পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৬১৫-[২৯] রাফি’ ইবনু খদীজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ’আসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার পর উট যাবাহ করতাম। এ উট ছাড়িয়ে দশ ভাগ করা হতো, তারপর রান্না করা হতো। আর আমরা রান্না করা এ মাংস (মাংস/মাংস/গোসত) সূর্যাস্তের আগে খেতাম। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
عَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ قَالَ: «كُنَّا نُصَلِّي الْعَصْرَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ تُنْحَرُ الْجَزُورُ فَتُقْسَمُ عَشْرَ قِسَمٍ ثُمَّ تُطْبَخُ فَنَأْكُلُ لَحْمًا نَضِيجًا قَبْلَ مَغِيبِ الشَّمْس»
ব্যাখ্যা: বর্ণিত হাদীস হতে স্পষ্টতই বুঝা যায়, ‘আসরের সালাতের পর হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কত লম্বা সময় থাকে। কারণ একটা উট যাবাহ করা হতে বিলিবণ্টন ও রান্না করে খেতে যথেষ্ট সময় লাগে। এটা পরিষ্কার হয় যে, ‘আসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) এর প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা হতো। এ হাদীস ‘আসরের সালাতকে ওয়াক্ত হবার সাথেই আদায় করা শারী‘আতসম্মত হওয়ার দলীল। এটাই জমহূর ‘আলিমগণের দলীল। এ হাদীস ইমাম আবূ হানীফার ঐ কথাকে খণ্ডন করে যেখানে তিনি ‘আসরের ওয়াক্ত কোন বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার সময় বুঝিয়েছেন।
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৬১৬-[৩০] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা এক রাতে শেষ ’ইশার সালাতের জন্য রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অপেক্ষা করছিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমন সময় বের হলেন, যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ অতিক্রান্ত অথবা এরও কিছু পর। আমরা জানি না, পরিবারের কোন কাজে তিনি ব্যতিব্যাস্ত ছিলেন, নাকি অন্য কিছু। তিনি বের হয়ে বললেন, তোমরা এমন একটি সালাতের অপেক্ষা করছো, যার জন্য অন্য ধর্মের লোকেরা অপেক্ষা করে না। আমার উম্মাতের জন্য কঠিন হবে মনে না করলে তাদের নিয়ে এ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আমি এ সময়েই আদায় করতাম। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুয়ায্যিনকে নির্দেশ দিলে সে ইক্বামাত(ইকামত/একামত) দিল। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করালেন। (মুসলিম)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: مَكَثْنَا ذَاتَ لَيْلَةٍ نَنْتَظِرُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِصَلَاةِ الْعِشَاءِ الْآخِرَةِ فَخَرَجَ إِلَيْنَا حِينَ ذَهَبَ ثُلُثُ اللَّيْلِ أَوْ بَعْدَهُ فَلَا نَدْرِي أَشَيْءٌ شَغَلَهُ فِي أَهْلِهِ أَوْ غَيْرُ ذَلِكَ فَقَالَ حِينَ خَرَجَ: «إِنَّكُمْ لَتَنْتَظِرُونِ صَلَاةً مَا يَنْتَظِرُهَا أَهْلُ دِينٍ غَيْرُكُمْ وَلَوْلَا أَنْ يَثْقُلَ عَلَى أُمَّتِي لَصَلَّيْتُ بِهِمْ هَذِهِ السَّاعَةَ» ثُمَّ أَمَرَ الْمُؤَذِّنَ فَأَقَامَ الصَّلَاة وَصلى. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: এক রাতে মসজিদে ‘ইশার সালাতের সময় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য মুসল্লীগণ অপেক্ষমাণ ছিলেন। রাতের এক-তৃতীয়াংশ বা তারও বেশি সময় চলে গেলে আমাদের মধ্যে আসলেন। প্রাত্যহিক অভ্যাস থেকে কোন্ জিনিস হতে তাকে বিরত রেখেছে না অন্য কিছু। হতে পারে যে, তিনি ‘‘ইশার সালাতকে বিলম্বিত করে মানুষকে রাতের প্রথমভাগ থেকে সালাতের জন্য অপেক্ষা’’ করার মতো একটি ‘ইবাদাতে মগ্ন রাখতে চেয়েছিলেন।
ঘর থেকে বেরিয়ে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন যে, এটা এমন এক সালাতের জন্য অপেক্ষা যা অন্য কোন ধর্মের অনুসারীরা করে না। কেননা এ সালাত (‘ইশা) শুধু এ উম্মাতের জন্য নির্দিষ্ট। এটা পূর্বে মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) এর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। এ সালাতের জন্য অপেক্ষা বিশেষ মর্যাদার, অতএব তোমরা এরূপ অপেক্ষা করাকে অপছন্দ করো না। তাঁর শেষ কথায় মনে হয় ‘ইশার সালাত দেরী করে আদায়ের মধ্যে সাওয়াব থাকা সত্ত্বেও উম্মাতের জন্য কষ্টের কথা ভেবে তা’ বিধান সাব্যস্ত করেননি। অতএব সম্ভব হলে এ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বিলম্বিত করে আদায় করা অতি উত্তম।
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৬১৭-[৩১] জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের সালাতের মতই সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। কিন্তু তিনি ’ইশার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) তোমাদের চাইতে কিছু দেরীতে আদায় করতেন এবং সংক্ষেপ করতেন। (মুসলিম)[1]
وَعَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي الصَّلَوَاتِ نَحْوًا مِنْ صَلَاتِكُمْ وَكَانَ يُؤَخِّرُ الْعَتَمَةَ بَعْدَ صَلَاتكُمْ شَيْئا وَكَانَ يخف الصَّلَاة. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সাধারণের সময়ে আদায় করতেন। কেবল ‘ইশার সালাত সাধারণের থেকে কিছু সময় পরে তিনি আদায় করতেন এবং তিনি সালাতকে সংক্ষেপ করতেন।
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইমাম হিসেবে এরূপ করতেন। যদিও মাগরিবের সালাতের দু’ রাক্‘আতে তাঁর সূরাহ্ আল আ‘রাফ পড়ারও প্রমাণ রয়েছে। তবে অধিকাংশ সময় তিনি সংক্ষিপ্ত করে সালাত আদায় করতেন। এ হাদীস দ্বারাও ‘ইশার সালাত বিলম্বিত করা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়। রাতের অর্ধাংশ বা এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্বিত করা, এর বেশি নয়।
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৬১৮-[৩২] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একরাতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায় করলাম। (সেদিন) তিনি অর্ধেক রাত পর্যন্ত মসজিদে এলেন না। [তিনি এসে] আমাদেরকে বললেন, তোমরা তোমাদের নিজ নিজ জায়গায় বসে থাকো। তাই আমরা বসে রইলাম। এরপর তিনি বললেন, অন্যান্য লোক সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছে। বিছানায় চলে গেছে। আর জেনে রেখো, তোমরা যতক্ষণ সালাতের অপেক্ষা করবে, ততক্ষণ সময় সালাতে (রত থাকা) গণ্য হবে। আমি যদি বুড়ো, দুর্বল ও অসুস্থদের দিকে লক্ষ্য না রাখতাম তাহলে সর্বদা এ সালাত অর্ধেক রাত পর্যন্ত দেরী করে আদায় করতাম। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]
وَعَن أبي سعيد الْخُدْرِيّ قَالَ: صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَاةَ الْعَتَمَة فَلم يخرج إِلَيْنَا حَتَّى مَضَى نَحْوٌ مِنْ شَطْرِ اللَّيْلِ فَقَالَ: «خُذُوا مَقَاعِدَكُمْ» فَأَخَذْنَا مَقَاعِدَنَا فَقَالَ: «إِنَّ النَّاسَ قد صلوا وَأخذُوا مضاجعهم وَإِنَّكُمْ لم تَزَالُوا فِي صَلَاةٍ مَا انْتَظَرْتُمُ الصَّلَاةَ وَلَوْلَا ضَعْفُ الضَّعِيفِ وَسَقَمُ السَّقِيمِ لَأَخَّرْتُ هَذِهِ الصَّلَاةَ إِلَى شَطْرِ اللَّيْلِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ
ব্যাখ্যা: এ হাদীস দ্বারা স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয় যে, যদি মুসল্লীদের মধ্যে দুর্বল ব্যক্তি, রোগী কিংবা ব্যাস্ত মানুষ না থাকে তাহলে ‘ইশার সালাতকে বিলম্বিত করা সর্বোত্তম। ‘আল্লামা ইবনু হাজার আল্ আসক্বালানী (রহঃ) তাঁর ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) এর হাদীস এবং আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর পূর্বোক্ত হাদীস ‘‘আমি যদি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম তাহলে অবশ্যই আমি তাদেরকে ‘ইশার সালাতকে রাতের এক-তৃতীয়াংশ বা অর্ধাংশ পর্যন্ত বিলম্বিত করতে আদেশ দিতাম’’-এর সূত্রে বলা যায়, যে ব্যক্তি ‘ইশার সালাতকে বিলম্বিত করার ক্ষমতা রাখে এবং মুক্তাদী মুসল্লীদের জন্য কষ্টকরও হয় না, এমন অবস্থায় ‘ইশার সালাতকে বিলম্বিত করা সর্বোত্তম। ইমাম ত্বহাবী (রহঃ) বলেন, ‘ইশার সালাতকে রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্বিত করে আদায় করা মুস্তাহাব। ইমাম মালিক, আহমাদ এবং অধিকাংশ সাহাবী ও তাবি‘ঈ এ মতই পোষণ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৬১৯-[৩৩] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)-কে তোমাদের চেয়ে বেশী আগে ভাগে আদায় করতেন। আর তোমরা ’আসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)-কে তাঁর চেয়ে বেশী আগে আদায় কর। (আহমাদ ও তিরমিযী)[1]
وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَشَدَّ تَعْجِيلًا لِلظُّهْرِ مِنْكُمْ وَأَنْتُمْ أَشَدُّ تَعْجِيلًا لِلْعَصْرِ مِنْهُ. رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: এ হাদীস অনুযায়ী যুহরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) তাড়াতাড়ি পড়া মুস্তাহাব। ইবনু কুদামাহ্ তাঁর ‘‘আল্ মুগনী’’ গ্রন্থে বলেন, গরম ও বৃষ্টির দিন ব্যতীত অন্য দিনগুলোতে যুহরের সালাত তাড়াতাড়ি আদায় করা মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে কোন মতানৈক্য নেই। মুল্লা ‘আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন, সার্বিকভাবে এ হাদীস দ্বারা ‘আসরের সালাত দেরী করে আদায় করা মুস্তাহাব সাব্যস্ত হয়, যেমনটি আমাদের (হানাফী) মাযহাবের মতো। আমি (লেখক) বলি, এ হাদীস দ্বারাই ‘আয়নী তাঁর ‘‘আল্ বিদায়াহ্ শারহিল হিদায়াহ্’’ গ্রন্থে ‘আসর দেরী করে আদায় করা মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে দলীল দিয়েছেন। শায়খ ‘আবদুল হাই লাক্ষ্ণৌভী এ দলীল সাব্যস্ত করার ব্যাপারে উত্তরে বলেন, অভিজ্ঞদের নিকট এটা অস্পষ্ট নয় যে, তাদের মতের পক্ষে এ হাদীসকে ভিত্তি ধরার কোন সুযোগ নেই। কেননা এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ‘আসরের সালাতকে তাড়াতাড়ি আদায়ের তুলনায় যুহরকে তাড়াতাড়ি আদায় করা গুরুতর। এটা দ্বারা এ কথা প্রমাণিত হয় না যে, ‘আসরের সালাতকে দেরী করে আদায় করা মুস্তাহাব।
শায়খ ‘আবদুর রহমান মুবারকপূরী তাঁর আত্ তিরমিযীর শারাহ গ্রন্থে মুল্লা ‘আলী ক্বারী’র বক্তব্য উল্লেখের পরে লিখেছেন, এ হাদীস ‘আসরের সালাতকে দেরী করে আদায় করা মুস্তাহাব হওয়ার পক্ষে কোন দলীল নয়। হ্যাঁ! তবে এ কথা ঠিক যে, যাদেরকে উদ্দেশ করে উম্মু সালমাহ্ (রাঃ) এ কথাগুলো বলেছিলেন তারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর থেকে বেশি তাড়াতাড়ি ‘আসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। ‘আসরের সালাতকে তাড়াতাড়ি আদায় করা মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে অনেক সহীহ ও স্পষ্ট হাদীস বিদ্যমান। সালাত তাড়াতাড়ি আদায়ের উত্তমতা সম্পর্কিত স্পষ্ট সহীহ হাদীসগুলোকে পরিত্যাগ করে এ জাতীয় হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করা বা মাসআলাহ্ সাব্যস্ত করার চেষ্টা করা মাযহাবী তাকলীদ ছাড়া আর কিছুই নয়। আল্লাহ তা‘আলা যাকে চান তাকে সিরাতে মুস্তাক্বীমে পরিচালিত করেন।
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৬২০-[৩৪] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (যুহরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)) গরমকালে ঠাণ্ডা করে (গরম কমলে) আদায় করতেন আর শীতকালে আগে আগে আদায় করতেন। (নাসায়ী)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا كَانَ الْحَرُّ أَبْرَدَ بِالصَّلَاةِ وَإِذَا كَانَ الْبَرْدُ عَجَّلَ. رَوَاهُ النَّسَائِيُّ
ব্যাখ্যা: গরমের সময়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাতকে গরম একটু কমলে আদায় করতেন। এ হাদীস দ্বারা গরমের সময় যুহরের সালাতকে প্রথম ওয়াক্ত থেকে একটু পিছিয়ে আদায় করার বৈধতা প্রমাণিত হয়। তবে জুমু‘আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) দেরী করে আদায়ের বৈধতা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। যারা জুমু‘আর সালাত দেরী করে আদায় করার পক্ষে তাদের নিকট যুহরের সালাতের উপর জুমু‘আহকে ক্বিয়াস করা ছাড়া কোন দলীল নেই। এ ব্যাপারে জুমু‘আর খুৎবাহ্ ও সালাত অধ্যায়ে আলোচনা আসবে।
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৬২১-[৩৫] ’উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনঃ আমার পর শীঘ্রই তোমাদের ওপর এমন সব প্রশাসক নিযুক্ত হবে যাদেরকে নানা কাজ ওয়াক্তমত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ে বিরত রাখবে, এমনকি তার ওয়াক্ত চলে যাবে। অতএব (সে সময়) তোমরা তোমাদের সালাত ওয়াক্তমত আদায় করতে থাকবে। এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহর রসূল! তারপর আমি কি তাদের সাথে এ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আবার আদায় করবো? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّهَا سَتَكُونُ عَلَيْكُمْ بَعْدِي أُمَرَاءُ يَشْغَلُهُمْ أَشْيَاءُ عَنِ الصَّلَاةِ لِوَقْتِهَا حَتَّى يَذْهَبَ وَقْتُهَا فَصَلُّوا الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا» . فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أُصَلِّي مَعَهم؟ قَالَ: «نعم» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, প্রত্যেক সালাতের নির্দিষ্ট সময়ে তা আদায় করা এবং অত্যাচারী শাসক কর্তৃক সালাতকে বিলম্বিত করার সিদ্ধান্তকে পরিত্যাগ করা ওয়াজিব (আবশ্যক)। আরো প্রমাণ হয় যে, ঐ সব শাসকদের সাথে পুনরায় সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা মুস্তাহাব। কারণ, তাদের সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় না করা মুসলিম জামা‘আতে অনৈক্য/বিভক্তি সৃষ্টি করবে। তবে দ্বিতীয়বার সালাত আদায় করা নফল মাত্র। এ হাদীস দ্বারা আরো প্রমাণ হয় যে, ফাসিক্ব ব্যক্তির ইমামতি/নেতৃত্ব বৈধ।
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৬২২-[৩৬] ক্ববীসাহ্ ইবনু ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার পর তোমাদের ওপর এমন সব শাসক নিযুক্ত হবে, যারা সালাতকে পিছিয়ে ফেলবে। যা তোমাদের জন্য কল্যাণ (মনে) হলেও তাদের জন্য অকল্যাণ ডেকে আনবে। তাই যতদিন তারা ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)হ্ (কিবলাহ/কিবলা) হিসেবে (কা’বাহ্-কে) মেনে নিবে ততদিন তাদের পিছনে তোমরা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে থাকবে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ قَبِيصَةَ بْنِ وَقَّاصٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَكُونُ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ مِنْ بَعْدِي يُؤَخِّرُونَ الصَّلَاةَ فَهِيَ لَكُمْ وَهِيَ عَلَيْهِمْ فَصَلُّوا مَعَهُمْ مَا صَلَّوُا الْقِبْلَةَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার পরে তোমাদের ওপরে এমন শাসক দায়িত্বশীল হবে যারা সালাতকে তার নির্দিষ্ট ওয়াক্ত থেকে বিলম্বিত করে আদায় করবে। তখন ঐ সব সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) অর্থাৎ- বিলম্বিত করা সালাত তোমাদের জন্যে এ অর্থে উপকারী হবে যে, তোমরা তাদের অনুসরণের সুযোগে সালাতকে দেরী করে নিজেদের কাজ সম্পাদন করতে পারবে। আর এটা তাদের জন্য ক্ষতিকারক হবে এজন্য যে, সালাতকে দেরী না করে আদায় করার ক্ষমতা তাদের ছিল কিন্তু আখিরাতের কাজের (সালাতের) চেয়ে দুনিয়ার কাজ তাদেরকে বেশি ব্যাস্ত রেখেছে। এমতাবস্থায় তারা যতক্ষণ বায়তুল্লাহতে অবস্থিত কা‘বাকে ক্বিবলাহ্ (কিবলাহ/কিবলা) করে সালাত আদায় করে, অর্থাৎ- মুসলিম থাকে ততক্ষণ তোমরা তাদের সাথে জামা‘আতে সালাত আদায় করো যদিও তারা সালাতকে এর ওয়াক্ত থেকে বিলম্বিত করে।
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৬২৩-[৩৭] ’উবায়দুল্লাহ ইবনু ’আদী ইবনুল খিয়ার (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি খলীফাহ্ ’উসমান (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলেন। তখন তিনি নিজ ঘরে অবরুদ্ধ ছিলেন। তাকে তিনি বললেন, আপনিই জনগণের ইমাম। কিন্তু আপনার ওপর এ বিপদ আপতিত যা আপনি দেখছেন। এ সময় বিদ্রোহী নেতা (ইবনু বিশর) আমাদের সালাতে ইমামাত করছে। এতে আমরা গুনাহ মনে করছি। তখন তিনি [’উসমান (রাঃ)] বললেন, মানুষ যেসব কাজ করে, এসবের মধ্যে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হচ্ছে সর্বোত্তম। অতএব মানুষ যখন ভালো কাজ করবে, তাদের সাথে শরীক হবে। যখন মন্দ কাজ করবে, তাদের এ মন্দ কাজ হতে দূরে সরে থাকবে। (বুখারী)[1]
وَعَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عَدِيِّ بْنِ الْخِيَارِ: أَنَّهُ دَخَلَ عَلَى عُثْمَانَ وَهُوَ مَحْصُورٌ فَقَالَ: إِنَّكَ إِمَامُ عَامَّةٍ وَنَزَلَ بِكَ مَا تَرَى وَيُصلي لنا إِمَام فتْنَة وننحرج. فَقَالَ: الصَّلَاة أحسن مَا يعْمل النَّاس فَإِذا أحسن النَّاس فَأحْسن مَعَهم وَإِذا أساؤوا فاجتنب إساءتهم. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: (وَهُوَ مَحْصُورٌ) ‘‘তখন তিনি অবরুদ্ধ ছিলেন।’’ অর্থাৎ- ‘উসমান (রাঃ) তখন নিজ বাড়ীতেই অবরুদ্ধ ছিলেন। ফিতনাহ্ (ফিতনা) সৃষ্টিকারীগণ তাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। তাঁকে তাঁর সর্বপ্রকার কর্ম সম্পাদনে বাধা সৃষ্টি করেছিল। তাদের ধারণা ছিল যে, মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বাকর (রাঃ)-কে তাঁর নির্দেশেই হত্যা করা হয়েছে। এজন্য মিসরের অধিবাসী এবং অন্যান্য কিছু লোক একত্র হয়ে তাকে পদচ্যুত অথবা হত্যা করার চেষ্টায় লিপ্ত ছিল। অথচ তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ নির্দোষ।
(إِنَّكَ إمَامُ عَامَّةٍ) ‘‘আপনিই জনগণের ইমাম।’’ অর্থাৎ- আপনিই আমীরুল মু’মিনীন এবং মুসলিমদের খলীফাহ্ ও তাদের ইমাম। কেননা শূরা সদস্যগণের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি খলীফাহ্ নিযুক্ত হয়েছেন। অতএব তিনিই একমাত্র বৈধ নেতা ও ইমাম।
(وَيُصَلِّي لَنَا إِمَامُ فِتْنَةٍ) ‘‘আমাদের ইমামাত করেন ফিতনাহ্ (ফিতনা) সৃষ্টিকারীদের ইমাম।’’ অর্থাৎ- যিনি আমাদের সালাতে ইমামাত করেন তিনি ফিতনাহ সৃষ্টিকারীদের নেতা ‘আবদুর রহমান ইবনু উদায়স অথবা কিনানাহ্ ইবনু বিশর এরা উভয়েই মিসরের অধিবাসী এবং তাদের নেতা ছিলেন। আর ‘আবদুর রহমান ইবনু উদায়স তাদের অন্যতম ছিলেন যারা মিসরবাসীকে ‘উসমান (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছিলেন।
(وَنَتَحَرَّجُ) ‘‘আমরা তার পিছনে সালাত আদায় করতে গুনাহ মনে করি।’’ অর্থাৎ- আমরা তার অনুসরণ করাকে গুনাহের কাজ বলে মনে করি।
(الصَّلَاةُ أَحْسَنُ مَا يَعْمَلُ النَّاسُ) ‘‘মানুষ যেসব কাজ করে তার মধ্যে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হচ্ছে সর্বোত্তম কাজ।’’ অর্থাৎ- সালাত হচ্ছে মুসলিমদের সর্বোত্তম কাজ। অতএব ইমামাত যেই করুক যদিও সে ফাসিক্ব হয় তথাপি তার পিছনেই সালাত আদায় করা উচিত।
(وَإِذَا أَسَاءُوا فَاجْتَنِبْ إِسَاءَتَهُمْ) ‘‘যখন তারা মন্দ কাজ করবে, তাদের এ মন্দ কাজ হতে দূরে সরে থাকবে।’’ অর্থাৎ- সালাত ব্যতীত খারাপ কথা, কাজ ও বিশ্বাসে তাদের অনুসরণ করা থেকে দূরে থাকবে।
‘উসমান (রাঃ)-এর এ বক্তব্য থেকে জানা যায় যে, যার পিছনে সালাত আদায় করা মাকরূহ এমন ব্যক্তির পিছনেও জামা‘আতে সালাত আদায় করা উত্তম সালাতের জামা‘আত বিনষ্ট করার চাইতে। জেনে রাখা ভালো যে, ফাসিক্বের ইমামাত বৈধ কি-না এ বিষয়ে ‘উলামাদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। আমার (‘উবায়দুল্লাহ্ মুবারাকপূরীর) দৃষ্টিতে ফাসিক্বের ইমামাত বৈধ যতক্ষণ পর্যন্ত ফাসিক্বের কাজ তাকে ইসলাম থেকে খারিজ না করে দেয়।