পরিচ্ছেদঃ ৩৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত
১২৬৩-[১০] গুযায়ফ ইবনু হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরয গোসল রাতে প্রথম অংশে না শেষ অংশে করতেন? ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, কোন কোন সময় তিনি রাতের প্রথম প্রহরে এবং কোন কোন সময় রাতের শেষ প্রহরে গোসল করতেন। আমি বললাম, আল্লাহ তা’আলা অনেক বড়। সব প্রশংসাই আল্লাহ তা’আলার জন্যে। যিনি দীনের ’আমলের ব্যাপারে সহজ (ব্যবস্থা) করে দিয়েছেন। আবার তিনি জিজ্ঞেস করলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বিতরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) রাতের প্রথম ভাগে আদায় করে নিতেন না শেষ ভাগে আদায় করতেন? ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কখনো রাতের প্রথম ভাগেই আদায় করতেন, আবার কখনো শেষ রাতে আদায় করতেন। আমি বললাম, আল্লাহ তা’আলা অনেক বড়। সব প্রশংসা তাঁর যিনি দীনের কাজ সহজ (ব্যবস্থা) করে দিয়েছেন। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কি তাহাজ্জুদের সালাতে অথবা অন্য কোন সালাতে শব্দ করে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়তেন, না আস্তে আস্তে? তিনি বললেন, কখনো তো শব্দ করে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়তেন, আবার কখনো নিচু স্বরে। আমি বললাম, আল্লাহ অনেক বড় ও সব প্রশংসা তাঁরই প্রাপ্য, যিনি দীনের কাজ সহজ ও প্রশস্ত করে দিয়েছেন। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ। ইবনু মাজাহ এ সূত্রে শুধু শেষ অংশ [যাতে ক্বিরাআতের উল্লেখ হয়েছে] নকল করেছেন)[1]
عَن غُضَيْف بن الْحَارِث قَالَ: قُلْتُ لِعَائِشَةَ: أَرَأَيْتِ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَغْتَسِلُ مِنَ الْجَنَابَةِ فِي أَوَّلِ اللَّيْلِ أَمْ فِي آخِرِهِ؟ قَالَتْ: رُبَّمَا اغْتَسَلَ فِي أَوَّلِ اللَّيْلِ وَرُبَّمَا اغْتَسَلَ فِي آخِرِهِ قُلْتُ: اللَّهُ أَكْبَرُ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي جَعَلَ فِي الْأَمْرِ سَعَةً قُلْتُ: كَانَ يُوتِرُ أَوَّلَ اللَّيْلِ أَمْ فِي آخِرِهِ؟ قَالَتْ: رُبَّمَا أَوْتَرَ فِي أَوَّلِ اللَّيْلِ وَرُبَّمَا أَوْتَرَ فِي آخِرِهِ قُلْتُ: اللَّهُ أَكْبَرُ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي جَعَلَ فِي الْأَمْرِ سَعَةً قُلْتُ: كَانَ يَجْهَرُ بِالْقِرَاءَةِ أَمْ يَخْفُتُ؟ قَالَتْ: رُبَّمَا جَهَرَ بِهِ وَرُبَّمَا خَفَتَ قُلْتُ: اللَّهُ أَكْبَرُ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي جَعَلَ فِي الْأَمْرِ سَعَةً. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَرَوَى ابْنُ مَاجَهْ الْفَصْلَ الْأَخِيرَ
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গম করতেন রাতের প্রথমাংশে এবং গোসল করতেন রাতের শেষাংশে এটি তিনি করতেন উম্মাতের উপর সহজের জন্য এবং তা বৈধতার বর্ণনার জন্য।
গোসলের ক্ষেত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহজ বিধান দিয়েছেন যে, রাতের যে কোন সময় গোসল করা যাবে। সহবাসের সাথে সাথেই গোসল করতে হবে এমন কোন সংকীর্ণতা বা জটিলতা আরোপ করেননি বরং উভয় বিধানই আমাদের জন্য বৈধ করে দিয়েছেন, যার প্রমাণ পাওয়া যায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগে এবং পরে (রাতের প্রথমাংশে এবং শেষাংশে) গোসল করার মাধ্যমে।
আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন যে, গোসলের ক্ষেত্রে আল্লাহর পক্ষ হতে এ সহজতা দান করাটা একটি নি‘আমাত। আর নি‘আমাতকে কৃতজ্ঞতার সাথে গ্রহণ করা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ভালবাসেন।
কখনো তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিতর রাতের প্রথমাংশে আদায় করেছেন এটা অধিক সহজের জন্য এবং কখনো রাতের শেষাংশে আদায় করেছেন, আর রাতের শেষাংশেই তিনি বেশি আদায় করেছেন এবং এটাই উত্তম। তবে বিতর ব্যাপারে ১২৭৬, ১২৭৭, ১২৭৮ নং হাদীসে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
দু’ কিংবা একই রাত্রিতে তিনি অবস্থাভেদে স্বরবে কিংবা নীরবে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়তেন। কাজেই প্রমাণিত হয় যে, রাতের সালাতে (তাহাজ্জুদ বা কিরামে রমাযান) স্বরবে কিংবা নীরবে ক্বিরাআত (কিরআত) মুসল্লীর জন্য ঐচ্ছিক।
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত
১২৬৪-[১১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ক্বায়স (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত রাক্’আত বিতরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো চার ও তিন (অর্থাৎ সাত), আবার কখনো ছয় ও তিন (অর্থাৎ নয়), কখনো আট ও তিন (অর্থাৎ এগার) আবার কখনো দশ ও তিন (অর্থাৎ তের) রাক্’আত বিতরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। তিনি সাত-এর কম ও তের-এর বেশী বিতরের সালাত আদায় করতেন না। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن عبد الله بن أبي قيس قَالَ: سَأَلْتُ عَائِشَةَ: بِكَمْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُوتِرُ؟ قَالَتْ: كَانَ يُوتِرُ بِأَرْبَعٍ وَثَلَاثٍ وَسِتٍّ وَثَلَاثٍ وَثَمَانٍ وَثَلَاثٍ وَعَشْرٍ وَثَلَاثٍ وَلَمْ يَكُنْ يُوتِرُ بِأَنْقَصَ مِنْ سَبْعٍ وَلَا بِأَكْثَرَ مِنْ ثَلَاث عشرَة. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: জেনে রাখতে হবে যে, নিশ্চয় মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) এ বর্ণনায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাতের পূর্ণ সালাত যার মধ্য বিতর সালাতও রয়েছে। এসবগুলোকে তিনি মুত্বলাক্বভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি ছাড়াও আরো অনেকেই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাতের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) মুত্বলাক্বভাবে বর্ণনা করেছেন।
আত্ তিরমিযী অভিন্ন শব্দে উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১৩ রাক্‘আত বিতর আদায় করতেন। যখন তিনি বার্ধক্যে উপনীত হলেন এবং দুর্বল হয়ে পড়লেন তখন তিনি ৭ রাক্‘আত বিতর আদায় করতেন, ভিন্ন শব্দে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, বিতরের সালাত তের, এগার, নয়, সাত, পাঁচ, তিন ও এক রাক্‘আত। এরপর ইমাম আত্ তিরমিযী (রহঃ) বলেন যে, ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তের রাক্‘আত বিতর আদায় করতেন, এর অর্থ হলো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরসহ রাতের সালাত তের রাক্‘আত আদায় করতেন। সুতরাং রাতের সালাতকে বিতরের দিকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
রাতের সালাতের উপর বিতর সহ মুত্বলাক্বভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। অতএব বিতর সহ তিনি তের রাক্‘আত আদায় করেছেন। মির‘আত প্রণেতা বলেনঃ ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণনায় প্রতিটি সংখ্যায় তিনের উল্লেখ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, এ রিওয়ায়াত প্রকৃতপক্ষে বিতর তিন রাক্‘আত, আর তার পূর্বে যা উল্লেখ রয়েছে তা রাতের সালাত বা তাহাজ্জুদ। অতএব এখানে বিতর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো পূর্ণ রাতের সালাত। তার কথারই সমর্থক ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর হাদীস, বিতরকে তোমরা রাতের সালাতের শেষ সালাত করো। সেখানে তিনি বিতর বলেননি অর্থাৎ বিতরসহ রাতের সালাত আদায় করবে।
আর সাত-এর কম ও তের রাক্‘আতের বেশি তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিতর আদায় করতেন না, এটি অধিকাংশ সময়। কারণ অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পনের রাক্‘আত বিতর আদায় করতেন। এ ইখতিলাফ বা বৈপরীত্য যা পাওয়া যায় তা সময়ের আধিক্য কিংবা স্বল্পতার কারণে। যেমন- ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন যে, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বয়স বেশি হয়েছিল (বার্ধক্যে উপনীত হয়েছিলেন) তখন তিনি চার রাক্‘আত সালাত আদায় করতেন, কাজেই প্রমাণিত হয় যে, অবস্থা বা সময় ভেদে তিনি ক্বিয়ামুল লায়ল কম বেশি করতেন (বৈধতার বর্ণনার জন্য)।
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত
১২৬৫-[১২] আবূ আইয়ূব (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ বিতরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) প্রত্যেক মুসলিমের আদায় করা অবশ্য কর্তব্য। তাই যে লোক বিতরের সালাত পাঁচ রাক্’আত আদায় করতে চায় সে যেন পাঁচ রাক্’আত আদায় করে। যে লোক তিন রাক্’আত আদায় করতে চায় সে যেন তিন রাক্’আত আদায় করে। আর যে লোক এক রাক্’আত আদায় করতে চায় সে যেন এক রাক্’আত আদায় করে। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ أَبِي أَيُّوبَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْوَتْرُ حَقٌّ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ فَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوتِرَ بِخَمْسٍ فَلْيَفْعَلْ وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوتِرَ بِثَلَاثٍ فَلْيَفْعَلْ وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوتِرَ بِوَاحِدَةٍ فَلْيَفْعَلْ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন যে, الحَقٌّ শব্দের অর্থ সাব্যস্ত ও ওয়াজিব হওয়া। ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) ২য় অর্থ গ্রহণ করেছেন এবং ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) ১ম অর্থ গ্রহণ করেছেন অর্থাৎ তা শার‘ঈভাবে সাব্যস্ত এবং সুন্নাত। ইবনু তায়মিয়্যাহ্ (রহঃ) মুনতাকি নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, ইবনু মুনযির বর্ণনা করেছেন যে, উল্লেখিত হাদীসে حَقٌّ শব্দটি ওয়াজিবের জন্য নয়। এটা স্পষ্ট যে,حَقٌّ শব্দটি শার‘ঈভাবে সাব্যস্ত হওয়ার অর্থে ব্যবহার হয়েছে ওয়াজিবের জন্য নয়। জমহূর ‘উলামাবৃন্দ এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, বিতর সালাত ওয়াজিব নয়। তবে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) তার বিরোধিতা করেছেন। অর্থাৎ তার নিকট বিতর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ওয়াজিব। অবশ্য তার দুই শাগরেদ ইমাম আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রহঃ) জমহূরের মতানুপাতেই মতামত দিয়েছেন এবং তারা বলেছেন যে, বিতর ওয়াজিব নয়।
মির‘আত প্রণেতা বলেন যে, সর্বজনবিদিত ও প্রসিদ্ধ সিদ্ধান্ত হলো জমহূর ‘উলামাবৃন্দ যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তাই। শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী (রহঃ) হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ্ ২য় খন্ড ১৩ পৃষ্ঠায় বলেছেন যে, বিতরের সালাত সুন্নাত এটাই সঠিক।
‘‘যে পাঁচ রাক্‘আত বিতরের ইচ্ছা করে সে যেন তাই আদায় করে।’’ এ পাঁচ রাক্‘আতের শেষে ছাড়া কোন বৈঠক দেয়া যাবে না যেমন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস আমরা পূর্বেই অধ্যয়ন করেছি।
যে ব্যক্তি তিন রাক্‘আত বিতর আদায়ের ইচ্ছা করবে সে তা এক সালামে ও এক তাশাহুদে তা আদায় করবে। কাজেই শেষ রাক্‘আত ব্যতীত বৈঠক দিবে না এটাই স্পষ্ট দলীল হিসেবে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসঃ
لَا تُوْتِرُوْا بِثَلَاثٍ تَشْبَهُوْا بِالْمَغْرِبِ، وَلكِنْ أَوْتِرُوْا بِخَمْسٍ أَوْ بِسَبْعٍ أَوْ بِتِسْعٍ أَوْ بِإِحْدى عَشْرَةَ أَوْ أَكْثَرَ مِنْ ذلِكَ.
অর্থাৎ- মাগরিবের সাথে সাদৃশ্যশীল তিন রাক্‘আত বিতর আদায় করো না বরং পাঁচ, সাত, নয় অথবা এগার কিংবা তার চেয়ে বেশী বিতর আদায় কর; কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাক্‘আত বিতর আদায় করেছেন, তবে শেষ রাক্‘আত ব্যতীত বৈঠকে বসতেন না। (বায়হাক্বী)
এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিতর তিন রাক্‘আত লাগাতার আদায় করতে হবে কোন বৈঠক ছাড়া। এ হাদীস আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণিত, ‘‘তোমরা তিন রাক্‘আত বিতর আদায় করো না যা মাগরিবের সাথে সাদৃশ্য রাখে.....’’ উভয় হাদীস এর মাঝে কোন বৈপরীত্য নেই। কেননা উভয়ের মাঝে সমাধান করা যায় এভাবে যে, তিন রাক্‘আত বিতরের নিষেধাজ্ঞাটা তখন প্রযোজ্য হবে যখন তিন রাক্‘আতের মাঝে তাশাহুদের জন্য বৈঠক দেয়া হবে। কারণ তা মাগরিবের সালাতের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে। আর যদি তিন রাক্‘আত বিতরের মাঝে কোন বৈঠক দেয়া না হয় তবে মাগরিবের সালাতের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে না।
আল ‘আমির আল ইয়ামানী (রহঃ) বলেন যে, এ সমাধানই উত্তম সমাধান। (সুবুলুস সালাম ২য় খন্ড, পৃঃ ৯)
হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, তিন রাক্‘আতের নিষেধাজ্ঞা বলতে দু’ বৈঠকে তিন রাক্‘আত বিতর আদায় করা নিষিদ্ধ, সালফে সালিহীনগণ অনুরূপ ব্যাখ্যা করেছেন, অর্থাৎ তিন রাক্‘আত বিতর আদায় করতে হবে এক বৈঠকে। মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ্ বর্ণনা করেন যে, ‘উমার (রাঃ) তিন রাক্‘আত বিতর আদায় করেছেন শেষ রাক্‘আত ব্যতীত কোন বৈঠক দিতেন না। প্রখ্যাত তাবি‘ঈ তাঊস বর্ণনা করেছেন তার বাবা থেকে, তিনি তিন রাক্‘আত বিতর আদায় করেছেন মাঝে কোন বৈঠক দেননি।
وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوتِرَ بِوَاحِدَةٍ অর্থাৎ যে এক রাক্‘আত বিতর আদায় করতে চায় সে তাই আদায় করবে। ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন যে, এখানে দলীল রয়েছে যে, বিতরের সর্বনিম্ন রাক্‘আত সংখ্যা এক এবং এক রাক্‘আত বিতর আদায় করা সঠিক বা শারী‘আত সম্মত; এটাই আমাদের মাযহাব ও জমহূর ‘উলামাগণের মাযহাব। কিন্তু ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেন যে, এক রাক্‘আত বিতর সঠিক নয় এবং এক রাক্‘আত কোন সালাত নয়। ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর এ মত একাধিক সহীহ হাদীস বিরোধী মত।
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত
১২৬৬-[১৩] ’আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বিতর (বিজোড়)। তিনি বিজোড়কে ভালোবাসেন। অতএব, হে কুরআনের বাহকগণ! তোমরা বিতর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় কর। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]
وَعَنْ عَلِيٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ وَتْرٌ يُحِبُّ الْوَتْرَ فَأَوْتِرُوا يَا أَهْلَ الْقُرْآنِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: فَأَوْتِرُوْا এখানে বিতর সালাতের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো দু’ দু’ রাক্‘আত আলাদাভাবে আদায় করা, অতঃপর তার শেষে এক রাক্‘আত আলাদাভাবে বিতর আদায় করা অথবা তার পূর্ববর্তী রাক্‘আতগুলোর সাথে সম্পৃক্ত করা।
আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, এখানে বিতর দ্বারা রাতের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) উদ্দেশ্য আর বিতরটা তাতে (ক্বিয়ামুল লায়ল) মুত্বলাক্ব করে দেয়া হয়েছে। একাধিক হাদীস থেকে যা উপলব্ধি করা যায়।
আল্লামা খাত্ত্বাবী (রহঃ) معالم ‘‘মা‘আ-লিম’’ গ্রন্থের ১ম খন্ডের ২৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন যে, উল্লেখিত হাদীসে বিতরের নির্দেশটা ‘আহলুল কুরআন’-দের খাস করার দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, বিতরের সালাত ওয়াজিব নয়, যদি ওয়াজিব হত তবে তা ‘আমভাবে সকলকেই নির্দেশ করা হত। আর ‘আহলুল কুরআন’ হচ্ছে মানুষদের মাঝে সুপরিচিতজনেরা তারা ক্বারী এবং হাফিযবৃন্দ, সর্বসাধারণ নয়। এ ব্যাপারে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীসও স্পষ্ট দলীল তা হলো- ফারযের (ফরযের/ফরজের) উপর তিনটি ‘আমল রয়েছে, যা তোমাদের জন্য নফল, (১) কুরবানী করা, (২) বিতর সালাত আদায় করা, (৩) ফজরের ফারযের (ফরযের/ফরজের) পূর্বে দু’ রাক্‘আত সালাত। (আহমাদ, দারাকুত্বনী, বায়হাক্বী, ত্ববারানী)
এছাড়াও ‘উবাদাহ্ ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, বিতর সালাত উত্তম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটার (বিতর) প্রতি ‘আমল করেছেন এবং তার পরবর্তীগণও ‘আমল করেছেন। তবে তা ওয়াজিব নয়। (বায়হাক্বী সানাদ শক্তিশালী)
ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের উপর সওয়ার অবস্থায় বিতর সালাত আদায় করতেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, বিতর সালাত ওয়াজিব নয়। যদি হত তবে তিনি সওয়ারীর উপর তা আদায় করতেন না। হানাফীদের পক্ষ থেকে তার জবাব দেয়া হয় যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওয়ারীর উপর বিতর সালাত আদায় করেছেন এটি বিতর ওয়াজিব হওয়ার পূর্বের ঘটনা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘আমলটি বিতর ওয়াজিব হওয়ার পূর্বের ঘটনা এ মর্মে দাবীটি প্রামাণ্য ও ভিত্তিহীন।
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত
১২৬৭-[১৪] খারিজাহ্ ইবনু হুযাফাহ্ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা এমন এক সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) দিয়ে তোমাদের সহযোগিতা করেছেন (পাঞ্জেগানা সালাত ছাড়া) যা তোমাদের জন্যে লাল উটের চেয়েও অনেক উত্তম। তা হলো বিতরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)। আল্লাহ তা’আলা এ সালাত তোমাদের জন্য ’ইশার সালাতের পর থেকে ফজরের (ফজরের) সালাতের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মাঝে আদায়ের জন্যে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن خَارِجَة بن حذافة قَالَ: خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ: إِنَّ اللَّهَ أَمَدَّكُمْ بِصَلَاةٍ هِيَ خَيْرٌ لَكُمْ مِنْ حُمْرِ النِّعَمِ: الْوَتْرُ جَعَلَهُ اللَّهُ لَكُمْ فِيمَا بَيْنَ صَلَاةِ الْعِشَاءِ إِلَى أَنْ يَطْلُعَ الْفَجْرُ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: খাত্ত্বাবী (রহঃ) বলেন, أمدكم بصلاة বাক্যটি প্রমাণ করে যে, বিতর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ওয়াজিব নয়। যদি ওয়াজিব হত তবে أمدكم ব্যবহার না হয়ে الإلزام ব্যবহার হত। অর্থাৎ তিনি ألزمكم অর্থাৎ فرض عليكم বলতেন অথবা অনুরূপ কোন বাক্য বলতেন।
هِيَ خَيْرٌ لَّكُمْ..... অর্থাৎ সেটা (বিতর) তোমাদের জন্য লাল উটের চেয়েও উত্তম, এখানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাল উটের দ্বারা বিতর সালাতের উপমা দিয়েছেন আরবদের উৎসাহ দেয়ার জন্য। কারণ লাল উট আরবদের নিকট অধিক মূল্যবান ও মর্যাদাশীল, এ উপমার মধ্যে একটি ইঙ্গিত রয়েছে যে, দুনিয়ার সবকিছুর তুলনায় সেটা (বিতর সালাত) উত্তম।
فِيْمَا بَيْنَ..... অর্থাৎ বিতর সালাতের ওয়াক্ত ‘ইশা এবং ফাজর (ফজর) উদয় হওয়ার মাঝের পূর্ণ সময়। এর দ্বারা দলীল হলো বিতরের ওয়াক্ত শুরু হয় ‘ইশার সালাতের পর থেকে এবং তা বিস্তৃত থাকে ফাজর (ফজর) উদয় হওয়া পর্যন্ত। যেমন- ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীস وانتهى وتره إلى السحر অর্থাৎ বিতরের শেষ সময় সাহরী পর্যন্ত যা পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে। ইমাম ইবনু তায়মিয়্যাহ্ (রহঃ) বলেনঃ উক্ত হাদীসের দলীল হলো ‘ইশার সালাতের পুরো সময় কোন অবস্থাতে বিতরের ওয়াক্ত হিসেবে গণ্য হবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত
১২৬৮-[১৫] যায়দ ইবনু আসলাম (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে লোক বিতরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় না করে শুয়ে পড়েছে (আর উঠতে পারেনি), সে যেন (ফজরের সালাতের পূর্বে) ভোর হয়ে গেলেও তা পড়ে নেয়। (তিরমিযী মুরসাল হাদীস হিসেবে বর্ণনা করেছেন)[1]
وَعَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ نَامَ عَنْ وَتْرِهِ فَلْيُصَلِّ إِذَا أَصْبَحَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ مُرْسلا
ব্যাখ্যা: فَلْيُصَلِّ إِذَا أَصْبَحَ অর্থাৎ ফজরে সে যেন বিতর আদায় করে নেয় যখন সে তার বিতর আদায় না করার ব্যাপারে নিশ্চিত হবে। অনুরূপ যে ব্যক্তি বিতর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে ভুলে যাবে। যখনই তার স্মরণে আসবে তখনই তা আদায় করবে। এটা হলো যে ব্যক্তি ফরয সালাত থেকে ঘুমিয়ে পড়বে অথবা তা ভুলে যাবে, তার হুকুমের মতই যখন সে ঘুম থেকে জাগ্রত হবে কিংবা তার স্মরণ হবে তখনই আদায় করে নিবে। কাজেই এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বিতর সালাত ক্বাযা করা শারী‘আত সম্মত।
এ ব্যাপারে ‘উলামাদের মাঝে ইখতিলাফ রয়েছে,
(১) ইমাম মালিক (রহঃ)-এর মতে বিতরের ওয়াক্ত ফাজর (ফজর) পর্যন্ত ফাজ্রের (ফজরের) পর তা ক্বাযা করা যাবে না।
(২) ইমাম শাফি‘ঈ ও আহমাদ (রহঃ)-এর মতে রাত-দিনের যে কোন সময় বিতর ক্বাযা করা যাবে এবং তা সুন্নাত।
(৩) ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) ও তার সহচরবৃন্দর মতে বিতর ছুটে গেলে তা ক্বাযা করা ওয়াজিব।
তবে প্রসিদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য মত হলো ইমাম শাফি‘ঈ ও আহমাদ (রহঃ)-এর মত। অর্থাৎ রাত-দিনের যে কোন সময় বিতর ক্বাযা করা বৈধ। তা ওয়াজিব নয়।
ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি ব্যাপক যা ফরয, নফল সকল সালাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ফরয ছুটে গেলে তা ক্বাযা করা ফরয আর নফল ছুটে গেলে তা ক্বাযা করা বৈধ।
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত
১২৬৯-[১৬] ’আবদুল ’আযীয ইবনু জুরায়জ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে প্রশ্ন করেছিলাম, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের সালাতে কোন্ কোন্ সূরাহ্ পড়তেন? ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, তিনি প্রথম রাক্’আতে ’সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ’লা-’, দ্বিতীয় রাক্’আতে ’কুল ইয়া- আইয়্যুহাল কা-ফিরূন’ এবং তৃতীয় রাক্’আতে ’কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’, ’কুল আ’ঊযু বিরব্বিল ফালাক্ব’ ও ’কুল আ’ঊযু বিরব্বিন্ না-স’ পড়তেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَبْدِ الْعَزِيزِ بْنِ جُرَيْجٍ قَالَ: سَأَلْنَا عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا بِأَيِّ شَيْءٍ كَانَ يُوتِرُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَتْ: كَانَ يَقْرَأُ فِي الْأُولَى بِ (سَبِّحِ اسْم رَبك الْأَعْلَى)
وَفِي الثَّانِيَةِ بِ (قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ)
وَفَى الثَّالِثَةِ بِ (قُلْ هُوَ اللَّهُ أحد)
والمعوذتين وَرَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাক্‘আতের ১ম রাক্‘আতে সূরাহ্ আল ফাতিহার পর সূরাহ্ আল ‘আলা- পড়তেন। এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, তিন রাক্‘আত বিতর আদায় করতে হবে এক সালামে। আল্লামা যায়লা‘ঈ (রহঃ) বলেন যে, এ হাদীস প্রমাণ করে যে, নিশ্চয় তৃতীয় রাক্‘আত পূর্ব দু’ রাক্‘আতের সাথে সংযুক্ত, আলাদা কোন সালাত (বিতরের দু’ রাক্‘আতের পর বৈঠকের মাধ্যমে) নয়। যদি আলাদাই হতো তবে তিনি অবশ্যই বলতেন (وفي ركعة الوتر أو الركعة المفردة.....) বিতর সালাতের রাক্‘আতে কিংবা আলাদা রাক্‘আত কিংবা আরো অনুরূপ কথা বলতেন- (আন্ নাসবুর রায়াহ্- ২য় খন্ড, পৃঃ ৩০৫) এবং আলোচ্য হাদীসে এও দলীল রয়েছে যে, বিতরের তৃতীয় রাক্‘আতে তিনটি সূরাহ্ যথাক্রমে সূরাহ্ ইখলাস, আন্ নাস ও আল ফালাক্ব একসঙ্গে পড়াটা শারী‘আত সম্মত বা সুন্নাত। তবে অধিকাংশ বিদ্বানগণ শুধু সূরাহ্ আল ইখলাস পড়া পছন্দনীয় মনে করেন।
কেননা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসে এ ব্যাপারে আলোচনা রয়েছে এবং উবাই ইবনু কা‘ব এবং ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসে সূরাহ্ আন্ নাস ও ফালাক্ব-এর কথা উল্লেখ নেই, যা অধিক সহীহ। ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেন, আহমাদ এবং ইবনুল মু‘ঈন সূরাহ্ আল ফালাক্ব ও সূরাহ্ আন্ নাস বৃদ্ধি করা অপছন্দ করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত
১২৭০-[১৭] এ বর্ণনাটিকে ইমাম নাসায়ী ’আবদুর রহমান ইবনু আবযা হতে বর্ণনা করেছেন।[1]
وَرَوَاهُ النَّسَائِيُّ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبْزَى
ব্যাখ্যা: এখানে ‘আবদুর রহমান ইবনু আব্যা (রাঃ) সাহাবী ছিলেন নাকি তাবি‘ঈ ছিলেন এ ব্যাপারে মতপার্থক্য রয়েছে।
ইবনু হিব্বান (রহঃ) তাকে নির্ভরযোগ্য তাবি‘ঈনদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেনঃ তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহচার্য পেয়েছেন এবং একাধিক বিদ্বানগণ তাকে সাহাবী হিসেবে গণ্য করেছেন। আবূ হাতিম (রহঃ) বলেনঃ তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পেয়েছেন এবং তাঁর পিছে সালাতও আদায় করেছেন। আর ইবনু ‘আবদুল বার (রহঃ) বলেন, ‘আলী (রাঃ) তাকে খোরাসানের আমিল নিযুক্ত করেছিলেন, আর ইবনু সা‘দ বলেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেছেন, তখন তিনি নবযুবকদের একজন ছিলেন। মির‘আত প্রণেতা বলেন যে, সঠিক বিশ্লেষণে প্রমাণিত হয় যে, তিনি সাহাবী ছিলেন। তার ব্যাপারে ইবনু সা‘দ, তাহাবী, আবূ দাঊদ ও আহমাদ (রহঃ) বর্ণনা করেছেন যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। যা হোক সর্বজনবিদিত ও গ্রহণযোগ্য প্রসিদ্ধ কথা হলো তিনি (‘আবদুর রহমান ইবনু আবযা) সাহাবী ছিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত
১২৭১-[১৮] আর ইমাম আহমাদ উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।।
وَرَوَاهُ ألأحمد عَن أبي بن كَعْب
ব্যাখ্যা: উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)-এর বর্ণনায় আহমাদে রয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের সালাতের শেষ ছাড়া কোন বৈঠক দিতেন না।
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত
১২৭২-[১৯] আর দারিমী ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে নকল করেছেন। কিন্তু ইমাম আহমাদ ও দারিমী নিজেদের বর্ণনায় ’’মু’আব্বিযাতায়ন’’ উল্লেখ করেননি।[1]
والدارمي عَن ابْن عَبَّاس وَلم يذكرُوا والمعوذتين
ব্যাখ্যা: দারিমীতে যে হাদীসটি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত রয়েছে আহমাদে তা উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত রয়েছে, সেখানে বিতরের শেষ রাক্‘আতে শুধু ইখলাস তিলাওয়াতের কথা উল্লেখ রয়েছে, معوذتين বা সূরাহ্ আল ফালাক্ব ও আন্ নাস তিলাওয়াতের কথা উল্লেখ নেই। আর এ হাদীসটি সানাদগত দিক থেকে অধিক বিশুদ্ধ তাই মুহাদ্দিসীনগণ এ হাদীসকেই ‘আমলের জন্য নির্বাচিত করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত
১২৭৩-[২০] হাসান ইবনু ’আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের দু’আ কুনূত পাঠ করার জন্য আমাকে কিছু ক্বালিমাহ্ শিক্ষা দিয়েছেন। সে ক্বালিমাগুলো হলো,
’’আল্ল-হুম্মাহদিনী ফীমান হাদায়তা ওয়া ’আ-ফিনী ফীমান ’আ-ফায়তা, ওয়াতা ওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লায়তা, ওয়াবা-রিক লী ফীমা- আ’ত্বায়তা, ওয়াক্বিনী শাররা মা- ক্বযায়তা, ফাইন্নাকা তাক্বযী ওয়ালা- ইউক্বযা- ’আলায়কা, ওয়া ইন্নাহূ লা- ইয়াযিল্লু মাওঁ ওয়ালায়তা, তাবা-রাকতা রব্বানা- ওয়াতা’আ-লায়তা।’’
অর্থাৎ ’’হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হিদায়াত দান করো সে সব মানুষের সঙ্গে যাদের তুমি হিদায়াত দান করেছ (নবী রসূলগণ)। তুমি আমাকে দুনিয়ার বিপদাপদ থেকে হিফাযাত করো ওসব লোকের সঙ্গে যাদেরকে তুমি হিফাযাত করেছ। যাদের তুমি অভিভাবক হয়েছো, তাদের মাঝে আমারও অভিভাবক হও। তুমি আমাকে যা দান করেছ (জীবন, জ্ঞান সম্পদ, ধন, নেক ’আমল), এতে বারাকাত দান করো। আর আমাকে তুমি রক্ষা করো ওসব অনিষ্ট হতে যা আমার তাকদীরে লিখা হয়ে গেছে। নিশ্চয় তুমি যা চাও তাই আদেশ করো। তোমাকে কেউ আদেশ করতে পারে না। তুমি যাকে ভালোবাসো তাকে কেউ অপমানিত করতে পারে না। হে আমার রব! তুমি বারাকাতে পরিপূর্ণ। তুমি খুব উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন’’। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ, দারিমী)[1]
وَعَنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: عَلَّمَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَلِمَاتٍ أَقُولُهُنَّ فِي قُنُوتِ الْوَتْرِ: «اللَّهُمَّ اهدني فِيمَن هديت وَعَافنِي فِيمَن عافيت وتولني فِيمَن توليت وَبَارك لي فِيمَا أَعْطَيْت وقني شَرَّ مَا قَضَيْتَ فَإِنَّكَ تَقْضِي وَلَا يُقْضَى عَلَيْك أَنه لَا يذل من واليت تَبَارَكت رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ والدارمي
ব্যাখ্যা: أَقُولُهُنَّ অর্থাৎ আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শেখানো শব্দগুলো দ্বারা দু‘আ করতাম। فِي قُنُوتِ الْوَتْرِ বিতরের কুনূতে আর قُنُوْتِ শব্দটি কয়েকটি অর্থের উপর মুত্বলাক্ব অর্থাৎ কয়েকটি অর্থে ব্যবহার হয়। এখানে قُنُوتِ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বিতর সালাতে দাঁড়ানো অবস্থায় নির্ধারিত স্থানে দু‘আ করা বা প্রার্থনা করা। আর এর সমর্থনে আহমাদে এবং নাসায়ীর বর্ণনায় রয়েছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কালিমাগুলো বিতরের ক্ষেত্রে শিক্ষা দিয়েছেন। এ হাদীস পূর্ণ বছরের জন্য প্রযোজ্য। যেমন হানাফী ও হাম্বালী মাযহাবের মত এবং এটি শাফি‘ঈদেরও মত, তবে তাদের নিকট প্রসিদ্ধ অপর একটি মত হলো বিতর রমাযান মাসের শেষ দশকের জন্য খাস। তবে আমাদের নিকট প্রাধান্য মত হলো, সারা বছরই বিতরে কুনূত পড়া মুস্তাহাব। কেননা তা একটি যিকর, বিতরে তা শারী‘আত সম্মত হলে তা পূর্ণ বছরের জন্য শারী‘আত সম্মত হবে অন্য সকল যিকিরের (জিকিরের) মতোই।
উপরোক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, এ দু‘আর মাধ্যমে কুনূত পড়া শারী‘আত কর্তৃক নির্ধারিত এবং এটাই ইমাম শাফি‘ঈ ও হাম্বালী মাযহাব অবলম্বীদের নিকট উত্তম। তবে হানাফী মাযহাব অবলম্বীদের নিকট বিতরের কুনূত সূরাহ্ আল আনফাল ও সূরাহ্ আল হা-ক্বক্বাহ্ এর দ্বারা অর্থাৎ (اللهم إنا نستعينك..... بالكفار ملحق) পড়াই উত্তম। এটি আবূ দাঊদ বর্ণনা করেছেন মারাসিল নামক গ্রন্থে, বায়হাক্বী বর্ণনা করেছে সুনান গ্রন্থের ২য় খন্ডের ২১০ পৃষ্ঠায় মুরসাল সানাদে, আবী শায়বাহ্ বর্ণনা করেছেন মাওকূফভাবে।
ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেনঃ এটি ‘উবাইয়ের মাসহাফের কুরআনের ২টি সূরাহ্। অনুরূপ কথা বর্ণনা করেছেন আল্লামা সুয়ূতী দুররুল মানসূর নামক গ্রন্থে এবং ইবনু কুদামাহ্ বর্ণনা করেছেন মুগনী নামক গ্রন্থের ২য় খন্ডের ১৫৩ পৃষ্ঠায়। মির্‘আত প্রণেতা বলেনঃ আমার নিকট গ্রহণযোগ্য ও প্রসিদ্ধ মত হলো বিতরের কুনূতে হাসান ইবনু ‘আলী (রাঃ)-এর বর্ণিত দু‘আ (اَللّهُمَّ اهْدِنِيْ) পড়াই উত্তম, কারণ তা সহীহ কিংবা হাসান, মারফূ' ও মুত্তাসিল সানাদে বর্ণিত। এমনকি ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেনঃ বিতরের কুনূত সম্পর্কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত এ দু‘আর চেয়ে উত্তম দু‘আ আমার জানা নেই।
(আবূ দাঊদ, আহমাদ- ১ম খন্ড, ১৯৯, ২০০ পৃঃ)
তবে যদি হানাফীদের পছন্দনীয় দু‘আ কেউ পড়ে তবে তা সন্দেহাতীতভাবে বৈধ হবে মর্মে মির‘আত প্রণেতা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
বিতর সালাতের কুনূত রুকূ‘র পূর্বে হবে না পরে পড়তে হবে এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। হানাফীদের নিকট প্রথমটি উত্তম (অর্থাৎ রুকূ‘র আগে পড়া)।
ইমাম শাফি‘ঈ, আহমাদ ও ইসহাক ইবনু রাহিয়্যাহ্-এর নিকট দ্বিতীয়টি (রুকূ‘র পরে পড়া) উত্তম। তাদের পক্ষ হতে দলীল (যারা রুকূ‘র পরে কুনূত পড়ার পক্ষে) উপস্থাপন করা হয় আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ‘র পড়ে কুনূত পড়তেন এবং আবূ বাকর ও ‘উমার (রাঃ) এমনকি ‘উসমান (রাঃ) পর্যন্ত, আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ‘র পূর্বে কুনূত পড়েছেন মুসলিম মিল্লাতকে (রুকূ‘র পূর্বে পড়া) বৈধতা জানানোর জন্য। ইরাক্বী (রহঃ) বলেছেন, এ হাদীসের সানাদ জাইয়্যিদ (‘আমলযোগ্য), এছাড়াও মুস্তাদরাকে হাকিমে হাসান ইবনু ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত।
‘‘যখন রুকূ‘ হতে মাথা উঠাবে এবং সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) ব্যতীত কিছু অবশিষ্ট থাকবে না তখন কুনূত পড়বে।’’ এছাড়াও তাদের জন্য সাহাবায়ে কিরামদের একাধিক আসার রয়েছে এবং ফাজ্র (ফজর) সালাতের উপর কিয়াস রয়েছে, (অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাজ্রের (ফজরের) সালাতে রুকূ‘র পরে কুনূত পড়েছেন) যা রুকূ‘র পরে কুনূত পড়ারই প্রমাণ বহন করে। আর হানাফীগণ দলীল গ্রহণ করেছেন বুখারীর বর্ণনানুযায়ী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ‘র পূর্বে কুনূত পড়েছেন। (সহীহুল বুখারী- ১ম খন্ড, ১৩৬ পৃঃ)
হাফিয আসক্বালানী উক্ত হাদীস আত্ তালখীস-এর ৯৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)-এর বর্ণনায় বায়হাক্বীতে (৩য় খন্ড, পৃঃ ৩৯, ৪০ পৃঃ) রয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ‘র পূর্বে কুনূত পড়েছেন। এ প্রসঙ্গে মির‘আত প্রণেতা (রহঃ) বলেনঃ বিতর সালাতে রুকূ‘র পূর্বে এবং পরে কুনূত পড়া বৈধ। তবে রুকূ‘র পূর্বে কুনূত পড়াটাই উত্তম, কারণ এ ব্যাপারে সর্বাধিক বিশুদ্ধ হাদীস রয়েছে। আর এ ব্যাপারে বিতরের কুনূত ফাজ্রের (ফজরের) সালাতের কুনূতের উপর কিয়াস করার কোন প্রয়োজন নেই, কেননা বিতরের ব্যাপারে অধিক হাদীস রয়েছে যেগুলো নির্ভরযোগ্য সানাদে বর্ণিত এবং তা রুকূ‘র পূর্বে কুনূত পড়াই স্পষ্ট করে দেয়। আর বিতরের কুনূতকে ফাজ্রের (ফজরের) কুনূতের সাথে কিয়াস করা সম্ভব নয়, কারণ উভয়ের মাঝে অর্থগত কোন সামঞ্জস্যতা নেই (একটি বদদু‘আ অপরটি সাধারণ দু‘আ বা প্রার্থনা) যা উভয়ের মাঝে সমন্বয়ে সহায়ক হয়।
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত
১২৭৪-[২১] উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের সালাতের সালাম ফিরাবার পর বলতেন, ’’সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দূস’’ অর্থাৎ ’পাক-পবিত্র বাদশাহ খুবই পবিত্র’। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী; তিনি [নাসায়ী] বৃদ্ধি করেছেন যে, তিনবার দু’আটি পড়তেন, শেষের বারে দীর্ঘায়িত করতেন)[1]
وَعَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَلَّمَ فِي الْوتر قَالَ: «سُبْحَانَكَ الْمَلِكِ الْقُدُّوسِ» رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَزَادَ: ثَلَاث مَرَّات يُطِيل فِي آخِرهنَّ
ব্যাখ্যা: যাবতীয় গুণাবলীতে পরিপূর্ণ যার সাধারণত কোন পূর্ণতার চূড়ান্ত নেই। (অর্থাৎ সর্ববিষয়ে অসীম যিনি)। আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, যাবতীয় ত্রুটি ও অসম্পূর্ণ থেকে তিনি পবিত্র।
উপরোক্ত হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বিতরের পরে তাসবীহ পড়া শারী‘আত সম্মত বা সুন্নাত। তবে আবূ দাঊদ-এর বর্ণনায় হাদীসটি সংক্ষিপ্ত।
নাসায়ীর বর্ণনায় সহীহ সানাদে রয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাক্‘আত বিতর পড়তেন এবং প্রথম রাক্‘আতে سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلى (সূরাহ্ আ‘লা-) দ্বিতীয় রাক্‘আতে قُلْ يَايُّهَا الْكفِرُوْنَ (সূরাহ্ আল কা-ফিরূন) এবং তৃতীয় রাক্‘আতে قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ (সূরাহ্ আল ইখলাস) পড়তেন এবং রুকূ‘র পূর্বে কুনূত পড়তেন এবং বিতর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষে (سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوْسِ) তিনবার পড়তেন এবং শেষবারে উচ্চ আওয়াজে পড়তেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত
১২৭৫-[২২] নাসায়ীর একটি বর্ণনা ’আবদুর রহমান ইবনু আবযা তার পিতা হতে নকল করেছেনঃ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন সালাম ফিরাতেন, তিনবার বলতেন ’’সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দূস’’, তৃতীয়বার উচ্চস্বরে বলতেন।[1]
وَفِي رِوَايَةٍ لِلنَّسَائِيِّ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبْزَى عَنْ أَبِيهِ قَالَ: كَانَ يَقُولُ إِذَا سَلَّمَ: «سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوسِ» ثَلَاثًا وَيَرْفَعُ صَوْتَهُ بالثالثة
ব্যাখ্যা: শেষবারে তিনি উচ্চ আওয়াজে দু‘আ পড়তেন। এ হাদীসটি ইমাম তাহাবীও বর্ণনা করেছেন এবং আহমাদ বর্ণনা করেছেন। (আহমাদ- ৩য় খন্ড, ৪০৬, ৪০৭ পৃঃ)
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, উল্লেখিত যিকর তৃতীয়বারে উচ্চ আওয়াজে পড়া সুন্নাত। আল মাজহার (রহঃ) বলেন, যিকর উচ্চৈঃস্বরে বৈধ, এ হাদীসই তার দলীল। (এ যিকর দ্বারা তথাকথিত পীর-ফকীরদের যিকর উদ্দেশ্য নয়, বরং হাদীসে বর্ণিত কোন শব্দ বা বাক্য)
দীন প্রকাশ করার জন্য, শ্রোতাদের শিক্ষা দেয়ার জন্য এবং উদাসি ব্যক্তিকে জাগ্রত করার জন্য উচ্চ আওয়াজে বলা মুস্তাহাব, যদি তাতে রিয়া বা লোক দেখানো যিকর হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে। (অর্থাৎ লোক দেখানো ‘ইবাদাত হতে বেঁচে থাকতে হবে)।
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত
১২৭৬-[২৩] ’আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বিতরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষে এ দু’আ পড়তেনঃ
’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযু বিরিযা-কা মিন সাখাতিকা ওয়া বিমু’আ-ফা-তিকা মিন ’উকূবাতিকা ওয়া আ’ঊযু বিকা মিনকা, লা- উহসী সানা-য়ান ’আলায়কা, আন্তা কামা- আসনায়তা ’আলা- নাফসিকা’’
(অর্থাৎ ’হে আল্লাহ! আমি পানাহ চাই তোমার সন্তুষ্টির মাধ্যমে তোমার গজব থেকে, তোমার নিরাপত্তার মাধ্যমে তোমার ’আযাব থেকে। আমি পানাহ চাই তোমার নিকট তোমার [অসন্তোষ] থেকে। তোমার প্রশংসা বর্ণনা করে আমি শেষ করতে পারবো না। তুমি তেমন, যেমন তুমি তোমার বিবরণ দিয়েছ।)। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ فِي آخِرِ وَتْرِهِ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِرِضَاكَ من سخطك وبمعافاتك من عُقُوبَتك وَأَعُوذ بك مِنْكَ لَا أُحْصِي ثَنَاءً عَلَيْكَ أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে বিতরের পর যিকর করা শারী‘আত সম্মত সুন্নাত এ বিবরণ রয়েছে। আল্লামা মীরাক (রহঃ) বলেনঃ নাসায়ীর এক রিওয়ায়াতে রয়েছে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষে উক্ত স্থানে বসা অবস্থায় এ দু‘আ পড়তেন। মুল্লা ‘আলী ক্বারী (রহঃ) অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ইবনুল ক্বইয়্যূম (রহঃ) যাদুল মা‘আদণ্ড ১ম খন্ডের ৮৯ পৃষ্ঠায় ও শাওকানী (রহঃ) তুহফাতুয্ যাকিরীন-এর ১২৯ পৃষ্ঠায় অনুরূপ বর্ণনা করেছেন, যা সানাদী (রহঃ)-এর কথাকে প্রত্যাখ্যান করছে। তিনি বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের ক্বিয়ামের পর কুনূত হিসেবে পড়েছেন। তবে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস باب السجود ‘‘সাজদার অধ্যায়ে’’ চলে গেছে। সেখানে তিনি বলেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদাতে উক্ত দু‘আ পড়েছেন। হাফিয ইবনুল ক্বইয়্যূম (রহঃ) বলেনঃ উক্ত দু‘আ সালাতে এবং সালাতের পরেও পড়া যেতে পারে।