পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
এ অধ্যায়ে তাড়াতাড়ি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বলতে ফরয সালাতকে বুঝানো হয়েছে। কেননা মূলনীতি হলো ফরয সালাতকে প্রথম ওয়াক্তে তাড়াতাড়ি আদায় করে নেয়া। যেহেতু আল্লাহ তা’আলা বলেন,وَسَارِعُوا إِلى مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ
’’তোমরা আল্লাহর মাগফিরাতের দিকে দ্রুত অগ্রসর হও।’’ (সূরাহ্ আ-লি ’ইমরান ৩: ১৩৩)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন, ’’তোমরা কল্যাণের কাজে তাড়াতাড়ি অগ্রসর হও।’’
(সূরাহ্ আল্ বাক্বারাহ্ ২: ১৪৮)
তবে বিশেষ কল্যাণের কারণে শারী’আত প্রণেতা যে সালাতকে দেরী করে আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন তা দেরী করে আদায় করাই উত্তম। যেমন, ’ইশার সালাত এবং প্রচন্ড গরমের সময় যুহরের সালাত।
৫৮৭-[১] সাইয়্যার ইবনু সালামাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ও আমার আব্বা আবূ বারযাহ্ আল আসলামী (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। আমার আব্বা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরয সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) কিভাবে আদায় করতেন? তিনি উত্তরে বললেন, যুহরের সালাত- যে সালাতকে তোমরা প্রথম সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বলো, সূর্য ঢলে পড়লেই আদায় করতেন। ’আসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন এমন সময়, যার পর আমাদের কেউ মদীনার শেষ প্রান্তে তার বাড়ীতে ফিরতে পারতেন, অথচ সূর্য তখনও পরিষ্কার থাকতো। বর্ণনাকারী বলেন, মাগরিবের সালাত সম্পর্কে কী বলেছেন, আমি তা ভুলে গেছি। আর ’ইশার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ), যাকে তোমরা ’আতামাহ্’ বল, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দেরী করে আদায় করতেই ভালোবাসেন এবং ’ইশার সালাতের আগে ঘুম যাওয়া বা সালাতের পরে কথা বলাকে পছন্দ করতেন না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফজরের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ করতেন, যখন কেউ নিজের সঙ্গে বসা ব্যক্তিকে চিনতে পারতো এবং এ সময় ষাট হতে একশত আয়াত তিলাওয়াত করতেন।[1] অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ’ইশার সালাতকে রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত পিছিয়ে নিতেও দ্বিধা করতেন না এবং ’ইশার সালাতের আগে ঘুম যাওয়া ও পরে কথা বলাকে অপছন্দ করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[2]
[2] সহীহ : বুখারী ৫৪১, নাসায়ী ৫৩০, আবূ দাঊদ ৩৯৮, আহমাদ ১৯৭৬৭, দারেমী ১৩৩৮।
بَابُ تَعْجِيْلِ الصَّلَوَاتِ
عَنْ سَيَّارِ بْنِ سَلَامَةَ قَالَ: دَخَلْتُ أَنَا وَأَبِي عَلَى أَبِي بَرْزَةَ الْأَسْلَمِيِّ فَقَالَ لَهُ أَبِي كَيْفَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي الْمَكْتُوبَةَ فَقَالَ كَانَ يُصَلِّي الْهَجِيرَ الَّتِي تَدْعُونَهَا الْأُولَى حِينَ تَدْحَضُ الشَّمْسُ وَيُصلي الْعَصْر ثُمَّ يَرْجِعُ أَحَدُنَا إِلَى رَحْلِهِ فِي أَقْصَى الْمَدِينَةِ وَالشَّمْسُ حَيَّةٌ وَنَسِيتُ مَا قَالَ فِي الْمغرب وَكَانَ يسْتَحبّ أَن يُؤَخر الْعشَاء الَّتِي تَدْعُونَهَا الْعَتَمَةَ وَكَانَ يَكْرَهُ النَّوْمَ قَبْلَهَا والْحَدِيث بعْدهَا وَكَانَ يَنْفَتِل مِنْ صَلَاةِ الْغَدَاةِ حِينَ يَعْرِفُ الرَّجُلُ جَلِيسَهُ وَيَقْرَأُ بِالسِتِّينَ إِلَى الْمِائَةِ. وَفِي رِوَايَةٍ: وَلَا يُبَالِي بِتَأْخِيرِ الْعِشَاءِ إِلَى ثُلُثِ اللَّيْلِ وَلَا يُحِبُّ النَّوْمَ قَبْلَهَا وَالْحَدِيثَ بَعْدَهَا
ব্যাখ্যা: তাবি‘ঈ সাহাবীর কাছে জানতে চাইছেন, ফরয সালাতগুলোর মধ্য হতে কোন সালাতটি কোন সময় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদায় করতেন। তিনি উত্তর দিচ্ছেন যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহর আদায় করতেন ঠিক ঐ সময় যখন সূর্য মাথার উপর পৌঁছার পর পশ্চিম দিকে গড়তে আরম্ভ করতো।
তারপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আসর আদায় করতেন এমন সময় যে, তাঁর পিছনে ‘আসর আদায়ের পর একজন সাহাবী মদীনার শেষ সীমানায় তার নিজ বাড়ী ফিরে যাওয়ার পর সূর্য উজ্জ্বল সাদা চকচকে থাকতো। সাহাবীর উপরোক্ত উক্তি প্রমাণ করে যে, একটি বস্ত্তর ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়ার সাথে সাথে ‘আসর আদায় করা হয়েছিল।
সাহাবী (রাঃ) বললেন যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ইশার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) রাত্রের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্ব করা পছন্দ করতেন এবং ‘ইশার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের পর গল্প-গুজব করা পছন্দ করতেন না। কারণ তাহাজ্জুদ ও ফাজর (ফজর) ছুটে যাওয়ার আশংকা থাকে।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফজরের (ফজরের) সালাত হতে সালাম ফিরাতেন তখন একজন মুসল্লী তার পাশে বসে থাকা সাথীকে চিনতে পারতো।
এ হাদীস প্রমাণ করে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাজর (ফজর) গালাস, অর্থাৎ- ভোরের অন্ধকারে শুরু করেছিলেন। কারণ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বড়ই ধীরস্থিরভাবে ৬০-১০০ আয়াত পর্যন্ত ফাজর (ফজর) সালাতে তিলাওয়াত করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৫৮৮-[২] মুহাম্মাদ ইবনু ’আমর ইবনুল হাসান ইবনু ’আলী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা জাবির (রাঃ) ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। উত্তরে তিনি বললেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুপুর ঢলে গেলে যুহরের সালাত আদায় করতেন। ’আসরের সালাত আদায় করতেন, তখনও সূর্যের দীপ্তি থাকতো। মাগরিবের সালাত আদায় করতেন সূর্য অস্ত যেতেই। আর ’ইশার সালাত, যখন লোক অনেক হতো এবং তাড়াতাড়ি আদায় করতেন। আর লোকজন কম হলে দেরী করতেন এবং অন্ধকার থাকতে ফজরের (ফজরের) সালাত আদায় করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ تَعْجِيْلِ الصَّلَوَاتِ
وَعَن مُحَمَّد بن عَمْرو هُوَ ابْن الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ قَالَ: سَأَلْنَا جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ عَنْ صَلَاةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ كَانَ يُصَلِّي الظُّهْرَ بِالْهَاجِرَةِ وَالْعَصْرَ وَالشَّمْسُ حَيَّةٌ وَالْمَغْرِبَ إِذَا وَجَبَتْ وَالْعِشَاءَ إِذَا كَثُرَ النَّاسُ عَجَّلَ وَإِذَا قَلُّوا أَخَّرَ وَالصُّبْح بِغَلَس
ব্যাখ্যা: একজন তাবি‘ঈ সাহাবী জাবির (রাঃ)-এর কাছে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাতের সময়গুলো জানতে চাইলেন। জাবির (রাঃ) জানালেন যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহর আদায় করতেন দুপুরে সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে যাবার সাথেই। আর ‘আসর আদায় করতেন ঐ সময় যখন সূর্য উজ্জ্বল সাদা চক্চকে থাকতো।
মাগরিব সূর্য অস্ত যাওয়ার পর পরই। আর ‘ইশার সালাতটি আদায় করার ব্যাপারে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের উপস্থিতির কথাটি খেয়াল রাখতেন। তাড়াতাড়ি উপস্থিত হলে আও্ওয়াল ওয়াক্তে আর বিলম্বে উপস্থিত হলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলম্ব করতেন। কারণ ‘ইশা বিলম্ব করে আদায় করলে সাওয়াব বেশী। আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাজর (ফজর) শুরু করতেন গালাসে, অর্থাৎ- ভোরের অন্ধকারে।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৫৮৯-[৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে যুহরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতাম, তখন গরম থেকে বাঁচার জন্য আমাদের কাপড়ের উপর সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতাম। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ تَعْجِيْلِ الصَّلَوَاتِ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كُنَّا إِذَا صَلَّيْنَا خَلْفَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالظَّهَائِرِ سَجَدْنَا على ثيابنا اتقاء الْحر
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে বুঝা যায় যে, সূর্যের তাপমাত্রা অত্যন্ত প্রখর না হলে সাধারণত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের সাথে যুহর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)টি আও্ওয়াল সময়ের মধ্যে আদায় করতেন।
এছাড়া মাস্আলাহ্ হলো এই যে, গরম, ঠাণ্ডা বা অন্য কোন সমস্যা হলে পরনের কাপড় বা অন্য কাপড়ের উপর সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করার অনুমতি রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৫৯০-[৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন গরমের প্রকোপ বেড়ে যাবে, ঠাণ্ডা সময়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) (যুহর) আদায় করবে।[1]
بَابُ تَعْجِيْلِ الصَّلَوَاتِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا اشْتَدَّ الْحَرُّ فَأَبْرِدُوا بِالصَّلَاةِ»
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীসের মধ্যে বলা হয়েছে যে, গরম বেশী পড়লে যুহর বিলম্ব করে তার শেষ সময়ে আদায় করো- এটা আল্লাহ ও তাঁর রসূল-এর পক্ষ হতে বান্দাদের প্রতি দয়া ও রহমাত। প্রচন্ড গরমে যুহর বিলম্ব করা উত্তম। উল্লেখ্য যে, প্রচন্ড গরম না পড়লে যুহর বিলম্ব করা যাবে না।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৫৯১-[৫] বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, যুহরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ঠাণ্ডা সময়ে আদায় করবে। (অর্থাৎ- আবূ হুরায়রার বর্ণনায় بِالصَّلَاةِ শব্দ ব্যবহার হয়েছে আর আবূ সা’ঈদের বর্ণনায় بِالظُّهْرِ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে) কারণ গরমের প্রকোপ জাহান্নামের তাপ। জাহান্নাম আপন প্রতিপালকের নিকট অভিযোগ করে বলেছিল, হে আমার আল্লাহ! (গরমের তীব্রতায়) আমার একাংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলছে। তখন আল্লাহ তাকে অনুমতি দিলেন দু’টি নিঃশ্বাস ফেলার। এক নিঃশ্বাস শীতকালে, আর এক নিঃশ্বাস গরমকালে। এজন্যই তোমরা গরমকালে তাপের তীব্রতা বেশী পাও। আর শীতকালে শীতের প্রচন্ডতা বেশী। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
বুখারীর আর এক বর্ণনায় আছে, তোমরা গরমের যে প্রচন্ডতা অনুভব কর তা জাহান্নামের গরম নিঃশ্বাসের কারণেই। আর শীতের তীব্রতা যা পাও তা জাহান্নামের ঠাণ্ডা নিঃশ্বাসের কারণেই।
بَابُ تَعْجِيْلِ الصَّلَوَاتِ
وَفِي رِوَايَةٍ لِلْبُخَارِيِّ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ: بِالظُّهْرِ فَإِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ وَاشْتَكَتِ النَّارُ إِلَى رَبِّهَا فَقَالَتْ: رَبِّ أَكَلَ بَعْضِي بَعْضًا فَأَذِنَ لَهَا بِنَفَسَيْنِ نَفَسٍ فِي الشِّتَاءِ وَنَفَسٍ فِي الصَّيْفِ أَشَدُّ مَا تَجِدُونَ مِنَ الْحر وَأَشد مَا تَجِدُونَ من الزَّمْهَرِير . وَفِي رِوَايَةٍ لِلْبُخَارِيِّ: «فَأَشَدُّ مَا تَجِدُونَ مِنَ الْحَرِّ فَمِنْ سَمُومِهَا وَأَشَدُّ مَا تَجِدُونَ مِنَ الْبرد فَمن زمهريرها»
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় দু’ ধরনের আলোচনা রয়েছে-
(১) জাহান্নামের শ্বাস প্রশ্বাস বলতে কী বুঝায়?
(২) যুহর বিলম্ব করা প্রচন্ড গরমের কারণে।
(১) জাহান্নামের শ্বাস-প্রশ্বাস তার আসল ও প্রকৃত অর্থে আছে।
কিছু ‘আলিম বলেন যে, প্রকৃত অর্থে নেই বরং রূপক অর্থে আছে। কিন্তু প্রথম উক্তিটি যথাযথ। ইমাম নাবাবীও প্রথম উক্তিটি সমর্থন করেছেন। কিন্তু এখানে একটি আপত্তি ও প্রশ্ন দেখা দেয় যে, পৃথিবীর উপর গরমটি তো কম-বেশী হয় সূর্যের নিকট ও দূরে হওয়ার কারণে। তাহলে পৃথিবীর গরমটি সূর্যের কারণে হলো জাহান্নামের কারণে নয়। উত্তর হলো এই যে, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা‘আলা রব্বুল ‘আলামীন সূর্যের ও জাহান্নামের মাঝে একটি সূক্ষ্ম সংযোগ ও সম্পর্ক সৃষ্টি করে রেখেছেন। যে সংযোগের মাধ্যমে সূর্য জাহান্নাম থেকে তাপ সংগ্রহ করে পৃথিবীর বুকে ছাড়ছে। আমরা মানুষ আমাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে সূর্য। আর উপলব্ধি করছি সূর্যের তাপ। প্রকৃতপক্ষে যে তাপটি আমরা অনুভব করি তা হচ্ছে জাহান্নামের তাপ। আর সূর্য ঐ তাপটি আমাদের নিকট পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার জন্য একটি যন্ত্র মাত্র।
মাঝখানে আর একটি কথা, সেটা হলো আল্লাহর নিকট জাহান্নামের অভিযোগ করা। আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তাঁর নিকট জড় পদার্থ নামের কোন জিনিস নেই। জড় ও জীবের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। জড় পদার্থকে বাকশক্তি দান করতে কোন সময় লাগে না তাঁর নিকট। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মিম্বারটি ছিল শুকনো একটি খেজুর গাছের কান্ড শুকনো কাঠ। সেটা হাঁওমাও করে কান্না আরম্ভ করেছিল। সাহাবাগণ শুনেছিলেন।
(২) প্রচন্ড গরমের কারণে যুহর বিলম্বিত করা যায় ততটুকুই যতটুকু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করে দেখিয়েছেন। অর্থাৎ- কোন জিনিসের ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়ার আগ পর্যন্ত। যদি কেউ প্রশ্ন করে যে, সহীহ মুসলিমে একটি হাদীস আছে যে, খাব্বাব (রাঃ) বলেন যে, আমরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যুহর বিলম্ব করার জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা গ্রহণ করেননি। উত্তর হচ্ছে এই যে, তাঁরা আরো বেশী বিলম্বিত করার জন্য আবেদন করেছিলেন। তাঁদের আবেদন গ্রহণ করলে যুহরের সময় পার হয়ে যেত সেজন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের আবেদন কবূল করেননি। প্রকৃত সত্য আল্লাহর নিকট।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৫৯২-[৬] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) এমন সময় আদায় করতেন যখন সূর্য উপরের আকাশে ও উজ্জ্বল অবস্থায় থাকতো। আর কেউ ’আওয়ালীর দিকে (মদীনার উপকন্ঠে) গিয়ে পুনরায় আসার পরেও সূর্য উপরেই থাকতো। এসব ’আওয়ালীর কোন কোনটি মদীনাহ্ হতে চার মাইল বা এর কাছাকাছি দূরত্বের ছিল। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ تَعْجِيْلِ الصَّلَوَاتِ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ حَيَّةٌ فَيَذْهَبُ الذَّاهِبُ إِلَى الْعَوَالِي فَيَأْتِيهِمْ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ وَبَعْضُ الْعَوَالِي مِنَ الْمَدِينَةِ على أَرْبَعَة أَمْيَال أَو نَحوه
ব্যাখ্যা : রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সময় ‘আসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন যখন সূর্যের রং স্বাভাবিক অবস্থা থেকে লালিমায় পরিবর্তিত হতো না। ‘আসরের সালাতের পরে কেউ মদীনাহ্ থেকে সর্বোচ্চ আট মাইল এবং সর্বনিম্ন দুই বা তিন মাইল দূরে উঁচু স্থানে অবহিত কিছু গ্রামের দিকে গিয়ে গ্রামবাসীর সাথে সালাত আদায় করতো, সূর্য উঁচুতে থাকতেই। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আসরের সালাত তাড়াতাড়ি আদায় করতেন। এ হাদীসের শেষ অংশটি আনাস (রাঃ)-এর কথা বলে প্রতীয়মান হলেও মূলত এ বাক্যাংশটি যুহরীর কথা। প্রমাণ হয় যে, ‘আসরের সালাতের পরে দু’ কিংবা তিন মাইল পথ হেঁটে অতিক্রম করা তখনই সম্ভব যখন কোন বস্ত্তর ছায়া তার সমপরিমাণ হলেই ‘আসরের সালাত আদায় করা হবে। ইমাম নাবাবী বলেন, শুধু দীর্ঘ দিনগুলোতেই এমনটা সম্ভব। আর এ হাদীসই জমহূর ‘আলিমের মতের পক্ষে দলীল; যারা বলেন, কোন বস্ত্তর ছায়া তার সমপরিমাণ হলে ‘আসরের প্রথম ওয়াক্ত হয়।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৫৯৩-[৭] উক্ত রাবী (আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এটা (’আসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) দেরী করে আদায়) মুনাফিক্বের সালাত। তারা বসে বসে সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। সূর্যের হলদে রং এবং শায়ত্বনের (শয়তানের) দু’ শিং-এর মধ্যস্থলে গেলে (সূর্যাস্তের সময়ে) তারা তাড়াতাড়ি উঠে চার ঠোকর মারে। এতে তারা আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। (মুসলিম)[1]
بَابُ تَعْجِيْلِ الصَّلَوَاتِ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: تِلْكَ صَلَاةُ الْمُنَافِقِ: يَجْلِسُ يَرْقُبُ الشَّمْسَ حَتَّى إِذَا اصْفَرَّتْ وَكَانَتْ بَيْنَ قَرْنَيِ الشَّيْطَانِ قَامَ فَنَقَرَ أَرْبَعًا لَا يَذْكُرُ اللَّهَ فِيهَا إِلَّا قَلِيلا . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: যখন ‘আসরের সালাতকে সূর্য হলুদ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত বিলম্বিত করা হয় তখন সে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) মুনাফিক্বের সালাতের মতই। মুনাফিক্ব সালাতের মর্ম অনুধাবন করে না বরং শুধু তরবারির শাস্তির হাত থেকে বাঁচার জন্য আদায় করে। মুসলিমের জন্য উচিত মুনাফিক্বের বিরোধিতা করা। মুনাফিক্ব বসে থেকে সূর্য অস্ত যাওয়ার অপেক্ষা করে। ইমাম নাবাবী বলেন, হাদীসে মধ্যে কোন ওযর ছাড়া ‘আসরের সালাতকে বিলম্বিত করার নিন্দা করা হয়েছে। এর মধ্যখানে আসা মানে শায়ত্বনের (শয়তানের) মাথার পাশে আসা। সময়টা সূর্য অস্ত যাওয়ার নিকটবর্তী। এটা এজন্য বলা হয়েছে যে, সূর্য উদয়, মাথার উপরে থাকা ও অস্ত যাওয়ার সময় শায়ত্বনের (শয়তানের) সামনে বসে। যাতে করে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত শায়ত্বনের (শয়তানের) দু’ শিং-এর মাঝখান দিয়ে হয়। এ হাদীসে ঐ ব্যক্তির নিন্দা করা হয়েছে, যে খুব দ্রুত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে এমনকি সে সালাতে ভীত-সন্ত্রস্ততা, প্রশান্তি ও যিকর-দু‘আ পূর্ণাঙ্গরূপে থাকে না।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৫৯৪-[৮] ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির ’আসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ছুটে গেল তার গোটা পরিবার ও ধনসম্পদ যেন উজাড় হয়ে গেল। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ تَعْجِيْلِ الصَّلَوَاتِ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الَّذِي تَفُوتُهُ صَلَاةُ الْعَصْرِ فَكَأَنَّمَا وُتِرَ أَهْلَهُ وَمَالَهُ»
ব্যাখ্যা: সূর্য ডোবার মাধ্যমে যে ব্যক্তির ‘আসরের সালাতের সময় চলে যায় অথবা সূর্য হলদে হওয়ার সময়ে চলে আসে তার পরিবার ও ধন-সম্পদ নষ্ট হবার শামিল। মানুষ নিজ পরিবার ও ধন-সম্পদ ধ্বংস হবার ব্যাপারে যেভাবে সতর্ক থাকে ‘আসরের সালাতের ওয়াক্তের ব্যাপারেও যেন সেভাবে সতর্ক থাকে।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৫৯৫-[৯] বুরায়দাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ’আসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ছেড়ে দিলো সে তার ’আমল বিনষ্ট করলো। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ تَعْجِيْلِ الصَّلَوَاتِ
وَعَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ تَرَكَ صَلَاةَ الْعَصْرِ فقد حَبط عمله. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: এখানে ইচ্ছাকৃতভাবে অলসতা করে ‘আসরের সালাতকে পরিত্যাগ করা বুঝিয়েছে। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘কেউ ঈমান প্রত্যাখ্যান করলে তার ‘আমল নিষ্ফল হবে’’- (সূরাহ্ আল্ মায়িদাহ্ ৫ : ৫)। এর দ্বারা বুঝা যায় যে অলসতা ও ইচ্ছাকৃত বিশ্বাস করা ঈমান প্রত্যাখ্যানের শামিল। এর ব্যাখ্যায় কেউ বলেছেন যে, হাদীসে যে ভয় দেখানো হয়েছে তা দ্বারা মূলত শক্ত ধমক দেয়া হয়েছে। কারো মতে, এটা সাদৃশ্যের রূপকতা। অর্থাৎ- যে ‘আসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ছেড়ে দিলো সে ঐ ব্যক্তির মতো যার ‘আমল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। নষ্ট হওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য প্রয়োজনের সময় তার ‘আমল উপকারে আসবে না।
তবে এর অধিকতর সঠিক ব্যাখ্যা হলো, এ হাদীসে ‘আসরের সালাত পরিত্যাগের শাস্তি স্বরূপ ‘আমল বরবাদ হয়ে যাওয়াকে বুঝানো হয়নি। এর দ্বারা যারা এরূপ করে তাদের শক্ত ধমক দেয়া হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৫৯৬-[১০] রাফি’ ইবনু খদীজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মাগরিবের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতাম। সালাত শেষ করে আমাদের কেউ তার তীর পড়ার স্থান (পর্যন্ত) দেখতে পেত। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ تَعْجِيْلِ الصَّلَوَاتِ
وَعَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ قَالَ: كُنَّا نُصَلِّي الْمَغْرِبَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَنْصَرِف أَحَدنَا وَإنَّهُ ليبصر مواقع نبله
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ডোবার সাথে সাথে মাগরিবের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) প্রথম ওয়াক্তেই আদায় করতেন। তখন এমন আলো থাকতো যে, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষে সব সহাবা (সাহাবা) যখন বাড়ি ফিরতেন তখন ধনুক থেকে তীর ছুঁড়লে তীর পতিত হওয়ার স্থান দেখা যেত। এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মাগরিবের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) প্রথম সময়ে দ্রুত সম্পন্ন করা উচিত। মাগরিবের সালাতকে লালিমা দূর হওয়ার নিকটস্থ সময় পর্যন্ত দেরী করা সম্পর্কিত হাদীস মূলত দেরী করার বৈধতার ব্যাখ্যা বা এ হাদীস দ্বারা আরো প্রমাণিত হয় যে, এ সালাতে ছোট ছোট সূরাহ্ তিলাওয়াত করা উচিত। তা না হলে সালাত দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৫৯৭-[১১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবীগণ ’ইশার’ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন ’শাফাক্ব’ (অদৃশ্য) হবার পর হতে রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ تَعْجِيْلِ الصَّلَوَاتِ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانُوا يُصَلُّونَ الْعَتَمَةَ فِيمَا بَيْنَ أَنْ يغيب لاشفق إِلَى ثلث اللَّيْل الأول
ব্যাখ্যা: ‘‘আতামাহ্’’ হচ্ছে ‘ইশার সালাত। এ হাদীসে ‘ইশার সালাতের কাঙ্ক্ষিত সময়ের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। নাসায়ীর বর্ণনায় আদেশসূচক শব্দ صَلُّوْ ‘‘তোমরা সালাত আদায় করো’’ শব্দে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। হাদীসটি এ রকম ‘‘তোমরা লালিমা অদৃশ্য হওয়ার সময় থেকে রাতে এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এ (‘ইশার) সালাত আদায় করো’’। আনাস (রাঃ) অন্য হাদীসে বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ইশার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) মধ্য রাত্র পর্যন্ত দেরী করে আদায় করতেন। আনাস (রাঃ)-এর হাদীস ও ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসের মধ্যে আপাততঃ বৈপরীত্য লক্ষ্য করা যায়। এ ক্ষেত্রে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসই অগ্রগণ্য। কারণ তিনিই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্বাভাবিক অভ্যাস সম্পর্কে বেশি জানতেন।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৫৯৮-[১২] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। যে সব স্ত্রীলোক চাদর গায়ে মুড়িয়ে সালাত আদায় করতে আসতেন অন্ধকারের দরুন তাদের চেনা যেত না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ تَعْجِيْلِ الصَّلَوَاتِ
وَعَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيُصَلِّي الصُّبْحَ فَتَنْصَرِفُ النِّسَاءُ مُتَلَفِّعَاتٌ بمروطهن مَا يعرفن من الْغَلَس
ব্যাখ্যা: আবূ বাররাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, যখন ফাজরের (ফজরের) সালাত শেষ করতেন তখন কোন ব্যক্তি তার পাশে বসা ব্যক্তিকে চিনতে পারতো। আর এখানে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসে আছে, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কালীন চাদর জড়িয়ে আসা মহিলাদের চেনা যেত না। প্রথম হাদীসের চিনতে পারার কারণ হলো, সাহাবীগণ কাছাকাছি বসতেন। আর দ্বিতীয় হাদীসের কারণ হলো, মহিলারা পুরুষের পিছনে সালাত আদায় করতো আর দূরে থাকায় সাধারণত তাদেরকে চেনা যেত না।
লেখক বলেন, এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আলোকিত অবস্থার চেয়ে অন্ধকার অবস্থায় ফজরের (ফজরের) সালাত আদায় করা অধিক ফাযীলাতপূর্ণ। এ মতই দিয়েছেন ইমাম মালিক, শাফিঈ, আহমাদ এবং ইসহাক (রহঃ )। ইবনু ‘আবদুল বার্ বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবূ বাকর (রাঃ), ‘উমার (রাঃ), ‘উসমান (রাঃ) সবাই অন্ধকার থাকতে ফাজরের (ফজরের) সালাত আদায় করতেন- এ কথা বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত।
আল্ হাযিমী বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক অন্ধকারে ফাজরের (ফজরের) সালাত আদায় করা প্রমাণিত। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এর উপর অটল ছিলেন। আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বোত্তম ‘আমল ছাড়া কোন ‘আমলের উপর অটল থাকতেন না। তারপরে তাঁর সাহাবীগণও তার অনুসরণ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৫৯৯-[১৩] ক্বাতাদাহ্ (রহঃ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) (সিয়াম পালনের জন্য) সাহরী খেলেন। সাহরী শেষ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ফজরের) সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। আমরা আনাস (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, এ দু’জনের খাবার পর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শুরু করার আগে কি পরিমাণ সময়ের বিরতি ছিল? তিনি উত্তরে বলেন, এ পরিমাণ বিরতির সময় ছিল যাতে একজন পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করতে পারে। (বুখারী)[1]
بَابُ تَعْجِيْلِ الصَّلَوَاتِ
وَعَن قَتَادَة وَعَن أَنَسٍ: أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَزَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ تَسَحَّرَا فَلَمَّا فَرَغَا مِنْ سَحُورِهِمَا قَامَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى الصَّلَاةِ فَصَلَّى. قُلْنَا لِأَنَسٍ: كَمْ كَانَ بَيْنَ فَرَاغِهِمَا مِنْ سَحُورِهِمَا وَدُخُولِهِمَا فِي الصَّلَاة؟ قَالَ: قَدْرُ مَا يَقْرَأُ الرَّجُلُ خَمْسِينَ آيَةً. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: এ হাদীস তাগলীস মুস্তাহাব হওয়ার দলীল। ফাজর (ফজর) সালাতের প্রথম শর্ত হলো ফাজর (ফজর) উদিত হওয়া। এ সময়েই সওম পালনের নিয়্যাতকারীদের জন্য খাওয়া ও পান করা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। আর সাহরী খাওয়া শেষ করা এবং ফাজরের (ফজরের) সালাতে দাঁড়িয়ে যাওয়ার মাঝে পার্থক্য ছিল কুরআনের পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করার সময় বা এর কাছাকাছি সময়। যাতে কোন ব্যক্তির উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে আসতে পারে। এ ঘটনা দ্বারা বুঝা যায় যে, ফাজর (ফজর) উদিত হওয়ার সময়ই ফাজরের (ফজরের) সালাতের প্রথম ওয়াক্ত। আর এ সময়েই অন্ধকারে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাজরের (ফজরের) সালাতে দাঁড়াতেন।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৬০০-[১৪] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, সে সময় তুমি কী করবে যখন তোমাদের ওপর শাসকবৃন্দ এমন হবে, যারা সালাতের প্রতি অমনোযোগী হবে অথবা তা সঠিক সময় হতে পিছিয়ে দিবে? আমি বললাম, আপনি আমাকে কী নির্দেশ দেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ সময়ে তুমি তোমার সালাতকে সঠিক সময়ে আদায় করে নিবে। অতঃপর তাদের সাথে পাও, আবার আদায় করবে। আর এ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) তোমার জন্য নফল হিসেবে গণ্য হবে। (মুসলিম)[1]
بَابُ تَعْجِيْلِ الصَّلَوَاتِ
وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: كَيْفَ أَنْتَ إِذَا كَانَتْ عَلَيْكَ أُمَرَاءُ يُمِيتُونَ الصَّلَاةَ أَوْ قَالَ: يُؤَخِّرُونَ الصَّلَاةَ عَنْ وَقْتِهَا؟ قُلْتُ: فَمَا تَأْمُرُنِي؟ قَالَ: صَلِّ الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا فَإِنْ أَدْرَكْتَهَا مَعَهُمْ فَصَلِّ فَإِنَّهَا لَك نَافِلَة. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: যদি তুমি ঐ শাসকের সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করো তাহলে প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায় করার সাওয়াব পেলে না আর যদি তুমি তার বিরোধিতা করো তাহলে শাসকের রোষাণলে পড়বে। এমতাবস্থায় করণীয় সম্পর্কে এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, জনগণের অপছন্দে তাদের ওপর ঐসব শাসকদের চাপিয়ে দেয়া হবে। এ হাদীস মূলত একটি ভবিষ্যতের অদৃশ্যের খবর দিচ্ছে। ‘উমাইয়্যাহ্ শাসনামলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। এ শাসকগণ সালাতকে মেরে ফেলবে অর্থাৎ- সালাতকে এর সময় থেকে পিছিয়ে দিবে। ইমাম নাবাবী (রহঃ)-এর মতে, এখানে সালাত পিছিয়ে দেয়া মানে সালাতকে এর নির্ধারিত ওয়াক্ত থেকে পিছিয়ে দেয়া। ঐসব শাসক সালাতকে এর সময়সীমার সম্পূর্ণ বাইরে পিছিয়ে দিতো না। এখানে সালাত পিছানো মানে সালাতকে পূর্ণ সময়সীমা থেকে পিছিয়ে দেয়া। এ কথা বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত যে, হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফ ও তার আমীর আল্ ওয়ালীদ এবং অন্য অনেকে সালাতকে তার নির্দিষ্ট সময় থেকে পিছিয়ে দিয়েছিলেন।
এরপর আবূ যার (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি যদি ঐ সময় পাই তাহলে আপনি আমাকে কী করতে আদেশ করেন? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বলেন, তুমি নির্দিষ্ট সময়ে সালাত আদায় করবে এবং তাদের সাথে সালাত পেলে তাদের সাথেও সালাত আদায় করবে। তাহলে যে সালাত শাসকের সাথে পড়বে সে সালাত তোমার জন্য নফল হিসেবে গণ্য হবে। এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়, সালাতকে এর নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করতে হবে। আর শাসকগণ যখন সালাতকে এর প্রথম ওয়াক্ত থেকে পিছিয়ে দেয় তখন তাদের অনুসরণ বর্জন করতে হবে। এরূপ এজন্য করবে যে, যাতে মতানৈক্য ও ফিতনাহ্ (ফিতনা) তৈরি না হয়।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৬০১-[১৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের আগে ফজরের (ফজরের) সালাতের এক রাক্’আত পেল, সে ফজরের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পেয়ে গেল। এভাবে যে সূর্যাস্তের পূর্বে ’আসর সালাতের এক রাক্’আত পেল, সে ’আসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পেলো। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ تَعْجِيْلِ الصَّلَوَاتِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنَ الصُّبْحِ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ فَقَدْ أَدْرَكَ الصُّبْحَ. وَمَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنَ الْعَصْرِ قَبْلَ أَنْ تغرب الشَّمْس فقد أدْرك الْعَصْر»
ব্যাখ্যা : জমহূরের মতে যে ব্যক্তি সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্ পড়া সহ রাক্‘আতের অন্যান্য ওয়াজিব যেমন, রুকূ' ও সাজদাসমূহ পূর্ণভাবে আদায় করে ফজরের (ফজরের) এক রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সূর্য উদয়ের পূর্বে পেল সে যেন পূর্ণ সালাতই নির্ধারিত ওয়াক্তে পেল। এক রাক্‘আতের কম পেলে সেটা ওয়াক্তের মধ্যে গণ্য হবে না। তার ঐ সালাত ক্বাযা হবে। এটাই জমহূরের মত।
ইমাম নাবাবী বলেন, ‘আলিমগণ এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, সূর্য উদয়কাল কিংবা অস্তকাল পর্যন্ত সালাতকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্বিত করা বৈধ নয়। সূর্য উদয়ের পূর্বে এক রাক্‘আত পেলে এবং সূর্য উদয়ের পরে এক রাক্‘আত পড়লে তার সালাত পূর্ণ হয়ে যাবে। জমহূর ‘আলিমগণের এ মতের পক্ষে এ সম্পর্কে বায়হাক্বীতে দু’টি স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। সেখানে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সূর্য উদয়ের পূর্বে ফাজরের (ফজরের) সালাতের এক রাক্‘আত পেল এবং এক রাক্‘আত সূর্য উদয়ের পরে পড়ল, সে যেন পূর্ণ সালাতই নির্দিষ্ট ওয়াক্তে পেল। বায়হাক্বীতে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে ‘আসরের এক রাক্‘আত আদায় করলো এবং বাকী অংশ সূর্যাস্তের পর আদায় করলো, তার ‘আসরের সালাত নষ্ট হলো না। তিনি ফাজরের (ফজরের) সালাতের ক্ষেত্রেও একই কথা বলেছেন। বুখারীর বর্ণনায় এ হাদীসের শেষে উল্লেখ রয়েছে, ‘‘সে যেন তার সালাতকে পূর্ণ করে’’। নাসায়ীর বর্ণনায় রয়েছে, যে ব্যক্তি সালাতের (নির্দিষ্ট সময়ে) এক রাক্‘আত পেল সে যেন পূর্ণ সালাতই পেল। তবে যে রাক্‘আত আদায় করতে পারেনি সে তা ক্বাযা করবে’’।
এ হাদীস প্রমাণ করে যে, যে ব্যক্তি সূর্য উদয়ের পূর্বে ফাজরের (ফজরের) সালাতের এক রাক্‘আত পেল সে যেন ফাজরের (ফজরের) পূর্ণ সালাতই পেল এবং সূর্য উদয়ের ফলে তার সালাত বাতিল হবে না। এমনিভাবে যে ব্যক্তি সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে ‘আসরের সালাত পেল এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার ফলে তার সালাত বাতিল হবে না। ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহাক (রহঃ)-এর মত এটিই, আর এটিই সঠিক মত।
ইমাম আবূ হানীফাহ্ এ হাদীসের বিরোধী মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ফাজরের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করছে এমতাবস্থায় সূর্য উদিত হলো তাহলে তার সালাত বাতিল হয়ে যাবে। তিনি তিন সময়ে সালাত আদায় নিষিদ্ধ হওয়ার হাদীস দ্বারা তার মতের পক্ষে দলীল প্রদান করেছেন। এর উত্তরে বলা যায় যে, সূর্য উদয়ের সময় সালাত আদায় নিষিদ্ধ হওয়া সম্পর্কিত বিধান ‘আম্ তথা ব্যাপক আর আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর এ হাদীস খাস তথা বিশেষ হুকুম জ্ঞাপক।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৬০২-[১৬] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সূর্যাস্তের আগে ’আসরের সালাতের এক সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) (রাক্’আত) পেলে সে যেন তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পূর্ণ করে। এমনিভাবে ফজরের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সূর্যোদয়ের আগে এক সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) (রাক্’আত) পেলে সেও যেন তার সালাত পূর্ণ করে। (বুখারী)[1]
بَابُ تَعْجِيْلِ الصَّلَوَاتِ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا أَدْرَكَ أَحَدُكُمْ سَجْدَةً مِنْ صَلَاةِ الْعَصْرِ قَبْلَ أَنْ تَغْرُبَ الشَّمْسُ فَلْيُتِمَّ صَلَاتَهُ وَإِذَا أَدْرَكَ سَجْدَةً مِنْ صَلَاةِ الصُّبْحِ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ فَلْيُتِمَّ صَلَاتَهُ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: ‘‘সিজদা্’’ শব্দের স্থলে অন্য বর্ণনায় ‘‘রাক্‘আত’’ শব্দ এসেছে। পূর্বের হাদীসেও ‘‘যে ব্যক্তি রাক্‘আত পেল’’ বলা হয়েছে। খাত্ত্বাবী বলেন, এখানে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) দ্বারা রুকূ‘-সিজদাসহ পূর্ণ রাক্‘আত উদ্দেশ্য। আর রাক্‘আত তো পূর্ণ হয় সাজদার মাধ্যমে। এজন্যই রাক্‘আতকে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) বলা হয়েছে। কেউ যদি সূর্য উঠার পূর্বে ‘আসরের এক রাক্‘আত পায় সে যেন বাকী রাক্‘আত পূর্ণ করে নেয়। তাহলে সম্পূর্ণ সালাতই আদায় হয়ে যাবে।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৬০৩-[১৭] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে ভুলে যায় অথবা আদায় না করে ঘুমিয়ে পড়ে, তার কাফ্ফারাহ্ হলো যখনই তা স্মরণ হবে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে নিবে।[1]
অন্য বর্ণনায় আছে, ঐ সালাত আদায় করে নেয়া ছাড়া তার কোন প্রতিকারই নেই। (বুখারী ও মুসলিম)[2]
[2] সহীহ : বুখারী ৫৯৭, মুসলিম ৬৮৪, আবূ দাঊদ ৪৪২, নাসায়ী ৬১৩, তিরমিযী ১৭৮, ইবনু মাজাহ্ ৬৯৬, আহমাদ ১৩৫৫০, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৫৫৬, ইরওয়া ২৬৩।
بَابُ تَعْجِيْلِ الصَّلَوَاتِ
وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ نَسِيَ صَلَاةً أَوْ نَامَ عَنْهَا فَكَفَّارَتُهُ أَنْ يُصَلِّيَهَا إِذَا ذَكَرَهَا» . وَفِي رِوَايَةٍ: «لَا كَفَّارَة لَهَا إِلَّا ذَلِك»
ব্যাখ্যা: কেউ যদি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ভুলে যায় কিংবা ঘুমিয়ে পড়ার কারণে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় না করে তাহলে ঐ সালাতের প্রতিকার হলো ঐ ব্যক্তির ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর স্মরণে এলে সে তা আদায় করে নিবে। এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্মরণে আসা কিংবা ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথে পড়ে নিতে হবে। সে সময় সূর্য উদয়, অস্ত বা মাঝ বরাবর যেখানেই থাকুক। ইমাম মালিক, শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাক (রহঃ)-এর এটাই মত। অন্য যে হাদীসে তিনটি সময়ে সালাত আদায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সে হাদীস সাধারণ অর্থবোধক। আর এ হাদীস বিশেষ অর্থবোধক। তাই এ দু’ হাদীসের মধ্যে কোন বৈপরীত্য নেই। এ হাদীস দ্বারা দু’টি বিষয় প্রমাণিত হয়, এক- সালাত আদায় ব্যতীত এর কোন প্রতিকার নেই। দুই- সালাত আদায় ভুলে গেলে কোন জরিমানা, অতিরিক্ত কিছু বা সদাক্বাহ্ (সাদাকা) ইত্যাদি আদায় করা আবশ্যক নয়, যেমনটি সওম ছেড়ে দিলে করতে হয়।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়
৬০৪-[১৮] আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঘুমিয়ে থাকার কারণে সালাত আদায় করতে না পারলে তা দোষ নেই। দোষ হলো জেগে থেকেও সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় না করা। সুতরাং তোমাদের কেউ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে ভুলে গেলে অথবা সালাতের সময় ঘুমিয়ে থাকলে, যে সময়েই তার কথা স্মরণ হবে, আদায় করে নিবে। কারণ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, ’’আমার স্মরণে সালাত আদায় কর’’- (সূরাহ্ ত্ব-হা- ২০: ১৪)। (মুসলিম)[1]
بَابُ تَعْجِيْلِ الصَّلَوَاتِ
وَعَنْ أَبِي قَتَادَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَيْسَ فِي النَّوْمِ تَفْرِيطٌ إِنَّمَا التَّفْرِيطُ فِي الْيَقَظَةِ. فَإِذَا نَسِيَ أَحَدُكُمْ صَلَاةً أَوْ نَامَ عَنْهَا فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا فَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى قَالَ: (وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لذكري)
رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: কোন ব্যক্তির ঘুম কোন ত্রুটি নয়, অর্থাৎ- এতে ত্রুটি ধরা হয় না। তবে ঘুমিয়ে থাকা ত্রুটি হবে যখন ঐ ঘুম এমন সময়ে হবে যাতে সালাতের সময় অতিবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। যেমন ‘ইশার সালাতের পূর্বে ঘুমানো। এ হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, স্বাভাবিক ঘুমে থাকা অবস্থায় সালাতের সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে কোন দোষ নেই। কেননা এ ত্রুটিতে ঐ ব্যক্তির কোন ইচ্ছা ছিল না।
ইমাম শাওকানী বলেন, সালাতের ওয়াক্ত সংকীর্ণ হওয়া, সালাতের নির্ধারিত সময় শুরু কিংবা পরে যখনই হোক ঘুমানো অবস্থা কোন ত্রুটি হবে না, বাহ্যিক হাদীসে এটাই প্রমাণিত হয়। কারো কারো মতে, কেউ যদি সালাতের ওয়াক্ত সংকীর্ণ হওয়ার পূর্বে ইচ্ছাকৃতভাবে ঘুমিয়ে যায় আর এটিকে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পরিত্যাগের জন্য কারণ হিসেবে গ্রহণ করে অথচ তার প্রবল ধারণা ছিল যে, সে সালাতের নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পূর্বে ঘুম থেকে জাগ্রত হতে পারবে না তাহলে গুনাহগার হবে।
সালাতের ওয়াক্ত সংকীর্ণ হওয়ার পরে যদি কেউ ঘুমায় তাহলে সে অবশ্যই গুনাহগার হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আমার স্মরণে সালাত ক্বায়িম করো’’। অতএব এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আমাদের পূর্ববর্তী নাবীগণের শারী‘আতও আমাদের শারী‘আত হতে পারে। কারণ উল্লিখিত আয়াত মূসা (আঃ)-কে উদ্দেশ্য করে নাযিল হয়েছিল। তাই হাদীসের উসূল অনুযায়ী এগুলো দলীল হতে পারে যতক্ষণ না এর রহিতকারী (নাসিখ) অন্য কোন নির্দেশনা না পাওয়া যায়।