লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ২৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইমামতির বর্ণনা
১১২০-[৪] আবূ ’আত্বিয়্যাহ্ আল ’উক্বায়লী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মালিক ইবনু হুওয়াইরিস (সাহাবী) আমাদের মসজিদে আগমন করতেন। আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করে শুনাতেন। একদা তিনি এভাবে আমাদের মাঝে আছেন সালাতের সময় হয়ে গেল। আবূ ’আত্বিয়্যাহ্ বলেন, আমরা মালিক-এর নিকট আবেদন করলাম, সামনে বেড়ে আমাদের সালাতের ইমামতি করার জন্যে। মালিক বললেন, তোমরা তোমাদের কাউকে সামনে বাড়িয়ে দাও। সে-ই তোমাদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করাবে। আর আমি কেন সালাত আদায় করাব না কারণ তোমাদেরকে বলছি, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে লোক কোন জাতির সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে যায় সে যেন তাদের ইমামতি না করে। বরং তাদের মধ্যে কেউ ইমামতি করবে। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী; নাসায়ীও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম...... শব্দগুলো পর্যন্ত উল্লেখ করেছেন)[1]
وَعَنْ أَبِي عَطِيَّةَ الْعُقَيْلِيِّ قَالَ: كَانَ مَالِكُ بن الْحُوَيْرِث يَأْتِينَا إِلَى مُصَلَّانَا يَتَحَدَّثُ فَحَضَرَتِ الصَّلَاةُ يَوْمًا قَالَ أَبُو عَطِيَّةَ: فَقُلْنَا لَهُ: تَقَدَّمَ فَصْلُهُ. قَالَ لَنَا قَدِّمُوا رَجُلًا مِنْكُمْ يُصَلِّي بِكُمْ وَسَأُحَدِّثُكُمْ لِمَ لَا أُصَلِّي بِكُمْ؟ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ زار قوما فَلَا يؤمهم وليؤمهم رجل مِنْهُم» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ إِلَّا أَنَّهُ اقْتَصَرَ عَلَى لَفْظِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم
ব্যাখ্যা: হাদীসটি ঐ ব্যাপারে দলীল প্রদান করছে যে, মুক্বীম ব্যক্তি পর্যটক বা মুসাফিরের চেয়ে ইমামতির বেশি অধিকার রাখে যদিও মুসাফির মুক্বীমের চেয়ে কুরআন পাঠ ও সুন্নাহ সম্পর্কে বেশি জ্ঞানী হয়। হাদীসটি বর্ণনার পর ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবী ও অন্যান্য অধিকাংশ বিদ্বানদের কাছে এর উপরই ‘আমল এবং তারা বলেছেন ইমামতির ক্ষেত্রে ঘরের মালিক বা মুক্বীম মুসাফির অপেক্ষা বেশি অধিকার রাখে। কতিপয় বিদ্বান বলেছেন, মুক্বীম যখন মুসাফিরকে অনুমতি দিবে তখন মুসাফির মুক্বীমের ইমামতি করাতে কোন দোষ নেই এবং ইমাম মালিক বিন হুওয়াইরিস (রহঃ)-এর হাদীস সম্পর্কে উক্তি করছেন এতে তিনি মুসাফির ব্যক্তিকে মুক্বীম ব্যক্তির ইমামতি না করতে কঠোরতা করেছেন। যদিও (বাড়ির মালিক) মুক্বীম মুসাফিরকে অনুমতি দেয়।
তিনি বলেছেন, এমনিভাবে কোন মুসাফির ব্যক্তি কোন এলাকায় সফর করলে তাদের ইমামতি করবে না। সে বলবে যেন এলাকাবাসীর কেউ তাদের ইমামতি করে। ইমাম তিরমিযীর কথা এখানে সমাপ্ত। মাজদ ইবনু তায়মিয়্যাহ্ আল মুনতাক্বা' গ্রন্থে অধিকাংশ বিদ্বানদের থেকে হাদীসটি উল্লেখের পর বলেছেন, মুসাফির কোন স্থনের স্থায়ী বাসিন্দা কর্তৃক অনুমতি পেলে অত্র এলাকার ইমামতি করতে কোন দোষ নেই। তিনি পূর্বোক্ত আবূ মাস্‘ঊদ-এর হাদীস (إلا بإذنه) দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) এর বর্ণনাকৃত হাদীসের ব্যাপকতা একে শক্তিশালী করেছে। তাতে আছে নিশ্চয়ই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন তিন ব্যক্তি মিশক আম্বরের স্ত্তপের উপর থাকবে; এক বান্দা এমন যে আল্লাহর হক ও মুনীবের হক আদায় করেছে, দ্বিতীয় ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের ইমামতি করেছে এ অবস্থায় তারা তার প্রতি সন্তুষ্ট শেষ পর্যন্ত। ইমাম তিরমিযী একে বর্ণনা করেছেন।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন; নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে এমন ব্যক্তির জন্য অনুমতি ছাড়া কোন সম্প্রদায়ের ইমামতি করা বৈধ হবে না। ইমাম আবূ দাঊদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেছেন, আমাদের কাছে প্রাধান্যতর উক্তি হল মুক্বীম ব্যক্তি মুসাফির ব্যক্তিকে ইমামতির অনুমতি দিলে সে মুহূর্তে মুসাফিরের ইমামতি করাতে কোন দোষ নেই। মালিক বিন হুওয়াইরিস এর হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তির অর্থ হচ্ছেঃ যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে সাক্ষাৎ করতে যাবে সে তাদের ইমামতি করবে না। এ কথার মর্ম হল সে ঐ সম্প্রদায়ের অনুমতি ছাড়া ইমামতি করবে না। সা‘ঈদ বিন মানসূর এর কাছে আবূ মাস্‘ঊদ (রাঃ)-এর হাদীস এর প্রামাণ করছে। আমরা (إذنه) এর শর্ত হতে যা উল্লেখ করেছি তাকে ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর হাদীসে উল্লেখিত (وهم به راضون) এবং আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) এর হাদীসে উল্লেখিত (إلا بإذنهم) উক্তি শক্তিশালী করেছে। যেমন ইবনু তায়মিয়্যাহ্ বলেছেন, উল্লেখিত হাদীসদ্বয়ের ব্যাপকতা মুক্বীম ব্যক্তির সন্তুষ্টি ও অনুমতির ক্ষেত্রে মুসাফির ব্যক্তির ইমামতি করা জায়িয হওয়াকে দাবী করছে।
এক মতে বলা হয়েছে মালিক বিন হুওরায়রিস এর হাদীস ইমামে আ‘যাম (রাষ্ট্র প্রধান) ছাড়া অন্যান্য ইমামের ওপর প্রয়োগ হবে। সুতরাং ইমামে আ‘যাম বা তার স্থলাভিষিক্ত ব্যক্তি যখন কর্তৃত্বের আয়ত্বাধীন স্থানে উপস্থিত হবে তখন এলাকার লোক তার আগে বাড়বে না। তবে বাদশাহর উচিত হবে এলাকার লোককে ইমামতির অনুমতি দেয়া যাতে সে দু’টি অধিকার তথা অগ্রগামী হওয়ার ক্ষেত্রে ইমামের অধিকার ও বাদশাহর অনুমতি ছাড়া কর্তৃত্ব নিষেধ হওয়ার ক্ষেত্রে বাদশাহর অধিকার এর মাঝে সমন্বয় করতে পারে। (ইমাম আবূ দাঊদ একে বর্ণনা করেছেন) এবং এ ব্যাপারে তিনি চুপ থেকেছেন। (ইমাম তিরমিযীও একে বর্ণনা করেছেন) এবং বলেছেন, এটি হাসান হাদীস।
তিরমিযী এর কতক কপিতে আছে হাসান সহীহ। মুনযিরী ও শাওকানী (রহঃ) তিরমিযী থেকে যা শুধু হাসানরূপে উল্লেখ করেছেন তা প্রথমটিকে সমর্থন করেছে। আর তা তাহজীব গ্রন্থে আবূ ‘আত্বিয়্যাহ্ এর জীবনীর ক্ষেত্রে হাফিযের উক্তি থেকে বুঝা যায়; নিশ্চয়ই ইবনু খুযায়মাহ্ এর হাদীসকে সহীহ বলেছেন। যদি তিরমিযীর নুসখাতে তার নিকট তা সহীহ করণ সাব্যস্ত হত তবে তিনি অবশ্যই সেদিকে ইঙ্গিত করতেন। এ হাদীসের সানাদে আবূ ‘আত্বিয়্যাহ্ নামে একজন মাজহূল রাবী থাকা সত্ত্বেও ইমাম তিরমিযী এটিকে হাসান বলেছেন। যেমন যাহাবী, হাতিম, ইবনুল মাদীনী ও আবুল হাসান আল কাত্ত্বান বলেছেন। কারণ এর সমর্থন হাদীস আছে আর ইমাম তিরমিযী কখনো সমর্থনের কারণে দুর্বল হাদীসকে হাসান বলেন। শায়খ আহমাদ শাকির ইমাম তিরমিযীর ওপর নিজ তা‘লীক্বে আবূ হাতিম ও অন্যান্যদের উক্তির পর বলেন, তবে ইবনু খুযায়মাহ্ তার হাদীসকে সহীহ করণ, ইমাম তিরমিযী হাসান অথবা সহীহ করণ হাদীসটিকে গ্রহণযোগ্য মাসতূর বর্ণনাদ্বয়ের অন্তর্ভুক্ত করে দিচ্ছে। তার হাদীসের অনেকগুলো সমর্থন আছে।
যা পূর্বে আবূ দাঊদে উল্লেখিত আবূ মাস্‘ঊদ-এর হাদীস (ولا يؤم الرجل في بيته) এর দিকে ইঙ্গিত করছে এবং অনুরূপভাবে ত্ববারানীতে আবূ মাস্‘ঊদ-এর হাদীস ও বাযযার এবং ত্ববারানীতে ‘আবদুল্লাহ বিন হানযালাহ্ এর হাদীসের দিকে। আমরা উভয়ের শব্দকে আবূ মাস্‘ঊদ-এর হাদীসের ব্যাখ্যাতে উল্লেখ করেছি। (ইমাম নাসায়ী একে বর্ণনা করেছেন) ইমাম আহমাদ ৩য় খন্ড ৪৩৬-৪৩৭ পৃষ্ঠা ৫ম খন্ড ৫৩ পৃষ্ঠা, বায়হাক্বী ৩য় খন্ড ১২৬ পৃষ্ঠা। তবে নাসায়ী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি ‘‘তোমাদের কেউ যখন কোন সম্প্রদায়ের সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন সে যেন তাদের ইমামতি না করে’’ এর সংক্ষেপ করেছেন। হাদীসের শুরু অংশ তিনি উল্লেখ করেননি। আবূ দাঊদ-এর কিতাবে উল্লেখিত শব্দ আবূ ‘আত্বিয়্যাহ্ এর উক্তি ‘‘তিনি কথা বলতে ছিলেন অতঃপর সালাতের সময় উপস্থিত হল’’ এ অংশটুকু তিরমিযীর। আবূ দাঊদ-এর শব্দ ‘‘এ মুসাল্লা পর্যন্ত অতঃপর সালাত প্রতিষ্ঠা করা হল’’।