১১৮৮

পরিচ্ছেদঃ ৩১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রাতের সালাত

জেনে রাখা ভাল যে, সালাতুল লায়ল, ক্বিয়ামুল লায়ল ও তাহাজ্জুদ একই সালাতের বিভিন্ন নাম। যার ওয়াক্ত ’ইশার সালাতের পর থেকে ফাজর (ফজর) হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। তবে এটাও বলা হয়ে থাকে যে, বিশেষভাবে তাহাজ্জুদ ঐ সালাতকে বলা হয় যা শেষ রাতে আদায় করা হয়ে থাকে। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই অগ্রগণ্য।


১১৮৮-[১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’ইশার সালাতের পর ফাজর (ফজর) পর্যন্ত প্রায়ই এগার রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। প্রতি দু’ রাক্’আত সালাতের পর সালাম ফিরাতেন। শেষের দিকে এক রাক্’আত দ্বারা বিতর আদায় করে নিতেন। আর এক রাক্’আতে এত লম্বা সিজদা্ করতেন যে, একজন লোক সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) হতে মাথা উঠাবার পূর্বে পঞ্চাশ আয়াত পড়ে ফেলতে পারত। এরপর মুয়াযযিনের ফাজ্‌রের (ফজরের) আযানের আওয়াজ শেষে ফজরের (ফজরের) সময় স্পষ্ট হলে তিনি দাঁড়াতেন। দু’ রাক্’আত হালকা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। এরপর খুব স্বল্প সময়ের জন্যে ডান পাশে ফিরে শুয়ে যেতেন। এরপর মুয়াযযিন ইক্বামাত(ইকামত/একামত)ের অনুমতির জন্যে তাঁর কাছে এলে তিনি মসজিদের উদ্দেশে বেরিয়ে যেতেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ صَلَاةِ اللَّيْلِ

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي فِيمَا بَين أَن يفرغ من صَلَاة الْعشَاء إِلَى الْفَجْرِ إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً يُسَلِّمُ مِنْ كُلِّ رَكْعَتَيْنِ وَيُوتِرُ بِوَاحِدَةٍ فَيَسْجُدُ السَّجْدَةَ مِنْ ذَلِكَ قَدْرَ مَا يَقْرَأُ أَحَدُكُمْ خَمْسِينَ آيَةً قَبْلَ أَنْ يَرْفَعَ رَأْسَهُ فَإِذَا سَكَتَ الْمُؤَذِّنُ مِنْ صَلَاةِ الْفَجْرِ وَتَبَيَّنَ لَهُ الْفَجْرُ قَامَ فَرَكَعَ رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ ثُمَّ اضْطَجَعَ عَلَى شِقِّهِ الْأَيْمَنِ حَتَّى يَأْتِيهِ الْمُؤَذّن للإقامة فَيخرج

ব্যাখ্যা: (يُصَلِّي فِيمَا بَين أَنْ يَّفْرُغَ مِنْ صَلَاةِ الْعِشَاءِ إِلَى الْفَجْرِ) ‘ইশার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হতে অবসর হওয়ার পর থেকে ফাজর (ফজর) হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করতেন। এ বাক্যটি রাতে ঘুমের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী উভয় সালাতকেই শামিল করে। (إِحْدى عَشْرَةَ رَكْعَةً) এগার রাক্‘আত এটা অধিকাংশ সময়ের কথা বলা হয়েছে। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তের রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার কথা সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।

(يُسَلِّمُ مِنْ كُلِّ رَكْعَتَيْنِ) প্রতি দুই রাক্‘আতের পর সালাম ফেরাতেন। এতে প্রমাণিত হয় রাতের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) দুই রাক্‘আত করে আদায় করা উত্তম। ‘‘রাতের সালাত দুই রাক্‘আত করে’’ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ বাণীও তাই প্রমাণ করে।

(وَيُوْتِرُ بِوَاحِدَةٍ) আর তিনি এক রাক্‘আত বিতর আদায় করতেন। এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, বিতরের সর্বনিম্ন সংখ্যা এক রাক্‘আত। এটাও প্রমাণিত হয়, পৃথক এক রাক্‘আত সালাত আদায় করা সঠিক। ইমাম আবূ হানীফাহ্ ব্যতীত অন্য তিন ইমামের অভিমতও তাই। আর ইমাম আবূ হানীফাহ্ বলেন, এক রাক্‘আত বিতর বিশুদ্ধ নয়। পৃথক এক রাক্‘আত সালাত হয় না। ইমাম নাবাবী বলেন, সহীহ হাদীস তার এ অভিমত প্রত্যাখ্যান করে।

(فَيَسْجُدُ السَّجْدَةَ مِنْ ذلِكَ قَدْرَ مَا يَقْرَأُ أَحَدُكُمْ خَمْسِيْنَ آيَةً) তোমাদের কারো পঞ্চশ আয়াত পাঠ করার মতো সময় পর্যন্ত দীর্ঘ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতেন। এতে রাতের সালাতের সিজদা্ দীর্ঘ করার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। বিতরের পৃথক সালাতের সাজদার কথা বলা হয়নি। অত্র হাদীস রাতের সালাতের সিজদা্ দীর্ঘ করা মুস্তাহাব হওয়ার দলীল।

(ثُمَّ اضْطَجَعَ) অতঃপর তিনি শয়ন করতেন। অর্থাৎ তিনি স্বীয় ঘরে সুন্নাত আদায় করার পর আরাম করার জন্য শয়ন করতেন। যাতে বিনা ক্লান্তিতে ফাজরের (ফজরের) সালাত আদায় করতে পারেন। অথবা ফরয ও নফলের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টির লক্ষ্যে শয়ন করতেন। এ হাদীস ফাজরের (ফজরের) সুন্নাত ঘরে আদায় করার পর শয়ন করা মুস্তাহাব হওয়ার দলীল।

তবে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস ‘‘তোমাদের কেউ যখন ফাজরের (ফজরের) সুন্নাত সালাত আদায় করে তখন সে যেন ডান কাতে শয়ন করে’’ দ্বারা সাব্যস্ত হয় যে, ঘর হোক অথবা মাসজিদ হোক যেখানে ফাজরের (ফজরের) সুন্নাত আদায় করবে সেখানেই শয়ন করা মুস্তাহাব। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে শয়ন না করার কারণ এই যে, তিনি মসজিদে সুন্নাত আদায় না করার কারণে মসজিদে শয়ন করেনি। তিনি স্বীয় ঘরে ফাজরের (ফজরের) সুন্নাত আদায় করতেন তাই ঘরেই শয়ন করতেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ