মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) পর্ব-২: ‘ইলম (বিদ্যা) (كتاب العلم) - 2. Knowledge
১৯৮

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

’ইলমের মর্যাদা এবং ’ইলম অর্জন করা ও শিক্ষা দেয়ার মর্যাদা বিষয়ে যা কিছু ’ইলমের সাথে সংশ্লিষ্ট তার বিবরণ, ভাষাগতভাবে ’ইলম কি? এবং ’ইলমের ফরয ও নফলের বিবরণ। এছাড়া ’ইলমের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়, এখানে ’ইলমের সারবস্ত্ত ও বাস্তবতার বিবরণ আনা হয়নি, কেননা সারবস্ত্ত কিতাবের বিষয় নয়। কিতাবুল ’ইলম সকল কিতাবের কেন্দ্রবিন্দু। তাই এটিকেই অন্য সব কিতাবের পূর্বভাগে স্থান দেয়া হয়েছে। আবার এটিকে কিতাবুল ঈমান ও এতদসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় যেমন- তাক্বদীর, কবরের শাস্তি, কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আঁকড়ে ধরা কিংবা কুফর এবং ঈমানে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী অন্যান্য বিষয়ের পূর্বে স্থান দেয়া হয়নি। কারণ শারী’আতের দায়িত্ব পালনের যোগ্য ব্যক্তির জন্য সর্বপ্রথম ওয়াজিব এবং সর্বাধিক সম্মানিত বিষয় হচ্ছে ঈমান। এক্ষেত্রে ’ইলম অন্বেষণকারীর জন্য উচিত হবে ইবনু জামা’আর تذكرة السامع والمتعلم মৃঃ ৭৩৩ হিজরী, ইবনু ’আবদুল বার-এর جامع بيان العلم মৃঃ ৪৬২ হিজরী এবং এ বিষয়ের আরো অন্যান্য কিতাব অধ্যয়ন করা।


১৯৮-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার পক্ষ হতে (মানুষের কাছে) একটি বাক্য হলেও পৌঁছিয়ে দাও। বনী ইসরাঈল হতে শোনা কথা বলতে পারো, এতে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে, সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে প্রস্তুত করে নেয়। (বুখারী)[1]

الْفَصْلُ الْلأَوَّلُ

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً وَحَدِّثُوا عَنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَلَا حَرَجَ وَمَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

عن عبد الله بن عمرو قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «بلغوا عني ولو اية وحدثوا عن بني اسراىيل ولا حرج ومن كذب علي متعمدا فليتبوا مقعده من النار» . رواه البخاري

ব্যাখ্যা: হাদীস থেকে বুঝা যায়, কুরআনের একটি ছোট আয়াতও যদি কারো জানা থাকে তাহলে তা প্রচার করতে হবে। আর কুরআন স্বয়ং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে যা তিনি আল্লাহর কাছ থেকে নিয়ে এসেছেন। যে কুরআন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে, তার ধারক-বাহক অধিক হওয়া এবং স্বয়ং আল্লাহ তার সংরক্ষণের দায়িত্ব নেয়া সত্ত্বেও তা আরো প্রচারের জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন। অতএব হাদীস প্রচারের দায়িত্ব সমধিক গুরুত্বপূর্ণ।

বানী ইসরাঈলের মাঝে যেসব আশ্চর্যজনক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তা যদিও এ উম্মাতের মাঝে তা ঘটা অসম্ভব মনে হয় তথাপিও তা বর্ণনা করা যাবে। যেমন- কুরবানীকে গ্রাস করার জন্য আকাশ হতে আগুন নেমে আসার বিষয়কে আমরা মিথ্যা বলে জানি না এবং এ ধরনের তাদের আরো ঘটনাবলী যেমন বানী ইসরাঈল গোবৎসের উপাসনা করার পর অনুশোচনায় নিজেদেরকে হত্যা করা এবং কুরআনে বিবৃত ঘটনাবলী যাতে শিক্ষণীয় কিছু আছে, তা বর্ণনা করাতে কোন দোষ নেই। তবে বানী ইসরাঈল থেকে যে ঘটনাবলী এসেছে তা নিয়ে একেবারে ব্যাস্ত হয়ে পড়তে এবং তাওরাতের রহিত হওয়া বিধানের প্রতি ‘আমল করতে আমাদের নিষেধ করা হয়েছে।

ইসলামের সূচনাতে যখন বিধি-বিধান নির্ধারিত না থাকা অবস্থায় বানী ইসরাঈল হতে কোন কিছু বর্ণনা করা হলে তার প্রতি কখনো কখনো মানুষ ‘আমল করতো বিধায় ঐসব ঘটনা বর্ণনা করা নিষেধ ছিল। অতঃপর যখন ইসলামী বিধি-বিধান স্থির হয়ে গেল তখন পূর্বোক্ত নিষেধাজ্ঞা আর বাকী রইল না। হাদীসের শেষাংশে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর যে কোন ধরনের মিথ্যারোপ করাকে নিষেধ করা হয়েছে। অতএব যারা দীনের প্রতি উৎসাহ দেয়ার জন্য এবং আল্লাহর প্রতি ভয় দেখানোর উদ্দেশে মিথ্যা হাদীস তৈরি করা জায়িয বলে থাকে তাদের এ ধরনের দাবীকে খণ্ডন করা হয়েছে। সুতরাং সর্বাবস্থায় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে মিথ্যা ছড়ানো হারাম।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২: ‘ইলম (বিদ্যা) (كتاب العلم) 2. Knowledge
১৯৯

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

১৯৯-[২] সামুরাহ্ বিন জুনদুব ও মুগীরাহ্ বিন শু’বাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তারা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার পক্ষ হতে এমন হাদীস বলে, যা সে মিথ্যা মনে করে, নিশ্চয়ই সে মিথ্যাবাদীদের একজন। (মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْلأَوَّلُ

وَعَن سَمُرَة بن جُنْدُب وَالْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ حَدَّثَ عَنِّي بِحَدِيثٍ يَرَى أَنَّهُ كَذِبٌ فَهُوَ أَحَدُ الْكَاذِبِينَ» . رَوَاهُ مُسلم

وعن سمرة بن جندب والمغيرة بن شعبة قالا: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من حدث عني بحديث يرى انه كذب فهو احد الكاذبين» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: কোন একটি হাদীস তৈরি করে তা রসূলের দিকে সম্বন্ধ করা হয়েছে- এ বিষয়টি পরিষ্কার জানার পরেও কোন ব্যক্তি যদি তা রসূলের হাদীস বলে মানুষের সামনে উল্লেখ করে তাহলে সে ব্যক্তি হাদীস তৈরিকারীদের একজন। তবে হাদীস উল্লেখের পর যদি বলে দেয় এ হাদীসটি তৈরিকৃত তবে ঐ ব্যক্তির হুকুম আলাদা।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২: ‘ইলম (বিদ্যা) (كتاب العلم) 2. Knowledge
২০০

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২০০-[৩] মু’আবিয়াহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা যার কল্যাণ কামনা করেন, কল্যাণ চান, তাকে দীনের সঠিক জ্ঞান দান করেন। বস্ত্তত আমি শুধু বণ্টনকারী। আর আল্লাহ তা’আলা আমাকে দান করেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]


লাল মার্ক করা অংশের অনুবাদে সঠিক না হবার কারনে তা সংশোধন করা হল। - হাদিসবিডি এডমিন

الْفَصْلُ الْلأَوَّلُ

وَعَنْ مُعَاوِيَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ وَإِنَّمَا أَنَا قَاسِمٌ وَاللَّهِ يُعْطِي»

وعن معاوية قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من يرد الله به خيرا يفقهه في الدين وانما انا قاسم والله يعطي»

ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ওয়াহীর জ্ঞান বিতরণ করা কোন ব্যক্তি বিশেষকে কেন্দ্র করে নয়; তথাপিও ওয়াহীর জ্ঞান বুঝার ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে ভিন্নতা দেখতে পাওয়া যায়। তার কারণ আল্লাহ প্রত্যেককে তাদের তাক্বদীর অনুপাতে ‘ইলম দান করে থাকেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২: ‘ইলম (বিদ্যা) (كتاب العلم) 2. Knowledge
২০১

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২০১-[৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সোনা-রূপার খনির ন্যায় মানবজাতিও খনিবিশেষ। যারা জাহিলিয়্যাতের (অন্ধকারের) যুগে উত্তম ছিল, দীনের জ্ঞান লাভ করার কারণে তারা ইসলামের যুগেও উত্তম। (মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْلأَوَّلُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «النَّاسُ مَعَادِنُ كَمَعَادِنِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ خِيَارُهُمْ فِي الْجَاهِلِيَّةِ خِيَارُهُمْ فِي الْإِسْلَامِ إِذَا فَقِهُوا» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «الناس معادن كمعادن الذهب والفضة خيارهم في الجاهلية خيارهم في الاسلام اذا فقهوا» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: মানুষ সম্মান ও হীনতার দিক দিয়ে বংশগত ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে যেমন- স্বর্ণ, রূপা ও অন্যান্য পদার্থের খনি বিভিন্ন রকম হয়। খনির সাথে মানুষকে সাদৃশ্য দেয়ার অন্য কারণ এমনও হতে পারেঃ মানুষ যেমন সম্মান, জ্ঞান-বিজ্ঞানকে সংরক্ষণকারী খনি তেমন উৎকৃষ্ট পদার্থ ও উপকারী বস্তুর অংশ সংরক্ষণকারী। হাদীসে বলা হয়েছে, যারা জাহিলী যুগে সর্বোত্তম গোত্রের আওতাভুক্ত ছিল; কৃতিত্ব, উত্তম গুণাবলী, জ্ঞানে, বীরত্বে, অন্যের সমকক্ষ হওয়া সত্ত্বেও কুফর ও মূর্খতার অন্ধকারে ঢাকা ছিল তারা মূলত খনিতে থাকা ঐ স্বর্ণ রৌপ্যের মতো যা প্রথমে মাটি মিশ্রিত থাকে পরে স্বর্ণকারগণ তা আহরণ করে মাটি হতে আলাদা করে নেয়। জাহিলী যুগের সর্বোত্তম ব্যক্তিগণ যখন ইসলামী যুগে শারী‘আতী জ্ঞান লাভ করে তখন সে তার জ্ঞান ও ঈমানের আলোতে আলোকিত হয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২: ‘ইলম (বিদ্যা) (كتاب العلم) 2. Knowledge
২০২

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২০২-[৫] ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুই ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো ব্যাপারে হিংসা করা ঠিক নয়। প্রথম ব্যক্তি- যাকে আল্লাহ তা’আলা সম্পদ দান করেছেন, সাথে সাথে তা সত্যের পথে (ফী সাবীলিল্লাহ) বা সৎকার্যে ব্যয় করার জন্য তাকে তাওফীক্বও দিয়েছেন। দ্বিতীয় ব্যক্তি- যাকে আল্লাহ তা’আলা হিকমাহ্, অর্থাৎ- জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করেছেন এবং সে এ জ্ঞান ও প্রজ্ঞা যথোপযুক্তভাবে কাজে লাগায় এবং (লোকদেরকে) তা শিখায়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْلأَوَّلُ

وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا حَسَدَ إِلَّا فِي اثْنَتَيْنِ رَجُلٍ آتَاهُ اللَّهُ مَالًا فَسَلَّطَهُ عَلَى هَلَكَتِهِ فِي الْحَقِّ وَرَجُلٍ آتَاهُ اللَّهُ لْحِكْمَة فَهُوَ يقْضِي بهَا وَيعلمهَا)

وعن ابن مسعود قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: لا حسد الا في اثنتين رجل اتاه الله مالا فسلطه على هلكته في الحق ورجل اتاه الله لحكمة فهو يقضي بها ويعلمها)

ব্যাখ্যা: হাদীসে মূলত حَسَدَ শব্দ উল্লেখ হয়েছে যার প্রকৃত অর্থ অন্যের সম্পদ নষ্ট হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করা, এতে আকাঙ্ক্ষাকারীর ঐ সম্পদ অর্জন হোক আর না হোক। তবে হাদীসে বর্ণিত حَسَدَ দ্বারা মূলত তা উদ্দেশ্য নয়। বরং غِبْطَةٌ বা ঈর্ষা উদ্দেশ্য। غِبْطَةٌ বলা হয় অন্যের সম্পদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা না করে অন্যের সম্পদের ন্যায় নিজেরও সম্পদ অর্জনের আকাঙ্ক্ষা করা। غِبْطَةٌ এটি জায়িয, পক্ষান্তরে حَسَدَ জায়িয নয়। তবে حَسَدَ শব্দটি হাদীসে ব্যবহারের কারণ এই যে, অধিকাংশ সময় হাদীসে বর্ণিত দু’টি বিষয়ে মানুষের حَسَدَ বা হিংসা সৃষ্টি হয়ে থাকে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২: ‘ইলম (বিদ্যা) (كتاب العلم) 2. Knowledge
২০৩

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২০৩-[৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষ যখন মারা যায় তখন তার ’আমল বন্ধ (নিঃশেষ) হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি ’আমলের সাওয়াব (অব্যাহত থাকে): (১) সদাক্বায়ি জারিয়াহ্, (২) জ্ঞান- যা থেকে মানুষ উপকৃত হতে থাকে এবং (৩) সুসন্তান- যে তার (পিতা-মাতার) জন্য দু’আ করে। (মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْلأَوَّلُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةِ أَشْيَاءَ: صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أوعلم ينْتَفع بِهِ أوولد صَالح يَدْعُو لَهُ)
رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: اذا مات الانسان انقطع عمله الا من ثلاثة اشياء: صدقة جارية اوعلم ينتفع به اوولد صالح يدعو له) رواه مسلم

ব্যাখ্যা: নিশ্চয়ই মানুষ যখন মারা যায় তখন তার ‘আমলের সাওয়াব আর লেখা হয় না, কেননা সাওয়াব মূলত তার ‘আমলের বদলা আর তা ব্যক্তি মারা যাওয়ার সাথে সাথে বন্ধ হয়ে যায়। তবে সর্বদাই কল্যাণকর ও উপকারী কাজের বদলা চলতে থাকে। যেমন- কোন কিছু ওয়াকফ করে যাওয়া অথবা শারী‘আতী বিদ্যা লিখে যাওয়া অথবা শিক্ষা দিয়ে যাওয়া বা ব্যবস্থা করে যাওয়া অথবা সৎ সন্তান রেখে যাওয়া। সৎ সন্তান মূলত ‘আমলেরই আওতাভুক্ত, কেননা পিতাই মূলত সন্তানের অস্তিত্বের কারণ ও তাকে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিয়ে সৎ করে তোলার কারণ। সন্তান ছাড়া অন্য কেউ যদি মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ করে তাহলে মৃত ব্যক্তির জন্য ঐ দু‘আ কাজে আসবে তথাপিও হাদীসে সন্তানকে নির্দিষ্ট করার কারণ হচ্ছে সন্তানকে দু‘আর ব্যাপারে উৎসাহিত করা।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২: ‘ইলম (বিদ্যা) (كتاب العلم) 2. Knowledge
২০৪

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২০৪-[৭] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মু’মিনের দুনিয়ার বিপদসমূহের কোন একটি বিপদ দূর করে দিবে, আল্লাহ তা’আলা তার আখিরাতের বিপদসমূহের মধ্য হতে একটি (কঠিন) বিপদ দূর করে দিবেন। যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত লোকের অভাব (সাহায্যের মাধ্যমে) সহজ করে দিবে, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিনে তাকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য প্রদান করবেন। যে ব্যক্তি কোন মু’মিনের দোষ-ত্রুটি গোপন করবে (প্রকাশ করবে না), আল্লাহ তা’আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। আল্লাহ তা’আলা তার বান্দাদেরকে ততক্ষণ পর্যন্ত সাহায্য করতে থাকেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করতে থাকে। যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেষণের জন্য কোন পথ বা পন্থায় অনুপ্রবেশ করার সন্ধান করে, আল্লাহ তা’আলা এর বিনিময়ে তার জান্নাতে প্রবেশ করার পথ সহজ করে দেন। যখন কোন দল আল্লাহর কোন ঘরে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং জ্ঞানচর্চা করে, তাদের ওপর আল্লাহর তরফ থেকে স্বস্তি ও প্রশান্তি নাযিল হতে থাকে, আল্লাহর রহমত তাদেরকে ঢেকে নেয় এবং মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তাদেরকে ঘিরে রাখে এবং আল্লাহ তা’আলা মালায়িকাহ্’র নিকট তাদের উল্লেখ করেন। আর যার ’আমল তাকে পিছিয়ে দেয় তার বংশ তাকে এগিয়ে দিতে পারে না। (মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْلأَوَّلُ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الدُّنْيَا نَفَّسَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمِنْ يَسَّرَ عَلَى مُعْسِرٍ يَسَّرَ اللَّهُ عَلَيْهِ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ. وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَاللَّهُ فِي عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِي عَوْنِ أَخِيهِ وَمَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللَّهُ لَهُ بِهِ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ وَمَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِي بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللَّهِ يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ وَيَتَدَارَسُونَهُ بَيْنَهُمْ إِلَّا نَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَحَفَّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ وَذَكَرَهُمُ اللَّهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ وَمَنْ بَطَّأَ بِهِ عَمَلُهُ لَمْ يُسْرِعْ بِهِ نسبه» . رَوَاهُ مُسلم

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من نفس عن مومن كربة من كرب الدنيا نفس الله عنه كربة من كرب يوم القيامة ومن يسر على معسر يسر الله عليه في الدنيا والاخرة. ومن ستر مسلما ستره الله في الدنيا والاخرة والله في عون العبد ما كان العبد في عون اخيه ومن سلك طريقا يلتمس فيه علما سهل الله له به طريقا الى الجنة وما اجتمع قوم في بيت من بيوت الله يتلون كتاب الله ويتدارسونه بينهم الا نزلت عليهم السكينة وغشيتهم الرحمة وحفتهم الملاىكة وذكرهم الله فيمن عنده ومن بطا به عمله لم يسرع به نسبه» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: কোন ব্যক্তি যদি দরিদ্র ব্যক্তির কাছ থেকে পাওনা আদায়ে অবকাশ দেয় অথবা পাওনার কিছু অংশ ছেড়ে দেয় অথবা পাওনার সম্পূর্ণ অংশই ছেড়ে দেয় তাহলে আল্লাহ এ ধরনের পাওনাদার ব্যক্তিকে ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতে সহজতা দান করবেন। আর যে ব্যক্তি তার কোন মুসলিম ভাইকে কাপড় দ্বারা আবৃত করবে বা তার দোষ-ত্রুটি মানুষের সামনে প্রকাশ না করে গোপন করে রাখবে আল্লাহ ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন এ ব্যক্তির নগ্ন দেহকে কাপড় দ্বারা আবৃত করবেন বা তার দোষ-ত্রুটিসমূহ গোপন করে রাখবেন। যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাই থেকে ক্ষতিকর বিষয় প্রতিহত করা ও উপকার করার মাধ্যমে তার ভাইয়ের সহযোগিতায় থাকবে আল্লাহও তার সহযোগিতায় থাকবেন। আর যে কোন সম্প্রদায় আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে নির্মিত মাসজিদ, মাদ্রাসা, মাহফিলে বসে পরস্পরের মধ্যে দীনী বিদ্যা চর্চা করবে, আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করবে তাহলে রহমাত তাদেরকে ঢেকে নিবে, তাদের ওপর প্রশান্তি অবতীর্ণ হবে। তাদের উত্তম কাজের জন্য তাদের ওপর রহমাত ও বারাকাতের মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) অবতীর্ণ হবেন। যে ব্যক্তিকে তার মন্দ ‘আমল পরকালের সৌভাগ্যমণ্ডিত স্থানে পৌঁছাতে ব্যর্থ হবে অথবা সৎ ‘আমলে যার অগ্রগামিতা তাকে পিছিয়ে রাখবে তার প্রভাব-প্রতিপত্তি, অর্থ, দৈহিক বিশাল আকারের গঠন উচ্চ বংশ মর্যাদা আল্লাহর কাছে কোন কাজে আসবে না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২: ‘ইলম (বিদ্যা) (كتاب العلم) 2. Knowledge
২০৫

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২০৫-[৮] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন প্রথমে এক শাহীদ ব্যক্তির ব্যাপারে বিচার হবে। আল্লাহ তা’আলার সামনে হাশ্‌রের (হাশরের) ময়দানে তাকে পেশ করবেন এবং তাকে তিনি তার সকল নি’আমাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। অতঃপর তার এসব নি’আমাতের কথা স্মরণ হয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাকে জিজ্ঞেস করবেন, তুমি এসব নি’আমাত পাবার পর দুনিয়াতে তাঁর কৃতজ্ঞতা স্বীকারে কী কাজ করেছো? সে উত্তরে বলবে, আমি তোমার (সন্তুষ্টির) জন্য তোমার পথে (কাফিরদের বিরুদ্ধে) লড়াই করেছি, এমনকি শেষ পর্যন্ত আমাকে শাহীদ করে দেয়া হয়েছে। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো। তোমাকে বীরপুরুষ বলবে এজন্য তুমি লড়েছো। আর তা বলাও হয়েছে (তাই তোমার উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছে)। তখন তার ব্যাপারে হুকুম দেয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

তারপর দ্বিতীয় ব্যক্তি- যে নিজে জ্ঞানার্জন করেছে, অন্যকেও তা শিক্ষা দিয়েছে ও কুরআন পড়েছে, তাকে উপস্থিত করা হবে। তাকে দেয়া সব নি’আমাত আল্লাহ তাকে স্মরণ করিয়ে দিবেন। এসব নি’আমাত তার স্মরণ হবে। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করবেন, এসব নি’আমাতের তুমি কি শোকর আদায় করেছো? সে উত্তরে বলবে, আমি ’ইলম অর্জন করেছি, মানুষকে ’ইলম শিক্ষা দিয়েছি, তোমার জন্য কুরআন পড়েছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো, তোমাকে ’আলিম বলা হবে, ক্বারী বলা হবে, তাই তুমি এসব কাজ করেছ। তোমাকে দুনিয়ায় এসব বলাও হয়েছে। তারপর তার ব্যাপারে হুকুম দেয়া হবে এবং মুখের উপর উপুড় করে টেনে হিঁচড়ে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

এরপর তৃতীয় ব্যক্তি- যাকে আল্লাহ তা’আলা বিভিন্ন ধরনের মাল দিয়ে সম্পদশালী করেছেন, তাকেও আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ তাকে দেয়া সব নি’আমাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। এসব তারও মনে পড়ে যাবে। আল্লাহ তাকে এবার জিজ্ঞেস করবেন, এসব নি’আমাত পেয়ে তুমি কি ’আমল করেছো? সে ব্যক্তি উত্তরে বলবে, আমি এমন কোন খাতে খরচ করা বাকী রাখিনি, যে খাতে খরচ করাকে তুমি পছন্দ কর। আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো, তুমি খরচ করেছো, যাতে মানুষ তোমাকে দানবীর বলে। সে খিতাব তুমি দুনিয়ায় অর্জন করেছো। তারপর তার ব্যাপারে হুকুম দেয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْلأَوَّلُ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِن أول النَّاس يقْضى عَلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ رَجُلٌ اسْتُشْهِدَ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ قَاتَلْتُ فِيكَ حَتَّى اسْتُشْهِدْتُ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ قَاتَلْتَ لِأَنْ يُقَالَ جَرِيءٌ فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أَمر بِهِ فسحب على وَجهه حَتَّى ألقِي فِي النَّارِ وَرَجُلٌ تَعَلَّمَ الْعِلْمَ وَعَلَّمَهُ وَقَرَأَ الْقُرْآنَ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا قَالَ تَعَلَّمْتُ الْعِلْمَ وَعَلَّمْتُهُ وَقَرَأْتُ فِيكَ الْقُرْآنَ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ تَعَلَّمْتَ الْعلم ليقال عَالِمٌ وَقَرَأْتَ الْقُرْآنَ لِيُقَالَ هُوَ قَارِئٌ فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ وَرَجُلٌ وَسَّعَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَأَعْطَاهُ مِنْ أَصْنَافِ الْمَالِ كُلِّهِ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبِيلٍ تُحِبُّ أَنْ يُنْفَقَ فِيهَا إِلَّا أَنْفَقْتُ فِيهَا لَكَ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ فَعَلْتَ لِيُقَالَ هُوَ جَوَادٌ فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ ثُمَّ أُلْقِيَ فِي النَّارِ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ان اول الناس يقضى عليه يوم القيامة رجل استشهد فاتي به فعرفه نعمه فعرفها قال فما عملت فيها؟ قال قاتلت فيك حتى استشهدت قال كذبت ولكنك قاتلت لان يقال جريء فقد قيل ثم امر به فسحب على وجهه حتى القي في النار ورجل تعلم العلم وعلمه وقرا القران فاتي به فعرفه نعمه فعرفها قال فما عملت فيها قال تعلمت العلم وعلمته وقرات فيك القران قال كذبت ولكنك تعلمت العلم ليقال عالم وقرات القران ليقال هو قارى فقد قيل ثم امر به فسحب على وجهه حتى القي في النار ورجل وسع الله عليه واعطاه من اصناف المال كله فاتي به فعرفه نعمه فعرفها قال فما عملت فيها؟ قال ما تركت من سبيل تحب ان ينفق فيها الا انفقت فيها لك قال كذبت ولكنك فعلت ليقال هو جواد فقد قيل ثم امر به فسحب على وجهه ثم القي في النار» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (فَعَرَّفَه نِعَمَه فَعَرَفَهَا؟) ‘‘তাকে আল্লাহ তা‘আলা তার নি‘আমাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন, ফলে তার তা স্মরণ হয়ে যাবে।’’ অর্থাৎ- ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিনের ভয়াবহতা অবলোকন করে পৃথিবীতে তাকে আল্লাহর দেয়া নি‘আমাতের কথা ভুলে যাবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা যখন তাকে দুনিয়াতে আল্লাহর দেয়া নি‘আমাতরাজির কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন তখন তার সেসব নি‘আমাতের কথা স্মরণ হবে এবং সে তা স্বীকার করবে।

(فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا) ‘‘তোমাকে যে নি‘আমাত দান করা হয়েছিল তার মোকাবিলায় তুমি কি করেছ?’’ অর্থাৎ- সে নি‘আমাতরাজি পেয়ে তার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তুমি কি করেছ?

(قَاتَلْتُ فِيكَ حَتَّى اسْتُشْهِدْتُ) ‘‘আমি তোমার পথে লড়াই করে শাহীদ হয়েছি।’’ অর্থাৎ- তোমার সন্তুষ্টির জন্য কাফিরদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমার জীবন বিলিয়ে দিয়েছি।

(كَذَبْتَ) ‘‘তুমি মিথ্যে বলছো’’। অর্থাৎ- ‘‘আমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য জীবন বিলিয়ে দিয়েছি’’ তোমার এ দাবীতে তুমি মিথ্যাবাদী, তুমি সত্য বলনি।

হাদীস হতে বুঝা যায় ‘আমলে স্বচ্ছ নিয়্যাত থাকা আবশ্যক যা আল্লাহর বাণী কর্তৃকও প্রমাণিত। যেমন আল্লাহ বলেন- ‘‘তাদের এছাড়া অন্য কোন হুকুমই দেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহর ‘ইবাদাত করবে খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে’’- (সূরাহ্ আল বাইয়্যিনাহ্ ৯৮ঃ ৫)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২: ‘ইলম (বিদ্যা) (كتاب العلم) 2. Knowledge
২০৬

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২০৬-[৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (শেষ যুগে) আল্লাহ তা’আলা ’ইলম’ বা জ্ঞানকে তাঁর বান্দাদের অন্তর হতে টেনে বের করে উঠিয়ে নিবেন না, বরং (জ্ঞানের অধিকারী) ’আলিমদেরকে দুনিয়া হতে উঠিয়ে নিয়ে যাবার মাধ্যমে ’ইলম বা জ্ঞানকে উঠিয়ে নিবেন। তারপর (দুনিয়ায়) যখন কোন ’আলিম অবশিষ্ট থাকবে না, তখন লোকজন অজ্ঞ মূর্খ লোকেদেরকে নেতারূপে গ্রহণ করবে। অতঃপর তাদের নিকট (মাস্আলাহ্-মাসায়িল) জিজ্ঞেস করা হবে। তখন তারা বিনা ’ইলমেই ’ফাতাওয়া’ জারী করবে। ফলে নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে, অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْلأَوَّلُ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ لَا يَقْبِضُ الْعِلْمَ انْتِزَاعًا يَنْتَزِعُهُ مِنَ الْعِبَادِ وَلَكِنْ يَقْبِضُ الْعِلْمَ بِقَبْضِ الْعُلَمَاءِ حَتَّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوسًا جُهَّالًا فَسُئِلُوا فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ فضلوا وأضلوا»

وعن عبد الله بن عمرو قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ان الله لا يقبض العلم انتزاعا ينتزعه من العباد ولكن يقبض العلم بقبض العلماء حتى اذا لم يبق عالما اتخذ الناس رءوسا جهالا فسىلوا فافتوا بغير علم فضلوا واضلوا»

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে বিদ্যা অর্জনের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে, মূর্খদেরকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করা হতে সতর্ক করা হয়েছে এবং বিনা ‘ইলমে ফাতাওয়া দাতাদের নিন্দা প্রকাশ পেয়েছে। এমনকি যারা কুরআন-সুন্নাহর ‘ইলম ছাড়া ফাতাওয়া দিবে তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট ও অপরকে পথভ্রষ্টকারী হবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২: ‘ইলম (বিদ্যা) (كتاب العلم) 2. Knowledge
২০৭

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২০৭-[১০] শাক্বীক্ব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) প্রত্যেক বৃহস্পতিবারে লোকজনের সামনে ওয়ায-নাসীহাত করতেন। একদিন এক ব্যক্তি তাঁকে বললেন, হে আবূ ’আবদুর রহমান! আমরা চাই, আপনি এভাবে প্রতিদিন আমাদেরকে ওয়ায-নাসীহাত করুন। তখন তিনি [’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ)] বললেন, এরূপ করতে আমাকে এ কথাই বাধা দিয়ে থাকে যে, আমি প্রতিদিন (ওয়ায-নাসীহাত) করলে তোমরা বিরক্ত হয়ে উঠবে। এ কারণে আমি মাঝে মধ্যে ওয়ায-নাসীহাত করে থাকি, যেমনিভাবে আমাদেরকে ওয়ায-নাসীহাত করার ব্যাপারে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লক্ষ্য রাখতেন যাতে আমাদের মধ্যে বিরক্তির উদ্রেক না হয়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْلأَوَّلُ

وَعَن شَقِيق: كَانَ عبد الله يُذَكِّرُ النَّاسَ فِي كُلِّ خَمِيسٍ فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ لَوَدِدْتُ أَنَّكَ ذكرتنا كُلِّ يَوْمٍ قَالَ أَمَا إِنَّهُ يَمْنَعُنِي مِنْ ذَلِكَ أَنِّي أَكْرَهُ أَنْ أُمِلَّكُمْ وَإِنِّي أَتَخَوَّلُكُمْ بِالْمَوْعِظَةِ كَمَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَخَوَّلُنَا بِهَا مَخَافَةَ السَّآمَةِ عَلَيْنَا

وعن شقيق: كان عبد الله يذكر الناس في كل خميس فقال له رجل يا ابا عبد الرحمن لوددت انك ذكرتنا كل يوم قال اما انه يمنعني من ذلك اني اكره ان املكم واني اتخولكم بالموعظة كما كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يتخولنا بها مخافة السامة علينا

ব্যাখ্যা: হাদীসটিতে ওয়ায-নাসীহাতের ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে যাতে মানুষ বিরক্তবোধ না করে ও মূল উদ্দেশ্য ছুটে না যায়। সুতরাং নাসীহাতের সময় নাসীহাতকারীকে সময়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে ও মানুষের অবস্থা সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এ হাদীসে ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ প্রত্যেক বৃহস্পতিবার মানুষকে নাসীহাত করতেন বলে উল্লেখ রয়েছে। এ থেকে ইমাম বুখারী মাস্আলাহ্ সাব্যস্ত করেছেন-নাসীহাতের জন্য উস্তায (উস্তাদ) কর্তৃক সপ্তাহের কোন দিন ধার্য করা জায়িয।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২: ‘ইলম (বিদ্যা) (كتاب العلم) 2. Knowledge
২০৮

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২০৮-[১১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন কথা বলতেন (অধিকাংশ সময়) তিনবার বলতেন, যাতে মানুষ তাঁর কথাটা ভালো করে বুঝতে পারে। এভাবে যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোনও সম্প্রদায়ের কাছে যেতেন তাদেরও সালাম করতেন তখন তাদের তিনবার করে সালাম করতেন। (বুখারী)[1]

الْفَصْلُ الْلأَوَّلُ

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا تَكَلَّمَ بِكَلِمَةٍ أَعَادَهَا ثَلَاثًا حَتَّى تُفْهَمَ عَنْهُ وَإِذَا أَتَى عَلَى قَوْمٍ فَسَلَّمَ عَلَيْهِمْ سَلَّمَ عَلَيْهِمْ ثَلَاثًا . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

وعن انس قال: كان النبي صلى الله عليه وسلم اذا تكلم بكلمة اعادها ثلاثا حتى تفهم عنه واذا اتى على قوم فسلم عليهم سلم عليهم ثلاثا . رواه البخاري

ব্যাখ্যা: হাদীসে এসেছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কথা বলতেন তখন তিনবার করে বলতেন। হাদীসে বর্ণিত এ কাজটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবস্থা অনুপাতে করতেন, অর্থাৎ- উপস্থাপিত শব্দ যদি কঠিন হত অথবা শ্রোতাদের কাছে অপরিচিত হত অথবা শ্রোতাদের সংখ্যা অধিক হত তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন করতেন, সর্বদা নয়। কেননা বিনা প্রয়োজনে কথার পুনরুক্তি বালাগাতের অন্তর্ভুক্ত নয়। হাদীস থেকে বুঝা যায়, গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় স্থানে একজন শিক্ষকের জন্য উচিত হবে তার কথাকে একাধিকবার বলা। এমনিভাবে কোন ব্যক্তি যখন একবার কোন কথা শুনার পর মুখস্থ করতে পারবে না বা বুঝতে পারবে না তখন বক্তা/শিক্ষক তার কথা বুঝিয়ে দেয়ার উদ্দেশে বা মুখস্থ করিয়ে দেয়ার উদ্দেশে একাধিকবার বলতে পারেন।

হাদীসে স্থান পেয়েছে ‘‘রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন সম্প্রদায়ের কাছে গমন করতেন তখন তিনবার সালাম দিতেন’’ এ কথার তাৎপর্য প্রথম সালাম দিতেন অনুমতির জন্য দ্বিতীয় সালাম দিতেন ঘরে প্রবেশের জন্য এবং তৃতীয় সালাম বিদায়ের মুহূর্তে- এ প্রত্যেকটিই সুন্নাত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২: ‘ইলম (বিদ্যা) (كتاب العلم) 2. Knowledge
২০৯

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২০৯-[১২] আবূ মাস্’ঊদ আল আনসারী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমার সওয়ারী চলতে পারছে না, আপনি আমাকে একটি সওয়ারীর ব্যবস্থা করে দিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ সময় তো আমার নিকট তোমাকে দেবার মতো কোন সওয়ারী নেই। এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহর রসূল! আমি তাকে এমন এক লোকের সন্ধান দিতে পারি, যে তাকে সওয়ারীর ব্যবস্থা করে দিতে পারে। এটা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি কাউকে কোন কল্যাণের দিকে পথপ্রদর্শন করে, সে উক্ত কার্য সম্পাদনকারীর সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে। (মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْلأَوَّلُ

عَن أبي مَسْعُود الْأَنْصَارِيِّ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ إِنِّي أُبْدِعَ بِي فَاحْمِلْنِي فَقَالَ مَا عِنْدِي فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنَا أَدُلُّهُ عَلَى مَنْ يَحْمِلُهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مثل أجر فَاعله» . رَوَاهُ مُسلم

عن ابي مسعود الانصاري قال جاء رجل الى النبي صلى الله عليه وسلم فقال اني ابدع بي فاحملني فقال ما عندي فقال رجل يا رسول الله انا ادله على من يحمله فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من دل على خير فله مثل اجر فاعله» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে কথা, কাজ, ইশারা-ইঙ্গিত বা লিখনীর মাধ্যমে পুণ্যময় কোন কাজ বা ‘ইলমের দিক-নির্দেশনা দিবে তাহলে দিক-নির্দেশক নির্দেশনাপ্রাপ্ত ব্যক্তির মতো সাওয়াব লাভ করবে। এতে দিক-নির্দেশনাপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাওয়াবে ঘাটতি হবে না। ইমাম নাবাবী বলেন ‘‘দিক-নির্দেশক দিক-নির্দেশনাপ্রাপ্ত ব্যক্তির মতো সাওয়াব লাভ করবে’’ উক্তি হতে উদ্দেশ্য হলো দিক-নির্দেশনাপ্রাপ্ত ব্যক্তি যেমন সাওয়াব লাভ করবে ঠিক তেমনি দিক-নির্দেশকও অনুরূপ সাওয়াব লাভ করবে, এতে উভয়ের সাওয়াব সমান হওয়া আবশ্যক নয়। ইমাম কুরতুবী বলেন- গুণে পরিমাণে উভয়ের সাওয়াব সমান, কেননা কাজের পর যে সাওয়াব দেয়া হয় তা আল্লাহর তরফ হতে অনুগ্রহ; আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তা দেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২: ‘ইলম (বিদ্যা) (كتاب العلم) 2. Knowledge
২১০

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২১০-[১৩] জারীর ইবনু ’আবদুল্লাহ আল বাজালী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা দিনের প্রথম বেলায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ছিলাম। এমন সময়ে কাঁধে তরবারি ঝুলিয়ে একদল লোক রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে পৌঁছল। তাদের শরীর প্রায় উলঙ্গ, ’আবা’ বা কালো ডোরা চাদর দিয়ে কোন রকমে শরীর ঢেকে রেখেছিল। তাদের অধিকাংশ লোক, বরং সকলেই ’মুযার’ গোত্রের ছিল। তাদের চেহারায় ক্ষুধার লক্ষণ প্রকাশ পেতে দেখে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা মুবারক বিবর্ণ হয়ে গেল এবং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খাবারের খোঁজে ঘরে প্রবেশ করলেন। তারপর কিছু না পেয়ে বেরিয়ে আসলেন এবং বিলাল (রাঃ)-কে (আযান ও ইক্বামাত(ইকামত/একামত) দিতে) নির্দেশ করলেন। বিলাল (রাঃ)আযান ও ইক্বামাত(ইকামত/একামত) দিলেন এবং সকলকে নিয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খুতবাহ্ (খুতবা) দিলেন এবং এ আয়াত পড়লেনঃ

ياَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمُ الَّذِىْ خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَّاحِدَةٍ إِلى اخِرِ الْايَةِ إِنَّ اللهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْبًا

’’হে মানুষেরা! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে একই ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন, যিনি তা হতে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন, এরপর এ জোড়া হতে বহু নারী-পুরুষ সৃষ্টি করেছেন। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা পরস্পর (নিজেদের অধিকার) দাবি করে থাক এবং আত্মীয়তার বন্ধন সম্পর্কেও সতর্ক থাক। আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।’’

(সূরাহ্ আন্ নিসা ৪: ১)

অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরাহ্ আল্ হাশর-এর এ আয়াত পড়লেনঃ

اتَّقُوا اللهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ

’’হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমাদের প্রত্যেকে ভেবে দেখুক আগামীকালের জন্য (কিয়ামতের (কিয়ামতের) জন্য) কি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।’’ (সূরাহ্ আল হাশর ৫৯: ১৮)

(অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের) প্রত্যেকেরই তাদের দীনার, দিরহাম, কাপড়-চোপড়, গম ও খেজুরের ভান্ডার হতে দান করা উচিত। অবশেষে তিনি বললেন, যদি খেজুরের এক টুকরাও হয়। বর্ণনাকারী (জারীর) বলেন, এটা শুনে আনসারদের এক ব্যক্তি একটি থলে নিয়ে এলো, যা সে বহন করতে পারছিল না। অতঃপর লোকেরা একের পর এক জিনিসপত্র আনতে লাগলো। এমনকি আমি দেখলাম, শস্যে ও কাপড়-চোপড়ে দু’টি স্ত্তপ হয়ে গেছে এবং দেখলাম, (আনন্দে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা ঝকমক করছে, যেন তা স্বর্ণে জড়ানো।

অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইসলামে যে ব্যক্তি কোন নেক কাজ চালু করলো সে এ চালু করার সাওয়াব তো পাবেই, তার পরের লোকেরা যারা এ নেক কাজের উপর ’আমল করবে তাদেরও সমপরিমাণ সাওয়াব সে পাবে। অথচ এদের সাওয়াব কিছু কমবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন মন্দ রীতির প্রচলন করলো, তার জন্য তো এ কাজের গুনাহ আছেই। এরপর যারা এ মন্দ রীতির উপর ’আমল করবে তাদের জন্য গুনাহও তার ভাগে আসবে, অথচ এতে ’আমলকারীদের গুনাহ কম করবে না। (মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْلأَوَّلُ

وَعَن جرير قَالَ: (كُنَّا فِي صدر النهارعند رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَاءَهُ قَوْمٌ عُرَاةٌ مُجْتَابِي النِّمَارِ أَوِ الْعَبَاءِ مُتَقَلِّدِي السُّيُوفِ عَامَّتُهُمْ مِنْ مُضَرَ بَلْ كُلُّهُمْ مِنْ مُضَرَ فَتَمَعَّرَ وَجْهُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِمَا رَأَى بِهِمْ مِنَ الْفَاقَةِ فَدَخَلَ ثُمَّ خَرَجَ فَأَمَرَ بِلَالًا فَأَذَّنَ وَأَقَامَ فَصَلَّى ثُمَّ خَطَبَ فَقَالَ: (يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ)
إِلَى آخَرِ الْآيَةِ (إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رقيبا)
وَالْآيَةُ الَّتِي فِي الْحَشْرِ (اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ)
تَصَدَّقَ رَجُلٌ مِنْ دِينَارِهِ مِنْ دِرْهَمِهِ مِنْ ثَوْبِهِ مِنْ صَاعِ بُرِّهِ مِنْ صَاعِ تَمْرِهِ حَتَّى قَالَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ قَالَ فَجَاءَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ بِصُرَّةٍ كَادَتْ كَفُّهُ تَعْجَزُ عَنْهَا بل قد عجزت قَالَ ثُمَّ تَتَابَعَ النَّاسُ حَتَّى رَأَيْتُ كَوْمَيْنِ مِنْ طَعَامٍ وَثِيَابٍ حَتَّى رَأَيْتُ وَجْهُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَهَلَّلُ كَأَنَّهُ مُذْهَبَةٌ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْءٌ وَمَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً سَيِّئَةً كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهَا وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْء» . رَوَاهُ مُسلم

وعن جرير قال: (كنا في صدر النهارعند رسول الله صلى الله عليه وسلم فجاءه قوم عراة مجتابي النمار او العباء متقلدي السيوف عامتهم من مضر بل كلهم من مضر فتمعر وجه رسول الله صلى الله عليه وسلم لما راى بهم من الفاقة فدخل ثم خرج فامر بلالا فاذن واقام فصلى ثم خطب فقال: (يا ايها الناس اتقوا ربكم الذي خلقكم من نفس واحدة) الى اخر الاية (ان الله كان عليكم رقيبا) والاية التي في الحشر (اتقوا الله ولتنظر نفس ما قدمت لغد) تصدق رجل من ديناره من درهمه من ثوبه من صاع بره من صاع تمره حتى قال ولو بشق تمرة قال فجاء رجل من الانصار بصرة كادت كفه تعجز عنها بل قد عجزت قال ثم تتابع الناس حتى رايت كومين من طعام وثياب حتى رايت وجه رسول الله صلى الله عليه وسلم يتهلل كانه مذهبة فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من سن في الاسلام سنة حسنة فله اجرها واجر من عمل بها من بعده من غير ان ينقص من اجورهم شيء ومن سن في الاسلام سنة سيىة كان عليه وزرها ووزر من عمل بها من بعده من غير ان ينقص من اوزارهم شيء» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: হাদীসে কল্যাণকর বিষয় সূচনার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে যাতে সমাজে তার ধারা চলতে থাকে। পক্ষান্তরে অকল্যাণকর কাজ সমাজে প্রসার ঘটবে এ আশংকায় অকল্যাণকর কাজ চালু করা থেকে সতর্ক করা হয়েছে। ‘ইলম অধ্যায়ের সাথে হাদীসটির সামঞ্জস্যতা হচ্ছে- নিঃশ্চয়ই সন্তোষজনক সুন্নাত চালু করা উপকারী ‘ইলম অধ্যায়েরই আওতাভুক্ত। ভালো কাজের প্রচলন বলতে এমন কাজ যা রসূলের সুন্নাতের বহির্ভূত নয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২: ‘ইলম (বিদ্যা) (كتاب العلم) 2. Knowledge
২১১

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২১১-[১৪] ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তিকেই অন্যায়ভাবে হত্যা করা হোক, তার খুনের (গুনাহের) একটি অংশ প্রথম হত্যাকারী ’আদম সন্তানের ওপর বর্তাবে। কারণ সে-ই (’আদমের সন্তান কাবীল) প্রথম হত্যার প্রচলন করেছিল। (বুখারী ও মুসলিম; মু’আবিয়াহ্ (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত لَا يَزَالُ مِنْ أُمَّتِىْ হাদীসটি আমি ثَوَابِ هذِهِ الْأُمَّةِ ’’উম্মাতের সাওয়াব’’ অধ্যায়ে উল্লেখ করবো, ইন-শা-আল্লাহ)[1]

الْفَصْلُ الْلأَوَّلُ

وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تُقْتَلُ نَفْسٌ ظُلْمًا إِلَّا كَانَ عَلَى ابْنِ آدَمَ الْأَوَّلِ كِفْلٌ مِنْ دَمِهَا لِأَنَّهُ أَوَّلُ مَنْ سَنَّ الْقَتْلَ» . وَسَنَذْكُرُ حَدِيثَ مُعَاوِيَةَ: «لَا يَزَالُ مِنْ أُمَّتِي» فِي بَابِ ثَوَابِ هَذِهِ الْأُمَّةِ إِنْ شَاءَ الله تَعَالَى

وعن ابن مسعود قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا تقتل نفس ظلما الا كان على ابن ادم الاول كفل من دمها لانه اول من سن القتل» . وسنذكر حديث معاوية: «لا يزال من امتي» في باب ثواب هذه الامة ان شاء الله تعالى

ব্যাখ্যা: কোন ভালো কাজের প্রচলন করলে প্রচলনকারী পরবর্তী কাজ সম্পাদনকারীর সাওয়াবের মতোই সাওয়াব লাভ করে তেমনিভাবে খারাপ কাজের প্রচলন ঘটালেও প্রচলনকারীর ওপর ঐ কাজের কর্তার পাপের মতো পাপ বর্তাবে। হাদীসে আদম সন্তান কাবীল কর্তৃক হাবীল-কে হত্যা করার ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে এটাই বুঝানো হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২: ‘ইলম (বিদ্যা) (كتاب العلم) 2. Knowledge
২১২

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২১২-[১৫] কাসীর বিন ক্বায়স (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দিমাশক-এর মসজিদে আবুদ্ দারদা (রাঃ)-এর সাথে বসা ছিলাম, এমন সময় তার নিকট একজন লোক এসে বললো, হে আবুদ্ দারদা! আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শহর মদীনাহ্ থেকে শুধু একটি হাদীস জানার জন্য আপনার কাছে এসেছি। আমি শুনেছি আপনি নাকি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এছাড়া আর কোন উদ্দেশে আমি আপনার কাছে আসিনি। তার এ কথা শুনে আবুদ্ দারদা (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি এ কথা বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি (কুরআন ও হাদীসের) ’ইলম সন্ধানের উদ্দেশে কোন পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতের পথসমূহের একটি পথে পৌঁছিয়ে দিবেন এবং মালায়িকাহ্ ’ইলম অনুসন্ধানকারীর সন্তুষ্টি এবং পথে তার আরামের জন্য তাদের পালক বা ডানা বিছিয়ে দেন। অতঃপর ’আলিমদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সকলেই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও দু’আ করে থাকেন, এমনকি পানির মাছসমূহও (ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে)। ’আলিমদের মর্যাদা মূর্খ ’ইবাদাতকারীর চেয়ে অনেক বেশী। যেমন পূর্ণিমা চাঁদের মর্যাদা তারকারাজির উপর এবং ’আলিমগণ হচ্ছে নবীদের ওয়ারিস। নবীগণ কোন দীনার বা দিরহাম (ধন-সম্পদ) মীরাস (উত্তরাধিকারী) হিসেবে রেখে যান না। তাঁরা মীরাস হিসেবে রেখে যান শুধু ’ইলম। তাই যে ব্যক্তি ’ইলম অর্জন করেছে সে পূর্ণ অংশগ্রহণ করেছে। (আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ্ ও দারিমী)[1] আর তিরমিযী হাদীস বর্ণনাকারীর নাম ক্বায়স বিন কাসীর বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু রাবীর নাম কাসীর ইবনু ক্বায়সই এটিই সঠিক (যা মিশকাতের সংকলকও নকল করেছেন)।

اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ

عَن كثير بن قيس قَالَ كُنْتُ جَالِسًا مَعَ أَبِي الدَّرْدَاءِ فِي مَسْجِد دمشق فَجَاءَهُ رَجُلٌ فَقَالَ يَا أَبَا الدَّرْدَاءِ إِنِّي جِئْتُكَ مِنْ مَدِينَةِ الرَّسُولِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا جِئْتُ لِحَاجَةٍ قَالَ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَطْلُبُ فِيهِ عِلْمًا سَلَكَ اللَّهُ بِهِ طَرِيقًا مِنْ طُرُقِ الْجَنَّةِ وَإِنَّ الْمَلَائِكَةَ لَتَضَعُ أَجْنِحَتَهَا رِضًا لِطَالِبِ الْعِلْمِ وَإِنَّ الْعَالِمَ يسْتَغْفر لَهُ من فِي السَّمَوَات وَمَنْ فِي الْأَرْضِ وَالْحِيتَانُ فِي جَوْفِ الْمَاءِ وَإِنَّ فَضْلَ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ عَلَى سَائِرِ الْكَوَاكِبِ وَإِنَّ الْعُلَمَاءَ وَرَثَةُ الْأَنْبِيَاءِ وَإِنَّ الْأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا وَلَا دِرْهَمًا وَإِنَّمَا وَرَّثُوا الْعِلْمَ فَمَنْ أَخَذَهُ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ وَسَمَّاهُ التِّرْمِذِيُّ قَيْسَ بن كثير

عن كثير بن قيس قال كنت جالسا مع ابي الدرداء في مسجد دمشق فجاءه رجل فقال يا ابا الدرداء اني جىتك من مدينة الرسول صلى الله عليه وسلم ما جىت لحاجة قال فاني سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول من سلك طريقا يطلب فيه علما سلك الله به طريقا من طرق الجنة وان الملاىكة لتضع اجنحتها رضا لطالب العلم وان العالم يستغفر له من في السموات ومن في الارض والحيتان في جوف الماء وان فضل العالم على العابد كفضل القمر ليلة البدر على ساىر الكواكب وان العلماء ورثة الانبياء وان الانبياء لم يورثوا دينارا ولا درهما وانما ورثوا العلم فمن اخذه اخذ بحظ وافر . رواه احمد والترمذي وابو داود وابن ماجه والدارمي وسماه الترمذي قيس بن كثير

ব্যাখ্যা: কোন ব্যক্তি যদি ন্যূনতম দীনী বিদ্যার্জনের উদ্দেশে পৃথিবীর কোন রাস্তা অতিক্রম করে তাহলে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তাদের সহযোগিতায় এবং সম্মানার্থে সদা প্রস্তুত থাকে। হাদীস হতে এটাও প্রতীয়মান হয়, নফল ‘ইবাদাতের চাইতে দীনী বিদ্যায় ব্যাস্ত থাকা উত্তম।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২: ‘ইলম (বিদ্যা) (كتاب العلم) 2. Knowledge
২১৩

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২১৩-[১৬] আবূ উমামাহ্ আল বাহিলী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট দুই ব্যক্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। এদের একজন ছিলেন ’আবিদ (’ইবাদাতকারী), আর দ্বিতীয়জন ছিলেন ’আলিম (জ্ঞান অনুসন্ধানকারী)। তিনি বললেন, ’আবিদের ওপর ’আলিমের মর্যাদা হলো যেমন আমার মর্যাদা তোমাদের একজন সাধারণ ব্যক্তির ওপর। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তা’আলা, তাঁর মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) এবং আকাশমণ্ডলী ও জমিনের অধিবাসীরা, এমনকি পিঁপড়া তার গর্তে ও মাছ পর্যন্ত ’ইলম শিক্ষাকারীর জন্য দু’আ করে। (তিরমিযী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ

وَعَن أبي أُمَامَة الْبَاهِلِيّ قَالَ: ذُكِرَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلَانِ أَحَدُهُمَا عَابِدٌ وَالْآخَرُ عَالِمٌ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَضْلُ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِي عَلَى أَدْنَاكُمْ» ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ وَأَهْلَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ حَتَّى النَّمْلَةَ فِي جُحْرِهَا وَحَتَّى الْحُوتَ لَيُصَلُّونَ عَلَى معلم النَّاس الْخَيْر» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَقَالَ حسن غَرِيب

وعن ابي امامة الباهلي قال: ذكر لرسول الله صلى الله عليه وسلم رجلان احدهما عابد والاخر عالم فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «فضل العالم على العابد كفضلي على ادناكم» ثم قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ان الله وملاىكته واهل السماوات والارض حتى النملة في جحرها وحتى الحوت ليصلون على معلم الناس الخير» . رواه الترمذي وقال حسن غريب

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে দীনী বিদ্যা শিক্ষাদানের প্রতি উৎসাহ দেয়া হয়েছে। হাদীস থেকে বুঝা যায় দীনী বিদ্যা শিক্ষাদানকারীর মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। যার জন্য মানুষ, জিন্, মালায়িকাহ্ এমনকি গর্তের ক্ষুদ্র প্রাণী পিঁপড়া এবং সমুদ্রের অতল তলের মাছসহ সকল প্রাণী দু‘আ করে থাকে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২: ‘ইলম (বিদ্যা) (كتاب العلم) 2. Knowledge
২১৪

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২১৪-[১৭] দারিমী এ হাদীস মাকহূল (রহঃ) থেকে মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং দুই ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেননি। আর তিনি বলেছেন, ’আবিদের তুলনায় ’আলিমের মর্যাদা এমন, যেমন তোমাদের একজন সাধারণ মানুষের ওপর আমার মর্যাদা। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ কথার প্রমাণে কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ إِنَّمَا يَخْشَى اللهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ

’’নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে ’আলিমরাই তাঁকে ভয় করে’’- (সূরাহ্ ফাত্বির/মালায়িকাহ্ ৩৫: ৮)। এছাড়া তার হাদীসের অবশিষ্টাংশ তিরমিযীর বর্ণনার অনুরূপ।[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ

وَرَوَاهُ الدَّارِمِيُّ عَنْ مَكْحُولٍ مُرْسَلًا وَلَمْ يَذْكُرْ: رَجُلَانِ وَقَالَ: فَضْلُ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِي عَلَى أَدْنَاكُمْ ثُمَّ تَلَا هَذِهِ الْآيَةَ: (إِنَّمَا يخْشَى الله من عباده الْعلمَاء)
وسرد الحَدِيث إِلَى آخِره

ورواه الدارمي عن مكحول مرسلا ولم يذكر: رجلان وقال: فضل العالم على العابد كفضلي على ادناكم ثم تلا هذه الاية: (انما يخشى الله من عباده العلماء) وسرد الحديث الى اخره

ব্যাখ্যা: বিদ্বান ব্যক্তি আল্লাহ ও আল্লাহর সম্মান এবং তাঁর বড়ত্ব সম্পর্কে বেশি জানার কারণে তার ঐ বিদ্যা অন্তরে ভয় সঞ্চার করে এবং ভয় তাক্বওয়ার জন্ম দেয়, পরিশেষে তাক্বওয়া ব্যক্তিকে মর্যাদাবান করে। হাদীস থেকে আরো বুঝা যায়, যে ব্যক্তির ‘আমল আল্লাহভীতিতে পূর্ণ হবে না সে মূর্খের ন্যায় বরং মূর্খই।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ মাকহূল (রহঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২: ‘ইলম (বিদ্যা) (كتاب العلم) 2. Knowledge
২১৫

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২১৫-[১৮] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একদা লোকেরা (আমার পরে) তোমাদের অনুসরণ করবে। আর তারা দূর-দূরান্ত হতে দীনের জ্ঞানার্জনের উদ্দেশে তোমাদের কাছে আসবে। সুতরাং তারা তোমাদের নিকট এলে তোমরা তাদেরকে ভালো কাজের (দীনের ’ইলমের) নাসীহাত করবে। (তিরমিযী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ النَّاسَ لَكُمْ تَبَعٌ وَإِنَّ رِجَالًا يَأْتُونَكُمْ مِنْ أَقْطَارِ الْأَرْضِ يَتَفَقَّهُونَ فِي الدِّينِ فَإِذَا أَتَوْكُمْ فَاسْتَوْصُوا بهم خيرا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن ابي سعيد الخدري قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ان الناس لكم تبع وان رجالا ياتونكم من اقطار الارض يتفقهون في الدين فاذا اتوكم فاستوصوا بهم خيرا» . رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: হাদীসটি দুর্বল কারণ এর সানাদে আবূ হারূন আল আবদারী আছে সে মাতরূক। অতএব হাদীসটি যে রসূলের মুখনিঃসৃত বাণী সে নিশ্চয়তা নেই। তবে মানুষের সাথে ভালো আচরণ করার ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে বহু প্রমাণ রয়েছে, সুতরাং মানুষের সাথে ভালো আচরণ করতে হবে বিশেষ করে দীনী বিদ্যা শিক্ষার্থীদের সাথে আরো ভালো আচরণ করতে হবে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২: ‘ইলম (বিদ্যা) (كتاب العلم) 2. Knowledge
২১৬

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২১৬-[১৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জ্ঞানের কথা মু’মিনের হারানো ধন। সুতরাং মু’মিন যেখানেই তা পাবে সে-ই হবে তার অধিকারী। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ্)[1]

ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি গরীব। তাছাড়াও এর অপর বর্ণনাকারী ইব্রাহীম ইবনু ফাযলকে দুর্বল (য’ঈফ) বলা হয়েছে।

اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْكَلِمَةُ الْحِكْمَةُ ضَالَّةُ الْحَكِيمِ فَحَيْثُ وَجَدَهَا فَهُوَ أَحَقُّ بِهَا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ وَإِبْرَاهِيمُ بْنُ الْفَضْلِ الرَّاوِي يضعف فِي الحَدِيث

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «الكلمة الحكمة ضالة الحكيم فحيث وجدها فهو احق بها» . رواه الترمذي وابن ماجه وقال الترمذي هذا حديث غريب وابراهيم بن الفضل الراوي يضعف في الحديث

ব্যাখ্যা: উপরোক্ত কথাটিকে রসূলের দিকে সম্বন্ধ না করে এভাবে বলা যেতে পারে যা কোন কুরআন ও সুন্নাহর বিরোধী হবে না। অর্থাৎ- প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি হিকমাতপূর্ণ কথা অনুসন্ধান করে চলে, অতঃপর যখনই সে হিকমাতপূর্ণ কথা পেয়ে যায় তখনই সাধারণত ঐ হিকমাতপূর্ণ কথার অনুসরণ করে ও সে অনুপাতে কাজ করে। অথবা, উদ্দেশ্য বুঝার ক্ষেত্রে, অতএব কুরআন-সুন্নাহর সূক্ষ্ম বিষয়গুলো বুঝার ক্ষেত্রে যার বুঝ শক্তির ঘাটতি রয়েছে তার উচিত হবে আল্লাহ যাকে সূক্ষ্ম বিষয় বুঝার ক্ষমতা দান করেছেন তার জ্ঞানকে অস্বীকার না করে বরং স্বীকৃতি দেয়া এবং তার সাথে মতানৈক্যে লিপ্ত না হওয়া। যেমন হারানো বস্ত্তর মালিক তার বস্ত্ত ফিরে পাওয়ার পর তার সাথে কেউ মতানৈক্যে লিপ্ত হয় না। অথবা হারানো বস্ত্তকে যে ব্যক্তি পায় তার কাছ থেকে হারানো বস্ত্তর মালিক হারানো বস্ত্ত নিয়ে যাওয়ার সময় হারানো বস্ত্ত পাওয়া ব্যক্তি হতে মালিককে নিষেধ করা যেমন হালাল হয় না, তেমন একজন ‘আলিম ব্যক্তি যখন প্রশ্নকারীর বুঝার আগ্রহ দেখতে পাবে তখন ‘আলিম ব্যক্তির জন্য ঐ প্রশ্নকারীকে উত্তর প্রদান না করে জানার বিষয় থেকে বঞ্চিত করা হালাল হবে না। অথবা এটাও বলা যেতে পারে যে, অনেক সময় এমন ব্যক্তির সাথে হিকমাতপূর্ণ কথা এমন ব্যক্তির কাছে পৌঁছায় যে ঐ কথার উপযুক্ত; যে হিকমাতপূর্ণ কথা তুচ্ছ মনে করে না। যেমন কোন ব্যক্তি তার কোন কিছু হারিয়ে ফেলার পর যখন তা কারো কাছে পেয়ে যায় তখন ঐ পাওয়া বস্ত্তকে তার কাছ থেকে গ্রহণ করা তুচ্ছ মনে করে না যদিও হয়ত ঐ বস্ত্ত তুচ্ছ।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২: ‘ইলম (বিদ্যা) (كتاب العلم) 2. Knowledge
২১৭

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২১৭-[২০] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজন ফাক্বীহ (’আলিমে দীন) শায়ত্বনের (শয়তানের) কাছে হাজার ’আবিদ (’ইবাদাতকারী) হতেও বেশী ভীতিকর। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ্)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَقِيهٌ وَاحِدٌ أَشَدُّ عَلَى الشَّيْطَانِ مِنْ أَلْفِ عَابِدٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْن مَاجَه)

وعن ابن عباس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «فقيه واحد اشد على الشيطان من الف عابد» . رواه الترمذي وابن ماجه)

ব্যাখ্যা: মূল ভাষ্যতে উল্লিখিত فَقِيْهٌ শব্দ থেকে যদি ঐ ব্যক্তি উদ্দেশ্য হয় যাকে দীন ও দীনের মূল উৎসের ক্ষেত্রে বুঝ শক্তি দেয়া হয়েছে তাহলে উদ্দীষ্ট ব্যক্তি শায়ত্বনের (শয়তানের) চক্রান্ত ও তিরস্কার সম্বন্ধে জানে এবং বিপদ থেকে বাঁচার ‘ইলম এবং অন্তরসমূহের ষড়যন্ত্র ও কুমন্ত্রণার ব্যাপারে অনুভূতি শক্তি তাকে দান করা হয়েছে। আর যদি فَقِيْهٌ শব্দ দ্বারা দীনের হুকুম-আহকাম ও তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা সম্পর্কে অবগত ব্যক্তি উদ্দেশ্য হয় যেমন উদ্দেশ্য হওয়া সম্ভব তাহলে فَقِيْهٌ শব্দ দ্বারা পূর্বোক্ত ব্যাখ্যার মতো ব্যাখ্যা উদ্দেশ্য। কেননা সে এ ধরনের ‘ইলম দ্বারা হারাম স্থানসমূহ সম্পর্কে সতর্ক থাকে, ফলে সে হারাম স্থানগুলোকে হালকা ও বৈধ মনে করে না এবং সে কুফরের জটিলতায় পতিত হয় না, সে ঐ ‘ইবাদাতকারীর বিপরীত যে ‘ইবাদাতকারী উল্লিখিত দু’টি অর্থের স্তরে নয়।

হাদীসে একজন ফাক্বীহকে শায়ত্বনের (শয়তানের) কাছে হাজার মূর্খ ‘ইবাদাতকারী অপেক্ষা কঠিন বলা হয়েছে তার কারণ ফাক্বীহ ব্যক্তি শায়ত্বনের (শয়তানের) বক্রতাকে গ্রহণ করে না, মানুষকে কল্যাণকর কাজের নির্দেশ দেয় এবং তাদেরকে শায়ত্বনের (শয়তানের) বক্রতা থেকে রক্ষা করে, পক্ষান্তরে একজন ‘আবিদের (‘ইবাদাতকারী) চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে নিজেকে শায়ত্বনের (শয়তানের) চক্রান্ত থেকে রক্ষা করা অথচ সে এ ব্যাপারে সক্ষম না বরং শায়ত্বন (শয়তান) তাকে এমনভাবে গ্রাস করে যে সে বুঝতেই পারে না।


হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২: ‘ইলম (বিদ্যা) (كتاب العلم) 2. Knowledge
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৮৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 পরের পাতা »