পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয
৯৮৯-[১২] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা হাবাশাহ্ যাওয়ার পূর্বে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর সালাতরত অবস্থায় সালাম দিতাম। তিনিও আমাদের সালামের উত্তর দিতেন। আমরা যখন হাবাশাহ্ হতে ফিরে (মদীনায়) আসি আমি তখন তাকে সালাতরত অবস্থায় পাই। তারপর আমি তাকে সালাম দিলাম কিন্তু তিনি আমাকে সালামের জবাব দিলেন না সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ না হওয়া পর্যন্ত, তরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ তা’আলা যখন যে বিষয় ইচ্ছা করেন সে বিষয় আদেশ জারী করেন। আল্লাহ এখন সালাতে কথাবার্তা না বলার আদেশ জারী করেছেন। অতঃপর তিনি আমার সালামের উত্তর দিলেন।[1]
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: كُنَّا نُسَلِّمُ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ فِي الصَّلَاةِ قَبْلَ أَنْ نَأْتِيَ أَرْضَ الْحَبَشَةِ فَيَرُدُّ عَلَيْنَا فَلَمَّا رَجَعْنَا مِنْ أَرْضِ الْحَبَشَةِ أَتَيْتُهُ فَوَجَدْتُهُ يُصَلِّي فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيَّ حَتَّى إِذَا قَضَى صَلَاتَهُ قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ يُحْدِثُ مِنْ أَمْرِهِ مَا يَشَاءُ ن وَإِن مِمَّا أحدث أَن لَا تتكلموا فِي الصَّلَاة» . فَرد عَليّ السَّلَام
ব্যাখ্যা: সালাতে কথা বলা ও সালামের জওয়াব দেয়া সংক্রান্ত আলোচনা ৯৭৯ নং হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয
৯৯০-[১৩] এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শুধু কুরআন পড়া ও আল্লাহর যিকর করার জন্য। অতএব তোমরা যখন সালাত আদায় করবে তখন এ অবস্থায়ই থাকবে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَقَالَ: «إِنَّمَا الصَّلَاةُ لِقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ وَذِكْرِ اللَّهِ فَإِذا كنت فِيهَا ليكن ذَلِك شَأْنك» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয
৯৯১-[১৪] ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বিলালকে প্রশ্ন করলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতরত থাকা অবস্থায় তারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম দিলে তিনি সালামের জবাব কিভাবে দিতেন? বিলাল উত্তরে বললেন, তিনি হাত দিয়ে (সালামের জবাবে) ইশারা করতেন। (তিরমিযী; নাসায়ীর বর্ণনাও এমনই। তবে তাতে বিলাল-এর স্থলে সুহায়ব (রাঃ)থেকে বর্ণিত হয়েছে বলে উল্লেখ হয়েছে।)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قُلْتُ لِبِلَالٍ: كَيْفَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرُدُّ عَلَيْهِم حِين حانوا يُسَلِّمُونَ عَلَيْهِ وَهُوَ فِي الصَّلَاةِ؟ قَالَ: كَانَ يُشِيرُ بِيَدِهِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَفِي رِوَايَةِ النَّسَائِيِّ نَحوه وَعوض بِلَال صُهَيْب
ব্যাখ্যা : অত্র হাদীসে প্রশ্ন করা হয়েছে সাহাবীগণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাতরত অবস্থায় সালাম দিলে তিনি কিভাবে উত্তর দিতেন এ প্রশ্ন কখন করা হয়েছিল? এতে দু’টি সম্ভাবনা রয়েছে, (১) সালাতে কথা বলার বৈধতা রহিত হওয়ার পর। (২) সালাতে কথা বলার বৈধতা রহিত হওয়ার আগে। মুল্লা ‘আলী আলী ক্বারী বলেনঃ এটি সালাতে কথা বলার বৈধতা রহিত হওয়ার আগের ঘটনা। আর এটিই প্রকাশমান। পক্ষান্তরে শাইখ ‘আবদুল হক দেহলভী বলেন, এটি সালাতে কথা বলার বৈধতা রহিত হওয়ার পরের ঘটনা। আর এটিই প্রকাশমান।
হাদীসের শিক্ষা:
সালাতরত অবস্থায় হাতের ইশারায় সালামের জওয়াব দেয়া বৈধ। জমহূর ‘উলামাদের মত এটাই। হানাফী ‘আলিম এক্ষেত্রে মতভেদ করেছেন। ইমাম তাহাবী বলেনঃ ইশারায় সালামের জওয়াব দেয়া মাকরূহ। আবার কেউ কেউ বলেছেন, এতে কোন ক্ষতি নেই। আমি (মুবারকপূরী) বলছিঃ জমহূর ‘উলামাদের অভিমতই সঠিক। অনেক সহীহ হাদীসে এর প্রমাণ রয়েছে।
১. বিলাল (রাঃ)-এর অত্র হাদীস।
২. সুহায়ব (রাঃ) বর্ণিত হাদীস, ‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতরত অবস্থায় ছিলেন এমন সময় আমি তাঁর নিকট দিয়ে অতিক্রমকালে তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইশারায় আমার সালামের জওয়াব দিলেন। তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি এটিকে হাসান বলেছেন।
৩. ইবনু ‘উমার (রাঃ) বর্ণিত হাদীস। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-মসজিদে কুবায় প্রবেশ করলেন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার জন্য। এমতাবস্থায় লোকজন তাঁর নিকট গিয়ে তাঁকে সালাম দিতে থাকলো। সুহায়ব (রাঃ) তার সাথে থাকায় আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম দিলে তিনি কি করতেন? তিনি বললেনঃ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হাত দ্বারা ইশারা করতেন। হাদীসটি মুসনাদ আহমাদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ, দারিমী হাকিম ও বায়হাক্বী সংকলন করেছেন।
৪. আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) বর্ণিত হাদীস, ‘‘এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম দিলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইশারাতে সালামের জওয়াব দিলেন এবং বললেনঃ আমরা সালাতরত অবস্থায় সালামের জওয়াব দিতাম। অতঃপর আমাদেরকে তা নিষেধ করা হয়েছে। হাদীসটি ইমাম তাহাবী এবং বাযযার সংকলন করেছেন
পক্ষান্তরে যারা সালাতরত অবস্থায় ইশারাতে সালামের জওয়াব দেয়া অবৈধ মনে করেন তাদের দলীলঃ
১. আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীস, ‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতে পুরষের জন্য ‘সুবহা-নাল্ল-হ’ বলা এবং নারীদের জন্য হাতে তালি বাজানোর বিধান। যে ব্যক্তি সালাতরত অবস্থায় ইশারা দিয়ে কিছু বুঝায় সে যেন উক্ত সালাত পুনরায় আদায় করে। হাদীসটি ইমাম আবূ দাঊদ সংকলন করেছেন। এর জওয়াব হল হাদীসটি য‘ঈফ যা দলীলযোগ্য নয়। কেননা এর সানাদে মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক নামক এক রাবী আছেন। আর তিনি মুদাল্লিস।
২. তাদের অপর দলীলঃ সালাতরত অবস্থায় ইশারাতে সালামের জওয়াব দেয়ার বিধান রহিত হয়ে গেছে। কেননা অর্থগত দিক থেকে তা কথা বলার স্থলাভিষিক্ত। আর সালাতে কথা বলা নিষেধ, অতএব ইশারা করাও নিষেধ। এর জওয়াব এই যে, ইশারা করা কথা বলার স্থলাভিষিক্ত নয়। কেননা চোখের ইশারা কথা বলার স্থলাভিষিক্ত নয়। আর ইশারা শরীরের যে কোন অঙ্গ সঞ্চালন দ্বারা হয়ে থাকে। হাত ব্যতীত শরীরের অন্য কোন অঙ্গ দ্বারা ইশারা করলে যেমন সালাত বিনষ্ট হয় না অনুরূপ হাত দ্বারা ইশারা করলেও সালাত বিনষ্ট হয় না।
পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয
৯৯২-[১৫] রিফা’আহ্ ইবনু রাফি’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে সালাত আদায় করলাম। (সালাতের মধ্যে) আমি হাঁচি দিলাম। আমি ক্বালিমায়ে হামদ অর্থাৎ ’’আলহামদু লিল্লা-হি হামদান কাসীরান ত্বইয়্যিবাম্ মুবা-রাকান ফীহি মুবা-রাকান ’আলায়হি কামা- ইউহিব্বু রব্বুনা- ওয়া ইয়ারযা-’’ পাঠ করলাম। সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ করে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে বললেন, সালাতের মাঝে কথা বলল কে? এতে কেউ কোন কথা বলেনি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পুনরায় প্রশ্ন করলেন। তবুও কেউ কোন কথা বলেনি। তৃতীয়বার তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার প্রশ্ন করলেন। এবার রিফা’আহ্ (রাঃ)বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঐ জাতের শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! ত্রিশের বেশি মালাক (ফেরেশতা) এ ক্বালিমায়ে হামদগুলো কার আগে কে উপরে নিয়ে যাবে এ নিয়ে প্রতিযোগিতা করছে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَن رِفَاعَة بن رَافع قَالَ: صليت خَلْفَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَعَطَسْتُ فَقلت الْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ مُبَارَكًا عَلَيْهِ كَمَا يُحِبُّ رَبُّنَا وَيَرْضَى فَلَمَّا صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ انْصَرَفَ فَقَالَ: «مَنِ الْمُتَكَلِّمُ فِي الصَّلَاةِ؟» فَلَمْ يَتَكَلَّمْ أَحَدٌ ثُمَّ قَالَهَا الثَّانِيَةَ فَلَمْ يَتَكَلَّمْ أَحَدٌ ثُمَّ قَالَهَا الثَّالِثَةَ فَقَالَ رِفَاعَةُ: أَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَقَدِ ابْتَدَرَهَا بِضْعَةٌ وَثَلَاثُونَ مَلَكًا أَيُّهُمْ يَصْعَدُ بِهَا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: হাফিয ইবন হাজার ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে বলেছেন, হাদীসটি ত্ববারানী সংকলন করেছেন এবং তাতে উল্লেখ করেছেন যে, ঐ সালাতটি ছিল মাগরিবের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)। তিনি হাদীসটি এমন সানাদে বর্ণনা করেছেন যাতে কোন ত্রুটি নেই। এই অতিরিক্ত অংশটুকু তাদের মন্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে যারা বলে যে, উক্ত সালাত নফল সালাত ছিল। উল্লেখ্য যে, জামা‘আত সাধারণতঃ ফরয সালাতেরই হয়ে থাকে নফল সালাতের নয়।
হাদীসের শিক্ষাঃ
১. সালাত নফল বা ফরয যাই হোক তাতে হাঁচিদাতার আলহাম্দুলিল্লা-হ বলা মাকরূহ নয়।
২. সালাতের মধ্যে সালাতের জন্য নির্ধারিত দু‘আ ব্যতীত অন্য কোন দু‘আ পাঠ করাও বৈধ।
৩. হাদীসে বর্ণিত দু‘আটি সালাতরত অবস্থায় স্বরবেও পাঠ করা যায় যদি তাতে অন্যের ব্যাঘাত না ঘটে।
পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয
৯৯৩-[১৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ সালাতে ’হাই’ তোলা শায়ত্বনের (শয়তানের) কর্ম। অতএব সালাতে তোমাদের কেউ হাই তুললে তা যথাসম্ভব বারণ করার চেষ্টা করবে। (তিরমিযী; তাঁর অন্য বর্ণনা ও ইবনু মাজাহ-এর বর্ণনায় এ শব্দগুলো আছেঃ অর্থাৎ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সালাতে ’হাই’ আসলে সে যেন নিজের হাত মুখের উপর রাখে।)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «التَّثَاؤُبُ فِي الصَّلَاةِ مِنَ الشَّيْطَانِ فَإِذَا تَثَاءَبَ أَحَدُكُمْ فَلْيَكْظِمْ مَا اسْتَطَاعَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَفِي أُخْرَى لَهُ وَلِابْنِ مَاجَهْ: «فَلْيَضَعْ يَدَهُ على فِيهِ»
পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয
৯৯৪-[১৭] কা’ব ইবনু ’উজরাহ্ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন উযূ করে তখন সে সুন্দর করে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করবে। তারপর সালাতের উদ্দেশ্য করে মসজিদে যাবে। আর তখন এক হাতের আঙ্গুলকে অন্য হাতের আঙ্গুলের মধ্যে ঢুকিয়ে মটকাবে না। কেননা সে সালাতে আছে। (আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, দারিমী)[1]
وَعَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا تَوَضَّأَ أَحَدُكُمْ فَأَحْسَنَ وُضُوءَهُ ثُمَّ خَرَجَ عَامِدًا إِلَى الْمَسْجِدِ فَلَا يُشَبِّكَنَّ بَيْنَ أَصَابِعِهِ فَإِنَّهُ فِي الصَّلَاة» . رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ والدارمي
ব্যাখ্যা: (فَلَا يُشَبِّكَنَّ) ‘‘সে যেন তাশবীক না করে’’ এক হাতের আঙ্গুল অন্য হাতের আঙ্গুলের মধ্যে প্রবেশ করানোকে তাশবীক বলা হয়।
(فَإِنَّه فِى الصَّلَاةِ) সে সালাতের মধ্যেই আছে। অর্থাৎ সালাতের হুকুমের মধ্যেই গণ্য। অতএব সালাতরত অবস্থায় যা বর্জনীয় এরূপ কাজ সালাতে গমনের সময়ও বর্জনীয়।
হাদীসের শিক্ষাঃ
১. সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের উদ্দেশে মসজিদে গমন করার শুরু হতেই এক হাতের আঙ্গুলের মধ্যে অন্য হাতের আঙ্গুল প্রবেশ করানো মাকরূহ।
২. সালাত আদায়ের উদ্দেশে ঘর হতে বের হওয়ার সময় থেকেই মসজিদে গমনকারীর জন্য সালাতের সাওয়াব লেখা হয় যতক্ষণ না সে স্বীয় বাড়ীতে ফিরে আসে। এর সমর্থনে আরো হাদীস বিদ্যমান রয়েছে।
৩. আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত হাদীস, ‘‘যে ব্যক্তি উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে সালাতের উদ্দেশে বের হয় সে যেন স্বীয় বাড়ীতে ফিরে আসা পর্যন্ত সালাতের মধ্যে আছে বলেই গণ্য হয়। অতএব তোমরা এরূপ করবে না অর্থাৎ এক হাতের আঙ্গুল অন্য হাতের আঙ্গুলের মধ্যে প্রবেশ করাবে না।
৪. আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে মারফূ' সূত্রে বর্ণিত হাদীস, ‘‘যখন তোমাদের কেউ মসজিদে থাকে সে যেন তাশবীক না করে, কেননা তা শায়ত্বনের (শয়তানের) কাজ। তোমাদের কেউ মাসজিদ থেকে বের না হওয়া পর্যন্ত সালাতরত আছে বলেই গণ্য। মুসনাদ আহমাদ ৩/৪৩ পৃঃ; হায়সামী বলেন, উক্ত হাদীসটি হাসান।
পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয
৯৯৫-[১৮] আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন বান্দা সালাতের মধ্যে থাকে, আল্লাহ তা’আলা তার সঙ্গে থাকেন, যতক্ষণ না সে এদিক-সেদিক দৃষ্টি ফেরায়। আর সে এদিক-সেদিক নযর করলে তিনি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, দারিমী)[1]
وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا يَزَالُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ مُقْبِلًا عَلَى الْعَبْدِ وَهُوَ فِي صَلَاتِهِ مَا لَمْ يَلْتَفِتْ فَإِذَا الْتَفَتَ انْصَرَفَ عَنْهُ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَالدَّارِمِيُّ
ব্যাখ্যা: ‘যতক্ষণ সে অন্য দিকে দৃষ্টি না ফেরায়’ প্রসঙ্গে হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেনঃ দৃষ্টি ফেরানো দ্বারা উদ্দেশ্য হল যতক্ষণ সে ক্বিবলার দিক থেকে তার বক্ষ ও ঘাড় না ফেরায়।
‘‘তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন’’ অর্থাৎ তার থেকে রহমাত বিচ্ছিন্ন করে দেন। ইবনু মালিক (রহঃ) বলেনঃ তার সাওয়াব কমিয়ে দেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয
৯৯৬-[১৯] আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আনাস! সালাতে তুমি তোমার দৃষ্টিকে সাজদার স্থানে রাখবে। (এ হাদীসটিকে ইমাম বায়হাক্বী ’সুনানে কাবীরের আনাস (রাঃ) থেকে হাসান এর সূত্রে হাদীসটি মারফূ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَا أَنَسُ اجْعَلْ بَصَرَكَ حَيْثُ تَسْجُدُ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي سُنَنِهِ الْكَبِيرِ مِنْ طَرِيق الْحسن عَن أنس يرفعهُ
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, সালাতে সর্বাবস্থায় সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারী তার দৃষ্টি সাজদার স্থানের দিকে নিবিষ্ট রাখবে। শাফি‘ঈ মাযহাবের অনুসারীদের ‘আমল এটাই। ইমাম আহমাদ (রহঃ)-এর অভিমতও তাই। ত্বীবী বলেনঃ সালাত আদায়কারীর জন্য মুস্তাহাব হলো কিয়াম অবস্থায় দৃষ্টি সাজদার স্থানের দিকে রাখবে। রুকূ' অবস্থায় পায়ের দিকে রাখবে। সাজদার অবস্থায় নাকের দিকে রাখবে। তাশাহুদে থাকা অবস্থায় কোলের দিকে রাখবে। ইমাম আবূ হানীফাহ্ এবং তার অনুসারীদের মত এটাই। তারা আরো বলেন, সালাম ফিরানোর সময় দৃষ্টি কাঁধের দিকে রাখবে।
আমি (‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী) বলছিঃ ইমাম মালিক (রহঃ)-এর অভিমত হল, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারী ব্যক্তি ক্বিবলার দিকে দৃষ্টি রাখবে। ইমাম বুখারী এ মতের দিকেই ঝুঁকেছেন। হাফিয ইবনু হাজার ফাতহুল বারীতে বলেছেনঃ যায়ন ইবনু মুনীর বলেন, ইমামের দিকে মুক্তাদীগণের দৃষ্টি রাখা ইকতিদা করার উদ্দেশের অন্তর্ভুক্ত। কোন দিকে দৃষ্টি না ফিরিয়ে যদি ইমামের কার্যাবলীর প্রতি দৃষ্টি রাখা সম্ভব হয় তাহলে তা স্বীয় সালাত বিশুদ্ধকরণের অন্তর্ভুক্ত।
ইবনু বাত্তাল বলেনঃ উপরোক্ত বক্তব্য ইমাম মালিক (রহঃ)-এর বক্তব্যকেই সমর্থন করে যাতে তিনি বলেছেন সালাত আদায়কারী স্বীয় দৃষ্টি ক্বিবলার দিকে নিবদ্ধ রাখবে। হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ ইমাম ও মুক্তাদীর বিষয়ে এক্ষেত্রে পার্থক্য করা সম্ভব। ইমামের জন্য মুস্তাহাব হলো তিনি সাজদার স্থানের দিকে দৃষ্টি রাখবেন। অনুরূপভাবে মুক্তাদীগণও সাজদার দিকে দৃষ্টি রাখবে। তবে যে ক্ষেত্রে ইমামের কার্যাবলী নিরীক্ষণ করা প্রয়োজন সেক্ষেত্রে ইমামের দিকে তথা ক্বিবলার দিকে দৃষ্টি রাখবে। আর একাকী সালাত আদায়কারীর হুকুম ইমামের মতই। আল্লাহই অধিক অবগত আছেন।
আমি (‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী) বলছি, হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ)-এর বক্তব্য উত্তম। ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম আহমাদ (রহঃ)-এর বক্তব্যকে আনাস (রাঃ) সূত্রে বায়হাক্বী’র বর্ণিত হাদীস সমর্থন করে। তাতে আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘‘হে আনাস (রাঃ)! তোমার দৃষ্টি সাজদার স্থানের দিকে নিবদ্ধ রাখ।’’
পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয
৯৯৭-[২০] আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আমার বৎস! সালাতে এদিক-সেদিক তাকানো থেকে সাবধান থাকো। কারণ সালাতে (ঘাড় ফিরিয়ে) এদিক-সেদিক লক্ষ্য করা ধ্বংসাত্মক কান্ড। যদি নিরুপায় হয়ে পড়ে তবে নফল সালাতের ক্ষেত্রে (অনুমতি থাকবে) ফরয সালাতের ক্ষেত্রে নয়। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا بُنَيَّ إِيَّاكَ وَالِالْتِفَاتَ فِي الصَّلَاةِ فَإِنَّ الِالْتِفَاتَ فِي الصَّلَاةِ هَلَكَةٌ. فَإِنْ كَانَ لابد فَفِي التَّطَوُّع لَا فِي الْفَرْضِيَّة» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: ‘‘সালাতের মধ্যে অন্যদিকে দৃষ্টিপাত করা ধ্বংস’’- কেননা এতে শায়ত্বনের (শয়তানের) আনুগত্য বিদ্যমান রয়েছে, আর তা ধ্বংসের কারণ। ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ সালাতের মধ্যে দৃষ্টিপাতকে ধ্বংস এজন্য বলা হয়েছে যে, তা সালাতের মাধ্যমে অর্জিত সাওয়াবে স্বল্পতার কারণ ঘটিয়েছে অথবা তা আল্লাহ অভিমুখী হওয়া থেকে মানুষকে আল্লাহ বিমুখ করে দেয়। আল্লাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া ধ্বংসের কারণ।
‘‘নফলের মধ্যে করা যেতে পারে ফারযের (ফরযের/ফরজের) মধ্যে নয়’’ কেননা নফলের ভিত্তিই হল নম্রতা। যেমন দাঁড়ানোর সক্ষমতা সত্ত্বেও নফল সালাত বসে আদায় করা বৈধ। অত্র হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হলো যে, নফল সালাতে প্রয়োজনে দৃষ্টিপাত করা বৈধ যা ফরয সালাতের জন্য প্রযোজ্য নয়।’’
পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয
৯৯৮-[২১] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের মাঝে ডানদিকে বামদিকে লক্ষ্য করতেন, পেছনের দিকে গর্দান ঘুরাতেন না। (তিরমিযী, নাসায়ী)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَلْحَظُ فِي الصَّلَاةِ يَمِينًا وَشِمَالًا وَلَا يَلْوِي عُنُقَهُ خَلْفَ ظَهْرِهِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ
ব্যাখ্যা: (كَانَ يَلْحَظُ) يَلْحَظُ শব্দটি اللحظ শব্দ থেকে উদগত যার অর্থ চোখের কিনারা দিয়ে দৃষ্টিপাত করা। সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) নাসায়ীর বর্ণনায় আছে, তিনি সালাতে এদিক সেদিক তাকাতেন। বলা হয়ে থাকে যে, এটি নফল সালাতে ছিল। তবে ফরয সালাতেও হতে পারে। নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দৃষ্টিপাত কোন কল্যাণের জন্যই ছিল। তা সত্ত্বেও সালাতে তাঁর একাগ্রতা এবং আল্লাহ অভিমুখীতার প্রতি তিনি পূর্ণভাবেই ব্যাস্ত ছিলেন। ইবনু মালিক (রহঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ দৃষ্টি ফিরানো একবার বা একাধিকবার স্বল্প পরিমাণে ছিল এটা বুঝানোর জন্য যে, এমন দৃষ্টিপাতে সালাত ভঙ্গ হয় না অথবা তা কোন প্রয়োজনের জন্য ছিল। তবে কেউ যদি তার গর্দান পিছনের দিকে ঘুরায় অথবা তার বক্ষকে ক্বিবলার দিক থেকে অন্য দিকে সরিয়ে ফেলে তবে তা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ভঙ্গকারী বলে গণ্য হবে।
আমি (মুবারকপূরী) বলছিঃ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসে উল্লিখিত দৃষ্টিপাত বলতে চোখের কিনারা দিয়ে ডান বা বাম দিকের মুক্তাদীগণের অবস্থা পর্যবেক্ষণ অথবা অন্য কোন কল্যাণের উদ্দেশে ছিল। আর এ ধরনের দৃষ্টিপাত ফরয সালাতে হলেও তা সকলের নিকটই বৈধ যদিও তা উত্তমের বিপরীত। ক্বিবলার দিক হতে বক্ষ না ঘুরিয়ে বিনা প্রয়োজনে শুধুমাত্র মাথা অথবা মুখমন্ডল ঘুরিয়ে দৃষ্টিপাত করা সকলের নিকটেই মাকরূহ। আর আহলে যাহিরদের নিকট তা হারাম।
পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয
৯৯৯-[২২] ’আদী ইবনু সাবিত (রাঃ) তার পিতার সূত্রে তার দাদা থেকে এ হাদীসটিকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে মারফূ’রূপে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতের মাঝে হাঁচি আসা, তন্দ্রা আসা, হাই তোলা, মাসিক হওয়া, বমি হওয়া, নাক দিয়ে রক্ত নির্গত হওয়া শায়ত্বন (শয়তান) কর্তৃক আয়োজিত হয়। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ عَدِيِّ بْنِ ثَابِتٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ رَفَعَهُ قَالَ: «الْعُطَاسُ وَالنُّعَاسُ وَالتَّثَاؤُبُ فِي الصَّلَاةِ وَالْحَيْضُ وَالْقَيْءُ وَالرُّعَافُ مِنَ الشَّيْطَانِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ সালাতে হাঁচি, তন্দ্রা ও হাই তোলা- এই তিনটি উল্লেখ করার পরে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শব্দ উল্লেখ করে পুনরায় হায়ায, বমি ও নাক্সীর উল্লেখ করার কারণ এই যে, প্রথম তিনটি দ্বারা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ভঙ্গ হয় না। পক্ষান্তরে শেষে উল্লেখিত তিনটি অবস্থায় সালাত ভঙ্গ হয়ে যায়। আর এ কাজগুলোকে শায়ত্বনের (শয়তানের) দিকে সম্পর্কিত করার করণ এই যে, শায়ত্বন (শয়তান) এগুলো পছন্দ করে। যাতে এর মাধ্যমে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারীর মন অন্যদিকে নিবিষ্ট করা যায় এবং সালাতের বিঘ্ন ঘটে। মুল্লা ‘আলী আলী ক্বারী বলেনঃ অত্র হাদীস এবং আল্লাহ হাঁচি পছন্দ করেন। এ হাদীসদ্বয়ের মাঝে কোন বৈপরীত্য নেই। আল্লাহ হাঁচি পছন্দ করেন তা যদি সালাতের বাইরে হয়। আর তা যদি সালাতের মধ্যে হয় তবে তা অপছন্দনীয়।
পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয
১০০০-[২৩] মুত্বররিফ ইবনু ’আবদুল্লাহ ইবনু শিখখীর (রহঃ) নিজের পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলাম এমতাবস্থায় যে, তিনি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেছিলেন এবং তাঁর ভিতর থেকে টগবগে আওয়াজ হচ্ছিল যেমন ডেগের ফুটন্ত পানির টগবগ আওয়াজ হয়। অর্থাৎ তিনি কান্নাকাটি করছিলেন।
আর এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেছেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাত আদায় করতে দেখছি। এমতাবস্থায় তাঁর সিনার মধ্যে চাক্কির আওয়াজের ন্যায় কান্নার আওয়াজ থাকত। (আহমাদ; নাসায়ী প্রথমাংশটুকু, আবূ দাঊদ দ্বিতীয়াংশটুকু বর্ণনা করেছেন)[1]
وَعَنْ مُطَرِّفِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الشِّخِّيرِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يُصَلِّي وَلِجَوْفِهِ أَزِيزٌ كَأَزِيزِ الْمِرْجَلِ يَعْنِي: يَبْكِي
وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ: رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي وَفِي صَدْرِهِ أَزِيزٌ كَأَزِيزِ الرَّحَا مِنَ الْبُكَاءِ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَرَوَى النَّسَائِيُّ الرِّوَايَةَ الْأُولَى وَأَبُو دَاوُدَ الثَّانِيَة
ব্যাখ্যা: ইমাম ত্বীবী বলেনঃ অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, ক্রন্দন করলে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ভঙ্গ হয় না।
বায়জূরী (রহঃ) শামায়িলের ভাষ্য গ্রন্থে বলেনঃ অত্র হাদীস থেকে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায় যে, যদি ক্রন্দন করলে মুখে এমন কোন উচ্চারণ না হয় যা কোন অর্থ বহন করে তাহলে তা সালাতের কোন ক্ষতি করবে না। আমি (মুবারকপূরী) বলছিঃ অত্র হাদীসের প্রকাশমান অর্থ এই যে, আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বিনষ্ট করে না, চাই তার মুখে কোন শব্দ উচ্চারণ হোক বা না হোক। ইমাম তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ হাদীস থেকে এটাই বুঝেছেন তাদের গ্রন্থে এ হাদীসের ভিত্তিতে অধ্যায় রচনা করা দ্বারা তাই সাব্যস্ত হয়।
পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয
১০০১-[২৪] আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাতে দাঁড়াবে সে যেন হাত দিয়ে পাথর ঘষে না উঠায়। কেননা রহমত তার সম্মুখ দিয়ে আগমন করে। (আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا قَامَ أَحَدُكُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَلَا يَمْسَحِ الْحَصَى فَإِنَّ الرَّحْمَةَ تُوَاجِهُهُ» . رَوَاهُ أَحَمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَه
ব্যাখ্যা: ‘‘যখন সালাতে দাঁড়াবে’’ অর্থাৎ যখন সালাতে প্রবেশ করবে। কেননা তাকবীরে তাহরীমার পূর্বে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারীর জন্য এরূপ কোন কাজ করা নিষিদ্ধ নয়। এই নিষেধাজ্ঞা তখনই প্রযোজ্য যদি এর দ্বারা সাজদার স্থান ঠিক করা উদ্দেশ্য না হয়। আর যদি সাজদার স্থান ঠিক করণার্থে তা করে তবে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু স্পর্শ করা যাবে। জমহূর ‘আলিমদের মতে এখানে ছোট পাথরের উল্লেখ কোন বিশেষ কারণে হয়নি। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এরূপ হয়ে থাকে। যেহেতু তাদের সাজদার স্থলে এরূপ পাথরই থাকতো। অতএব পাথর, ধূলা বা বালির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
‘‘রহমাত তার সম্মুখ দিয়ে আগমন করে’’ অর্থাৎ তার উপর রহমাত নাযিল হয় এবং তা তার সম্মুখে আসে। ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ এই নিষেধাজ্ঞার হিকমাত হলো সালাত আদায়কারী যেন তার অন্তরকে এমন কোন কাজে ব্যাস্ত না রাখে যা তার প্রতি নাযিলকৃত রহমাত থেকে গাফিল রাখে।
পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয
১০০২-[২৫] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ’আফলাহ’ নামক গোলামকে দেখলেন যে, সে যখন সাজদায় যায় (তখন সাজদার স্থান সাফ করার জন্যে) ফুঁ দেয়। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে আফলাহ! তুমি তোমার চেহারাকে ধূলিময় করো। (তিরমিযী)[1]
وَعَن أم سَلمَة قَالَتْ: رَأَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غُلَامًا لَنَا يُقَالُ لَهُ: أَفْلَحُ إِذَا سَجَدَ نَفَخَ فَقَالَ: «يَا أَفْلَحُ تَرِّبْ وَجْهَكَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: (تَرِّبْ) অর্থাৎ তোমার চেহারা মাটি পর্যন্ত পৌঁছাও তার সাথে লাগাও এবং তার উপর স্থাপন করো। তোমার চেহারা রাখার স্থান থেকে ধূলা-মাটি ফুঁকে সরিয়ে দিও না। কেননা ধূলাতে চেহারা স্থাপন করা নম্রতার অতি নিকটবর্তী। আর যে অঙ্গটি শরীরের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম তাতে ধূলা লাগানো নম্রতার শেষ প্রান্ত। এ হাদীসটি তাদের দলীল যারা কোন প্রকার আড়াল ব্যতীত সরাসরি মাটিতে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করার নীতি গ্রহণ করেছেন। আর এ অভিমত বর্ণিত হয়েছে ইবনু মাস্‘ঊদ, ‘উরওয়াহ্ ইবনু যুবায়র (রাঃ)-এবং ইবরাহীম নাখ্‘ঈ (রহঃ) থেকে। জমহূর ‘আলিমদের মত এর বিপরীত।
ইরাক্বী (রহঃ) বলেনঃ এর জওয়াব হল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ধূলার উপর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার নির্দেশ দেননি। এর দ্বারা তাঁর উদ্দেশ্য মাটিতে কপাল রাখা। তিনি যেন তাকে এমতাবস্থায় দেখতে পেয়েছিলেন যে, ঐ ব্যক্তি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করছে অথচ তার কপাল ভালভাবে জমিনের উপর স্থাপন করছে না। ফলে তাকে জমিনে কপাল স্থাপনের নির্দেশ দেন। তিনি তাকে এমন অবস্থায় দেখেননি যে, সে কোন কিছু দিয়ে জমিন আড়াল করে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করছে। আর তিনি তাকে তা সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিচ্ছেন। অত্র হাদীস দ্বারা দলীল প্রদান করা হয় যে, সালাতরত অবস্থায় ফুঁক দেয়া মাকরূহ। এ বিষয়ে বিদ্বানগণের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে।
ইমাম মালিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত, সালাতরত অবস্থায় ফুঁক দেয়া মাকরূহ তবে তা সালাত ভঙ্গ করে না যেমনটি কথা দ্বারা তা ভঙ্গ হয়। ইমাম আহমাদ ও ইসহাক (রহঃ)-এর অভিমতও তাই। ইবনু বাত্তাল (রহঃ)-এর বক্তব্য অনুযায়ী আবূ ইউসুফ ও আশহাব এ অভিমত গ্রহণ করেছেন। মুদাওয়ানাহ্ গ্রন্থে আছে, যে ফুঁক দেয়াও কথা বলার মতই সালাত ভঙ্গ করে।
আবূ হানীফাহ্ এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রহঃ)-এর মত হল, যদি ফুঁক দেয়ার শব্দ শ্রবণ করা যায় তবে তা কথা বলার মতই সালাত ভঙ্গ করে। তা না হলে সালাত ভঙ্গ হবে না। আমাদের মতে সঠিক কথা হল ফুঁকের কারণে সালাত ভঙ্গ হবে না। তাতে দু’ একটি হরফ উচ্চারণ হোক বা না হোক, ফুঁকের শব্দ শুনতে পাওয়া যাক অথবা না পাওয়া যাক। এর সপক্ষে দলীল এই যে, ইমাম আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও নাসায়ী প্রমুখ ইমামগণ ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য গ্রহণের সালাতে ফুঁক দিয়েছিলেন। মুগীরাহ্ ইবনু শু‘বাহ্ সূত্রে আবূ দাঊদ বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর সর্বশেষ সাজদাতে ফুঁক দিলেন এবং উফ উফ শব্দ করলেন।
এতে শাফি‘ঈ, হাম্বালী ও হানাফী মাযহাবের মতামত সুস্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়। কেননা তাঁর শব্দ শুনা গিয়েছিল। আর হাদীসে এ কথাও উল্লেখ আছে যে, আমার সামনে জাহান্নাম উপস্থাপন করা হয়েছিল, তার তাপ তোমাদের ঘিরে ফেলবে এ আশঙ্কায় আমি ফুঁকে ছিলাম। ইমাম বায়হাক্বী ইঙ্গিত করেছেন যে, এটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাস বিষয়। এর প্রত্যুত্তরে বলা হয় যে, খাস দলীল ব্যতীত সাব্যস্ত হয় না। ইবনু বাত্তাল (রহঃ) বলেনঃ সালাত ভঙ্গ না হওয়ার অভিমতই উত্তম।
পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয
১০০৩-[২৬] ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ সালাতে কোমরে হাত বেঁধে দাঁড়ানো জাহান্নামীদের বিশ্রাম স্বরূপ। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الِاخْتِصَارُ فِي الصَّلَاةِ رَاحَةُ أَهْلِ النَّارِ» . رَوَاهُ فِي شرح السّنة
ব্যাখ্যা: (رَاحَةُ أَهْلِ النَّارِ) ‘‘জাহান্নমীদের বিশ্রাম’’ ক্বাযী ‘আয়ায (রহঃ) বলেনঃ জাহান্নামীগণ ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) ময়দানে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার ফলে ক্লান্ত হয়ে পরবে। তাই তারা কোমরে হাত রেখে আরাম বা বিশ্রাম করার চেষ্টা করবে। এটাও বলা হয়ে থাকে যে, এর অর্থ হলো এটা ইয়াহূদ ও নাসারাদের কাজ। সালাতে তারা এরূপ করে থাকে। জাহান্নামী বলতে এখানে তাদেরকেই বুঝানো হয়েছে। আর এটাই তাদের পরিণতি অর্থাৎ জাহান্নাম। আর জাহান্নামে জাহান্নামীদের কোন আরাম বা বিশ্রাম নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘তাদের ওপর থেকে ‘আযাব কম করা হবে না।’’ (সূরাহ্ আয্ যুখরুফ ৪৩ : ৭৫)
পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয
১০০৪-[২৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতরত অবস্থায়ও দু’ ’কালোকে’ হত্যা করো অর্থাৎ সাপ ও বিচ্ছুকে। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী অর্থের দিক দিয়ে)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اقْتُلُوا الْأَسْوَدَيْنِ فِي الصَّلَاةِ الْحَيَّةَ وَالْعَقْرَبَ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَلِلنَّسَائِيِّ مَعْنَاهُ
ব্যাখ্যা: সালাতরত অবস্থায় সাপ ও বিচ্ছু হত্যা করার এ নির্দেশ বাধ্যতামূলক নয় বরং তা মুসতাহাব। অথবা এ নির্দেশ বৈধতার অনুমতি। এ নির্দেশ বাধ্যতামূলক না হওয়ার কারণ আবূ ইয়া‘লা ও ত্ববারানী কর্তৃক ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস।
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এমন সময় পৌঁছালেন যে, তখন তিনি সালাতে রত ছিলেন। অতএব ‘আলী (রাঃ) তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেন। এমন সময় একটি বিচ্ছু এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অতিক্রম করে তা ‘আলী (রাঃ) এর কাছে পৌঁছাল। অতঃপর ‘আলী (রাঃ) স্বীয় জুতার আঘাতে তা হত্যা করলেন। এতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কোন দোষ ধরেননি। ইমাম হায়সামী (রহঃ) বলেনঃ আবূ ইয়া‘লার বর্ণিত এ হাদীসের রাবীগণ সহীহ হাদীস বর্ণনাকারী রাবী মু‘আবিয়াহ্ ইবনু ইয়াহ্ইয়া ব্যতীত। তবে যুহরী (রহঃ) থেকে তার বর্ণিত হাদীস সঠিক যেমনটি ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেছেন। আর হাদীসটি যুহরী থেকে বর্ণিত মু‘আবিয়ার হাদীস।
হাদীসের শিক্ষাঃ
১. সালাতরত অবস্থায় সাপ ও বিচ্ছু হত্যা করা বৈধ। জমহূর ‘আলিমগণের অভিমত এটাই। ইব্রাহীম নাখ‘ঈ-এর মতে তা মাকরূহ।
২. সালাতরত অবস্থায় সাপ অথবা বিচ্ছু হত্যা করলে সালাত ভঙ্গ হয় না।
পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয
১০০৫-[২৮] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নফল সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন এমতাবস্থায় দরজা বন্ধ থাকত। আমি এসে দরজা খুলতে বলতাম। তিনি হেঁটে এসে দরজা খুলে দিয়ে আবার মুসল্লায় চলে যেতেন। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, দরজা ছিল ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)মুখী। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ীতে অনুরূপ)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي تَطَوُّعًا وَالْبَابُ عَلَيْهِ مُغْلَقٌ فَجِئْتُ فَاسْتَفْتَحْتُ فَمَشَى فَفَتَحَ لِي ثُمَّ رَجَعَ إِلَى مُصَلَّاهُ وَذَكَرْتُ أَنَّ الْبَابَ كَانَ فِي الْقِبْلَةِ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ وروى النَّسَائِيّ نَحوه
ব্যাখ্যা: (وَالْبَابُ عَلَيْهِ مُغْلَقٌ) ‘দরজা বন্ধ ছিল’ হাদীসের এ অংশ থেকে জানা যায় যে ব্যক্তি এমন স্থানে সালাত আদায় করে যেখানে তার দরজা ক্বিবলার দিকে অবস্থিত। এমতাবস্থায় তার জন্য মুস্তাহাব হলো সে দরজা বন্ধ করে সালাত আদায় করবে। যাতে তার সম্মুখ দিয়ে অতিক্রমকারীদের জন্য তা সুতরাহ হয়। এতে এও জানা যায় যে, নফল সালাত লোকদের আড়ালে আদায় করা মুস্তাহাব।
(فَجِئْتُ فَاسْتَفْتَحْتُ) ‘আমি এসে দরজা খুলতে বললাম।’ এ থেকে জানা যায় যে, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) জানতেন না যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতরত আছেন। জানতে পারলে তিনি তাঁকে দরজা খুলতে বলতেন না। তার জ্ঞান ও ভদ্রতা এরই সাক্ষ্য গ্রহণ করে।
(أَنَّ الْبَابَ كَانَ فِي الْقِبْلَةِ) দরজা ক্বিবলার দিকে ছিল। ফলে দরজার দিকে এগিয়ে আসার জন্য তাঁকে ক্বিবলাহ্ (কিবলাহ/কিবলা) থেকে মুখ ফিরাতে হয়নি। আবার সালাতের স্থানে প্রত্যাবর্তনকালে মুখ না ফিরিয়েই পিছন দিকে সরে গেছেন।
হাদীসের শিক্ষাঃ প্রয়োজনে নফল সালাতে এ ধরনের কাজ সম্পাদন করা যায়। এতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ভঙ্গ হয় না। যদিও এ কাজ ধারাবাহিকভাবে সম্পাদিত হয়।
পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয
১০০৬-[২৯] ত্বালক বিন ’আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ সালাতরত অবস্থায় তোমাদের কেউ যখন নিঃশব্দে বাতাস বের করে, সে যেন ফিরে গিয়ে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে এসে পুনরায় সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে নেয়। (আবূ দাঊদ; এ বর্ণনাটিকে ইমাম তিরমিযীও কিছু বেশ কম করে বর্ণনা করেছে।)[1]
وَعَنْ طَلْقِ بْنِ عَلِيٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا فَسَا أَحَدُكُمْ فِي الصَّلَاةِ فَلْيَنْصَرِفْ فَلْيَتَوَضَّأْ وَلْيُعِدِ الصَّلَاةَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَرَوَى التِّرْمِذِيّ مَعَ زِيَادَة ونقصان
ব্যাখ্যা: (إِذَا فَسَا أَحَدُكُمْ) ‘যখন তোমাদের কারো গুহ্যদ্বার হতে নিঃশব্দে বায়ু নির্গত হয়।’ এই বায়ু নির্গত সালাত আদায়কারীর অনিচ্ছায় হোক বা স্বেচ্ছায় হোক। ‘সে যেন সালাত ছেড়ে দেয় এবং অযূ করে পুনরায় সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে।’
এ থেকে জানা যায় যে, বায়ু নির্গত হওয়া উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গের কারণ। এর দ্বারা সালাত ভঙ্গ হয়ে যায় এবং সালাত পুনরায় আদায় করা ওয়াজিব। পূর্বের আদায়কৃত সালাতের উপর ভিত্তি করে বাকী সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা বৈধ নয়।
পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয
১০০৭-[৩০] ’আয়িশাহ্ সিদ্দীক্বা (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাতে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গ করে ফেলে সে যেন তার নাক চেপে ধরে তারপরে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ছেড়ে চলে আসে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّهَا قَالَتْ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا أحدث أدكم فِي صَلَاتِهِ فَلْيَأْخُذْ بِأَنْفِهِ ثُمَّ لِيَنْصَرِفْ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (فَلْيَأْخُذْ بِأَنْفِه) ‘সে যেন তার নাক চেপে ধরে।’
এ হাদীস থেকে জানা যায় যা প্রকাশ করা ভাল নয় তা গোপন করাই মুস্তাহাব বা পছন্দনীয়। তবে তাতে মিথ্যার আশ্রয় নেয়া যাবে না।
ইমাম খাত্ত্বাবী মা‘আলিম গ্রন্থের ১ম খন্ডের ২৪৮ পৃঃ বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়ু নিঃসরণকারীকে নাকে ধরতে বলেছেন এজন্য যে, যাতে মানুষ মনে করে তার নাক দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে।
পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয
১০০৮-[৩১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন শেষ বৈঠকের শেষ পর্যায় উপনীত হয়, আর সালাম ফিরানোর আগে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গ হয়ে যায়, তবুও তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বৈধ হবে। (তিরমিযী; তিনি বলেছেন, এ হাদীসটির সূত্র শক্তিশালী নয় এবং তার সূত্রের মাঝে গন্ডগোল মনে করছেন হাদীস বিশারদগণ।)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا أحدث أدكم وَقَدْ جَلَسَ فِي آخِرِ صَلَاتِهِ قَبْلَ أَنْ يُسَلِّمَ فَقَدْ جَازَتْ صَلَاتُهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ إِسْنَادُهُ لَيْسَ بِالْقَوِيِّ وَقَدِ اضْطَرَبُوا فِي إِسْنَاده
ব্যাখ্যাঃ ‘তোমাদের কেউ যখন বায়ু নিঃসরণ করে’- মুল্লা ‘আলী ক্বারী (রহঃ) বলেনঃ ইমাম আবূ হানীফার মতে স্বেচ্ছায় বায়ু নিঃসরণ করে। কেননা তাঁর মতে স্বেচ্ছায় কোন কর্ম দ্বারা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সম্পাদনকারী সালাত থেকে বের হবে। আর তার দু’ শিষ্যের মতে বায়ু নিঃসরণ হলেই হলো তা স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়। আর সে তখন সালাতের ‘শেষ বৈঠকে বসেছেন’। আলী ক্বারী বলেনঃ এই বসাটা যদি তাশাহুদ পড়ার সময় পরিমাণ হয়।
আমি (মুবারকপূরী) বলছিঃ অত্র হাদীসে তাশাহুদ পড়ার সময় পরিমাণ কথাটি উল্লেখ নেই। তবে যে সকল হাদীসে বসার পরিমাণ সম্পর্কে উল্লেখ আছে, যেমন মুসনাদ আহমাদ ও আবূ দাঊদে ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) বর্ণিত হাদীস আবূ নু‘আয়মে ‘আত্বা বর্ণিত হাদীস, বায়হাক্বী ও দারাকুত্বনীতে ‘আলী (রাঃ) বর্ণিত হদীস এসবগুলোই য‘ঈফ যা দলীলের যোগ্য নয়।
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এ হাদীস ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এবং তার অনুসারীদের মতের স্বপক্ষে দলীল, অর্থাৎ মুসল্লী যখন সালাতের শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পাঠ করার সময় পরিমাণ বসে থাকার পর বাতকর্ম (বায়ু নিঃসরণ) করে তাহলে তার সালাত বৈধ। পক্ষান্তরে অন্য তিন ইমাম তথা মালিক শাফি‘ঈ ও আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহঃ)-এর মতে এরূপ ব্যক্তির সালাত বাতিল।
কেননা তাদের মতে সালাত শেষে সালাম ফেরানো ফরয। এ হাদীস দ্বারা ইমাম আবূ হানীফার পক্ষে দলীল গ্রহণ করা সঠিক নয়। কেননা এটি একটি য‘ঈফ হাদীস যা দলীল গ্রহণের উপযুক্ত নয়। বিশেষভাবে এটি সেই সহীহ হাদীসের বিরোধী যাতে বলা হয়েছে। (وتحليلها التسليم) সালাম ফেরানোর পর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সম্পাদনকারীর জন্য কর্ম বৈধ হয় যা সালাতের অবস্থায় হারাম ছিল।