلْ فِيكُمْ مَنْ أَحَدٍ لَمْ يُقَارِفِ اللَّيْلَةَ؟ . فَقَالَ أَبُو طَلْحَةَ: أَنَا. قَالَ: فَانْزِلْ فِي قَبْرِهَا فَنَزَلَ فِي قبرها . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে এ রায় দেয়া যায় যে, মহিলাদেরকে অত্যন্ত সাবধানতার সাথে দাফন করতে হবে এবং মৃত ব্যক্তির বিয়োগ বেদনায় চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে নীরবে ক্রন্দন করা যাবে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মেয়ে উম্মু কুলসুম যখন ইন্তিকাল করেন তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ক্ববরের পাশে গিয়ে বসলেন। তখন তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল। মূলত এখান থেকেই মৃত ব্যক্তির জন্য নীরবে কান্না করাটা জায়িয হয়েছে। তবে ইসলাম যে সকল কান্নাকে অপছন্দ করে সে রকম কান্না করা যাবে না।
অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মু কুলসুম-এর ক্ববরে নামার জন্য এমন একজন লোক খুঁজলেন যে, রাতে তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করেনি। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল যে, যদি রাতে সহবাসকারী কোন ব্যক্তি উম্মু কুলসুমকে নিয়ে ক্ববরে নামে তাহলে রাতে যা করেছে হয়ত তা মনে পড়ে যাবে। এর দ্বারা বুঝা যায় ভাল মনের মানুষদের দ্বারা লাশ ক্ববরে রাখা উত্তম।
পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা
১৭১৬-[২৪] ’আমর ইবনুল ’আস (রাঃ) মৃত্যুর সময় তাঁর ছেলে ’আবদুল্লাহ (রাঃ) কে ওয়াসিয়্যাত করেছিলেন যে, যখন আমি মারা যাব তখন আমার জানাযার সাথে যেন মাতম করার জন্য কোন রমণী না থাকে। আর না থাকে কোন আগুন। আমাকে দাফন করার সময় আমার উপর আস্তে আস্তে মাটি ঢালবে। দাফনের পরে দু’আ ও মাগফিরাতের জন্য এতটা সময় (আমার কবরের কাছে) অপেক্ষা করবে, যতটা সময় একটি উট যাবাহ করে তার মাংস (মাংস/মাংস/গোসত) বণ্টন করতে লাগে। তাহলে আমি তোমাদের সাথে একটু পরিচিত থাকবো এবং (নির্ভয়ে) জেনে নেব, আমি আমার রবের মালায়িকার (ফেরেশতাগণের) নিকট কি জবাব দিবো। (মুসলিম)[1]
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ لِابْنِهِ وَهُوَ فِي سِيَاقِ الْمَوْتِ: إِذَا أَنَا مُتُّ فَلَا تَصْحَبْنِي نَائِحَةٌ وَلَا نَارٌ فَإِذَا دَفَنْتُمُونِي فَشُنُّوا عَلَيَّ التُّرَابَ شَنًّا ثُمَّ أَقِيمُوا حَوْلَ قَبْرِي قَدْرَ مَا يُنْحَرُ جَزُورٌ وَيُقَسَّمُ لَحْمُهَا حَتَّى أَسْتَأْنِسَ بِكُمْ وَأَعْلَمَ مَاذَا أُرَاجِعُ بِهِ رُسُلَ رَبِّي. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে প্রতীয়মান হল যে, কোন মুসলিম মারা গেলে তার উদ্দেশে বিলাপসহ উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং জাহিলী যুগের সমস্ত কুসংস্কারমূলক কর্মকান্ড থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) মৃত্যু শয্যায় তার ছেলে ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) কে ডেকে বললেন, আমি যখন মারা যাব তখন তুমি আমার জানাযার সাথে কোন বিলাপকারিণীকে সাথী বানাবে না। কেননা এগুলো জাহিলী যুগের কুসংস্কার। জাহিলী যুগের লোকেরা জানাযার সামনে রেখে বিলাপসহ উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করত এবং জানাযার সাথে আগুন পাঠিয়ে দিত। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বহুবিধ হাদীসে এ জাহিলী কাজ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা
১৭১৭-[২৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ মারা গেলে তাকে আটকিয়ে রেখ না। বরং তাকে তার কবরে তাড়াতাড়ি পৌঁছে দাও। তার (কবরে দাঁড়িয়ে) মাথার কাছে সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্-র প্রথমাংশ এবং তার দুই পায়ের কাছে সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্-র শেষাংশের আয়াতগুলো পড়বে। (বায়হাক্বী; এ বর্ণনাটিকে শু’আবুল ঈমানে উদ্ধৃত করেছেন এবং বলেছেন, এটি মাওকূফ হাদীস)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِذَا مَاتَ أَحَدُكُمْ فَلَا تَحْبِسُوهُ وَأَسْرِعُوا بِهِ إِلَى قَبْرِهِ وَلْيُقْرَأْ عِنْدَ رَأْسِهِ فَاتِحَةُ الْبَقَرَةِ وَعِنْدَ رِجْلَيْهِ بِخَاتِمَةِ الْبَقَرَةِ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَان. وَقَالَ: وَالصَّحِيح أَنه مَوْقُوف عَلَيْهِ
ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মৃত ব্যক্তিকে দ্রুত দাফন করতে হবে। কোন প্রকার ওযর-আপত্তি থাকলেও মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার ক্ষেত্রে মোটেও দেরী করা যাবে না। আল্লামা ইবনু হুমাম (রহঃ) বলেন, মৃত ব্যক্তিকে তার মৃত্যুর পরে দ্রুত দাফন করা মুস্তাহাব। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী وَاَسْرِعُوْا بِه اِلى قَبْرِه অর্থাৎ তাকে (মৃত ব্যক্তিকে) দ্রুত কবরস্থানে নিয়ে যাবে। এর দ্বারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত ব্যক্তিকে দ্রুত দাফন করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। সুতরাং এটা এ দলীল পেশ করছে যে, মৃত ব্যক্তিকে দ্রুত দাফন করা সুন্নাত।
মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পর তার মাথার কাছে সূরাহ্ বাক্বারার প্রথমাংশ এবং পায়ের কাছে শেষাংশ পড়তে হবে। আর সূরাহ্ বাক্বারার প্রথম অংশ বলতে বুঝানো হয়েছে প্রথম থেকে مفلحون পর্যন্ত। আর সূরাহ্ বাক্বারার শেষাংশ বলতে বুঝানো হয়েছে امن الرسول থেকে শেষ পর্যন্ত।
আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, সূরাহ্ বাক্বারার প্রথম অংশ নির্দিষ্ট করার কারণ হল যে, এর মধ্যে কুরআনের গুণাগুণ বর্ণনা করা হয়েছে। আর তা হল هدى للمتقين এর মধ্যে আরো অনেক গুণাবলী রয়েছে। যেমন অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের কথা, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ক্বায়িমের কথা এবং যাকাত আদায়ের কথা। আর শেষাংশে আল্লাহ, মালাক (ফেরেশতা), রসূল ও তার কিতাবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের কথা বলা হয়েছে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও দয়া-অনুগ্রহ চাওয়া হয়েছে। আল্লাহর ওপরই সমস্ত কিছু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে। আর একজন মানুষকে পরকালীন জীবনে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই তাকে দুনিয়াতে এর সবগুলোর প্রতি ‘আমল করতে হবে।
এ হাদীসে ক্ববরের কাছে সূরাহ্ বাক্বারার প্রথম অংশ ও শেষ অংশ পড়ার পক্ষে দলীল বটে কিন্তু হাদীসটি মাওকূফ এবং এ হাদীসটিকে আবূ যুর‘আ, আবূ হাতিম, হাফিয ইবনু হাজার এবং ইবনু মু‘ঈন য‘ঈফ বলেছেন। কুরআন তিলাওয়াতসহ অন্যান্য ‘ইবাদাতের নেকী মৃত ব্যক্তির নিকট পৌঁছে কিনা এ ব্যাপারে বিদ্বানগণের মধ্যে মতানৈক্য আছে। ইমাম আহমাদ (রহঃ) এবং আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মতে পৌঁছে। তবে ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) এবং ইমাম মালিক (রহঃ)-এর মতে পৌঁছে না। যাদের নিকট পৌঁছে তাদের মতের পক্ষে যত দলীল পেশ করেছেন সবগুলো দুর্বল, কোনটি দলীলযোগ্য নয়। কুরআন, সহীহ হাদীস এবং ইজমা থেকে কোন দলীল পাওয়া যায় না। সুতরাং সালফে সালিহীন থেকে এমন ‘আমলের কোন সন্ধান পাওয়া যায় না। আনুষ্ঠানিকতার কথাতো বলাই বাহুল্য।
পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা
১৭১৮-[২৬] ইবনু আবূ মুলায়কাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুবশী (মক্কার নিকটবর্তী একটি জায়গার নাম) নামক স্থানে ’আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকরের মৃত্যু হলে তাঁর লাশ মক্কায় নিয়ে এসে দাফন করা হয়। উম্মুল মু’মিনীন ’আয়িশাহ্ (রাঃ) (মক্কায় হাজ্জ (হজ/হজ্জ) করতে) এলে তিনি ’আবদুর রহমানের (ভাইয়ের) কবরের কাছে এলেন। ওখানে তিনি (কবি তামীম ইবনু নুওয়াইরার কবিতার এ দু’টি পংক্তি আবৃত্তি করেন যাতে কবি তার ভাই মালিকের জন্য শোক প্রকাশ করেছিলেন)-
ওয়া কুন্না- কানাদ্ মা-নী জাযীমাতা হিক্ববাতান মিনাদ্ দাহরি হাত্তা- ক্বীলা লাই ইয়াতা সাদ্দা’আ
ফালাম্মা- তাফাররাক্বনা- কাআন্নী ওয়ামা-লিকান লিতূলিজ্ তিমা-’ইন লাম নাবিত লাইলাতাম্ মা’আ।
অর্থাৎ আমরা দু’ ভাই বোন, জাযিমার সে দু’ বন্ধুর মতো অনেক দিন পর্যন্ত একত্রে কালযাপন করছিলাম। তাদের এ অবস্থা দেখে লোকেরা বলাবলি করতে লাগল, এরা তো কখনো (একে অপর থেকে) পৃথক হবে না। কিন্তু যখন আমরা দু’জন অর্থাৎ আমি ও তুমি একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হলাম, তখন দীর্ঘ সময় পর্যন্ত এক সাথে থাকার পরও মনে হলো, আমরা একটি রাতের জন্যও একত্রে এক জায়গায় ছিলাম না।
এরপর ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমি যদি তোমার ইন্তিকালের সময় তোমার কাছে থাকতাম, তাহলে আমি তোমাকে সেখানেই দাফন করতাম, যেখানে তুমি মৃত্যুবরণ করেছিলে। আর আমি যদি তোমার মৃত্যুর সময় তোমার কাছে থাকতাম তাহলে আজ তোমার কবরের পাশে আমি আসতাম না। (তিরমিযী)[1]
وَعَنِ ابْنِ أَبِي مُلَيْكَةَ قَالَ: لَمَّا تُوُفِّيَ عبد الرَّحْمَن بن أبي بكر بالحبشي (مَوضِع قريب من مَكَّة)
وَهُوَ مَوْضِعٌ فَحُمِلَ إِلَى مَكَّةَ فَدُفِنَ بِهَا فَلَمَّا قَدِمَتْ عَائِشَةُ أَتَتْ قَبْرَ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ فَقَالَتْ:
وَكُنَّا كَنَدْمَانَيْ جَذِيمَةَ حِقْبَةً مِنَ الدَّهْرِ حَتَّى قِيلَ لَنْ يَتَصَدَّعَا
فَلَمَّا تَفَرَّقْنَا كَأَنِّي وَمَالِكًا لِطُولِ اجْتِمَاعٍ لَمْ نَبِتْ لَيْلَةً مَعَا
ثُمَّ قَالَتْ: وَاللَّهِ لَوْ حَضَرْتُكَ مَا دُفِنْتَ إِلَّا حَيْثُ مُتَّ وَلَوْ شهدتك مَا زرتك رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: হাবশাহ্ একটি স্থানে নাম। এটি মক্কার নিকট অবস্থিত। তবে মক্কা থেকে এর দূরত্ব হচ্ছে বারো মাইল। কেউ কেউ বলেছেন, দশ মাইল। শামনী বলেন, এ হাদীসে কবিতার যে পংতিগুলো উল্লেখ করা হয়েছে তা রচনা করেছিলেন তামীম ইবনু নুওয়াইরাহ্। তিনি তার ভাই মালিক, যাকে খালিদ ইবনু ওয়ালীদ আবূ বাকর (রাঃ)-এর খিলাফাতকালে হত্যা করেছিলেন তার প্রতি শোক প্রকাশের জন্য তিনি এ কবিতাগুলো রচনা করেছিলেন।
এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) কবর যিয়ারত করতে গিযেছিলেন। অথচ অন্য হাদীসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারতকারিণী মহিলাদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন। তাহলে কিভাবে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) কবর যিয়ারত করলেন? এর উত্তরে বলা যায় যে, হাদীসে যে নিষেধাজ্ঞা করা হয়েছে তা হল অধিক অধিক কবর যিয়ারত করার ক্ষেত্রে।
মহিলাদের জন্য কবর যিয়ারত করার বিধান সম্পর্কে ‘উলামাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে অধিকাংশ ‘উলামায়ে কেরাম মহিলাদের কবর যিয়ারত করাকে জায়িয বলেছেন। তবে তারা এ শর্তারোপ করেছেন যে, যখন তারা ফিতনাহ্ (ফিতনা) থেকে নিরাপদ থাকবে তখন তাদের কবর যিয়ারত করাতে কোন সমস্যা নেই। এ ব্যাপারে এ হাদীসটি ছাড়াও আরো হাদীস বর্ণিত রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা
১৭১৯-[২৭] আবূ রাফি’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা’দ-এর লাশকে মাথার দিক থেকে ধরে কবরে নামিয়েছেন। তারপর তিনি তাঁর কবরে পানি ছিটিয়ে দিয়েছেন। (ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ أَبِي رَافِعٍ قَالَ: سَلَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَعْدًا وَرَشَّ عَلَى قَبره مَاء. رَوَاهُ ابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: এই হাদীস দ্বারা এ কথার প্রমাণ পাওয়া যায় যে, ক্ববরের উপর পানি ছিটিয়ে দেয়া যায়, আর এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। এই ব্যাপারে এ ছাড়া আরো অন্যান্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে, যা আবূ রাফি‘র হাদীসকে শক্তিশালী করে।
পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা
১৭২০-[২৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার একটি জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করালেন। তারপর তিনি তার কবরের কাছে এলেন এবং কবরে তার মাথা বরাবর তিন মুষ্টি মাটি রাখলেন। (ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى عَلَى جَنَازَةٍ ثُمَّ أَتَى الْقَبْر فَحَثَا عَلَيْهِ مِنْ قِبَلِ رَأْسِهِ ثَلَاثًا. رَوَاهُ ابْنُ مَاجَه
পরিচ্ছেদঃ ৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা
১৭২১-[২৯] ’আমর ইবনু হাযম (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাকে কবরে হেলান দিয়ে বসে থাকতে দেখে বললেন, তুমি এ কবরবাসীকে কষ্ট দিও না। অথবা বললেন, তুমি একে কষ্ট দিও না। (আহমাদ)[1]
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ قَالَ: رَآنِي النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُتَّكِئًا عَلَى قَبْرٍ فَقَالَ: لَا تؤذ صَاحب هَذَا الْقَبْر أَولا تؤذه. رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ববরের উপর বসা থেকে কঠিনভাবে নিষেধ করেছেন। এ মর্মে আহমাদের বর্ণনাতেও হাদীস বর্ণিত রয়েছে। এ সকল হাদীস থেকে জমহূর ‘উলামাগণ এ ব্যাপারে দলীল গ্রহণ করেছেন যে, ক্ববরের উপর বসা বলতে স্বাভাবিকভাবে বসা বুঝানো হয়েছে। প্রয়োজন পূরণের জন্য বসাকে বুঝানো হয়নি। তাছাড়া ক্ববরের উপর বসাকে নিষেধ করার কারণ কি তাও এ হাদীসে বলা হয়েছে। আর তা হল, এর দ্বারা মৃত ব্যক্তিকে কষ্ট দেয়া হয় অর্থাৎ তাকে অপমান করা হয়।