পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা

১৬৯৩-[১] ’আমির ইবনু সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্বক্বাস (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তার পিতা সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্বক্বাস (রাঃ)মৃত্যুশয্যায় রোগাক্রান্ত অবস্থায় বলেন, আমাকে দাফন করার জন্য লাহদ (বগলী) কবর তৈরি করবে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দাফন করার জন্য যেভাবে কবর খোঁড়া হয়েছিল সেভাবে আমার উপরেও কাঁচা ইট দাঁড় করিয়ে দেবে। (মুসলিম)[1]

عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ أَن سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ قَالَ فِي مَرَضِهِ الَّذِي هَلَكَ فِيهِ: أَلْحِدُوا لِي لَحْدًا وَانْصِبُوا عَلَى اللَّبِنِ نَصْبًا كَمَا صُنِعَ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ

عن عامر بن سعد بن ابي وقاص ان سعد بن ابي وقاص قال في مرضه الذي هلك فيه: الحدوا لي لحدا وانصبوا على اللبن نصبا كما صنع برسول الله صلى الله عليه وسلم. رواه مسلم

ব্যাখ্যা: এ হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, লাহদ কবর দেয়া উত্তম। কেননা সাহাবীগণের ঐকমত্যে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে লাহদ ক্ববরে দাফন করা হয়েছিল।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা

১৬৯৪-[২] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরে একটি লাল চাদর বিছিয়ে দেয়া হয়েছিল। (মুসলিম)[1]

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: جُعِلَ فِي قَبْرِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَطِيفَةٌ حَمْرَاء. رَوَاهُ مُسلم

وعن ابن عباس قال: جعل في قبر رسول الله صلى الله عليه وسلم قطيفة حمراء. رواه مسلم

ব্যাখ্যা: এ হাদীস দ্বারা জানা যায় যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ববরে এক টুকরা লাল কাপড় বিছিয়ে দেয়া হয়েছিল। ক্ববরে কাপড় বিছানো সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। এ হাদীস দ্বারা ক্ববরে কাপড় বিছানো জায়িয প্রমাণিত হয়। ইমাম বাগাভী ও ইবনু হাযম এ মতামত গ্রহণ করেছেন। তবে জমহূর ‘উলামাগণ এটাকে মাকরূহ মনে করেন। তারা উপরোক্ত হাদীসের জবাবে বলেন, শিকরান নামক ব্যক্তি সাহাবীদের অজান্তে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ববরে ঐ কাপড়টি বিছিয়ে ছিল। ইমাম নাবাবী বলেন, এ ব্যাপারে ‘উলামাগণের বক্তব্য হল, শিকরান এ কাজটি তার মতামত অনুযায়ী করেছিল। এ ব্যাপারে সাহাবীদের কোন সম্মতি ছিল না। কেউ কেউ এর উত্তরে বলেছেন যে, প্রথমে কাপড় দেয়া হয়েছিল ঠিকই কিন্তু মাটি দেয়ার পূর্বেই তা বের করে নেয়া হয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা

১৬৯৫-[৩] সুফ্ইয়ান তাম্মার (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরকে উটের পিঠের মতো (মুসান্নাম) উঁচু দেখেছেন। (বুখারী)[1]

وَعَنْ سُفْيَانَ التَّمَّارِ: أَنَّهُ رَأَى قَبْرَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُسَنَّمًا. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

وعن سفيان التمار: انه راى قبر النبي صلى الله عليه وسلم مسنما. رواه البخاري

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে কবর উঁচু করা সম্পর্কে আলোচনা এসেছে। এ হাদীস দ্বারা জানা যায় যে, কবরকে সামান্য উঁচু করা জায়িয আছে। আর এটা চার কোণ বিশিষ্ট সমতল করা থেকে উত্তম।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা

১৬৯৬-[৪] আবুল হাইয়্যাজ আল আসাদী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আলী (রাঃ) আমাকে বলেছেন, ’’আমি কি তোমাকে এমন একটি কাজের জন্য পাঠাব না, যে কাজের জন্য রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পাঠিয়েছিলেন? তা হলো যখন তোমার চোখে কোন মূর্তি পড়বে তা একেবারে নিশ্চিহ্ন না করে ছাড়বে না। আর উঁচু কোন কবর দেখলে তা সমতল না করে রাখবে না।’’ (মুসলিম)[1]

وَعَنْ أَبِي الْهَيَّاجِ الْأَسَدِيِّ قَالَ: قَالَ لِي عَلِيٌّ: أَلَا أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِي عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِن لَا تَدَعَ تِمْثَالًا إِلَّا طَمَسْتَهُ وَلَا قَبْرًا مشرفا إِلَّا سويته. رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي الهياج الاسدي قال: قال لي علي: الا ابعثك على ما بعثني عليه رسول الله صلى الله عليه وسلم: ان لا تدع تمثالا الا طمسته ولا قبرا مشرفا الا سويته. رواه مسلم

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে কবর পাকা করা বা কবর উঁচু করে তাতে মাজার স্থাপন বা তাকে মাজার বানানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। হাদীসের নির্দেশ অনুযায়ী মুসলিমদের ওপর এটা ওয়াজিব যে, যেখানে কোন প্রাণীর মূর্তি পাওয়া যাবে সেটাকে ভেঙ্গে বা মিটিয়ে দেয়া এবং কোন উঁচু কবর পাওয়া গেলে সেটাকে সমতল করে দেয়া। বালু এবং পাথর বা পাথর খন্ড দ্বারা কবর চিহ্নিত করা জায়িয। এ কারণে যে, কেউ কবর পিষ্ট করবে না। আর এটা নিষিদ্ধ উঁচুর অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে কবর সীমাতিরিক্ত উঁচু করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা

১৬৯৭-[৫] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে চুনকাম করতে, এর উপর ঘর বানাতে এবং বসতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম)[1]

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُجَصَّصَ الْقَبْرُ وَأَنْ يُبْنَى عَلَيْهِ وَأَنْ يُقْعَدَ عَلَيْهِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ

وعن جابر قال: نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم ان يجصص القبر وان يبنى عليه وان يقعد عليه. رواه مسلم

ব্যাখ্যা: এ হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, কবরকে প্লাস্টার করা হারাম। কেননা হাদীসে সরাসরি এটাকে নিষেধ করা হয়েছে। আর এ নিষিদ্ধতা হারামকেই বুঝায়। এ হাদীস থেকে যে বিষয়টি জানা যায় তা হলো, ক্ববরের উপর ঘর নির্মাণ করতেও নিষেধ করা হয়েছে। এ দ্বারা উদ্দেশ্য ক্ববরের উপর অথবা তার পাশে ঘর অথবা মাসজিদ নির্মাণ করা বা এ রকম অন্য কিছু নির্মাণ করা। তুরবিশতী বলেন, ঘর বানানোর উদ্দেশ্য দু’টি হতে পারে। একটি হচ্ছে, ক্ববরের উপর পাথর অথবা এরূপ কিছু দ্বারা ঘর নির্মাণ করা। অপরটি হচ্ছে ক্ববরের উপর তাঁবু বা এরূপ কিছু টানানো; আর উভয়টিই নিষিদ্ধ। কেননা এগুলো জাহিলী যুগের পাপ কাজ এবং এতে সম্পদ নষ্ট হয়। ইমাম শাওকানী বলেন, ক্ববরের উপর ঘর নির্মাণ নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে এ হাদীসটি দলীল।

ক্ববরের উপর বসতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা এর দ্বারা কবরবাসী মুসলিম ভাইয়ের প্রতি অবজ্ঞা পোষণ করা হয়। কেউ কেউ এ বসা দ্বারা মলত্যাগের জন্য বসা বুঝিয়েছেন। কিন্তু প্রথম কথাটিই সঠিক। ইমাম ত্ববারানী এবং হাকিম আম্মারা (রহঃ) ইবনু হাযম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, একদা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ক্ববরের উপরে বসা অবস্থায় দেখে বললেন, তুমি নেমে পড় এবং কবরবাসীকে কষ্ট দিও না। হাসান বসরী এবং ইবনু সীরীন বলেন, স্বাভাবিকভাবে ক্ববরে বসাটা হারাম। এ মতামত ব্যাক্ত করেছেন জাহিরী সম্প্রদায়। মুহাল্লাহ কিতাবে ইবনু হাযম এবং আরো অনেকে বলেন, কারো জন্য এটা হালাল নয় যে, সে ক্ববরের উপরে বসবে। আবূ হানীফাহ্ এবং শাফি‘ঈদের এক দল ক্ববরে বসাকে মাকরূহ মনে করেন। তবে এক্ষেত্রে প্রাধান্য প্রাপ্ত কথা হচ্ছে ক্ববরের উপর বসাটা হারাম হিসেবে গণ্য হবে। আর এটাই জমহূর বিদ্বানগণের মত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা

১৬৯৮-[৬] আবূ মারসাদ আল গানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কবরের উপর বসবে না এবং কবরের দিকে মুখ করে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে না। (মুসলিম)[1]

وَعَنْ أَبِي مَرْثَدٍ الْغَنَوِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَجْلِسُوا عَلَى الْقُبُورِ وَلَا تُصَلُّوا إِلَيْهَا» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

وعن ابي مرثد الغنوي قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا تجلسوا على القبور ولا تصلوا اليها» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: এ হাদীসেও ক্ববরের উপর বসা এবং কবরকে সামনে রেখে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা এতে কবর বা কবরওয়ালাকে সম্মান দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং এ নিষিদ্ধটা হারাম পর্যায়ের। কারণ এ হাদীসটি সরাসরি ক্ববরের দিকে সালাত আদায় করা থেকে নিষেধ করে। এ বিষয়ে আরো দলীল রয়েছে, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) মারফূ' সূত্রে বর্ণনা করে বলেছেন যে, তোমরা ক্ববরের দিকে এবং ক্ববরের উপরে সালাত আদায় করবে না। ত্ববারানী এ হাদীসটি বর্ণনা করেন। ওয়াসিলা ইবনুল আসক্বা বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ক্ববরের দিকে সালাত আদায় করতে এবং ক্ববরের উপর বসতে নিষেধ করেছেন। এ হাদীসটিও ত্বাবানীরীতে উল্লেখ রয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals

পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির দাফনের বর্ণনা

১৬৯৯-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কারো অঙ্গারের উপর বসা, আর এ অঙ্গারে (পরনের) কাপড়-চোপড় পুড়ে শরীরে পৌঁছে যাওয়া তার জন্য উত্তম হবে কবরের উর বসা হতে। (মুসলিম)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَأَنْ يَجْلِسَ أَحَدُكُمْ عَلَى جَمْرَةٍ فَتُحْرِقَ ثِيَابَهُ فَتَخْلُصَ إِلَى جِلْدِهِ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يجلس على قبر» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لان يجلس احدكم على جمرة فتحرق ثيابه فتخلص الى جلده خير له من ان يجلس على قبر» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: এ হাদীসটিও ক্ববরে বসাকে নিষেধ করে। হাদীসের বাহ্যিক অর্থ এ কথাই বলছে যে, ক্ববরের উপর বসা জায়িয নয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز) 5. Funerals
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৭ পর্যন্ত, সর্বমোট ৭ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে