পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের ফযীলত
এ অধ্যায়ে সালাতের ফাযীলাত সংক্রান্ত আলোচনা এসেছে। ইবনে হাজার বলেন, ফাযা-য়িলিস সলা-হ্ এর অর্থ হলো, যে সকল বিষয় সালাতের সাওয়াবকে পূর্ণতা দান করে।
৬২৪-[১] ’উমারাহ্ ইবনু রুআয়বাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ এমন ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে না, যে সূর্য উঠার ও ডোবার আগে সালাত আদায় করেছে, অর্থাৎ- ফাজর (ফজর) ও ’আসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)। (মুসলিম)[1]
بَابُ فَضَائِلِ الصَّلَاةِ
عَن عمَارَة بن روبية قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَنْ يَلِجَ النَّارَ أَحَدٌ صَلَّى قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا» يَعْنِي الْفَجْرَ وَالْعصر. (رَوَاهُ مُسلم)
ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তি ফাজর (ফজর) ও ‘আসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) নিয়মিত আদায় করবে সে কখনো জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করবে না। এ দু’ ওয়াক্ত সালাতকে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এজন্য যে, ফাজরের (ফজরের) সময়ে মানুষ ঘুমিয়ে আরামে কাটায়, এ সময়ে ঘুম বা আরাম থেকে উঠে সালাত আদায় করা অন্য যে কোন সালাত আদায়ের চেয়ে বেশি কঠিন। আর ‘আসরের সালাতের সময় মানুষ তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাস্ত থাকে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য জমে ওঠে। এমন অবস্থায় পূর্ণ দীনদার ব্যক্তি ব্যতীত অন্যকে এসব থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিতে বা অমনোযোগী হতে পারবে? এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘সে সব লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে এবং সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ক্বায়িম ও যাকাত প্রদান হতে বিরত রাখে না, তারা ভয় করে সেদিনকে যেদিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টি কি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে’’- (সূরাহ্ আন্ নূর ২৪ : ৩৭)। যখন পরিত্যাগ করে এ দু’ ওয়াক্ত সালাত যথাযথভাবে আদায় করে তাহলে সে অন্য সালাতগুলোও স্বাভাবিকভাবেই বেশী সংরক্ষণ করবে। তাছাড়া এ দু’ ওয়াক্তে রাতের এবং দিনের মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) পৃথিবীতে উপস্থিত থাকেন আর আল্লাহর নিকট বান্দাদের ‘আমলসমূহ উঠিয়ে নিয়ে যান। মোটকথা যে ব্যক্তি ফাজর (ফজর) ও ‘আসরের সালাত নিয়মিত আদায় করবে সে মূলত কখনো জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করবে না। এ সালাত গুনাহ মোচনকারী বিধায় সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে।
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের ফযীলত
৬২৫-[২] আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুই ঠাণ্ডা সময়ের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) (অর্থাৎ- ফাজর ও ’আসর) আদায় করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ فَضَائِلِ الصَّلَاةِ
وَعَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «من صَلَّى الْبَرْدَيْنِ دَخَلَ الْجَنَّةَ»
ব্যাখ্যা: দু’ ঠাণ্ডা সময় বলতে দিনের দু’ প্রান্তের ঠাণ্ডা সময়। এ সময় মনোরম বাতাস প্রবাহিত হয় এবং গরমের ভাব দূরীভূত হয়, এটা দ্বারা ফাজর (ফজর) এবং ‘আসরের সালাতের সময়কে বুঝানো হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের ফযীলত
৬২৬-[৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কাছে রাতে একদল ও দিনে একদল মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) আসতে থাকেন। তারা ফাজর (ফজর) ও ’আসরের ওয়াক্তে মিলিত হন। যারা তোমাদের কাছে থাকেন তারা আকাশে উঠে গেলে আল্লাহ তা’আলা তাদের কাছে (বান্দার) অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, যদিও তিনি তাদের সম্পর্কে অধিক অবগত। বলেন, তোমরা আমার বান্দাদেরকে কী অবস্থায় রেখে এসেছো? উত্তরে মালায়িকাহ্ বলেন, হে আল্লাহ! আমরা আপনার বান্দাদেরকে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ে রত অবস্থায় ছেড়ে এসেছি। আর যে সময় আমরা তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছেছি তখনও তারা সালাত আদায় করছিল। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ فَضَائِلِ الصَّلَاةِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم قَالَ: «يَتَعَاقَبُونَ فِيكُمْ مَلَائِكَةٌ بِاللَّيْلِ وَمَلَائِكَةٌ بِالنَّهَارِ وَيَجْتَمِعُونَ فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ وَصَلَاةِ الْعَصْرِ ثُمَّ يَعْرُجُ الَّذِينَ بَاتُوا فِيكُمْ فَيَسْأَلُهُمْ رَبُّهُمْ وَهُوَ أَعْلَمُ بِهِمْ كَيْفَ تَرَكْتُمْ عِبَادِي فَيَقُولُونَ تَرَكْنَاهُمْ وَهُمْ يصلونَ وأتيناهم وهم يصلونَ»
ব্যাখ্যা: সালাতই যে সর্বোচ্চ ‘ইবাদাত তা এ হাদীস দ্বারা জানা যায়। কারণ এ ‘ইবাদাতটির ব্যাপারে আল্লাহ এবং মালায়িকাহ্’র মধ্যে প্রশ্নোত্তর হয়েছিল। আরো জানা যায় যে, ফাজর (ফজর) এবং ‘আসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) অন্যান্য সালাত থেকে বেশি মর্যাদাপূর্ণ। কারণ এ দু’ ওয়াক্ত সালাতেই মালায়িকাহ্’র দু’টি দল একত্রিত হন। অন্য সালাতগুলোতে একদল মালায়িকাহ্ থাকে। আরো বর্ণিত আছে, ফাজরের (ফজরের) সালাতের পর রিযক্ব (রিজিক/রিযিক) (জীবিকা) বণ্টিত হয় আর দিনের শেষে ‘আমলসমূহ আল্লাহর নিকট উঠিয়ে নেয়া হয়। তাই যে ব্যক্তি ঐ সময় দু’টোতে আল্লাহর আনুগত্যমূলক কাজে লিপ্ত থাকবে তার রিযক্ব (রিজিক/রিযিক) এবং ‘আমলে বারাকাত দেয়া হবে।
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের ফযীলত
৬২৭-[৪] জুনদুব আল ক্বসরী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ফজরের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলো সে আল্লাহর যিম্মাদারিতে থাকলো। অতএব আল্লাহ যেন আপন যিম্মাদারীর কোন বিষয় সম্পর্কে তোমাদের বিপক্ষে বাদী না হন। কারণ তিনি যার বিপক্ষে আপন দায়িত্বের কোন ব্যাপারে বাদী হবেন, তাকে (নিশ্চিত) ধরতে পারবেনই। অতঃপর তিনি তাকে উপুড় করে জাহান্নামের আগুনে ফেলবেন। (মুসলিম)[1]
আর মাসাবীহের কোন কোন নুসখায় الْقَسْرِىِّ পরিবর্তে الْقُشَيْرِىِّ রয়েছে।
بَابُ فَضَائِلِ الصَّلَاةِ
وَعَن جُنْدُب الْقَسرِي قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ صَلَّى صَلَاةَ الصُّبْحِ فَهُوَ فِي ذِمَّةِ اللَّهِ فَلَا يَطْلُبَنَّكُمُ اللَّهُ مِنْ ذِمَّتِهِ بِشَيْءٍ فَإِنَّهُ مَنْ يَطْلُبْهُ مِنْ ذِمَّتِهِ بِشَيْءٍ يُدْرِكْهُ ثُمَّ يَكُبُّهُ عَلَى وَجْهِهِ فِي نَارِ جَهَنَّمَ» رَوَاهُ مُسْلِمٌ. وَفِي بَعْضِ نُسَخِ الْمَصَابِيحِ الْقشيرِي بدل الْقَسرِي
ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তি ফাজরের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সাথে আদায় করলো সে ব্যক্তি আল্লাহর তত্ত্বাবধানে চলে গেল। আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে নিরাপত্তা দিবেন। এখানে যিম্মা/তত্ত্বাবধান বলতে সালাতকে উদ্দেশ করা হয়েছে যা ব্যক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এর অর্থ হলো, তোমরা ফাজরের (ফজরের) সালাতকে ছেড়ো না। যদি ছাড়ো তাহলে তা আল্লাহ এবং তোমাদের মাঝে যে অঙ্গীকার রয়েছে তা ভঙ্গ করার অপরাধে তিনি তোমাদেরকে ধরবেন। আর আল্লাহ কাউকে ধরতে চূড়ান্তভাবে পাকড়াও করবেন। অতঃপর তাকে উপুড় করে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন। মূল কথা হলো, আল্লাহর কোন সামান্য ব্যাপারেও হস্তক্ষেপ করা যাবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের ফযীলত
৬২৮-[৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষ যদি জানত আযান দেয়া ও সালাতের প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর মধ্যে কী সাওয়াব রয়েছে এবং লটারী করা ছাড়া এ সুযোগ না পেত, তাহলে লটারী করতো। আর যদি জানতো সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার জন্য আগে আগে আসার সাওয়াব, তাহলে তারা এ (যুহরের) সালাতে অন্যের আগে পৌঁছার চেষ্টা করতো। যদি জানতো ’ইশা ও ফজরের (ফজরের) সালাতের মধ্যে আছে, তাহলে (শক্তি না থাকলে) হামাগুড়ি দিয়ে হলেও সালাতে উপস্থিত হবার চেষ্টা করতো। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ فَضَائِلِ الصَّلَاةِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الْأَوَّلِ ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا إِلَّا أَنْ يَسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لَاسْتَهَمُوا وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِي التَّهْجِيرِ لَاسْتَبَقُوا إِلَيْهِ وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِي الْعَتَمَةِ وَالصُّبْحِ لأتوهما وَلَو حبوا»
ব্যাখ্যা: এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মুয়াযযিনের চাকুরী গ্রহণ করা, সর্বদা প্রথম কাতারে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা এবং ‘ইশা ও ফাজরের (ফজরের) সালাতে দ্রুত যাওয়া মুস্তাহাব এবং ‘ইশাকে ‘‘আতামাহ্’’ নামে নামকরণ করার বৈধতাও প্রমাণিত হয়।
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের ফযীলত
৬২৯-[৬] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুনাফিক্বদের জন্য ’ইশা ও ফজরের (ফজরের) সালাতের চেয়ে ভারী আর কোন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) নেই। যদি এ দুই সালাতের মধ্যে কি রয়েছে, তারা জানতো তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও সালাতে আসতো। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ فَضَائِلِ الصَّلَاةِ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَيْسَ صَلَاةً أَثْقَلَ عَلَى الْمُنَافِق مِنَ الْفَجْرِ وَالْعِشَاءِ وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لأتوهما وَلَو حبوا»
ব্যাখ্যা: এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সকল সালাতই মুনাফিক্বদের জন্য ভারী বা কষ্টকর। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘‘তারা (মুনাফিক্বরা) সালাতে অলসতার সাথে উপস্থিত হয়’’- (সূরাহ্ আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৫৪)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘‘যখন তারা (মুনাফিক্বরা) সালাতে দাঁড়ায় তখন অলসতার সাথে দাঁড়ায়, কেবল লোক দেখানোর জন্য.....’’- (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ১৪২)।
অন্য যে কোন সালাতের তুলনায় ‘ইশা ও ফাজরের (ফজরের) সালাত আদায় করা মুনাফিক্বদের জন্য বেশি কষ্টকর। কারণ ‘ইশার সালাত হলো বিশ্রাম এবং ঘুমের প্রস্ত্ততি নেয়ার সময় আর ফাজরের (ফজরের) সালাত হলো ঘুমের সবচেয়ে আরামদায়ক বা মজাদার সময়।
একনিষ্ঠ মু’মিন ব্যক্তির উচিত মুনাফিক্বদের এ অভ্যাস থেকে দূরে থাকা। এ দু’ ওয়াক্ত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) অপরিমেয় বারাকাত সমৃদ্ধ। তাই কষ্ট করে হলেও অবশ্যই এ সালাতদ্বয় আদায় করার জন্য মসজিদে উপস্থিত হওয়া প্রয়োজন।
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের ফযীলত
৬৩০-[৭] ’উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ’ইশার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) জামা’আতের সাথে আদায় করেছে, সে যেন অর্ধেক রাত সালাতরত থেকেছে। আর যে ব্যক্তি ফজরের (ফজরের) সালাত জমা’আতে আদায় করেছে, সে যেন পুরো রাত সালাত আদায় করেছে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ فَضَائِلِ الصَّلَاةِ
وَعَنْ عُثْمَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: «مَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ فِي جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا قَامَ نِصْفَ اللَّيْلِ وَمَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فِي جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا صَلَّى اللَّيْل كُله» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: হাদীসে বুঝা যায় যে, ‘ইশার সালাত জামা‘আতে আদায়ের তুলনায় ফাজরের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) জামা‘আতে আদায়ের ফাযীলাত বেশী। ফাজরের (ফজরের) সালাতের ফাযীলাত ‘ইশার সালাতের ফাযীলাতের দ্বিগুণ। হাদীসের এ ব্যাখ্যা তিরমিযী ও আবূ দাঊদ-এর বর্ণনার বিরোধিতা মনে হয়। সে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, ‘‘যে ব্যক্তি ‘ইশা এবং ফাজরের (ফজরের) সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করলো সে যেন পূর্ণ রাত্রি জাগরণ করে ক্বিয়াম (কিয়াম) করলো।
এর উত্তরে আমি (ব্যাখ্যাকারক) বলবো, ‘‘যে ব্যক্তি ফাজরের (ফজরের) সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করলো সে যেন পূর্ণ রাত সালাত আদায় করলো’’- সহীহ মুসলিমের এ বর্ণনা ‘ইশার সালাতকেও অন্তর্ভুক্ত করে। فَكَأَنَّمَا صَلَّى اللَّيْلَ كُلَّه ‘‘সে যেন পূর্ণ রাত সালাত আদায় করলো’’-এর দ্বারা বুঝাচ্ছে যে, সে যেন রাতের শেষ অর্ধাংশ সালাত আদায় করলো। আর প্রথম অর্ধাংশ তো ‘ইশার সালাতেই কাটলো। মোটকথা, যে ব্যক্তি ফাজর (ফজর) এবং ‘ইশা উভয় ওয়াক্তের সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করে পূর্ণ রাতই সালাতে থাকে। এ হাদীসের সকল বর্ণনা এ বিষয়টিই স্পষ্ট করেছে।
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের ফযীলত
৬৩১-[৮] (’আবদুল্লাহ) ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বেদুঈনরা যেন তোমাদের মাগরিবের সালাতের নামকরণে তোমাদের ওপর বিজয়ী হতে না পারে। বর্ণনাকারী বলেন, বেদুইনরা এ সালাতকে ’ইশা বলতো। (মুসলিম)[1]
بَابُ فَضَائِلِ الصَّلَاةِ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَغْلِبَنَّكُمُ الْأَعْرَابُ على اسْم صَلَاتكُمْ الْمغرب» . قَالَ: «وَتقول الْأَعْرَاب هِيَ الْعشَاء»
ব্যাখ্যা: মাগরিবের সালাতের নামকরণের ব্যাপারে জাহিলী যুগের ‘আরব বেদুঈনরা (গ্রাম্য ‘আরব) যেন তোমাদের ওপর বিজয় লাভ না করে। এখানে মাগরিবকে ‘ইশা নামে নামকরণ করতে যেমনটি আরব বেদুঈনরা করতো, তা থেকে নিষেধ করার উদ্দেশ্য হলো যখন মাগরিবের সালাতের নামকরণের ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করা হবে তখন তারা এ নামকরণের ক্ষেত্রে বিজয়ী হবে। (অর্থাৎ- তাদের মতামতই আল্লাহর বক্তব্যের চেয়ে অগ্রাধিকার পেল বলে সাব্যস্ত হবে, এটাই মুসলিমদের পরাজয় এবং বেদুঈনদের বিজয়)। সাহাবী ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল আল্ মুযানী (রাঃ) বলেন, জাহিলী যুগে ‘আরব বেদুঈনরা মাগরিবকে ‘ইশা বলতো।
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের ফযীলত
৬৩২-[৯] আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেন, বেদুঈনরা যেন তোমাদের ’ইশার সালাতের নামকরণেও তোমাদের ওপর জয়ী হতে না পারে। এটা আল্লাহর কিতাবে ’ইশা। তা পড়া হয় তাদের উষ্ট্রী দুধ দোহনের সময়। (মুসলিম)[1]
এ সংকলনে দু’ দিক থেকে সমস্যা রয়েছে। প্রথমত এটি এ ধারণা দিচ্ছে যে উভয়টি ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত একটি হাদীস। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা দু’টি হাদীস একটি মাগরিব সালাতের বিষয়ে আর অপরটি ‘ইশা সালাতের বিষয়ে। দ্বিতীয়ত এ ধারণাও দিচ্ছে যে, ইমাম মুসলিম (রহঃ) এভাবেই পরিপূর্ণ আকারে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি ইবনু ‘উমার হতে দ্বিতীয় হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আর প্রথম হাদীসটি (অর্থাৎ- মাগরিব সালাতের ক্ষেত্রে) ইমাম বুখারী ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্ফাল (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন।
بَابُ فَضَائِلِ الصَّلَاةِ
وَقَالَ: لَا يَغْلِبَنَّكُمُ الْأَعْرَابُ عَلَى اسْمِ صَلَاتِكُمُ الْعِشَاءِ فَإِنَّهَا فِي كِتَابِ اللَّهِ الْعِشَاءُ فَإِنَّهَا تعتم بحلاب الْإِبِل. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: স্বাভাবিক কথা এই যে, যখন মহান ও সম্মানীয় ব্যক্তি কোন নাম সাব্যস্ত করেন তখন অন্য কারো নামকরণ গ্রহণীয় হতে পারে না। কেননা এতে ঐ মহানের সম্মানহানি ঘটে। তার উপরে অন্যকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এটা উচিত নয়। আল্লাহ তা‘আলা তার কিতাব আল-কুরআনে ‘ইশাকে ‘ইশা নাম দিয়েছেন। যেমন- আল্লাহ বলেন, وَمِنْ بَعْدِ صَلَاةِ العِشَاءِ ‘‘ইশার সালাতের পর.....’’- (সূরাহ্ আন্ নূর ২৪ : ৫৮)। তাই এরপরে অপর কারো নামকরণ গ্রহণ করা অন্যায় এবং নিন্দনীয়। এ হাদীস দ্বারা ‘ইশাকে ‘আতামাহ্ নামকরণ মাকরূহ হওয়া প্রমাণিত হয়। [এ হাদীস ও পূর্বোক্ত আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস দু’টোর মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান সম্পর্কিত আলোচনা ৬৩০ নং আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসের ব্যাখ্যায় বিস্তারিত করা হয়েছে]।
ইমাম সিন্দী বলেন, এ নিষেধাজ্ঞা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, যেহেতু আল্লাহ তার কিতাবে স্বয়ং এ সালাতকে ‘ইশা নামে নামকরণ করে উল্লেখ করেছেন এবং ‘আরব বেদুঈনরা এ সালাতকে ‘আতামাহ্ নামে ডাকে সেহেতু তোমরা বেদুঈনদের ডাকা নামে ‘ইশাকে বেশি ডেকো না। যদি ডাকো তাহলে তোমাদের ওপর বেদুঈনদের প্রভাব প্রকাশ পাবে। বরং তোমরা কুরআন অনুযায়ী ‘ইশা নামটি বেশি ব্যবহার করো। এখানে নিষেধাজ্ঞা দ্বারা ‘আতামাহ্ নাম ব্যবহার করতে পুরোপুরি নিষেধ করা হয়নি। কারণ তারা এ সময়ে উটের দুধ দোহন করতো। ‘আতামাহ্ অর্থ অন্ধকার। তারা কিছুটা অন্ধকার নামলে সে সময় উটের দুধ দোহন করতো। আর দুধ দোহন করার সময়কে তারা ‘আতামাহ্ বলতো।
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের ফযীলত
৬৩৩-[১০] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দাক্বের যুদ্ধের দিন বলেছিলেন, কাফিররা আমাদেরকে ’মধ্যবর্তী সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)’ অর্থাৎ- ’আসরের সালাত আদায় করা থেকে বিরত রেখেছে। আল্লাহ তা’আলা তাদের ঘর আর কবরগুলো আগুন দিয়ে ভরে দিন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ فَضَائِلِ الصَّلَاةِ
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَوْمَ الْخَنْدَقِ: حَبَسُونَا عَنْ صَلَاةِ الْوُسْطَى: صَلَاةِ الْعَصْرِ مَلَأَ اللَّهُ بُيُوتَهُمْ وَقُبُورَهُمْ نَارًا)
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: হিজরী চতুর্থ বছরের শাও্ওয়াল মাসে সংঘটিত খন্দাকের যুদ্ধের (অন্য নামে আহযাবের যুদ্ধ) দিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মুশরিকরা আমাদেরকে সূর্য ডোবার পূর্ব পর্যন্ত ‘আসরের সালাত আদায় করতে বাধা দিয়ে রেখেছিল। (অর্থাৎ- তাদের মোকাবেলায় ব্যাস্ত থাকার কারণে সূর্য ডোবার পূর্বে আমরা ‘আসরের সালাত আদায় করতে পারিনি)। এটা ছিল ভয়কালীন সালাত (সালাতুল খওফ) প্রবর্তিত হওয়ার পূর্বের ঘটনা।
এ হাদীস প্রমাণ করে যে, সালাতুল উস্তা, অর্থাৎ- মধ্যবর্তী সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হলো ‘আসরের সালাত। যদিও মধ্যবর্তী সালাত কোনটি এ নিয়ে ‘আলিমগণের মধ্যে বিশটিরও বেশী মত দেখতে পাওয়া যায়। এ মতগুলোর মধ্যে তিনটি মত সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ।
প্রথম মতঃ ইমাম মালিক ও ইমাম শাফিঈ (রহঃ)-এর মতে এটি হলো ফজরের (ফজরের) সালাত।
দ্বিতীয় মতঃ যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) ও ‘উরওয়াহ্ (রাঃ)-এর মতে এটি হলো যুহরের সালাত।
তৃতীয় মতঃ অধিকাংশ সাহাবী, তাবি‘ঈ, মুহাদ্দিস এবং ইমাম আহমাদ ও ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মতে এটি হলো ‘আসরের সালাত।
এ মতের পক্ষে স্পষ্ট সহীহ হাদীস বিদ্যমান, যা অসংখ্য প্রমাণবাহী। এ সব হাদীস ‘আল্লামা হাফিয ইবনু হাজার আল্ আসক্বালানী তাঁর ‘ফাতহুল বারী’ কিতাবে, ‘আল্লামা ইবনু কাসীর তাঁর ‘তাফসীরে আল-মাজদ’, ইবনু তাইমিয়াহ্ তাঁর ‘আল্ মুনতাক্বা’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। সে হাদীসগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ‘আলী (রাঃ) বর্ণিত এ হাদীসটি। এ মতের বিপক্ষে প্রমাণ বহনকারী অন্যান্য হাদীস ও আসার (সাহাবীগণের কথা) এ হাদীসের সমকক্ষ নয়। এটাই সর্বাধিক বিশুদ্ধ/সঠিক কথা। ইমাম নাবাবী বলেন, সহীহ স্পষ্ট হাদীসগুলোর দাবী হলো মধ্যবর্তী সালাত হলো ‘আসরের সালাত। হাফিয ইবনু হাজার বলেন, এটা ‘আসরের সালাত হওয়াই নির্ভরযোগ্য, প্রতিষ্ঠিত, স্বীকৃত কথা।
এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুশরিকদের জন্য বদ্দু‘আ করে বললেন, আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদের দুনিয়ার জীবনের ঘরগুলোকে ধ্বংস করে দিন এবং তাদের আখিরাতের ঘর, অর্থাৎ- কবরগুলোকে আগুন দ্বারা পূর্ণ করে দিন।