পরিচ্ছেদঃ ৩৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত

১২৭৭-[২৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তাঁর নিকট প্রশ্ন করা হলো যে, আমীরুল মু’মিনীন মু’আবিয়াহ্ (রাঃ)-এর ব্যাপারে আপনার কিছু বলার আছে? তিনি বিতরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) এক রাক্’আত আদায় করেন। (এ কথা শুনে) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বললেন, তিনি একজন ’ফকীহ’, যা করেন ঠিক করেন।

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ইবনু আবূ মুলায়কাহ্ বলেন, মু’আবিয়াহ্ ’ইশার সালাতের পর বিতরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) এক রাক্’আত আদায় করেছেন। তার কাছে ছিলেন ইবনু ’আব্বাস-এর আযাদ করা গোলাম। তিনি তা দেখে ইবনু ’আব্বাসকে ব্যাপারটি জানিয়ে দিলেন। ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বললেন, তার সম্পর্কে কিছু বলো না। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহচর্যের মর্যাদা লাভ করেছেন। (বুখারী)[1]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قِيلَ لَهُ: هَلْ لَكَ فِي أَمِير الْمُؤمنِينَ مُعَاوِيَة فَإِنَّهُ مَا أَوْتَرَ إِلَّا بِوَاحِدَةٍ؟ قَالَ: أَصَابَ إِنَّهُ فَقِيهٌ
وَفِي رِوَايَةٍ: قَالَ ابْنُ أَبِي مُلَيْكَةَ: أَوْتَرَ مُعَاوِيَةُ بَعْدَ الْعِشَاءِ بِرَكْعَةٍ وَعِنْدَهُ مَوْلًى لِابْنِ عَبَّاسٍ فَأَتَى ابْنَ عَبَّاسٍ فَأَخْبَرَهُ فَقَالَ: دَعْهُ فَإِنَّهُ قَدْ صَحِبَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

عن ابن عباس قيل له: هل لك في امير المومنين معاوية فانه ما اوتر الا بواحدة؟ قال: اصاب انه فقيه وفي رواية: قال ابن ابي مليكة: اوتر معاوية بعد العشاء بركعة وعنده مولى لابن عباس فاتى ابن عباس فاخبره فقال: دعه فانه قد صحب النبي صلى الله عليه وسلم. رواه البخاري

ব্যাখ্যা: মু‘আবিয়াহ্ একজন ফিকহবিদ ও শারী‘আত সম্পর্কে বিজ্ঞ ব্যক্তি ছিলেন। শারী‘আত বিষয়ে তিনি ভাল জানতেন, অর্থাৎ সানাদগত দিক থেকে যা প্রমাণিত নয় তা তিনি করেননি। এ ব্যাপারে ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ তিনি যা জানেন না তা তিনি করবেন না। মু‘আবিয়াহ্ (রাঃ)-এর কর্মের (এক রাক্‘আত বিতর পড়ার) মাধ্যমে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এক রাক্‘আত বিতর শারী‘আত সম্মত সুন্নাত, এ বিষয়ে দলীল গ্রহণ করেছেন এবং এক্ষেত্রে তার (এক রাক্‘আত বিতর পড়ার) পূর্বে কোন নফল সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বিতরের সাথে যুক্ত করা ওয়াজিব নয়, আর এ ব্যাপারে (শুধু এক রাক্‘আত বিতর সালাত আদায় করার ব্যাপারে) অনেক হাদীস রয়েছে। যেমন পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে এবং অসংখ্য সাহাবী এক রাক্‘আত বিতর পড়তেন। তাদের মধ্য সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ), ইমাম বুখারী তা দা‘ওয়াতুল কাবীরে বর্ণনা করেছেন এবং ‘উসমান ইবনু ‘আফফান, ‘উমার ইবনু খাত্ত্বাব, আবূ দারদাহ্, ফুজালাহ্ ইবনু ‘উবায়দ, মু‘আয ইবনু জাবাল, আবূ ‘উমামাহ্ (রাঃ) প্রমুখগণ, তাঁদের ব্যাপারে বর্ণনা করেছেন যথাক্রমে, ত্বহাবী, দারাকুত্বনী, বায়হাক্বী, তার মারেফা ও সুনান গ্রন্থে, এর প্রত্যেকটি হাদীসে তাদের কথাকে প্রত্যাখ্যান করছে, যারা মনে করেন যে, এক রাক্‘আত বিতর শারী‘আত সম্মত নয় এবং মনে করেন যে, এক রাক্‘আত বিতরের সাথে জোর সংখ্যক নফল সালাত যুক্ত করা ওয়াজিব। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা পূর্বে করা হয়েছে বিধায় এখানে ছেড়ে দেয়া হলো।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৩৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত

১২৭৮-[২৫] বুরায়দাহ্ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ ’বিতরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আবশ্যক (অর্থাৎ ওয়াজিব)। তাই যে লোক বিতরের সালাত আদায় করল না, সে আমার উম্মাতের মাঝে গণ্য নয়। ’বিতরের সালাত সত্য’, যে বিতরের সালাত আদায় করল না সে আমার উম্মাতের মাঝে গণ্য হবে না। ’বিতরের সালাত সত্য’, যে লোক বিতরের সালাত আদায় করল না সে আমার উম্মাতের মাঝে গণ্য হবে না। বিতরের সালাত সত্য, যে ব্যক্তি বিতরের সালাত আদায় করল না সে আমার উম্মাতের মাঝে গণ্য না। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن بُرَيْدَة قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «الْوَتْرُ حَقٌّ فَمَنْ لَمْ يُوتِرْ فَلَيْسَ مِنَّا الْوَتْرُ حَقٌّ فَمَنْ لَمْ يُوتِرْ فَلَيْسَ مِنَّا الْوَتْرُ حَقٌّ فَمَنْ لَمْ يُوتِرْ فَلَيْسَ مِنَّا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ

وعن بريدة قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «الوتر حق فمن لم يوتر فليس منا الوتر حق فمن لم يوتر فليس منا الوتر حق فمن لم يوتر فليس منا» . رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: বিতর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শার‘ঈভাবে সাব্যস্ত ও প্রমাণিত এবং অতীব ও গুরুত্বপূর্ণ। যে বিতর পড়ে না সে আমার (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) সুন্নাতের উপর এবং আমার নির্দেশিত পন্থা বা পদ্ধতির উপর নেই।

আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, لَيْسَ مِنَّا এর مِنْ বর্ণনাটি মিলিতকরণ বা সংযোগমূলক বর্ণ। যেমন- আল্লাহ তা‘আলার কথাঃ

الْمُنَافِقُوْنَ وَالْمُنَافِقَاتُ بَعْضُهُمْ مِنْ ۢبَعْضٍ

অর্থাৎ ‘‘মুনাফিক্ব নারী পুরুষ উভয় একে অপরের বন্ধু।’’ (সূরাহ্ আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৬৭)

এ ব্যাপারে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা, ‘আমি তোমার অন্তর্ভুক্ত নই এবং তুমি আমার অন্তর্ভুক্ত নও’। অতএব এখানে (لَمْ يُوتِرْ فَلَيْسَ مِنَّا) -এর অর্থ হবে যে বিতর পড়ে না সে আমার সাথে ও আমার নির্দেশিত পথ ও পন্থার সাথে সংযুক্ত নয়। অর্থাৎ বিতর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শার‘ঈভাবে সাব্যস্ত বা প্রমাণিত এবং গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। আর (لَمْ يُوتِرْ فَلَيْسَ مِنَّا) বাক্যটিকে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে বিতরের মর্যাদা ও গুরুত্ব বুঝানোর জন্য। এ হাদীস দ্বারা হানাফীগণ বিতর ওয়াজিব হওয়ার উপর দলীল গ্রহণ করেছেন। তথা মৌলিকভাবেই বিতর ওয়াজিব (হানাফীদের নিকট) তাদের মতে الحق শব্দটি ওয়াজিব অর্থে ব্যবহার হয়েছে যা দায়িত্বের উপর দৃঢ়কারী এবং সেটার সমর্থনে বিতর পরিত্যাগকারীর উপর ধমক প্রদর্শনের দলীল।

তার জবাবে বলা যায় যে, الحق শব্দটির অর্থ হলো الثابت في الشرع অর্থাৎ শার‘ঈভাবে সাব্যস্ত সুন্নাত। যেমন- পূর্বে তা অতিবাহিত হয়েছে। আল্লামা ত্বীবী (রহঃ)-এর কথায় لَيْسَ مِنَّا এর অর্থ হলো সে আমার সুন্নায় বা আমার নির্দেশিত পন্থায় নেই, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যে অবজ্ঞা ভরে বিতর পড়ল না সে আমার দলভুক্ত নয়। সুতরাং হাদীসটি বিতর সালাত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত এটাই প্রমাণ করে এবং এটাই উক্ত হাদীস এবং যে সকল হাদীসগুলো বিতর ওয়াজিব নয়, এমন প্রমাণ বহন করে সেগুলোর মাঝের সমাধান।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৩৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত

১২৭৯-[২৬] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে লোক বিতরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় না করে ঘুমিয়ে পড়ল অথবা আদায় করতে ভুলে গেল সে যেন যখনই স্মরণ হয় বা ঘুম হতে সজাগ হয়ে আদায় করে নেয়। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «من نَام عَن الْوِتْرِ أَوْ نَسِيَهُ فَلْيُصَلِّ إِذَا ذَكَرَ أَوْ إِذا اسْتَيْقَظَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
أَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه

وعن ابي سعيد قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من نام عن الوتر او نسيه فليصل اذا ذكر او اذا استيقظ» . رواه الترمذي ابو داود وابن ماجه

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে এ মর্মে দলীল রয়েছে যে, বিতর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) কখনো ছুটে গেলে তা ক্বাযা আদায় করা শারী‘আত সম্মত। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা অতিবাহিত হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৩৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত

১২৮০-[২৭] ইমাম মালিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি জানতে পারলেন যে, এক লোক ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ)-এর নিকট বিতরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ওয়াজিব কি-না তা প্রশ্ন করল। ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) বললেন, বিতরের সালাত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদায় করেছেন এবং মুসলিমরাও (সাহাবীগণ) আদায় করেছেন। ঐ লোক বারবার একই বিষয় জিজ্ঞেস করতে থাকেন। ইবনু ’উমার (রাঃ)ও একই উত্তর দিতে থাকেন যে, বিতরের সালাত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদায় করেছেন এবং মুসলিমরাও আদায় করেছেন। (মুয়াত্ত্বা)[1]

وَعَنْ مَالِكٍ بَلَغَهُ أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ ابْنَ عُمَرَ عَنِ الْوِتْرِ: أَوَاجِبٌ هُوَ؟ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ: قَدْ أَوْتَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَوْتَرَ الْمُسْلِمُونَ. فَجَعَلَ الرَّجُلُ يُرَدِّدُ عَلَيْهِ وَعَبْدُ اللَّهِ يَقُولُ: أَوْتَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَوْتَرَ الْمُسْلِمُونَ. رَوَاهُ فِي الْمُوَطَّأ

وعن مالك بلغه ان رجلا سال ابن عمر عن الوتر: اواجب هو؟ فقال عبد الله: قد اوتر رسول الله صلى الله عليه وسلم واوتر المسلمون. فجعل الرجل يردد عليه وعبد الله يقول: اوتر رسول الله صلى الله عليه وسلم واوتر المسلمون. رواه في الموطا

ব্যাখ্যা: ইবনু ‘উমার (রাঃ) এক ব্যক্তির জবাবে বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছেন এবং সকল মুসলিমগণ। এ ব্যাপারে মুল্লা ‘আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন যে, ইবনু ‘উমার (রাঃ) প্রমাণিত বিষয় থেকে দলীল গ্রহণ করা থেকে বিরত থেকেছেন। যেন তিনি (ক্বারী) বুঝাতে চাচ্ছেন বিতর ওয়াজিব, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তার উপর অবিচল থাকা ও আহলুল ইসলামদের ঐকমত্যই তার দলীল।

জবাবে মির্‘আত প্রণেতা বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন কর্মে সর্বদা অবিচল থাকাটা তখনই ওয়াজিব হিসেবে পরিগণিত হবে, যখন তা মানদূব বা মুসতাহাবে স্থানান্তরিত হওয়ার কোন বর্ণনা না পাওয়া যাবে। কিন্তু এ ব্যাপারে তো সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, বিতর ওয়াজিব নয়। কাজেই ইবনু ‘উমার (রাঃ) জানতেন যে, বিতর সালাত সুন্নাত এবং তার উপরই ‘আমল রয়েছে এবং তার নির্ধারিত পথ ও পন্থা সম্পর্কেও জানতেন। যদি তা ওয়াজিবই হত তবে তিনি স্পষ্টভাবে তার আবশ্যকতা সম্পর্কে বলতেন।

আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন যে, বিতর ওয়াজিব কি ওয়াজিব নয় কোনটি ফেলে দেবার মত নয়, কেননা যখন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও তাঁর সাহাবীগণের তার (বিতর) উপর অবিচল থাকার দিকে লক্ষ্য করি তখন আমি মনে করি যে, বিতর ওয়াজিব, আর যখন পূর্ণ নস্ বা মূল বক্তব্যের প্রতি লক্ষ্য করি তখন আমি বিতরের আবশ্যক থেকে পিছু হটি বা ফিরে আসি।

তবে মির্‘আত প্রণেতা বলেন- বিতর ওয়াজিবের ব্যাপারে যে কোন নির্ভরযোগ্য হাদীস নেই এতে কোন সন্দেহ নেই। বরং নির্ভরযোগ্য ও সহীহ হাদীস প্রমাণ করে যে, বিতর মুস্তাহাব; এর এটাই স্পষ্ট আলামত যে, বিতর সুন্নাত, ওয়াজিব নয়। হ্যাঁ, তবে তা সকল সুন্নাত থেকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরবর্তী সাহাবীগণের তার (বিতরের) উপর অবিচল থাকাটা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাতের উপর অবিচল থাকার মতই।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৩৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত

১২৮১-[২৮] ’আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) তিন রাক্’আত আদায় করতেন এবং তাতে মুফাসসালের নয়টি সূরাহ্ পাঠ করতেন। প্রতি রাক্’আতে তিনটি সূরাহ্ এবং এগুলোর শেষ সূরাহ্ ছিল ’’কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’’ (সূরাহ্ আল ইখলা-স)। (তিরমিযী)[1]

وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُوتِرُ بِثَلَاثٍ يَقْرَأُ فِيهِنَّ بِتِسْعِ سُوَرٍ مِنَ الْمُفَصَّلِ يَقْرَأُ فِي كُلِّ رَكْعَةٍ بِثَلَاثِ سُوَرٍ آخِرُهُنَّ: (قل هوا لله أحد)
رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن علي رضي الله عنه قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر بثلاث يقرا فيهن بتسع سور من المفصل يقرا في كل ركعة بثلاث سور اخرهن: (قل هوا لله احد) رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীসটি মুসনাদে আহমাদেও বর্ণিত হয়েছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের তিন রাক্‘আত সালাতে ঐ সূরাগুলো পড়তেন, প্রথম রাক্‘আতে সূরাহ্ তাকাসুর, সূরাহ্ ক্বদর (কদর) এবং সূরাহ্ যিলযাল এবং দ্বিতীয় রাক্‘আতে সূরাহ্ ‘আসর, সূরাহ্ নাসর ও সূরাহ্ কাওসার এবং তৃতীয় রাক্‘আতে সূরাহ্ কাফিরূন, সূরাহ্ লাহাব ও সূরাহ্ ইখলাস পড়তেন। এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিতরের সালাতে এ সকল সূরাহ্ পড়া শারী‘আত সম্মত। কিন্তু হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।

মির‘আত প্রণেতা বলেন, আমার নিকট উত্তম হলো তিন রাক্‘আত বিতরের ১ম রাক্‘আতে সূরাহ্ আ‘লা-, দ্বিতীয় রাক্‘আতে সূরাহ্ কা-ফিরূন ও তৃতীয় রাক্‘আতে সূরাহ্ আল ইখলাস পড়াই উত্তম। কারণ এ ব্যাপারে উবাই ইবনু কা‘ব ও ইবনু ‘আব্বাস-এর বর্ণনায় বিশুদ্ধ ও মারফূ' হাদীস রয়েছে এবং এটাই অধিকাংশ বিদ্বানদের নিকট পছন্দনীয় বা উত্তম।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৩৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত

১২৮২-[২৯] নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু ’উমার (রাঃ)-এর সঙ্গে মক্কায় ছিলাম। আসমান মেঘাচ্ছন্ন ছিল। ইবনু ’উমার (রাঃ) সকাল হয়ে যাওয়ার আশংকা করলেন। তখন তিনি এক রাক্’আত বিতরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে নিলেন। তারপর আসমান পরিষ্কার হয়ে গেলে দেখলেন, এখনো অনেক রাত অবশিষ্ট আছে। তা তিনি আরো এক রাক্’আত আদায় করে জোড়া করে নিলেন। এরপর দু’ দু’ রাক্’আত করে (নফল) আদায় করতেন। তারপর যখন আবার সকাল হয়ে যাওয়ার আশংকা করলেন তিনি বিতরের এক রাক্’আত আদায় করতেন। (মালিক)[1]

وَعَنْ نَافِعٍ قَالَ: كُنْتُ مَعَ ابْنِ عُمَرَ بِمَكَّةَ وَالسَّمَاءُ مُغَيِّمَةٌ فَخَشِيَ الصُّبْحَ فَأَوْتَرَ بِوَاحِدَةٍ ثُمَّ انْكَشَفَ فَرَأَى أَنَّ عَلَيْهِ لَيْلًا فَشَفَعَ بِوَاحِدَةٍ ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ فَلَمَّا خَشِيَ الصُّبْح أوتر بِوَاحِدَة. رَوَاهُ مَالك

وعن نافع قال: كنت مع ابن عمر بمكة والسماء مغيمة فخشي الصبح فاوتر بواحدة ثم انكشف فراى ان عليه ليلا فشفع بواحدة ثم صلى ركعتين ركعتين فلما خشي الصبح اوتر بواحدة. رواه مالك

ব্যাখ্যা: যখন ইবনু ‘উমার (রাঃ) ফাজ্‌র (ফজর) উদয় হওয়ার আশংকা করতেন তখন তিনি শুধুমাত্র এক রাক্‘আত বিতর আদায় করতেন তার পূর্বে কোন জোর সংখ্যক সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) যোগ করতেন না। মুয়াত্ত্বার বর্ণনায় যখন মেঘ দূরীভূত হত, তখন তিনি তার বিতর সালাত এক রাক্‘আতের মাধ্যমে জোড়া করতেন (বিতর সালাত ভাঙ্গতেন)। কারণ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বিতর সালাত ভিন্ন এক রাক্‘আত সালাত আদায়ের মাধ্যমে ভাঙ্গার প্রবক্তা। এ প্রসঙ্গে মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে যে, ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে বিতর সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, যখন আমি ঘুমানোর পূর্বে বিতর পড়ে নেই, অতঃপর রাতে সালাত আদায়ের ইচ্ছা করি তখন এক রাক্‘আত সালাতের মাধ্যমে উক্ত বিতরকে জোড়ায় পরিণত করি, এরপর দু’ দু’ রাক্‘আত করে সালাত আদায় করি। সালাত শেষে আমি আবার এক রাক্‘আত বিতর আদায় করি। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের সালাতের শেষ সালাত হিসেবে বিতর আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।

মির‘আত প্রণেতা বলেনঃ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বিতর সালাত ভাঙ্গার যে ‘আমল করেছেন তা তার ব্যক্তিগত মত ও ইজতিহাদ। এ ব্যাপারে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোন বর্ণনা তার নিকট নেই।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৩৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত

১২৮৩-[৩০] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (শেষ বয়সে) বসে বসে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়তেন। ত্রিশ কি চল্লিশ আয়াত অবশিষ্ট থাকতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দাঁড়িয়ে যেতেন। বাকী (আয়াত) দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়তেন। তারপর রুকূ’ করতেন ও সাজদায় যেতেন। এভাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দ্বিতীয় রাক্’আতও আদায় করতেন। (মুসলিম)[1]

وَعَنْ عَائِشَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُصَلِّي جَالِسًا فَيَقْرَأُ وَهُوَ جَالِسٌ فَإِذَا بَقِيَ مِنْ قِرَاءَتِهِ قَدْرُ مَا يَكُونُ ثَلَاثِينَ أَوْ أَرْبَعِينَ آيَةً قَامَ وَقَرَأَ وَهُوَ قَائِمٌ ثُمَّ رَكَعَ ثُمَّ سَجَدَ ثُمَّ يَفْعَلُ فِي الرَّكْعَةِ الثَّانِيَةِ مِثْلَ ذَلِكَ. رَوَاهُ مُسلم

وعن عاىشة: ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يصلي جالسا فيقرا وهو جالس فاذا بقي من قراءته قدر ما يكون ثلاثين او اربعين اية قام وقرا وهو قاىم ثم ركع ثم سجد ثم يفعل في الركعة الثانية مثل ذلك. رواه مسلم

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে দলীল রয়েছে যে, যে দাঁড়িয়ে পূর্ণ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে সক্ষম নয় তার জন্য সালাতের যতটুকু সে দাঁড়িয়ে পড়তে সক্ষম তার জন্য ততটুকুই দাঁড়িয়ে আদায় করা জরুরী। আল্লামা বাজী (রহঃ) বলেন, নফলের ক্ষেত্রে এটা জায়িয এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই এবং এটাও প্রমাণিত হয় যে, বসাবস্থা থেকে দাঁড়িয়ে কিছু ক্বিরাআত (কিরআত) পড়ার পর রুকূ' করা উত্তম, যাতে করে সালাত সুন্নাহ অনুযায়ী হয়। তবে যদি ক্বিরাআত (কিরআত) নাও পড়া হয় কিন্তু সোজা দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর রুকূ' করলেও তা বৈধ হবে এবং এ দলীলও রয়েছে যে ব্যক্তি বসা অবস্থায় ক্বিরা‘আত পড়বে তার জন্য দাঁড়িয়ে রুকূ' করা জরুরী।

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) এর অপর বর্ণনায় রয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন এবং দীর্ঘ সময় বসে সালাত আদায় করতেন। এখানে এ হাদীস এবং উপরে উল্লেখিত হাদীসের মাঝে একটি বৈপরীত্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কারণ এ হাদীস প্রমাণ করছে যে, যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়বে তার দাঁড়িয়ে রুকূ' ও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করাই শারী‘আত সম্মত এবং যে বসা অবস্থায় ক্বিরাআত পড়বে তার বসা অবস্থায় রুকূ'-সিজদা্ করা শারী‘আত সম্মত, উভয় রিওয়ায়াতের সমাধানে বলা যায় যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয় পন্থা অবলম্বন করছেন শারীরিক সক্ষমতার ভিত্তিতে। অর্থাৎ শারীরিক সক্ষমতা থাকলে পূর্ণ ক্বিরাআত (কিরআত) রুকূ' ও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) দাঁড়িয়ে করতেন, সক্ষমতা না থাকলে কিছু ক্বিরাআত (কিরআত) দাঁড়িয়ে আর কিছু বসে কিংবা ক্বিরাআত (কিরআত) দাঁড়িয়ে, রুকূ'-সিজদা্ বসে করতেন, কাজেই এতে কোন বৈপরীত্য নেই।

আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, সালাতে কিছু অংশ দাঁড়িয়ে ও কিছু অংশ বসে আদায় করা বৈধ; ফায়েজ, ‘ইরাক্বীও অনুরূপ মত দিয়েছেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৩৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত

১২৮৪-[৩১] উম্মুল মু’মিনীন উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের পরে দু’ রাক্’আত (সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)) আদায় করতেন। (তিরমিযী; কিন্তু ইবনু মাজাহ আরো বলেছেন, সংক্ষেপে ও বসে বসে।)[1]

وَعَنْ أُمُّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَانَ يُصَلِّي بَعْدَ الْوِتْرِ رَكْعَتَيْنِ» رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَزَادَ ابْنُ مَاجَه: خفيفتين وَهُوَ جَالس

وعن ام سلمة رضي الله عنها ان النبي صلى الله عليه وسلم: «كان يصلي بعد الوتر ركعتين» رواه الترمذي وزاد ابن ماجه: خفيفتين وهو جالس

ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসা অবস্থায় বিতরের পর দু’ রাক্‘আত আদায় করতেন। এ বিষয়ে বর্ণনা সামনে আসবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৩৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত

১২৮৫-[৩২] উম্মুল মু’মিনীন ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের এক রাক্’আত আদায় করতেন। তারপর দু’ রাক্’আত (নফল) আদায় করতেন। এতে তিনি বসে বসে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়তেন। রুকূ’ করার সময় হলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দাঁড়িয়ে যেতেন ও রুকূ’ করতেন। (ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُوتِرُ بِوَاحِدَةٍ ثُمَّ يَرْكَعُ رَكْعَتَيْنِ يَقْرَأُ فِيهِمَا وَهُوَ جَالِسٌ فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَرْكَعَ قَامَ فَرَكَعَ. رَوَاهُ ابْن مَاجَه

وعن عاىشة رضي الله عنها قالت: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر بواحدة ثم يركع ركعتين يقرا فيهما وهو جالس فاذا اراد ان يركع قام فركع. رواه ابن ماجه

ব্যাখ্যা: বসে সালাতরত অবস্থায় রুকূ' করার সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে যেতেন। এ প্রসঙ্গে ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, এ হাদীস পূর্বে (১২৮৩ নং হাদীসে) বর্ণিত হাদীসের বিরোধী নয়। কারণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো দাঁড়ানো ব্যতীতই পূর্ণ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বসে আদায় করতেন আবার কখনো রুকূ' করার সময় দাঁড়িয়ে যেতেন।

মির্‘আত প্রণেতা বলেন যে, মূল হাদীসটি মুসলিমে রয়েছে। উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বললেন যে, তিনি ১৩ রাক্‘আত আদায় করতেন, অতঃপর তিনি বিতর পড়তেন, এরপর তিনি দু’ রাক্‘আত সালাত বসে আদায় করতেন, যখন রুকূ' করার ইচ্ছা করতেন তখন দাঁড়িয়ে যেতেন এবং রুকূ‘ করতেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৩৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত

১২৮৬-[৩৩] সাওবান (রাঃ)হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তাহাজ্জুদের সালাতের জন্যে রাত্রে জেগে উঠা কষ্টকর ও কঠিন কাজ। তাই তোমাদের যে লোক রাতের শেষাংশে জাগরিত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়, সে ঘুমাবার পূর্বে ’ইশার সালাতের পর বিতর আদায় করতে চাইলে যেন দু’ রাক্’আত আদায় করে নেয়। যদি তাহাজ্জুদের সালাতের জন্যে রাত্রে উঠে যায় তবে তো ভাল, উঠতে না পারলে ঐ দু’ রাক্’আত যথেষ্ট। (দারিমী)[1]

وَعَنْ ثَوْبَانَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ هَذَا السَّهَرَ جُهْدٌ وَثِقَلٌ فَإِذَا أَوْتَرَ أَحَدُكُمْ فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ فَإِنْ قَامَ مِنَ اللَّيْلِ وَإِلَّا كَانَتَا لَهُ» . رَوَاهُ الدَّارِمِيُّ

وعن ثوبان عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «ان هذا السهر جهد وثقل فاذا اوتر احدكم فليركع ركعتين فان قام من الليل والا كانتا له» . رواه الدارمي

ব্যাখ্যা: (إِنَّ هذَا السَّهَرَ.....) এখানে السَّهَرَ শব্দটি سه বর্ণে যবর যোগে, অর্থাৎ السَّهَرُ অর্থ হলো নির্ঘুম বা জাগ্রত থাকা। দারাকুত্বনী ও বায়হাক্বীর (৩য় খন্ড, পৃঃ ৩৩) বর্ণনায় রয়েছে যে, أن هذا السفر অর্থাৎ ه -এর পরিবর্তে ف (سهر-এর পরিবর্তে سفر) রয়েছে, অনুরূপ বর্ণনা করেছেন হায়সামী তার মাজমাউয্ যাওয়ায়িদ-এর ২য় খন্ডের ২৪৬ পৃষ্ঠায় মু‘আয আত্ ত্ববারানীর বর্ণনায়। কাজেই নিশ্চয় السهر শব্দটি দারিমীর নিজস্ব কথা এবং سفر শব্দটি সঠিক কারণ সংঘটিত ঘটনাটি ঘটেছে সফর অবস্থায়। সুতরাং দারাকুত্বনী, বায়হাক্বী ও ত্ববারানী রিওয়ায়াতে সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সফরে ছিলাম।

হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেনঃ আলোচ্য হাদীসটি এই হাদীস (তোমরা বিতরকে করো রাতের শেষ সালাত)-এর বিরোধিতা করছে না।’

কারণ আলোচ্য হাদীসে أَوْتَرَ -এর অর্থ হচ্ছে أَرَادَ অর্থাৎ যখন তোমরা বিতর আদায়ের ইচ্ছা করবে তখন সে যেন দু’ রাক্‘আত সালাত  আদায় করে, (বিতর আদায়ের পূর্বে) অতঃপর সে যেন এক কিংবা তিন রাক্‘আত বিতর আদায় করে নেয়, আর বিতরের পূর্বের দু’ রাক্‘আত নফল হিসেবে গণ্য হবে, যা তাহাজ্জুদের স্থলাভিষিক্ত হবে। অথবা এখানে দু’ রাক্‘আতের নির্দেশটি বৈধতার জন্য। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘আমলের মাধ্যমে যার ব্যাখ্যা অতিবাহিত হয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের পরে দু’ রাক্‘আত সালাত (বসে থেকে) আদায় করতেন।

উল্লেখ্য যে, দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটি গ্রহণ করেছেন দারিমী ও বায়হাক্বী (রহঃ), তারা উভয়ই তা বর্ণনা করেছেন তাদের নিজ নিজ গ্রন্থে ‘‘বিতরের পরে দু’ রাক্‘আত সালাত’ অধ্যায়ে।

কিন্তু আল্লামা ক্বারী (রহঃ) বলেন যে, দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটি সঠিক নয়। ১ম ব্যাখ্যাটিই সঠিক।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ৩৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত

১২৮৭-[৩৪] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের পরে দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বসে বসে আদায় করতেন। আর এ দু’ রাক্’আতে ’ইযা- যুলযিলাতি’ এবং ’কুল ইয়া- আইয়্যুহাল কা-ফিরূন’ পড়তেন। (আহমাদ)[1]

وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُصَلِّيهِمَا بَعْدَ الْوِتْرِ وَهُوَ جَالس يقْرَأ فيهمَا (إِذا زلزلت)
و (قل يَا أَيهَا الْكَافِرُونَ)
رَوَاهُ أَحْمد

وعن ابي امامة: ان النبي صلى الله عليه وسلم كان يصليهما بعد الوتر وهو جالس يقرا فيهما (اذا زلزلت) و (قل يا ايها الكافرون) رواه احمد

ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের পর যে দু’ রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন, তার প্রথম রাক্‘আতে সূরাহ্ আল যিলযাল এবং দ্বিতীয় রাক্‘আতে সূরাহ্ আল কা-ফিরূন পড়তেন। হাদীসটি ইমাম ত্বহাবী ও বায়হাক্বী বর্ণনা করেছেন (৩য় খন্ড, পৃঃ ৩৩)।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে