পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিলম্বে আযান
৬৮০-[১] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিলাল (রাঃ)রাত থাকতে আযান দেয়। তাই তোমরা ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ)-এর আযান না দেয়া পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়া করতে থাকবে। ইবনু ’উমার (রাঃ) বলেন, ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ)অন্ধ ছিলেন। ’ভোর হয়ে গেছে, ভোর হয়ে গেছে’ তাকে না বলা পর্যন্ত তিনি আযান দিতেন না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ تَاخِيْرِ الْاَذَانِ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِن بِلَالًا يُؤذن بِلَيْلٍ فَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يُنَادِيَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُوم» ثمَّ قَالَ: وَكَانَ رَجُلًا أَعْمَى لَا يُنَادِي حَتَّى يُقَالَ لَهُ: أَصبَحت أَصبَحت
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে রমাযান মাসে যখন সাহরীর সময় হতো তখন লোকজনকে জাগানোর জন্য বিলাল (রাঃ) আযান দিতেন। এ আযান ফাজরের (ফজরের) আযান ছিল না। এজন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিলাল (রাঃ) রাতে আযান দেয়, তাই তোমরা ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ)-এর আযান না শোনা পর্যন্ত খাওয়া এবং পান করা চালিয়ে যেতে পারো। ‘আবদুল্লাহ ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ) অন্ধ হওয়ার করণে ফাজরের (ফজরের) সময় কখন হয়েছে তা তিনি বুঝতে পারতেন না। লোকজন যখন তাকে সালাতের সময় হওয়ার কথা বলতো তখনই তিনি আযান দিতেন। এ হাদীস দ্বারা এ বিষয়টিই প্রমাণ পাওয়া যায় যে, সাহরীর সময় মানুষকে জাগানোর জন্য আযান দেয়া যাবে। যদিও সালাতের জন্য যে আযান হয় সেই আযান সালাতের ওয়াক্ত না হওয়া পর্যন্ত দেয়া যায় না। এ হাদীসে খাওয়া এবং পান করা চালিয়ে যাওয়ার যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা জায়িয এবং এটা সুযোগ দানের জন্য। এর দ্বারা এ কথা বুঝানো হয়নি যে, সাহরীর শেষ সময় পর্যন্ত খেতেই হবে। বরং বুঝানো হয়েছে যে, বিলাল (রাঃ)-এর আযানের পরেও সাহরীর খাওয়ার সময় অবশিষ্ট থাকে। এ হাদীসে আরো ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে আযানই সালাতের সময় হওয়ার পরিচয় বহন করতো। মুসনাদে আহমাদ-এর বর্ণনায় রয়েছে যে, যখন ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ) আযান দেয় তখন তোমরা খাও এবং পান কর। কিন্তু বিলাল (রাঃ) যখন আযান দেয় তখন তোমরা খাওয়া ও পান করা বন্ধ কর। এ হাদীস দ্বারা যে বিষয়টি জানা যায় তা হলো- সাহরীর আযান কোন কোন দিন বিলাল (রাঃ) দিতেন। আবার কোন কোন সময় ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাকতূম (রাঃ) দিতেন।
অর্থাৎ- যখন ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ) রাতের আযান দিতেন তখন বিলাল (রাঃ) ফাজরের (ফজরের) আযান দিতেন এবং যখন বিলাল (রাঃ) রাতের আযান দিতেন তখন ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ) ফাজরের (ফজরের) আযান দিতেন।
কতিপয় মুহাদ্দিসগণ বলেছেন যে, তাদের আযানের মাঝে কোন পালা ছিল না। বরং তাদের উভয়ের দু’টি ভিন্ন অবস্থা ছিল। কেননা সর্বপ্রথম যখন আযানের বিধান আসে তখন বিলাল (রাঃ) একাই ফাজরের (ফজরের) আযান দিতেন। পরবর্তীতে ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ)-কে রাতে আযান দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়।
পরিশেষে ইবনু উম্মু মাকতূম-এর দুর্বলতার জন্য ফাজরের (ফজরের) সালাতের দায়িত্ব দেয়া হয় এবং তার সাথে লোক নিয়োগ করা হয়, যারা তার জন্য ফাজর (ফজর) উদিত হওয়া লক্ষ্য করবেন (অন্ধ হওয়ার কারণে) এবং বিলালের আযানকে (রাতের) সাহরীর আযান হিসেবে স্থায়ী করা হয়।
উল্লেখিত হাদীস থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, ফাজরের (ফজরের) (সুবহে সাদিকের) পূর্বে আযান দেয়া শারী‘আতসিদ্ধ। কেননা আযানকে শারী‘আতসম্মত করা হয়েছে ওয়াক্ত প্রবেশের বিষয়টি জানানোর জন্য এবং শ্রবণকারীগণকে সালাতে উপস্থিত হওয়ার আহবানের জন্য।
‘আল্লামা মুবারাকপূরী (রহঃ) এ মতটি প্রাধান্য দিয়েছেন।
ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ, আহমাদ, আবূ ইউসুফ (রহঃ) এ মত পোষণ করেন যে, ফাজর (ফজর) উদিত হওয়ার পূর্বেই ফাজরের (ফজরের) আযান দেয়া জায়িয এবং ঐ আযানটি যথেষ্ট হবে। পুনরায় আযান দেয়া ওয়াজিব নয়। তারা বলেনঃ ফাজরের (ফজরের) সালাতের জন্য দু’টি আযান ছিল। প্রথম আযানটি সাহরী থেকে বাধা প্রদানকারী ছিল না এবং দ্বিতীয় আযানটি ছিল জানানোর পর পুনরায় জানানোর জন্য। শুধুমাত্র ফাজরের (ফজরের) সালাতকে দু’ আযান দ্বারা নির্দিষ্ট করা হয়েছে, অন্যান্য সালাত থেকে। কেননা প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায়ের ব্যাপারে উৎসাহমূলক হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং সকালের সালাতটি অধিকাংশ সময় ঘুমের পরেই আসে।
আবূ হানীফাহ্ ও মুহাম্মাদ (রহঃ) বলেছেনঃ ফাজরের (ফজরের) সালাতের আযান ফাজর (ফজর) (সুবহে সাদিক) উদিত হওয়ার পূর্বে দেয়া জায়িয নয়। যেমন- অন্য সকল সালাতে সময়ের পূর্বে আযান দেয়া জায়িয নয়। যদি ফাজর (ফজর) উদিত হওয়ার পূর্বে আযান দেয়া হয় তাহলে ফাজর (ফজর) উদিত হওয়ার পর পুনরায় আযান দেয়া আবশ্যক। পূর্বের আযান যথেষ্ট হবে না। তারা [আবূ হানীফাহ্ ও মুহাম্মাদ (রহঃ)] বলেনঃ প্রথম আযানটি ফাজরের (ফজরের) সালাতের জন্য ছিল না। বরং অন্য উদ্দেশ্য ছিল। যা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবনু মাস্‘ঊদ-এর হাদীসে বর্ণনা করেছেন যে, ليرجع قائكم ويوقظ نائمكم
অর্থাৎ- ‘‘যাতে তাহাজ্জুদ আদায়কারীরা ফিরে যায় এবং ঘুমন্ত ব্যক্তিরা জাগ্রত হয়।’’
জেনে রাখুন, ইবনুল ক্বত্ত্বান, ইবনু দাক্বীক্ব আল ‘ঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু হাসান (রহঃ) দাবী করেছেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী- (إِنَّ بِلَالًا يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ) ‘‘নিশ্চয়ই বিলাল রাত থাকতে আযান দেয়’’- (সহীহুল বুখারী- হাঃ ৬১৭)।
এটা রমাযানের সাথেই নির্দিষ্ট সারা বছরের ক্ষেত্রে নয়। তাদের এ উক্তির ব্যাপারে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী- (كلووَاشْرَبُوا) ‘‘তোমরা খাও এবং পান করো’’।
এটা রমাযান ছাড়াও হতে পারে নফল সিয়াম পালনকারীর জন্য। কেননা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে অধিকাংশ সাহাবী বেশী বেশী নফল সিয়াম পালন করতেন। উক্ত হাদীসে তাদেরকেই বুঝানো হয়েছে। তার দলীল হচ্ছে যা বর্ণনা করেছেন ‘আবদুর রাযযাক্ব ‘‘ইবনুল মুসাইয়্যাব’’ থেকে মুরসাল সানাদে এভাবে- ‘‘নিশ্চয় বিলাল রাতে আযান দেয়’’। সুতরাং যে সিয়ামের ইচ্ছা পোষণ করে তাকে যেন (সাহরী খাওয়া হতে) বিলাল (রাঃ)-এর আযান বাধা না দেয় যতক্ষণ পর্যন্ত ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ) আযান না দেয়।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী- (أَصْبَحْتَ أَصْبَحْتَ) ‘‘তুমি সকাল করে ফেলেছ, তুমি সকাল করে ফেলেছ’’- (সহীহুল বুখারী- হাঃ ৬১৭)।
উদ্দেশ্য হচ্ছে ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ)-এর আযানটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানাহার নিষেধ হওয়ার চিহ্ন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।
উক্ত হাদীস দ্বারা এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, অন্ধ ব্যক্তির আযান দেয়া জায়িয। যখন তার কাছে এমন ব্যক্তি থাকবে, যে তাকে কোন প্রকার অপছন্দনীয়তা ছাড়া সালাতের ওয়াক্ত প্রবেশের ব্যাপারে সংবাদ দিবে। কেননা সময়টি মূলত শাহাদাতের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়।
মোটকথা হলো, সুবহে সাদিক হওয়ার পর যে আযান হবে এরপর আর সাহরী খাওয়া ও কোন কিছু পান করা যাবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিলম্বে আযান
৬৮১-[২] সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিলালের আযান ও সুবহে কাযিব তোমাদেরকে সাহরী খাওয়া হতে যেন বিরত না রাখে। কিন্তু সুবহে সাদিক যখন দিগন্তে প্রসারিত হয় (তখন খাবার-দাবার ছেড়ে দেবে)। (মুসলিম, শব্দগুলো তিরমিযী’র)[1]
بَابُ تَاخِيْرِ الْاَذَانِ
وَعَن سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَمْنَعَنَّكُمْ مِنْ سُحُورِكُمْ أَذَانُ بِلَالٍ وَلَا الْفَجْرُ الْمُسْتَطِيلُ وَلَكِنِ الْفَجْرُ الْمُسْتَطِيرُ فِي الْأُفق» رَوَاهُ مُسلم وَلَفظه لِلتِّرْمِذِي
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মাতকে বলেছেন যে, বিলালের আযান যেন সাহরী খাওয়া থেকে বিরত না রাখে। কারণ, বিলাল (রাঃ) লোকজনকে জাগানোর জন্য যখন আযান দিতেন তখন সুবহে সাদিক হতো না। এ সময়টাকে সুবহে কাযিব বলা হয়। সুবহে কাযিব দূরীভূত হওয়ার পর সুবহে সাদিক হয়। সুবহে সাদিক না হলে যেহেতু ফাজরের (ফজরের) সময় হয় না, তাই সায়িমের (রোযাদারের) ওপর তখন খাওয়া ও পান করা নিষিদ্ধ নয়।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী- (المُسْتَطِيْرُ فِي الْأُفُقِ) (সহীহ; জামি‘ আত্ তিরমিযী- হাঃ ৭০৬)। সেটা হচ্ছে- যার আলোটি ছড়িয়ে যায় এবং পূর্ব দিগন্তে আড়াআড়িভাবে ভেসে উঠে। মনে হয় সেটা আকাশের প্রান্তে উড়ে বেড়াচ্ছে। হাদীসের মাঝে ফাজরের (ফজরের) বর্ণনা দেয়া হয়েছে যার সাথে আহকামের সম্পর্ক রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিলম্বে আযান
৬৮২-[৩] মালিক ইবনুল হুওয়াইরিস (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ও আমার চাচাতো ভাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গেলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে বললেন, তোমরা সফরে গেলে আযান দিবে ও ইক্বামাত(ইকামত/একামত) বলবে এবং তোমাদের মধ্যে যে বড় সে ইমামতি করবে। (বুখারী)[1]
بَابُ تَاخِيْرِ الْاَذَانِ
وَعَن مَالك بن الْحُوَيْرِث قَالَ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَا وَابْنُ عَمٍّ لِي فَقَالَ: «إِذَا سَافَرْتُمَا فأذنا وأقيما وليؤمكما أكبركما» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে জানা যায় যে, যখন দু’জন ব্যক্তি সফর করবে এবং সালাতের সময় হবে তখন তাদের একজন আযান দিবে এবং অপরজন তার জবাব দিবে। ত্ববারানীর বর্ণনায় এভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, যখন তুমি তোমার ভাইয়ের সাথে থাকবে তখন আযান দিবে এবং ইক্বামাতও দিবে।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী- (وَأَقِيْمَا) ‘‘ইক্বামাত বলবে’’- (সহীহুল বুখারী- হাঃ ৬৫৮)। উল্লেখিত হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, যে ব্যক্তি আযান দিবে তিনিই ইক্বামাত বলবে এবং মুয়াযযিনের ইক্বামাত দেয়া মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়।
আর তোমাদের মধ্যে যার বয়স বেশী সে ইমামতি করবে। কেউ কেউ বলেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- দু’জনের মধ্যে যে ব্যক্তি আযান দিতে পছন্দ করবে সে-ই আযান দিবে। আর ইমামতির ন্যায় আযানের ক্ষেত্রে বয়স কোন ধর্তব্য বিষয় নয়। এ হাদীসে যার বয়স বেশী তাকে ইমামতি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এটাকে খাস করার কারণ হলো- উপস্থিত লোকজন যখন ইমামতির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের অন্যান্য বিষয়গুলো যেমন- ক্বিরাআত (কিরআত) শুদ্ধ হওয়া, সুন্নাতের ‘ইলম রাখা, মুক্বীম হওয়া- এ সকল বিষয়ে সমান হয় তখন তাদের মধ্যে যার বয়স বেশী হবে তিনিই ইমামতির ক্ষেত্রে অধিক হকদার হবেন। এ হাদীস থেকে আরো যে জিনিসটি প্রমাণিত হয় তা হলো- ফরয সালাতের ক্ষেত্রে আযান দেয়া ওয়াজিব। সর্বনিম্ন দু’জন ব্যক্তি হলেই জামা‘আতে সালাত আদায় করা যাবে এবং এটাতে মুসলিমদের ঐকমত্য রয়েছে। আর মুসাফিরদের জন্য আযান দেয়া এবং জামা‘আতে সালাত আদায় করার বিধান রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিলম্বে আযান
৬৮৩-[৪] উক্ত রাবী [মালিক ইবনু হুওয়াইরিস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বলেছেনঃ তোমরা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে যেভাবে আমাকে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখছো। সালাতের সময় হলে তোমাদের মধ্যে একজন আযান দিবে। এরপর তোমাদের মধ্যে যে বয়সে বড় সে তোমাদের সালাতের ইমামাত করবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ تَاخِيْرِ الْاَذَانِ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَلُّوا كَمَا رَأَيْتُمُونِي أُصَلِّي فَإِذا حضرت الصَّلَاة فليؤذن لكم أحدكُم وليؤمكم أكبركم»
ব্যাখ্যা: এ হাদীসটিতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারীকে এ নির্দেশ দিয়েছেন যে, সালাতের প্রতিটি শর্ত, বিধি-বিধান, সুন্নাত এবং নিয়মাবলী যেভাবে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করেছেন ঠিক সেভাবে পালন করতে হবে। সালাত আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক নির্ধারিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘ইবাদাত। সেই সালাত কিভাবে আদায় করতে হবে তা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়েছেন। এজন্য প্রত্যেক ব্যক্তিই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শিখিয়ে দেয়া নিয়মানুযায়ী সালাত আদায় করবে। এ হাদীসে আরো বর্ণনা করা হয়েছে যে, বয়স্ক ব্যক্তি ইমামতি করবে। যদিও নিয়ম হলো, যার কুরআন পড়া বেশী শুদ্ধ এবং যিনি ‘আলিম তিনিই ইমামতিতে অগ্রাধিকার পাবেন। তবে এক্ষেত্রে যদি সবাই সমান হয় তবে তাদের মধ্যে যার বয়স বেশী তিনিই অগ্রাধিকার পাবেন।
‘আল্লামা শাওকানী বলেন, এ হাদীসটি এ কথা প্রমাণ করে যে, সালাতের বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা ও কাজ থেকে যা প্রমাণিত হয়েছে তা অনুসরণ করা ওয়াজিব। যেহেতু সালাতের ক্ষেত্রে কুরআনের নির্দেশ اَقِيْمُوا الصَّلَوةَ অর্থাৎ- সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ক্বায়িম কর। এটা হচ্ছে মুজমাল বা অস্পষ্ট নির্দেশ। সালাত আদায়ের বিস্তারিত পদ্ধতি কুরআনে আলোচনা করা হয়নি। বিধায় এ ক্ষেত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক যে সকল নিয়ম-কানুন বর্ণিত হয়েছে এসবের অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক।
পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিলম্বে আযান
৬৮৪-[৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার যুদ্ধ হতে ফেরার পথে রাতে পথ চলছেন। এক সময়ে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শেষ রাতে বিশ্রাম গ্রহণ করলেন। বিলাল (রাঃ)-কে বলে রাখলেন, সালাতের জন্য রাতে লক্ষ্য রাখতে। এরপর বিলাল, তার পক্ষে যা সম্ভব হয়েছে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথীগণ ঘুমিয়ে রইলেন। ফজরের (ফজরের) সালাতের সময় কাছাকাছি হয়ে আসলে বিলাল সূর্যোদয়ের দিকে মুখ করে নিজের উটের গায়ে হেলান দিলেন। বিলালকে তার চোখ দু’টো পরাজিত করে ফেলল (অর্থাৎ- তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন)। অথচ তখনো বিলাল উটের গায়ে হেলান দিয়েই আছেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জাগলেন না। বিলালও জাগলেন না, না রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথীদের কেউ। যে পর্যন্ত না সূর্যের তাপ তাদের গায়ে লাগলো।
এরপর তাদের মধ্যে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই প্রথম ব্যক্তি, যিনি ঘুম থেকে জাগলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ব্যতিব্যাস্ত হয়ে বললেন, হে বিলাল! (কী হলো তোমার)। বিলাল উত্তরে বললেন, রসূল! আপনাকে যে পরাজিত করেছে সেই পরাজিত করেছে আমাকে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সওয়ারী আগে নিয়ে চলো। উটগুলো নিয়ে কিছু সামনে এগিয়ে গেলেন। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করলেন। বিলালকে তাকবীর দিতে বললেন, বিলাল তাকবীর দিলেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের ফজরের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করালেন। সালাত শেষে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সালাতের কথা ভুলে গেলে যখনই তা মনে পড়বে তখনই আদায় করে নিবে। কারণ আল্লাহ বলেছেন, ’’সালাত ক্বায়িম কর আমার স্মরণে’’। (মুসলিম)[1]
بَابُ تَاخِيْرِ الْاَذَانِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ قَفَلَ مِنْ غَزْوَةِ خَيْبَرَ سَارَ لَيْلَةً حَتَّى إِذَا أَدْرَكَهُ الْكَرَى عَرَّسَ وَقَالَ لِبِلَالٍ: اكْلَأْ لَنَا اللَّيْلَ. فَصَلَّى بِلَالٌ مَا قُدِّرَ لَهُ وَنَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَصْحَابُهُ فَلَمَّا تَقَارَبَ الْفَجْرُ اسْتَنَدَ بِلَال إِلَى رَاحِلَته موجه الْفَجْرِ فَغَلَبَتْ بِلَالًا عَيْنَاهُ وَهُوَ مُسْتَنِدٌ إِلَى رَاحِلَتِهِ فَلَمْ يَسْتَيْقِظْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا بِلَالٌ وَلَا أَحَدٌ مِنْ أَصْحَابِهِ حَتَّى ضَرَبَتْهُمُ الشَّمْسُ فَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوَّلَهُمُ اسْتِيقَاظًا فَفَزِعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «أَيْ بِلَالُ» فَقَالَ بِلَالٌ أَخَذَ بِنَفْسَيِ الَّذِي أَخَذَ بِنَفْسِكَ قَالَ: «اقْتَادُوا» فَاقْتَادَوا رَوَاحِلَهُمْ شَيْئًا ثُمَّ تَوَضَّأَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَمَرَ بِلَالًا فَأَقَامَ الصَّلَاةَ فَصَلَّى بِهِمُ الصُّبْحَ فَلَمَّا قَضَى الصَّلَاةَ قَالَ: مَنْ نَسِيَ الصَّلَاةَ فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذكرهَا فَإِن الله قَالَ (أقِم الصَّلَاة لذكري)
ব্যাখ্যা: হাদীসটিতে যেখানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীরা ছিলেন সেখানে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) মূলতবী করে অন্য স্থানে সালাত আদায় করার কারণ বিবৃত হয়েছে। কেননা সেখানে উদাসীনতা পেয়ে বসেছিল। আরও হাদীসটিতে প্রতিবাদ করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে যারা দাবী করে সময়টি ছিল সালাত আদায়ের নিষিদ্ধ সময়।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার চক্ষু ঘুমায় কিন্তু অন্তর ঘুমায় না। অন্তর জাগ্রত থাকা সত্ত্বেও তিনি সূর্যোদয় সম্পর্কে কেন জানতে পারলেন না এ প্রশ্নের জবাব দু’ভাবে।
প্রথমত এটাই প্রসিদ্ধ ও সঠিক। এতে কোন দ্বন্দ্ব নেই, কেননা অন্তরাত্মা অনুভূতির কাজে সংশ্লিষ্ট যেমন ব্যথা ইত্যাদি। তা সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। এগুলো চর্মচক্ষুর কাজ আর চর্মচক্ষু ঘুমানোর কারণে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জানতে পারেনি যদিও অন্তরাত্মা জাগ্রত ছিল।
দ্বিতীয়ত অন্তরাত্মার দু’টি অবস্থা। কখনো ঘুমায় আবার কখনো ঘুমায় না। তবে অধিকাংশ সময় ঘুমায় না। কিন্তু এ স্থানে অন্তরাত্মা ঘুমিয়েছিল এটি দুর্বল মন্তব্য।
(وَأَمَرَ بِلَالًا فَأَقَامَ الصَّلَاةَ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল (রাঃ)-কে ইক্বামাতের আদেশ দিলে তিনি ইক্বামাত দিলেন, এটা প্রমাণ করে ক্বাযা সালাতের জন্য ইক্বামাত রয়েছে আর আযান নেই। তবে আবূ ক্বাতাদার হাদীস বুখারী ও মুসলিমে আযানের কথা এসেছে।
আবূ হুরায়রার হাদীসে ক্বাযা সালাতের আযান নেই জবাব দু’টি হতে পারে।
প্রথমত তিনি আযানের বিষয়টি জানেননি।
দ্বিতীয়ত শুধু আযান বাদ দেয়ার বৈধতা প্রমাণের জন্য।
আর ইঙ্গিত করে যে, আযান আবশ্যিক তথা ওয়াজিব না বিশেষ করে সফররত ওয়াজিব হওয়ার প্রশ্নই উঠে না।
(مَنْ نَسِيَ الصَّلَاةَ فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا) যে ব্যক্তি সালাতের কথা ভুলে যায় সে তা পড়ে নিবে যখনই স্মরণ হয়।
এটা প্রমাণ করে যে, ক্বাযা ফরয সালাত আদায় করা ওয়াজিব। চাই তা কোন ওযরের কারণে হোক যেমন- ঘুম অথবা ভুলে যাওয়া। আর চাই ওযর ছাড়া হোক। আর যখন স্মরণ হবে তখন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে নেবে- কথাটি মুস্তাহাব এর প্রমাণ বহন করে। আর ওযরের কারণে ক্বাযা সালাতকে দেরী করে আদায় করা সহীহ মতে বৈধ।
পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিলম্বে আযান
৬৮৫-[৬] আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন সালাতের জন্য ইক্বামাত(ইকামত/একামত) দেয়া হবে, তোমরা আমাকে বের হয়ে আসতে না দেখা পর্যন্ত দাঁড়াবে না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ تَاخِيْرِ الْاَذَانِ
وَعَنْ أَبِي قَتَادَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ فَلَا تَقُومُوا حَتَّى تَرَوْنِي قَدْ خرجت
ব্যাখ্যা: হাদীসের ভাষ্যমতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর হতে বের হওয়ার পূর্বে ইক্বামাত দেয়া হতো। তবে এ হাদীসটি মুসলিম বর্ণিত জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসের বিপরীত।
إِنَّ بِلَالًا كَانَ لَا يُقِيْمُ حَتّى يَخْرُجَ النَّبِىُّ - ﷺ -، فَإِذَا خَرَجَ أَقَامَ الصَّلَاةَ حِيْنَ يَرَاهُ.
সে হাদীসে বলা হয়েছে নিশ্চয় বিলাল (রাঃ) ইক্বামাত দিতেন না যতক্ষণ না বের হতেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল (রাঃ) তখনই ইক্বামাত দিতেন যখন তাঁকে দেখতেন। দু’ হাদীসের সমাধান হলো যে বিলাল (রাঃ) সর্বদা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হওয়ার প্রতি লক্ষ্য রাখতেন। অধিকাংশ লোক দেখার পূর্বেই তিনি দেখতেন এবং ইক্বামাত দেয়া শুরু করতেন। অতঃপর মুসল্লীরা যখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতেন দাঁড়াতেন আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্থানে দাঁড়াবার পূর্বে কাতার সোজা করতেন।
আর আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস মুসলিমে এ শব্দে এসেছে যে,
أُقِيْمَتِ الصَّلَاةَ فَقُمْنَا فَعَدِلْنَا الصُّفُوْفَ قَبْلَ أَنْ يُّخْرِجَ إِلَيْنَا النَّبِىُّ - ﷺ ، فَأَتى فَقَامَ مَقَامَه.
সালাতের জন্য ইক্বামাত হতো, অতঃপর আমরা দাঁড়াতাম। অতঃপর কাতার সোজা করতাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আসার পূর্বে। তিনি আসতেন এবং তাঁর স্থানে দাঁড়াতেন।
আর বুখারীতে এ শব্দে এসেছে, أُقِيْمَتِ الصَّلَاةَ فَسَوَى النَّاسَ صُفُوْفَهُمْ، فَخَرَجَ النَّبِيُّ - ﷺ
সালাতের জন্য ইক্বামাত হতো, অতঃপর মানুষেরা তাদের কাতার সোজা করতো, অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হতেন। আর আবূ দাঊদ-এর বর্ণনা,
إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ تَقَامُ لِرُسُوْلِ اللهِ - ﷺ -، فَيَأْخُذَ النَّاسُ مَقَامَهُمْ قَبْلَ أَنْ يِّجِئَ النَّبِيُّ - ﷺ.
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য ইক্বামাত দেয়া হতো, আর মানুষেরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হওয়ার পূর্বে তাদের স্থান গ্রহণ করতো। এসব হাদীস ও আবূ ক্বাতাদার হাদীসের সমন্বয় এই যে, বৈধতার জন্য এমনটি হতো।
আর আবূ ক্বাতাদার হাদীসের নিষেধের কারণ হলো মানুষ ইক্বামাত দেয়ার পর দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের না হওয়া সত্ত্বেও।
অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে থাকতে নিষেধ করলেন কোন কাজে ব্যাস্ত হওয়ায় বের হওয়া দেরী হতে পারে। তাছাড়া মানুষের ওপর অপেক্ষা করাটা কষ্টকর হবে, তাই দাঁড়িয়ে থাকতে নিষেধ করলেন।
পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিলম্বে আযান
৬৮৬-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতের ইক্বামাত(ইকামত/একামত) দেয়া শুরু হলে তোমরা দৌড়িয়ে আসবে না, বরং শান্তভাবে হেঁটে আসবে। তারপর যা ইমামের সাথে পাবে তাই আদায় করবে। আর যা ছুটে যাবে তা পরে আদায় করে নিবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
তবে মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ’’তোমাদের কেউ সালাতের জন্য বের হলে তখন সে সালাতেই থাকে’’।[2]
[2] সহীহ : মুসলিম ৬০২।
بَابُ تَاخِيْرِ الْاَذَانِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا أُقِيمَت الصَّلَاة فَلَا تأتوها تَسْعَوْنَ وَأْتُوهَا تَمْشُونَ وَعَلَيْكُمُ السَّكِينَةُ فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا وَمَا فاتكم فَأتمُّوا»
وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ: «فَإِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا كَانَ يَعْمِدُ إِلَى الصَّلَاةِ فَهُوَ فِي صَلَاةٍ»
وَهَذَا الْبَابُ خَالٍ عَنِ الْفَصْلِ الثَّانِ
ব্যাখ্যা: (فَلَا تَأْتُوهَا تَسْعَوْنَ) তোমরা সালাতের জন্য দৌড়ে আসবে না। যদিও কিছু সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ছুটে যাওয়ার আশংকা করো।
(السَّكِينَةُ) অর্থ হচ্ছে- দ্রুত না চলে ধীরে চলা এবং নিরর্থক কাজ থেকে বেঁচে থাকা।
(الوقار) শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অবস্থা; যেমন চক্ষুর দৃষ্টি নীচু করা, আওয়াজকে নীচু করা এবং এদিক সেদিক দৃষ্টি না দেয়া।
(فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوْا) যার আসল অর্থ তোমাদের প্রতি আদেশ এসেছে ধীরে ধীরে চলার এবং দ্রুতগামী পরিত্যাগ করা। তখন তোমরা যতটুকু সালাত পাবে, তা আদায় করবে। কেননা জমহূর ‘উলামারা দলীল পেশ করেছেন সালাতের যে কোন অংশ পাবে তাহলে জামা‘আতের ফাযীলাত পাবে। হাদীসের ‘আম্ বক্তব্য থেকে (فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوْا) দ্বারা যা কম বেশী পৃথক নেই। আরো বলা হয়, যে ব্যক্তি এক রাক্‘আতের চেয়ে কম পাবে সে জামা‘আতের ফাযীলাত পাবে না।
আয়াত ও হাদীসের মধ্যকার দ্বন্দ্বঃ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- فَاسْعَوْا إِلى ذِكْرِ اللّهِ ‘‘তোমরা সালাতের দিকে দ্রুত অগ্রসর হও’’- (সূরাহ্ আল জুমু‘আহ্ ৬২ : ৯)। আর এ হাদীসে তা নিষেধ করা হয়েছে। মূলত উভয়ের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই।
আয়াতে বর্ণিত فَاسْعَوْا দ্বারা قَصْدٌ বা ইচ্ছা করা বা অন্যান্য ব্যাস্ততা ছেড়ে দেয়া উদ্দেশ্য।
আর হাদীস প্রমাণ করে, ইমামকে যে অবস্থায় পাওয়া যাবে সে অবস্থায় তার সাথে মিলিত হওয়া মুস্তাহাব। আর এ হাদীসটিকে সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছে ইবনু আবী শায়বার একটি হাদীস। সেখানে বলা হয়েছে,
مَنْ وَجَدَنِيْ رَاكِعًا أَوْ قَائِمًا أَوْ سَاجِدًا فَلْيَكُنْ مَّعِىْ عَلى حَالَتِيْ اَلَّتِيْ أَنَا عَلَيْهَا.
যে ব্যক্তি আমাকে রুকূ‘ অথবা দাঁড়ানো অথবা সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) অবস্থায় পাবে সে আমার সাথে মিলিত হবে আমি যে অবস্থায় রয়েছি।
(فَأَتِمُّوا) (বাকী অংশ) তোমরা একা একা পূর্ণ করে নিবে। অধিকাংশ বর্ণনা এ শব্দে আর কতক বর্ণনায় (فَاقْضُوْا) শব্দ রয়েছে, অর্থাৎ- ‘তোমরা আদায় করে নিবে’ এসেছে। মাসবূক্ব তথা সালাতে যার রাক্‘আত ছুটে গেছে তার ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে যে, ইমামের পরে একাকী সালাতের যে অংশ আদায় করা হবে তা কি তার সালাতের প্রথমাংশ না শেষাংশ হিসেবে গণ্য হবে। ইমাম আবূ হানীফার মতে ছুটে যাওয়া সালাত যা সে ইমামের পর একাকী আদায় করবে তা তার সালাতের প্রথমাংশ হিসেবে গণ্য হবে, কেননা বর্ণনায় (اِقْضُوْا) শব্দ এসেছে আর এ ক্বাযা قَضَاء শব্দটি যা ছুটে বা খোয়া গেছে সেক্ষেত্রেই শুধু ব্যবহৃত হয়।
সুতরাং যার তিন রাক্‘আত ছুটে গেছে যখন ইমাম সালাম ফিরাবে সে দাঁড়াবে আর সূরাহ্ আল ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরাহ্ পড়বে, অতঃপর দাঁড়াবে তাশাহুদ (বৈঠক) ব্যতিরেকে এবং সালাতে সূরাহ্ আল ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরাহ্ পড়বে, অতঃপর বসবে এবং তাশাহুদ পড়বে, তারপর দাঁড়াবে অবশিষ্ট সালাত আদায় করবে সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্ সহকারে অন্য কোন সূরাহ্ পড়বে না। অতঃপর তাশাহহুদ পড়বে এবং সালাম ফিরাবে। এর উপর ভিত্তি করে ইমামের সাথে যে সালাতটি পেয়েছিল তা সালাতের শেষাংশ তথা শেষ রাক্‘আত আর পরবর্তী রাক্‘আতগুলো ক্বাযা স্বরূপ।
আর ইমাম শাফি‘ঈর মতে ছুটে যাওয়া সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) মাসবূক্ব ব্যক্তির সালাতের শেষাংশ হিসেবে গণ্য হবে, কেননা হাদীসের শব্দ أَتِمُّوْا তোমরা পূর্ণ কর, কেননা إِتْمَامْ (ইতমা-ম) শব্দটি কোন কিছু অবশিষ্ট রয়েছে এমন ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। সুতরাং যার তিন রাক্‘আত ছুটে গেছে ইমাম সালাম ফিরানোর পরে সে দাঁড়িয়ে এক রাক্‘আত সালাত আদায় করবে সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্ এবং অন্য একটি সূরাহ্ সহকারে, অতঃপর বসবে এবং তাশাহুদ পড়বে, অতঃপর দাঁড়িয়ে অবশিষ্ট দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করবে তাতে শুধুমাত্র সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্ পড়বে অন্য সূরাহ্ পড়বে না এর উপর ভিত্তি করে যে ইমামের সাথে যে সালাত পেয়েছিল তা তার প্রথম রাক্‘আত। দলীলস্বরূপ বায়হাক্বীর বর্ণনায় হারিস ‘আলী (রাঃ) হতে مَا أَدْرَكْتَ فَهُوَ أَوَّلُ صَلَاتِكَ তিনি বলেনঃ তুমি (ইমামের সাথে) যা পাও তা তোমার প্রথম সালাত তথা প্রথম রাক্‘আত। বায়হাক্বীর অন্য বর্ণনা ক্বাতাদার হাদীস
أَنَّ عَلِيًّا قَالَ: مَا أَدْرَكْتَ مَعَ الْإِمَامِ فَهُوَ أَوَّلُ صَلَاتِكَ، وَاقْضِ مَا سَبَقَكَ مِنَ الْقُرْانِ
‘আলী (রাঃ) বলেন, ইমামের সাথে যা পাবে তা তোমার প্রথম রাক্‘আত আর তুমি ক্বাযা হিসেবে আদায় করো যা তোমাকে অতিক্রম করেছে কুরআন হতে।
আমার (ভাষ্যকারের) নিকট শ্রেষ্ঠ বা অধিক করণীয় শাফি‘ঈ-এর মত, কেননা অধিকাংশ বর্ণনায় أتموا শব্দ এসেছে।
আর এ মতে ইবনু মুনযির দলীল হিসেবে বলেনঃ সবাই ঐকমত্য হয়েছেন যে, تَكْبِيْرَةُ الْإِفْتِتَاحِ উদ্বোধনের তাকবীর কেবল প্রথম রাক্‘আতেই হয়।
হাদীস আরও প্রমাণ করে যে, রুকূ‘ পেলে তা রাক্‘আত হিসেবে গণ্য হবে না। যা ছুটে গেছে তা পূর্ণ করার আদেশ থাকায়; কেননা ক্বিরাআত (কিরআত) ও ক্বিয়াম (কিয়াম) ছুটে গেছে।
বিঃ দ্রঃ এই অধ্যায়ে দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ নেই। কারণ, সম্ভবত সাহিবুল মাসাবীহ এই অনুচ্ছেদের জন্য মুনাসিব-উপযুক্ত হাসান হাদীস খুঁজে পাননি।