পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তাকবীরে তাহরীমার পর যা পড়তে হয়
৮১৫-[৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শুরু করার (তাকবীর তাহরীমার) পর এ দু’আ পাঠ করতেন, ’’সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবা-রকাসমুকা ওয়া তা’আ-লা- যাদ্দুকা ওয়ালা- ইলা-হা গয়রুকা’’- (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি পূত পবিত্র। তোমার পূত-পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করার সাথে সাথে আমরা আরও বলছি, তুমি খুবই বারাকাতপূর্ণ। তোমার শান অনেক ঊর্ধ্বে। তুমি ছাড়া প্রকৃত আর কোন মা’বূদ নেই।)। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ افْتَتَحَ الصَّلَاةَ قَالَ: «سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: এ দু‘আটি পড়া সহীহ সূত্রে প্রমাণিত। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসও যে বিশুদ্ধ তা’ সন্দেহাতীত। তবে আবূ দাঊদ-এর সানাদটি সহীহ বিধায় এর উপর ‘আমল করা যায়। ‘উমার (রাঃ) এটা পড়তেন যখন অনেক সহাবা (সাহাবা) উপস্থিত থাকতেন। তিনি এটা দিয়ে সাহাবীগণের প্রশিক্ষণ দিতেন। ‘আল্লামা শাওকানী বলেন, যেটা সবচেয়ে বিশুদ্ধ সেটাকে প্রাধান্য দেয়া ও গ্রহণ করা উত্তম হবে।
পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তাকবীরে তাহরীমার পর যা পড়তে হয়
৮১৬-[৫] আর ইবনু মাজাহও এ হাদীসটি আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেছেন, এ হাদীসটি আমি হারিসাহ্ ছাড়া অন্য কারও সূত্রে শুনিনি। তার স্মরণশক্তি সমালোচিত।[1]
وَرَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ
وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ لَا نَعْرِفُهُ إِلَّا مِنْ حَدِيثِ حَارِثَةَ وَقَدْ تُكُلِّمَ فِيهِ مِنْ قِبَلِ حفظه
পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তাকবীরে তাহরীমার পর যা পড়তে হয়
৮১৭-[৬] জুবায়র ইবনু মুত্ব’ইম (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকবীর তাহরীমার পর বললেনঃ ’’আল্লা-হু আকবার কাবীরা-, আল্লা-হু আকবার কাবীরা-, আল্লা-হু আকবার কাবীরা-, ওয়ালহামদু লিল্লা-হি কাসীরা-, ওয়ালহামদু লিল্লা-হি কাসীরা-, ওয়ালহামদু লিল্লা-হি কাসীরা-, ওয়া সুবহা-নাল্ল-হি বুকরাতাওঁ ওয়াআসীলা- মিন নাফখিহী ওয়া নাফসিহী ওয়া হামযিহী’’ (অর্থাৎ- আল্লাহ অতি মহান, আল্লাহ অতি মহান, আল্লাহ অতি মহান, এবং আল্লাহর জন্যই অনেক প্রশংসা, এবং আল্লাহর জন্যই অনেক প্রশংসা, এবং আল্লাহর জন্যই অনেক প্রশংসা, এবং সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহরই পবিত্রতা বর্ণনা করছি) শেষ কথাটিও তিনবার বললেন।
’’আ’ঊযু বিল্লা-হি মিনাশ্ শায়ত্ব-নির রজীম মিন নাফখিহী ওয়া নাফসিহী ওয়া হামযিহী’’ (আপনি বিতাড়িত শায়ত্বন (শয়তান) হতে, অর্থাৎ তার অহমিকা, তার যাদু ও তার ওয়াস্ওয়াসা হতে আল্লাহর নিকট মুক্তি চাচ্ছি)। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ্)[1]
কিন্তু ইমাম ইবনু মাজাহ ’’ওয়ালহাম্দু লিল্লা-হি কাসীরা-’’ উল্লেখ করেননি, আর শেষদিকে শুধু ’’মিনাশ্ শায়ত্ব-নির রজীম’’ বর্ণনা করেছেন। ’উমার (রাঃ) বলেছেন, نَفْخٌ (নাফখ) অর্থ অহমিকা, نَفْثٌ (নাফস) অর্থ কবিতা, আর هَمْزٌ (হাম্য) অর্থ ওয়াস্ওয়াসা।
وَعَن جُبَير بن مطعم: أَنَّهُ رَأَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي صَلَاةً قَالَ: «اللَّهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا اللَّهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا اللَّهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا وَسُبْحَان الله بكرَة وَأَصِيلا» ثَلَاثًا «أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ مِنْ نَفْخِهِ وَنَفْثَهِ وَهَمْزَهِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ إِلَّا أَنَّهُ لَمْ يَذْكُرْ: «وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا» . وَذَكَرَ فِي آخِرِهِ: «مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ» وَقَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: نَفْخُهُ الْكِبْرُ وَنَفْثُهُ الشِّعْرُ وهمزه الموتة
ব্যাখ্যা: নফল সালাতে এ জাতীয় দু‘আ কালাম পাঠ করার কথা মহানাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত আছে। সকাল-সন্ধ্যা বলে দু’ ওয়াক্তকে নির্দিষ্ট করার কারণ হলো, এ সময়টা দিনের ও রাতের মালায়িকাহ্’র আগমন ও প্রস্থানের সময়। সুতরাং এ সময় আল্লাহর প্রশংসা করা একটি শুভ কাজের মধ্যে লিপ্ত হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে।
ইমাম শাওকানী বলেনঃ এটা শুধু প্রথম রাক্‘আতের মধ্যে সুন্নাত সাব্যস্ত হয়েছে। আর হাসান (রহঃ) বলেন, প্রতি রাক্‘আতে পড়া মুস্তাহাব। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু প্রথম রাক্‘আতে সানা পড়তেন- এ হাদীসটি সর্বাধিক স্পষ্ট, বেশি শক্তিশালী, বেশি বিশুদ্ধ। তাই এর উপরই ‘আমল থাকা উচিত।
পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তাকবীরে তাহরীমার পর যা পড়তে হয়
৮১৮-[৭] সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দু’টি নীরবতার স্থান স্মরণ রেখেছেন। একটি নীরবতা তাঁর তাকবীরে তাহরীমা বাঁধার পর, আর একটি নীরবতা হলো, ’’গয়রিল মাগযূবি ’আলায়হিম ওয়ালায্ যোয়াল্লীন’’ পাঠ করার পর। উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ)-ও তার বক্তব্য সমর্থন করেন। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ্ ও দারিমী)[1]
وَعَن سَمُرَة بن جُنْدُب: أَنَّهُ حَفِظَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَكْتَتَيْنِ: سَكْتَةً إِذَا كَبَّرَ وَسَكْتَةً إِذَا فَرَغَ مِنْ قِرَاءَةِ (غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالّين)
فَصَدَّقَهُ أُبَيُّ بْنُ كَعْبٍ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وروى التِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه والدارمي نَحوه
ব্যাখ্যা: রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে মোট দু’টো নীরবতা পালন করতেন। প্রথম নীরবতা ছিল সানা পড়ার জন্যে অথবা অনুরূপ কোন কোন দু‘আ পড়ার জন্যে যেমন- আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্বিরাআত (কিরআত) ও তাকবীরের মাঝখানে নীরব থাকতেন এবং দু‘আ পড়তেন। এখানে এর মর্ম হলো সজোরে পড়া থেকে নীরব থাকা। কেননা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) যিকর থেকে খালি থাকে না। সালাতের সমস্ত অংশই যিকর।
দ্বিতীয় নীরবতা হলো যখন তিনি ‘আলায়হিম ওয়ালায্ যোয়াল্লীন বলে অবসর হতেন। তাই সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্ ও আমীন এর মাঝখানে ব্যবধান করার জন্যে নীরব থাকতেন যাতে কুরআন ও গায়রে কুরআন মিলে না যায়। সেটা হালকা নীরবতা হবে প্রথমটার তুলনায়। হানাফীরা এ হাদীস দিয়ে নিঃশব্দে ‘আমীন’ বলা প্রমাণ করে। উত্তরে বলা যায় যে, দ্বিতীয় নীরবতাটা ‘আমীন’ নিঃশব্দের জন্যে নয়, কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আমীন’ স্বশব্দে উচ্চারণ করতেন।
যায়নুল ‘আরব বলেছেন, এ নীরবতার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মুক্তাদী সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্ পড়বে এবং ইমাম শ্বাস নিবে ও আরামবোধ করবে।
পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তাকবীরে তাহরীমার পর যা পড়তে হয়
৮১৯-[৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয় রাক্’আত আদায় করার পর উঠে সাথে সাথে সূরাহ্ ফাতিহাহ্ দ্বারা ক্বিরাআত (কিরআত) শুরু করে দিতেন এবং চুপ করে থাকতেন না।[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا نَهَضَ مِنَ الرَّكْعَة الثَّانِيَة استفتح الْقِرَاءَة ب «الْحَمد لله رب الْعَالمين» وَلَمْ يَسْكُتْ. هَكَذَا فِي صَحِيحِ مُسْلِمٍ. وَذَكَرَهُ الْحُمَيْدِيُّ فِي أَفْرَادِهِ وَكَذَا صَاحِبُ الْجَامِعِ عَنْ مُسلم وَحده
ব্যাখ্যা: এখানে উদ্দেশ্য শুধু সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্ ছাড়া আর কিছু পড়তেন না। সুতরাং প্রমাণিত যে, বিসমিল্লা-হ আলহাম্দু সূরাহ্’র অন্তর্ভুক্ত নয়- এ কথাটি ‘আল্লামা ত্বীবী বলেছেন।
এ প্রসঙ্গে ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেন, বিসমিল্লা-হ হলো সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্’র একটি অংশ বিশেষ কাজেই আলহাম্দু সূরাহ্ শুরু করা মানে মনে মনে বিসমিল্লা-হ পাঠের পর আরম্ভ করা। ‘আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেন, দ্বিতীয় রাক্‘আতে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়ার আগে নীরবতাটা শার‘ঈ বিধান না হওয়ার উপর এ হাদীস প্রমাণ করে। এমনিভাবে দ্বিতীয় রাক্‘আতে তা‘আব্বুয শার‘ঈ রীতিনীতি না হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করে। তাই বুঝা গেল, একমাত্র ক্বিরাআতের পূর্বে প্রথম রাক্‘আতে নীরবতা অবলম্বন করা নির্ধারিত থাকবে।