লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ২৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইমামতির বর্ণনা
১১২১-[৫] আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা ’আবদুল্লাহ ইবনু মাক্তুমকে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের জন্যে নিজের স্থলাভিষিক্ত করে দিলেন। অথচ তিনি ছিলেন জন্মান্ধ। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: اسْتَخْلَفَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ابْنَ أُمِّ مَكْتُومٍ يَؤُمُّ النَّاس وَهُوَ أعمى. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (اسْتَخْلَفَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ ابْنَ أُمِّ مَكْتُومٍ يَؤُمُّ النَّاس) ক্বারী (রহঃ) বলেন, উল্লেখিত হাদীসাংশ থেকে খলীফাহ্ বা প্রতিনিধি বানানোর দলীল লাভ করা যায়। ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেছেন, বর্ণনানুযায়ী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’বার মদীনার সাধারণ প্রতিনিধি বানিয়েছিলেন। বিশেষ করে মানুষের ইমামতির করার জন্য তা করেছিলেন। আমীর ইয়ামানী (রহঃ) বলেছেন, উল্লেখিত খলীফাহ্ নিযুক্ত করা দ্বারা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ও অন্যান্য বিষয়ে খলীফাহ্ নিযুক্ত করা উদ্দেশ্য। ত্ববারানী এ হাদীসকে في الصلاة وغيرها (সালাত ও অন্যান্য ক্ষেত্রে) শব্দে সংকলন করেছেন, এর সানাদ হাসান।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতিনিধি নিযুক্ত করার বিষয়টি গণনায় তা ১৩ সংখ্যায় পৌঁছেছে। (وهو أعمى) শায়খ ‘আবদুল হক্ব দেহলবী আশ‘আতুল লাম্‘আত গ্রন্থে বলেছেন, উল্লেখিত হাদীসাংশে অন্ধ ব্যক্তির ইমামতি জায়িয হওয়ার ব্যাপারে দলীল রয়েছে। এতে কোন অপছন্দনীয়তা নেই। ইবনু হাজার (রহঃ) বলেছেন, এতে অন্ধ ব্যক্তির ইমামতি জায়িয হওয়ার ব্যাপারে দলীল আছে এবং এতে কোন মতানৈক্য নেই এবং চক্ষুষ্মান ব্যক্তির ইমামতি অন্ধ ব্যক্তি অপেক্ষা উত্তম নাকি উত্তম নয় এ ব্যাপারে মতানৈক্য।
শাওকানী (রহঃ) বলেছেন, আবূ ইসহাক মারওয়াযী ও গাজালী (রহঃ) স্পষ্ট করে দিয়েছেন নিশ্চয় অন্ধ ব্যক্তির ইমামতি চক্ষুষ্মান ব্যক্তি অপেক্ষা উত্তম, কেননা চক্ষুষ্মান ব্যক্তির চেয়ে অধিক বিনয়ী এজন্য যে, চক্ষুষ্মান ব্যক্তির দর্শনীয় বস্ত্ত দর্শন করায় তার মন ব্যস্ত হয়ে যায়। কতক চক্ষুষ্মান ব্যক্তির ইমামতি উত্তম হওয়াকে প্রাধান্য দিয়েছেন, কেননা সে নাপাকি হতে অধিক সতর্ক। মারওয়াযী ইমাম শাফি‘ঈর ভাষ্য হতে যা উপলব্ধি করেছেন তা হল নিশ্চয় অন্ধ ও চক্ষুষ্মান ব্যক্তির ইমামতি মাকরূহ না হওয়ার দিক দিয়ে সমান। (মর্যাদা রাখে) কেননা উভয়ের ইমামতিতে শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। তবে চক্ষুষ্মান ব্যক্তির ইমামতি সর্বোত্তম।
কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদেরকে ইমাম বানিয়েছেন তাদের অধিকাংশ চক্ষুষ্মান। অপরপক্ষে যুদ্ধে ‘আবদুল্লাহ বিন উম্মু মাকতূমকে প্রতিনিধি নিয়োগ করার কারণ হল যুদ্ধ থেকে কোন মু’মিন যেন পিছপা থাকতে না পারে একমাত্র মা’যূর ব্যক্তি ছাড়া। সম্ভবত চক্ষুষ্মানদের মধ্যে যুদ্ধ থেকে পিছপা হয়ে থাকার মতো এমন কোন লোক ছিল না, যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতিনিধি হবে। অথবা প্রতিনিধি হওয়ার জন্য অবসরে থাকবে এমন কোন লোক ছিল না। অথবা অন্ধ ব্যক্তিকে প্রতিনিধি বানানো বৈধ তা সাব্যস্ত করার জন্য তিনি এমন করেছেন। অপরদিকে ‘ইতবান বিন মালিক-এর চোখের সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তার সম্প্রদায়ের ইমামতি করা সম্ভবত তার সম্প্রদায়ের মাঝেও ইমামতির ক্ষেত্রে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিদের থেকে তার স্থানে অবস্থান করবে এমন কেউ ছিল না। ইমাম শাওকানী (রহঃ)-এর কথা এখানে শেষ হল।
আর তিনি আরো বাদায়ি' গ্রন্থে অন্ধ ব্যক্তির ইমামতি জায়িয হবে এ ব্যাপারে স্পষ্ট আলোচনার পর বলেছেন, অন্ধ ব্যক্তিকে অন্য কেউ ক্বিবলার দিকে করে দিবে ফলে অন্ধ ব্যক্তি ক্বিবলার বিষয়ে অন্যের অনুসারী হবে। কখনো সালাতের মাঝে ক্বিবলাহ্ (কিবলাহ/কিবলা) হতে অন্যদিকে ঘুরে যাবে এবং একই কারণে অপবিত্র থেকে বেঁচে থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়, সুতরাং চক্ষুষ্মান ব্যক্তি ইমামতির জন্য অন্ধ অপেক্ষা উত্তম তবে মর্যাদার ক্ষেত্রে এক ইমামের মসজিদে যখন অন্য ইমাম সমান হবে না সে মুহূর্ত ছাড়া। তখন মসজিদের নির্দিষ্ট ইমামই উত্তম হবে।
এজন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবনু উম্মু মাকতূমকে প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছিলেন। ইবনুল মালিক বলেন, অন্ধ ব্যক্তির ইমামতি কেবল ঐ মুহূর্তে অপছন্দ করা হয় যখন সম্প্রদায়ের মাঝে তার অপেক্ষা জ্ঞানবান সুস্থ ব্যক্তি থাকে অথবা জ্ঞানে তার সমান সুস্থ ব্যক্তি থাকে।
তুরবিশতী বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবূক যুদ্ধে বের হওয়ার সময় মদীনাতে ‘আলী (রাঃ) উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও ইবনু উম্মু মাকতূমকে ইমামতির ব্যাপারে প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছিলেন যাতে শত্রুপক্ষ মদীনাবাসীদের কোন ক্ষতি সাধন করলে তাদের সংরক্ষণকরণে কোন ব্যস্ততায় তাকে অন্যমনস্ক করে না দেয়। ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেছেন, বিষয়টি অন্যদিকে ঘোরারও সম্ভাবনা রয়েছে অর্থাৎ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যাপারেও যদি ‘আলী (রাঃ) প্রতিনিধি নিযুক্ত করতেন তাহলে আবূ বাকর-এর খিলাফাতের ক্ষেত্রে সমালোচক ব্যক্তি সমালোচনার পথ খুঁজে পেত। যদিও তা দুর্বল। আবূ দাঊদ একে বর্ণনা করেছেন।
আহমাদ এবং বায়হাক্বী একে সংকলন করেছেন (৩য় খন্ড ৮৮ পৃষ্ঠা) আর আবূ দাঊদ ও মুনযিরী এ ব্যাপারে চুপ থেকেছেন। ইবনু হিব্বান তার সহীহ গ্রন্থে তা সংকলন করেছেন। আবূ ইয়া‘লা ও ত্ববারানী আওসাত গ্রন্থে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) কর্তৃক। বায়হাক্বী মাজমাউয্ যাওয়ায়িদ গ্রন্থে ২য় খন্ড ৬৫ পৃষ্ঠা আবূ ইয়া‘লা ও ত্ববারানী এর দিকে বিষয়টি সম্পৃক্ত করার পর বলেছেন, আবূ ইয়া‘লা-এর রাবীগণ সহীহ-এর রাবী।