পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা
১৭০০-[৮] ’উরওয়াহ্ ইবনুয্ যুবায়র (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মদীনায় দু’ ব্যক্তি ছিলেন (তারা কবর খুড়তেন)। তাদের একজন (আবূ ত্বলহাহ্ আল আনসারী) লাহদী (বুগলী) কবর খুঁড়তেন আর দ্বিতীয়জন (আবূ ’উবায়দাহ্ ইবনুল জাররাহ্) লাহদী কবর খুঁড়তেন না (বরং সিন্ধুকী কবর খুড়তেন)। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকাল হলে সাহাবীগণ (সম্মিলিতভাবে বললেন), এ দু’ ব্যক্তির যিনি আগে আসবেন তিনিই তার মতো করে কবর খনন করবেন। পরিশেষে তিনিই আগে আসলেন যিনি লাহদী কবর খুঁড়তেন (অর্থাৎ আবূ ত্বলহাহ্ আল আনসারী।) তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য লাহদী কবর খুঁড়লেন। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ قَالَ: كَانَ بِالْمَدِينَةِ رَجُلَانِ أَحَدُهُمَا يَلْحَدُ وَالْآخَرُ لَا يَلْحَدُ. فَقَالُوا: أَيُّهُمَا جَاءَ أَوَّلًا عَمِلَ عَمَلَهُ. فَجَاءَ الَّذِي يَلْحَدُ فَلَحَدَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ فِي شَرْحِ السّنة
ব্যাখ্যা: মদীনায় দু’জন লোক ছিলেন যারা কবর খনন করতেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন আবু ত্বলহাহ্ আল আনসারী। তিনি লাহদ কবর খনন করতেন। অপরজন হলেন আবূ ‘উবায়দাহ্ ইবনুল জাররাহ্, যিনি জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্তদের মধ্যে একজন। তিনি লাহদ কবর খনন করতেন না, বরং শিক্ক কবর খনন করতেন। লাহদ বলা হয় কবর খনন করার পর ক্বিবলার দিকে বাড়তি গর্ত করে লাশ রাখার জায়গা বানানো। আর শিক্ক ঐ কবরকে বলা হয়, যা খনন করার পর মধ্যখানে লাশ রাখার জন্য আবার ছোট করে একটি গর্ত করা হয়। তাদের যে আগে আসত সে অনুযায়ী কবর খনন করা হত। আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে লাহদ ক্ববরেই দাফন করা হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা
১৭০১-[৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লাহদী কবর আমাদের জন্য। আর শাক্ক্ (সিন্ধুকী) কবর আমাদের অপরদের জন্য। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اللَّحْدُ لَنَا وَالشَّقُّ لغيرنا» رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা : ‘‘লাহদ আমাদের জন্য আর শিক্ক অন্যদের জন্য’’- এখানে আমাদের জন্য মুসলিমদেরকে বুঝানো হয়েছে। আর অন্যদেরকে বলতে ইয়াহূদী এবং খৃষ্টানদেরকে বুঝানো হয়েছে। এ হাদীসটি লাহদ কবর উত্তম হওয়ার ব্যাপারে প্রমাণ বহন করে। আর যদি এখানে আমাদের ছাড়া অন্যদের বলতে পূর্ববর্তী উম্মাতকে বুঝানো হয় তাহলেও এ হাদীসটি লাহদ ক্ববরের শ্রেষ্ঠত্বের দিকে ইঙ্গিত করে।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা
১৭০২-[১০] আর ইমাম আহমাদ এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন জারীর ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে।[1]
وَرَوَاهُ أَحْمَدُ عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা
১৭০৩-[১১] হিশাম ইবনু ’আমির (রাঃ)হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের যুদ্ধের দিন বলেছেন, কবর খনন কর, কবরকে প্রশস্ত কর, বেশ গভীর করে খনন কর এবং এগুলোকে ভালো করে কর, অর্থাৎ মাটি এবং ধূলিকণা থেকে পরিষ্কার কর। এক-একটি কবরে দু’ দু’, তিন তিন জন করে দাফন করো। আর তাদের মধ্যে যার বেশী করে কুরআন হিফয আছে তাকে কবরে আগে রাখো। (আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী এবং ইমাম ইবনু মাজাহ ’ওয়া আহসিনূ’ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন।)[1]
وَعَنْ هِشَامِ بْنِ عَامِرٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَوْمَ أُحُدٍ: «احْفُرُوا وَأَوْسِعُوا وَأَعْمِقُوا وَأَحْسِنُوا وَادْفِنُوا الِاثْنَيْنِ وَالثَّلَاثَةَ فِي قبر وَاحِد وَقدمُوا أَكْثَرهم قُرْآنًا» . رَوَاهُ أمد وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَرَوَى ابْنُ مَاجَهْ إِلَى قَوْله وأحسنوا
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে কবরকে প্রশস্ত এবং গভীর করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কবর কতটুকু গভীর করতে হবে এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। ইমাম শাফি‘ঈর মতে, লাশের দৈর্ঘ্যের সমান গভীর করতে হবে। ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয বলেন, নাভী থেকে নিচ পর্যন্ত গভীর করতে হবে। তবে এ ব্যাপারে ইমাম মালিক বলেন, এর গভীরতার কোন সীমা নির্ধারিত নেই। কেউ কেউ বুক বরাবর গভীর করার মতামত ব্যাক্ত করেছেন। কবরকে গভীর করার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, লাশের নিরাপত্তা লাভ করা এবং হিস্র প্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষা করা।
তাছাড়া এ হাদীসে লাশকে সম্মানের সাথে দাফন করার কথা বলা হয়েছে। এ হাদীসে আরো প্রমাণ পাওয়া যায় যে, একই ক্ববরে একাধিক লোককে দাফন করা জায়িয আছে। তবে প্রয়োজন ছাড়া এ রকম করা মাকরূহ। ইমাম আবূ হানীফাহ্, শাফি‘ঈ এবং আহমাদ এ মতামতটি ব্যক্ত করেছেন। প্রয়োজনে যখন একই ক্ববরে একাধিক লোককে দাফন করা হবে তখন তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কুরআনের জ্ঞান বেশি জানে তাকে কা‘বার দিকে রাখতে বলা হয়েছে। এ থেকে এ কথা প্রমাণ পাওয়া যায় যে, জীবিত অবস্থায় যার সম্মান বেশি তিনি মারা গেলে তার লাশ ঐ রকম সম্মান পাওয়ার অধিকারী।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা
১৭০৪-[১২] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উহুদের যুদ্ধের দিন আমার ফুফু আমার পিতার (’আবদুল্লাহর) লাশ আমাদের কবরস্থানে দাফন করার জন্য নিয়ে আসলেন। কিন্তু রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তরফ থেকে একজন আহবানকারী জানালেন, শাহীদদেরকে তাঁদের শাহাদাতের জায়গায় পৌঁছিয়ে দাও। (আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, দারিমী; হাদীসের শব্দগুলো হলো তিরমিযীর)[1]
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: لَمَّا كَانَ يَوْمُ أُحُدٍ جَاءَتْ عَمَّتِي بِأَبِي لِتَدْفِنَهُ فِي مَقَابِرِنَا فَنَادَى مُنَادِي رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «رُدُّوا الْقَتْلَى إِلَى مَضَاجِعِهِمْ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَالدَّارِمِيُّ وَلَفظه لِلتِّرْمِذِي
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে মৃত ব্যক্তিকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত করার বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তিকে এ দেশ থেকে অন্য দেশে স্থানান্তরিত করার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ এটাকে মাকরূহ বলেছেন। কারণ এতে মৃত ব্যক্তিকে দাফন করতে দেরি হয় এবং তার সম্মান নষ্ট হয়। আবার কেউ কেউ বিশেষ প্রয়োজনে এটাকে মুস্তাহাব বলেছেন। যেমন, মক্কা বা এ জাতীয় ফাযীলাতপূর্ণ স্থানে দাফন করার জন্য নিয়ে যাওয়া। ইবনু কুদামাহ্ বলেন, শাহীদরা যেখানে শাহাদাত বরণ করেন, সেখানেই তাদেরকে দাফন করানো মুস্তাহাব। এর একটি হিকমাত হলো যে, তারা একত্রে আল্লাহর দীনের জন্য লড়াই করেছে এবং তারা এক সাথে শাহাদাত বরণ করেছে এবং তারা এক সাথে জীবন যাপনও করেছিল, বিধায় তারা এক সাথে হাশরের ময়দানে উঠবে। আর তাদের কবর যিয়ারত করাও মানুষের জন্য সহজ হবে।
এখানে আরো একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, একান্ত প্রয়োজন ছাড়া লাশ দাফন করার পর তাকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা ঠিক নয়।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা
১৭০৫-[১৩] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কবরে নামানোর সময় মাথার দিক দিয়ে নামানো হয়েছে। (শাফি’ঈ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: سُلَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ قِبَلِ رَأْسِهِ. رَوَاهُ الشَّافِعِي
ব্যাখ্যা: মৃত ব্যক্তিকে ক্ববরে রাখার সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে, মৃতের খাটকে ক্ববরের পিছনে রাখবে। তারপর তাকে ক্ববরে নামাবে।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা
১৭০৬-[১৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার রাতের বেলা মৃতকে রাখার জন্য কবরে নামলেন। তার জন্য চেরাগ জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল। তিনি মাইয়্যিতকে ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)র দিক থেকে ধরলেন (তাকে কবরে রাখলেন) এবং এ দু’আ পড়লেন, ’’রহিমাকাল্ল-হু ইন্ কুনতা লাআও্ওয়া-হান তাল্লা-আন লিল কুরআ-ন’’ [অর্থাৎ আল্লাহ তোমার ওপর রহম করুন। (তুমি আল্লাহর ভয়ে) কাঁদতে, আর কুরআনে কারীম বেশী বেশী পড়তে (এ দু’টি কারণে তুমি রহমত ও মাগফিরাতের উপযোগী)]। (তিরমিযী; শারহুস্ সুন্নাহয় বলা হয়েছে এ বর্ণনার সানাদ দুর্বল)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ قَبْرًا لَيْلًا فَأُسْرِجَ لَهُ بسراج فَأخذ مِنْ قِبَلِ الْقِبْلَةِ وَقَالَ: «رَحِمَكَ اللَّهُ إِنْ كُنْتَ لَأَوَّاهًا تَلَّاءً لِلْقُرْآنِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ فِي شرح السّنة: إِسْنَاده ضَعِيف
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে যে মৃত ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে কেউ কেউ বলেছেন তার নাম ছিল ‘আব্দুল্লাহ আল মাযুনী যুল বাজা-দায়ন। এ হাদীস থেকে এ বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, মৃত ব্যক্তিকে রাতে দাফন করা নিষিদ্ধ নয়। যেহেতু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই রাত্রে লাশ দাফন করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা
১৭০৭-[১৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখতেন, বলতেন, ’’বিসমিল্লা-হ, ওয়াবিল্লা-হি ওয়া ’আলা- মিল্লাতি রসূলিল্লা-হ’’। অন্য এক বর্ণনায় আছে, ’’ওয়া ’আলা- সুন্না-তি রসূলিল্লা-হ’’ (অর্থাৎ আল্লাহর নামে ও আল্লাহর হুকুম মুতাবিক রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামর মিল্লাতের উপর কবরে নামাচ্ছি)। অন্য বর্ণনায় ’মিল্লাতি রসূলিল্লা-হ’-এর জায়গায় ’সুন্নাতি রসূলিল্লা-হ’ বর্ণিত হয়েছে। (আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; আবূ দাঊদ দ্বিতীয়াংশটি)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا أَدْخَلَ الْمَيِّتَ الْقَبْرَ قَالَ: «بِسم الله وَبِاللَّهِ وعَلى مِلَّةِ رَسُولِ اللَّهِ» . وَفِي رِوَايَةٍ: وَعَلَى سُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَرَوَى أَبُو دَاوُد الثَّانِيَة
ব্যাখ্যা: মৃত ব্যক্তিকে ক্ববরে রাখার সময় যে দু‘আ পাঠ করতে হয় এ হাদীসে সেদিকে আলোকপাত করা হয়েছে। এ হাদীসে ‘আলা- মিল্লাতি রসূলিল্লা-হ বলা হয়েছে। তবে অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে ‘আলা- সুন্নাতি রসূলিল্লা-হ। দু‘আয় ব্যবহৃত বিসমিল্লা-হি এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহর নামে এ লাশকে দাফন করছি। আর বিল্লা-হি দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, আল্লাহর সাহায্য, ক্ষমতা এবং তার নির্দেশে লাশকে দাফন করছি। আর মিল্লাতি রসূলিল্লা-হ এর অর্থ হল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনিত শারী‘আতের উপর দাফন করছি।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা
১৭০৮-[১৬] ইমাম জা’ফার ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতা হতে মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের দু’ হাতের মুষ্টি ভরে মাটি নিয়ে মাইয়্যিতের কবরের উপর তিনবার দিয়েছেন। তিনি তার পুত্র ইব্রাহীমের কবরে পানি ছিটিয়েছেন এবং (চিহ্ন রাখার জন্য) কবরের উপর কংকর দিয়েছেন। (শারহুস্ সুন্নাহ্; ইমাম শাফি’ঈ ’’পানি ছিটিয়েছেন’’ থেকে [শেষ পর্যন্ত] বর্ণনা করেছেন)[1]
وَعَنْ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ عَنْ أَبِيهِ مُرْسَلًا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حثا عَلَى الْمَيِّتِ ثَلَاثَ حَثَيَاتٍ بِيَدَيْهِ جَمِيعًا وَأَنَّهُ رَشَّ عَلَى قَبْرِ ابْنِهِ إِبْرَاهِيمَ وَوَضَعَ عَلَيْهِ حَصْبَاءَ. رَوَاهُ فِي شَرْحِ السُّنَّةِ وَرَوَى الشَّافِعِيُّ من قَوْله: «رش»
ব্যাখ্যা: মুল্লা ‘আলী ক্বারী বলেনঃ ইমাম আহমাদ দুর্বল সানাদে বর্ণনা করেছেন যে, তিনবার মাটি দেয়ার সময় প্রথমবার বলবে منها خلقناكم অর্থাৎ এ মাটিই থেকে আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি। দ্বিতীয়বার মাটি দেয়ার সময় বলবে, وفيها نعيدكم অর্থাৎ এ মাটিতে তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনব। তৃতীয়বার মাটি দেয়ার সময় বলবে, ومنها نخرجكم تارة اخرى অর্থাৎ এ মাটি থেকেই আমি তোমাদেরকে পুনরায় উত্তোলন করব।
ব্যাখ্যাকার (মুবারকপূরী) বলেন, ক্বারী আহমাদের যে বর্ণনাটি উল্লেখ করেছেন তা আমি কোথাও পাইনি এবং এমন কাউকে পাইনি যে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। এছাড়া ক্বারীর বর্ণনাতে আত্মতৃপ্তি হয় না। কারণ তিনি এ বিষয়ে যোগ্য নন।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা
১৭০৯-[১৭] জাবির ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে সিমেন্ট চুন দিয়ে কোন কাজ করতে, তার উপর কিছু লিখতে অথবা খোদাই করে কিছু করতে নিষেধ করেছেন। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَن تجصص الْقُبُور وَأَن يكْتب لعيها وَأَن تُوطأ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: কবর প্লাস্টার করা নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে আগেই আলোচনা করা হয়েছে। তারপর এ হাদীসে আরো একটি বিষয়ের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আর তা হল, ক্ববরের উপর কোন কিছু লেখা। সেটা মৃত ব্যক্তির নাম হোক অথবা মৃত্যুর তারিখ হোক অথবা কুরআনের আয়াত এবং অন্য কিছু যাই হোক না কেন। ইমাম হাকিম তার মুস্তাদরাক কিতাবে বলেন, এ হাদীসটির সানাদ সহীহ। কিন্তু এ হাদীসের উপরে ‘আমল নেই। কেননা পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সর্বত্রই ক্ববরের উপর লেখালেখির কাজ চালু রয়েছে। এমনকি এটা অনেক পূর্ব যুগ থেকে চলে আসছে। ইমাম যাহাবী বলেন, কোন সাহাবী থেকে এ মর্মে জানা যায়নি যে, তারা ক্ববরে কোন কিছু লিখেছেন। তবে এটা হয়ত এমন কোন তাবি‘ঈ থেকে শুরু হয়েছে, যাদের কাছে এই নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত হাদীস পৌঁছায়নি।
ইবনু হাজার বলেন, ক্ববরের উপর যা কিছুই লেখা হোক না কেন তা মাকরূহ।
আল্লামা শাওকানী বলেন, ক্ববরের উপর কোন কিছু লিখা যে হারাম এ হাদীসটি হচ্ছে তার দলীল। এ ব্যাপারে মৃতের নাম অথবা অন্য কিছু লিখার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কি উদ্দেশে লেখা হচ্ছে সেটাও ধর্তব্য নয়।
তবে কারো কবরকে চিহ্নিত রাখার প্রয়োজনবোধ করলে তাতে পাথর বা অন্য কোন শক্ত জিনিস দ্বারা চিহ্ন রাখা যায়। যেমন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘উসমান (রাঃ)-এর কবরকে চিহ্নিত করার জন্য একটি পাথর রেখেছিলেন। এ হাদীসে আরো একটি নিষেধাজ্ঞা এসেছে তা হল, ক্ববরের উপর হাঁটাচলা করা। জুতা পায়ে হোক আর খালি পায়ে হোক উভয়টিই নিষিদ্ধ। তবে বিশেষ প্রয়োজন দেখা দিলে যেমন লাশ দাফন করার কাজে বা এ রকম প্রয়োজনে ক্ববরের উপর দিয়ে গেলে মাকরূহ হবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা
১৭১০-[১৮] জাবির ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরের উপর পানি ছিটিয়ে দেয়া হয়েছিল। তাঁর কবরে বিলাল ইবনু রাবাহ (রাঃ)পানি ছিটিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি মশক দিয়ে তাঁর মাথা থেকে আরম্ভ করে পা পর্যন্ত পানি ছিটিয়ে দেন। (বায়হাক্বী- দালায়িলুল নুবুওয়াহ্)[1]
وَعَن جَابر قَالَ: رُشَّ قَبْرُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ الَّذِي رَشَّ الْمَاءَ عَلَى قَبْرِهِ بِلَالُ بْنُ رَبَاحٍ بِقِرْبَةٍ بَدَأَ مِنْ قِبَلِ رَأْسِهِ حَتَّى انْتَهَى إِلَى رِجْلَيْهِ. رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ. فِي دَلَائِل النُّبُوَّة
ব্যাখ্যা: উল্লেখিত হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, মৃত ব্যক্তির ক্ববরে পানি ছিটানো জায়েয। বিলাল ইবনু রাবাহ (রাঃ) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ববরে পানি ছিটিয়ে দিয়েছিলেন। এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, সম্ভবত এর দ্বারা ক্ববরের উপর আল্লাহর রহমাত ও তার ক্ষমা অবতরণের আশা করা হয়। যেমনিভাবে দু‘আয় বলা হয়, اَللّهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَاهُ بِالْمَاءِ অর্থাৎ হে আল্লাহ! তার গুনাহসমূহ পানি দ্বারা ধৌত করে দাও। অর্থাৎ দূর করে দাও, ক্ষমা করে দাও।
আর বিলাল ইবনু রাবাহ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাথা হতে আরম্ভ করে পায়ের শেষ পর্যন্ত পানি ছিটিয়ে দিলেন। ক্ববরে পানি ছিটিয়ে দেয়ার ব্যাপারে উল্লেখিত হাদীসটি শার‘ঈ দলীল। আর এটা ইমাম শাফি‘ঈ, ইমাম আহমাদ ও ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মত।
এ হাদীসটি ইমাম বায়হাক্বী তার ‘‘দলায়িলুল নবূওয়াত’’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন। বায়হাক্বীতে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত আছে যে, ক্ববরে পানি ছিটিয়ে দেয়ার প্রচলন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে বিদ্যমান ছিল।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা
১৭১১-[১৯] মুত্ত্বালিব ইবনু আবী ওয়াদা’আহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন ’উসমান ইবনু মায্’ঊন (রাঃ)-এর মৃত্যুবরণ করেন, তখন তার লাশ বের করা হয় এবং তা দাফন করা হয়। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কবরের চিহ্ন রাখার জন্য এক ব্যক্তিকে হুকুম দিলেন একটি বড়) পাথর আনার জন্য। লোকটি পাথর উঠিয়ে আনতে পারলেন না। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা উঠিয়ে আনার জন্য উঠে দাঁড়ালেন এবং নিজের দু’ হাতের আস্তিন গুটিয়ে নিলেন। হাদীসের রাবী বলেন, যে ব্যক্তি আমার কাছে রসূলের এ হাদীস শুনিয়েছেন, তিনি বলতেন, যখন তিনি হাতা গুটাচ্ছিলেন- মনে হচ্ছে এখনো আমি রসূলের পবিত্র বাহুদ্বয়ের শুভ্রতার চমক অনুভব করছি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে পাথরটি উঠিয়ে এনে ’উসমানের কবরের মাথার দিকে রেখে দিলেন এবং বললেন, আমি এ পাথর দেখে আমার ভাইয়ের কবর চিনতে পারব। এখন আমার পরিবারের যে মারা যাবে তাকে এর পাশে দাফন করব।’’ (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ الْمُطَّلِبِ بْنِ أَبِي وَدَاعَةَ قَالَ: لَمَّا مَاتَ عُثْمَان ابْن مَظْعُونٍ أُخْرِجَ بِجَنَازَتِهِ فَدُفِنَ أَمَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلًا أَنْ يَأْتِيَهُ بِحَجَرٍ فَلم يسْتَطع حملهَا فَقَامَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَحَسَرَ عَنْ ذِرَاعَيْهِ. قَالَ الْمُطَّلِبُ: قَالَ الَّذِي يُخْبِرُنِي عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى بَيَاضِ ذِرَاعَيْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ حَسَرَ عَنْهُمَا ثُمَّ حَمَلَهَا فَوَضَعَهَا عِنْدَ رَأْسِهِ وَقَالَ: «أُعَلِّمُ بِهَا قَبْرَ أَخِي وَأَدْفِنُ إِلَيْهِ مَنْ مَاتَ من أَهلِي» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: এ হাদীসের মাধ্যমে শারী‘আত কবরকে চিহ্নিত করার বৈধতা দিয়েছে। অর্থাৎ কবরটি কার? এটা চেনার জন্য কোন চিহ্ন ব্যবহার করা জায়িয।
‘উসমান ইবনু মায্‘ঊন (রাঃ) যখন ইন্তিকাল করেন তখন তার জানাযাহ্ নিয়ে কবরস্থানে যাওয়া হল এবং তাকে দাফন করা হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে নির্দেশ দিলেন যে, সে যেন একটি পাথর নিয়ে তার কাছে আসে কিন্তু লোকটি তা বহন করতে সক্ষম হল না। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটির কাছে গেলেন এবং তার বাহুদ্বয় থেকে আস্তিন সরিয়ে ফেললেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমাকে যখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে এ সংবাদ দেয়া হল তখন আমার মনে হল আমি যেন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শুভ্র বাহুদ্বয় দেখতে পাচ্ছি। অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে তা বহন করে আনলেন এবং ‘উসমান ইবনু মায্‘ঊন-এর ক্ববরের উপর তার মাথার কাছে রাখলেন আর বললেন, এ হল আমার ভাইয়ের কবর। আমার পরিবারের কেউ মারা গেলে এখানেই দাফন করবে।
এ হাদীসের আলোকে কয়েকটি বিষয় অবগত হওয়া যায়। আর তা হল, নেতা তার অধিনস্ত ব্যক্তিতে কোন কাজের নির্দেশ করতে পারে। সে যদি অক্ষম হয়, তাহলে নেতা সে কাজের জন্য এগিয়ে যাবে।
কারো কবরকে চিহ্নিত করার জন্য কোন কিছু যেমন পাথর বা অন্য কিছু ব্যবহার করা জায়িয।
কবর সম্পর্কে ওয়াসীয়াত করা যায়। যেমন আমাকে অমুক স্থানে দাফন করবে।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ‘উসমান ইবনু মায্‘ঊন (রাঃ)-কে ভাই বলার দু’টি দিক রয়েছে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সম্মানার্থে তাকে ইসলামের ভাই বলেছেন। অর্থাৎ এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই অথবা তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটাত্মীয় ছিলেন। কেননা তিনি ছিলেন কুরায়শ বংশের অন্তর্ভুক্ত। অথবা তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দুধ ভাই ছিলেন।
মুল্লা ‘আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন, এটাই সহীহ। অর্থাৎ তিনি তার দুধ ভাই ছিলেন।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী আমার পরিবারের থেকে যে মারা যাবে তাকে তার কাছে দাফন করবে। বলা হয়, ‘উসমান ইবনু মায্‘ঊন-এর পরে যে ব্যক্তি প্রথম মারা যান তিনি হলেন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পুত্র ইব্রাহীম। এ হাদীস আবূ দাঊদে বর্ণিত রয়েছে। এর সানাদ সম্পর্কে আল্লামা মুনযির (রহঃ) বলেন, এর মধ্যকার কাসীর ইবনু যায়দ ছিলেন আসলামীয়ীন-এর দাস।
হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) তার তালখীস কিতাবে এর সানাদ সম্পর্কে বলেন, কাসীর ইবনু যায়দ ব্যতীত এর সানাদ সহীহ।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা
১৭১২-[২০] ক্বাসিম ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার উম্মুল মু’মিনীন ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। আরয করলাম, হে আমার মা! যিয়ারত করার জন্য আমাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর দু’ সাথী (আবূ বকর ও ’উমারের) কবর খুলে দিন। তিনি তিনটি কবরই খুলে দিলেন। আমি দেখলাম, তিনটি কবরই না খুব উঁচু না মাটির সাথে একেবারে সমতল। বরং মাটি হতে এক বিঘত উঁচু ছিল। আর এ কবরগুলোর উপর (মদীনার পাশের) আরসা ময়দানের লাল কংকর বিছানো ছিল। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ الْقَاسِمِ بْنِ مُحَمَّدٍ قَالَ: دَخَلْتُ عَلَى عَائِشَةَ فَقُلْتُ: يَا أُمَّاهُ اكْشِفِي لِي عَنْ قَبْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصَاحِبَيْهِ فَكَشَفَتْ لِي عَنْ ثَلَاثَةِ قُبُورٍ لَا مُشْرِفَةٍ وَلَا لَا طئة مَبْطُوحَةٍ بِبَطْحَاءِ الْعَرْصَةِ الْحَمْرَاءِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসের আলোকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার দুই সাথী আবূ বাকর ও ‘উমার (রাঃ)-এর ক্ববরের বিবরণ পাওয়া যায়। এখানে ক্বাসিম বলতে মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বাকর (রাঃ)-এর ছেলে ক্বাসিমকে বুঝানো হয়েছে। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) ছিলেন ক্বাসিমের ফুফু। ক্বাসিম কর্তৃক ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে মা বলার কারণ হল, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) ছিলেন তার মায়ের পর্যায়ভুক্ত। অথবা এই কারণে যে, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) ছিলেন সকল মু’মিনের মা। এ হিসেবে ক্বাসিম ইবনু মুহাম্মদ তাকে মা বলে সম্বোধন করেছেন। হাদীসে صاحبيه বলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুই সাথী তথা আবূ বাকর (রাঃ) ও ‘উমার (রাঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। ক্বাসিম যখন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কাছে তাদের কবর সম্পর্কে জানতে চাইলেন। তখন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, তাদের কবর খুব উঁচু ছিল না অর্থাৎ স্বাভাবিক। আর মাটিও খুব বেশী উঁচু ছিল না এবং একে বারে নীচুও ছিল না।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা
১৭১৩-[২১] বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আনসারদের এক ব্যক্তির জানাযার জন্য বের হলাম। আমরা কবরস্থানে পৌঁছে দেখলাম (এখনো কবর তৈরি না হওয়ার কারণে) দাফনের কাজ শুরু হয়নি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)র দিকে মুখ করে বসে গেলেন, আমরাও তাঁর সাথে বসে গেলাম। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ; ইবনু মাজাহ হাদীসের শেষে বাড়িয়েছেন, অর্থাৎ মনে হচ্ছিল আমাদের মাথার উপর পাখি বসেছে।)[1]
وَعَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جَنَازَة رجل من الْأَنْصَار فَانْتَهَيْنَا إِلَى الْقَبْر وَلما يُلْحَدْ بَعْدُ فَجَلَسَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةِ وَجَلَسْنَا مَعَهُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَزَادَ فِي آخِرِهِ: كن على رؤوسنا الطير
ব্যাখ্যা: এ হাদীস এ কথার উপর দলীল যে, যে ব্যক্তি জানাযার সালাতের অপেক্ষায় আছে, তার জন্য ক্বিবলামুখী হয়ে বসা মুস্তাহাব। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক আনসারী সাহাবীর জানাযায় গিয়ে ক্ববরের পাশে ক্বিবলামুখী হয়ে বসলেন এবং সাহাবীরা তার চার পাশে বসলেন।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা
১৭১৪-[২২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তির হাড় ভাঙ্গা, জীবিতকালে তার হাড় ভাঙারই মতো। (মালিক, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «كَسْرُ عَظْمِ الْمَيِّتِ كَكَسْرِهِ حَيًّا» . رَوَاهُ مَالِكٌ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে মৃত ব্যক্তিকে অবজ্ঞা ও অবহেলা করতে নিষেধ করা হয়েছে। আলোচ্য হাদীসের বর্ণনার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ) আবূ দাঊদের হাশিয়ার মধ্যে উল্লেখ করেছেন, জাবির (রাঃ) বলেন, একবার আমরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এক জানাযায় গেলাম। সেখানে গিয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ক্ববরের কাছে বসলেন এবং তার সাথে সাহাবীরাও বসলেন। এমন সময় একজন গর্ত খননকারী বেশ কিছু হাড় বের করে আনল এবং সে এগুলো ভাঙ্গার জন্য নিয়ে যাচ্ছিল। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এগুলো ভাঙ্গিও না। কেননা মৃত অবস্থায় হাড় ভাঙ্গা জীবদ্দশায় হাড় ভাঙ্গার নামান্তর।
আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, এ হাদীস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, জীবিত ব্যক্তিকে যেমন অপমান-অপদস্ত ও লাঞ্ছিত করা যায় না ঠিক তেমনিভাবে মৃত ব্যক্তিকে অনুরূপ অবজ্ঞা ও অবহেলা করা যাবে না।
ইবনু ‘আবদুল বার বলেন, এ হাদীস থেকে এ ফায়দা গ্রহণ করা যায় যে, জীবিত ব্যক্তি যে সব কারণে কষ্ট ও ব্যথা অনুভব করে মৃত ব্যক্তিও সেসব কারণে ব্যথা ও কষ্ট অনুভব করে।