পরিচ্ছেদঃ ৩৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ‘আমলে ভারসাম্য বজায় রাখা
১২৫২-[১২] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ বসে (নফল) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলে, দাঁড়িয়ে সালাত আদায়ের অর্ধেক সাওয়াব পাওয়া যায়। তিনি [’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ)] বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে হাযির হলাম। সে সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে বসে সালাত আদায় করছিলেন। (সালাত শেষ হবার পর) আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাথায় হাত রাখলাম। তিনি বললেন, ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর! কি হয়েছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে তো বলা হয়েছে যে, আপনি ইরশাদ করেছেনঃ বসে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারীর সালাতে অর্ধেক সাওয়াব হয়। অথচ আপনি বসে বসে সালাত আদায় করছেন। জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ তা-ই। কিন্তু আমি তো তোমাদের মতো নই। (মুসলিম)[1]
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: حُدِّثْتُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «صَلَاةُ الرَّجُلِ قَاعِدًا نِصْفُ الصَّلَاةِ» قَالَ: فَأَتَيْتُهُ فَوَجَدْتُهُ يُصَلِّي جَالِسًا فَوَضَعْتُ يَدِي عَلَى رَأسه فَقَالَ: «مَالك يَا عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرٍو؟» قُلْتُ: حُدِّثْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنَّكَ قُلْتَ: «صَلَاةُ الرَّجُلِ قَاعِدًا عَلَى نِصْفِ الصَّلَاةِ» وَأَنْتَ تُصَلِّي قَاعِدًا قَالَ: «أَجَلْ وَلَكِنِّي لَسْتُ كَأَحَدٍ مِنْكُمْ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: এ হাদীসের বিষয়বস্ত্ত নিয়ে ইতিপূর্বে আলোচনা হয়ে গেছে। বসে সালাত আদায়কারী দাঁড়িয়ে সালাত আদায়কারীর অর্ধেক সাওয়াব পাবে। এ সালাত বলতে নফল সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) উদ্দেশ্য, কারণ দাঁড়াতে সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য বসে ফরয সালাত আদায় সহীহ হবে না, বরং এতে সে গুনাহগার হবে। পক্ষান্তরে দাঁড়াতে অক্ষম ব্যক্তি বসে ফরয সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলে এর সাওয়াবে কোন কমতি হবে না এটাই জমহূরের মত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলা হলো, বসে সালাত আদায়কারীর সাওয়াব অর্ধেক অথচ আপনি তো বসে সালাত আদায় করছেন? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হ্যাঁ, কিন্তু আমি তোমাদের কারো মতো নই’ এর ব্যাখ্যায় ব্যাখ্যাকারীগণ বিভিন্ন উক্তি করেছেন। কেউ বলেছেন, এর অর্থ হলো এ হুকুম অন্য উম্মাতের জন্য, আমাদের জন্য বসে সালাত পূর্ণ সাওয়াবই মিলবে। অথবা এর অর্থ হলো এটা আমার ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য যা সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। ইমাম নবাবীও এ কথাই বলেছেন। অথবা আমার পূর্ণ তাওয়াজ্জুহ ও তাকাররুবের কারণে সাওয়াব পূর্ণই মিলবে, যা অর্জন অন্যের পক্ষ সম্ভব নয়।
পরিচ্ছেদঃ ৩৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ‘আমলে ভারসাম্য বজায় রাখা
১২৫৩-[১৩] সালিম ইবনুল আবী জা’দ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, খুযা’আহ্ গোত্রের এক লোক বলল, হায় আমি যদি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতাম, আরাম পেতাম। লোকেরা তার কথা শুনে মন খারাপ করল। তখন লোকটি বলল, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ হে বিলাল! সালাতের জন্যে ইক্বামাত(ইকামত/একামত) দাও। এর দ্বারা আমাকে আরাম দাও। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن سَالم بن أبي الْجَعْد قَالَ: قَالَ رَجُلٌ مِنْ خُزَاعَةَ: لَيْتَنِي صَلَّيْتُ فَاسْتَرَحْتُ فَكَأَنَّهُمْ عَابُوا ذَلِكَ عَلَيْهِ فَقَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُول: «أَقِمِ الصَّلَاةَ يَا بِلَالُ أَرِحْنَا بِهَا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: আরাম পাওয়ার কারণ হলো আল্লাহর সাথে মুনাজাত বা কানে কানে কথা বলার মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করা অথবা সালাত শেষ করে নিজের যিম্মাহ থেকে মুক্ত হওয়া বা অবসর গ্রহণ করা। অথবা এ বাক্যের অর্থ হলো হায় আমি যদি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে ঘুমের আরামে যেতে পারতাম! আমি তো তার জন্য প্রতিক্ষা করা সহ্য করতে পারছি না। উপস্থিত লোকেরা এটাকে দোষণীয় মনে করলে তিনি তার প্রতিউত্তরে দলীল হিসেবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি নির্দেশসূচক হাদীস পেশ করেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা বিলালকে নির্দেশ দিলেনঃ বিলাল ! তুমি ইক্বামাত দাও এবং সালাত শেষ করে আমাদের আরাম দাও। সুতরাং খুযা‘আহ্ গোত্রের ঐ ব্যক্তির কথাটি লোকেরা যে দোষণীয় মনে করেছিলেন সেটা মূলত কোন দোষণীয় কথা নয়।