লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ৩১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রাতের সালাত
১১৯৫-[৮] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, একবার আমি আমার খালা উম্মুল মু’মিনীন মায়মূনাহ্ (রাঃ)-এর বাড়ীতে রাত কাটালাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে রাত্রে তাঁর বাড়ীতে ছিলেন। ’ইশার পর কিছু সময় তিনি তাঁর স্ত্রী মায়মূনার সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। তারপর শুয়ে পড়েন। রাত্রের শেষ তৃতীয়াংশে অথবা রাতের কিছু সময় অবশিষ্ট থাকতে তিনি সজাগ হলেন। আকাশের দিকে লক্ষ করে এ আয়াত পাঠ করলেনঃإِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّموتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَأَۤيَاتٍ لِّأُوْلِي الْأَلْبَابِ অর্থাৎ ’’আকাশ ও জমিন সৃষ্টি করা, রাত ও দিনের ভিন্নতার (কখনো অন্ধকার কখনো আলোকিত, কখনো গরম কখনো শীত, কখনো বড়ো কখনো ছোট) মাঝে রয়েছে জ্ঞানীদের জন্যে আল্লাহর নিদর্শন’’- (সূরাহ্ আ-লি ’ইমরান ৩: ১৯০)। তিনি সূরাটি শেষ পর্যন্ত পাঠ করেন। তারপর উঠে তিনি পাত্রের কাছে গেলেন। এর বাঁধন খুললেন। পাত্রে পানি ঢাললেন। তারপর দু’ উযূর মাঝে মধ্যম ধরনের ভাল উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করলেন।
হাদীস বর্ণনাকারী বলেন, (মধ্যম ধরনের উযূর অর্থ) খুব অল্প পানি খরচ করলেন। তবে শরীরে দরকারী পানি পৌঁছিয়েছেন। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে লাগলেন। (এসব দেখে) আমি নিজেও উঠলাম। অতঃপর উযূ করে তাঁর বাম পাশে দাঁড়িয়ে গেলাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কান ধরে তাঁর বাম পাশ থেকে ঘুরিয়ে এনে আমাকে তাঁর ডান পাশে দাঁড় করালেন। তার তের রাক্’আত সালাত আদায় করা শেষ হলে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। শুয়ে পড়লে তিনি নাক ডাকতেন। তাই তাঁর নাক ডাকা শুরু হলো। ইতোমধ্যে বেলাল এসে সালাত প্রস্তুতির ঘোষণা দিলেন। তিনি সালাত আদায় করালেন। কোন উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করলেন না। তার দু’আর মাঝে ছিল,
’’আল্ল-হুম্মাজ্’আল ফী ক্বলবী নূরাওঁ ওয়াফী বাসারী নূরাওঁ ওয়াফী সাম্’ঈ নূরাওঁ ওয়া’আই ইয়ামীনী নূরাওঁ ওয়া’আই ইয়াসা-রী নূরাওঁ ওয়া ফাওক্বী নূরাওঁ ওয়া তাহতী নূরাওঁ ওয়া আমা-মী নূরাওঁ ওয়া খলফী নূরাওঁ ওয়াজ্’আল্ লী নূরা-’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমার হৃদয়ে, আমার চোখে, আমার কানে, আমার ডানে, আমার বামে, আমার উপরে, আমার নিচে, আমার সম্মুখে, আমার পেছনে নূর দিয়ে ভরে দাও। আমার জন্যে কেবল নূরই নূর সৃষ্টি করে দাও।)।
কোন কোন বর্ণনাকারী এ শব্দগুলোও নকল করেছেন, ’’ওয়াফী লিসা-নী নূরা-’’ (অর্থাৎ- আমার জিহবায় নূর পয়দা করে দাও)। (অন্য বর্ণনায় এ শব্দগুলোও) উল্লেখ করেছেন, ’’ওয়া ’আসাবী ওয়া লাহমী ওয়াদামী ওয়া শা’রী ওয়া বাশারী’’ (অর্থাৎ- আমার শিরা উপশিরায়, আমার মাংসে, আমার রক্তে, আমার পশমে, আমার চামড়ায় নূর তৈরি করে দাও)। (বুখারী, মুসলিম)
বুখারী ও মুসলিমেরই আর এক বিবরণে এ শব্দগুলোও আছে, ’’ওয়াজ্’আল ফী নাফসী নূরাওঁ ওয়া আ’যিম লী নূরা-’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমার মনের মধ্যে নূর সৃষ্টি করে দাও এবং আমার মাঝে নূর বাড়িয়ে দাও)। মুসলিমের এক বিবরণে আছে, ’’আল্ল-হুম্মা আ’ত্বিনী নূরা-’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে নূর দান করো)।[1]
بَابُ صَلَاةِ اللَّيْلِ
وَعَن ابْن عَبَّاس قَالَ: بِتُّ عِنْدَ خَالَتِي مَيْمُونَةَ لَيْلَةً وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَهَا فَتَحَدَّثَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَعَ أَهْلِهِ سَاعَةً ثُمَّ رَقَدَ فَلَمَّا كَانَ ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ أَوْ بَعْضُهُ قَعَدَ فَنَظَرَ إِلَى السَّمَاءِ فَقَرَأَ: (إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْل وَالنَّهَار لآيَات لأولي الْأَلْبَاب حَتَّى خَتَمَ السُّورَةَ ثُمَّ قَامَ إِلَى الْقِرْبَةِ فَأَطْلَقَ شِنَاقَهَا ثُمَّ صَبَّ فِي الْجَفْنَةِ ثُمَّ تَوَضَّأَ وُضُوءًا حَسَنًا بَيْنَ الْوُضُوءَيْنِ لَمْ يُكْثِرْ وَقَدْ أَبْلَغَ فَقَامَ فَصَلَّى فَقُمْتُ وَتَوَضَّأْتُ فَقُمْتُ عَنْ يَسَارِهِ فَأَخَذَ بِأُذُنِي فَأَدَارَنِي عَنْ يَمِينِهِ فَتَتَامَّتْ صَلَاتُهُ ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً ثُمَّ اضْطَجَعَ فَنَامَ حَتَّى نَفَخَ وَكَانَ إِذَا نَامَ نَفَخَ فَآذَنَهُ بِلَالٌ بِالصَّلَاةِ فَصَلَّى وَلَمْ يَتَوَضَّأْ وَكَانَ فِي دُعَائِهِ: «اللَّهُمَّ اجْعَلْ فِي قَلْبِي نُورًا وَفِي بَصَرِي نُورًا وَفِي سَمْعِي نُورًا وَعَنْ يَمِينِي نُورًا وَعَنْ يَسَارِي نُورًا وَفَوْقِي نُورًا وتحتي نورا وأمامي نورا وَخَلْفِي نُورًا وَاجْعَلْ لِي نُورًا» وَزَادَ بَعْضُهُمْ: «وَفِي لِسَانِي نُورًا» وَذُكِرَ: وَعَصَبِي وَلَحْمِي وَدَمِي وَشِعَرِي وبشري) وَفِي رِوَايَةٍ لَهُمَا: «وَاجْعَلْ فِي نَفْسِي نُورًا وَأَعْظِمْ لِي نُورًا» وَفِي أُخْرَى لِمُسْلِمٍ: «اللَّهُمَّ أَعْطِنِي نورا»
ব্যাখ্যা: (ثُمَّ تَوَضَّأَ وُضُوءًا حَسَنًا بَيْنَ الْوُضُوءَيْنِ) অতঃপর তিনি দুই উযূর মধ্যবর্তী সুন্দর অযূ করলেন। অর্থাৎ তিনি এতে পানি বেশিও ব্যবহার করেননি। আবার প্রয়োজনের চেয়ে কমও ব্যবহার করেননি। ফলে তা ছিল সুন্দর উযূ। অথবা উযূর অঙ্গগুলো দুই বার করে ধুয়েছেন। যা এক ও তিনের মধ্যবর্তী।
(وَقَدْ أَبْلَغَ) তবে পূর্ণাঙ্গরূপে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করেছেন। অর্থাৎ উযূর পানি অঙ্গসমূহের যেখানে পৌঁছানো ওয়াজিব সেখানে পৌঁছিয়েছেন কিন্তু সীমালঙ্ঘন করেনি।
(فَتَتَامَّتْ صَلَاتُه ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً) তাঁর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) তের রাক্‘আত পূর্ণ হয়েছে। অর্থাৎ এক রাক্‘আত বিতরসহ তাঁর সালাত তের রাক্‘আত হয়েছে।
(فَنَامَ حَتّى نَفَخَ) তিনি ঘুমালেন এমনকি তাঁর নাক ডাকল। অর্থাৎ তিনি স্বজোরে নিঃশ্বাস ফেলতে থাকেন ফলে তাঁর নাক ডাকার আওয়াজ শোনা গেল যেমন ঘুমন্ত ব্যক্তি থেকে শোনা যায়।
‘‘অতঃপর তিনি সালাত আদায় করলেন কিন্তু উযূ করলেন না।’’ তিনি ঘুমিয়ে নাক ডাকলেন তা সত্ত্বেও উযূ না করার কারণ এই যে, মূলত ঘুম উযূ ভঙ্গের কারণ নয় বরং অজান্তে বায়ু নির্গত হওয়ার সন্দেহ সৃষ্টি হওয়ার ফলে উযূ করার বিধান। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্তর যেহেতু জাগ্রত থাকে তা ঘুমায় না, তাই তার ঘুম এ সন্দেহমুক্ত ফলে তা উযূর মধ্যে কোন প্রভাব ফেলতে পারে না। তাই তার উযূ ও নষ্ট হয় না। এটা শুধুমাত্র নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাস। অর্থাৎ এটি তাঁর বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
এ হাদীস প্রমাণ করে যে, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) যে রাতে তার খালা মায়মূনার ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন সে রাতে তিনি তের রাক্‘আত রাতের সালাত আদায় করেছিলেন এবং এরপর দুই রাক্‘আত ফাজরের (ফজরের) সুন্নাত আদায় করেছিলেন। যদিও সে রাতে সালাতের রাক্‘আত সংখ্যা বর্ণনায় বর্ণনাকারীগণ বিভিন্ন সংখ্যা বর্ণনা করেছেন কিন্তু অধিকাংশ বর্ণনাকারীই বর্ণনা করেছেন যে, তিনি ফাজরের (ফজরের) দুই রাক্‘আত সুন্নাত ব্যতীতই তের রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছিলেন। অতঃপর দুই রাক্‘আত ফাজরের (ফজরের) সুন্নাত আদায় করেছিলেন। তাই তাদের এ বর্ণনাকেই প্রাধান্য দিতে হবে এজন্য যে, তারা অন্যান্যদের তুলনায় অধিক সংরক্ষণকারী এবং তাদের বর্ণনায় সংখ্যার আধিক্য রয়েছে যা অন্য বর্ণনাতে নেই।