পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৬০৫-[১৯] ’আলী (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে ’আলী! তিনটি বিষয়ে দেরী করবে না (১) সালাতের সময় হয়ে গেলে আদায় করতে দেরী করবে না। (২) জানাযাহ্ উপস্থিত হয়ে গেলে তাতেও দেরী করবে না। (৩) স্বামীবিহীন নারীর উপযুক্ত বর পাওয়া গেলে তাকে বিয়ে দিতেও দেরী করবে না। (তিরমিযী)[1]
عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَا عَلِيُّ ثَلَاثٌ لَا تُؤَخِّرْهَا الصَّلَاةُ إِذَا أَتَتْ وَالْجِنَازَةُ إِذَا حَضَرَتْ وَالْأَيِّمُ إِذَا وَجَدْتَ لَهَا كُفُؤًا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: হাদীসে বর্ণিত এ তিনটি বিষয়কে বিলম্ব করার মধ্যে বিপদ/ক্ষতি রয়েছে। তাই এগুলো তাড়াতাড়ি করতে হবে। এ তিনটি বিষয় ঐ হাদীসের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে না যে হাদীসে বলা হয়েছে ‘‘তাড়াহুড়া শায়ত্বনের (শয়তানের) পক্ষ থেকে’’ বুখারী-মুসলিমে বর্ণিত হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা জানাযার ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি করো’’। এ হাদীসের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয় যে, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের মাকরূহ তিন সময়েও জানাযার সালাত আদায় করতে দোষ নেই। তবে এ তিনটি সময়ের পূর্বে যদি জানাযাহ্ উপস্থিত হয় আর ঐ নিষিদ্ধ সময়গুলোতে পড়া হয় তাহলে মাকরূহ হবে। স্বাভাবিকভাবে ফাজরের (ফজরের) সালাতের পরে বা পূর্বে এবং ‘আসরের সালাতের পরে জানাযাহ্ আদায় করতে কোন বাধা নেই।
তৃতীয় বিষয়টি হলো স্বামীহীনা নারী যেই হোক তার উপযুক্ত পুরুষ পাওয়া গেলে বিবাহ দিতে বিলম্ব করা উচিত না। এখানে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সমতার বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। অন্যান্য সৎগুণের মধ্যে ইসলাম বিষয়ে সমতা বেশি লক্ষণীয়।
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৬০৬-[২০] (’আবদুল্লাহ) ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) প্রথম সময়ে আদায় করা আল্লাহকে খুশী করা এবং শেষ সময়ে আদায় করা আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাওয়ার শামিল। (অর্থাৎ- গুনাহ হতে বেঁচে থাকা) (তিরমিযী)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْوَقْتُ الْأَوَّلُ مِنَ الصَّلَاةِ رِضْوَانُ اللَّهِ وَالْوَقْتُ الْآخَرُ عَفْوُ اللَّهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: ‘ইশার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) এবং খুব গরমকালে যুহরের সালাত ব্যতীত বাকী সালাতসমূহ প্রথম ওয়াক্তে আদায় করার মাধ্যমে মুসল্লী আল্লাহর সন্তুষ্টির অধিকারী হন। আর সালাতের নির্ধারিত সময়ের শেষ সময়, চলে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় যেমন সূর্য পশ্চিমাকাশে অস্ত যাওয়ার প্রাক্কালে হলুদ বর্ণ ধারণ করলে ‘আসরের সালাত এবং রাতের অর্ধাংশ অতিবাহিত হওয়ার পর ‘ইশার সালাত আদায় করা। এর মাধ্যমে সালাত আদায় না করার গুনাহ হতে ক্ষমা পাওয়া যায় কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যায় না। এ হাদীস দ্বারা আবারও প্রমাণিত হলো যে, প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায় সর্বোত্তম ‘আমল।
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৬০৭-[২১] উম্মু ফারওয়াহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন কাজ (’আমল) বেশী উত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সালাতকে তার প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা। (আহমাদ, তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীস ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার আল ’উমারী ছাড়া আর কারো নিকট হতে বর্ণিত হয়নি। তিনিও মুহাদ্দিসগণের নিকট সবল নন।
وَعَن أم فَرْوَة قَالَتْ: سُئِلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيُّ الْأَعْمَالِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: «الصَّلَاةُ لِأَوَّلِ وَقْتِهَا» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ
وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: لَا يُرْوَى الْحَدِيثُ إِلَّا مِنْ حَدِيثِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ الْعُمَرِيِّ وَهُوَ لَيْسَ بِالْقَوِيِّ عِنْد أهل الحَدِيث
ব্যাখ্যা: সাওয়াব বেশী হওয়ার দিক থেকে কোন্ সাওয়াবের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম ‘আমল সংক্রান্ত প্রশ্নে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম ওয়াক্তে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের কথা বলেছেন। সালাতের নির্ধারিত ওয়াক্তের প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা সর্বোত্তম ‘আমল- এ কথা এ হাদীসেও প্রমাণিত।
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৬০৮-[২২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দুনিয়া হতে উঠিয়ে নেয়ার আগ পর্যন্ত তিনি কোন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)কে এর শেষ ওয়াক্তে দু’বারও আদায় করেননি। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: مَا صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَاةً لِوَقْتِهَا الْآخِرِ مَرَّتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ تَعَالَى. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু ওয়াক্ত সালাতকে এর শেষ ওয়াক্তে আদায় করেছিলেন। তবে এ ঘটনা তার মৃত্যু পর্যন্ত মাত্র একবার ঘটেছে। সেটা এমন যে, একবার এক ব্যক্তি তাঁর (রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর) নিকট সালাতের সময় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ওয়াক্তের শেষ সীমা বুঝাতে গিয়ে শেষ ওয়াক্তে তা আদায় করেছিলেন। অন্য হাদীসে জিবরীল (আঃ) এর ইমামতিতে যখন শেষ ওয়াক্তে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছিলে মর্মে যে বর্ণনা আছে, সেটাও ছিল তাঁর জিরবীল (আঃ) কর্তৃক প্রশিক্ষণ প্রাপ্তির উদ্দেশে মাত্র। তাই সে ঘটনা এ আলোচনায় আসবে না। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায় করতেন। শেষ ওয়াক্তে আদায়ের ঘটনা বিরল। আর এর দ্বারাই এর বৈধতার কথা আসে। অন্য কিছু নয়।
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৬০৯-[২৩] আবূ আইয়ূব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাত সর্বদাই কল্যাণ লাভ করবে, অথবা তিনি বলেছেন, ফিতরাত-এর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে, যদি তারা তারকারাজি উজ্জ্বল হয়ে উঠা পর্যন্ত মাগরিবের সালাতকে বিলম্বিত না করে।[1]
وَعَنْ أَبِي أَيُّوبَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا تَزَالُ أُمَّتِي بِخَيْرٍ أَوْ قَالَ: عَلَى الْفِطْرَةِ مَا لَمْ يُؤَخِّرُوا الْمَغْرِبَ إِلَى أَنْ تَشْتَبِكَ النُّجُومُ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার উম্মাত ততক্ষণ পর্যন্ত কল্যাণের উপর থাকবে বা ফিতরাত তথা স্থায়ী সুন্নাত অথবা ইসলাম বা দৃঢ়তার উপর থাকবে (বর্ণনাকারীর সন্দেহ যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনটি বলেছেন, কল্যাণ না ফিতরাত?) যতক্ষণ সূর্য অস্ত যাওয়ার পর তারকার আলো ছড়িয়ে যাওয়া বা অন্ধকার নেমে আসার পূর্বেই মাগরিবের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ করার তাগিদ এসেছে। অথাৎ মাগরিবের সালাত সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথেই আদায় করা মুসতাহাব বা পছন্দনীয় এবং তারকা উজ্জ্বল হওয়া পর্যন্ত বিলম্বিত করা মাকরূহ (অপছন্দনীয়)। এ বিষয়ে শী‘আরা (রাফিযী) আমাদের বিপরীত। তারা মাগরিবের সালাতকে তারকা উঠা পর্যন্ত বিলম্বিত করাকেই মুসতাহাব মনে করে।
ইমাম নাবাবী তার শারহে মুসলিম গ্রন্থে লিখেছেন, ‘‘এ ব্যাপারে ইজমা (ঐকমত্য) হয়েছে যে, সূর্য অস্ত যাওয়ার পর তাড়াতাড়িই মাগরিবের সালাত আদায় করতে হবে’’। শী‘আদের দিকে দৃষ্টি দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। কারণ এ মত ভিত্তিহীন। শাফাক্ব (সূর্য অস্ত যাওয়ার পর পশ্চিমাকাশে দৃশ্যমান লাল আভা) বিলীন হওয়ার সময় পর্যন্ত মাগরিবের সালাত আদায় দ্বারা মাগরিবের শেষ সময় বর্ণনা করা উদ্দেশ্য। কেননা এটা ছিল প্রশ্নকারীর উত্তরে বলা কথা। সালাতের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পরপরই দ্রুত তা আদায় করাই ছিল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অভ্যাস। শার‘ঈ ওযর (অযুহাত) ছাড়া এর ব্যতিক্রম ঠিক নয়।
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৬১০-[২৪] দারিমী এ হাদীস ’আব্বাস (রাঃ)থেকে বর্ণনা করেছেন।[1]
وَرَوَاهُ الدَّارمِيّ عَن الْعَبَّاس
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৬১১-[২৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর হবে মনে না করলে তাদেরকে ’ইশার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) রাতের এক-তৃতীয়াংশ অথবা অর্ধরাত পর্যন্ত দেরী করে আদায়ের নির্দেশ দিতাম। (আহমাদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ্)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْلَا أَن أشق على أمتِي لأمرتهم أَنْ يُؤَخِّرُوا الْعِشَاءَ إِلَى ثُلُثِ اللَّيْلِ أَوْ نصفه» . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: হাদীসে ‘‘অথবা’’ শব্দ গ্রীষ্মকালে ‘ইশার সালাত রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত এবং শীতকালে অর্ধরাত্র পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়ার আদেশ বুঝাতে এসে থাকতে পারে। এ হাদীস থেকে ‘ইশার সালাতকে তাড়াতাড়ি আদায়ের থেকে দেরি করে আদায় করা উত্তম প্রমাণিত হয়েছে। পূর্বে যেসব হাদীসে সালাতকে প্রথম ওয়াক্তে আদায়ের ফাযীলাত বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর সাথে এ হাদীসের কোন বৈপরীত্য নেই। কারণ ঐ সব হাদীস ব্যাপকার্থক। আর এ হাদীস এবং ‘ইশার সালাতকে বিলম্বিত করা সম্পর্কিত হাদীসসমূহ নির্দিষ্ট অর্থবোধক (খাস)। তাই আমের উপর খাসের প্রাধান্য থাকবে।
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৬১২-[২৬] মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা এ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) (অর্থাৎ- ’ইশার সালাত) দেরী করে আদায় করবে। কারণ এ সালাতের মাধ্যমে অন্যসব উম্মাতের ওপর তোমাদের বেশী মর্যাদা দেয়া হয়েছে। তোমাদের আগের কোন উম্মাত এ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেনি। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَعْتِمُوا بِهَذِهِ الصَّلَاةِ فَإِنَّكُمْ قَدْ فُضِّلْتُمْ بِهَا عَلَى سَائِرِ الْأُمَمِ وَلَمْ تُصَلِّهَا أُمَّةٌ قَبْلَكُمْ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: ‘‘তোমরা ‘ইশার সালাত কে বিলম্বিত করে আদায় করবে’’- এ হাদীস দ্বারাও ‘ইশার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) এর প্রথম ওয়াক্তে আদায় না করে শেষ ওয়াক্তে আদায় করা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়। এ হাদীস দ্বারা বরং ‘ইশার সালাতকে দেরী করে আদায় করার ফাযীলাতের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। আর দেরী বলতে এখানে রাত্রের এক-তৃতীয়াংশ বা অর্ধরাত্র পর্যন্ত এরপরে নয়।
এ হাদীস এবং জিবরীল (আঃ) এর ঐ হাদীস, ‘‘এটা আপনার পূর্বেকার নাবীগণের ওয়াক্ত’’ এ দু’ হাদীসের মধ্যে সামঞ্জস্য এভাবে যে, পূর্বেকার রসূলগণ ‘ইশার সালাত আদায় করতেন নফল বা অতিরিক্ত হিসেবে। এটা ফরয ছিল না। বিষয়টি অনেকটা তাহাজ্জুদের সালাতের মতো যে, তাহাজ্জুদ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব ছিল কিন্তু আমাদের ওপর তেমন নয়।
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৬১৩-[২৭] নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি খুব ভালোভাবে জানি তোমাদের এ সালাতের, অর্থাৎ- শেষ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ’ইশার ওয়াক্ত সম্পর্কে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তৃতীয়বার (তৃতীয় রাতের) চাঁদ অস্ত যাবার পর এ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। (আবূ দাঊদ ও দারিমী)[1]
وَعَن النُّعْمَان بن بشير قَالَ: أَنَا أَعْلَمُ بِوَقْتِ هَذِهِ الصَّلَاةِ صَلَاةِ الْعِشَاءِ الْآخِرَةِ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّيهَا لِسُقُوطِ الْقَمَرِ لِثَالِثَةٍ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد والدارمي
ব্যাখ্যা: (عِشَاءِ الْاخِرَةِ) অর্থাৎ- শেষ ‘ইশা বলা হয়েছে এজন্য যে, এ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) মাগরিবের শেষে পড়া হতো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তৃতীয় রাতের চাঁদ যখন ডুবতো তখন ‘ইশার সালাত আদায় করতেন- এ সময়টি কখন তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কিছুদিন এ সময়ে সালাত আদায় করতে দেখে ধারণা করেছেন যে, তা’ সর্বদা এ সময়েই আদায় করতেন। মূলত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সালাত প্রতিদিন কোন একটি নির্ধারিত সময়ে আদায় করতেন না। আহমাদ, বুখারী, মুসলিম, আবূ দাঊদ ও নাসায়ী-তে উল্লিখিত জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদায়কৃত সালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কিত বর্ণনায় পাওয়া যায়, ‘‘রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ‘ইশার সালাতকে বিলম্বিত করতেন আবার কখনো তাড়াতাড়ি আদায় করতেন। যখন তিনি দেখতেন যে, লোকেরা সমবেত হয়ে গেছে তখন তাড়াতাড়ি আদায় করতেন, যখন দেখতেন লোকেরা মসজিদে আসতে বিলম্ব করছে তখন তিনিও বিলম্বিত করতেন’’।
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৬১৪-[২৮] রাফি’ ইবনু খদীজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ফজরের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ফর্সা আলোতে আদায় কর। কারণ ফর্সা আলোতে সালাত আদায় করলে অনেক বেশী সাওয়াব পাওয়া যায়। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও দারিমী)[1]
وَعَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَسْفِرُوا بِالْفَجْرِ فَإِنَّهُ أَعْظَمُ لِلْأَجْرِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالدَّارِمِيُّ وَلَيْسَ عِنْدَ النَّسَائِيِّ: «فَإِنَّهُ أَعْظَمُ لِلْأَجْرِ»
ব্যাখ্যা: (فَإِنَّه أَعْظَمُ لِلْأَجْرِ) ‘‘ফর্সা আলোতে (ফজরের)) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলে অনেক বেশী সাওয়াব পাওয়া যায়।’’
অত্র হাদীস দ্বারা হানাফীগণ দলীল পেশ করে থাকেন যে, ফাজরের (ফজরের) সালাতকে ফর্সা আলো পর্যন্ত বিলম্ব করে আদায় করার ফাযীলাত বেশী। বিভিন্নভাবে এর জওয়াব দেয়া হয়ে থাকে।
(১) ভোরের অন্ধকারে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নিয়মিত ফাজরের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা প্রমাণ করে যে, অত্র হাদীসের প্রকাশমান অর্থ উদ্দেশ্য নয়। বরং এর অর্থ হলো সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) এতটুকু বিলম্ব করা যাতে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, ফাজর (ফজর) উদিত হয়েছে। অতএব এখানে أَعْظَمُ শব্দটি অধিক ফাযীলাত বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়নি।
(২) এ হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য চাঁদনী রাতসমূহ। কেননা চাঁদের আলোর কারণে চাঁদনী রাত্রে ফাজরের (ফজরের) শুরুটা বুঝতে অসুবিধা হয় তাই একটু বিলম্ব করা যাতে ফাজর (ফজর) সুস্পষ্ট হয়।
(৩) এর দ্বারা উদ্দেশ্য সে সময় যখন রাত ছোট হয়ে যায় যেমন- মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-এর হাদীসে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ইয়ামানে প্রেরণকালে বললেনঃ হে মু‘আয! শীতকালে ভোরের অন্ধকারে ফাজরের (ফজরের) সালাত আদায় করবে এবং লোকেদের সাধ্যেকুলায় এমনভাবে সালাতের ক্বিরাআত (কিরআত) দীর্ঘ করবে। আর গরমকালে ফর্সা আলোতে ফাজরের (ফজরের) সালাত আদায় করবে। কেননা তখন রাত ছোট হয়ে থাকে ফলে লোকজন ঘুমিয়ে থাকে। সুতরাং তাদেরকে ফাজরের (ফজরের) সালাত জামা‘আতে আদায় করার সুযোগ দাও। হাদীসটি ইমাম বাগাভী শারহুস্ সুন্নাহতে, বাক্বী ইবনু মুখাল্লাদ স্বীয় মুসনাদে এবং আবূ নু‘আয়ম হিল্ইয়াতে বর্ণনা করেছেন।
(৪) এর দ্বারা উদ্দেশ্য ফাজরের (ফজরের) সালাতে ক্বিরাআত (কিরআত) লম্বা করো যাতে ফর্সা আলোর সময় সালাত শেষ হয়। ‘আল্লামা ইবনুল ক্বইয়্যিম ই‘লামুল মুয়াক্কিনে এমনটি বলেছেন। ইমাম তাহাভী শারহুল আসার গ্রন্থে এ অভিমতটিকে গ্রহণ করেছেন।