পরিচ্ছেদঃ ২৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইমামতির বর্ণনা
১১১৯-[৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের যে লোক সবচেয়ে উত্তম তাঁরই আযান দেয়া উচিত। আর তোমাদের যে ব্যক্তি সবচেয়ে ভাল ক্বারী তাকেই তোমাদের ইমামতি করা উচিত। (আবূ দাঊদ)[1]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لِيُؤَذِّنْ لَكُمْ خِيَارُكُمْ وليؤمكم قراؤكم» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে ‘আমর-এর শব্দ দ্বারা মুস্তাহাব হুকুম বুঝানো হয়েছে। (خِيَارُكُمْ) থেকে উদ্দেশ্য- যারা সময়সমূহের ব্যাপারে সংরক্ষণ করে এবং হারাম ও লজ্জাস্থানসমূহের ব্যাপারে সংরক্ষণ করে। কেননা তাদেরকে সুউচ্চ মিনারের উপরে সম্মানের উপর সম্মান জানানো হবে। এ অভিমতটি সিনদীর। ক্বারী (রহঃ) বলেন, যে সর্বাধিক সততার অধিকারী হবে সে আযান দিবে যাতে যে লজ্জাস্থানসমূহ থেকে তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং সময় সম্পর্কে যথার্থভাবে সংরক্ষণ করে।
জাওহারী বলেছেন, মুয়াযযিনদেরকে সর্বোত্তম হতে হবে, এর কারণ হাদীসে মুয়াযযিনদের আমানাতদার হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। কেননা সিয়াম পালনকারী ইফত্বার, পানাহার এবং স্ত্রীর সাথে মেলামেশার বিষয়টি তাদের আযানের সাথে সম্পৃক্ত। এভাবে সালাতের সময়সমূহ সংরক্ষণের ব্যাপারে মুসল্লীর বিষয় তাদের সাথে সম্পৃক্ত। এ বিবেচনাতে তাদের ভাল ব্যক্তি হতে হবে। এ অভিমতটি ত্বীবী (রহঃ) পেশ করেছেন। হাদীসে উল্লেখিত (قراؤكم) অংশটি সকল নুসখাহ্ বা কপিতে এভাবে এসেছে। এভাবে মাসাবীহ, সুনান আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহতে এসেছে। জাযারী জামি‘উল উসূলে ষষ্ঠ খন্ডে ৩৭৭ পৃষ্ঠাতে আবূ দাঊদ হতে (ليؤمكم أقرأوكم) শব্দে বর্ণনা করছেন। এমনিভাবে ইমাম বায়হাক্বী তার কিতাবে ১ম খন্ডে ৪২৬ পৃষ্ঠাতে বর্ণনা করেছেন।
উল্লেখিত হাদীসাংশে ইমামতিতে কুরআন পাঠে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে সুন্নাহ সম্পর্কে অধিক অবগত ব্যক্তির ওপর প্রাধান্য দেয়ার উপর দলীল রয়েছে। সিনদী বলেছেন, হাদীসের বাহ্যিক দিক হল ইমামতির ক্ষেত্রে কুরআন পাঠে সর্বাধিক শ্রেয় ব্যক্তি সুন্নাহ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত ব্যক্তি অপেক্ষা বেশি অধিকার রাখে এবং ক্বারী (রহঃ) বলেছেন, যখনই কুরআন পাঠে সর্বাধিক শ্রেয় ব্যক্তির আলোচনা আসবে তখন সে ব্যক্তি সালাতের মাসআলাসমূহ সম্পর্কে জ্ঞাত হয় তাহলে সে ব্যক্তিই ইমামতিতে সর্বোত্তম ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হবে।
কেননা সালাতে সর্বোত্তম যিকর সর্বাধিক দীর্ঘ ও সর্বাধিক কঠিন বিষয় হচ্ছে ক্বিরাআত (কিরআত)। তাতে আছে আল্লাহর কালামের সম্মান প্রদর্শন এবং পাঠককে অগ্রগামীতা দান উভয় জগতে এর পাঠককে সুউচ্চ মর্যাদার দিকে ইঙ্গিত করণ; যেমন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাফনের ক্ষেত্রে কুরআন পাঠে সর্বোত্তম ব্যক্তিকে অগ্রগামীতা দানের ক্ষেত্রে নির্দেশ করতেন। (ইমাম আবূ দাঊদ একে বর্ণনা করেছেন) ইমাম ইবনু মাজাহ ও বায়হাক্বীও একে সংকলন করেছেন।
আবূ দাঊদ এ ব্যাপারে চুপ থেকেছেন। মুনযিরী (রহঃ) বলেছেন, এর সানাদে হুসায়ন বিন ‘ঈসা আল হানাফী আল কূফী আছে; তার সম্পর্কে আবূ হাতিম আর্ রাযী ও আবূ যুর‘আহ্ আর্ রাযী সমালোচনা করেছেন। ইমাম দারাকুত্বনী (রহঃ) উল্লেখ করেছেন, নিশ্চয় হুসায়ন বিন ‘ঈসা এ হাদীসটি হাকাম বিন আবান থেকে একাকী বর্ণনা করেছেন। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, আমি বলবঃ ইমাম বুখারী হুসায়ন বিন ‘ঈসাকে মাজহূল ও তার হাদীসকে মুনকার বলেছেন। আবূ যুর‘আহ্ বলে মুনকারুল হাদীস। আবূ হাতিম বলেন, সে শক্তিশালী নয়; সে হাকাম বিন আবান থেকে অনেক মুনকার হাদীস বর্ণনা করেছেন। আজুরী আবূ দাঊদ কর্তৃক বর্ণনা করেন আমার কাছে সংবাদ পৌঁছেছে নিশ্চয়ই সে দুর্বল। ইবনু হিব্বান তাকে নির্ভরশীল রাবীদের মাঝে গণ্য করেছেন (ইবনু হিব্বান রাবীদের হাদীসের ক্ষেত্রে হুকুম লাগানোতে শিথিল) হাফিয (রহঃ) তাক্বরীবে গ্রন্থে বলেছেন, তিনি দুর্বল।
পরিচ্ছেদঃ ২৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইমামতির বর্ণনা
১১২০-[৪] আবূ ’আত্বিয়্যাহ্ আল ’উক্বায়লী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মালিক ইবনু হুওয়াইরিস (সাহাবী) আমাদের মসজিদে আগমন করতেন। আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করে শুনাতেন। একদা তিনি এভাবে আমাদের মাঝে আছেন সালাতের সময় হয়ে গেল। আবূ ’আত্বিয়্যাহ্ বলেন, আমরা মালিক-এর নিকট আবেদন করলাম, সামনে বেড়ে আমাদের সালাতের ইমামতি করার জন্যে। মালিক বললেন, তোমরা তোমাদের কাউকে সামনে বাড়িয়ে দাও। সে-ই তোমাদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করাবে। আর আমি কেন সালাত আদায় করাব না কারণ তোমাদেরকে বলছি, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে লোক কোন জাতির সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে যায় সে যেন তাদের ইমামতি না করে। বরং তাদের মধ্যে কেউ ইমামতি করবে। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী; নাসায়ীও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম...... শব্দগুলো পর্যন্ত উল্লেখ করেছেন)[1]
وَعَنْ أَبِي عَطِيَّةَ الْعُقَيْلِيِّ قَالَ: كَانَ مَالِكُ بن الْحُوَيْرِث يَأْتِينَا إِلَى مُصَلَّانَا يَتَحَدَّثُ فَحَضَرَتِ الصَّلَاةُ يَوْمًا قَالَ أَبُو عَطِيَّةَ: فَقُلْنَا لَهُ: تَقَدَّمَ فَصْلُهُ. قَالَ لَنَا قَدِّمُوا رَجُلًا مِنْكُمْ يُصَلِّي بِكُمْ وَسَأُحَدِّثُكُمْ لِمَ لَا أُصَلِّي بِكُمْ؟ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ زار قوما فَلَا يؤمهم وليؤمهم رجل مِنْهُم» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ إِلَّا أَنَّهُ اقْتَصَرَ عَلَى لَفْظِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم
ব্যাখ্যা: হাদীসটি ঐ ব্যাপারে দলীল প্রদান করছে যে, মুক্বীম ব্যক্তি পর্যটক বা মুসাফিরের চেয়ে ইমামতির বেশি অধিকার রাখে যদিও মুসাফির মুক্বীমের চেয়ে কুরআন পাঠ ও সুন্নাহ সম্পর্কে বেশি জ্ঞানী হয়। হাদীসটি বর্ণনার পর ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবী ও অন্যান্য অধিকাংশ বিদ্বানদের কাছে এর উপরই ‘আমল এবং তারা বলেছেন ইমামতির ক্ষেত্রে ঘরের মালিক বা মুক্বীম মুসাফির অপেক্ষা বেশি অধিকার রাখে। কতিপয় বিদ্বান বলেছেন, মুক্বীম যখন মুসাফিরকে অনুমতি দিবে তখন মুসাফির মুক্বীমের ইমামতি করাতে কোন দোষ নেই এবং ইমাম মালিক বিন হুওয়াইরিস (রহঃ)-এর হাদীস সম্পর্কে উক্তি করছেন এতে তিনি মুসাফির ব্যক্তিকে মুক্বীম ব্যক্তির ইমামতি না করতে কঠোরতা করেছেন। যদিও (বাড়ির মালিক) মুক্বীম মুসাফিরকে অনুমতি দেয়।
তিনি বলেছেন, এমনিভাবে কোন মুসাফির ব্যক্তি কোন এলাকায় সফর করলে তাদের ইমামতি করবে না। সে বলবে যেন এলাকাবাসীর কেউ তাদের ইমামতি করে। ইমাম তিরমিযীর কথা এখানে সমাপ্ত। মাজদ ইবনু তায়মিয়্যাহ্ আল মুনতাক্বা' গ্রন্থে অধিকাংশ বিদ্বানদের থেকে হাদীসটি উল্লেখের পর বলেছেন, মুসাফির কোন স্থনের স্থায়ী বাসিন্দা কর্তৃক অনুমতি পেলে অত্র এলাকার ইমামতি করতে কোন দোষ নেই। তিনি পূর্বোক্ত আবূ মাস্‘ঊদ-এর হাদীস (إلا بإذنه) দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) এর বর্ণনাকৃত হাদীসের ব্যাপকতা একে শক্তিশালী করেছে। তাতে আছে নিশ্চয়ই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন তিন ব্যক্তি মিশক আম্বরের স্ত্তপের উপর থাকবে; এক বান্দা এমন যে আল্লাহর হক ও মুনীবের হক আদায় করেছে, দ্বিতীয় ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের ইমামতি করেছে এ অবস্থায় তারা তার প্রতি সন্তুষ্ট শেষ পর্যন্ত। ইমাম তিরমিযী একে বর্ণনা করেছেন।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন; নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে এমন ব্যক্তির জন্য অনুমতি ছাড়া কোন সম্প্রদায়ের ইমামতি করা বৈধ হবে না। ইমাম আবূ দাঊদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেছেন, আমাদের কাছে প্রাধান্যতর উক্তি হল মুক্বীম ব্যক্তি মুসাফির ব্যক্তিকে ইমামতির অনুমতি দিলে সে মুহূর্তে মুসাফিরের ইমামতি করাতে কোন দোষ নেই। মালিক বিন হুওয়াইরিস এর হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তির অর্থ হচ্ছেঃ যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে সাক্ষাৎ করতে যাবে সে তাদের ইমামতি করবে না। এ কথার মর্ম হল সে ঐ সম্প্রদায়ের অনুমতি ছাড়া ইমামতি করবে না। সা‘ঈদ বিন মানসূর এর কাছে আবূ মাস্‘ঊদ (রাঃ)-এর হাদীস এর প্রামাণ করছে। আমরা (إذنه) এর শর্ত হতে যা উল্লেখ করেছি তাকে ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর হাদীসে উল্লেখিত (وهم به راضون) এবং আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) এর হাদীসে উল্লেখিত (إلا بإذنهم) উক্তি শক্তিশালী করেছে। যেমন ইবনু তায়মিয়্যাহ্ বলেছেন, উল্লেখিত হাদীসদ্বয়ের ব্যাপকতা মুক্বীম ব্যক্তির সন্তুষ্টি ও অনুমতির ক্ষেত্রে মুসাফির ব্যক্তির ইমামতি করা জায়িয হওয়াকে দাবী করছে।
এক মতে বলা হয়েছে মালিক বিন হুওরায়রিস এর হাদীস ইমামে আ‘যাম (রাষ্ট্র প্রধান) ছাড়া অন্যান্য ইমামের ওপর প্রয়োগ হবে। সুতরাং ইমামে আ‘যাম বা তার স্থলাভিষিক্ত ব্যক্তি যখন কর্তৃত্বের আয়ত্বাধীন স্থানে উপস্থিত হবে তখন এলাকার লোক তার আগে বাড়বে না। তবে বাদশাহর উচিত হবে এলাকার লোককে ইমামতির অনুমতি দেয়া যাতে সে দু’টি অধিকার তথা অগ্রগামী হওয়ার ক্ষেত্রে ইমামের অধিকার ও বাদশাহর অনুমতি ছাড়া কর্তৃত্ব নিষেধ হওয়ার ক্ষেত্রে বাদশাহর অধিকার এর মাঝে সমন্বয় করতে পারে। (ইমাম আবূ দাঊদ একে বর্ণনা করেছেন) এবং এ ব্যাপারে তিনি চুপ থেকেছেন। (ইমাম তিরমিযীও একে বর্ণনা করেছেন) এবং বলেছেন, এটি হাসান হাদীস।
তিরমিযী এর কতক কপিতে আছে হাসান সহীহ। মুনযিরী ও শাওকানী (রহঃ) তিরমিযী থেকে যা শুধু হাসানরূপে উল্লেখ করেছেন তা প্রথমটিকে সমর্থন করেছে। আর তা তাহজীব গ্রন্থে আবূ ‘আত্বিয়্যাহ্ এর জীবনীর ক্ষেত্রে হাফিযের উক্তি থেকে বুঝা যায়; নিশ্চয়ই ইবনু খুযায়মাহ্ এর হাদীসকে সহীহ বলেছেন। যদি তিরমিযীর নুসখাতে তার নিকট তা সহীহ করণ সাব্যস্ত হত তবে তিনি অবশ্যই সেদিকে ইঙ্গিত করতেন। এ হাদীসের সানাদে আবূ ‘আত্বিয়্যাহ্ নামে একজন মাজহূল রাবী থাকা সত্ত্বেও ইমাম তিরমিযী এটিকে হাসান বলেছেন। যেমন যাহাবী, হাতিম, ইবনুল মাদীনী ও আবুল হাসান আল কাত্ত্বান বলেছেন। কারণ এর সমর্থন হাদীস আছে আর ইমাম তিরমিযী কখনো সমর্থনের কারণে দুর্বল হাদীসকে হাসান বলেন। শায়খ আহমাদ শাকির ইমাম তিরমিযীর ওপর নিজ তা‘লীক্বে আবূ হাতিম ও অন্যান্যদের উক্তির পর বলেন, তবে ইবনু খুযায়মাহ্ তার হাদীসকে সহীহ করণ, ইমাম তিরমিযী হাসান অথবা সহীহ করণ হাদীসটিকে গ্রহণযোগ্য মাসতূর বর্ণনাদ্বয়ের অন্তর্ভুক্ত করে দিচ্ছে। তার হাদীসের অনেকগুলো সমর্থন আছে।
যা পূর্বে আবূ দাঊদে উল্লেখিত আবূ মাস্‘ঊদ-এর হাদীস (ولا يؤم الرجل في بيته) এর দিকে ইঙ্গিত করছে এবং অনুরূপভাবে ত্ববারানীতে আবূ মাস্‘ঊদ-এর হাদীস ও বাযযার এবং ত্ববারানীতে ‘আবদুল্লাহ বিন হানযালাহ্ এর হাদীসের দিকে। আমরা উভয়ের শব্দকে আবূ মাস্‘ঊদ-এর হাদীসের ব্যাখ্যাতে উল্লেখ করেছি। (ইমাম নাসায়ী একে বর্ণনা করেছেন) ইমাম আহমাদ ৩য় খন্ড ৪৩৬-৪৩৭ পৃষ্ঠা ৫ম খন্ড ৫৩ পৃষ্ঠা, বায়হাক্বী ৩য় খন্ড ১২৬ পৃষ্ঠা। তবে নাসায়ী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি ‘‘তোমাদের কেউ যখন কোন সম্প্রদায়ের সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন সে যেন তাদের ইমামতি না করে’’ এর সংক্ষেপ করেছেন। হাদীসের শুরু অংশ তিনি উল্লেখ করেননি। আবূ দাঊদ-এর কিতাবে উল্লেখিত শব্দ আবূ ‘আত্বিয়্যাহ্ এর উক্তি ‘‘তিনি কথা বলতে ছিলেন অতঃপর সালাতের সময় উপস্থিত হল’’ এ অংশটুকু তিরমিযীর। আবূ দাঊদ-এর শব্দ ‘‘এ মুসাল্লা পর্যন্ত অতঃপর সালাত প্রতিষ্ঠা করা হল’’।
পরিচ্ছেদঃ ২৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইমামতির বর্ণনা
১১২১-[৫] আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা ’আবদুল্লাহ ইবনু মাক্তুমকে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের জন্যে নিজের স্থলাভিষিক্ত করে দিলেন। অথচ তিনি ছিলেন জন্মান্ধ। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: اسْتَخْلَفَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ابْنَ أُمِّ مَكْتُومٍ يَؤُمُّ النَّاس وَهُوَ أعمى. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (اسْتَخْلَفَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ ابْنَ أُمِّ مَكْتُومٍ يَؤُمُّ النَّاس) ক্বারী (রহঃ) বলেন, উল্লেখিত হাদীসাংশ থেকে খলীফাহ্ বা প্রতিনিধি বানানোর দলীল লাভ করা যায়। ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেছেন, বর্ণনানুযায়ী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’বার মদীনার সাধারণ প্রতিনিধি বানিয়েছিলেন। বিশেষ করে মানুষের ইমামতির করার জন্য তা করেছিলেন। আমীর ইয়ামানী (রহঃ) বলেছেন, উল্লেখিত খলীফাহ্ নিযুক্ত করা দ্বারা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ও অন্যান্য বিষয়ে খলীফাহ্ নিযুক্ত করা উদ্দেশ্য। ত্ববারানী এ হাদীসকে في الصلاة وغيرها (সালাত ও অন্যান্য ক্ষেত্রে) শব্দে সংকলন করেছেন, এর সানাদ হাসান।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতিনিধি নিযুক্ত করার বিষয়টি গণনায় তা ১৩ সংখ্যায় পৌঁছেছে। (وهو أعمى) শায়খ ‘আবদুল হক্ব দেহলবী আশ‘আতুল লাম্‘আত গ্রন্থে বলেছেন, উল্লেখিত হাদীসাংশে অন্ধ ব্যক্তির ইমামতি জায়িয হওয়ার ব্যাপারে দলীল রয়েছে। এতে কোন অপছন্দনীয়তা নেই। ইবনু হাজার (রহঃ) বলেছেন, এতে অন্ধ ব্যক্তির ইমামতি জায়িয হওয়ার ব্যাপারে দলীল আছে এবং এতে কোন মতানৈক্য নেই এবং চক্ষুষ্মান ব্যক্তির ইমামতি অন্ধ ব্যক্তি অপেক্ষা উত্তম নাকি উত্তম নয় এ ব্যাপারে মতানৈক্য।
শাওকানী (রহঃ) বলেছেন, আবূ ইসহাক মারওয়াযী ও গাজালী (রহঃ) স্পষ্ট করে দিয়েছেন নিশ্চয় অন্ধ ব্যক্তির ইমামতি চক্ষুষ্মান ব্যক্তি অপেক্ষা উত্তম, কেননা চক্ষুষ্মান ব্যক্তির চেয়ে অধিক বিনয়ী এজন্য যে, চক্ষুষ্মান ব্যক্তির দর্শনীয় বস্ত্ত দর্শন করায় তার মন ব্যস্ত হয়ে যায়। কতক চক্ষুষ্মান ব্যক্তির ইমামতি উত্তম হওয়াকে প্রাধান্য দিয়েছেন, কেননা সে নাপাকি হতে অধিক সতর্ক। মারওয়াযী ইমাম শাফি‘ঈর ভাষ্য হতে যা উপলব্ধি করেছেন তা হল নিশ্চয় অন্ধ ও চক্ষুষ্মান ব্যক্তির ইমামতি মাকরূহ না হওয়ার দিক দিয়ে সমান। (মর্যাদা রাখে) কেননা উভয়ের ইমামতিতে শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। তবে চক্ষুষ্মান ব্যক্তির ইমামতি সর্বোত্তম।
কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদেরকে ইমাম বানিয়েছেন তাদের অধিকাংশ চক্ষুষ্মান। অপরপক্ষে যুদ্ধে ‘আবদুল্লাহ বিন উম্মু মাকতূমকে প্রতিনিধি নিয়োগ করার কারণ হল যুদ্ধ থেকে কোন মু’মিন যেন পিছপা থাকতে না পারে একমাত্র মা’যূর ব্যক্তি ছাড়া। সম্ভবত চক্ষুষ্মানদের মধ্যে যুদ্ধ থেকে পিছপা হয়ে থাকার মতো এমন কোন লোক ছিল না, যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতিনিধি হবে। অথবা প্রতিনিধি হওয়ার জন্য অবসরে থাকবে এমন কোন লোক ছিল না। অথবা অন্ধ ব্যক্তিকে প্রতিনিধি বানানো বৈধ তা সাব্যস্ত করার জন্য তিনি এমন করেছেন। অপরদিকে ‘ইতবান বিন মালিক-এর চোখের সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তার সম্প্রদায়ের ইমামতি করা সম্ভবত তার সম্প্রদায়ের মাঝেও ইমামতির ক্ষেত্রে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিদের থেকে তার স্থানে অবস্থান করবে এমন কেউ ছিল না। ইমাম শাওকানী (রহঃ)-এর কথা এখানে শেষ হল।
আর তিনি আরো বাদায়ি' গ্রন্থে অন্ধ ব্যক্তির ইমামতি জায়িয হবে এ ব্যাপারে স্পষ্ট আলোচনার পর বলেছেন, অন্ধ ব্যক্তিকে অন্য কেউ ক্বিবলার দিকে করে দিবে ফলে অন্ধ ব্যক্তি ক্বিবলার বিষয়ে অন্যের অনুসারী হবে। কখনো সালাতের মাঝে ক্বিবলাহ্ (কিবলাহ/কিবলা) হতে অন্যদিকে ঘুরে যাবে এবং একই কারণে অপবিত্র থেকে বেঁচে থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়, সুতরাং চক্ষুষ্মান ব্যক্তি ইমামতির জন্য অন্ধ অপেক্ষা উত্তম তবে মর্যাদার ক্ষেত্রে এক ইমামের মসজিদে যখন অন্য ইমাম সমান হবে না সে মুহূর্ত ছাড়া। তখন মসজিদের নির্দিষ্ট ইমামই উত্তম হবে।
এজন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবনু উম্মু মাকতূমকে প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছিলেন। ইবনুল মালিক বলেন, অন্ধ ব্যক্তির ইমামতি কেবল ঐ মুহূর্তে অপছন্দ করা হয় যখন সম্প্রদায়ের মাঝে তার অপেক্ষা জ্ঞানবান সুস্থ ব্যক্তি থাকে অথবা জ্ঞানে তার সমান সুস্থ ব্যক্তি থাকে।
তুরবিশতী বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবূক যুদ্ধে বের হওয়ার সময় মদীনাতে ‘আলী (রাঃ) উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও ইবনু উম্মু মাকতূমকে ইমামতির ব্যাপারে প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছিলেন যাতে শত্রুপক্ষ মদীনাবাসীদের কোন ক্ষতি সাধন করলে তাদের সংরক্ষণকরণে কোন ব্যস্ততায় তাকে অন্যমনস্ক করে না দেয়। ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেছেন, বিষয়টি অন্যদিকে ঘোরারও সম্ভাবনা রয়েছে অর্থাৎ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যাপারেও যদি ‘আলী (রাঃ) প্রতিনিধি নিযুক্ত করতেন তাহলে আবূ বাকর-এর খিলাফাতের ক্ষেত্রে সমালোচক ব্যক্তি সমালোচনার পথ খুঁজে পেত। যদিও তা দুর্বল। আবূ দাঊদ একে বর্ণনা করেছেন।
আহমাদ এবং বায়হাক্বী একে সংকলন করেছেন (৩য় খন্ড ৮৮ পৃষ্ঠা) আর আবূ দাঊদ ও মুনযিরী এ ব্যাপারে চুপ থেকেছেন। ইবনু হিব্বান তার সহীহ গ্রন্থে তা সংকলন করেছেন। আবূ ইয়া‘লা ও ত্ববারানী আওসাত গ্রন্থে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) কর্তৃক। বায়হাক্বী মাজমাউয্ যাওয়ায়িদ গ্রন্থে ২য় খন্ড ৬৫ পৃষ্ঠা আবূ ইয়া‘লা ও ত্ববারানী এর দিকে বিষয়টি সম্পৃক্ত করার পর বলেছেন, আবূ ইয়া‘লা-এর রাবীগণ সহীহ-এর রাবী।
পরিচ্ছেদঃ ২৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইমামতির বর্ণনা
১১২২-[৬] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন লোকের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) কান হতে উপরের দিকে উঠে না (অর্থাৎ কবূল হয় না)। প্রথম হলো কোন মালিক-এর নিকট থেকে পলায়ন করা গোলাম যতক্ষণ তার মালিক-এর নিকট ফিরে না আসে। দ্বিতীয় ঐ মহিলা, যে তার স্বামীকে অসন্তুষ্ট রেখে রাত কাটাল। তৃতীয় হলো ঐ ইমাম, যাকে তার জাতি অপছন্দ করে। (তিরমিযী; তিনি বলেছেন, এ হাদীসটি গরীব)[1]
وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ثَلَاثَةٌ لَا تُجَاوِزُ صَلَاتُهُمْ آذَانَهُمْ: الْعَبْدُ الْآبِقُ حَتَّى يَرْجِعَ وَامْرَأَةٌ بَاتَتْ وَزَوْجُهَا عَلَيْهَا سَاخِطٌ وَإِمَامُ قَوْمٍ وَهُمْ لَهُ كَارِهُونَ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
ব্যাখ্যা: (لَا تُجَاوِزُ صَلَاتُهُمْ اذَانَهُمْ) অর্থাৎ তাদের আ‘মাল আকাশের দিকে উঠবে না যেমন ইবনু ‘আব্বাস-এর আগত হাদীসে রয়েছে আর তা আ‘মাল গ্রহণযোগ্য না হওয়ার ব্যাপারে ইঙ্গিত স্বরূপ। যা পরবর্তী হাদীসে স্পষ্ট। ইবনু হিব্বানে ইবনু ‘আব্বাস-এর হাদীসে তা রয়েছে। তুরবিশতী (রহঃ) বলেছেন, আ‘মালে সালিহ বা সৎ আ‘মাল আল্লাহর দিকে উঠানো হবে না। বরং উঠার দিক দিয়ে সর্বনিম্ন পর্যন্ত উঠবে। দু‘আ ও তিলাওয়াত কান দিয়ে প্রবেশের কারণে উক্ত হাদীসে কানকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এ অবস্থায় গ্রহণযোগ্য হয়েও সাড়া পেয়ে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছবে না। এ দৃষ্টান্ত মূলত ঐ দৃষ্টান্তের মতো যাতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) পূর্ব মুহূর্তে) দীন থেকে মানুষ দ্রুতগতিতে বেরিয়ে পড়ার হাদীসে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ তাতে আছে মানুষ কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। মূলকথা যিকর তাদের কানসমূহ অতিক্রম করবে না। এ কথা দ্বারা ‘আমল গ্রহণযোগ্য না হওয়াকে উদ্দেশ্য করেছেন।
(الْعَبْدُ الْابِقُ حَتّى يَرْجِعَ) উল্লেখিত হাদীসাংশ (الْعَبْدُ الْابِقُ) এর মাঝে পলায়নকারিণী দাসীও অন্তর্ভুক্ত। সহীহ মুসলিম, সুনানে আবূ দাঊদ ও নাসায়ীতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে জারীর বিন ‘আবদুল্লাহ আল বাজালী এর হাদীস কর্তৃক বর্ণিত আছে, যখন কোন দাস পলায়ন করবে তখন তার সালাত গ্রহণ করা হবে না। এ হাদীস বিগত হাদীসে আ‘মাল তাদের কান অতিক্রম করবে না দ্বারা তাদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) গ্রহণ করা হবে না উদ্দেশ্যকে শক্তিশালী করছে।
(وَامْرَأَةٌ بَاتَتْ وَزَوْجُهَا عَلَيْهَا سَاخِطٌ) মুল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) বলেছেন, হাদীসে এ উল্লেখিত রাগ বলতে যখন ঐ রাগ মন্দ চরিত্র, মন্দ আচরণ ও অনুগত্যের স্বল্পতার কারণে হবে। পক্ষান্তরে স্বামী অপরাধ ছাড়া স্ত্রীর উপর রাগ করলে স্ত্রীর এতে কোন গুনাহ নেই। শাওকানী (রহঃ) হাদীস সম্পর্কে বলেছেন, নিশ্চয় কোন স্ত্রী তার স্বামীকে রাগান্বিত করার ফলে স্বামী স্ত্রীর উপর রাগান্বিত হয়ে রাত্রি যাপন করা কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ এর অন্তর্ভুক্ত।
আর এ গুনাহ তখনই সাব্যস্ত হবে যখন স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর ওপর ন্যায়ভাবে রাগ করা হবে। বুখারী ও মুসলিমে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) এর হাদীসে আছে, নিশ্চয়ই আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেছেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে আপন বিছানাতে ডাকবেন অতঃপর তার স্ত্রী আসবে না, ফলে স্বামী স্ত্রীর ওপর রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রি যাপন করবে তাহলে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) সকাল অবধি ঐ স্ত্রীকে অভিসম্পাত করতে থাকবে।
(وَإِمَامُ قَوْمٍ وَهُمْ لَه كَارِهُونَ) উল্লেখিত হাদীসাংশে সম্প্রদায় কর্তৃক ইমামকে অপছন্দ করার বিষয়টি শারী‘আতের ক্ষেত্রে কোন নিন্দনীয় বিষয়ে হতে হবে আর যদি তারা এর বিপরীতে কোন বিষয়ে ইমামকে অপছন্দ করে তাহলে তা অপছন্দ হিসেবে বিবেচনা করা হবে না। ইবনুল মালিক বলেন, ইমামকে অপছন্দ করার বিষয়টি ইমামের বিদ্‘আত, পাপাচার ও মূর্খতার কারণে হতে হবে।
পক্ষান্তরে ইমাম ও প্রজাদের মাঝে যখন দুনিয়া সংক্রান্ত কোন বিষয় নিয়ে পরস্পরের মাঝে অপছন্দনীয়তা সৃষ্টি হবে বা শত্রুতা হবে তখন সে অপছন্দনীয়তার তার হুকুম উল্লেখিত হাদীসাংশের হুকুমের আওতাভুক্ত হবে না। হাদীসটি কোন ব্যক্তি সম্প্রদায়ের ইমাম হওয়াবস্থায় সম্প্রদায় তাকে অপছন্দ করতে পারে এর উপর প্রমাণ বহন করেছে।
শাওকানী (রহঃ) বলেছেন, কিছু ‘আলিমগণ (এক সম্প্রদায়) ‘কারাহাত’ শব্দ থেকে হারাম অর্থ বুঝেছেন, অন্য কিছু ‘আলিমগণ (অপর সম্প্রদায়) কারাহাতই উদ্দেশ্য করেছেন। হাদীসে বলা হয়েছে, ‘আমল তাদের কান অতিক্রম করবে না তথা সালাত কবূল হবে না; সুতরাং হাদীসে ব্যবহৃত কারাহাত হারাম অর্থের উপর প্রমাণ বহন করছে। আর হারাম অর্থের উপর প্রমাণ বহন করছে বিধায় হাদীসে কর্তাকে অভিসম্পাত করা হয়েছে। যেমন তিরমিযীতে আনাস (রাঃ)-এর হাদীসে আছে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন ব্যক্তিকে অভিসম্পাত করেছেন তাদের মাঝে এক ব্যক্তি এমন, যে তার সম্প্রদায়ের ইমামতি করে এমতাবস্থায় সম্প্রদায় তাকে অপছন্দ করে। (আল-হাদীস) তিনি বলেছেন, বিদ্বানদের একটি দল শারী‘আতী কারণ স্বরূপ দীনী কারাহাত এর সাথে শর্তযুক্ত করেছেন। পক্ষান্তরে ধর্মীয় কারাহাত বা অপছন্দনীয়তা ছাড়া অন্য কোন কারাহাত এ ব্যাপারে ধর্তব্য হবে না।
তারা বিষয়টিকে আরও শর্তারোপ করে বলেছেন, অপছন্দকারীরা মুক্তাদীদের অধিকাংশ হতে হবে। সুতরাং মুক্তাদী অনেক হলে একজন দু’জন বা তিনজনের অপছন্দনীয়তা ধর্তব্য নয়। তবে মুক্তাদী যখন দু’জন বা তিনজন হবে তখন তাদের কারাহাত বা তাদের অধিকাংশের কারাহাত বিবেচ্য। তিনি আরও বলেন, কারাহাত দীনদারদের কর্তৃক হতে হবে দীনহীনদের কারাহাত ধর্তব্য নয়। ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) ইয়াহ্ইয়া গ্রন্থে বলেছেন, দীনদার ব্যক্তি যদি কমও হয় যারা ইমামকে অপছন্দ করছে তথাপিও তাদের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে।
তিনি (রহঃ) বলেন, ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) হাদীসটির অর্থ নিয়েছেন ওয়ালী (নেতা) ছাড়া অন্য ইমামের ক্ষেত্রে। কেননা কোন বিষয়ের যারা ওয়ালী হন তাদেরকে অধিকাংশ সময় অপছন্দ করা হয়। তিনি বলেছেন, তবে হাদীসটির বাহ্যিক অর্থ ওয়ালী ও গাইরে ওয়ালী এর মাঝে পার্থক্য না করাই শ্রেয়।
পরিচ্ছেদঃ ২৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইমামতির বর্ণনা
১১২৩-[৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তিন লোকের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) কবূল হয় না। ঐ লোক যে কোন জাতির ইমাম অথচ সে জাতি তার ওপর অসন্তুষ্ট। দ্বিতীয় ঐ লোক যে সালাতে বিলম্ব করে উত্তম সময় চলে যাওয়ার পর আসে। আদায় করে আসা মর্ম হলো সালাতের মুস্তাহাব সময় চলে যাওয়ার শেষে আসে। তৃতীয় ঐ লোক যে স্বাধীন লোককে দাস বা দাসীথৈ পরিণত করে মনে করে। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ثَلَاثَةٌ لَا تُقْبَلُ مِنْهُمْ صَلَاتُهُمْ: مَنْ تَقَدَّمَ قَوْمًا وَهُمْ لَهُ كَارِهُونَ وَرَجُلٌ أَتَى الصَّلَاةَ دِبَارًا وَالدِّبَارُ: أَنْ يَأْتِيَهَا بَعْدَ أَنْ تَفُوتَهُ وَرَجُلٌ اعْتَبَدَ مُحَرَّرَةً . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: (لَا تُقْبَلُ مِنْهُمْ صَلَاتُهُمْ) আবূ দাঊদে আছে (لَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُمْ صَلَاةً) ইবনু মাজাহতে আছে (لَا يُقْبَلُ مِنْهُمْ صَلَاةٌ) বাক্যটি দ্বারা যা বুঝা যাচ্ছে তাহল সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) গ্রহণ হবে না বলতে সাওয়াব অর্জন হবে না। সালাত বা সালাতের অংশ বিশুদ্ধ হবে না তা উদ্দেশ্য নয়।
(وَهُمْ لَه كَارِهُوْنَ) শারহুস সুন্নাতে একমতে বলা হয়েছে, হাদীসে ইমাম দ্বারা অত্যাচারী ইমাম উদ্দেশ্য। পক্ষান্তরে যে ইমাম সুন্নাত প্রতিষ্ঠা করবে, অতঃপর যে ব্যক্তি তাকে অপছন্দ করবে তার উপর তিরস্কার বর্তাবে। খাত্ত্বাবী মা‘আলিম গ্রন্থে ১ম খন্ডে ১৭০ পৃষ্ঠাতে বলেছেন, এ হুমকি ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে সাদৃশ্য যে ইমামতির উপযুক্ত নয়। সুতরাং তার ইমামতির বিষয়ে ঘৃণা সৃষ্টি করতে হবে এবং তাতে বিজয়ী হলে মানুষ তার ইমামতিকে অপছন্দ করবে। পক্ষান্তরে ব্যক্তি যদি ইমামতির যোগ্য হয় তাহলে তিরস্কার ঐ ব্যক্তির ওপর বর্তাবে যে তাকে ঘৃণা করে।
(دبارًا) এমন ব্যক্তি যে সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার সময় সালাত আদায় করে ফলে সালাতের ব্যাপক সময় সে পায় না আর এটা তার অভ্যাস। ইবনু হাজার (রহঃ) বলেছেন, ব্যক্তি সালাতকে তার স্বসময়ে পায় না। জাযারী (রহঃ) বলেন, (دبارًا) হল বস্ত্তর সময়সমূহের শেষাংশ। (وَالدِّبَارُ: أَنْ يَأْتِيَهَا بَعْدَ أَنْ تَفُوتَه) অর্থাৎ ওযর ছাড়া ব্যক্তির পক্ষে জামা‘আতে সালাত আদায় করা ছুটে যাওয়া বা আদায় করা ছুটে যাওয়া। খাত্ত্বাবী বলেছেন, সালাত আদায়কারী সালাতে পরে আসার বিষয়টিকে ব্যক্তি এমনভাবে অভ্যাস হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে যে, মানুষ সালাত থেকে ফারেগ ও ফিরে যাওয়ার পর সে সালাতে উপস্থিত হয়। আর এ ব্যাখ্যাটি রাবীর পক্ষ থেকে পরিষ্কার।
(وَرَجُلٌ اعْتَبَدَ مُحَرَّرَةً) ত্বীবী (রহঃ) বলেন, স্বাধীন অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে গ্রহণ করা, অতঃপর তাকে দাস হিসেবে দাবী করা এবং তার কর্তা হওয়া। অথবা ব্যক্তি তার দাসকে আযাদ করে তার থেকে জোরমূলক খিদমাত নেয়া। অথবা উপকার ও খিদমাত গ্রহণের জন্য দীর্ঘ সময় যাবৎ দাসের মুক্তির বিষয়টি গোপন করা। ইবনু মালিক বলেছেন, হাদীস (مُحَرَّرَةً) শব্দকে স্ত্রী লিঙ্গ নিয়ে (النسمة) শব্দের উপর প্রয়োগ করা হয়েছে যাতে তা দাস দাসী উভয়কে শামিল করে। একমতে বলা হয়েছে হাদীসে (مُحَرَّرَةً)-কে খাস করা হয়েছে তার দুর্বলতার ও অক্ষমতার কারণে যা (محرر) এর বিপরীত কারণ তার ক্ষমতা রয়েছে তাকে প্রতিহত করার।
শাওকানী (রহঃ) বলেছেন, তার আযাদকারী তাকে মুক্ত করার পর আবার দাস হিসেবে গ্রহণ করা। খাত্ত্বাবী (রহঃ) বলেছেন, স্বাধীন ব্যক্তিকে দাস হিসেবে গ্রহণ করা দু’ভাবে হতে পারে প্রথমে তাকে আযাদ করা; অতঃপর তা গোপন করে রাখা অথবা অস্বীকার করা। আর দু’টি পদ্ধতির মাঝে এটি সর্বাধিক নিকৃষ্ট। দ্বিতীয় পদ্ধতি হল ব্যক্তি তাকে আযাদের পর জোরমূলক তার কাছে থেকে সেবা গ্রহণ করা অর্থাৎ ধমকের মাধ্যমে।
পরিচ্ছেদঃ ২৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইমামতির বর্ণনা
১১২৪-[৮] সালামাহ্ বিনতুল হুর্ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কিয়ামতের (কিয়ামতের) নিদর্শনসমূহের একটি নিদর্শন হলো মসজিদে হাযির সালাত আদায়কারীরা একে অন্যকে ঠেলিবে। তাদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করিয়ে দিতে পারবে এমন যোগ্য ইমাম তারা পাবে না। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَن سَلامَة بنت الْحر قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يَتَدَافَعَ أَهْلُ الْمَسْجِدِ لَا يَجِدُونَ إِمَامًا يُصَلِّي بِهِمْ» . رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: (إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ) অর্থাৎ ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) ছোট আলামত যা ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) নিকটবর্তী হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করে।
(أَنْ يَتَدَافَعَ أَهْلُ الْمَسْجِدِ) অর্থাৎ মাসজিদমুখী প্রত্যেক ব্যক্তি ইমামতিকে নিজ হতে অন্যের দিকে সম্বন্ধ করবে এবং বলবে, আমি এর যোগ্য না যা দ্বারা ইমামতি বিশুদ্ধ হবে তা শিক্ষা করা বর্জন করার কারণে এবং সালাতে যা জায়িয হবে এবং যা জায়িয হবে না ঐ ব্যাপারে অজ্ঞ থাকার কারণে।
(لَا يَجِدُونَ إِمَامًا يُصَلِّي بِهِمْ) অর্থাৎ ইমামতিকে গ্রহণ করবে এমন লোক পাওয়া যাবে না। (মুসল্লীবৃন্দ পাবেন না) উপরন্তু এমন ব্যক্তি পাওয়া যাবে না যে মানুষকে নিয়ে সালাতের রুকন, ওয়াজিব, সুন্নাত ও মানদূবসমূহ আদায়ের মাধ্যমে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে। একমতে বল হয়েছে মাসজিদমুখী প্রত্যেক ব্যক্তি ইমামতিকে অন্য থেকে নিজের দিকে টেনে আনবে। ফলে এর মাধ্যমে পারস্পরিক মতানৈক্য সৃষ্টি হবে। ফলে তা ইমাম না পাওয়ার দিকে ঠেলে দিবে।
ইবনু মাজাহ ও আহমাদের এক বর্ণনার শব্দ, মানুষের কাছে এমন কাল আসবে যখন মানুষ এমন সময়ে অবস্থান করবে যে, তাদেরকে নিয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করানোর মতো ইমাম তারা পাবে না। হাদীসটি সম্পর্কে আবূ দাঊদ ও মুনযিরী চুপ থেকেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইমামতির বর্ণনা
১১২৫-[৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের ওপর প্রত্যেক নেতার সঙ্গে চাই সে সৎ ’আমলদার হোক কি বদকার, জিহাদ করা ফরয। যদি সে কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহও করে। প্রত্যেক মুসলিমের পেছনে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা তোমাদের জন্যে আবশ্যক। (সে সালাত আদায়কারী) সৎ ’আমলদার হোক কি বদকার। যদি সে কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহও করে থাকে। সালাতে জানাযাও প্রত্যেক মুসলিমদের ওপর ফরয। চাই সে সৎ কর্মশীল হোক কি বদকার। সে গুনাহ কাবীরাহ্ (কবিরা) করে থাকলেও। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: «الْجِهَادُ وَاجِبٌ عَلَيْكُمْ مَعَ كُلِّ أَمِيرٍ بَرًّا كَانَ أَوْ فَاجِرًا وَإِنْ عَمِلَ الْكَبَائِرَ. وَالصَّلَاةٌ وَاجِبَةٌ عَلَيْكُمْ خَلْفَ كُلِّ مُسْلِمٍ بَرًّا كَانَ أَوْ فَاجِرًا وَإِنْ عَمِلَ الْكَبَائِرَ. وَالصَّلَاةٌ وَاجِبَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ بَرًّا كَانَ أَوْ فَاجِرًا وَإِنْ عَمِلَ الْكَبَائِرَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (الْجِهَادُ وَاجِبٌ عَلَيْكُمْ) অর্থাৎ জিহাদ এক অবস্থাতে ফারযে আইন আরেক অবস্থাতে ফারযে কিফায়াহ্।
(مع كل أمير) অর্থাৎ প্রত্যেক মুসলিম নেতা যে কাজের কর্তৃত্বকারী অথবা দায়িত্বশীল। (بَرًّا كَانَ أَوْ فَاجِرًا) কেননা আল্লাহ দীনকে কখনো পাপী লোকের মাধ্যমে শক্তিশালী করবেন। আর পাপীর গুনাহ তার নিজের ওপর বর্তাবে। পূর্বের এ বর্ণনাকে আরো শক্তিশালী করেছে ঐ হাদীস যা আনাস (রাঃ) থেকে মারফূ' সূত্রে বর্ণনা করা হয়েছে। তাতে রয়েছে আল্লাহ যেদিন থেকে আমাকে নুবূওয়্যাত দিয়েছেন সেদিন থেকে নিয়ে আমার উম্মাতের শেষ লোকেরা দাজ্জালের বিরুদ্ধে লড়াই করা পর্যন্ত জিহাদ অব্যাহত থাকবে।
কোন অত্যাচারকারীর অত্যাচার ও ন্যায় বিচারকারীর ন্যায় বিচার তাকে বাতিল (ধ্বংস) করতে পারবে না। এটাকে আবূ দাঊদ এক হাদীসে সংকলন করেছেন এবং হাদীসটির ব্যাপারে তিনি ও মুনযিরী চুপ থেকেছেন। ইবনু হাজার আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর এক হাদীসে বলেছেন, নেতা পাপী অত্যাচারী হওয়া বৈধ এমতাবস্থায় নেতা পাপ ও অত্যাচার থেকে আলাদা হবে না। এ ধরনের নেতা যতক্ষণ অবাধ্যতার ব্যাপারে নির্দেশ না দিবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার আনুগত্য করা আবশ্যক। অত্যাচারের উপর সালাফদের একটি দলের পৃথক হওয়ার (বিদ্রোহ) বিষয়টি স্বীকৃত ছিল যখন অত্যাচারের উপর নেতা আবির্ভাবের বিষয়টি হারামের উপর স্বীকৃতি লাভ করেনি।
(وَإِنْ عَمِلَ الْكَبَائِرَ) এভাবে প্রাপ্ত সকল কপিতে আছে এভাবে মাসাবীহ গ্রন্থেও আছে তবে এ অতিরিক্তাংশ সুনানে আবূ দাঊদে নেই। মাজদ ইবনু তায়মিয়্যাহ্ তাঁর মুনতাক্বা‘ গ্রন্থে এবং যায়লা‘ঈ তাঁর নাসবুর রায়াহ গ্রন্থের ২য় খন্ডে ২৭ পৃষ্ঠাতে আর তা বায়হাক্বী এর বর্ণনাতেও আসেনি।
(وَالصَّلَاةُ وَاجِبَةٌ عَلَيْكُمْ) ক্বারী (রহঃ) বলেছেন, অর্থাৎ জামা‘আত সহকারে আর তা সুন্নাত তথা খবরের আহাদ দ্বারা প্রমাণিত হওয়াতে ফারযে ‘আমলী হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে; ই‘তিক্বাদী হিসেবে নয়। ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেছেন, তা ফারযে কিফায়াহ্ হিসেবে সাব্যস্ত ফারযে আইন নয়। তা ইসলামের চূড়ান্ত প্রতীকী অবস্থানে রয়েছে।
তা বড় বড় সালাফদের পথ। কেননা এ পথ অবলম্বন এমন এক দিকে পৌঁছিয়ে দিবে যে, যদি এক ব্যক্তি শহরে ইমামের সাথে জামা‘আতে সালাত আদায় করে তাহলে সকলের উপর থেকে জামা‘আতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের ফারযিয়াত আদায় হয়ে যাবে।
ত্বীবী (রহঃ) বলেন, প্রথম ক্বারীনাহ্ (আলামত) মুসলিমদের ওপর জিহাদ আবশ্যক হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করেছে। অপরদিকে পাপী ব্যক্তি নেতা হওয়ার বৈধতার উপর প্রমাণ বহন করছে। দ্বিতীয় ক্বারীনাটি জামা‘আত সহকারে সালাত আদায় আবশ্যক হওয়া ও পাপী ব্যক্তি ইমাম হওয়ার বৈধতার উপর প্রমাণ বহন করেছে, এটাই এ হাদীসের বাহ্যিক দিক। যে ব্যক্তি জামা‘আতে সালাত আদায় ফারযে আইন না হওয়ার উপর উক্তি করেছে সে একে জিহাদের মতো একে ফারযে কিফায়াহ্ হওয়ার দিকে ব্যাখ্যা করেছে। এমতাবস্থায় সে যা দাবী করেছে তা প্রমাণে দলীল পেশ করা তার ওপর আবশ্যক।
(خَلْفَ كُلِّ مُسْلِمٍ) ইমাম হতে চাইলে তাকে মুসলিম হতে হবে।
(بَرًّا كَانَ أَوْ فَاجِرًا وَإِنْ عَمِلَ الْكَبَائِرَ) ইবনু মালিক বলেছেন, অর্থাৎ মুসলিম ইমামের পিছনে তোমাদের অনুসরণ করা বৈধ। তা মূলত হাদীসে পুণ্যবান ও পাপী উভয়কে উল্লেখ করণে তাদের পারস্পারিক অংশীদারীত্বের কারণে প্রায়োগিক ওয়াজিব শব্দটি জায়িয অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে বিধায় আর এটা পাপী ব্যক্তির পিছনে সালাত আদায় বৈধ হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করছে।
অনুরূপভাবে বিদ্‘আতীর পিছনে সালাত আদায় বৈধ হবে আর ঐ সময় বিদ্‘আতী যা বলে তা যখন কুফর হিসেবে সাব্যস্ত হবে না। ক্বারী (রহঃ) বলেন, আমাদের কাছে পাপী এবং বিদ্‘আতীর পিছনে সালাত আদায় মাকরূহ হওয়া সত্ত্বেও পাপী ব্যক্তির পিছনে রসূলের সালাত আদায়ের নির্দেশ জামা‘আতে সালাত আদায় ওয়াজিব হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করছে। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, আমি বলবঃ বিদ্‘আতী ও পাপী ব্যক্তির ইমামতির ক্ষেত্রে মতানৈক্য করা হয়েছে। যার পিছনে সালাত আদায় করা হবে তার ‘আদালাত (বিশ্বস্ততা) সম্পন্ন হওয়াকে ইমাম মালিক (রহঃ) শর্ত করেছেন এবং তিনি বলেছেন, পাপীর ইমামতি সহীহ হবে না। তবে শাফি‘ঈ ও হানাফীগণ পাপীর ইমামতি বিশুদ্ধ হওয়ার উপর মত পোষণ করেছেন। ‘আয়নী (রহঃ) বলেছেন, খারিজী ও বিদ্‘আতপন্থীদের পিছনে সালাত আদায়ের ব্যাপারে বিদ্বানগণ মতানৈক্য করেছেন।
অতঃপর তাদের একদল তা বৈধ বলেছেন। যেমন ‘আবদুল্লাহ বিন ‘উমার (রাঃ) তিনি হাজ্জাজ বিন ইউসুফ-এর পিছনে সালাত আদায় করেছেন। অনুরূপভাবে ইবনু আবী লায়লা ও সা‘ঈদ বিন জুবায়র। নাখ্‘ঈ (রহঃ) বলেন, তারা পূর্ববর্তী অনুসারীগণ আমীর (ইমাম) যে কেউ হোক না কেন তাদের পিছনে সালাত আদায় করতেন। আশহুব মালিক থেকে বর্ণনা করেন আমি ইবাযী ও ওয়াসিলিয়্যাহদের পিছনে সালাত আদায় করা পছন্দ করি না। তাদেরসাথে এক শহরে বসবাস করাও পছন্দ করি না। ইবনুল ক্বাসিম (রহঃ) বলেন, যে বিদ্‘আতপন্থীর পিছনে সালাত আদায় করে সময় থাকলে আমি তার সালাত দোহরানোর বিষয়টি ভেবে থাকি। আসবাগ বলেন, সে সর্বদা তা দোহরাবে। সাওরী ক্বদারিয়্যাহ্-এর (ব্যক্তির) ব্যাপারে বলেছেন, তোমরা তাকে ইমামতিতে এগিয়ে দিবে না।
আহমাদ বিন হাম্বাল (রহঃ) বলেন, প্রবৃত্তির পূজারী যখন প্রবৃত্তির দিকে আহবান করবে তখন এ ধরনের ব্যক্তির পেছনে সালাত আদায় করা যাবে না। আর যে ব্যক্তি জাহমিয়্যাহ্, রাফিযিয়্যাহ্ ও ক্বদারিয়্যাদের পিছনে সালাত আদায় করবে সে তার সালাত দোহরাবে। আমাদের সাথীবর্গ বলেছেন, প্রবৃত্তি ও বিদ্‘আতের অনুসারী এদের পেছনে সালাত আদায় মাকরূহ মনে করা হয়। আর জাহমিয়্যাহ্, রাফিযিয়্যাহ্ ও ক্বদারিয়্যাদের পেছনে সালাত জায়িয হবে না, কেননা তারা এ ‘আক্বীদাহ্ পোষণ করে থাকে নিশ্চয় কোন কিছু সংঘটিত হওয়ার পূর্বে আল্লাহ কিছুই জানে না, আর তা কুফর। অনুরূপ মুশাব্বিহা ও যারা কুরআন সৃষ্টি হওয়ার ব্যাপারে উক্তি করে থাকে তাদের পেছনে সালাত জায়িয হবে না। আবূ হানীফাহ্ বিদ্‘আতপন্থীর পেছনে সালাত আদায় করার ব্যাপারে মত পোষণ করতেন না।
অনুরূপ আবূ ইউসুফ সম্পর্কে বর্ণিত, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কর্তৃক পাপী ব্যক্তি যেমনঃ যিনাকারী, মদ্যপানকারী ইবনুল হাবীব এ ব্যাপারে দাবি করনে যে ব্যক্তি মদ্যপানকারীর পেছনে সালাত আদায় করবে সে তার সালাতকে সর্বদা দোহরাবে। তবে সে যদি ওয়ালী হয় তাহলে আলাদা কথা। অন্য বর্ণনাতে আছে বিশুদ্ধ হবে। ‘মুহীত্ব’-এ আছে, যদি কেউ পাপী অথবা বিদ্‘আতপন্থীর পিছনে সালাত আদায় করে সে জামা‘আতের সাওয়াব পেয়ে যাবে তবে আল্লাহভীরু ব্যক্তির পেছনে যে সালাত আদায় করবে তার সাওয়াবের মতো সে লাভ করতে পারবে না। মাবসূত্ব গ্রন্থে আছে, বিদ্‘আতপন্থীর অনুকরণ করা মাকরূহ।
তবে ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, আমার কাছে হক হল জামা‘আতের সালাত ও মুক্তাদীদের সালাত বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য সালাতের ইমামের জন্য আদালত শর্ত করা যাবে না। তবে পাপীকে ইমামতির জন্য এগিয়ে দেয়া যাবে না। অনুরূপভাবে এমন বিদ্‘আতপন্থীকে যার বিদ্‘আত ইমামতিকে অস্বীকার করে না, কেননা তাকে ইমামতির জন্য আগে বাড়িয়ে দেয়াতে তাকে সম্মান প্রদর্শন করা হয় বিধায় তাকেও ইমামতির জন্য আগে বাড়ানো যাবে না। তাকে শারী‘আতগতভাবে অপমান করা আবশ্যক। কেননা পাপী দীনের বিষয়কে গুরুত্ব দেয় না। কেননা ইমামতি আমানাত অধ্যায়ের আওতাভুক্ত আর পাপী সে আমানাতের খিয়ানাতকারী। আর ইমামতি শ্রেষ্ঠত্বের উপর নির্ভর করে, কেননা মানুষ পাপী ও বিদ্‘আতপন্থীর পিছনে সালাতে উৎসাহ প্রকাশ করে না। (উৎসাহ হারিয়ে ফেলে)
এমনকি এ ধরনের ব্যক্তিদ্বয়ের ইমামতি জামা‘আতে সালাত আদায় থেকে মানুষকে ভিন্নমুখী ও জামা‘আতে লোক কম হওয়ার দিকে ধাবমান করে। আর এটা মাকরূহ। অপর কারণ হল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ তোমরা তোমাদের উত্তম লোকগুলোকে তোমাদের ইমাম বানও কেননা তারা তোমাদের ও তোমাদের রবের মাঝে প্রতিনিধি স্বরূপ। ইমাম দারাকুতনী একে তার কিতাবে ১৯৭ পৃষ্ঠাতে বায়হাক্বী তার কিতাবে ৩য় খন্ডে ৯০ পৃষ্ঠাতে ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর হাদীস কর্তৃক বর্ণনা করেছেন; বায়হাক্বী বলেছেন, এর সানাদ দুর্বল।
‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেছেন, আমি বলবঃ এর সানাদে হুসায়ন বিন নাসর আল মুআদ্দাব আছে। ইবনুল ক্বাত্তান বলেন, তাকে চেনা যায় না। এর মাঝে সুলায়মান সালাম বিন আল মাদায়িনীও রয়েছে, ইমাম শাওকানী বলেনঃ দুর্বল। পাপী ও বিদ্‘আতপন্থীতে ইমামতিতে এগিয়ে না দেয়ার অপর কারণ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) যদি আল্লাহর কাছে গ্রহণ হওয়া তোমাদের ভাল লাগে তাহলে তোমাদের মাঝে সর্বোত্তম ব্যক্তিগণ যেন তোমাদের ইমামতি করে।
ইমাম হাকিম একে কিতাবুল ফাযায়িলের ৪র্থ খন্ডে মারসাদ আল গানবির হাদীস কর্তৃক ২২২ পৃষ্ঠাতে সংকলন করেন এবং এর ব্যাপারে তিনি চুপ থেকেছেন। ত্ববারানীও একে বর্ণনা করেছেন, দারাকুত্বনীও তার কিতাবে ১৯৭ পৃষ্ঠাতে একে সংকলন করেছেন। তবে ত্ববারানী এ কথাটুকুও উল্লেখ করেছেন, তোমাদের মাঝে যারা বিদ্বান তারা যেন তোমাদের ইমামতি করে, তাতে ‘আবদুল্লাহ বিন মূসা আছে। দারাকুত্বনী বলেছেন, দুর্বল। আর তাতে ক্বাসিম বিন আবী শায়বাও আছে।
ইবনু মা‘ঈন তাকে দুর্বল বলেছেন। অপর কারণ আবূ দাঊদ সায়িব বিন খাল্লাদ থেকে যা বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাটির ব্যাপারে আবূ দাঊদ ও মুনযিরী উভয়ে চুপ থেকেছেন। সে বর্ণনাতে আছে নিশ্চয় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক লোককে সম্প্রদায়ের ইমামতি করতে দেখলেন; অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে ক্বিবলার দিকে থুথু ফেলতে দেখে সালাত থেকে সালাম ফিরানোর পর বললেন, এ লোকটি তোমাদের ইমামতি করবে না। এরপর লোকটি ইমামতি করতে চাইলে সম্প্রদায় তাকে ইমামতি করতে বাধা দিলেন এবং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস সম্পর্কে তাকে তারা খবর দিল। অতঃপর লোকটি প্রাপ্ত সংবাদ রসূলের কাছে উল্লেখ করলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। রাবী বলেন, আমি মনে করি তিনি তাকে বলেছেন, নিশ্চয়ই তুমি আল্লাহ ও তাঁর রসূল কে কষ্ট দিয়েছ।
অপর কারণ ‘আলী (রাঃ) হতে মারফূ, সূত্রে যা বর্ণনা করা হয়েছে তা; তাতে আছে দীনের ব্যাপারে দুঃসাহস প্রকাশকারী যেন তোমাদের ইমামতি না করে। ইমাম শাওকানী এটা তার নায়লুল আওতারে বিনা সানাদে উল্লেখ করেছেন। আল্লামা ক্বাননুজী দালীলুত্ ত্বলিবে ৩৩৯ পৃষ্ঠাতে বলেন, তা মুরসাল। আর এক কারণ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি কোন পাপী যেন কোন মু’মিন ব্যক্তির ইমামতি না করে তবে বাদশাহ কর্তৃক তাকে হুমকি দেয়াতে সে বাদশাহর তরবারি বা ছড়ির ভয় করলে আলাদা কথা।
ইমাম ইবনু মাজাহ একে জুমু‘আর সালাতের ক্ষেত্রে জাবির (রাঃ)-এর হাদীস কর্তৃক বর্ণনা করেন। তার সানাদে ‘আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আল আদাবী আত্ তামীমী আর সে তাআল্লুফ তথা লেখনির দিক দিয়ে অন্য ব্যক্তির নামের সাথে সাদৃশ্য। বুখারী, আবূ হাতিম ও দারাকুত্বনী বলেছেন, সে মুনকারুল হাদীস। এভাবে অনেকে আরও সমালোচনা করেছেন। সুতরাং পাপী বিদ্‘আতকারী ব্যক্তিকে ইমামতির জন্য এগিয়ে দেয়া যাবে না আর তা মূলত আবূ উমামাহ্ ও ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আমর বিন ‘আস-এর হাদীসের কারণে এবং তাদের হাদীসের অনুকূল আরও যত হাদীস আছে যে হাদীসগুলো ব্যক্তিকে সম্প্রদায় অপছন্দ করাবস্থায় ব্যক্তির ইমামতি করা হারাম সাব্যস্ত হওয়ার উপর প্রমাণ করে।
যদি পাপী ও বিদ্‘আতী ইমামতির জন্য এগিয়ে যায় তাহলে সম্প্রদায়ের ওপর ওয়াজিব তাদের উভয়কে ইমামতির থেকে বাধা দেয়া। যদি তারা তাকে ইমামতি করা হতে বাধা দিতে বা ইমামতির স্থান থেকে অপসারণ করতে অক্ষম হয় তখন মাকরূহ হওয়া সত্ত্বেও তাদের উভয়ের পেছনে সালাত আদায় বৈধ হবে। (অর্থাৎ প্রয়োজনের খাতিরে তাদের উভয়ের পেছনে সালাত আদায় বৈধ হবে।) আর তা হলে তাদের উভয়কে ইমামতি থেকে বাধা দিলে এবং অপসারণ করলে ফেৎনার আশংকা করা। আরও প্রয়োজন বলতে জামা‘আত ছুটে যাওয়ার ক্ষেত্রে পাপী ও বিদ্‘আতীর পেছনে সালাত আদায় করা বিশুদ্ধ হবে। এমতাবস্থায় মুক্তাদী জামা‘আতের সাওয়াব পাবে তবে আল্লাহভীরু ব্যক্তির পেছনে সালাত আদায় করলে যে সাওয়াব পেত তা সে পাবে না।
মোদ্দা কথা পাপী ও বিদ্‘আতীর পেছনে যে ব্যক্তি সালাত আদায় করবে তার সালাত নষ্ট হবে না। আর তা মুক্তাদীর সালাত বিশুদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে ইমামকে আদেল হতে হবে এমন দলীল না পাওয়ার কারণে। অপরদিকে এ ধরনের ব্যক্তিদ্বয়ের পেছনে অনুকরণ করা বৈধ হওয়ার কারণে, কেননা সালাত বৈধ হওয়া সালাতের আরকানসমূহ আদায় করার সাথে সম্পৃক্ত। অথচ উল্লেখিত ব্যক্তিদ্বয় আরকানসমূহ আদায়ের ব্যাপারে সক্ষম। অপর কারণ পাপী বিদ্‘আতীর সালাত কবূল না হওয়া তাদের অনুসরণ করা বৈধ না হওয়াকে আবশ্যক করে না এবং তাদের কারণে মুক্তাদী এর সালাত কবূল না হওয়াকে আবশ্যক করে না উপরন্তু তাদের সালাত নষ্ট হওয়াকেও আবশ্যক করে না। কেননা নিন্দা এবং হুমকি কেবল ঐ ইমামের দিকে বর্তাবে যাকে ও যার ইমামতিকে মানুষ অপছন্দ করে; বিষয়টি মুক্তাদীদের দিকে বর্তাবে না। যেমন তা প্রকাশমান। আর কেননা যার সালাত তার নিজের জন্য বিশুদ্ধ হবে তা অন্যের জন্যও বিশুদ্ধ হবে অর্থাৎ তার ইমামতি বিশুদ্ধ হবে ও তার অনুকরণ করাও জায়িয হবে। পাপী ও বিদ্‘আতকারীর পেছনে সালাত বিশুদ্ধ হওয়ার আরেকটি কারণ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি; ব্যক্তি অপর ব্যক্তির কর্তৃত্বের স্থানে যেন অপর ব্যক্তির ইমামতি না করে।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর এ হাদীসসহ আরও অনেক হাদীস যা প্রত্যেক পাপী ও পুণ্যবান ব্যক্তির পেছনে সালাত বিশুদ্ধ হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করে তবে সে হাদীসসমূহ দুর্বল। অপর কারণ ইমাম বুখারী (রহঃ) তার তারীখে যা বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম বায়হাক্বী তার গ্রন্থে ৩য় খন্ডে ১২২ পৃষ্ঠাতে ‘আবদুল কারীম আল বুকা থেকে যা বর্ণনা করেছেন। ‘আবদুল কারীম আল বুকা বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দশজন সাহাবীর সাক্ষাৎ পেয়েছি তাদের প্রত্যেকেই অত্যাচারী ইমামদের পেছনে সালাত আদায় করতেন।
শাওকানী (রহঃ) বলেন, ‘আবদুল কারীমের রিওয়ায়াত দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না। মীযান গ্রন্থে তার ব্যাপারে আলোচনা পূর্ণতা পেয়েছে। তবে অত্যাচারীদের পেছনে সালাত আদায় বিশুদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে প্রথম যুগের ইজমা এর পন্ডিত অবশিষ্ট সাহাবী ও তাবি‘ঈগণ কর্মগতভাবে ইজমাতে পৌঁছেছে। অপরদিকে উক্তিগতভাবেও একমত (ইজমা) সংঘটিত হওয়া অসম্ভব নয়, কেননা ঐ যুগসমূহে আমীরগণ তারাই পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের ইমাম ছিল। তখন মানুষের আমীরগণ ছাড়া কেউ তাদের ইমামতি করত না। প্রত্যেক শহরের আমীর তাদের ইমামতি করত। তখন উমাইয়্যাহ্ বংশের শাসন ছিল।
তাদের অবস্থা ও তাদের আমীরদের অবস্থা কারো কাছে গোপন নয়। ইমাম বুখারী ‘আবদুল্লাহ বিন ‘উমার (রাঃ) সম্পর্কে সংকলন করেন, নিশ্চয় তিনি হাজ্জাজ বিন ইউসুফের পেছনে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। ইমাম মুসলিম ও সুনান গ্রন্থকারগণ সংকলন করেন নিশ্চয় আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী মারওয়ান-এর পেছনে ঈদের সালাত আদায় করেছেন যে ঈদে মারওয়ান কর্তৃক ঈদের খুৎবাহকে সালাতের আগে নিয়ে আসার কথা আছে। আর মারওয়ান কর্তৃক এ আচরণের কারণ মূলত যা হাদীসে প্রমাণিত হয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংবাদ দিয়েছেন, উম্মাতের মাঝে এমন কিছু আমীর হবে যারা সালাতকে (মেরে নষ্ট করবে) ফেলবে এবং সালাতের নির্ধারিত সময় ছাড়া অন্য সময়ে তা আদায় করবে তখন সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রসূল! তখন আমাদেরকে কি করতে নির্দেশ করছেন?
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা সময়মত সালাত আদায় করবে এবং সম্প্রদায়ের সাথে তোমাদের সালাতকে তোমরা নফল হিসেবে ধরবে। ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে, যে ব্যক্তি সালাতকে মেরে ফেলবে (নষ্ট করবে) এবং তা নির্দিষ্ট সময় ছাড়া অন্য সময় আদায় করবে সে ব্যক্তি ন্যায়বান ব্যক্তি নয়।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ধরনের ব্যক্তির পেছনে নফল হিসেবে সালাত আদায়ের অনুমতি দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে নফল ও ফারযের (ফরযের/ফরজের) মাঝে কোন পাথর্ক্য নেই। আমীর ইয়ামানী এ হাদীসটি উল্লেখের পর বলেন, তাদের পেছনে সালাত আদায়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে এবং ঐ সালাতকে নফল হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। কেননা তারা এ সালাতকে তার স্ব সময় হতে বের করে দিয়েছে।
এর ব্যাখ্যা হচ্ছে তারা যদি এ সালাতকে তার স্ব সময়ে আদায় করত তাহলে সে তাদের পেছনে ফরয হিসেবে সালাত অদায়ের নির্দেশপ্রাপ্ত হত। অপর কারণ ‘আলী (রাঃ) হতে যা বর্ণিত হয়েছে, তার নিকট ক্বওমের কিছু লোক একজন ব্যক্তিকে নিয়ে আসলেন। তারা বলল, নিশ্চয় এ লোকটি আমাদের ইমামতি করে আর আমরা তাকে অপছন্দ করি তখন ‘আলী (রাঃ) ঐ লোকটিকে বলল, নিশ্চয় তুমি বিষয়সমূহে নির্যাতিত অথবা তোমার কাজে তুমি অত্যাচারী এ অবস্থায় তুমি তোমার সম্প্রাদায়ের ইমামতি করবে যে, তারা তোমাকে অপছন্দ করে। অত্র হাদীসে যদিও ‘আলী (রাঃ) লোকটিকে ইমামতির ব্যাপারে তিরস্কার করেছেন কিন্তু সম্প্রদায়কে তার অনুসরণ করা থেকে বারণ করেননি এবং তাদেরকে সালাত দোহরানোর ব্যাপারে নির্দেশ দেননি।
ফলকথা: ইমামতির জন্য এগিয়ে যাওয়া পাপী ও বিদ্‘আতীর জন্য হারাম কোন সম্প্রদায়ের জন্য বৈধ হবে না এমন ব্যক্তিকে ইমামতির জন্য এগিয়ে দেয়া। এ ধরনের ব্যক্তিকে ইমামতিতে বাধা দেয়া ও ইমামতির স্থান থেকে অপসারণ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যদি সম্প্রদায় এ ধরনের ব্যক্তিকে ইমামতির জন্য এগিয়ে দেয় তাহলে তারা পাপী সাব্যস্ত হবে তবে এ ধরনের ব্যক্তির পেছনে সালাত মাকরূহে তাহরীমী হওয়া সত্ত্বেও জামা‘আত বিশুদ্ধ হবে। এমতাবস্থায় মুক্তাদীদের সালাত বিশুদ্ধ না হওয়ার উপর প্রমাণ না থাকাতে সালাত নষ্ট হবে না। আর যদি তারা এ ধরনের ব্যক্তিকে ইমামতি থেকে বাধা দিতে ও সে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করতে অক্ষম হয় এবং অন্য মসজিদে যাওয়ার মাধ্যমে অন্য ইমামের পেছনে সালাত অদায় সম্ভব হয় তাহলে তা করাই উত্তম।
অন্যথায় একাকী সালাত আদায় করা অপেক্ষা ইমামের অনুসরণ করাটাই উত্তম এবং ইমামের পেছনে মুক্তাদীদের সালাত বৈধ। তবে মাকরূহ থেকে মুক্ত নয় অর্থাৎ তারা জামা‘আতের সাওয়াব পেয়ে যাবে তবে যে ব্যক্তি মুত্তাক্বীর পেছনে সালাত আদায় করবে তার সাওয়াবের মতো সে অর্জন করতে পারবে না।
(وَالصَّلَاةُ وَاجِبَةٌ عَلى كُلِّ مُسْلِمٍ) অর্থাৎ জানাযার সালাত ফারযে কিফায়াহ্ যা প্রত্যেক এমন মৃত মুসলিমের ওপর আদায় করতে হবে বাহ্যিক দৃষ্টিতে যে মুসলিম।
(بَرًّا كَانَ أَوْ فَاجِرًا) উল্লেখিত অংশে প্রমাণ রয়েছে এমন ব্যক্তি যে মুসলিম অবস্থায় মারা গেছে তার ওপর জানাযার সালাত অদায় করা হবে যদিও সে পাপী হয়। এ মতটি পোষণ করেছেন ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ, আবূ হানীফাহ্ ও জমহূর ‘আলিমগণ।
ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, ক্বাযী বলেন, সকল বিদ্বানদের মাযহাব হল প্রত্যেক মুসলিম, শারী‘আতী হাদ্দ প্রয়োগকৃত, রজম করা হয়েছে এমন ব্যক্তি, আত্মহত্যাকারী ও জারয সন্তানের ওপর জানাযার সালাত আদায় করা হবে। তবে ফাতাওয়াটির সমালোচনা করা হয়েছে। যুহরী বলেন, রজম করা হয়েছে এমন ব্যক্তির ওপর জানাযার সালাত আদায় করা হবে না। ক্বাতাদাহ্ বলেন, জারয সন্তানের ওপর জানাযার সালাত আদায় করা হবে না। ‘উমার বিন ‘আবদুল ‘আযীয ও আওযা‘ঈ (রহঃ) বলেন, পাপীর জানাযার সালাত আদায় করা হবে না। আবূ হানীফাহ্ অত্যাচারকারী ও যোদ্ধাবাজের ব্যাপারে তাদের উভয়ের অনুরূপ মত ব্যক্ত করেছেন।
ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) তাঁর এক উক্তিতে চোরের ব্যাপারে উভয়ের অনুরূপ করেছেন। তবে হক কথা হল, যে ব্যক্তি কালেমা শাহাদাত পাঠ করবে তার জন্য ততটুকু অধিকার থাকবে যা একজন মুসলিম ব্যক্তির রয়েছে। আর সে অধিকারসমূহের একটি জানাযার সালাত। কেননা জানাযার সালাতের শারী‘আত সম্মত হওয়ার ব্যাপকতাকে কোন কালেমা শাহাদাত পাঠকারীর সাথে দলীল ছাড়া নির্দিষ্ট করা যাবে না। হ্যাঁ, তবে ইমাম এমনিভাবে বিদ্বান, নিষ্ঠাবান, আল্লাহভীরু এদের জন্য মুস্তাহাব হবে ফাসিক্বের ওপর জানাযার সালাত ছেড়ে দেয়া। আরও বিশেষভাবে সালাত বর্জনকারী, ঋণী, আত্মসাৎকারী ও আত্মহত্যাকারী এদের উপর উল্লেখিত সৎ ব্যক্তিদের জানাযার সালাত ছেড়ে দেয়া আর এটা মানুষকে ধমক স্বরূপ। আর এ ধরনের মাসআলার উপর প্রমাণ করছে আত্মসাৎকারী, ঋণী এদের ওপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত আদায় করা থেকে বিরত থাকা ও এ ধরনের ব্যক্তিদ্বয়ের উপর জানাযার সালাত আদায়ের ব্যাপারে নিজ উক্তি (তোমরা তোমাদের সাথীর ওপর জানাযার সালাত আদায় কর) দ্বারা সাহাবীগণকে নির্দেশ দেয়া। এ মাসআলার উপর আরও প্রমাণ বহন করে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কিত হাদীস যে তার নিজকে প্রশস্ত ফলা দ্বারা হত্যা করেছিল, অতঃপর তার ব্যাপারে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি আমি তার ওপর সালাত আদায় করব না। এমতাবস্থায় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে ঐ ব্যক্তির ওপর সালাত আদায় করা থেকে নিষেধ করেননি।
(وَإِنْ عَمِلَ الْكَبَائِرَ) ইবনু মালিক (রহঃ) বলেছেন, এ হাদীসাংশটুকু ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, যে ব্যক্তি কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ করবে ঐ কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ তাকে ইসলাম থেকে বের করবে না এবং সৎ আ‘মালসমূহকেও নষ্ট করবে না। অর্থাৎ এ দু’টি ক্ষেত্রে বিদ্‘আতীর যে পরিস্থিতি তার বিপরীত।