১১২২

পরিচ্ছেদঃ ২৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইমামতির বর্ণনা

১১২২-[৬] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন লোকের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) কান হতে উপরের দিকে উঠে না (অর্থাৎ কবূল হয় না)। প্রথম হলো কোন মালিক-এর নিকট থেকে পলায়ন করা গোলাম যতক্ষণ তার মালিক-এর নিকট ফিরে না আসে। দ্বিতীয় ঐ মহিলা, যে তার স্বামীকে অসন্তুষ্ট রেখে রাত কাটাল। তৃতীয় হলো ঐ ইমাম, যাকে তার জাতি অপছন্দ করে। (তিরমিযী; তিনি বলেছেন, এ হাদীসটি গরীব)[1]

وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ثَلَاثَةٌ لَا تُجَاوِزُ صَلَاتُهُمْ آذَانَهُمْ: الْعَبْدُ الْآبِقُ حَتَّى يَرْجِعَ وَامْرَأَةٌ بَاتَتْ وَزَوْجُهَا عَلَيْهَا سَاخِطٌ وَإِمَامُ قَوْمٍ وَهُمْ لَهُ كَارِهُونَ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ

وعن ابي امامة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ثلاثة لا تجاوز صلاتهم اذانهم: العبد الابق حتى يرجع وامراة باتت وزوجها عليها ساخط وامام قوم وهم له كارهون . رواه الترمذي وقال: هذا حديث غريب

ব্যাখ্যা: (لَا تُجَاوِزُ صَلَاتُهُمْ اذَانَهُمْ) অর্থাৎ তাদের আ‘মাল আকাশের দিকে উঠবে না যেমন ইবনু ‘আব্বাস-এর আগত হাদীসে রয়েছে আর তা আ‘মাল গ্রহণযোগ্য না হওয়ার ব্যাপারে ইঙ্গিত স্বরূপ। যা পরবর্তী হাদীসে স্পষ্ট। ইবনু হিব্বানে ইবনু ‘আব্বাস-এর হাদীসে তা রয়েছে। তুরবিশতী (রহঃ) বলেছেন, আ‘মালে সালিহ বা সৎ আ‘মাল আল্লাহর দিকে উঠানো হবে না। বরং উঠার দিক দিয়ে সর্বনিম্ন পর্যন্ত উঠবে। দু‘আ ও তিলাওয়াত কান দিয়ে প্রবেশের কারণে উক্ত হাদীসে কানকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এ অবস্থায় গ্রহণযোগ্য হয়েও সাড়া পেয়ে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছবে না। এ দৃষ্টান্ত মূলত ঐ দৃষ্টান্তের মতো যাতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) পূর্ব মুহূর্তে) দীন থেকে মানুষ দ্রুতগতিতে বেরিয়ে পড়ার হাদীসে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ তাতে আছে মানুষ কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। মূলকথা যিকর তাদের কানসমূহ অতিক্রম করবে না। এ কথা দ্বারা ‘আমল গ্রহণযোগ্য না হওয়াকে উদ্দেশ্য করেছেন।

(الْعَبْدُ الْابِقُ حَتّى يَرْجِعَ) উল্লেখিত হাদীসাংশ (الْعَبْدُ الْابِقُ) এর মাঝে পলায়নকারিণী দাসীও অন্তর্ভুক্ত। সহীহ মুসলিম, সুনানে আবূ দাঊদ ও নাসায়ীতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে জারীর বিন ‘আবদুল্লাহ আল বাজালী এর হাদীস কর্তৃক বর্ণিত আছে, যখন কোন দাস পলায়ন করবে তখন তার সালাত গ্রহণ করা হবে না। এ হাদীস বিগত হাদীসে আ‘মাল তাদের কান অতিক্রম করবে না দ্বারা তাদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) গ্রহণ করা হবে না উদ্দেশ্যকে শক্তিশালী করছে।

(وَامْرَأَةٌ بَاتَتْ وَزَوْجُهَا عَلَيْهَا سَاخِطٌ) মুল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) বলেছেন, হাদীসে এ উল্লেখিত রাগ বলতে যখন ঐ রাগ মন্দ চরিত্র, মন্দ আচরণ ও অনুগত্যের স্বল্পতার কারণে হবে। পক্ষান্তরে স্বামী অপরাধ ছাড়া স্ত্রীর উপর রাগ করলে স্ত্রীর এতে কোন গুনাহ নেই। শাওকানী (রহঃ) হাদীস সম্পর্কে বলেছেন, নিশ্চয় কোন স্ত্রী তার স্বামীকে রাগান্বিত করার ফলে স্বামী স্ত্রীর উপর রাগান্বিত হয়ে রাত্রি যাপন করা কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ এর অন্তর্ভুক্ত।

আর এ গুনাহ তখনই সাব্যস্ত হবে যখন স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর ওপর ন্যায়ভাবে রাগ করা হবে। বুখারী ও মুসলিমে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) এর হাদীসে আছে, নিশ্চয়ই আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেছেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে আপন বিছানাতে ডাকবেন অতঃপর তার স্ত্রী আসবে না, ফলে স্বামী স্ত্রীর ওপর রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রি যাপন করবে তাহলে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) সকাল অবধি ঐ স্ত্রীকে অভিসম্পাত করতে থাকবে।

(وَإِمَامُ قَوْمٍ وَهُمْ لَه كَارِهُونَ) উল্লেখিত হাদীসাংশে সম্প্রদায় কর্তৃক ইমামকে অপছন্দ করার বিষয়টি শারী‘আতের ক্ষেত্রে কোন নিন্দনীয় বিষয়ে হতে হবে আর যদি তারা এর বিপরীতে কোন বিষয়ে ইমামকে অপছন্দ করে তাহলে তা অপছন্দ হিসেবে বিবেচনা করা হবে না। ইবনুল মালিক বলেন, ইমামকে অপছন্দ করার বিষয়টি ইমামের বিদ্‘আত, পাপাচার ও মূর্খতার কারণে হতে হবে।

পক্ষান্তরে ইমাম ও প্রজাদের মাঝে যখন দুনিয়া সংক্রান্ত কোন বিষয় নিয়ে পরস্পরের মাঝে অপছন্দনীয়তা সৃষ্টি হবে বা শত্রুতা হবে তখন সে অপছন্দনীয়তার তার হুকুম উল্লেখিত হাদীসাংশের হুকুমের আওতাভুক্ত হবে না। হাদীসটি কোন ব্যক্তি সম্প্রদায়ের ইমাম হওয়াবস্থায় সম্প্রদায় তাকে অপছন্দ করতে পারে এর উপর প্রমাণ বহন করেছে।

শাওকানী (রহঃ) বলেছেন, কিছু ‘আলিমগণ (এক সম্প্রদায়) ‘কারাহাত’ শব্দ থেকে হারাম অর্থ বুঝেছেন, অন্য কিছু ‘আলিমগণ (অপর সম্প্রদায়) কারাহাতই উদ্দেশ্য করেছেন। হাদীসে বলা হয়েছে, ‘আমল তাদের কান অতিক্রম করবে না তথা সালাত কবূল হবে না; সুতরাং হাদীসে ব্যবহৃত কারাহাত হারাম অর্থের উপর প্রমাণ বহন করছে। আর হারাম অর্থের উপর প্রমাণ বহন করছে বিধায় হাদীসে কর্তাকে অভিসম্পাত করা হয়েছে। যেমন তিরমিযীতে আনাস (রাঃ)-এর হাদীসে আছে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন ব্যক্তিকে অভিসম্পাত করেছেন তাদের মাঝে এক ব্যক্তি এমন, যে তার সম্প্রদায়ের ইমামতি করে এমতাবস্থায় সম্প্রদায় তাকে অপছন্দ করে। (আল-হাদীস) তিনি বলেছেন, বিদ্বানদের একটি দল শারী‘আতী কারণ স্বরূপ দীনী কারাহাত এর সাথে শর্তযুক্ত করেছেন। পক্ষান্তরে ধর্মীয় কারাহাত বা অপছন্দনীয়তা ছাড়া অন্য কোন কারাহাত এ ব্যাপারে ধর্তব্য হবে না।

তারা বিষয়টিকে আরও শর্তারোপ করে বলেছেন, অপছন্দকারীরা মুক্তাদীদের অধিকাংশ হতে হবে। সুতরাং মুক্তাদী অনেক হলে একজন দু’জন বা তিনজনের অপছন্দনীয়তা ধর্তব্য নয়। তবে মুক্তাদী যখন দু’জন বা তিনজন হবে তখন তাদের কারাহাত বা তাদের অধিকাংশের কারাহাত বিবেচ্য। তিনি আরও বলেন, কারাহাত দীনদারদের কর্তৃক হতে হবে দীনহীনদের কারাহাত ধর্তব্য নয়। ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) ইয়াহ্ইয়া গ্রন্থে বলেছেন, দীনদার ব্যক্তি যদি কমও হয় যারা ইমামকে অপছন্দ করছে তথাপিও তাদের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে।

তিনি (রহঃ) বলেন, ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) হাদীসটির অর্থ নিয়েছেন ওয়ালী (নেতা) ছাড়া অন্য ইমামের ক্ষেত্রে। কেননা কোন বিষয়ের যারা ওয়ালী হন তাদেরকে অধিকাংশ সময় অপছন্দ করা হয়। তিনি বলেছেন, তবে হাদীসটির বাহ্যিক অর্থ ওয়ালী ও গাইরে ওয়ালী এর মাঝে পার্থক্য না করাই শ্রেয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)