পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিলম্বে আযান
৬৮৭-[৮] যায়দ ইবনু আসলাম (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার মক্কার পথে এক রাতে শেষের দিকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহন হতে নেমে বিশ্রাম গ্রহণ করলেন। বিলালকে নিযুক্ত করলেন তাদেরকে সালাতের জন্য জাগিয়ে দিতে। বিলালও পরিশেষে ঘুমিয়ে পড়লেন। তারা ঘুমিয়েই রইলেন। অবশেষে তারা যখন জাগলেন; সূর্য উপরে উঠে গেছে। জেগে উঠার পর তারা সকলে ব্যতিব্যাস্ত হয়ে উঠলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলেন বাহনে উঠতে ও ময়দান পার হয়ে যাওয়া পর্যন্ত চলতে থাকতে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ ময়দানে শায়ত্বন (শয়তান) বিদ্যমান। তারা আরোহীতে সওয়ার হয়ে চলতেই থাকলেন। অবশেষে ময়দান পার হয়ে গেলেন। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে অবতরণ করতে ও উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতে নির্দেশ দিলেন। বিলালকে নির্দেশ দিলেন আযান দিতে অথবা ইক্বামাত(ইকামত/একামত) দিতে। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লোকজনদের নিয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন।
সালাত হতে অবসর হওয়ার পর তাদের ওপর ভীতি-বিহ্বলতা পরিলক্ষিত হলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে লোকেরা! আল্লাহ আমাদের প্রাণসমূহকে ক্ববয করে নিয়েছিলেন। যদি তিনি ইচ্ছা করতেন এ সময়ের আরো পরেও আমাদের প্রাণসমূহ ফেরত দিতেন। তাই যখনই তোমাদের কেউ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় না করে ঘুমিয়ে পড়ে অথবা ভুলে যায়, জেগে উঠেই সে যেন এ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সেভাবেই আদায় করে যেভাবে সময়মত আদায় করতো। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকরকে লক্ষ্য করে বলেন, শায়ত্বন (শয়তান) বিলালের নিকট আসে। সে তখন দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিল। তাকে সে শুইয়ে দিলো। (এরপর শায়ত্বন (শয়তান) ঘুম পাড়াবার জন্য) চাপড়াতে লাগলো, শিশুদেরকে চাপড়ানোর মতো, যতক্ষণ সে ঘুমিয়ে না পড়ে। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিলালকে ডাকলেন। বিলালও ঠিক সে কথাই বললেন, যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকরকে বলছিলেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) ঘোষণা দিলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রসূল। (মালিক- মুরসাল)[1]
عَن زيد بن أسلم أَنه قَالَ: عَرَّسَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةً بِطَرِيقِ مَكَّةَ وَوَكَّلَ بِلَالًا أَنْ يُوقِظَهُمْ لِلصَّلَاةِ فَرَقَدَ بِلَالٌ وَرَقَدُوا حَتَّى اسْتَيْقَظُوا وَقَدْ طَلَعَتْ عَلَيْهِمُ الشَّمْسُ فَاسْتَيْقَظَ الْقَوْمُ وَقَدْ فَزِعُوا فَأَمَرَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَرْكَبُوا حَتَّى يَخْرُجُوا مِنْ ذَلِكَ الْوَادِي وَقَالَ: «إِنَّ هَذَا وَادٍ بِهِ شَيْطَانٌ» . فَرَكِبُوا حَتَّى خَرَجُوا مِنْ ذَلِكَ الْوَادِي ثُمَّ أَمَرَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَنْزِلُوا وَأَنْ يَتَوَضَّئُوا وَأَمَرَ بِلَالًا أَنْ يُنَادِيَ لِلصَّلَاةِ أَوْ يُقِيمَ فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالنَّاسِ ثُمَّ انْصَرَفَ إِلَيْهِم وَقَدْ رَأَى مِنْ فَزَعِهِمْ فَقَالَ: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللَّهَ قَبَضَ أَرْوَاحَنَا وَلَوْ شَاءَ لَرَدَّهَا إِلَيْنَا فِي حِينٍ غَيْرِ هَذَا فَإِذَا رَقَدَ أَحَدُكُمْ عَنِ الصَّلَاةِ أَوْ نَسِيَهَا ثُمَّ فَزِعَ إِلَيْهَا فَلْيُصَلِّهَا كَمَا كَانَ يُصَلِّيهَا فِي وَقْتِهَا» ثُمَّ الْتَفَتَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ فَقَالَ: «إِنَّ الشَّيْطَانَ أَتَى بِلَالًا وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فأضجعه فَلم يَزَلْ يُهَدِّئُهُ كَمَا يُهَدَّأُ الصَّبِيُّ حَتَّى نَامَ» ثُمَّ دَعَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِلَالًا فَأَخْبَرَ بِلَالٌ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَثَلُ الَّذِي أَخْبَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَبَا بَكْرٍ فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: أَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُولُ اللَّهِ. رَوَاهُ مَالك مُرْسلا
ব্যাখ্যা: (بِطَرِيقِ مَكَّةَ) এটা মক্কার রাস্তায় প্রমাণ করে এ বিষয়টি প্রথম বিষয়টির চেয়ে ভিন্নতর। কারণ পূর্বেরটি ছিল খায়বার ও মদীনার মাঝখানে, আর এটা মক্কা ও মদীনার মাঝে।
(إِنَّ اللّهَ قَبَضَ أَرْوَاحَنَا...) অর্থাৎ- আল্লাহ আমাদের প্রাণহরণ করেছিলেন, অতঃপর রূহ্ আমাদের দিকে ফেরত দিলেন আর এটা আল্লাহ তা‘আলার সে বাণীরই প্রতিধ্বনিত্ব হয়েছে যাতে তিনি বলেছেনঃ
‘‘আল্লাহ মানুষের প্রাণহরণ করেন তার মৃত্যুর সময় আর যে মরে না তার নিদ্রাকালে।’’ (সূরাহ্ আয্ যুমার ৩৯ : ৫২)
আর ‘আলিমগণ মতানৈক্য করেছেন তাদের শেষ রাতে বিশ্রাম গ্রহণ ও ফাজরের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হতে ঘুমানোর ঘটনা একবার ঘটেছে না একাধিকবার? অতঃপর কতিপয় ‘উলামাহ্ কিরাম বলেছেন, একবার ঘটেছিল।
আর ইমাম নাবাবী এবং ক্বাযী ‘ইয়ায (রহঃ) প্রাধান্য দিয়েছেন যে, ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে। ইমাম সুয়ূত্বী (রহঃ) বলেছেন যে, একাধিক ঘটনা না হলে সামঞ্জস্য দেয়া সম্ভব নয়, অধিকাংশ মুহাদ্দিস বলেন যে, এ ধরনের ঘটনা তিনবার ঘটেছে।
(أَنْ يُوقِظَهُمْ لِلصَّلَاةِ) অর্থাৎ- ফাজর (ফজর) সালাতের জন্য। আর এজন্য বিলাল (রাঃ)-কে খাস করার কারণ হলো, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, আমি আপনাদেরকে জাগ্রত করব।
(فَرَقَدَ بِلَالٌ) অর্থাৎ- কিছু সময় জাগ্রত থাকার পর বিলাল (রাঃ)-এর ওপর ঘুম বিজয় হয়ে গেল, অর্থাৎ- তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন।
(وَرَقَدُوْا) অর্থাৎ- রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণ বিলাল (রাঃ)-এর ওপর আস্থা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন।
(وَقَدْ طَلَعَتْ عَلَيْهِمُ الشَّمْسُ) অর্থাৎ- তাদেরকে সূর্যের তাপ পেয়ে বসল।
(إِنَّ هذَا وَادٍ بِه شَيْطَانٌ) অর্থাৎ- নিশ্চয় এ উপত্যকায় শায়ত্বন (শয়তান) বিদ্যমান। হাদীসের এ অংশ দ্বারা তাদের দলীল খণ্ডন করা হয়েছে যারা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত ক্বাযা করা, অর্থাৎ বিলম্বিত হওয়ার উদ্দেশ্য হলো মাকবুহ (অপছন্দনীয়) ওয়াক্ত অতিক্রম করা। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুনিশ্চিতভাবে জেনেছিলেন যে, এ স্থানে শায়ত্বনের (শয়তানের) প্রভাব রয়েছে। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবীগণকে অবগত করলেন।
আর রূহ্ ক্ববযের দ্বারা মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠে। কারণ মৃত্যু হলো রূহের বা আত্মার সম্পর্কের বিচ্ছিন্নতা শরীর হতে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্যভাবে। আর ঘুম শুধুমাত্র তার প্রকাশ্য বিচ্ছিন্নতা।
আল্ঈজ্জু ইবনু ‘আবদুস্ সালাম বলেনঃ প্রত্যেক শরীরে দু’টি রূহ্ রয়েছে একটি জাগ্রত রূহ্ আল্লাহ যা স্বাভাবিকভাবে চালু রেখেছেন। তা যখন শরীরে থাকে মানুষ তখন জাগ্রত থাকে আর যখন ঘুমায় সেটি বের হয়ে যায় এবং অনেক স্বপ্ন দেখে আর দ্বিতীয়টি জীবন্ত রূহ্ যা আল্লাহ স্বাভাবিকভাবে চালু রেখেছেন। তা যখন শরীরে থাকে তখন মানুষ জীবিত থাকে।
(فَلْيُصَلِّهَا كَمَا كَانَ يُصَلِّيهَا فِي وَقْتِهَا) সে যেন সেটাকে সেরূপ পড়ে যেরূপ যথাসময়ে পড়তো। ক্বাযা সালাতের আলাদা কোন কাফফারাহ্ নেই এবং দ্বিগুণ ক্বাযা নেই যেমনটি অনেকে ধারণা করে থাকেন যে, ক্বাযা সালাত দু’বার আদায় করতে হবে, একবার স্মরণ হওয়ার সাথে আর দ্বিতীয়বার ক্বাযা হিসেবে। অনুরূপ আগত সালাতের সময় সম্পর্কে তারা তাদের স্বপক্ষে ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন-এর হাদীস উল্লেখ করে থাকে যেখানে অনুরূপ বক্তব্য এসেছে। হাফিয ইবনু হাজার বলেন, সালফে সলিহীন হতে এমন বক্তব্য আসেনি বরং হাদীসের শত্রুরা ভুল ব্যাখ্যা করেছে, বরং তিরমিযী ও নাসায়ীতে ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন-এর হাদীস এভাবে বর্ণিত হয়েছে-
أَنَّهُمْ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ! أَلَا نَقْضِيْهَا لِوَقْتِهَا مِنَ الْغَدِ؟ فَقَالَ ﷺ : لَا. يَنْهَاكُمُ اللهُ عَنِ الرِّبَا وَيَأْخُذَه مِنْكُمْ
সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি আগামীকাল এ সময়ে (সালাতের সময়ে) ক্বাযা আদায় করবো? তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, আল্লাহ তোমাদেরকে সুদ নিষেধ করেছেন আর তা কি তিনি গ্রহণ করবেন?
হাদীসের ভাষ্যমতে- জাহরী সালাতে ক্বাযা হলেও ক্বিরাআত (কিরআত) সশব্দে হবে। আর নীরব সালাতে ক্বিরাআত (কিরআত) নীরবে হবে।
ইমাম ত্বীবী বলেন, হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মু‘জিযা প্রকাশ পেয়েছে। এজন্য আবূ বাকর (রাঃ) শাহাদাত বলার মাধ্যমে তা সত্যায়ন করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিলম্বে আযান
৬৮৮-[৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমদের দু’টি ব্যাপার মুয়ায্যিনদের ঘাড়ে ঝুলে থাকে। সিয়াম (রোযা) ও সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)। (ইবনু মাজাহ্)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: خَصْلَتَانِ مُعَلَّقَتَانِ فِي أَعْنَاقِ الْمُؤَذِّنِينَ لِلْمُسْلِمِينَ: صِيَامُهُمْ وَصَلَاتُهُمْ . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَه
ব্যাখ্যা: মুয়াযযিনদের দায়িত্বে রয়েছে এজন্য তারা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ও রোযাকে সংরক্ষণ করবে (সময়কে সংরক্ষণ করবে)।