পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আযানের ফযীলত ও মুয়াযযিনের উত্তর দান
৬৭৪-[২১] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, শায়ত্বন (শয়তান) যখন সালাতের আযান শুনে তখন সে ’’রওহা’’ না পৌঁছা পর্যন্ত পালাতে থাকে (অর্থাৎ- অনেক দূরে চলে যায়)। বর্ণনাকারী বলেন, ’’রওহা’’ নামক স্থান মদীনাহ্ থেকে ছত্রিশ মাইল দূরে অবস্থিত। (মুসলিম)[1]
عَنْ جَابِرٍ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ الشَّيْطَانَ إِذَا سَمِعَ النِّدَاءَ بِالصَّلَاةِ ذَهَبَ حَتَّى يَكُونَ مَكَانَ الرَّوْحَاءِ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: শায়ত্বন (শয়তান) যখন আযান শোনে তখন রওহা নামক স্থান পর্যন্ত পালিয়ে যায়। অর্থাৎ- সে যখন সালাতের আযান শোনে তখন আযানের স্থান তথা মসজিদের কাছ থেকে বহু দূরে চলে যায়। হাদীসে বলা হয়েছে, সে মদীনাহ্ থেকে ছত্রিশ মাইল দূরে রওহা নামক স্থানে চলে যায়। এখানে রওহা দ্বারা মূলত দূরত্বের কথা বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ- শায়ত্বন (শয়তান) যে স্থানের আযান শোনে সে স্থান থেকে ততটুকু দূরত্বে চলে যায়, যতটুকু দূরত্ব মদীনাহ্ থেকে রওহা নামক স্থানের।
পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আযানের ফযীলত ও মুয়াযযিনের উত্তর দান
৬৭৫-[২২] ’আলক্বামাহ্ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি মু’আবিয়াহ্ (রাঃ)-এর নিকট ছিলাম। তাঁর মুয়াযযিন আযান দিচ্ছিলেন। মুয়াযযিন যেভাবে (আযানের বাক্যগুলো) বলছিলেন, মু’আবিয়াহ্ (রাঃ)-ও ঠিক সেভাবে বাক্যগুলো বলতে থাকেন। মুয়াযযিন ’’হাইয়্যা ’আলাসসলা-হ্’’ বললে মু’আবিয়াহ্ (রাঃ)বললেন, ’’লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ’’। মুয়াযযিন ’’হাইয়্যা ’আলাল ফালা-হ’’ বললে মু’আবিয়াহ্ (রাঃ)বললেন, ’’লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হিল ’আলিয়্যিল ’আযীম’’। এরপর আর বাকীগুলো তিনি তা-ই বললেন যা মুয়াযযিন বললেন। এরপর তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে (আযানের উত্তরে) এভাবে বলতে শুনেছি। (আহমাদ)[1]
وَعَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ وَقَّاصٍ قَالَ: (إِنِّي لَعِنْدَ مُعَاوِيَةَ إِذْ أَذَّنَ مُؤَذِّنُهُ فَقَالَ مُعَاوِيَةُ كَمَا قَالَ مُؤَذِّنُهُ حَتَّى إِذَا قَالَ: حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ: قَالَ: لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ فَلَمَّا قَالَ: حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ قَالَ: لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيمِ وَقَالَ بَعْدَ ذَلِكَ مَا قَالَ الْمُؤَذِّنُ ثُمَّ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم قَالَ ذَلِك. رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে আযানের জবাব দেয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। আমিরে মু‘আবিয়াহ্ (রাঃ)-এর মসজিদের মুয়াযযিন আযান দিলে তিনিও তার জবাবে তাই বললেন যা মুয়াযযিন বললো। তবে তিনি حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ ও حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ এর সময়ে বললেন, لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ । ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, এখানে الْعَلِيِّ الْعَظِيْمِ অংশটুকু বৃদ্ধি করা হয়েছে যা অত্যন্ত বিরল।
পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আযানের ফযীলত ও মুয়াযযিনের উত্তর দান
৬৭৬-[২৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে যাচ্ছিলাম, বিলাল দাঁড়িয়ে আযান দিতে লাগলেন। আযান শেষে বিলাল চুপ করলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি অন্তরের দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে এর মতো বলবে, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। (নাসায়ী)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَامَ بِلَالٌ يُنَادِي فَلَمَّا سَكَتَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَالَ مِثْلَ هَذَا يَقِينا دخل الْجنَّة» . رَوَاهُ النَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: বিলাল (রাঃ) ডাকলেন, অর্থাৎ- সালাতের জন্য আযান দিলেন। যখন বিলাল (রাঃ) আযান শেষ করলেন তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি অনুরূপ বললো, অর্থাৎ- মুয়াযযিনের বাক্যগুলো জবাব হিসেবে বললো। আর এ বলাটা যদি একেবারে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে খাঁটিভাবে হয়ে থাকে, তাহলে জবাবদাতা মুক্তিপ্রাপ্তদের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সুতরাং আমাদের উচিত আযানের জবাব দেয়া।
পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আযানের ফযীলত ও মুয়াযযিনের উত্তর দান
৬৭৭-[২৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মুয়াযযিনকে, ’’আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’’ ও ’’আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ’’ বলতে শুনতেন তখন বলতেন, ’আনা আনা’ (’আর আমিও’ ’আর আমিও’) অর্থাৎ- আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَمِعَ الْمُؤَذِّنَ يَتَشَهَّدُ قَالَ: «وَأَنَا وَأَنَا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: উল্লিখিত হাদীসে মুয়াযযিনকে শোনা দ্বারা মুয়াযযিনের আযান শোনাকে বুঝানো হয়েছে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আযানের মধ্যে যখন শাহাদাতের কালিমাহ্ শোনতেন, তখন দুইবার ‘আনা আনা’ শব্দ উচ্চারণ করতেন। এর দ্বারা তিনি আল্লাহর একত্ববাদ এবং তাঁর নিজের রিসালাতের সাক্ষ্য ঘোষণা দিতেন। আর এর দ্বারা তাওহীদের সাক্ষ্যের গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। ইমাম ত্বীবী বলেন, এ হাদীস দ্বারা এ কথা স্পষ্টভাবে জানা গেল যে, সকল উম্মাতের ন্যায় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও তাঁর রিসালাতের সাক্ষ্য দানের জন্য আদিষ্ট ছিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আযানের ফযীলত ও মুয়াযযিনের উত্তর দান
৬৭৮-[২৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বারো বছর পর্যন্ত আযান দিবে তাঁর জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায় এবং তার আযানের বিনিময়ে প্রতিদিন তার ’আমলনামায় ষাটটি নেকী ও প্রত্যেক ইক্বামাতের (ইকামত/একামত) পরিবর্তে ত্রিশ নেকী লেখা হবে। (ইবনু মাজাহ্)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ أَذَّنَ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ سَنَةً وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ وَكُتِبَ لَهُ بِتَأْذِينِهِ فِي كُلِّ يَوْمٍ سِتُّونَ حَسَنَةً وَلِكُلِّ إِقَامَة ثَلَاثُونَ حَسَنَة» . رَوَاهُ ابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: হাদীসে আযান ও ইক্বামাত দেয়ার ফাযীলাত আলোচনা করা হয়েছে। যে ব্যক্তি দীর্ঘ সময় আযান দেয় আল্লাহ তার পুরস্কারও ঐ রকম বড় ধরনের দিয়ে থাকেন। এমনকি তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দেন। কারণ সে দীর্ঘদিন তাওহীদের সাক্ষ্য দিয়েছে এবং আল্লাহর রহমাত কামনা করেছে। ‘প্রতিদিনের জন্য তার সাওয়াব লেখা হয়’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো প্রত্যেক আযানের জন্য। আযানের সাওয়াবের চেয়ে ইক্বামাতের সাওয়াব অর্ধেক উল্লেখ করা হয়েছে। এর কারণ হলো, ইক্বামাত দেয়াটা আযানের তুলনায় অনেকটা সহজ। কেননা, আযান দেয়ার মধ্যে শব্দগুলো বড় করে উচ্চারণ করতে হয় এবং টেনে বলতে হয়। আর যে ‘আমলের মধ্যে কষ্ট বেশী হয় সেই ‘আমলের সাওয়াবও বেশী হয়। অথবা এর আরো একটি কারণ হতে পারে যে, আযানের শব্দগুলো বলতে হয় দুইবার করে কিন্তু ইক্বামাতের শব্দগুলো বলতে হয় একবার করে। এজন্য আযানের তুলনায় ইক্বামাতের সাওয়াব অর্ধেক করা হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আযানের ফযীলত ও মুয়াযযিনের উত্তর দান
৬৭৯-[২৬] উক্ত রাবী [’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদেরকে মাগরিবের আযানের সময় দু’আ করার জন্য হুকুম দেয়া হয়েছে। (বায়হাক্বী- দা’ওয়াতে কাবীর)[1]
وَعَنْهُ قَالَ: كُنَّا نُؤْمَرُ بِالدُّعَاءِ عِنْدَ أَذَانِ الْمغرب. رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ
ব্যাখ্যা: সকল আযানের পরে দু‘আ পাঠ করা মুস্তাহাব। তবুও এ হাদীসে মাগরিবের আযানের পর দু‘আ পড়াকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।