লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
’ইলমের মর্যাদা এবং ’ইলম অর্জন করা ও শিক্ষা দেয়ার মর্যাদা বিষয়ে যা কিছু ’ইলমের সাথে সংশ্লিষ্ট তার বিবরণ, ভাষাগতভাবে ’ইলম কি? এবং ’ইলমের ফরয ও নফলের বিবরণ। এছাড়া ’ইলমের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়, এখানে ’ইলমের সারবস্ত্ত ও বাস্তবতার বিবরণ আনা হয়নি, কেননা সারবস্ত্ত কিতাবের বিষয় নয়। কিতাবুল ’ইলম সকল কিতাবের কেন্দ্রবিন্দু। তাই এটিকেই অন্য সব কিতাবের পূর্বভাগে স্থান দেয়া হয়েছে। আবার এটিকে কিতাবুল ঈমান ও এতদসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় যেমন- তাক্বদীর, কবরের শাস্তি, কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আঁকড়ে ধরা কিংবা কুফর এবং ঈমানে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী অন্যান্য বিষয়ের পূর্বে স্থান দেয়া হয়নি। কারণ শারী’আতের দায়িত্ব পালনের যোগ্য ব্যক্তির জন্য সর্বপ্রথম ওয়াজিব এবং সর্বাধিক সম্মানিত বিষয় হচ্ছে ঈমান। এক্ষেত্রে ’ইলম অন্বেষণকারীর জন্য উচিত হবে ইবনু জামা’আর تذكرة السامع والمتعلم মৃঃ ৭৩৩ হিজরী, ইবনু ’আবদুল বার-এর جامع بيان العلم মৃঃ ৪৬২ হিজরী এবং এ বিষয়ের আরো অন্যান্য কিতাব অধ্যয়ন করা।
১৯৮-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার পক্ষ হতে (মানুষের কাছে) একটি বাক্য হলেও পৌঁছিয়ে দাও। বনী ইসরাঈল হতে শোনা কথা বলতে পারো, এতে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে, সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে প্রস্তুত করে নেয়। (বুখারী)[1]
الْفَصْلُ الْلأَوَّلُ
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً وَحَدِّثُوا عَنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَلَا حَرَجَ وَمَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: হাদীস থেকে বুঝা যায়, কুরআনের একটি ছোট আয়াতও যদি কারো জানা থাকে তাহলে তা প্রচার করতে হবে। আর কুরআন স্বয়ং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে যা তিনি আল্লাহর কাছ থেকে নিয়ে এসেছেন। যে কুরআন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে, তার ধারক-বাহক অধিক হওয়া এবং স্বয়ং আল্লাহ তার সংরক্ষণের দায়িত্ব নেয়া সত্ত্বেও তা আরো প্রচারের জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন। অতএব হাদীস প্রচারের দায়িত্ব সমধিক গুরুত্বপূর্ণ।
বানী ইসরাঈলের মাঝে যেসব আশ্চর্যজনক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তা যদিও এ উম্মাতের মাঝে তা ঘটা অসম্ভব মনে হয় তথাপিও তা বর্ণনা করা যাবে। যেমন- কুরবানীকে গ্রাস করার জন্য আকাশ হতে আগুন নেমে আসার বিষয়কে আমরা মিথ্যা বলে জানি না এবং এ ধরনের তাদের আরো ঘটনাবলী যেমন বানী ইসরাঈল গোবৎসের উপাসনা করার পর অনুশোচনায় নিজেদেরকে হত্যা করা এবং কুরআনে বিবৃত ঘটনাবলী যাতে শিক্ষণীয় কিছু আছে, তা বর্ণনা করাতে কোন দোষ নেই। তবে বানী ইসরাঈল থেকে যে ঘটনাবলী এসেছে তা নিয়ে একেবারে ব্যাস্ত হয়ে পড়তে এবং তাওরাতের রহিত হওয়া বিধানের প্রতি ‘আমল করতে আমাদের নিষেধ করা হয়েছে।
ইসলামের সূচনাতে যখন বিধি-বিধান নির্ধারিত না থাকা অবস্থায় বানী ইসরাঈল হতে কোন কিছু বর্ণনা করা হলে তার প্রতি কখনো কখনো মানুষ ‘আমল করতো বিধায় ঐসব ঘটনা বর্ণনা করা নিষেধ ছিল। অতঃপর যখন ইসলামী বিধি-বিধান স্থির হয়ে গেল তখন পূর্বোক্ত নিষেধাজ্ঞা আর বাকী রইল না। হাদীসের শেষাংশে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর যে কোন ধরনের মিথ্যারোপ করাকে নিষেধ করা হয়েছে। অতএব যারা দীনের প্রতি উৎসাহ দেয়ার জন্য এবং আল্লাহর প্রতি ভয় দেখানোর উদ্দেশে মিথ্যা হাদীস তৈরি করা জায়িয বলে থাকে তাদের এ ধরনের দাবীকে খণ্ডন করা হয়েছে। সুতরাং সর্বাবস্থায় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে মিথ্যা ছড়ানো হারাম।