৬৮৬

পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিলম্বে আযান

৬৮৬-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতের ইক্বামাত(ইকামত/একামত) দেয়া শুরু হলে তোমরা দৌড়িয়ে আসবে না, বরং শান্তভাবে হেঁটে আসবে। তারপর যা ইমামের সাথে পাবে তাই আদায় করবে। আর যা ছুটে যাবে তা পরে আদায় করে নিবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

তবে মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ’’তোমাদের কেউ সালাতের জন্য বের হলে তখন সে সালাতেই থাকে’’।[2]

بَابُ تَاخِيْرِ الْاَذَانِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا أُقِيمَت الصَّلَاة فَلَا تأتوها تَسْعَوْنَ وَأْتُوهَا تَمْشُونَ وَعَلَيْكُمُ السَّكِينَةُ فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا وَمَا فاتكم فَأتمُّوا»
وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ: «فَإِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا كَانَ يَعْمِدُ إِلَى الصَّلَاةِ فَهُوَ فِي صَلَاةٍ»
وَهَذَا الْبَابُ خَالٍ عَنِ الْفَصْلِ الثَّانِ

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اذا اقيمت الصلاة فلا تاتوها تسعون واتوها تمشون وعليكم السكينة فما ادركتم فصلوا وما فاتكم فاتموا» وفي رواية لمسلم: «فان احدكم اذا كان يعمد الى الصلاة فهو في صلاة» وهذا الباب خال عن الفصل الثان

ব্যাখ্যা: (فَلَا تَأْتُوهَا تَسْعَوْنَ) তোমরা সালাতের জন্য দৌড়ে আসবে না। যদিও কিছু সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ছুটে যাওয়ার আশংকা করো।

(السَّكِينَةُ) অর্থ হচ্ছে- দ্রুত না চলে ধীরে চলা এবং নিরর্থক কাজ থেকে বেঁচে থাকা।

(الوقار) শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অবস্থা; যেমন চক্ষুর দৃষ্টি নীচু করা, আওয়াজকে নীচু করা এবং এদিক সেদিক দৃষ্টি না দেয়া।

(فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوْا) যার আসল অর্থ তোমাদের প্রতি আদেশ এসেছে ধীরে ধীরে চলার এবং দ্রুতগামী পরিত্যাগ করা। তখন তোমরা যতটুকু সালাত পাবে, তা আদায় করবে। কেননা জমহূর ‘উলামারা দলীল পেশ করেছেন সালাতের যে কোন অংশ পাবে তাহলে জামা‘আতের ফাযীলাত পাবে। হাদীসের ‘আম্ বক্তব্য থেকে (فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوْا) দ্বারা যা কম বেশী পৃথক নেই। আরো বলা হয়, যে ব্যক্তি এক রাক্‘আতের চেয়ে কম পাবে সে জামা‘আতের ফাযীলাত পাবে না।

আয়াত ও হাদীসের মধ্যকার দ্বন্দ্বঃ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- فَاسْعَوْا إِلى ذِكْرِ اللّهِ ‘‘তোমরা সালাতের দিকে দ্রুত অগ্রসর হও’’- (সূরাহ্ আল জুমু‘আহ্ ৬২ : ৯)। আর এ হাদীসে তা নিষেধ করা হয়েছে। মূলত উভয়ের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই।

আয়াতে বর্ণিত فَاسْعَوْا দ্বারা قَصْدٌ বা ইচ্ছা করা বা অন্যান্য ব্যাস্ততা ছেড়ে দেয়া উদ্দেশ্য।

আর হাদীস প্রমাণ করে, ইমামকে যে অবস্থায় পাওয়া যাবে সে অবস্থায় তার সাথে মিলিত হওয়া মুস্তাহাব। আর এ হাদীসটিকে সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছে ইবনু আবী শায়বার একটি হাদীস। সেখানে বলা হয়েছে,

مَنْ وَجَدَنِيْ رَاكِعًا أَوْ قَائِمًا أَوْ سَاجِدًا فَلْيَكُنْ مَّعِىْ عَلى حَالَتِيْ اَلَّتِيْ أَنَا عَلَيْهَا.

যে ব্যক্তি আমাকে রুকূ‘ অথবা দাঁড়ানো অথবা সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) অবস্থায় পাবে সে আমার সাথে মিলিত হবে আমি যে অবস্থায় রয়েছি।

(فَأَتِمُّوا) (বাকী অংশ) তোমরা একা একা পূর্ণ করে নিবে। অধিকাংশ বর্ণনা এ শব্দে আর কতক বর্ণনায় (فَاقْضُوْا) শব্দ রয়েছে, অর্থাৎ- ‘তোমরা আদায় করে নিবে’ এসেছে। মাসবূক্ব তথা সালাতে যার রাক্‘আত ছুটে গেছে তার ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে যে, ইমামের পরে একাকী সালাতের যে অংশ আদায় করা হবে তা কি তার সালাতের প্রথমাংশ না শেষাংশ হিসেবে গণ্য হবে। ইমাম আবূ হানীফার মতে ছুটে যাওয়া সালাত যা সে ইমামের পর একাকী আদায় করবে তা তার সালাতের প্রথমাংশ হিসেবে গণ্য হবে, কেননা বর্ণনায় (اِقْضُوْا) শব্দ এসেছে আর এ ক্বাযা قَضَاء শব্দটি যা ছুটে বা খোয়া গেছে সেক্ষেত্রেই শুধু ব্যবহৃত হয়।

সুতরাং যার তিন রাক্‘আত ছুটে গেছে যখন ইমাম সালাম ফিরাবে সে দাঁড়াবে আর সূরাহ্ আল ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরাহ্ পড়বে, অতঃপর দাঁড়াবে তাশাহুদ (বৈঠক) ব্যতিরেকে এবং সালাতে সূরাহ্ আল ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরাহ্ পড়বে, অতঃপর বসবে এবং তাশাহুদ পড়বে, তারপর দাঁড়াবে অবশিষ্ট সালাত আদায় করবে সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্ সহকারে অন্য কোন সূরাহ্ পড়বে না। অতঃপর তাশাহহুদ পড়বে এবং সালাম ফিরাবে। এর উপর ভিত্তি করে ইমামের সাথে যে সালাতটি পেয়েছিল তা সালাতের শেষাংশ তথা শেষ রাক্‘আত আর পরবর্তী রাক্‘আতগুলো ক্বাযা স্বরূপ।

আর ইমাম শাফি‘ঈর মতে ছুটে যাওয়া সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) মাসবূক্ব ব্যক্তির সালাতের শেষাংশ হিসেবে গণ্য হবে, কেননা হাদীসের শব্দ أَتِمُّوْا তোমরা পূর্ণ কর, কেননা إِتْمَامْ (ইতমা-ম) শব্দটি কোন কিছু অবশিষ্ট রয়েছে এমন ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। সুতরাং যার তিন রাক্‘আত ছুটে গেছে ইমাম সালাম ফিরানোর পরে সে দাঁড়িয়ে এক রাক্‘আত সালাত আদায় করবে সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্ এবং অন্য একটি সূরাহ্ সহকারে, অতঃপর বসবে এবং তাশাহুদ পড়বে, অতঃপর দাঁড়িয়ে অবশিষ্ট দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করবে তাতে শুধুমাত্র সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্ পড়বে অন্য সূরাহ্ পড়বে না এর উপর ভিত্তি করে যে ইমামের সাথে যে সালাত পেয়েছিল তা তার প্রথম রাক্‘আত। দলীলস্বরূপ বায়হাক্বীর বর্ণনায় হারিস ‘আলী  (রাঃ) হতে مَا أَدْرَكْتَ فَهُوَ أَوَّلُ صَلَاتِكَ তিনি বলেনঃ তুমি (ইমামের সাথে) যা পাও তা তোমার প্রথম সালাত তথা প্রথম রাক্‘আত। বায়হাক্বীর অন্য বর্ণনা ক্বাতাদার হাদীস

أَنَّ عَلِيًّا قَالَ: مَا أَدْرَكْتَ مَعَ الْإِمَامِ فَهُوَ أَوَّلُ صَلَاتِكَ، وَاقْضِ مَا سَبَقَكَ مِنَ الْقُرْانِ

‘আলী (রাঃ) বলেন, ইমামের সাথে যা পাবে তা তোমার প্রথম রাক্‘আত আর তুমি ক্বাযা হিসেবে আদায় করো যা তোমাকে অতিক্রম করেছে কুরআন হতে।

আমার (ভাষ্যকারের) নিকট শ্রেষ্ঠ বা অধিক করণীয় শাফি‘ঈ-এর মত, কেননা অধিকাংশ বর্ণনায় أتموا শব্দ এসেছে।

আর এ মতে ইবনু মুনযির দলীল হিসেবে বলেনঃ সবাই ঐকমত্য হয়েছেন যে, تَكْبِيْرَةُ الْإِفْتِتَاحِ উদ্বোধনের তাকবীর কেবল প্রথম রাক্‘আতেই হয়।

হাদীস আরও প্রমাণ করে যে, রুকূ‘ পেলে তা রাক্‘আত হিসেবে গণ্য হবে না। যা ছুটে গেছে তা পূর্ণ করার আদেশ থাকায়; কেননা ক্বিরাআত (কিরআত) ও ক্বিয়াম (কিয়াম) ছুটে গেছে।

বিঃ দ্রঃ এই অধ্যায়ে দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ নেই। কারণ, সম্ভবত সাহিবুল মাসাবীহ এই অনুচ্ছেদের জন্য মুনাসিব-উপযুক্ত হাসান হাদীস খুঁজে পাননি।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)