পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১২-[১৫] কাসীর বিন ক্বায়স (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দিমাশক-এর মসজিদে আবুদ্ দারদা (রাঃ)-এর সাথে বসা ছিলাম, এমন সময় তার নিকট একজন লোক এসে বললো, হে আবুদ্ দারদা! আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শহর মদীনাহ্ থেকে শুধু একটি হাদীস জানার জন্য আপনার কাছে এসেছি। আমি শুনেছি আপনি নাকি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এছাড়া আর কোন উদ্দেশে আমি আপনার কাছে আসিনি। তার এ কথা শুনে আবুদ্ দারদা (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি এ কথা বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি (কুরআন ও হাদীসের) ’ইলম সন্ধানের উদ্দেশে কোন পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতের পথসমূহের একটি পথে পৌঁছিয়ে দিবেন এবং মালায়িকাহ্ ’ইলম অনুসন্ধানকারীর সন্তুষ্টি এবং পথে তার আরামের জন্য তাদের পালক বা ডানা বিছিয়ে দেন। অতঃপর ’আলিমদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সকলেই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও দু’আ করে থাকেন, এমনকি পানির মাছসমূহও (ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে)। ’আলিমদের মর্যাদা মূর্খ ’ইবাদাতকারীর চেয়ে অনেক বেশী। যেমন পূর্ণিমা চাঁদের মর্যাদা তারকারাজির উপর এবং ’আলিমগণ হচ্ছে নবীদের ওয়ারিস। নবীগণ কোন দীনার বা দিরহাম (ধন-সম্পদ) মীরাস (উত্তরাধিকারী) হিসেবে রেখে যান না। তাঁরা মীরাস হিসেবে রেখে যান শুধু ’ইলম। তাই যে ব্যক্তি ’ইলম অর্জন করেছে সে পূর্ণ অংশগ্রহণ করেছে। (আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ্ ও দারিমী)[1] আর তিরমিযী হাদীস বর্ণনাকারীর নাম ক্বায়স বিন কাসীর বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু রাবীর নাম কাসীর ইবনু ক্বায়সই এটিই সঠিক (যা মিশকাতের সংকলকও নকল করেছেন)।
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
عَن كثير بن قيس قَالَ كُنْتُ جَالِسًا مَعَ أَبِي الدَّرْدَاءِ فِي مَسْجِد دمشق فَجَاءَهُ رَجُلٌ فَقَالَ يَا أَبَا الدَّرْدَاءِ إِنِّي جِئْتُكَ مِنْ مَدِينَةِ الرَّسُولِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا جِئْتُ لِحَاجَةٍ قَالَ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَطْلُبُ فِيهِ عِلْمًا سَلَكَ اللَّهُ بِهِ طَرِيقًا مِنْ طُرُقِ الْجَنَّةِ وَإِنَّ الْمَلَائِكَةَ لَتَضَعُ أَجْنِحَتَهَا رِضًا لِطَالِبِ الْعِلْمِ وَإِنَّ الْعَالِمَ يسْتَغْفر لَهُ من فِي السَّمَوَات وَمَنْ فِي الْأَرْضِ وَالْحِيتَانُ فِي جَوْفِ الْمَاءِ وَإِنَّ فَضْلَ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ عَلَى سَائِرِ الْكَوَاكِبِ وَإِنَّ الْعُلَمَاءَ وَرَثَةُ الْأَنْبِيَاءِ وَإِنَّ الْأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا وَلَا دِرْهَمًا وَإِنَّمَا وَرَّثُوا الْعِلْمَ فَمَنْ أَخَذَهُ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ وَسَمَّاهُ التِّرْمِذِيُّ قَيْسَ بن كثير
ব্যাখ্যা: কোন ব্যক্তি যদি ন্যূনতম দীনী বিদ্যার্জনের উদ্দেশে পৃথিবীর কোন রাস্তা অতিক্রম করে তাহলে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তাদের সহযোগিতায় এবং সম্মানার্থে সদা প্রস্তুত থাকে। হাদীস হতে এটাও প্রতীয়মান হয়, নফল ‘ইবাদাতের চাইতে দীনী বিদ্যায় ব্যাস্ত থাকা উত্তম।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৩-[১৬] আবূ উমামাহ্ আল বাহিলী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট দুই ব্যক্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। এদের একজন ছিলেন ’আবিদ (’ইবাদাতকারী), আর দ্বিতীয়জন ছিলেন ’আলিম (জ্ঞান অনুসন্ধানকারী)। তিনি বললেন, ’আবিদের ওপর ’আলিমের মর্যাদা হলো যেমন আমার মর্যাদা তোমাদের একজন সাধারণ ব্যক্তির ওপর। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তা’আলা, তাঁর মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) এবং আকাশমণ্ডলী ও জমিনের অধিবাসীরা, এমনকি পিঁপড়া তার গর্তে ও মাছ পর্যন্ত ’ইলম শিক্ষাকারীর জন্য দু’আ করে। (তিরমিযী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
وَعَن أبي أُمَامَة الْبَاهِلِيّ قَالَ: ذُكِرَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلَانِ أَحَدُهُمَا عَابِدٌ وَالْآخَرُ عَالِمٌ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَضْلُ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِي عَلَى أَدْنَاكُمْ» ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ وَأَهْلَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ حَتَّى النَّمْلَةَ فِي جُحْرِهَا وَحَتَّى الْحُوتَ لَيُصَلُّونَ عَلَى معلم النَّاس الْخَيْر» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَقَالَ حسن غَرِيب
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে দীনী বিদ্যা শিক্ষাদানের প্রতি উৎসাহ দেয়া হয়েছে। হাদীস থেকে বুঝা যায় দীনী বিদ্যা শিক্ষাদানকারীর মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। যার জন্য মানুষ, জিন্, মালায়িকাহ্ এমনকি গর্তের ক্ষুদ্র প্রাণী পিঁপড়া এবং সমুদ্রের অতল তলের মাছসহ সকল প্রাণী দু‘আ করে থাকে।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৪-[১৭] দারিমী এ হাদীস মাকহূল (রহঃ) থেকে মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং দুই ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেননি। আর তিনি বলেছেন, ’আবিদের তুলনায় ’আলিমের মর্যাদা এমন, যেমন তোমাদের একজন সাধারণ মানুষের ওপর আমার মর্যাদা। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ কথার প্রমাণে কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ إِنَّمَا يَخْشَى اللهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ
’’নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে ’আলিমরাই তাঁকে ভয় করে’’- (সূরাহ্ ফাত্বির/মালায়িকাহ্ ৩৫: ৮)। এছাড়া তার হাদীসের অবশিষ্টাংশ তিরমিযীর বর্ণনার অনুরূপ।[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
وَرَوَاهُ الدَّارِمِيُّ عَنْ مَكْحُولٍ مُرْسَلًا وَلَمْ يَذْكُرْ: رَجُلَانِ وَقَالَ: فَضْلُ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِي عَلَى أَدْنَاكُمْ ثُمَّ تَلَا هَذِهِ الْآيَةَ: (إِنَّمَا يخْشَى الله من عباده الْعلمَاء)
وسرد الحَدِيث إِلَى آخِره
ব্যাখ্যা: বিদ্বান ব্যক্তি আল্লাহ ও আল্লাহর সম্মান এবং তাঁর বড়ত্ব সম্পর্কে বেশি জানার কারণে তার ঐ বিদ্যা অন্তরে ভয় সঞ্চার করে এবং ভয় তাক্বওয়ার জন্ম দেয়, পরিশেষে তাক্বওয়া ব্যক্তিকে মর্যাদাবান করে। হাদীস থেকে আরো বুঝা যায়, যে ব্যক্তির ‘আমল আল্লাহভীতিতে পূর্ণ হবে না সে মূর্খের ন্যায় বরং মূর্খই।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৫-[১৮] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একদা লোকেরা (আমার পরে) তোমাদের অনুসরণ করবে। আর তারা দূর-দূরান্ত হতে দীনের জ্ঞানার্জনের উদ্দেশে তোমাদের কাছে আসবে। সুতরাং তারা তোমাদের নিকট এলে তোমরা তাদেরকে ভালো কাজের (দীনের ’ইলমের) নাসীহাত করবে। (তিরমিযী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ النَّاسَ لَكُمْ تَبَعٌ وَإِنَّ رِجَالًا يَأْتُونَكُمْ مِنْ أَقْطَارِ الْأَرْضِ يَتَفَقَّهُونَ فِي الدِّينِ فَإِذَا أَتَوْكُمْ فَاسْتَوْصُوا بهم خيرا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: হাদীসটি দুর্বল কারণ এর সানাদে আবূ হারূন আল আবদারী আছে সে মাতরূক। অতএব হাদীসটি যে রসূলের মুখনিঃসৃত বাণী সে নিশ্চয়তা নেই। তবে মানুষের সাথে ভালো আচরণ করার ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে বহু প্রমাণ রয়েছে, সুতরাং মানুষের সাথে ভালো আচরণ করতে হবে বিশেষ করে দীনী বিদ্যা শিক্ষার্থীদের সাথে আরো ভালো আচরণ করতে হবে।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৬-[১৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জ্ঞানের কথা মু’মিনের হারানো ধন। সুতরাং মু’মিন যেখানেই তা পাবে সে-ই হবে তার অধিকারী। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ্)[1]
ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি গরীব। তাছাড়াও এর অপর বর্ণনাকারী ইব্রাহীম ইবনু ফাযলকে দুর্বল (য’ঈফ) বলা হয়েছে।
আলবানী বলেনঃ বরং ইবরাহীম ইবনুল ফাযল মাতরূক, অর্থাৎ- তার বর্ণিত হাদীস অগ্রহণযোগ্য, মুহাদ্দিসগণ এ রাবীর হাদীস গ্রহণ করেননি। (তাকরীবুত্ তাহযীব)
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْكَلِمَةُ الْحِكْمَةُ ضَالَّةُ الْحَكِيمِ فَحَيْثُ وَجَدَهَا فَهُوَ أَحَقُّ بِهَا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ وَإِبْرَاهِيمُ بْنُ الْفَضْلِ الرَّاوِي يضعف فِي الحَدِيث
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত কথাটিকে রসূলের দিকে সম্বন্ধ না করে এভাবে বলা যেতে পারে যা কোন কুরআন ও সুন্নাহর বিরোধী হবে না। অর্থাৎ- প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি হিকমাতপূর্ণ কথা অনুসন্ধান করে চলে, অতঃপর যখনই সে হিকমাতপূর্ণ কথা পেয়ে যায় তখনই সাধারণত ঐ হিকমাতপূর্ণ কথার অনুসরণ করে ও সে অনুপাতে কাজ করে। অথবা, উদ্দেশ্য বুঝার ক্ষেত্রে, অতএব কুরআন-সুন্নাহর সূক্ষ্ম বিষয়গুলো বুঝার ক্ষেত্রে যার বুঝ শক্তির ঘাটতি রয়েছে তার উচিত হবে আল্লাহ যাকে সূক্ষ্ম বিষয় বুঝার ক্ষমতা দান করেছেন তার জ্ঞানকে অস্বীকার না করে বরং স্বীকৃতি দেয়া এবং তার সাথে মতানৈক্যে লিপ্ত না হওয়া। যেমন হারানো বস্ত্তর মালিক তার বস্ত্ত ফিরে পাওয়ার পর তার সাথে কেউ মতানৈক্যে লিপ্ত হয় না। অথবা হারানো বস্ত্তকে যে ব্যক্তি পায় তার কাছ থেকে হারানো বস্ত্তর মালিক হারানো বস্ত্ত নিয়ে যাওয়ার সময় হারানো বস্ত্ত পাওয়া ব্যক্তি হতে মালিককে নিষেধ করা যেমন হালাল হয় না, তেমন একজন ‘আলিম ব্যক্তি যখন প্রশ্নকারীর বুঝার আগ্রহ দেখতে পাবে তখন ‘আলিম ব্যক্তির জন্য ঐ প্রশ্নকারীকে উত্তর প্রদান না করে জানার বিষয় থেকে বঞ্চিত করা হালাল হবে না। অথবা এটাও বলা যেতে পারে যে, অনেক সময় এমন ব্যক্তির সাথে হিকমাতপূর্ণ কথা এমন ব্যক্তির কাছে পৌঁছায় যে ঐ কথার উপযুক্ত; যে হিকমাতপূর্ণ কথা তুচ্ছ মনে করে না। যেমন কোন ব্যক্তি তার কোন কিছু হারিয়ে ফেলার পর যখন তা কারো কাছে পেয়ে যায় তখন ঐ পাওয়া বস্ত্তকে তার কাছ থেকে গ্রহণ করা তুচ্ছ মনে করে না যদিও হয়ত ঐ বস্ত্ত তুচ্ছ।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৭-[২০] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজন ফাক্বীহ (’আলিমে দীন) শায়ত্বনের (শয়তানের) কাছে হাজার ’আবিদ (’ইবাদাতকারী) হতেও বেশী ভীতিকর। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ্)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَقِيهٌ وَاحِدٌ أَشَدُّ عَلَى الشَّيْطَانِ مِنْ أَلْفِ عَابِدٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْن مَاجَه)
ব্যাখ্যা: মূল ভাষ্যতে উল্লিখিত فَقِيْهٌ শব্দ থেকে যদি ঐ ব্যক্তি উদ্দেশ্য হয় যাকে দীন ও দীনের মূল উৎসের ক্ষেত্রে বুঝ শক্তি দেয়া হয়েছে তাহলে উদ্দীষ্ট ব্যক্তি শায়ত্বনের (শয়তানের) চক্রান্ত ও তিরস্কার সম্বন্ধে জানে এবং বিপদ থেকে বাঁচার ‘ইলম এবং অন্তরসমূহের ষড়যন্ত্র ও কুমন্ত্রণার ব্যাপারে অনুভূতি শক্তি তাকে দান করা হয়েছে। আর যদি فَقِيْهٌ শব্দ দ্বারা দীনের হুকুম-আহকাম ও তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা সম্পর্কে অবগত ব্যক্তি উদ্দেশ্য হয় যেমন উদ্দেশ্য হওয়া সম্ভব তাহলে فَقِيْهٌ শব্দ দ্বারা পূর্বোক্ত ব্যাখ্যার মতো ব্যাখ্যা উদ্দেশ্য। কেননা সে এ ধরনের ‘ইলম দ্বারা হারাম স্থানসমূহ সম্পর্কে সতর্ক থাকে, ফলে সে হারাম স্থানগুলোকে হালকা ও বৈধ মনে করে না এবং সে কুফরের জটিলতায় পতিত হয় না, সে ঐ ‘ইবাদাতকারীর বিপরীত যে ‘ইবাদাতকারী উল্লিখিত দু’টি অর্থের স্তরে নয়।
হাদীসে একজন ফাক্বীহকে শায়ত্বনের (শয়তানের) কাছে হাজার মূর্খ ‘ইবাদাতকারী অপেক্ষা কঠিন বলা হয়েছে তার কারণ ফাক্বীহ ব্যক্তি শায়ত্বনের (শয়তানের) বক্রতাকে গ্রহণ করে না, মানুষকে কল্যাণকর কাজের নির্দেশ দেয় এবং তাদেরকে শায়ত্বনের (শয়তানের) বক্রতা থেকে রক্ষা করে, পক্ষান্তরে একজন ‘আবিদের (‘ইবাদাতকারী) চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে নিজেকে শায়ত্বনের (শয়তানের) চক্রান্ত থেকে রক্ষা করা অথচ সে এ ব্যাপারে সক্ষম না বরং শায়ত্বন (শয়তান) তাকে এমনভাবে গ্রাস করে যে সে বুঝতেই পারে না।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৮-[২১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ’ইলম বা জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরয এবং অপাত্রে তথা অযোগ্য মানুষকে ’ইলম শিক্ষা দেয়া শুকরের গলায় মণিমুক্তা বা স্বর্ণ পরানোর শামিল।[1]
বায়হাক্বী এ বর্ণনাটি শু‘আবুল ঈমান-এ ‘মুসলিম’ শব্দ পর্যন্ত নকল করেছেন এবং বলেছেন, এ হাদীসের মাতান (মূল ভাষ্য) মাশহুর, আর সানাদ য‘ঈফ। বিভিন্ন সানাদে এ হাদীস বর্ণনা করা হয়েছে, এসবই য‘ঈফ।
তবে ‘আল্লামা সুয়ূত্বী এর পঞ্চাশটির মতো সানাদ উল্লেখ করেছেন, এ কারণে তিনি এ হাদীসের প্রতি সহীহ হওয়ার হুকুম লাগিয়েছেন। ইমাম ‘ইরাক্বীও কোন কোন আয়িম্মায়ে মুহাদ্দিসীনের পক্ষ থেকে সহীহ বলেছেন। আর অনেকেই একে হাসান বলেছেন। আল্লাহই ভালো জানেন। তবে এ হাদীসের শেষে مسلمة শব্দ যা সাধারণের মধ্যে প্রসিদ্ধ। অবশ্য এর কোনই ভিত্তি নেই। আর কোন কোন সানাদে এর শুরুতে اطلبوا العلم ولو بالصين অর্থাৎ- ‘‘বিদ্যার্জন কর, যদি এর জন্য সুদূর চীন যেতে হয় তবুও।’’ সম্পূর্ণ বাতিল কথা। বিস্তারিত দেখুন আল আহাদীসুয্ য‘ঈফাহ্ (হাদীস নং ৪১৬)।
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
وَعَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ وَوَاضِعُ الْعِلْمِ عِنْدَ غير أَهله كمقلد الْخَنَازِير الْجَوْهَر واللؤلؤ وَالذَّهَبَ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ وَرَوَى الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ إِلَى قَوْلِهِ مُسْلِمٍ. وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ مَتْنُهُ مَشْهُورٌ وَإِسْنَادُهُ ضَعِيفٌ وَقَدْ رُوِيَ من أوجه كلهَا ضَعِيف
ব্যাখ্যা: (طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيْضَةٌ عَلى كُلِّ مُسْلِمٍ) এ অংশটুকু বিশুদ্ধ। এ অংশ উল্লিখিত শব্দটির মুসলিম দ্বারা উদ্দেশ্য হলো স্বাভাবিক রীতিতে শারী‘আতের পক্ষ থেকে দায়িত্বশীল ব্যক্তি। ফলে মুসলিম শব্দের আওতা থেকে পাগল, শিশু বেরিয়ে যাবে, কারণ শারী‘আতের পক্ষ থেকে এদের ওপর কোন দায়িত্ব নেই এবং মুসলিম শব্দ দ্বারা মুসলিম ব্যক্তি উদ্দেশ্য, বিধায় মুসলিম ব্যক্তি বলতে নারী-পুরুষ উভয়কে শামিল করবে।
‘আল্লামা সুয়ূত্বী বলেন, ইমাম নাবাবীকে এ হাদীস সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ ‘‘নিশ্চয়ই সানাদগতভাবে হাদীসটি দুর্বল, যদিও অর্থ বিশুদ্ধ।’’ অতএব মাতানটিকে সানাদের দৃষ্টিকোণ থেকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিকে সম্বন্ধ না করে মানুষের উপস্থাপিত উপমার মতো ধরে নেয়া যায়। ভাষ্যটুকুর মর্মার্থ হলো- সর্বাধিক নিকৃষ্ট প্রাণী শুকরের গলায় উৎকৃষ্ট অলংকার পরানো যেমন মূল্যহীন বরং যুলম তেমন যে ‘ইলমের ক্বদর (কদর) বুঝে না তাকে ‘ইলম দান করা মূল্যহীন ও যুলম।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৯-[২২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুনাফিক্বের মধ্যে দু’টি অভ্যাস একত্র হতে পারে না- নেক চরিত্র ও দীনের সুষ্ঠু জ্ঞান। (তিরমিযী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: خَصْلَتَانِ لَا تَجْتَمِعَانِ فِي مُنَافِقٍ: حُسْنُ سَمْتٍ وَلَا فِقْهٌ فِي الدّين . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: হাদীসে মু’মিনদেরকে সৎচরিত্রবান হতে, সৎকর্মশীলদের সাজে সজ্জিত হতে এবং দীনের এমন জ্ঞান অর্জন করতে বলা হয়েছে, অন্তরে থাকবে যে জ্ঞানের প্রতি অটুট বিশ্বাস, যবানে থাকবে বহিঃপ্রকাশ, ‘আমলে যার বাস্তব রূপ এবং আল্লাহ ভীতি ও তাক্বওয়ার ছোঁয়া। পক্ষান্তরে উল্লিখিত দু’টি গুণের বিপরীত গুণ হতে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২০-[২৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের জন্য বের হয়েছে, সে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহর পথেই রয়েছে। (তিরমিযী ও দারিমী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ خَرَجَ فِي طَلَبِ الْعِلْمِ فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ حَتَّى يرجع» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ والدارمي
ব্যাখ্যা: হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’মিনদেরকে দীনের ব্যাপারে খরচ করতে, তাদের একটি দল জিহাদের উদ্দেশে বাড়ি হতে বেরিয়ে যেতে এবং সর্বদা একটি দলকে জ্ঞানার্জনে রত থাকতে উৎসাহিত করেছেন। হাদীসে দীনের জ্ঞান অর্জনকে আল্লাহর পথে জিহাদের শামিল বলে গণ্য করা হয়েছে- এ কথার মর্মার্থ হচ্ছে, জিহাদকারী যেমন দীনকে জীবন্তকরণে, শায়ত্বন (শয়তান)কে পরাজিতকরণে ও নিজ আত্মাকে হার মানাতে রত থাকে দীনের জ্ঞান অর্জনকারী ব্যক্তিও অনুরূপ।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২১-[২৪] সাখবারাহ্ আল আযদী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জ্ঞানানুসন্ধান করে, তা তার পূর্ববর্তী সময়ের গুনাহের কাফফারাহ্ হয়ে যাবে। (তিরমিযী ও দারিমী)[1]
ইমাম তিরমিযী বলেছেন, এ হাদীসটি সানাদের দিক দিয়ে য’ঈফ। কারণ এর একজন রাবী আবূ দাঊদ (নকী ইবনু হারিস)-কে য’ঈফ বলা হয়ে থাকে।
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
وَعَن سَخْبَرَة الْأَزْدِيّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مِنْ طَلَبَ الْعِلْمَ كَانَ كَفَّارَةً لِمَا مَضَى» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالدَّارِمِيُّ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ ضَعِيفُ الْإِسْنَادِ وَأَبُو دَاوُدَ الرَّاوِي يُضَعَّفُ
ব্যাখ্যা: অতএব মাতানটিকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিকে সম্বন্ধ করা বৈধ নয়। বরং ‘আমল করার উদ্দেশে শার‘ঈ বিদ্যা অর্জন করা এবং তাওবাহ্ করা, অন্যায় ও অন্যান্য পাপের কাজ বর্জন করা গুনাহ মাফের মাধ্যম।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২২-[২৫] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিন ব্যক্তি কল্যাণকর কাজে অর্থাৎ- জ্ঞানার্জনে পরিতৃপ্ত হতে পারে না, যে পর্যন্ত না পরিণামে সে জান্নাতে পৌঁছে যায়। (তিরমিযী)[1]
ইমাম তিরমিযী কিতাবুল ‘ইলম-এর মধ্যে হাদীসটিকে হাসান গরীব বলেছেন। আলবানী (রহঃ) বলেনঃ এর সানাদে আবুল হায়সাম থেকে দার্রাজ-এর বর্ণনা রয়েছে যিনি (দার্রাজ) একজন দুর্বল রাবী। বিশেষতঃ আবুল হায়সাম থেকে বর্ণনাকালে।
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَنْ يَشْبَعَ الْمُؤْمِنُ مِنْ خَيْرٍ يَسْمَعُهُ حَتَّى يَكُونَ مُنْتَهَاهُ الْجنَّة» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: খায়রী সা‘ঈদ বর্ণিত হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন- সুতরাং এ রকম হাদীস বর্ণনা করা উচিত নয়। আর মাতানের দিক দিয়েও হাদীসটি সঠিক নয়। কারণ একজন মানুষ কি জান্নাতী হওয়ার জন্য নিশ্চিত হতে পারে? কাজেই জান্নাতে না পৌঁছা পর্যন্ত সে কিভাবে জ্ঞান অর্জনে পরিতৃপ্ত হতে পারে না। মৃত্যুর সময় থেকেই তার সব ‘আমল বন্ধ হয়ে যাবে।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২৩-[২৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তিকে এমন কোন জিনিস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় যা সে জানে, অথচ গোপন রাখে (বলে না), কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তার মুখে আগুনের লাগাম পরিয়ে দেয়া হবে। (আহমাদ, আবূ দাঊদ ও তিরমিযী)[1]
ইমাম হাকিম ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে এর শাহিদ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং তিনি একে সহীহ বলেছেন। যাহাবীও এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন।
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «من سُئِلَ عَنْ عِلْمٍ عَلِمَهُ ثُمَّ كَتَمَهُ أُلْجِمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِلِجَامٍ مِنْ نَارٍ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: কোন ব্যক্তি যদি কোন বিদ্বানকে দীনে শারী‘আত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে এবং জিজ্ঞাসাকারী ঐ বিষয়ে ‘ইলম ধারণ করার যোগ্যতা রাখে এবং জিজ্ঞাসার বিষয় যদি দীনের আবশ্যকীয় কোন বিষয় হয় যেমন- ইসলাম, সালাতের শিক্ষা, হারাম ও হালাল তাহলে অবশ্যই সম্ভাব্যতা অনুযায়ী জিজ্ঞাসু ব্যক্তিকে উত্তর দিতে হবে। যদি জিজ্ঞাসাকারীকে উত্তর দেয়া না হয় তাহলে ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে বিদ্বান ব্যক্তিকে বাকশক্তিহীন চতুষ্পদ জন্তুর মতো মুখে আগুনের লাগাম লাগিয়ে উপস্থিত করা হবে। পক্ষান্তরে যদি দীনের কোন নফল বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় তাহলে জিজ্ঞাসিত ব্যক্তির এ বিষয়ে উত্তর দেয়া বা না দেয়া ইচ্ছাধীন।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২৪-[২৭] ইবনু মাজাহ্ এ হাদীসটিকে আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। (দেখুন পূর্বের হাদীস)
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
وَرَوَاهُ ابْن مَاجَه عَن أنس
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২৫-[২৮] কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জন করে ’আলিমদের ওপর গৌরব করার জন্য অথবা জাহিল-মূর্খদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করার জন্য অথবা মানুষকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। (তিরমিযী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
وَعَنْ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ لِيُجَارِيَ بِهِ الْعُلَمَاءَ أَوْ لِيُمَارِيَ بِهِ السُّفَهَاءَ أَوْ يصرف بِهِ وُجُوه النَّاس إِلَيْهِ أَدخل الله النَّار» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: যে বিদ্যা অন্বেষণকারী ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্য বাদ দিয়ে মানুষের সামনে নিজ ‘ইলমের প্রকাশের জন্য বিদ্বান ব্যক্তির সাথে তর্কে লিপ্ত হবে, অজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে সন্দেহে লিপ্ত করার জন্য বিদ্যা শিক্ষা করবে অথবা সম্পদ ও সম্মান অর্জনের উদ্দেশে, জনসাধারণ ও বিদ্যা অন্বেষণকারীদের দৃষ্টিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়ার উদ্দেশে এবং তাদের সকলকে খাদিমে পরিণত করতে তাহলে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২৬-[২৯] ইবনু মাজাহ এ হাদীসটি ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন।[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
وَرَوَاهُ ابْن مَاجَه عَن ابْن عمر
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২৭-[৩০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ’ইলম বা জ্ঞান দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়, কেউ সে জ্ঞান পার্থিব স্বার্থোদ্ধারের অভিপ্রায়ে অর্জন করলে কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। (আহমাদ, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ্)[1]
ইমাম হাকিম ও যাহাবী একে সহীহ বলেছেন।
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ تَعَلَّمَ عِلْمًا مِمَّا يُبْتَغَى بِهِ وَجْهُ اللَّهِ لَا يَتَعَلَّمُهُ إِلَّا لِيُصِيبَ بِهِ عَرَضًا مِنَ الدُّنْيَا لَمْ يَجِدْ عَرْفَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» يَعْنِي رِيحَهَا. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: হাদীস থেকে বুঝা যায়, যে ব্যক্তি দীনী বিদ্যা শিক্ষার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া দুনিয়ার সম্পদের ইচ্ছা করবে সে জান্নাতের আশ-পাশেও ভিড়তে পারবে না। তবে কেউ যদি তা’ দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি উদ্দেশ্য করে। অতঃপর দুনিয়ার সম্পদের প্রতি তার ঝোঁক থাকে সে ব্যক্তি হাদীসে উল্লিখিত শাস্তির আওতাভুক্ত হবে না।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২৮-[৩১] ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ সে ব্যক্তির মুখ উজ্জ্বল করুন যে আমার কোন কথা শুনেছে, অতঃপর এ কথাকে স্মরণ রেখেছে ও রক্ষা করেছে এবং যা শুনেছে হুবহু তা মানুষের নিকট পৌঁছিয়ে দিয়েছে। কারণ জ্ঞানের অনেক বাহক নিজে জ্ঞানী নয়। আবার কেউ কেউ এমন আছে যারা নিজেরা জ্ঞানী হলেও, নিজের তুলনায় বড় জ্ঞানীর নিকট জ্ঞান বহন করে নিয়ে যায়। তিনটি বিষয়ে মুসলিমের অন্তর বিশ্বাসঘাতকতা (অবহেলা) করতে পারে নাঃ (১) আল্লাহর উদ্দেশে নিষ্ঠার সাথে কাজ করা, (২) মুসলিমের কল্যাণ কামনা করা এবং (৩) মুসলিমের জামা’আতকে আঁকড়ে ধরা। কারণ মুসলিমের দু’আ বা আহবান তাদের পরবর্তী (মুসলিমদেরও) শামিল করে রাখে। (শাফি’ঈ, বায়হাক্বী তাঁর ’মাদখাল’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَضَّرَ اللَّهُ عَبْدًا سَمِعَ مَقَالَتِي فَحَفِظَهَا وَوَعَاهَا وَأَدَّاهَا فَرُبَّ حَامِلِ فِقْهٍ غَيْرِ فَقِيهٍ وَرُبَّ حَامِلِ فِقْهٍ إِلَى مَنْ هُوَ أَفْقَهُ مِنْهُ. ثَلَاثٌ لَا يَغِلُّ عَلَيْهِنَّ قَلْبُ مُسْلِمٍ إِخْلَاصُ الْعَمَلِ لِلَّهِ وَالنَّصِيحَةُ لِلْمُسْلِمِينَ وَلُزُومُ جَمَاعَتِهِمْ فَإِنَّ دَعْوَتَهُمْ تُحِيطُ مِنْ ورائهم» . رَوَاهُ الشَّافِعِي وَالْبَيْهَقِيّ فِي الْمدْخل
ব্যাখ্যা: হাদীসের প্রথমাংশ থেকে বুঝা যায়, দীনী বিদ্যা অর্জনের পর তা মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়াই মূল লক্ষ্য। জ্ঞানের অনেক বাহক আছে যারা অর্জন করা জ্ঞান থেকে মাসআলাহ্ সাব্যস্ত করতে পারে না বিধায় অর্জিত জ্ঞান থেকে তেমন কিছু উপকৃত হতে পারে না। পক্ষান্তরে এমন অনেক ব্যক্তি আছে যাদের কাছে জ্ঞান বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়, তারা সে জ্ঞান থেকে যথার্থভাবে মাস্আলাহ্ সাব্যস্ত করতে পারে ফলে সে জ্ঞান দ্বারা নিজে উপকৃত হয় জ্ঞানের বাহক উপকৃত হয়।
হাদীসের শেষে বলা হচ্ছে, এমন তিনটি বৈশিষ্ট্যের কথা যার উপর একজন মু’মিন ব্যক্তিকে সদা অটল থাকতে হবে। তিনটি বৈশিষ্ট্যের মাঝে তৃতীয় নম্বর বৈশিষ্ট্যে বলা হয়েছে মুসলিমদের জামা‘আত বা দল আঁকড়িয়ে ধরতে হবে। অতএব মুসলিমকে অন্যান্য মুসলিমের সাথে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক বিশ্বাসে, সৎ ‘আমলে, জামা‘আতের সালাতে, জুমু‘আর সালাতে দু’ ঈদের সালাতে এবং মুসলিম নেতাদের আনুগত্যে ও অন্যান্য বিষয়ে সামঞ্জস্য রেখে চলতে হবে। ফলে শায়ত্বনের (শয়তানের) চক্রান্ত ও পথভ্রষ্টতা থেকে নিজেকে রক্ষা করা যাবে।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২৯-[৩২] আহমাদ, তিরমিযী ও আবূ দাঊদ হাদীসটি যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তবে তিরমিযী ও আবূ দাঊদثَلَاثٌ لَّا يَغِلُّ হতে শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেননি।[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
وَرَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ عَنْ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ. إِلَّا أَنَّ التِّرْمِذِيّ وَأَبا دواد لَمْ يَذْكُرَا: «ثَلَاثٌ لَا يَغِلُّ عَلَيْهِنَّ» . إِلَى آخِره
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২৩০-[৩৩] ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ তা’আলা সে ব্যক্তির মুখ উজ্জ্বল করুন যে আমার কোন কথা শুনেছে এবং যেভাবে শুনেছে ঠিক সেভাবেই অন্যের কাছে তা পৌঁছে দিয়েছে। অনেক সময় যাকে পৌঁছানো হয় সে শ্রোতা থেকে অধিক স্মরণকারী হয়। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ্)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
وَعَن ابْن مَسْعُودٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «نَضَّرَ اللَّهُ امْرَأً سَمِعَ مِنَّا شَيْئًا فَبَلَّغَهُ كَمَا سَمِعَهُ فَرُبَّ مُبَلَّغٍ أَوْعَى لَهُ مِنْ سَامِعٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: (فَبَلَّغَهٗ كَمَا سَمِعَهٗ) ‘‘যেভাবে শুনেছে ঠিক সেভাবেই তা অন্যের নিকট পৌঁছে দিয়েছে।’’ অর্থাৎ- শ্রবণকৃত কথার মধ্যে কোন প্রকার পরিবর্তন পরিবর্ধন ও কমবেশী না করে ঠিক সেভাবেই তা অন্যের নিকটে পৌঁছিয়েছে যেভাবে তা শুনেছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাস করে হাদীস বর্ণনাকারীর জন্য দু‘আ করেছেন এজন্য যে, তিনি ‘ইলমের উজ্জ্বলতা এবং সুন্নাতের সংস্কারের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে যে, তাই তার প্রতিদান স্বরূপ তার জন্য উপযোগী দু‘আ করেছেন। এ হাদীস প্রমাণ করেন হাদীস বর্ণনাকারী ও তার শিক্ষা অর্জনকারীর জন্য অনেক মর্যাদা ও ফাযীলাত রয়েছে। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীস সংরক্ষণকারী ও তা বর্ণনাকারীর জন্য এমন দু‘আ করেছেন যা তার উম্মাতের মাঝে অন্য কারোর জন্য করেননি।
(فَرُبَّ مُبَلَّغٍ اًوْعى لَهٗ مِنْ سَامِعٍ) ‘‘অনেক সময় যাকে পৌঁছানো হয় সে শ্রোতার চাইতে অধিক স্মরণকারী হয়।’’ অর্থাৎ- অনেক সময় এমন লোক দেখা যায় যে, যিনি কারো নিকট থেকে হাদীস শুনেছেন কিন্তু তিনি ঐ হাদীসের মর্ম অনুধাবন করতে পারেননি। বরং এ ব্যক্তি হাদীসটি যখন অন্য কারোর নিকট পৌঁছিয়ে দেন তখন ঐ দ্বিতীয় শ্রোতা প্রথম শ্রোতার চাইতে হাদীসের মর্ম বুঝতে অধিক পারঙ্গম হয়। তার অর্থ বুঝতে অধিক বুদ্ধিমান হয়। এতে প্রথম শ্রোতার চাইতে দ্বিতীয় শ্রোতা অধিক লাভবান হয় এবং তার দ্বারা অন্যান্য লোকজন হাদীস দ্বারা মাস্আলাহ্-মাসায়েল জানার মাধ্যমে অনেক উপকৃত হন।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২৩১-[৩৪] এ হাদীসটি দারিমী আবুদ্ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
وَرَوَاهُ الدَّارمِيّ عَن أبي الدَّرْدَاء