পরিচ্ছেদঃ ৩৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত
১২৫৪-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ রাত্রের (নফল) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) দু’ রাক্’আত দু’ রাক্’আত করে (আদায় করতে হয়)। কারো ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকাবোধ হলে সে যেন (দু’ রাক্’আতের) সাথে সাথে আরো এক রাক্’আত আদায় করে নেয়। তাহলে এ রাক্’আত পূর্বে আদায় করা সালাতকে বেজোড় করে দেবে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْوِتْرِ
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَلَاةُ اللَّيْلِ مَثْنَى مَثْنَى فَإِذَا خَشِيَ أَحَدُكُمُ الصُّبْحَ صَلَّى رَكْعَةً وَاحِدَة توتر لَهُ مَا قد صلى»
ব্যাখ্যা: ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেছেন যে, চার চার রাক্‘আতে সালাত আদায় করাই উত্তম। তবে আমি এমন কোন সহীহ এবং সরীহ (স্পষ্ট) হাদীস দেখতে পারিনি যা রাত কিংবা দিনের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) চার চার রাক্‘আত উত্তম হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করে। তবে তাদের (হানাফীদের) কেউ কেউ বলেছেন যে, রাতের সালাত দু’ দু’ রাক্‘আত করে এবং দিনের সালাত চার চার রাক্‘আত করে পড়া উত্তম। সাওরী, ইবনুল মুবারাক, ইসহাক, আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ প্রমুখগণ এ মতের প্রবক্তা এবং তারা ইবনু ‘উমার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস থেকে দলীল গ্রহণ করেছেন, তারা বলেনঃ যেহেতু রাতের সালাত দু’ দু’ রাক্‘আত করে পড়া উত্তম, কাজেই দিনের সালাত চার চার রাক্‘আত করে পড়াই উত্তম। তাঁরা আবূ আইয়ূব (রাঃ) বর্ণিত মারফূ‘ হাদীস দ্বারা দলীল সাব্যস্ত করেছেন যে, أربع قبل الظهر ليس فيهن تسليم
অর্থাৎ যুহরের পূর্বের চার রাক্‘আতে কোন সালাম নেই। জবাবে আমরা বলতে পারি যে, রাতের সালাত দু’ দু’ রাক্‘আত করে আদায় করা উত্তম আর দিনের সালাত দু’ কিংবা চার উভয় পন্থায় আদায় করা বৈধ।
হাদীসের আলোচ্যাংশটুকু ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) মতামতের পক্ষের স্পষ্ট প্রমাণ। তাঁর কথা এক রাক্‘আত বিতর সুন্নাত সম্মত এবং সহীহুল বুখারীতে রয়েছে যে, রাতের সালাত দু’ দু’ রাক্‘আতে আদায় করবে এবং যখন ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা করবে তখন এক রাক্‘আত সালাত আদায় করে নিবে এবং তা তোমার জন্য বিতর হবে।
উক্ত হাদীস দ্বারা হানাফীদের সে দাবী (এক রাক্‘আত বিতর যে ব্যক্তি ফজরে জাগ্রত না হওয়ার আশংকা করে তার জন্য খাস) প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে। কেননা উল্লেখিত হাদীস সালাত শেষ করে ফিরে যাওয়ার সাথে সম্পৃক্ত এবং তা ফজরে জাগ্রত হওয়ার আশংকা থাকুক বা না থাকুক সর্বক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য। এছাড়াও বহু সহীহ হাদীস ও আসার রয়েছে যা দ্বারা এক রাক্‘আত বিতর প্রমাণিত। পক্ষান্তরে وُتَيْرَةٌ (ছোট বিতর) অর্থাৎ এক রাক্‘আত বিতর নিষেধ সংক্রান্ত যে হাদীসটি পেশ করা হয় তা য‘ঈফ।
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত
১২৫৫-[২] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আর বিতর এক রাক্’আত শেষ রাতে। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْوِتْرِ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْوَتْرُ رَكْعَةٌ مِنْ آخر اللَّيْل» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (الْوَتْرُ رَكْعَةٌ) এক রাক্‘আত বিতর সাব্যস্তকরণের ক্ষেত্রে এ বাক্যটি একটি পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য। আর বিতরের সর্বনিম্ন সংখ্যা হলো এক রাক্‘আত। (مِنْ اخر اللَّيْل) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, রাতের শেষ ভাগ এটা (বিতরের সালাতের) শেষ সময়। অথবা বিতরের উত্তম সময় হলো রাতের শেষাংশ।
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত
১২৫৬-[৩] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে (তাহাজ্জুদের সময়) তের রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। তের রাক্’আতের মাঝে পাঁচ রাক্’আত বিতর। আর এর মাঝে (পাঁচ রাক্’আতের) শেষ রাক্’আত ব্যতীত কোন রাক্’আতে ’তাশাহুদ’ পড়ার জন্যে বসতেন না। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْوِتْرِ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً يُوتِرُ مِنْ ذَلِكَ بِخَمْسٍ لَا يَجْلِسُ فِي شَيْء إِلَّا فِي آخرهَا
ব্যাখ্যা: (لَا يَجْلِسُ فِي شَيْء إِلَّا فِي اخرهَا) এটা পাঁচ রাক্‘আত বিতর একই বৈঠকে আদায় করার শার‘ঈ দলীল। অতএব বিতর সালাতে প্রতি দু’ রাক্‘আতের শেষে বৈঠক দেয়া ওয়াজিব নয়। উপরোক্ত হাদীস দ্বারা তাদের কথা প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে যারা বলেন যে, বিতর সালাত তিন রাক্‘আতে সীমাবদ্ধ এবং প্রতি দু’ রাক্‘আতে বৈঠক ওয়াজিব। তিরমিযী (রহঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবায়ে কিরামদের বিদ্বানগণ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, বিতর পাঁচ রাক্‘আত বিধান সম্মত এবং শেষ রাক্‘আত ছাড়া কোন বৈঠক হবে না। এ ব্যাপারে কিতাবুল উম্ম ৭ম খন্ডের ১৮৯ পৃষ্ঠায় রাবী ইবনু সুলায়মান হতে বর্ণিত, তিনি এক রাক্‘আত বিতর সম্পর্কে ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন যার পূর্বে কোন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) নেই? অতঃপর ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেন, হ্যাঁ। তবে আমি ১০ রাক্‘আত সালাত আদায় করে, তারপর এক রাক্‘আত বিতর আদায় করাকে পছন্দ করি।
অতঃপর তিনি এ বিষয়ে তার থেকে দলীল বর্ণনা করেন। আবার তিনি (রাবী ইবনু সুলায়মান) বলেন, ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বর্ণনা করেছেনঃ আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন ‘আবদুল মাজীদ ..... ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচ রাক্‘আত বিতর আদায় করতেন এবং শেষ রাক্‘আত ব্যতীত কোন বৈঠকে বসতেন না।
আলোচ্য হাদীসটি হানাফী মাযহাবধারীদের উপর বড়ই জটিল। কেননা তারা বলেন যে, ফরয নফল প্রত্যেক সালাতের প্রতি দু’ রাক্‘আতে বৈঠক ও তাশাহহুদ পড়া ওয়াজিব।
আরো স্পষ্ট যে, বিতর সালাত পাঁচ রাক্‘আত সহীহ হাদীসে আছে; এটি ছাড়াও পাঁচ রাক্‘আত বিতরের অনেক হাদীস রয়েছে, যা ইমাম আত্ তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী ও বায়হাক্বী (৩য় খন্ড, পৃঃ ২৭, ২৮) সহ অনেক হাদীস বিশারদগণ বর্ণনা করেছেন। ইমাম শাওকানী তা নায়লুল আওতারে উল্লেখ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত
১২৫৭-[৪] সা’দ ইবনু হিশাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উম্মুল মু’মিনীন ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। তাঁর কাছে বললাম, হে উম্মুল মু’মিনীন! আমাকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ’খুলুক’ (স্বভাব-চরিত্র) ব্যাপারে কিছু বলুন। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, তুমি কি কুরআন পড়ো না? আমি বললাম, হ্যাঁ পড়ি। এবার তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নৈতিকতা ছিল আল-কুরআন। আমি বললাম, হে উম্মুল মু’মিনীন! আমাকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিতর ব্যাপারে বলুন। তিনি বললেন, (রাতের বিতর সালাতের জন্যে) আমি পূর্বে থেকেই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামর মিসওয়াক ও উযূর পানির ব্যবস্থা করে রাখতাম।
আল্লাহ তা’আলা যখন তাঁকে ঘুম হতে সজাগ করতে চাইতেন, উঠাতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রথমে মিসওয়াক করতেন, তারপর উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতেন ও নয় রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। অষ্টম রাক্’আত ব্যতীত কোন রাক্’আতে তিনি বসতেন না। আট রাক্’আত পড়া শেষ হলে (’তাশাহহুদে’) বসতেন। আল্লাহর যিকর করতেন। তাঁর প্রশংসা করতেন। তাঁর নিকট দু’আ করতেন অর্থাৎ আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করতেন। তারপর সালাম ফিরানো ব্যতীত নবম রাক্’আতের জন্যে দাঁড়িয়ে যেতেন। নবম রাক্’আত শেষ করে তাশাহুদ পাঠ করার জন্যে বসতেন। আল্লাহর যিকর করতেন। তাঁর প্রশংসা করতেন। তাঁর নিকট দু’আ করতেন (অর্থাৎ তাশাহুদ পড়তেন)। এরপর আমাদেরকে শুনিয়ে সশব্দে সালাম ফিরাতেন।
তারপর বসে বসে দু’ রাক্’আত আদায় করতেন। হে বৎস! এ মোট এগার রাক্’আত হলো। এরপর যখন তিনি বার্ধক্যে পৌঁছে গেলেন এবং তাঁর শরীর ভারী হয়ে গেল, তখন বিতরসহ সাত রাক্’আত সালাত আদায় করতেন। আর পূর্বের মতোই দু’ রাক্’আত বসে বসে আদায় করতেন। প্রিয় বৎস! এ মোট নয় রাক্’আত হলো। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলে, তা নিয়মিত আদায় করতে পছন্দ করতেন। কোন দিন যদি ঘুম বেশী হয়ে যেত অথবা অন্য কোন সমস্যা দেখা দিত, যাতে তাঁর জন্যে রাত্রে দাঁড়ানো সম্ভব হত না, তখন তিনি দুপুরে বারো রাক্’আত সালাত আদায় করে নিতেন। আমার জানা মতে, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো এক রাতে সম্পূর্ণ কুরআন পড়েননি। অথবা ভোর পর্যন্ত সারা রাত্র ধরে সালাত আদায় করেননি এবং রমাযান মাস ব্যতীত অন্য কোন মাসে গোটা মাস সওম পালন করেননি। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْوِتْرِ
وَعَن سعد بن هِشَام قَالَ انْطَلَقْتُ إِلَى عَائِشَةَ فَقُلْتُ يَا أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ أَنْبِئِينِي عَنْ خُلُقِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَتْ: أَلَسْتَ تَقْرَأُ الْقُرْآنَ؟ قُلْتُ: بَلَى. قَالَتْ: فَإِنَّ خُلُقَ نَبِيِّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ الْقُرْآنَ. قُلْتُ: يَا أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ أَنْبِئِينِي عَنْ وَتْرِ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ: كُنَّا نُعِدُّ لَهُ سِوَاكَهُ وَطَهُورَهُ فَيَبْعَثُهُ اللَّهُ مَا شَاءَ أَنْ يَبْعَثَهُ مِنَ اللَّيْلِ فَيَتَسَوَّكُ وَيَتَوَضَّأُ وَيُصَلِّي تِسْعَ رَكَعَاتٍ لَا يَجْلِسُ فِيهَا إِلَّا فِي الثَّامِنَةِ فَيَذْكُرُ اللَّهَ وَيَحْمَدُهُ وَيَدْعُوهُ ثُمَّ يَنْهَضُ وَلَا يُسَلِّمُ فَيُصَلِّي التَّاسِعَةَ ثُمَّ يَقْعُدُ فَيَذْكُرُ اللَّهَ وَيَحْمَدُهُ وَيَدْعُوهُ ثُمَّ يُسَلِّمُ تَسْلِيمًا يُسْمِعُنَا ثُمَّ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ بَعْدَمَا يُسَلِّمُ وَهُوَ قَاعد فَتلك إِحْدَى عشرَة رَكْعَة يابني فَلَمَّا أَسَنَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَخَذَ اللَّحْمَ أَوْتَرَ بِسَبْعٍ وَصَنَعَ فِي الرَّكْعَتَيْنِ مِثْلَ صَنِيعِهِ فِي الْأُولَى فَتِلْكَ تِسْعٌ يَا بُنَيَّ وَكَانَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَلَّى صَلَاةً أَحَبَّ أَنْ يُدَاوِمَ عَلَيْهَا وَكَانَ إِذَا غَلَبَهُ نَوْمٌ أَوْ وَجَعٌ عَنْ قِيَامِ اللَّيْلِ صَلَّى مِنَ النَّهَارِ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً وَلَا أَعْلَمُ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَرَأَ الْقُرْآنَ كُلَّهُ فِي لَيْلَةٍ وَلَا صَلَّى لَيْلَةً إِلَى الصُّبْحِ وَلَا صَامَ شهرا كَامِلا غير رَمَضَان. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (فَإِنَّ خُلُقَ نَبِيِّ اللّهِ ﷺ كَانَ الْقُرْانَ) ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চরিত্র ছিল আল কুরআন’’ এর অর্থ হলো আল কুরআনের আদেশ, নিষেধ, ভদ্রতা ইত্যাদি ধারণ করা; আরো স্পষ্ট করে বলা যেতে পারে যে, কুরআনুল কারীমে উত্তম চরিত্র ও উত্তম আদর্শ সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে এবং আল্লাহ তা‘আলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে যা বলেছেন তা-ই উত্তম নৈতিকতা। আর এসব গুণাবলী তার মধ্যে ছিল।
এ ব্যাপারে ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, কুরআনুল কারীমের প্রতি ‘আমল করা, তার সীমালঙ্ঘন না করা, সে অনুযায়ী আদর্শবান হওয়া, সুন্দর তিলাওয়াত ও নির্দেশের বাস্তবায়ন করা ইত্যাদি এবং উক্ত বাক্যে আল্লাহ তা‘আলার সে কথা ‘‘নিশ্চয়ই তুমি মহান চরিত্রের অধিকারী’’- (সূরাহ্ আল ক্বলাম ৬৮ : ৪)-এর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
(عن وتر رسول الله) বলতে বিতর সালাতের সময় পদ্ধতি ও রাক্‘আতের সংখ্যা বুঝানো হয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৯ রাক্‘আত আদায় করতেন এবং ৮ম রাক্‘আত ব্যতীত কোন বৈঠকে বসতেন না। এখান থেকে যে শার‘ঈ বিধান হবে ধারাবাহিকভাবে। শেষ রাক্‘আত ব্যতীত কোন সালাম হবে না এবং ৮ম রাক্‘আতে শুধু বৈঠক হবে সালাম ফিরানো যাবে না। আর এ বৈঠকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে তাশাহুদ পড়তেন তা সাধারণ হাম্দ ও সানা (আল্লাহর প্রশংসা) পড়তেন। প্রকৃত আত্তাহিয়্যাতু নয় কারণ তাশাহুদের মাঝে আল্লাহর প্রশংসা শব্দের উল্লেখ নেই এবং আরো পরিচিত দু‘আ পড়তেন এরপর দাঁড়িয়ে যেতেন এবং ৯ম রাক্‘আতের শেষে উচ্চ আওয়াজে সালাম ফিরাতেন।
এখানে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, বিতর সালাতে প্রতি দু’ রাক্‘আতে বৈঠক ওয়াজিব নয়, কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাগাতার ৮ রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছেন কোন বৈঠক ছাড়াই। তবে হানাফী মাযহাবধারীরা সম্পূর্ণ এর বিপরীত, তারা বলে প্রতি দু’ রাক্‘আতে তাশাহুদের জন্য বৈঠক ওয়াজিব। তারা জবাব হিসেবে বলেন যে, দু’ রাক্‘আতের মাঝে বৈঠকের নিষেধাজ্ঞা বলতে সালাম ফিরানো নিষেধ এ কথা বুঝানো হয়েছে।
তারা আরো বলেন যে, ৯ রাক্‘আতের তিন রাক্‘আত বিতর এবং তার পূর্বের ৬ রাক্‘আত নফল।
তবে এটা স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয় যে, বৈঠকের নিষেধাজ্ঞা বলতে সালাম ফিরানো নিষেধ বুঝানো হয়েছে মর্মে যা বলা হয় তার কোন প্রমাণ নেই। কারণ হাদীসটি খুবই স্পষ্ট বরং তা একটি পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য। অষ্টম রাক্‘আতের পূর্বে বৈঠক নিষেধ হওয়ার ক্ষেত্রে, আর ৯ম রাক্‘আতের পূর্বে সালাম ফিরানো নিষিদ্ধ হওয়াটা মুত্বলাক্ব। কাজেই পূর্ণ সালাতটি দু’ বৈঠকে এবং সালামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অতএব এটাও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক শ্রেণীর বিতর।
(ثُمَّ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ...) এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে বসে দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করতেন।
ইমাম নাবাবী বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করেছেন বিতরের পরেও নফল সালাত আদায় করা বৈধ এটা বর্ণনার জন্য এবং বসা অবস্থায় নফল সালাত আদায় করা বৈধ এটা বর্ণনার জন্য।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঘুম কিংবা অসুস্থতাজনিত কারণে রাতের সালাত আদায় করতে না পারতেন তখন তিনি উক্ত সালাত সূর্য উদিত হওয়া এবং ঢলে পড়ার মাঝামাঝি সময়ে বারো রাক্‘আত সালাত আদায় করতেন। তবে বলা হয় যে, ৮ রাক্‘আত ক্বিয়ামুল লায়ল রাতের সালাত বা তাহাজ্জুদ ও ৪ রাক্‘আত সালাতুয্ যুহা।
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত
১২৫৮-[৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা বিতরকে তোমাদের রাতের শেষ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) করো। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْوِتْرِ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «اجْعَلُوا آخِرَ صَلَاتِكُمْ بِاللَّيْلِ وترا» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: তোমাদের শেষ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হিসেবে বিতরের সালাত আদায় করো। (অর্থাৎ তাহাজ্জুদের শেষাংশে বিতর পড়)
উপরোক্ত হাদীস থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, বিতরের পর কোন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা শুদ্ধ নয়। তবে এ ব্যাপারে মুহাক্কিকদের দু’টি বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। (১) বিতরের পর বসা অবস্থায় দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করা শারী‘আত সম্মত, (২) যে ব্যক্তি বিতর রাতের প্রথমভাগে আদায় করে নিবে এবং গভীর রাতে নফল সালাতের ইচ্ছা করবে, তাহলে রাতের প্রথমভাগে আদায়কৃত বিতর কি তার জন্য যথেষ্ট হবে? নাকি এক রাক্‘আত সালাত আদায় করার মাধ্যমে তার রাতের প্রথমভাগের আদায়কৃত বিতর ভেঙ্গে দিতে হবে? অতঃপর নফল সালাত আদায় করার পর আবার কি বিতর আদায় করা প্রয়োজন? নাকি প্রয়োজন নয়। এ ব্যাপারে অধিকাংশ ‘উলামাগণ যথাক্রমে চার ইমাম, সাওরী ও ইবনু মুবারাকসহ অনেকেই বলেছেন যে, দু’ দু’ রাক্‘আত করে ইচ্ছামত সালাত আদায় করবে বিতর ভাঙ্গার কোন প্রয়োজন নেই। কারণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, এক রাত্রিতে দু’বার বিতর পড়া বৈধ নয়। (আহমাদ, আত্ তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, সহীহ ইবনু হিব্বান, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্-এর রিওয়ায়াতে হাদীসটি রয়েছে)
তবে কেউ কেউ বলেছেন যে, বিতর ভাঙ্গা জায়িয। তারা বলেন যে, বিতরের উপর (দু’ বার) বিতর পড়ে তা ভেঙ্গে দিয়ে ইচ্ছামাফিক নফল সালাত আদায় করার পর পুনরায় বিতর আদায় করতে হবে।
তবে প্রথম মতই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এবং সর্বাধিক সহীহ; কেননা অপর বর্ণনায় রয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের পরেও সালাত আদায় করেছেন এবং তুহফা প্রণেতা এ মাসআলার ব্যাপারে দৃঢ় মতামত দিয়েছেন যে, বিতর না ভাঙ্গাটাই আমার নিকট অধিক পছন্দনীয় মত এবং তিনি এও বলেছেন যে, বিতর ভাঙ্গার সপক্ষে সহীহ হাদীস দ্বারা কোন প্রমাণ আমি পাইনি।
ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) উপরোক্ত হাদীস দ্বারা বিতর ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে দলীল গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, اجْعَلُوا শব্দটি أمر আর أمر -এর মৌলিকত্বটা ওয়াজিবের জন্য। কাজেই বিতর ওয়াজিব। তার জবাব তিনভাবে দেয়া যায়।
(১) أمر যদিও وجوب বা আবশ্যকতার জন্য, কিন্তু যখন কোন قرينة বা আলামত পাওয়া যায় তবে তা وجوب বা আবশ্যকতা থেকে غير وجوب বা অনাবশ্যকতার দিকে স্থানান্তরিত হয়। তাছাড়া হানাফী ‘উলামাগণ স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে, এ হাদীসে اجْعَلُوا শব্দটি أمر বা আবশ্যকতার জন্য নয়। মুল্লা ‘আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন, এ হাদীসে اجْعَلُوا শব্দটি বৈধতার জন্য ব্যবহার হয়েছে।
(২) নিশ্চয়ই রাতের সালাত ওয়াজিব নয়। হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) ফাতহুল বারীতে উল্লেখ করেছেন যে, রাতের সালাত ওয়াজিব নয় কাজেই রাতের শেষটাও (অর্থাৎ বিতর) অনুরূপ, তথা ওয়াজিব নয়। আর মৌলিক বিষয় সর্বদাই অনাবশ্যক থাকবে যতক্ষণ না আবশ্যক হওয়ার প্রমাণ না পাওয়া যাবে।
(৩) নিশ্চয়ই যদি এ হাদীস দ্বারা বিতর ওয়াজিব সাব্যস্ত হয় তাহলে ইবনু ‘উমার (রাঃ) অবশ্যই তা বলতেন এবং কোন ধরনের ছাড় দেয়া ছাড়াই তিনি ফাতাওয়া দিতেন। কিন্তু তিনি শুধু এতটুকুই বলতেন, ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর আদায় করেছেন এবং মুসলিমগণ বিতর আদায় করেছেন’’। (সহীহ মুসলিম)
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত
১২৫৯-[৬] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা (ভোরের লক্ষণ ফুটে উঠার আগে) বিতরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে দ্রুত করো। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْوِتْرِ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «بَادرُوا الصُّبْح بالوتر» . وَرَاه مُسلم
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীসটি ফাজ্রের (ফজরের) পূর্বে বিতর আদায় করার উপরে দলীল। যখন ফাজর (ফজর) উদয় হবে তখন বিতরের সময় শেষ হয়ে যাবে। অবশ্য উক্ত হাদীস দ্বারা (হানাফীগণ) বিতর ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে দলীল গ্রহণ করেছেন। মুল্লা ‘আলী ক্বারী (রহঃ) তাঁর ব্যাখ্যা গ্রন্থে (মিরকাতে) বলেছেন, ফাজ্রের (ফজরের) পূর্বেই বিতর দ্রুত আদায় করে নাও। তিনি বলেন যে, এখানে أمر-টি আমাদের নিকট (হানাফীদের নিকট) وجوب বা আবশ্যকতার জন্য। তার জবাবে বলা যায় যে, উক্ত হাদীসটি ফাজ্র (ফজর) উদয় হওয়ার পূর্বেই বিতর সালাত আদায় করা আবশ্যক হওয়া প্রমাণ করে, কিন্তু বিতর (মৌলিকভাবে) ওয়াজিব হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করবে না। মূল উদ্দেশ্য এটাই অন্য কিছু নয়। অতএব উক্ত হাদীস দ্বারা বিতর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে দলীল গ্রহণ করা গ্রহণযোগ্য নয়।
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত
১২৬০-[৭] জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে লোক আশংকা করে যে, শেষ রাতে উঠতে পারবে না সে যেন প্রথম রাতেই বিতরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে নেয়। আর যে লোক শেষ রাত্রে উঠতে পারবে বলে মনে করে, সে যেন শেষ রাতেই বিতরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে। এজন্য যে, শেষ রাতের সালাতে ফেরেশতাগণ উপস্থিত হন। আর এটা অনেক ভাল। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْوِتْرِ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ خَافَ أَنْ لَا يَقُومَ مِنْ آخِرِ اللَّيْلِ فَلْيُوتِرْ أَوَّلَهُ وَمَنْ طَمِعَ أَنْ يَقُومَ آخِرَهُ فَلْيُوتِرْ آخِرَ اللَّيْلِ فَإِنَّ صَلَاةَ آخِرِ اللَّيْلِ مَشْهُودَةٌ وَذَلِكَ أَفْضَلُ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: এখানে مَشْهُوْدَةٌ শব্দটি مَحْضُوْرَةٌ -এর অর্থে ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ রাতের শেষ ভাগে রহমাতের মালাক (ফেরেশতা) আগমন করে। আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন যে, এ সময় রাত ও দিনের মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) উপস্থিত হয়। আলোচ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাতের শেষভাগেই বিতর আদায় করা উত্তম, কিন্তু যে ব্যক্তি শেষ রাতে জাগ্রত না হওয়ার আশংকা করবে সে প্রথমাংশে বিতর আদায় করে নিবে। মুহাদ্দিসীন কিরামের একটি দল এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।
ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন যে, উল্লেখিত হাদীসে সুস্পষ্ট দলীল রয়েছে যে, নিশ্চয়ই রাতের শেষভাগে বিতর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা ঐ ব্যক্তির জন্য উত্তম, যে শেষ রাতে জাগ্রত হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী বা সক্ষম, আর যে ব্যক্তি শেষ রাতে জাগ্রত হওয়ার দৃঢ় আশাবাদী বা সক্ষম নয় তার জন্য রাতের প্রথমভাগে বিতর আদায় করাটাই উত্তম এবং এটাই সঠিক। তবে অনেকেই এ হাদীস দ্বারা বিতর সালাত ওয়াজিব হওয়ার উপর দলীল গ্রহণ করেছেন। মুল্লা ‘আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন, বিতর সালাত ছুটে যাওয়ার আশংকায় রাতের প্রথমাংশে তা আদায় করার নির্দেশটা তার (বিতর) ওয়াজিব হওয়ার উপরই প্রমাণ বহন করে।
তার জবাবে বলা যায় যে, বিতর সালাত ছুটে যাওয়ার আশংকায় রাতের প্রথমাংশে তা আদায় করার নির্দেশ বা أمر বিতর সালাতের গুরুত্ব বহন করারই সম্ভাবনা রাখে, ওয়াজিব বুঝানোর জন্য নয়। আর যখন أمر -এর ব্যাপারে সংশয় আসে। তখন তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা বাতিল হবে। অতএব উক্ত أمر দ্বারা বিতর ওয়াজিব হওয়ার দলীল গ্রহণ করা সঠিক নয়।
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত
১২৬১-[৮] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রের প্রতি অংশেই বিতরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছেন- প্রথম রাতেও (’ইশার সালাতের পরপর), মধ্য রাতেও এবং শেষ রাতেও। কিন্তু শেষ জীবনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিতরের সালাতের জন্যে রাতের সাহরীর সময় (শেষভাগ) নির্ধারিত করে নিয়েছিলেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْوِتْرِ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: مِنْ كُلَّ اللَّيْلِ أَوْتَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ أَوَّلِ اللَّيْلِ وَأَوْسَطِهِ وَآخِرِهِ وَانْتَهَى وَتْرُهُ إِلَى السَّحَرِ
ব্যাখ্যা: وَانْتَهى وَتْرُه إِلَى السَّحَرِ দ্বারা ফাজ্রের (ফজরের) পূর্ববর্তী সময়কে বুঝানো হয়। ইমাম নাবাবী বলেন যে, এর অর্থ বিতরের শেষ সময় আর তা হলো সাহরীর সময়। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো রাতের শেষ ভাগ, যেমন তিনি [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] অন্য রিওয়ায়াতগুলোতে বর্ণনা করেছেন সেখানেও রয়েছে যে, শেষ রাতে বিতর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা মুস্তাহাব। অবশ্য একাধিক সহীহ হাদীস এর বিপরীত বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, তাতে বিতরের ওয়াক্ত আসার পর থেকে সমস্ত রাত্রি বিতর সালাত আদায় করা বৈধতার বিবরণ রয়েছে। জাবির (রাঃ) এবং ইবনু ‘উমার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস যা পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে এবং ইবনু মাজায় বর্ণিত ‘আলী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে। এছাড়াও আহমাদ ও ত্ববারানীতে ইবনু মাস্‘ঊদ-এর বর্ণিত হাদীস রয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের প্রথম, মধ্যম ও শেষাংশে বিতরের সালাত আদায় করতেন।
আল্লামা ইরাক্বী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, আল্লামা হায়সামী বলেছেন এর রাবীগণ নির্ভরযোগ্য। এছাড়াও ত্ববারানীতে ‘উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির (রাঃ) বর্ণিত হাদীসসহ আরো অনেকের বর্ণিত হাদীস পাওয়া যায়। এ সবগুলোতে সারারাত্রি বিতর সালাতের ওয়াক্ত এ কথারই বর্ণনা পাওয়া যায়। কিন্তু তা الشفق বা লালিমা অদৃশ্য হওয়ার পরে ‘ইশার সালাতের পর থেকে শুরু হবে, কারণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ইশার সালাতের পূর্বে বিতর আদায় করেছেন মর্মে কোন হাদীস বর্ণিত হয়নি। এক্ষেত্রে খারিজাহ্ ইবনু ইযাফাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি তার স্পষ্ট প্রমাণ, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য বিতর সালাত নির্ধারণ করেছেন ‘ইশার সালাত এবং ফাজ্র (ফজর) উদয় হওয়ার মাঝামাঝি সময়ে’’। আল্লামা শাওকানী বলেন, এ অধ্যায়ের হাদীসগুলো প্রমাণ করে যে, ‘ইশার সালাতের পূর্ব সময় ব্যতীত সারারাত্রিই বিতরের ওয়াক্ত। এ বিষয়ে কেউ দ্বিমত পোষণ করেননি, তবে ইমাম শাফি‘ঈর অনুসারীদের মত অনুযায়ী ‘ইশার সালাতের পূর্বে ও বিতর সালাত বৈধ, তবে এ মতটি নিতান্তই দুর্বল। হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন যে, এ ব্যাপারে ইজমা রয়েছে যে, বিতরের ওয়াক্ত শুরু হবে লালিমা অদৃশ্য হওয়ার পর ‘ইশার সালাতের পর থেকে, এবং ইবনুল মুনযির অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
মির্‘আত প্রণেতা বলেনঃ আমার নিকট সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মত হলো, বিতর সালাতের ওয়াক্ত হলো লালিমা অদৃশ্য হওয়ার পর ‘ইশার সালাতের পর থেকে শুরু, তবে সালাত একত্রিত করে লালিমা অদৃশ্য হওয়ার পূর্বেই ‘ইশার সালাত আদায় করলে লালিমা অদৃশ্য হওয়ার পূর্বেই বিতর সালাত বৈধ। আর বিতর সালাতের শেষ সময় হলো ফাজ্র (ফজর) উদয় হওয়া পর্যন্ত।
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত
১২৬২-[৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার বন্ধু (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে তিনটি বিষয়ে ওয়াসিয়্যাত করেছেনঃ প্রতি মাসে তিনটি করে সওম পালন করতে, যুহা’র দু’ রাক্’আত সালাত (ইশরাক অথবা চাশ্ত/চাশত) পড়তে এবং ঘুমাবার পূর্বে বিতরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْوِتْرِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: أَوْصَانِي خَلِيلِي بِثَلَاثٍ: صِيَامِ ثَلَاثَةِ أَيَّام من كل شهر وركعتي الضُّحَى وَأَن أوتر قبل أَن أَنَام
ব্যাখ্যা: أَوْصَانِي..... আমাকে ওয়াসিয়্যাত করলেন, এর অর্থ হলো অঙ্গীকারে আবদ্ধ করলেন এবং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের আদেশ করলেন।
এখানে প্রতি মাসে তিনটি সিয়াম পালন দ্বারা উদ্দেশ্য হলো প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ, যা আইয়্যামে বীজ নামে পরিচিত।
رَكْعَتَي الضُّحى অর্থাৎ প্রতি দিনে দু’ রাক্‘আত সালাতুয্ যুহা আদায় করা। যেমন- ইমাম আহমাদ বৃদ্ধি করে বর্ণনা করেছেন যে, দু’ রাক্‘আত সালাতুয্ যুহার সর্বনিম্ন রাক্‘আত সংখ্যা, আর দু’ রাক্‘আতই মানব দেহের ৩৬০টি জোড়ার সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দেয়ার জন্য যথেষ্ট হবে। যে জোড়াগুলোর উপর সে প্রতিদিন সকাল করে। যেমন- সহীহ মুসলিমে আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত রয়েছে। তিনি বলেন, তার পক্ষ থেকে দু’ রাক্‘আত সালাতুয্ যুহাই যথেষ্ট হবে এবং উল্লেখিত হাদীসে সালাতুয্ যুহা মুস্তাহাব, এ বিবরণই রয়েছে- যদিও তার সর্বনিম্ন সংখ্যা দু’ রাক্‘আত।
أَنْ أوْتِرَ قبل أَن أَنَام অর্থাৎ ঘুমানোর পূর্বে বিতর আদায় করার অর্থ হলো বিতরের পরে ঘুমাতে হবে পূর্বে নয়। তবে বিতরের পর ঘুমানো আবশ্যকও নয়। তবে তার (আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর) প্রতি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘুমানোর পূর্বেই বিতর আদায় করার নির্দেশটি এমনও হতে পারে যে, ঘুমের কারণে তার বিতর ছুটে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। সে ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি বিতর ছুটে যাওয়ার আশংকা করবে তার জন্য পূর্বেই বিতর আদায় করা উত্তম, আর যার এমন আশংকা নেই তার জন্য দেরিতে যথাসময়ে (রাতের শেষাংশে) আদায় করাই উত্তম।
হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, আবূ হুরায়রার প্রতি ঘুমানোর পূর্বে বিতর আদায়ের ক্ষেত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ এবং ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কথা, বিতরের শেষ সময় হলো সাহরী পর্যন্ত। এ হাদীসদ্বয়ের মাঝে কোন বৈপরীত্য নেই। কেননা প্রথম হাদীসটি (আবূ হুরায়রার বর্ণিত) বিতর ছুটে যাওয়ার আশংকা বা জাগ্রত হওয়ার ব্যাপারে সংশয়ের ক্ষেত্রে আর ২য় হাদীসটি (‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বর্ণিত) যে আন্তরিকভাবে জাগ্রত হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।