পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৪৯-[৫২] হাসান আল বসরী (রহঃ) হতে মুরসালরূপে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এমন ব্যক্তি যার মৃত্যু এসে পৌঁছেছে এমন অবস্থায়ও ইসলামকে জীবন্ত করার উদ্দেশে ’ইলম বা জ্ঞানার্জনে মশগুল রয়েছে, জান্নাতে তার সাথে নবীদের মাত্র একধাপ পার্থক্য থাকবে। (দারিমী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
عَنِ الْحَسَنِ مُرْسَلًا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ جَاءَهُ الْمَوْتُ وَهُوَ يَطْلُبُ الْعِلْمَ لِيُحْيِيَ بِهِ الْإِسْلَامَ فَبَيْنَهُ وَبَيْنَ النَّبِيِّينَ دَرَجَةٌ وَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ» . رَوَاهُ الدَّارمِيّ
ব্যাখ্যা: হাদীসটিতে বলা হয়েছে ইসলামকে জীবিত করার লক্ষ্যে দীনী বিদ্যা অর্জন করা অবস্থায় যার কাছে মৃত্যু আগমন করবে ঐ ব্যক্তি ও নাবীদের মাঝে জান্নাতে কাছাকাছি মর্যাদা থাকবে। হাদীসটি হতে বুঝা যাচ্ছে সৎকর্মশীল ‘আলিমদের হতে ওয়াহীর মর্যাদা ছাড়া আর কিছু হাত ছাড়া হয় না। (পক্ষান্তরে নাবীদের কাছে ওয়াহী আসে।)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৫০-[৫৩] হাসান আল বসরী (রহঃ) হতে মুরসালরূপে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বনী ইসরাঈলের দু’জন লোক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তাদের একজন ছিলেন ’আলিম, যিনি ওয়াক্তিয়া ফরয সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার পর বসে বসে মানুষকে তা’লীম দিতেন। আর দ্বিতীয়জন দিনে সিয়াম পালন করতেন, গোটা রাত ’ইবাদাত করতেন। (রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হল) এ দু’ ব্যক্তির মধ্যে মর্যাদার দিক দিয়ে উত্তম কে? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওয়াক্তিয়া ফরয সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার পরপরই বসে বসে যে ব্যক্তি তা’লীম দেয়, সে ব্যক্তি যে দিনে সিয়াম পালন করে ও রাতে ’ইবাদাত করে তার চেয়ে তেমন বেশী মর্যাদাবান। যেমন- তোমাদের একজন সাধারণ মানুষের ওপর আমার মর্যাদা। (দারিমী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْهُ مُرْسَلًا قَالَ: سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ رَجُلَيْنِ كَانَا فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ أَحَدُهُمَا كَانَ عَالِمًا يُصَلِّي الْمَكْتُوبَةَ ثُمَّ يَجْلِسُ فَيُعَلِّمُ النَّاسَ الْخَيْرَ وَالْآخِرُ يَصُومُ النَّهَارَ وَيَقُومُ اللَّيْلَ أَيُّهُمَا أَفْضَلُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَضْلُ هَذَا الْعَالِمِ الَّذِي يُصَلِّي الْمَكْتُوبَةَ ثُمَّ يَجْلِسُ فَيُعَلِّمُ النَّاسَ الْخَيْرَ عَلَى الْعَابِدِ الَّذِي يَصُومُ النَّهَارَ وَيَقُومُ اللَّيْلَ كَفَضْلِي عَلَى أَدْنَاكُمْ» . رَوَاهُ الدَّارِمِيُّ
ব্যাখ্যা: (أَحَدُهُمَا كَانَ عَالِمًا) ‘‘তাদের একজন ‘আলিম ছিলেন।’’ অর্থাৎ- তার ‘ইবাদাতের চাইতে ‘ইলমের চর্চা বেশী ছিল।
(يُصَلِّي الْمَكْتُوبَةَ) ‘‘ফরয সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতো।’’ অর্থাৎ- তার ওপর নির্ধারিত ফরয ‘ইবাদাত আদায় করতো। কিন্তু নফল ‘ইবাদাত করতো না।
(فَيُعَلِّمُ النَّاسَ الْخَيْرَ) ‘‘মানুষকে কল্যাণ শিক্ষা দিতো।’’ অর্থাৎ- পাঠ দান অথবা পুস্তক রচনার মাধ্যমে মানুষের মাঝে ‘ইল্মের চর্চা করত এবং তাদের ‘ইবাদাতের পদ্ধতি শিখাতো।
(يَصُومُ النَّهَارَ) ‘‘দিনে সিয়াম পালন করতো।’’ অর্থাৎ- সর্বদাই অথবা অধিকাংশ সময়ই দিনের বেলায় সিয়াম পালন করতো।
(وَيَقُومُ اللَّيْلَ) ‘‘রাতের বেলায় ‘ইবাদাত করতো।’’ অর্থাৎ- সারারাত জেগে অথবা রাতের আংশিক জেগে ‘ইবাদাতে মগ্ন থাকতো। কিন্তু ‘ইলমের চর্চা করতো না।
(أَيُّهُمَا أَفْضَلُ) ‘‘তাদের দু’জনের মধ্যকার মর্যাদা বেশী?’’ অর্থাৎ- কার সাওয়াব বেশী।
হাদীসটি থেকে বুঝা যায়, নফল ‘আমল অপেক্ষা দীনী বিদ্যা শিক্ষা ও মানুষকে শিখানো উত্তম কাজ।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৫১-[৫৪] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ উত্তম ব্যক্তি হলো সে যে দীন ইসলামের জ্ঞানে সমৃদ্ধ। যদি তার কাছে লোকজন মুখাপেক্ষী হয়ে আসে, তাহলে সে তাদের উপকার সাধন করে। আর যখন তার কাছে মানুষের প্রয়োজন থাকে না, তখন তাকে অন্যের মুখাপেক্ষী হতে হয় না। (রযীন)[1]
আলবানী বলেন, এ হাদীসটি মাওযূ‘ (জাল)। তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ’। আমি এর সানাদ সম্বন্ধে অবগত হয়েছি। ইবনু আসাকির তাঁর তারীখে দামিশক ১৩ খণ্ডের ১৭৩ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন। ‘ঈসা ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু ‘উমার ইবনু ‘আলী এ সূত্রে। দারাকুত্বনী বলেন, এ ‘ঈসা মাতরূকুল হাদীস। ইবনু হিব্বান বলেন, সে তার পিতার বরাতে অনেক কথা বলেছেন। (১/৮৪ পৃষ্ঠা)
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نِعْمَ الرَّجُلُ الْفَقِيهُ فِي الدِّينِ إِنِ احْتِيجَ إِلَيْهِ نَفَعَ وَإِنِ اسْتُغْنِيَ عَنْهُ أَغْنَى نَفْسَهُ» . رَوَاهُ رزين
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৫২-[৫৫] ’ইকরিমাহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ হে ’ইকরিমাহ্! প্রত্যেক জুমু’আয় (সপ্তাহে) মাত্র একদিন মানুষকে ওয়ায-নাসীহাত শুনাবে। যদি একবার ওয়ায-নাসীহাত করা যথেষ্ট নয় মনে কর তাহলে সপ্তাহে দু’বার। এর চেয়েও যদি বেশী করতে চাও তাহলে সপ্তাহে তিনবার ওয়ায-নাসীহাত কর। তোমরা এ কুরআনকে মানুষের নিকট বিরক্তিকর করে তুলো না। কোন জাতি যখন তাদের কোন ব্যাপারে আলাপ-আলোচনায় ব্যাস্ত থাকে তখন তোমরা সেখানে পৌঁছলে তাদের আলোচনা ভেঙ্গে দিয়ে তাদের কাছে ওয়ায-নাসীহাত করতে যেন আমি কখনো তোমাদেরকে না দেখি। এ সময় তোমরা চুপ করে থাকবে। তবে তারা যদি তোমাদেরকে ওয়ায-নাসীহাত করার জন্য বলে তখন তাদের আগ্রহ পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে হাদীস শুনাও। কবিতার ছন্দে দু’আ করা পরিত্যাগ করবে এবং এ বিষয়ে সতর্ক থাকবে। কেননা আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণকে দেখেছি, তারা এরূপ করতেন না। (বুখারী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَن عِكْرِمَة أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ قَالَ: حَدِّثِ النَّاسَ كُلَّ جُمُعَةٍ مَرَّةً فَإِنْ أَبَيْتَ فَمَرَّتَيْنِ فَإِنْ أَكْثَرْتَ فَثَلَاثَ مَرَّاتٍ وَلَا تُمِلَّ النَّاسَ هَذَا الْقُرْآنَ وَلَا أُلْفِيَنَّكَ تَأْتِي الْقَوْمَ وَهُمْ فِي حَدِيثٍ مِنْ حَدِيثِهِمْ فَتَقُصُّ عَلَيْهِمْ فَتَقْطَعُ عَلَيْهِمْ حَدِيثَهُمْ فَتُمِلَّهُمْ وَلَكِنْ أَنْصِتْ فَإِذَا أَمَرُوكَ فَحَدِّثْهُمْ وَهُمْ يَشْتَهُونَهُ وَانْظُرِ السَّجْعَ مِنَ الدُّعَاءِ فَاجْتَنِبْهُ فَإِنِّي عَهِدْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَصْحَابُهُ لَا يَفْعَلُونَ ذَلِك رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: সপ্তাহের প্রতিদিন মানুষকে নাসীহাত করা আল্লাহর কিতাবকে বা হাদীসকে তাদের সামনে বিরক্তিকর হিসেবে উপস্থাপনের শামিল। অনুরূপ কোন সম্প্রদায়ের কাছে যেয়ে তাদের আলাপরত অবস্থাতেও নাসীহাত করা তা বিরক্তিকর হিসেবে উপস্থাপনের শামিল।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৫৩-[৫৬] ওয়াসিলাহ্ বিন আসক্বা’ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জ্ঞান সন্ধান করেছে ও অর্জন করতে পেরেছে, তার সাওয়াব দুই গুণ। আর যদি সে জ্ঞান অর্জন করতে অপারগ হয়ে থাকে, তাহলেও তার সাওয়াব (চেষ্টা করার জন্য) এক গুণ। (দারিমী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ وَاثِلَةَ بْنِ الْأَسْقَعِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ فَأَدْرَكَهُ كَانَ لَهُ كِفْلَانِ مِنَ الْأَجْرِ فَإِنْ لَمْ يُدْرِكْهُ كَانَ لَهُ كفل من الْأجر» . رَوَاهُ الدِّرَامِي
ব্যাখ্যা: হাদীসের সানাদটি অত্যন্ত দুর্বল। তবে ত্ববারানী এ হাদীসটি তার কাবীর গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যার রাবীগণ নির্ভরশীল। হাদীসটি দ্বারা বুঝা যায়, যে ব্যক্তি দীনী বিদ্যা অনুসন্ধান করবে, অতঃপর তা ভালোভাবে অর্জন করতে পারবে তার জন্য সঠিক ফাতাওয়াতে পৌঁছতে পারা মুজতাহিদ ব্যক্তির মতো দু’টি সাওয়াব থাকবে। একটি সাওয়াব ‘ইলম অনুসন্ধানের কষ্টের কারণে। অন্যটি ভালোভাবে ‘ইলম অর্জনের কারণে। পক্ষান্তরে ‘ইলম অর্জন করতে না পারলে তার জন্য ফাতাওয়া দানে ভুলকারী মুজতাহিদ ব্যক্তির ন্যায় একটি সাওয়াব।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৫৪-[৫৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিনের ইন্তিকালের পরও তার যেসব নেক ’আমল ও নেক কাজের সাওয়াব তার নিকট সব সময় পৌঁছতে থাকবে, তার মধ্যে- (১) ’ইলম বা জ্ঞান- যা সে শিখেছে এবং প্রচার করেছে; (২) নেক সন্তান- যাকে সে দুনিয়ায় রেখে গেছে; (৩) কুরআন- যা উত্তরাধিকারীদের জন্য রেখে গেছে; (৪) মাসজিদ যা সে নির্মাণ করে গেছে; (৫) মুসাফিরখানা- যা সে পথিক-মুসাফিরদের জন্য নির্মাণ করে গেছে; (৬) কূপ বা ঝর্ণা- যা সে খনন করে গেছে মানুষের পানি ব্যবহার করার জন্য এবং (৭) দান-খয়রাত- যা সুস্থ ও জীবিতবস্থায় তার ধন-সম্পদ থেকে দান করে গেছে। মৃত্যুর পর এসব নেক কাজের সাওয়াব তার নিকট পৌঁছতে থাকবে। (ইবনু মাজাহ ও বায়হাক্বী-এর শু’আবুল ঈমান)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مِمَّا يَلْحَقُ الْمُؤْمِنَ مِنْ عَمَلِهِ وَحَسَنَاتِهِ بَعْدَ مَوْتِهِ عِلْمًا علمه ونشره وَولدا صَالحا تَركه ومصحفا وَرَّثَهُ أَوْ مَسْجِدًا بَنَاهُ أَوْ بَيْتًا لِابْنِ السَّبِيلِ بَنَاهُ أَوْ نَهْرًا أَجْرَاهُ أَوْ صَدَقَةً أخرجهَا من مَاله فِي صِحَّته وحياته يلْحقهُ من بعد مَوته» . رَوَاهُ بن مَاجَه وَالْبَيْهَقِيّ فِي شعب الْإِيمَان
ব্যাখ্যা: হাদীসের শেষের দিকে বলা হয়েছে ব্যক্তি তার জীবিত ও সুস্থাবস্থায় তার সম্পদ হতে যা সদাক্বাহ্ (সাদাকা) হিসেবে দিয়ে থাকে তার সাওয়াব তার মৃত্যুর পর তার ‘আমলনামাতে লিপিবদ্ধ হয়। উল্লিখিত হাদীসাংশ দ্বারা সুস্থাবস্থায় দান করার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে যাতে তার এ সদাক্বাটি তার জীবনের সর্বোত্তম সদাক্বাতে পরিণত হতে পারে। যেমন অপর এক হাদীসে এসেছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করা হলো পুণ্যের দিক থেকে সর্বাধিক বড় সদাক্বাহ্ (সাদাকা) কোনটি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন- সুস্থ ও মন কার্পণ্যপূর্ণ অবস্থায় সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করা।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৫৫-[৫৮] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ তা’আলা আমার কাছে ওয়াহী পাঠিয়েছেন, যে ব্যক্তি ’ইলম (বিদ্যা) হাসিল করার জন্য কোন পথ ধরবে, আমি তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দিব। আর যে ব্যক্তির দুই চোখ আমি নিয়ে নিয়েছি, তার বিনিময়ে আমি তাকে জান্নাত দান করব। ’ইবাদাতের পরিমাণ বেশি হবার চেয়ে ’ইলমের পরিমাণ বেশি হওয়া উত্তম। দীনের মূল হলো তাক্বওয়া তথা হারাম ও দ্বিধা-সন্দেহের বিষয় হতে বেঁচে থাকা। (বায়হাক্বী-এর শু’আবুল ঈমান)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ عَائِشَةَ أَنَّهَا قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ أَوْحَى إِلَيَّ أَنَّهُ مَنْ سَلَكَ مَسْلَكًا فِي طَلَبِ الْعِلْمِ سَهَّلْتُ لَهُ طَرِيقَ الْجَنَّةِ وَمَنْ سَلَبْتُ كَرِيمَتَيْهِ أَثَبْتُهُ عَلَيْهِمَا الْجَنَّةَ. وَفَضْلٌ فِي عِلْمٍ خَيْرٌ مِنْ فَضْلٍ فِي عِبَادَةٍ وَمِلَاكُ الدِّينِ الْوَرَعُ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شعب الْإِيمَان
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে আল্লাহ বলেছেনঃ ‘‘তিনি যার দু’টি সম্মানিত জিনিস তথা দু’টি চক্ষুকে নিয়ে নিবেন এবং এরপরে ব্যক্তি এতে ধৈর্য ধরবে তাকে তিনি জান্নাত দিবেন’’ উল্লিখিত হাদীস থেকে বুঝা যায় আল্লাহ যাকে বোবা করবেন এবং ব্যক্তি তাতে ধৈর্য ধরবে তাহলে ঐ ব্যক্তিকেও আল্লাহ পুরস্কৃত করবেন। হাদীসের শেষাংশে বলা হয়েছে দীনের মূল আল্লাহভীতি তথা হারাম ও সন্দেহ-সংশয় থেকে বেঁচে থাকা, অর্থাৎ- হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া যাবে না এমনকি যাতে হারামের সন্দেহ আছে তা হতেও বেঁচে থাকতে হবে।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৫৬-[৫৯] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাতের সামান্য কিছু সময় দীনের জ্ঞান আলোচনা করা (’ইবাদাতে রত থাকে) গোটা রাত জাগরণ অপেক্ষা উত্তম। (দারিমী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَن ابْن عَبَّاس قَالَ: تَدَارُسُ الْعِلْمِ سَاعَةً مِنَ اللَّيْلِ خَيْرٌ من إحيائها. رَوَاهُ الدَّارمِيّ
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৫৭-[৬০] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নাবাবীতে অনুষ্ঠিত দু’টি মাজলিসের কাছ দিয়ে অতিক্রম করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, উভয় মাজলিসই উত্তম কাজ করছে, কিন্তু এদের এক মাজলিস অন্য মাজলিস অপেক্ষা উত্তম। একটি দল ’ইবাদাতে লিপ্ত, তারা অবশ্য আল্লাহর নিকট দু’আ করছে এবং আল্লাহর প্রতি তাদের আগ্রহ প্রকাশ করছে। আল্লাহ যদি ইচ্ছা করেন তাদের আশা পূর্ণও করতে পারেন, আবার ইচ্ছা করলে নাও পারেন। আর দ্বিতীয় দলটি হলো ফাক্বীহ ও ’আলিমদের। তারা ’ইলম অর্জন করেছে এবং মূর্খদের শিখাচ্ছে, তারাই উত্তম। আর আমাকে শিক্ষকরূপে পাঠানো হয়েছে। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ দলের সাথেই বসে গেলেন। (দারিমী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ بِمَجْلِسَيْنِ فِي مَسْجِدِهِ فَقَالَ: «كِلَاهُمَا عَلَى خَيْرٍ وَأَحَدُهُمَا أَفْضَلُ مِنْ صَاحِبِهِ أَمَّا هَؤُلَاءِ فَيَدْعُونَ اللَّهَ وَيَرْغَبُونَ إِلَيْهِ فَإِنْ شَاءَ أَعْطَاهُمْ وَإِنْ شَاءَ مَنَعَهُمْ. وَأَمَّا هَؤُلَاءِ فَيَتَعَلَّمُونَ الْفِقْهَ أَوِ الْعِلْمَ وَيُعَلِّمُونَ الْجَاهِلَ فَهُمْ أَفْضَلُ وَإِنَّمَا بُعِثْتُ مُعَلِّمًا» ثمَّ جلس فيهم. رَوَاهُ الدَّارمِيّ
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৫৮-[৬১] আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলোঃ হে আল্লাহর রসূল! সে ’ইলমের সীমা কী যাতে পৌঁছলে একজন লোক ফাকীহ বা ’আলিম বলে গণ্য হবে? উত্তরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি আমার উম্মাতের জন্য দীন সংক্রান্ত চল্লিশটি হাদীস মুখস্থ করেছে, আল্লাহ তা’আলা তাকে কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন ফাক্বীহ হিসেবে (কবর হতে) উঠাবেন। আর আমি তার জন্য কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন শাফা’আত করবো ও তার আনুগত্যের সাক্ষ্য দিবো।[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ قَالَ: سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا حَدُّ الْعِلْمِ الَّذِي إِذَا بَلَغَهُ الرَّجُلُ كَانَ فَقِيهًا؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «من حَفِظَ عَلَى أُمَّتِي أَرْبَعِينَ حَدِيثًا فِي أَمْرِ دِينِهَا بَعَثَهُ اللَّهُ فَقِيهًا وَكُنْتُ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَة شافعا وشهيدا»
ব্যাখ্যা: হাদীসটি থেকে বুঝা যায়, কোন ব্যক্তি যখন চল্লিশটি হাদীস জেনে তা মুসলিম ভাইদের নিকট পৌঁছিয়ে দিবে ঐ ব্যক্তিকে ফাক্বীহ তথা ‘আলিমদের দলে গণ্য করা হবে। এ হাদীসের দিকে লক্ষ্য করেই সালাফ ও খালাফ ‘উলামার অনেকে এ ধরনের বহু কিতাব লিখেছেন এবং প্রত্যেকেই তাদের কিতাবের নাম أربعين দিয়েছেন।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৫৯-[৬২] আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা বলতে পারো, সর্বাপেক্ষা বড় দানশীল কে? সাহাবীগণ উত্তরে বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রসূল সবচেয়ে বেশী জানেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, দান-খয়রাতের ব্যাপারে সবচেয়ে বড় দাতা হলেন আল্লাহ তা’আলা। আর বানী আদমের মধ্যে আমিই সর্বাপেক্ষা বড় দাতা। আর আমার পর বড় দাতা হচ্ছে সে ব্যক্তি, যে ’ইলম শিক্ষা করবে এবং তা বিস্তার করতে থাকবে। কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন সে একাই একজন ’আমীর’ অথবা বলেছেন, একজন ’উম্মাত’ হয়ে উঠবে। (বায়হাক্বী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلْ تَدْرُونَ مَنْ أَجْوَدُ جُودًا؟» قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «اللَّهُ تَعَالَى أَجْوَدُ جُودًا ثُمَّ أَنَا أَجْوَدُ بَنِي آدَمَ وَأَجْوَدُهُمْ مِنْ بَعْدِي رَجُلٌ عَلِمَ عِلْمًا فَنَشَرَهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَمِيرًا وَحده أَو قَالَ أمة وَحده»
ব্যাখ্যা: হাদীসটি দ্বারা বুঝা যায়, আল্লাহ সর্বাধিক বড় দাতা। কেননা বিশ্বের সমস্ত কিছুই বিভিন্নভাবে তাঁর দান ও অনুগ্রহের মুখাপেক্ষী। আদম সন্তানদের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা রসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। অতঃপর বড় দাতা ঐ ব্যক্তি যে ‘ইলম শিক্ষা করে পাঠদান, লিখনী বা উৎসাহের মাধ্যমে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। এ ব্যক্তির মর্যাদা ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে এত বেশি হবে যে, সে একাই একজন নেতা হিসেবে আগমন করবে আর তার সাথে তার অনুসারী ও সম্মান প্রদর্শনকারী সেবকরা থাকবে। অথবা বর্ণনাকারীর সন্দেহ যে, হাদীসে নেতা শব্দ ব্যবহার না করে একটি উম্মাতের কথা বলা হয়েছে, অর্থাৎ- মান-মর্যাদায় ব্যক্তি একাই একটি দল হিসেবে আগমন করবে। আর এর দৃষ্টান্ত আল্লাহ তা‘আলার বাণী (সূরাহ্ আন্ নাহল ১৬ : ১২) আল্লাহ ইব্রা-হীম (রাঃ)-কে একাকী একটি উম্মাত বলে অভিহিত করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৬০-[৬৩] উক্ত রাবী [আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)] হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’জন লোভী ব্যক্তির পেট কখনো পরিতৃপ্তি লাভ করে না। একজন জ্ঞানপিপাসু লোক- ’ইলম দ্বারা তার পেট কখনো ভরে না। দ্বিতীয়জন হলো দুনিয়া পিপাসু- দুনিয়ার ব্যাপারে সেও কখনো পরিতৃপ্ত হয় না। [বায়হাক্বী’র ’’শু’আবুল ঈমান’’-এ বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেন, ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেছেনঃ মানুষের মাঝে হাদীসের ভাষ্যটি খুবই প্রসিদ্ধ, কিন্তু এর সানাদ সহীহ নয়][1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْهُومَانِ لَا يَشْبَعَانِ: مَنْهُومٌ فِي الْعِلْمِ لَا يَشْبَعُ مِنْهُ وَمَنْهُومٌ فِي الدُّنْيَا لَا يَشْبَعُ مِنْهَا «. رَوَى الْبَيْهَقِيُّ الْأَحَادِيثَ الثَّلَاثَةَ فِي» شُعَبِ الْإِيمَانِ وَقَالَ: قَالَ الْإِمَامُ أَحْمَدُ فِي حَدِيثِ أَبِي الدَّرْدَاءِ: هَذَا مَتْنٌ مَشْهُورٌ فِيمَا بَين النَّاس وَلَيْسَ لَهُ إِسْنَاد صَحِيح
ব্যাখ্যা: এ হাদীস দ্বারা দীনী জ্ঞানার্জনের প্রতি অনুপ্রেরণা জাগানো হয়েছে, পক্ষান্তরে দীনী সকল হুকুম-আহকাম পরিপালনের পর বৈধভাবে প্রয়োজন অনুপাতে দুনিয়া অর্জন করাতে দোষ নেই।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৬১-[৬৪] ’আওন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) বলেছেনঃ দুই পিপাসু ব্যক্তি কক্ষনো পরিতৃপ্ত হয় না। তার একজন হলেন ’আলিম আর অপরজন দুনিয়াদার। কিন্তু এ দু’জনের মর্যাদা সমান নয়। কেননা ’আলিম ব্যক্তি, তার প্রতি তো আল্লাহর সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর দুনিয়াদার তো (ধীরে ধীরে) আল্লাহর অবাধ্যতার পথে অগ্রসর হতে থাকে। অতঃপর ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) দুনিয়াদার ব্যক্তি সম্পর্কে কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ
كَلَّا إِنَّ الْأِنْسَانَ لَيَطْغى* أَنْ رَّاهُ اسْتَغْنى
’’কক্ষনো নয়, নিশ্চয় মানুষ নিজকে (ধনে জনে সম্মানে) স্বয়ংসম্পূর্ণ ভেবে আল্লাহর অবাধ্যতা করতে থাকে।’’ (সূরাহ্ আল ’আলাক্ব ৯৬: ৬-৭)
বর্ণনাকারী বলেন, অপর ব্যক্তি ’আলিম সম্পর্কে তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ
إِنَّمَا يَخْشَى اللهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاء
’’আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে নিশ্চয় ’আলিমরাই তাঁকে ভয় করে’’- (সূরাহ্ আল ফা-ত্বির ৩৫: ২৮)। (দারিমী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
عَن عَوْنٍ قَالَ: قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ: مَنْهُومَانِ لَا يَشْبَعَانِ صَاحِبُ الْعِلْمِ وَصَاحِبُ الدُّنْيَا وَلَا يَسْتَوِيَانِ أَمَّا صَاحِبُ الْعِلْمِ فَيَزْدَادُ رِضًى لِلرَّحْمَنِ وَأَمَّا صَاحِبُ الدُّنْيَا فَيَتَمَادَى فِي الطُّغْيَانِ. ثُمَّ قَرَأَ عَبْدُ اللَّهِ (كَلَّا إِنَّ الْإِنْسَانَ لَيَطْغَى أَنْ رَآهُ اسْتَغْنَى)
قَالَ وَقَالَ الْآخَرُ (إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عباده الْعلمَاء. رَوَاهُ الدَّارمِيّ
ব্যাখ্যা: হাদীস থেকে বুঝা যায়, বিদ্যার অধিকারী ও দুনিয়াদার ব্যক্তি সমান নয়, উভয়ের মাঝে অনেক পার্থক্য। দুনিয়াদার সীমালঙ্ঘন বাড়াতে থাকে, মন্দ কাজের জন্য আল্লাহ থেকে দূরে থাকে। পক্ষান্তরে বিদ্যার অধিকারী ব্যক্তি আল্লাহভীতি ও শিষ্টাচারের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য বাড়াতে প্রয়াসী হয়।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৬২-[৬৫] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সেদিন বেশি দূরে নয় যখন আমার উম্মাতের কতক লোক দীনের ’ইলম অর্জনে তৎপর হবে ও কুরআন অধ্যয়ন করবে। তারা বলবে, আমরা আমীর-উমরাদের কাছে যাবো এবং তাদের পার্থিব স্বার্থে কিছু ভাগ বসিয়ে আমাদের দীন নিয়ে আমরা সরে পড়বো। কিন্তু তা কখনো হবার নয়। যেমন কাঁটার গাছ থেকে শুধু কাঁটাই পাওয়া যায়, কোন ফল লাভ করা যায় না, ঠিক এভাবে আমীর-উমরাদের নৈকট্য দ্বারা। মুহাম্মাদ ইবনু সাব্বাহ (রহঃ) বলেন, গুনাহ ছাড়া কিছু অর্জিত হয় না। (ইবনু মাজাহ্)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم قَالَ: إِنَّ أُنَاسًا مِنْ أُمَّتِي سَيَتَفَقَّهُونَ فِي الدِّينِ ويقرءون الْقُرْآن يَقُولُونَ نَأْتِي الْأُمَرَاءَ فَنُصِيبُ مِنْ دُنْيَاهُمْ وَنَعْتَزِلُهُمْ بِدِينِنَا وَلَا يَكُونُ ذَلِكَ كَمَا لَا يُجْتَنَى مِنَ الْقَتَادِ إِلَّا الشَّوْكُ كَذَلِكَ لَا يُجْتَنَى مِنْ قُرْبِهِمْ إِلَّا - قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ الصَّبَّاحِ: كَأَنَّهُ يَعْنِي - الْخَطَايَا . رَوَاهُ ابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: হাদীসটি ইঙ্গিত করছে আমীরদের মুখাপেক্ষী হওয়াতে দীনী ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই ঘটে না।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৬৩-[৬৬] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আলিমগণ যদি ’ইলমের হিফাযাত ও মর্যাদা রক্ষা করতেন, উপযুক্ত ও যোগ্য লোকেদের কাছে ’ইলম সোপর্দ করতেন, তাহলে নিশ্চয়ই তারা তাদের ’ইলমের কারণে নিজেদের যুগের লোকেদের নেতৃত্ব করতে পারতেন। কিন্তু তারা তা দুনিয়াদারদের কাছে বিলিয়ে দিয়েছেন, যাতে তারা তাদের কাছ থেকে দুনিয়ার কিছু স্বার্থ লাভ করতে পারেন। তাই তারা দুনিয়াদারদের কাছে মর্যাদাহীন হয়ে পড়েছেন। আমি তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি নিজের সমস্ত চিন্তাকে এক মাকসুদ, অর্থাৎ- শুধুমাত্র আখিরাতের চিন্তায় নিবদ্ধ করে নিবে- আল্লাহ তার দুনিয়ার যাবতীয় মাকসুদ পূরণ করে দিবেন। অপরদিকে যাকে দুনিয়ার নানা দিক ব্যতিব্যাস্ত করে রাখবে, তার জন্য আল্লাহর কোন পরওয়াই নেই, চাই সে কোন জঙ্গলে (দুনিয়ায় যে কোন অবস্থায়) ধ্বংস হোক না কেন। (ইবনু মাজাহ্)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: لَوْ أَنَّ أَهْلَ الْعِلْمِ صَانُوا الْعِلْمَ وَوَضَعُوهُ عِنْدَ أَهْلِهِ لَسَادُوا بِهِ أَهْلَ زَمَانِهِمْ وَلَكِنَّهُمْ بَذَلُوهُ لِأَهْلِ الدُّنْيَا لِيَنَالُوا بِهِ مِنْ دُنْيَاهُمْ فَهَانُوا عَلَيْهِمْ سَمِعْتُ نَبِيَّكُمْ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ جَعَلَ الْهُمُومَ هَمًّا وَاحِدًا هَمَّ آخِرَتِهِ كَفَاهُ اللَّهُ هَمَّ دُنْيَاهُ وَمَنْ تَشَعَّبَتْ بِهِ الْهُمُومُ فِي أَحْوَالِ الدُّنْيَا لَمْ يُبَالِ اللَّهُ فِي أَيِّ أَوْدِيَتِهَا هَلَكَ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَه
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৬৪-[৬৭] বায়হাক্বী এ হাদীসকে শু’আবুল ঈমানে ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে তার বক্তব্য হিসেবে শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন।[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَرَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ عَنِ ابْنِ عُمَرَ مِنْ قَوْلِهِ: «مَنْ جَعَلَ الْهُمُومَ» إِلَى آخِره
ব্যাখ্যা: হাদীসটি দুর্বল, তবে মারফূ‘ অংশটুকু হাসান বা গ্রহণযোগ্য। মারফূ‘ অংশটুকুর ব্যাখ্যা- যে ব্যক্তিকে দুনিয়াবী ও পরকালীন সকল চিন্তা গ্রাস করে নিবে এ অবস্থায় ঐ ব্যক্তি যদি সকল চিন্তা ত্যাগ করে এক পরকালীন চিন্তাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে তাহলে আল্লাহ ঐ ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি এমন করবে না আল্লাহ তার দুনিয়া ও পরকালীন কোন ধরনের চিন্তার জন্য তিনি ভ্রূক্ষেপ করবেন না।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৬৫-[৬৮] আ’মাশ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ’ইলমের জন্য বিপদ হলো (’ইলম শিখে) তা ভুলে যাওয়া। অযোগ্য লোক ও অপাত্রে ’ইলমের কথা বলা বা জ্ঞান দেয়া ’ইলমকে ধ্বংস করার সমতুল্য। দারিমী মুরসালরূপে বর্ণনা করেছেন।[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنِ الْأَعْمَشِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «آفَةُ الْعِلْمِ النِّسْيَانُ وَإِضَاعَتُهُ أَنْ تُحَدِّثَ بِهِ غَيْرَ أَهْلِهِ» . رَوَاهُ الدَّارِمِيُّ مُرْسلا
ব্যাখ্যা: মূল ভাষ্যের অর্থ সঠিক হওয়াতে বলা যেতে পারে বিদ্যার্জনের পর তা ভুলে যাওয়া ব্যক্তির জন্য বিপদ, সুতরাং বিদ্যা ভুলে যাওয়ার যে সকল কারণ রয়েছে যেমন- পাপ করা, বিভিন্ন চিন্তাতে ব্যাস্ত হওয়া, নিজ ও দুনিয়া নিয়ে ব্যাস্ত হওয়া মুখস্থ বিদ্যাকে বার বার পুনরাবৃত্তি করা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়া ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকতে এবং তার উপযুক্ত মন-মানসিকতা সৃষ্টি হওয়ার পূর্বে অনুপযুক্ত ব্যক্তির কাছে হাদীস বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৬৬-[৬৯] সুফ্ইয়ান সাওরী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা ’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) কা’ব (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, প্রকৃত ’আলিম কারা? তিনি [কা’ব (রাঃ)] বললেন, যারা অর্জিত ’ইলম অনুযায়ী ’আমল করে। ’উমার (রাঃ) পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, ’আলিমের অন্তর থেকে ’ইলমকে বের করে দেয় কোন্ জিনিস? তিনি বললেন, (সম্মান ও সম্পদের) লোভ-লালসা। (দারিমী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ سُفْيَانَ أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ لِكَعْبٍ: مَنْ أَرْبَابُ الْعِلْمِ؟ قَالَ: الَّذِي يَعْمَلُونَ بِمَا يَعْلَمُونَ. قَالَ: فَمَا أَخْرَجَ الْعِلْمَ مِنْ قُلُوبِ الْعُلَمَاءِ؟ قَالَ الطَّمَعُ. رَوَاهُ الدَّارِمِيُّ
ব্যাখ্যা: ভাষ্যটুকু দ্বারা বুঝা যায় ‘আমল ছাড়া ‘ইলম মূল্যহীন এবং ‘ইলম ধরে রাখার শর্ত হচ্ছে লোভ-লালসা ছেড়ে দেয়া। আরো বলা যেতে পারে দুনিয়ার প্রতি লোভ-লালসা মানুষকে রিয়া (দেখানোর জন্য) ও সুম্‘আর (যা শোনানোর জন্য) দিকে নিয়ে যায় এবং নিষ্ঠা ছাড়া ‘ইলম ও ‘আমল মানুষকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৬৭-[৭০] আহ্ওয়াস ইবনু হাকীম (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মন্দ (লোক) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমাকে মন্দ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না, বরং ভালো সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর। এ কথাটি তিনি তিনবার বললেন। অতঃপর তিনি বলেন, সাবধান! ’আলিমগণের মধ্যে যে মন্দ, সে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট। আর ’আলিমগণের মধ্যে যে ভালো, সে মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম। (দারিমী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَن الْأَحْوَص بن حَكِيم عَنْ أَبِيهِ قَالَ: سَأَلَ رَجُلٌ النَّبِيَّ صَلَّى الله عَلَيْهِ سلم عَنِ الشَّرِّ فَقَالَ: «لَا تَسْأَلُونِي عَنِ الشَّرِّ وَسَلُونِي عَنِ الْخَيْرِ» يَقُولُهَا ثَلَاثًا ثُمَّ قَالَ: «أَلَا إِنَّ شَرَّ الشَّرِّ شِرَارُ الْعُلَمَاءِ وَإِنَّ خير الْخَيْر خِيَار الْعلمَاء» . رَوَاهُ الدَّارمِيّ
ব্যাখ্যা: দীনী বিদ্যাতে শিক্ষিত ব্যক্তিগণ যখন তাদের বিদ্যানুযায়ী ‘আমল করবে তখন তারা হবে মানুষের মাঝে সর্বোত্তম। পক্ষান্তরে তারা যখন তাদের ‘ইলম অনুযায়ী ‘আমল করা ছেড়ে দিবে তখন তারা হবে মানুষের মাঝে সর্বনিকৃষ্ট।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৬৮-[৭১] আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন আল্লাহর নিকট মর্যাদার দিক দিয়ে সর্বাধিক মন্দ সে ব্যক্তি হবে, যে তার ’ইলমের দ্বারা উপকৃত হতে পারেনি। (দারিমী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ قَالَ: إِنَّ مِنْ أَشَرِّ النَّاسِ عِنْدَ اللَّهِ مَنْزِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ: عَالِمٌ لَا ينْتَفع بِعِلْمِهِ . رَوَاهُ الدَّارمِيّ