ছোট শির্ক আবার দু’ প্রকার। যা নিম্নরূপ:
ক. প্রকাশ্য শির্ক:
প্রকাশ্য শিরক বলতে সে সকল কথা ও কাজকে বুঝানো হয় যা সবাই চোখে দেখতে পায় অথবা কানে শুনতে পায় অথবা অনুভব করতে পারে। তা আবার কয়েক প্রকার:
সুতা বা রিং পরার শির্ক:
সুতা বা রিং পরার শির্ক বলতে কোন বালা-মুসীবত দূরীকরণ বা প্রতিরোধের জন্য দম করে গেরো দেয়া সুতা বা রিং পরিধান করাকে বুঝানো হয়।
এটি ছোট শির্ক হিসেবে গণ্য করা হবে ততক্ষণ, যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যবহারকারী এ রূপ বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ্ তা’আলা এর মাধ্যমেই আমার আসন্ন বালা-মুসীবত দূরীভূত করবেন। এটি এককভাবে আমার কোন লাভ বা ক্ষতি করতে পারেনা। আর যখন এ বিশ্বাস করা হয় যে, এটি এককভাবেই আমার বিপদাপদ দূরীকরণে সক্ষম তখন তা বড় শির্কে রূপান্তরিত হবে।
আমাদের জানার বিষয় এইযে, কোন বস্ত্ত তা যাই হোকনা কেন তা কারোর কোন লাভ বা ক্ষতি করতে পারেনা।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
« قُلْ أَفَرَأَيْتُمْ مَّا تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ إِنْ أَرَادَنِيَ اللهُ بِضُرٍّ هَلْ هُنَّ كَاشِفَاتُ ضُرِّهِ أَوْ أَرَادَنِيْ بِرَحْمَةٍ هَلْ هُنَّ مُمْسِكَاتُ رَحْمَتِهِ، قُلْ حَسْبِيَ اللهُ عَلَيْهِ يَتَوَكَّلُ الْـمُتَوَكِّلُوْنَ »
‘‘আপনি ওদেরকে বলুন: তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছো যে, আল্লাহ্ তা’আলা আমার কোন অনিষ্ট করতে চাইলে তোমরা আল্লাহ্ তা’আলার পরিবর্তে যাদেরকে ডাকো তারা কি সেই অনিষ্ট দূর করতে পারবে? অথবা আল্লাহ্ তা’আলা আমার প্রতি কোন অনুগ্রহ করতে চাইলে তারা কি সে অনুগ্রহ রোধ করতে পারবে? আপনি বলুন: আমার জন্য আল্লাহ্ তা’আলাই যথেষ্ট। নির্ভরকারীদের তাঁর উপরেই নির্ভর করতে হবে’’। (যুমার : ৩৮)
আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:
« مَا يَفْتَحِ اللهُ لِلنَّاسِ مِنْ رَّحْمَةٍ فَلاَ مُمْسِكَ لَهَا، وَمَا يُمْسِكْ فَلاَ مُرْسِلَ لَهُ مِنْ بَعْدِهِ، وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ »
‘‘আল্লাহ্ তা’আলা মানুষের প্রতি কোন অনুগ্রহ অবারিত করলে কেউ তা নিবারণ করতে পারেনা। আর তিনি কিছু নিবারণ করলে তিনি ছাড়া আর কেউ তা পুনরায় অবারিত করতে পারে না। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়’’। (ফাতির : ২)
আসন্ন বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কেউ নিজের শরীরের সাথে কোন জিনিস ঝুলিয়ে রাখলে তা তাকে কোনভাবেই বিপদাপদ থেকে রক্ষা করতে পারেনা। বরং আল্লাহ্ তা’আলা তখন তাকে ওজিনিসের প্রতি সোপর্দ করে দেন। এতে করে তখন যা হবার তাই হয়ে যায়।
আবু মা’বাদ জুহানী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:
مَنْ تَعَلَّقَ شَيْئًا ؛ وُكِلَ إِلَيْهِ
‘‘কেউ কোন বস্ত্ত কোন উদ্দেশ্যে শরীর বা অন্য কোথাও ঝুলিয়ে রাখলে আল্লাহ্ তা’আলা ওকে উহার প্রতিই সোপর্দ করেন তথা তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করা হয় না বরং যা হবার তাই হয়ে যায়’’। (তিরমিযী, হাদীস ২০৭২)
রুওয়াইফি’ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) আমাকে ডেকে বললেন:
يَا رُوَيْفِعُ! لَعَلَّ الْـحَيَاةَ تَطُوْلُ بِكَ، فَأَخْبِرِ النَّاسَ أَنَّ مَنْ عَقَدَ لِـحْيَتَهُ أَوْ تَقَلَّدَ وَتَرًا أَوْ اسْتَنْجَى بِرَجِيْعِ دَابَّةٍ أَوْ عَظْمٍ فَإِنَّ مُحَمَّدًا بَرِيْءٌ مِنْهُ
‘‘হে রুওয়াইফি’! হয়তো তুমি বেশি দিন বাঁচবে। তাই তুমি সকলকে এ সংবাদ পৌঁছিয়ে দিবে যে, নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি (নামাযরত অবস্থায়) দাড়ি পেঁচায়, গলায় তার ঝুলায় অথবা পশুর মল বা হাড্ডি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করে মুহাম্মাদ (সা.) সে ব্যক্তি হতে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত’’। (আহমাদ : ৪/১০৮)
শুধু মানুষের শরীরেই কোন কিছু ঝুলানো নিষেধ যে তা সঠিক নয়। বরং আসন্ন বালা-মুসীবত বা কুদৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য উট, ঘোড়া, গরু, ছাগল ইত্যাদির গলায়ও তার বা এ জাতীয় কোন কিছু ঝুলানো নিষেধ।
আবু বাশীর আন্সারী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি কোন এক সফরে রাসূল (সা.) এর সফরসঙ্গী ছিলাম। তখন সবাই ঘুমে বিভোর। এমতাবস্থায় রাসূল (সা.) এ মর্মে জনৈক প্রতিনিধি পাঠান যে,
لاَ يَبْقَيَنَّ فِيْ رَقَبَةِ بَعِيْرٍ قِلاَدَةٌ مِنْ وَتَرٍ أَوْ قِلاَدَةٌ إِلاَّ قُطِعَتْ
‘‘কোন উটের গলায় তার বা অন্য কিছু ঝুলানো থাকলে তা যেন কেটে ফেলা হয়’’। (বুখারী, হাদীস ৩০০৫ মুসলিম, হাদীস ২১১৫ আবু দাউদ, হাদীস ২৫৫২)
তবে শুধু বেঁধে রাখার উদ্দেশ্যে কোন পশুর গলায় কোন জিনিস লাগিয়ে রাখা নিষেধ নয়। বরং তা প্রয়োজনে করতে হয়। যাতে পশুটি পালিয়ে না যায়।
আবু ওহাব জুশামী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
اِرْتَبِطُوْا الْـخَيْلَ، وَامْسَحُوْا بِنَوَاصِيْهَا وَأَعْجَازِهَا أَوْ قَالَ: أَكْفَالِهَا وَقَلِّدُوْهَا، وَلاَ تُقَلِّدُوْهَا الْأَوْتَارَ
‘‘তোমরা ঘোড়া বেঁধে রাখো এবং ওর কপাল বা পাছায় হাত বুলিয়ে দাও। প্রয়োজনে ওর গলায় কিছু বেঁধে দিতে পারো। কিন্তু আসন্ন বালা-মুসীবত বা কুদৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তার বা অন্য কিছু ঝুলিয়ে দিওনা’’। (আবু দাউদ, হাদীস ২৫৫৩)
ঝাঁড় ফুঁকের শির্ক বলতে এমন মন্ত্র পড়ে ঝাঁড় ফুঁক করাকে বুঝানো হয় যে মন্ত্রের মধ্যে শির্ক রয়েছে।
যায়নাব (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমার স্বামী ’আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ (রা.) একদা আমার গলায় একটি সুতো দেখে বললেন: এটি কি? আমি বললাম: এটি মন্ত্র পড়া সুতো। এ কথা শুনা মাত্রই তিনি তা খুলে নিয়ে টুকরো টুকরো করে ফেলেন। অতঃপর বললেন: নিশ্চয়ই আব্দুল্লাহ্’র পরিবার শির্কের কাঙ্গাল নয়। বরং ওরা যে কোন ধরনের শির্ক হতে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত। তিনি আরো বললেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ، قَالَتْ: قُلْتُ: لِـمَ تَقُوْلُ هَذَا؟ وَاللهِ لَقَدْ كَانَتْ عَيْنِيْ تَقْذِفُ، وَكُنْتُ أَخْتَلِفُ إِلَى فُلاَنٍ الْيَهُوْدِيِّ يَرْقِيْنِيْ، فَإِذَا رَقَانِيْ سَكَنَتْ! فَقَالَ عَبْدُ اللهِ: إِنَّمَا ذَاكَ عَمَلُ الشَّيْطَانِ؛ كَانَ يَنْخَسُهَا بِيَدِهِ، فَإِذَا رَقَاهَا كَفَّ عَنْهَا؛ إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيْكِ أَنْ تَقُوْلِيْ كَمَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ: أَذْهِبِ الْبَأْسَ رَبَّ النَّاسِ، اِشْفِ أَنْتَ الشَّافِيْ، لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
‘‘নিশ্চয়ই ঝাঁড় ফুঁক, তাবিজ কবচ ও ভালোবাসা সৃষ্টির জন্য ব্যবহার্য বস্ত্ত শির্ক। যায়নাব বললেন: আমি বললাম: আপনি এরূপ কেন বলছেন? আল্লাহ্’র কসম! আমার চোখ উঠলে ওমুক ইহুদীর নিকট যেতাম। অতঃপর সে মন্ত্র পড়ে দিলে তা ভালো হয়ে যেতো। তখন ’আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ (রা.) বলেন: এটি শয়তানের কাজ। সেই নিজ হাতে তোমার চোখে খোঁচা মারতো। অতঃপর যখন মন্ত্র পড়ে দেয়া হতো তখন সে তা বন্ধ রাখতো। তোমার এতটুকু বলাই যথেষ্ট ছিলো যা রাসূল (সা.) বলতেন। তিনি বলতেন: হে মানুষের প্রভু! আপনি আমার রোগ নিরাময় করুন। আপনি আমাকে সুস্থ করুন। কারণ, আপনিই একমাত্র সুস্থতা দানকারী। আপনার নিরাময়ই সত্যিকার নিরাময়। যার পর আর কোন রোগ থাকে না’’। (আবু দাউদ, হাদীস ৩৮৮৩ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩৫৯৬)
সকল মন্ত্রই শির্ক নয়। বরং সেই মন্ত্রই শির্ক যাতে শির্কের সংমিশ্রণ রয়েছে। যাতে ফিরিশ্তা, জিন ও নবীদের আশ্রয় বা সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। তাদের নিকট ফরিয়াদ কামনা করা হয়েছে বা তাদেরকে ডাকা হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। অতএব আল্লাহ্ তা’আলার নাযিল করা কিতাব, তাঁর নাম ও বিশেষণ দিয়ে ঝাঁড় ফুঁক করা জায়িয।
’আউফ বিন্ মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমরা জাহিলী যুগে অনেকগুলো মন্ত্র পড়তাম। তাই আমরা রাসূল (সা.) কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন:
اِعْرِضُوْا عَلَيَّ رُقَاكُمْ، لاَ بَأْسَ بِالرُّقِيِّ مَا لَـمْ يَكُنْ فِيْهِ شِرْكٌ
‘‘তোমরা তোমাদের মন্ত্রগুলো আমার সামনে উপস্থিত করো। কারণ, শির্কের মিশ্রণ না থাকলে যে কোন মন্ত্র পড়তে কোন অসুবিধে নেই’’। (মুসলিম, হাদীস ২২০০ আবু দাউদ, হাদীস ৩৮৮৬)
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
رَخَّصَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِيْ الرُّقْيَةِ مِنَ الْعَيْنِ وَالْـحُمَةِ وَالنَّمْلَةِ
‘‘রাসূল সা. কুদৃষ্টি তথা বদনযর, বিচ্ছু বা সর্পবিষ ইত্যাদি এবং পিপড়ার মন্ত্র পড়ার অনুমতি দেন’’। (মুসলিম, হাদীস ২১৯৬ তিরমিযী, হাদীস ২০৫৬ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩৫৮১)
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সা. মন্ত্র পড়া নিষেধ করে দিলে ’আমর বিন্ ’হায্মের গোত্ররা তাঁর নিকট এসে বললো: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আমরা একটি মন্ত্র পড়ে বিচ্ছুর বিষ নামাতাম। অথচ আপনি মন্ত্র পড়তে নিষেধ করে দিয়েছেন। অতঃপর তারা রাসূল (সা.) কে মন্ত্রটি শুনালে তিনি বললেন:
مَا أَرَى بَأْسًا، مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يَّنْفَعَ أَخَاهُ فَلْيَنْفَعْهُ
‘‘এতে কোন অসুবিধে নেই। তোমাদের কেউ নিজ ভাইয়ের উপকার করতে পারলে সে তা অবশ্যই করবে’’। (মুসলিম, হাদীস ২১৯৯)
শুধু কোন মন্ত্রের ফায়দা প্রমাণিত হলেই তা পড়া জায়িয হয়ে যায়না। বরং তা শরীয়তের কষ্টি পাথরে যাচাই করে নিতে হয়। দেখে নিতে হয় তাতে শির্কের কোন মিশ্রণ আছে কি না?
ইবনুত্ তীন (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন:
إِنَّ الْـحَيَّةَ لِعَدَاوَتِهَا الْإِنْسَانَ بِالطَّبْعِ تُصَادِقُ الشَّيَاطِيْنَ لِكَوْنِهِمْ أَعْدَاءَ بَنِيْ آدَمَ، فَإِذَا عُزِمَ عَلَى الْحَيَّةِ بِأَسْمَاءِ الشَّيَاطِيْنِ أَجَابَتْ وَخَرَجَتْ مِنْ مَكَانِهَا، وَكَذَا اللَّدِيْغُ إِذَا رُقِيَ بِتِلْكَ الْأَسْمَاءِ سَالَتْ سُمُوْمُهَا مِنْ بَدَنِ الْإِنْسَانِ
‘‘সাপ স্বভাবগতভাবে মানুষের শত্রু হওয়ার দরুন তার সাথে মানুষের আরেকটি শত্রু শয়তানের ভালো সখিত্ব রয়েছে। এতদ্কারণেই সাপের উপর শয়তানের নাম পড়ে দম করা হলে সে তা মান্য করে নিজ স্থান ত্যাগ করে। তেমনিভাবে সাপের ছোবলে আক্রান্ত ব্যক্তিকেও শয়তানের নামে ঝাঁড় ফুঁক করা হলে মানুষের শরীর হতে বিষ নেমে যায়’’।
মোটকথা, চার শর্তে ঝাঁড় ফুঁক করা জায়িয। যা নিম্নরূপ:
১. তা আল্লাহ্ তা’আলার নাম বা গুণাবলীর মাধ্যমে হতে হবে।
২. নিজস্ব ভাষায় হতে হবে। যাতে করে তা সহজেই বোধগম্য হয় এবং তাতে শির্কের মিশ্রণ আছে কিনা তা বুঝা যায়।
৩. যাদুমন্ত্র ব্যতিরেকে এবং শরীয়ত সমর্থিত জায়িয পন্থায় হতে হবে। কারণ, যে কোন উদ্দেশ্যে যাদুর ব্যবহার শরীয়তের দৃষ্টিতে কুফরীর শামিল।
৪. এ বিশ্বাস বদ্ধমূল থাকতে হবে যে, আল্লাহ্ তা’আলার ইচ্ছে ছাড়া মন্ত্র (তা যাই হোক না কেন) কোন কাজই করতে পারবেনা। আর এর বিপরীত বিশ্বাস হলে তা বড় শির্কে রূপান্তরিত হবে।
তা’বীয-কবচের শির্ক বলতে বালা-মুসীবত, কুদৃষ্টি ইত্যাদি দূরীকরণ অথবা প্রতিরোধের জন্য দানা গোটা, কড়ি কঙ্কর, কাষ্ঠ খন্ড, খড়কুটো, কাগজ, ধাত ইত্যাদি শরীরের যে কোন অঙ্গে ঝুলানোকে বুঝানো হয়।
শরীয়তের দৃষ্টিতে রোগ নিরাময়ের জন্য দু’টি জায়িয মাধ্যম অবলম্বন করা যেতে পারে। যা নিম্নরূপ:
ক. শরীয়ত সমর্থিত মাধ্যম। যা দো’আ ও জায়িয ঝাঁড় ফুঁকের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। যা ক্রিয়াশীল হওয়া কোর’আন ও হাদীস কর্তৃক প্রমাণিত। এ মাধ্যমটি গ্রহণ করা আল্লাহ্ তা’আলার উপর নির্ভরশীল হওয়াই প্রমাণ করে। কারণ, তিনি নিজেই বান্দাহ্কে এ মাধ্যম গ্রহণ করতে আদেশ করেছেন।
খ. প্রকৃতিগত মাধ্যম। যা মাধ্যম হওয়া মানুষের বোধ ও বিবেক প্রমাণ করে। যেমন: পানি পিপাসা নিবারণের মাধ্যম। পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে তৈরিকৃত ওষুধ নির্ধারিত রোগ নিরাময়ের মাধ্যম।
তাবিজ কবচ উক্ত মাধ্যম দু’টোর কোনটিরই অধীন নয়। না শরীয়ত উহাকে সমর্থন করে, না প্রকৃতিগতভাবে উহা কোন ব্যাপারে ক্রিয়াশীল। অতএব তা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
« وَإِنْ يَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلاَ كَاشِفَ لَهُ إِلاَّ هُوَ، وَإِنْ يُّرِدْكَ بِخَيْـرٍ فَلاَ رَادَّ لِفَضْلِهِ، يُصِيْبُ بِهِ مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهِ، وَهُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ »
‘‘যদি আল্লাহ্ তা’আলা তোমাকে কোন ক্ষতির সম্মুখীন করেন তাহলে তিনিই একমাত্র তোমাকে তা থেকে উদ্ধার করতে পারেন। আর যদি তিনি তোমার কোন কল্যাণ করতে চান তাহলে তাঁর অনুগ্রহের গতিরোধ করার সাধ্য কারোর নেই। তিনি নিজ বান্দাহদের মধ্য থেকে যাকে চান অনুগ্রহ করেন। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও অতিশয় দয়ালু’’। (ইউনুস : ১০৭)
তিনি আরো বলেন:
« وَعَلَى اللهِ فَتَوَكَّلُوْا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِيْنَ »
‘‘একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার উপরই ভরসা করো যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাকো’’। (মায়িদাহ্ : ২৩)
আবু মা’বাদ জুহানী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:
مَنْ تَعَلَّقَ شَيْئًا ؛ وُكِلَ إِلَيْهِ
‘‘কেউ কোন বস্ত্ত কোন মাকসুদে শরীর বা অন্য কোথাও ঝুলিয়ে রাখলে আল্লাহ্ তা’আলা তাকে উহার প্রতিই সোপর্দ করেন তথা তার মাকসুদটি পূর্ণ করা হয়না বরং যা হবার তাই হয়ে যায়’’। (তিরমিযী, হাদীস ২০৭২)
’আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ
‘‘নিশ্চয়ই ঝাঁড় ফুঁক, তাবিজ কবচ ও ভালোবাসা সৃষ্টির জন্য ব্যবহার্য যে কোন বস্ত্ত শির্ক’’। (আবু দাউদ, হাদীস ৩৮৮৩ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩৫৯৬)
’উক্ববা বিন্ ’আমির (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
أَقْبَلَ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم رَهْطٌ، فَبَايَعَ تِسْعَةً وَأَمْسَكَ عَنْ وَاحِدٍ، فَقَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! بَايَعْتَ تِسْعَةً وَأَمْسَكْتَ عَنْ هَذَا؟ قَالَ: إِنَّ عَلَيْهِ تَمِيْمَةً، فَأَدْخَلَ يَدَهُ فَقَطَعَهَا، فَبَايَعَهُ وَ قَالَ: مَنْ عَلَّقَ تَمِيْمَةً فَقَدْ أَشْرَكَ
‘‘রাসূল (সা.) এর নিকট দশ জন ব্যক্তি আসলে তিনি তম্মধ্যে নয় জনকেই বায়’আত করান। তবে এক জনকে বায়’আত করাননি। সাহাবারা বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আপনি নয় জনকেই বায়’আত করিয়েছেন। তবে একে করাননি কেন? তিনি বললেন: তার হাতে তাবিজ আছে। অতঃপর লোকটি তাবিজটি ছিঁড়ে ফেললে রাসূল (সা.) তাকে বায়’আত করিয়ে বললেন: যে তাবিজ কবচ ঝুলালো সে শির্ক করলো’’। (আহমাদ : ৪/১৫৬)
সাঈদ বিন্ জুবাইর (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
مَنْ قَطَعَ تَمِيْمَةً مِنْ إِنْسَانٍ كَانَ كَعِدْلِ رَقَبَةٍ
‘‘যে ব্যক্তি কারোর তাবিজ কবচ কেটে ফেললো তার আমলনামায় একটি গোলাম আযাদের সাওয়াব লেখা হবে’’।
বিশেষভাবে জানতে হয় যে, আল্লাহ্ তা’আলার নাম ও গুণাবলী এবং কোর’আন মাজীদের আয়াত ও বিশুদ্ধ হাদীস দিয়ে তাবিজ কবচ করার ব্যাপারে সাহাবাদের মধ্যে মতানৈক্য ছিলো।
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আমর বিন্ ’আস্ (রা.) ও ’আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) এ জাতীয় তাবিজ কবচ জায়িয হওয়ার পক্ষে মত ব্যক্ত করেন। আবু জা’ফর মুহাম্মাদ্ আল্ বাক্বির ও ইমাম আহমাদ (এক বর্ণনায়) এবং ইমাম ইবনুল্ কাইয়িম (রাহিমাহুমুল্লাহ্) ও এ মতের সমর্থন করেন।
অন্য দিকে ’আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ্, ’আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আব্বাস, হুযাইফা, ’উক্ববা বিন্ ’আমির, ’আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উক্বাইম এবং ’আলক্বামা, ইব্রাহীম বিন্ ইয়াযীদ্ নাখা’য়ী, আস্ওয়াদ্, আবু ওয়া’ইল্, ’হারিস্ বিন্ সুওয়াইদ্, ’উবাইদাহ্ সাল্মানী, মাসরূক্ব, রাবী’ বিন্ খাইসাম্, সুওয়াইদ্ বিন্ গাফলা (রাহিমাহুমুল্লাহ্) সহ আরো অন্যান্য বহু সাহাবী ও তাবিয়ীন তাবিজ ও কবচ না জায়িয বা শির্ক হওয়ার ব্যাপারে মত ব্যক্ত করেন। ইমাম আহমাদও (এক বর্ণনায়) এ মত গ্রহণ করেন। চাই তা কোর’আন ও হাদীস এবং আল্লাহ্ তা’আলার নাম ও গুণাবলী দিয়ে হোক অথবা চাই তা অন্য কিছু দিয়ে হোক। কারণ, হাদীসের মধ্যে তাবিজ ও কবচ শির্ক হওয়ার ব্যাপারটি ব্যাপকভাবে বর্ণিত হয়েছে। তাতে কোন পার্থক্য করা হয়নি এবং এ ব্যাপকতা হাদীস বর্ণনাকারীরাও বুঝেছেন। শুধু আমরাই নয়।
অন্য দিকে তাবিজ ও কবচ জায়িয হওয়ার ব্যাপারটিকে ঝাঁড় ফুঁকের সাথে তুলনা করা যায়না। কারণ, ঝাঁড় ফুঁকের মধ্যে কাগজ, চামড়া ইত্যাদির প্রয়োজন হয়না যেমনিভাবে তা প্রয়োজন হয় তাবিজ ও কবচের মধ্যে। বরং তাবিজ ও কবচ না জায়িয হওয়ার ব্যাপারকে শির্ক মিশ্রিত ঝাঁড় ফুঁকের সাথে সহজেই তুলনা করা যেতে পারে।
যখন অধিকাংশ সাহাবা ও তাবিয়ীন সে স্বর্ণ যুগে কোর’আন ও হাদীস কর্তৃক তাবিজ ও কবচ দেয়া না জায়িয বা অপছন্দ করেছেন তা হলে এ ফিতনার যুগে যে যুগে তাবিজ ও কবচ দেয়া বিনা পুঁজিতে লাভজনক একটি ভিন্ন পেশা হিসেবে রূপ নিয়েছে কিভাবে তা জায়িয হতে পারে? কারণ, এ যুগে তাবিজ ও কবচ দিয়ে সকল ধরনের হারাম কাজ করা হয় এবং এ যুগের তাবিজদাতারা এর সাথে অনেক শির্ক ও কুফরের সংমিশ্রণ করে থাকে। তারা মানুষকে সরাসরি আল্লাহ্ তা’আলার উপর নির্ভরশীল না করে নিজের তাবিজ ও কবচের উপর নির্ভরশীল করে। এমনকি অনেক তাবিজদাতা এমনও রয়েছে যে, কেউ তার নিকট এসে কোন সামান্য সমস্যা তুলে ধরলে সে নিজ থেকে আরো কিছু বাড়িয়ে তা আরো ফলাও করে বর্ণনা করতে থাকে। যাতে খদ্দেরটি কোনভাবেই হাতছাড়া না হয়ে যায়। তাতে করে মানুষ আল্লাহ্ভক্ত না হয়ে তাবিজ বা তাবিজদাতার কঠিন ভক্ত হয়ে যায়।
মোটকথা, কোর’আন ও হাদীস কর্তৃক তাবিজ কবচ দেয়া বহু হারাম কাজ ও বহু শির্কের গুরুত্বপূর্ণ বাহন। যা প্রতিহত করা দল মত নির্বিশেষে সকল মুসলমানেরই কর্তব্য। এরই পাশাপাশি তাবিজ ও কবচ ব্যবহারে কোর’আন ও হাদীসের প্রচুর অপমান ও অসম্মান হয় যা বিস্তারিতভাবে বলার এতটুকুও অপেক্ষা রাখে না।
বরকতের শির্ক বলতে শরীয়ত অসমর্থিত কোন ব্যক্তি, বস্ত্ত বা সময়কে অবলম্বন করে ধর্ম বা বিষয়গত কোন প্রয়োজন নিবারণ অথবা অধিক কল্যাণ ও পুণ্যের আশা করাকে বুঝানো হয়।
সহজ ভাষায় বলতে হয়, কোর’আন ও হাদীসের দৃষ্টিতে আল্লাহ্ তা’আলা যে ব্যক্তি, বস্ত্ত বা সময়ের মধ্যে বরকত রাখেননি সেগুলোর মাধ্যমে বরকত কামনা করাকে বুঝানো হয়।
তাবাররুকের প্রকারভেদ:
তাবাররুক বা বরকত কামনা সর্ব সাকুল্যে দু’ ধরনের হয়ে থাকে। যা নিম্নরূপ:
বৈধ তাবাররুক:
বৈধ তাবাররুক বলতে যে ধরনের ব্যক্তি বা বস্ত্তর মাধ্যমে বরকত কামনা করা ইসলামী শরীয়তে জায়িয সে গুলোর মাধ্যমে বরকত কামনা করাকে বুঝানো হয়। তা আবার চার প্রকার:
১. নবী সত্তা বা তাঁর নিদর্শনসমূহ কর্তৃক বরকত গ্রহণ:
এ জাতীয় তাবার্রুক শরীয়ত কর্তৃক প্রমাণিত। কারণ, আল্লাহ্ তা’আলা নবী সত্তা ও তদীয় নিদর্শনসমূহে এমন বিশেষ বরকত রেখেছেন যা অন্য কারোর সত্তা বা নিদর্শনসমূহে রাখেননি।
’আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا مَرِضَ أَحَدٌ مِّنْ أَهْلِهِ نَفَثَ عَلَيْهِ بِالْـمُعَوِّذَاتِ، فَلَمَّا مَرِضَ مَرَضَهُ الَّذِيْ مَاتَ فِيْهِ جَعَلْتُ أَنْفُثُ عَلَيْهِ وَأَمْسَحُهُ بِيَدِ نَفْسِهِ، لِأَنَّهَا كَانَتْ أَعْظَمَ بَرَكَةً مِنْ يَدِيْ
‘‘আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর নিজ পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে তিনি তার উপর সূরা ফালাক্ব, নাস্ ইত্যাদি পড়ে দম করতেন। অতঃপর তিনি যখন শেষ বারের মতো অসুস্থ হয়ে পড়লেন যাতে তাঁর ইন্তিকাল হয়ে যায় তখন আমিই তাঁর উপর সূরা ফালাক্ব, নাস্ ইত্যাদি পড়ে দম করতাম এবং তাঁর নিজ হাত দিয়েই আমি তাঁর শরীর বুলিয়ে দিতাম। কারণ, তাঁর হাত আমার হাতের চাইতে অধিক বরকতময়’’। (বুখারী, হাদীস ৪৪৩৯, ৫০১৬, ৫৭৩৫, ৫৭৫১ মুসলিম, হাদীস ২১৯২)
আনাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا صَلَّى الْغَدَاةَ جَاءَ خَدَمُ الْـمَدِيْنَةِ بِآنِيَتِهِمْ فِيْهَا الْـمَاءُ، فَمَا يُؤْتَى بِإِنَاءٍ إِلاَّ غَمَسَ يَدَهُ فِيْهِ، فَرُبَّمَا جَاؤُوْهُ فِيْ الْغَدَاةِ الْبَارِدَةِ، فَيَغْمِسُ يَدَهُ فِيْهِ
’’রাসূল (সা.) ফজরের নামায শেষ করলেই মদীনার গোলাম ও খাদিমরা পানি ভর্তি পাত্র নিয়ে তাঁর নিকট উপস্থিত হতো। যে কোন পাত্রই তাঁর নিকট উপস্থিত করা হতো তাতেই তিনি নিজ হস্ত মুবারাক ঢুকিয়ে দিতেন। এমনকি অনেক সময় শীতের ভোর সকালে তাঁর নিকট পানি ভর্তি পাত্র নিয়ে আসা হতো। অতঃপর তিনি তাতেও নিজ হস্ত মুবারাক ঢুকিয়ে দিতেন’’। (মুসলিম, হাদীস ২৩২৪)
আনাস্ (রা.) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন:
لَقَدْ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَالْـحَلاَّقُ يَحْلِقُهُ، وَأَطَافَ بِهِ أَصْحَابُهُ، فَمَا يُرِيْدُوْنَ أَنْ تَقَعَ شَعْرَةٌ إِلاَّ فِيْ يَدِ رَجُلٍ
‘‘আমি রাসূল (সা.) কে দেখতাম, নাপিত তাঁর মাথা মুন্ডাচ্ছে। আর এ দিকে সাহাবারা তাঁকে বেষ্টন করে আছে। কোন একটি চুল পড়লেই তা পড়তো যে কোন এক ব্যক্তির হাতে। তারা তা কখনোই মাটিতে পড়তে দিতোনা’’। (মুসলিম, হাদীস ২৩২৫)
মিস্ওয়ার্ বিন্ মাখ্রামা ও মার্ওয়ান (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন:
ثُمَّ إِنَّ عُرْوَةَ جَعَلَ يَرْمُقُ أَصْحَابَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِعَيْنَيْهِ، قَالَ: فَوَاللهِ مَا تَنَخَّمَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم نُخَامَةً إِلاَّ وَقَعَتْ فِيْ كَفِّ رَجُلٍ مِّنْهُمْ، فَدَلَكَ بِهَا وَجْهَهُ وَجِلْدَهُ، وَإِذَا أَمَرَهُمْ ابْتَدَرُوْا أَمْرَهُ، وَإِذَا تَوَضَّأَ كَادُوْا يَقْتَتِلُوْنَ عَلَى وَضُوْئِهِ
‘‘অতঃপর ’উর্ওয়া নবী কারীম (সা.) এর সাহাবাদেরকে স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ করছিলো। সে আশ্চর্য হয়ে বললো: আল্লাহ্ তা’আলার কসম! রাসূল (সা.) কখনো এতটুকু কফ ফেলেননি যা তাদের কোন এক জনের হাতে না পড়ে মাটিতে পড়েছে। অতঃপর সে তা দিয়ে নিজ মুখমণ্ডল ও শরীর মলে নেয়নি। নবী (সা.) তাদেরকে কোন কাজের আদেশ করতেই তারা তা করার জন্য দৌড়ে যেতো। আর তিনি ওযু করলে তাঁর ওযুর পানি সংগ্রহের জন্য তারা উঠে পড়ে লাগতো’’। (বুখারী, হাদীস ২৭৩১, ২৭৩২)
উক্ত হাদীস এবং এ সংক্রান্ত আরো অন্যান্য বিশুদ্ধ হাদীস এটিই প্রমাণ করে যে, রাসূল সত্তা এবং তাঁর শরীর থেকে নির্গত ঘাম, কফ, থুতু ইত্যাদি এবং তাঁর চুল ও ব্যবহৃত পোশাক পরিচ্ছদ, থালা বাসন ইত্যাদিতে আল্লাহ্ তা’আলা বিশেষভাবে এমন কিছু বরকত রেখেছেন যা তিনি অন্য কোথাও রাখেননি।
তবে দুনিয়ার কোথাও এ জাতীয় কোন কিছু পাওয়া গেলে সর্ব প্রথম সঠিক বর্ণনাসূত্রে আমাদেরকে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে যে, তা একমাত্র রাসূল (সা.) এর। অন্য কারোর নয়। কারণ, এ জাতীয় কোন কিছু কারোর সংগ্রহে থেকে থাকলে একান্ত বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে সে মৃত্যুর সময় তার কবরে তার সঙ্গে তা দাফন করার জন্য অবশ্যই অসিয়ত করে যাবে। বোকামি করে সে তা কখনো কারোর জন্য রেখে যাবেনা। তবে ঘটনাক্রমে তা থেকেও যেতে পারে। এ জন্য আমাদেরকে অবশ্যই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে।
২. আল্লাহ্’র যিকির ও নেককারদের সাথে বসে বরকত হাসিল করা:
এটিও বহু বিশুদ্ধ হাদীস কর্তৃক প্রমাণিত।
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
إِنَّ لِلَّهِ مَلائِكَةً يَطُوْفُوْنَ فِيْ الطُّرُقِ يَلْتَمِسُوْنَ أَهْلَ الذِّكْرِ، فَإِذَا وَجَدُوْا قَوْمًا يَذْكُرُوْنَ اللهَ تَنَادَوْا: هَلُمُّوْا إِلَى حَاجَتِكُمْ، قَالَ: فَيَحُفُّوْنَهُمْ بِأَجْنِحَتِهِمْ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، قَالَ: فَيَسْأَلُهُمْ رَبُّهُمْ، وَهُوَ أَعْلَمُ مِنْهُمْ، مَا يَقُوْلُ عِبَادِيْ؟ قَالَ: تَقُوْلُ: يُسَبِّحُوْنَكَ وَيُكَبِّرُوْنَكَ وَيَحْمَدُوْنَكَ وَيُمَجِّدُوْنَكَ، قَالَ: فَيَقُوْلُ: هَلْ رَأَوْنِيْ؟ قَالَ: فَيَقُوْلُوْنَ: لاَ وَاللهِ مَا رَأَوْكَ، قَالَ: فَيَقُوْلُ: وَكَيْفَ لَوْ رَأَوْنِيْ؟ قَالَ: يَقُوْلُوْنَ: لَوْ رَأَوْكَ كَانُوْا أَشَدَّ لَكَ عِبَادَةً، وَأَشَدَّ لَكَ تَمْجِيْدًا وَتَحْمِيْدًا وَأَكْثَرَ لَكَ تَسْبِيْحًا، قَالَ: يَقُوْلَُ: فَمَا يَسْأَلُوْنِيْ؟ قَالَ: يَقُوْلُوْنَ: يَسْأَلُوْنَكَ الْـجَنَّةَ، قَالَ: يَقُوْلُ: وَهَلْ رَأَوْهَا؟ قَالَ: يَقُوْلُوْنَ: لاَ وَاللهِ يَا رَبِّ مَا رَأَوْهَا، قَالَ: يَقُوْلُ: فَكَيْفَ لَوْ أَنَّهُمْ رَأَوْهَا؟ قَالَ: يَقُوْلُوْنَ: لَوْ أَنَّهُمْ رَأَوْهَا كَانُوْا أَشَدَّ عَلَيْهَا حِرْصًا، وَأَشَدَّ لَهَا طَلَبًا، وَأَعْظَمَ فِيْهَا رَغْبَةً، قَالَ: فَمِمَّ يَتَعَوَّذُوْنَ؟ قَالَ: يَقُوْلُوْنَ: مِنَ النَّارِ، قَالَ: يَقُوْلُ: وَهَلْ رَأَوْهَا؟ قَالَ: يَقُوْلُوْنَ: لاَ وَاللهِ يَا رَبِّ مَا رَأَوْهَا، قَالَ: يَقُوْلُ: فَكَيْفَ لَوْ رَأَوْهَا؟ قَالَ: يَقُوْلُوْنَ: لَوْ رَأَوْهَا كَانُوْا أَشَدَّ مِنْهَا فِرَارًا، وَأَشَدَّ لَهَا مَخَافَةً، قَالَ: فَيَقُوْلُ: فَأُشْهِدُكُمْ أَنِّيْ قَدْ غَفَرْتُ لَهُمْ، قَالَ: يَقُوْلُ مَلَكٌ مِنَ الْـمَلاَئِكَةِ: فِيْهِمْ فُلاَنٌ لَيْسَ مِنْهُمْ، إِنَّمَا جَاءَ لِحَاجَةٍ، قَالَ: هُمُ الْـجُلَسَاءُ لاَ يَشْقَى بِهِمْ جَلِيْسُهُمْ
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা’আলার এমন অনেকগুলো ফিরিশ্তা রয়েছেন যারা পথে পথে ঘুরে বেড়ান এবং যিকিরকারীদের অনুসন্ধান করেন। যখন তারা কোন জন সমষ্টিকে যিকির করতে দেখেন তখন তারা পরস্পরকে এ বলে ডাকতে থাকেন যে, আসো! তোমাদের কাজ মিলে গেলো। অতঃপর তারা নিজ পাখাগুলো দিয়ে দুনিয়ার আকাশ পর্যন্ত তাদেরকে বেষ্টন করে রাখেন। এরপর আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, অথচ তিনি এ ব্যাপারে তাদের চাইতেও বেশি জানেন, আমার বান্দাহ্রা কি বলে? ফিরিশতারা বলেন: তারা আপনার পবিত্রতা, বড়ত্ব, প্রশংসা ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: তারা কি আমাকে দেখেছে? ফিরিশ্তারা বলেন: না, আল্লাহ্’র কসম! তারা আপনাকে দেখেনি। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: তারা আমাকে দেখতে পেলে কি করতো? ফিরিশ্তারা বলেন: তারা আপনাকে দেখতে পেলে আরো বেশি ইবাদাত করতো। আরো অধিক আপনার সম্মান, প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনা করতো। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: তারা আমার কাছে কি চায়? ফিরিশতারা বলেন: তারা আপনার কাছে জান্নাত চায়। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: তারা কি জান্নাত দেখেছে? ফিরিশ্তারা বলেন: না, আল্লাহ্’র কসম! হে প্রভু! তারা জান্নাত দেখেনি। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: তারা জান্নাত দেখলে কি করতো? ফিরিশ্তারা বলেন: তারা জান্নাত দেখতে পেলে জান্নাতের প্রতি তাদের উৎসাহ ও লোভ আরো বেড়ে যেতো। আরো মরিয়া হয়ে জান্নাত কামনা করতো। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: তারা কি বস্ত্ত থেকে আমার আশ্রয় কামনা করে? ফিরিশতারা বলেন: জাহান্নাম থেকে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: তারা কি জাহান্নাম দেখেছে? ফিরিশ্তারা বলেন: না, আল্লাহ্’র কসম! হে প্রভু! তারা জাহান্নাম দেখেনি। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: তারা জাহান্নাম দেখলে কি করতো? ফিরিশতারা বলেন: তারা জাহান্নাম দেখতে পেলে জাহান্নামকে আরো বেশি ভয় পেতো এবং জাহান্নাম থেকে আরো বেশি পলায়নপর হতো। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রেখে বলছি: আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি। জনৈক ফিরিশতা বলেন: তাদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি রয়েছে যে তাদের অন্তর্ভূত নয়। বরং সে কোন এক প্রয়োজনে তাদের কাছে এসেছে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: তারা আমার উদ্দেশ্যেই বসেছে। সুতরাং তাদের সাথে যে বসেছে সেও আমার রহমত হতে বঞ্চিত হতে পারে না’’। (বুখারী, হাদীস ৬৪০৮ মুসলিম, হাদীস ২৬৮৯)
উক্ত হাদীসে যিকিরের মজলিশ বিশেষ বরকত ও মাগফিরাতের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে উল্লিখিত হয়েছে। এমনকি ইহার বরকত এমন ব্যক্তির ভাগ্যেও জুটবে যে তাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং সে কোন এক প্রয়োজনে তাদের সাথে বসেছে।
৩. যে কোন মসজিদে নামায ও ইবাদাতের মাধ্যমে বরকত গ্রহণ:
যে কোন মসজিদে বিশেষভাবে তিনটি মসজিদে নামায ও অন্যান্য ইবাদাতের মাধ্যমে বরকত কামনা করা শরীয়ত সম্মত। সে তিনটি মসজিদ হলো: মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদে ’আকসা।
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:
صَلاَةٌ فِيْ مَسْجِدِيْ هَذَا خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ صَلاَةٍ فِيْمَا سِوَاهُ إِلاَّ الْـمَسْجِدَ الْـحَرَامَ
‘‘আমার মসজিদে এক ওয়াক্ত নামায পড়া অন্য মসজিদে হাজার ওয়াক্ত নামাযের চাইতেও উত্তম। তবে শুধু মসজিদে হারাম। তাতে নামায পড়ার সাওয়াব আরো অনেক বেশি’’। (বুখারী, হাদীস ১১৯০ মুসলিম, হাদীস ১৩৯৪ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ১৪২৪, ১৪২৬)
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
صَلاَةٌ فِيْ مَسْجِدِيْ أَفْضَلُ مِنْ أَلْفِ صَلاَةٍ فِيْمَا سِوَاهُ، إِلاَّ الْـمَسْجِدَ الْـحَرَامَ، وَصَلاَةٌ فِيْ الْـمَسْجِدِ الْـحَرَامِ أَفْضَلُ مِنْ مِئَةِ أَلْفِ صَلاَةٍ فِيْمَا سِوَاهُ
‘‘আমার মসজিদে এক ওয়াক্ত নামায পড়া অন্য মসজিদে হাজার ওয়াক্ত নামাযের চাইতেও উত্তম। তবে শুধু মসজিদে হারাম। কারণ, তাতে এক ওয়াক্ত নামায পড়া অন্য মসজিদে লক্ষ ওয়াক্ত নামাযের চাইতেও উত্তম’’। (ইবনু মাজাহ্, হাদীস ১৪২৭ আহমাদ : ৩/৩৪৩, ৩৯৭)
আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
صَلاَةٌ فِيْ مَسْجِدِيْ أَفْضَلُ مِنْ أَرْبَعِ صَلَوَاتٍ فِيْهِ يَعْنِيْ بَيْتَ الْـمَقْدِسِ وَلَنِعْمَ الْـمُصَلِّيْ هُوَ، وَلَيُوْشِكَنَّ أَنْ يَكُوْنَ لِلرَّجُلِ مِثْلُ شَطَنِ فَرَسِهِ مِنَ الْأَرْضِ حَيْثُ يَرَى مِنْهُ بَيْتَ الْمَقْدِسِ خَيْرٌ لَهُ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا
‘‘আমার মসজিদে এক ওয়াক্ত নামায পড়া বাইতুল মাক্বদিসে চার ওয়াক্ত নামাযের চাইতেও উত্তম। ভাগ্যবান সে মুসল্লী যে বাইতুল মাক্বদিসে নামায পড়েছে। অতি সন্নিকটে সে দিন যে দিন কারোর নিকট তার ঘোড়ার রশি পরিমাণ জায়গা থাকাও অধিক পছন্দনীয় হবে দুনিয়া ও দুনিয়ার সব কিছুর চাইতে। যে জায়গা থেকে সে বাইতুল মাক্বদিস দেখতে পাবে’’। (হাকিম্ : ৪/৫০৯ ইবনু ’আসাকির্ : ১/১৬৩-১৬৪ ত্বাহাবী/মুশকিলুল্ আসার্ : ১/২৪৮)
তবে এ সকল মসজিদে নামায বা যে কোন ইবাদাতে বরকত রয়েছে বলে এ মসজিদগুলোর দেয়াল, পিলার, দরোজা, চৌকাঠ ইত্যাদিতে এমন কোন বরকত নেই যা সেগুলো স্পর্শ করার মাধ্যমে পাওয়া যেতে পারে। কারণ, এ ব্যাপারে শরীয়তের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না।
৪. শরীয়ত স্বীকৃত খাদ্য, পানীয় বা ওষুধ কর্তৃক বরকত গ্রহণ:
শরীয়তের দৃষ্টিতে যে যে খাদ্য, পানীয় বা ওষুধে বরকত রয়েছে যা কোর’আন বা হাদীস কর্তৃক প্রমাণিত তা নিম্নরূপ:
ক. যাইতুনের তেল কর্তৃক বরকত গ্রহণ:
এ তেল সম্পর্কে আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
« يُوْقَدُ مِنْ شَجَرَةٍ مُّبَارَكَةٍ زَيْنُوْنَةٍ لاَ شَرْقِيَّةٍ وَّلاَ غَرْبِيَّةٍ، يَكَادُ زَيْتُهَا يُضِيْءُ وَلَوْ لَمْ تَمْسَسْهُ نَارٌ »
‘‘যা প্রজ্বলিত করা হয় পূত-পবিত্র যাইতুন বৃক্ষের তেল দিয়ে যা প্রাচ্যেরও নয়, প্রতিচ্যেরও নয়। অগ্নি স্পর্শ না করলেও সে তেল যেন উজ্জ্বল আলো দেয়’’। (নূর : ৩৫)
’উমর, আবু উসাইদ্ ও আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
كُلُوْا الزَّيْتَ وَادَّهِنُوْا بِهِ، فَإِنَّهُ مِنْ شَجَرَةٍ مُبَارَكَةٍ
‘‘তোমরা যাইতুনের তেল খাও এবং শরীরে মালিশ করো। কারণ, তা বরকতময় গাছ থেকে সংগৃহীত’’। (তিরমিযী, হাদীস ১৮৫১, ১৮৫২ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩৩৮২ হাকিম্, হাদীস ৩৫০৪, ৩৫০৫ আহমাদ : ৩/৪৯৭)
খ. দুধ পান ও তাতে বরকত কামনা করা:
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
مَنْ أَطْعَمَهُ اللهُ طَعَامًا فَلْيَقُلْ: اللَّهُمَّ! بَارِكْ لَنَا فِيْهِ، وَارْزُقْنَا خَيْرًا مِّنْهُ ؛ وَمَنْ سَقَاهُ اللهُ لَبَنًا، فَلْيَقُلْ: اللَّهُمَّ! بَارِكْ لَنَا فِيْهِ، وَزِدْنَا مِنْهُ ؛ فَإِنِّيْ لاَ أَعْلَمُ مَا يُجْزِئُ مِنَ الطَّعَامِ وَالشَّرَابِ إِلاَّ اللَّبَنَ
‘‘আল্লাহ্ তা’আলা যাকে কোন খাদ্য গ্রহণের সুযোগ দেন সে অবশ্যই বলবে: হে আল্লাহ্! আপনি আমাদের জন্য এতে বরকত দিন এবং আমাদেরকে এর চাইতেও আরো ভালো রিযিক দিন। আর যাকে আল্লাহ্ তা’আলা দুধ পানের সুযোগ দেন সে অবশ্যই বলবে: হে আল্লাহ্! আপনি আমাদের জন্য এতে বরকত দিন এবং আমাদেরকে তা আরো বাড়িয়ে দিন। কারণ, আমি দুধ ছাড়া এমন অন্য কোন বস্ত্ত দেখছিনা যা একইসঙ্গে খাদ্য ও পানীয়ের কাজ করে’’। (ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩৩৮৫)
গ. মধু পান ও তা কর্তৃক উপশম কামনা করা:
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«يَخْرُجُ مِنْ بُطُوْنِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ، فِيْهِ شِفَآءٌ لِّلنَّاسِ »
‘‘ওর (মৌমাছি) উদর থেকে নির্গত হয় বিবিধ বর্ণের পানীয় (মধু); যাতে রয়েছে মানুষের জন্য রোগমুক্তি’’। (নাহল্ : ৬৯)
আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: أَخِيْ يَشْتَكِيْ بَطْنَهُ، فَقَالَ: اسْقِهِ عَسَلاً، ثُمَّ أَتَى الثَّانِيَةَ، فَقَالَ: اسْقِهِ عَسَلاً، ثُمَّ أَتَاهُ الثَّالِثَةَ، فَقَالَ: اسْقِهِ عَسَلاً، ثُمَّ أَتَاهُ فَقَالَ: قَدْ فَعَلْتُ؟ فَقَالَ: صَدَقَ اللهُ، وَكَذَبَ بَطْنُ أَخِيْكَ، اسْقِهِ عَسَلاً، فَسَقَاهُ فَبَرَأَ
‘‘জনৈক ব্যক্তি নবী (সা.) কে বললেন: আমার ভাইয়ের পেটের রোগ (কলেরা) দেখা দিয়েছে। তিনি বললেন: তাকে মধু পান করাও। সে আবারো এসে আপত্তি জানালো। রাসূল (সা.) আবারো বললেন: তাকে মধু পান করাও। সে আবারো এসে আপত্তি জানালে নবী (সা.) আবারো বললেন: তাকে মধু পান করাও। সে আবারো এসে বললো: আমি মধু পান করিয়েছি। কিন্তু কোন ফায়েদা হয়নি। তখন রাসূল (সা.) বললেন: আল্লাহ্ তা’আলা সত্যিই বলেছেন: মধুর মধ্যে রোগের উপশম রয়েছে। তবে তোমার ভাইয়ের পেঠ মিথ্যা বলছে। তাকে আবারো মধু পান করাও। অতঃপর সে আবারো মধু পান করালে তার ভাইয়ের পেটের রোগ ভালো হয়ে যায়’’। (বুখারী, হাদীস ৫৬৮৪, ৫৭১৬ মুসলিম, হাদীস ২২১৭)
ঘ. যমযমের পানি কর্তৃক বরকত গ্রহণ:
এর মধ্যেও প্রচুর বরকত রয়েছে।
আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: যখন রাসূল (সা.) আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, মক্কা নগরীতে এ ত্রিশ দিন পর্যন্ত তোমাকে কে খাইয়েছে? তখন আমি বললাম:
مَا كَانَ لِيْ طَعَامٌ إِلاَّ مَاءُ زَمْزَمَ، فَسَمِنْتُ حَتَّى تَكَسَّرَتْ عُكَنُ بَطْنِيْ، وَمَا أَجِدُ عَلَى كَبِدِيْ سُخْفَةَ جُوْعٍ، قَالَ: إِنَّهَا مُبَارَكَةٌ، إِنَّهَا طَعَامُ طُعْمٍ
‘‘এতোদিন যমযমের পানি ছাড়া কোন খাদ্য আমার নিকট ছিলনা। তবুও আমি মোটা হয়ে গিয়েছি। এমনকি আমার পেটে ভাঁজ পড়ে গেছে এবং আমি খিদের কোন দুর্বলতা অনুভব করছিনে। রাসূল (সা.) বললেন: নিশ্চয়ই যমযমের পানি বরকতময়। নিশ্চয়ই তা খাদ্য বৈ কি?’’ (মুসলিম, হাদীস ২৪৭৩)
অবৈধ বা শির্ক জাতীয় তাবাররুক:
অবৈধ বা শির্ক জাতীয় তাবার্রুক বলতে যে ধরনের ব্যক্তি, বস্ত্ত বা সময়ের মাধ্যমে বরকত কামনা করা ইসলামী শরীয়তে নাজায়িয সে গুলোর মাধ্যমে বরকত কামনা করাকে বুঝানো হয়। তা আবার তিন প্রকার:
১. বরকতের নিয়্যাতে কোন ঐতিহাসিক জায়গা ভ্রমণ বা কোন বস্ত্ত স্পর্শ করণ:
যেমন: বরকতের নিয়্যাতে আরক্বাম্ বিন্ আরক্বাম্ সাহাবীর ঘর, হেরা ও সাউর গিরিগুহা যিয়ারাত এবং কোন কোন মসজিদ বা মাযারের দেয়াল, জানালা, চৌকাঠ বা দরোজা স্পর্শ বা চুমু দেয়া ইত্যাদি। এ সব বিদ্’আত, শির্ক ও না জায়িয কাজ। কারণ, বরকত গ্রহণ একটি ইবাদাত যা অবশ্যই শরীয়ত সম্মত হতে হবে। যদি এগুলোতে কোন বরকত থাকতো তা হলে অবশ্যই রাসূল (সা.) তা নিজ উম্মাতকে জানিয়ে দিতেন এবং সাহাবায়ে কিরামও অবশ্যই এ গুলোতে বরকত কামনা করতেন। কারণ, তাঁরা কোন পুণ্যময় কর্মে আমাদের চাইতে কোনভাবেই পিছিয়ে ছিলেন না। যখন তাঁরা এতে কোন বরকত দেখেননি তাহলে কি করে আমরা সেগুলোতে বরকত কামনা করতে যাবো। তা একেবারেই যুক্তি বহির্ভূত।
রাসূল (সা.) কোন বস্ত্ত কর্তৃক বরকত হাসিলকে মূর্তিপূজার সাথে তুলনা করেছেন।
আবু ওয়াক্বিদ্ লাইসী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
لَـمَّا خَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى حُنَيْنٍ مَرَّ بِشَجَرَةٍ لِلْمُشْرِكِيْنَ ـ يُقَالُ لَهَا ذَاتُ أَنْوَاطٍ ـ يُعَلِّقُوْنَ عَلَيْهَا أَسْلِحَتَهُمْ، فَقَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! اِجْعَلْ لَنَا ذَاتَ أَنْوَاطٍ كَمَا لَـهُمْ ذَاتُ أَنْوَاطٍ، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: سُبْحَانَ اللهِ! هَذَا كَمَا قَالَ قَوْمُ مُوْسَى: « اِجْعَلْ لَنَا إِلَـهًا كَمَا لَـهُمْ آلِهَةٌ! » وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَتَرْكَبُنَّ سُنَّةَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ
‘‘রাসূল (সা.) যখন ’হুনাইন্ অভিমুখে রওয়ানা করলেন তখন পথিমধ্যে তিনি মুশরিকদের ‘‘যাতু আন্ওয়াত’’ নামক একটি গাছের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। যার উপর তারা যুদ্ধের অস্ত্রসমূহ বরকতের আশায় টাঙ্গিয়ে রাখতো। তখন সাহাবারা বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আপনি আমাদের জন্যও একটি গাছ ঠিক করে দিন যেমনিভাবে মুশরিকদের জন্য একটি গাছ রয়েছে। নবী (সা.) বললেন: আশ্চর্য! তোমরা সে দাবিই করছো যা মূসা (আ.) এর সম্প্রদায় তাঁর নিকট করেছিলো। তারা বলেছিলো: হে মূসা! আপনি আমাদের জন্যও একটি মূর্তি বা মা’বূদ ঠিক করে দিন যেমনিভাবে অন্যদের অনেকগুলো মূর্তি বা মা’বূদ রয়েছে। (আ’রাফ : ১৩৮)
রাসূল (সা.) বললেন: ঐ সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার জীবন। তোমরা নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্ববর্তীদের হুবহু অনুসারী হবে। (তিরমিযী, হাদীস ২১৮০ ’হুমাইদী, হাদীস ৮৪৮ ত্বায়ালিসী, হাদীস ১৩৪৬ আব্দুর্ রায্যাক্ব, হাদীস ২০৭৬৩ ইবনু হিববান্/মাওয়ারিদ্, হাদীস ১৮৩৫ ত্বাবারানী/কাবীর, হাদীস ৩২৯০, ৩২৯৪)
২. শরীয়ত অসম্মত কোন সময় কর্তৃক বরকত কামনা করণ:
যেমন: নবী (সা.) এর জন্ম দিন, মি’রাজের রাত্রি এবং হিজরত, বদর যুদ্ধ ইত্যাদির দিনকে বরকতময় মনে করা।
যদি এ সময় গুলোতে কোন বরকত থাকতো তা হলে রাসূল (সা.) অবশ্যই তা নিজ উম্মাতকে শিখিয়ে যেতেন এবং সাহাবায়ে কিরামও তা অবশ্যই পালন করতেন। যখন তাঁরা তা করেননি তা হলে বুঝা গেলো এতে কোন বরকত নেই। বরং তা কর্তৃক বরকত গ্রহণ বিদ্’আত ও শির্ক।
৩. কোন বুযুর্গ ব্যক্তি বা তদীয় নিদর্শনসমূহ কর্তৃক বরকত গ্রহণ:
ইতিপূর্বে দলীল-প্রমাণসহ উল্লেখ করা হয়েছে যে, মানুষের মধ্যে শুধুমাত্র রাসূল (সা.) এবং তাঁর শরীর থেকে নির্গত ঘাম, কফ, থুতু ইত্যাদি এবং তাঁর চুল ও ব্যবহৃত পোশাক পরিচ্ছদ, থালা বাসন ইত্যাদিতে আল্লাহ্ তা’আলা বিশেষভাবে এমন কিছু বরকত রেখেছেন যা তিনি অন্য কোথাও রাখেননি।
কেউ কেউ ভাবতে পারেন যে, রাসূল (সা.) ও তদীয় নিদর্শনসমূহ কর্তৃক যখন বরকত হাসিল করা জায়িয তখন অবশ্যই ওলী-বুযুর্গ ও তদীয় নিদর্শনসমূহ কর্তৃক বরকত হাসিল করাও জায়িয হতে হবে। কারণ, তাঁরা নবীর ওয়ারিশ।
উত্তরে বলতে হবে যে, প্রবাদে বলে: কোথায় আব্দুল আর কোথায় খালকূল। কোথায় রাসূল (সা.) আর কোথায় আমাদের ধারণাকৃত বুযুর্গরা। আর যদি উভয়ের মধ্যে তুলনা করা সম্ভবই হতো তাহলে সাধারণ সাহাবায়ে কিরাম অবশ্যই আবু বকর, ’উমর, ’উস্মান, ’আলী ও জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবায়ে কিরাম এর সত্তা ও নিদর্শনাবলী কর্তৃক বরকত হাসিল করতেন। যখন তাঁরা তা করতে যাননি। তাহলে বুঝা যায়, এ রকম তুলনা করা সত্যিই বোকামো।
অন্য দিকে আমরা কাউকে নিশ্চিতভাবে ওলী বা বুযুর্গ বলে ধারণা করতে পারি না। কারণ, বুযুর্গী বলতে সত্যিকারার্থে অন্তরের বুযুর্গীকেই বুঝানো হয়। আর এ ব্যাপারে কোর’আন ও হাদীসের মাধ্যম ছাড়া কেউ কারোর ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারে না। শুধু আমরা কারোর সম্পর্কে এতটুকুই বলতে পারি যে, মনে হয় তিনি একজন আল্লাহ্’র ওলী। সুতরাং তাঁর ভালো পরিসমাপ্তির আশা করা যায়। নিশ্চয়তা নয়। এমনো তো হতে পারে যে, আমরা জনৈক কে বুযুর্গ মনে করছি। অথচ সে মৃত্যুর সময় ঈমান নিয়ে মরতে পারেনি।
আরেকটি বিশেষ কথা এই যে, আমাদের ধারণাকৃত কোন বুযুর্গের সাথে বরকত নেয়ার আচরণ দেখানো হলে তাতে তাঁর উপকার না হয়ে বেশিরভাগ অপকারই হবে। কারণ, এতে করে তাঁর মধ্যে গর্ব, আত্মম্ভরিতা ও নিজকে সর্বশ্রেষ্ঠ ভাবার রোগ জন্ম নেয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। আর তা কারোর সম্মুখবর্তী প্রশংসারই শামিল যা শরীয়তে নিষিদ্ধ।
যাদুর শির্ক বলতে এমন কতোগুলো মন্ত্র বা অবোধগম্য শব্দসমষ্টিকে বুঝানো হয় যা যাদুকর নিজ মুখ দিয়ে উচ্চারণ করে থাকে। আবার কখনো কখনো বিভিন্ন ওষুধ, সুতায় গিরা বা ধুনা দিয়েও যাদু করা হয়।
এগুলো সব শয়তানের কাজ। তবে আল্লাহ্ তা’আলার ইচ্ছায় কখনো কখনো তা কারো কারোর অন্তরে বা শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। যদ্দরুন কেউ কেউ কখনো কখনো অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং কারো কারোকে এরই মাধ্যমে হত্যা করা হয়। আবার কখনো কখনো এরই কারণে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব-কলহ সৃষ্টি হয়। আরো কতো কি।
সর্ব সাকুল্য দু’টি কারণেই যাদু শির্কের অন্তর্ভুক্ত। কারণ দু’টি নিম্নরূপ:
১. এগুলো করতে গেলে জিনদের সহযোগিতা নেয়ার জন্য তাদের নামে মানত বা কোরবানি দিতে হয়। কিংবা যে কোনভাবে তাদের নৈকট্য লাভ করতে হয়। যা শির্কের অন্তর্গত।
২. জাদুকররা ইল্মুল্ গাইবের দাবি করে থাকে। তাও একটি মারাত্মক শির্ক বৈ কি?
উক্ত কারণেই রাসূল (সা.) যাদুর ব্যাপারটিকে শির্কের পাশাপাশি উল্লেখ করেছেন।
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
اِجْتَنِبُوْا السَّبْعَ الْـمُوْبِقَاتِ، قَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَمَا هُنَّ؟ قَالَ: الشِّرْكُ بِاللهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْـحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيْمِ، وَالتَّوَلِّيْ يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ الْـمُحْصَنَاتِ الْـمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلاَتِ
‘‘তোমরা সর্বনাশা সাতটি গুনাহ্ থেকে বিরত থাকো। সাহাবারা বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল! ওগুলো কি? তিনি বললেন: আল্লাহ্ তা’আলার সাথে কাউকে অংশীদার করা, যাদুর আদান-প্রদান, অবৈধভাবে কাউকে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, ইয়াতীম-অনাথের সম্পদ ভক্ষণ, সম্মুখযুদ্ধ থেকে পলায়ন ও সতী-সাধ্বী মু’মিন মহিলাদের ব্যাপারে কুৎসা রটানো’’। (বুখারী, হাদীস ২৭৬৬, ৬৮৫৭ মুসলিম, হাদীস ৮৯)
যাদু বাস্তবিকপক্ষে একটি মহা ক্ষতিকর বস্ত্ত। যা বিশ্বাস না করে কোন উপায় নেই। তবে আল্লাহ্ তা’আলার একান্ত ইচ্ছা ছাড়া তা এককভাবে কারোর কোন ক্ষতি করতে পারে না।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) কেও যাদু করা হয়েছে এবং তা আল্লাহ্ তা’আলার একান্ত ইচ্ছায় তাঁর প্রচুর ক্ষতি সাধন করেছে।
’আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
سُحِرَ النَّبِيُّ حَتَّى كَانَ يُخَيَّلُ إِلَيْهِ أَنَّهُ يَفْعَلُ الشَّيْءَ وَمَا يَفْعَلُهُ، حَتَّى كَانَ ذَاتَ يَوْمٍ دَعَا وَدَعَا، ثُمَّ قَالَ: أَشَعَرْتِ أَنَّ اللهَ أَفْتَانِيْ فِيْمَا فِيْهِ شِفَائِيْ، أَتَانِيْ رَجُلاَنِ فَقَعَدَ أَحَدُهُمَا عِنْدَ رَأْسِيْ وَالْآخَرُ عِنْدَ رِجْلَيَّ، فَقَالَ أَحَدُهُمَا لِلْآخَرِ: مَا وَجَعُ الرَّجُلِ؟ قَالَ: مَطْبُوْبٌ، قَالَ: وَمَنْ طَبَّهُ؟ قَالَ: لَبِيْدُ بْنُ الْأَعْصَمِ، قَالَ: فِيْمَا ذَا؟ قَالَ: فِيْ مُشْطٍ وَمُشَاطَةٍ فِيْ جُفِّ طَلْعَةِ ذَكَرٍ، قَالَ: فَأَيْنَ هُوَ؟ قَالَ: فِيْ بِئْـرِ ذَرْوَانَ، فَخَرَجَ إِلَيْهَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ رَجَعَ، فَقَالَ لِعَائِشَةَ حِيْنَ رَجَعَ: نَخْلُهَا كَأَنَّهُ رُؤُوْسُ الشَّيَاطِيْنَ، فَقُلْتُ: اسْتَخْرَجْتَهُ؟ فَقَالَ: لاَ، أَمَّا أَنَا فَقَدْ شَفَانِيَ اللهُ، وَخَشِيْتُ أَنْ يُثِيْرَ ذَلِكَ عَلَى النَّاسِ شَرًّا، ثُمَّ دُفِنَتِ الْبِئْرُ
‘‘নবী (সা.) কে যাদু করা হয়েছে। তখন এমন মনে হতো যে, তিনি কোন একটি কাজ করেছেন অথচ তিনি সে কাজটি আদৌ করেননি। একদা তিনি এ ব্যাপারে আল্লাহ্ তা’আলার নিকট করুণ প্রার্থনা করেন। অতঃপর তিনি আমাকে বললেন: তুমি জানো কি? আল্লাহ্ তা’আলা আমার চিকিৎসা বাতলে দিয়েছেন। আমার নিকট দু’জন ফিরিশ্তা আসলেন। তম্মধ্যে এক জন আমার মাথার নিকট আর অপর জন আমার পায়ের নিকট বসলেন। অতঃপর একে অপরকে জিজ্ঞাসা করলেন: লোকটির সমস্যা কি? অপর জন বললেন: তাঁকে যাদু করা হয়েছে। আবারো প্রথম জন জিজ্ঞাসা করলেন: কে যাদু করেছে? অপর জন বললেন: লাবীদ বিন্ আ’সাম্। আবারো প্রথম জন জিজ্ঞাসা করলেন: কি জিনিস দিয়ে সে যাদু করলো? অপর জন বললেন: চিরুনি, দাড়ি বা কেশ দিয়ে। যা রাখা হয়েছে নর খেজুরের মুকুলের আবরণে। আবারো প্রথম জন জিজ্ঞাসা করলেন: তা কোথায় ফেলানো হয়েছে? অপর জন বললেন: যার্ওয়ান কূপে। অতঃপর রাসূল (সা.) সে কুয়ায় গিয়ে পুনরায় ফিরে এসে ’আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) কে বললেন: কুয়ো পাশের খেজুর গাছ গুলোকে শয়তানের মাথার ন্যায় মনে হয়। ’আয়েশা জিজ্ঞাসা করলেন: জিনিস গুলো উঠিয়ে ফেলেননি? রাসূল (সা.) বললেন: না, আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে সুস্থ করে দিয়েছেন। তবে আমার ভয় হয়, ব্যাপারটি ভবিষ্যতে ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। অতঃপর কুয়োটি ভরাট করে দেয়া হয়’’। (বুখারী, হাদীস ৩১৭৫, ৩২৬৮, ৫৭৬৩, ৫৭৬৫, ৫৭৬৬, ৬০৬৩, ৬৩৯১ মুসলিম, হাদীস ২১৮৯)
যাদু কুফরও বটে। তেমনিভাবে তা ক্ষতিকরও। তবে তা আল্লাহ্ তা’আলার একান্ত ইচ্ছা ছাড়া কারোর কোন ক্ষতি সাধন করতে পারে না।
আল্লাহ তা’আলা বলেন:
«وَاتَّبَعُوْا مَا تَتْلُوْا الشَّيَاطِيْنُ عَلَى مُلْكِ سُلَيْمَانَ، وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَاْنُ وَلَكِنَّ الشَّيَاْطِيْنَ كَفَرُوْا يُعَلِّمُوْنَ النَّاْسَ السِّحْرَ وَمَا أُنْزَلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَاْبِلَ هَاْرُوْتَ وَمَاْرُوْتَ، وَمَا يُعَلِّمَاْنِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّى يَقُوْلاَ إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلاَ تَكْفُرْ، فَيَتَعَلَّمُوْنَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُوْنَ بِهِ بَيْنَ الْـمَرْءِ وَزَوْجِهِ، وَمَا هُمْ بِضَآرِّيْنَ بِهِ مِنْ أَحَدٍ إِلاَّ بِإِذْنِ اللهِ، وَيَتَعَلَّمُوْنَ مَا يَضُرُّهُـمْ وَلاَ يَنْفَعُهُمْ، وَلَقَدْ عَلِمُوْا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِيْ الْآخِرَةِ مِنْ خَلاَقٍ، وَلَبِئْسَ مَا شَرَوْا بِهِ أَنْفُسَهُمْ لَوْ كَانُوْا يَعْلَمُوْنَ »
‘‘সুলাইমান (আ.) এর রাজত্বকালে শয়তানরা যাদুকরদেরকে যা শেখাতো ইহুদীরা তারই অনুসরণ করেছে। সুলাইমান (আ.) কখনো কুফুরি করেননি। বরং শয়তানরাই কুফুরি করেছে, তারা লোকদেরকে যাদু শেখাতো বাবেল শহরে বিশেষ করে হারূত-মারূত ব্যক্তিদ্বয়কে। (জিবরীল ও মীকাঈল) ফিরিশতাদ্বয়ের উপর কোন যাদু অবতীর্ণ করা হয়নি (যা ইহুদিরা ধারণা করতো)। তবে উক্ত ব্যক্তিদ্বয় কাউকে যাদু শিক্ষা দিতো না যতক্ষণ না তারা বলতো: আমরা পরীক্ষাসরূপ মাত্র। অতএব তোমরা (যাদু শিখে) কুফরী করো না। এতদ্সত্ত্বেও তারা ব্যক্তিদ্বয় থেকে তাই শিখতো যা দিয়ে তারা স্বামী স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাতো। তবে তারা আল্লাহ্ তা’আলার ইচ্ছা ছাড়া তা কর্তৃক কারোর ক্ষতি করতে পারতো না। তারা তাই শিখেছে যা তাদের একমাত্র ক্ষতিই সাধন করবে। সামান্যটুকুও উপকার করতে পারবে না। তারা নিশ্চিতভাবেই জানে যে, যে ব্যক্তি যাদু শিখেছে তার জন্য পরকালে কিছুই নেই। তারা যে যাদু ও কুফরীর বিনিময়ে নিজ সত্তাকে বিক্রি করে দিয়েছে তা সত্যিই নিকৃষ্ট, যদি তারা তা জানতো’’। (সূরা বাকারাহ : ১০২)
যাদুকরের শাস্তি হচ্ছে, কারো ব্যাপারে তা সত্যিকারভাবে প্রমাণিত হলে তাকে হত্যা করা। এ ব্যাপারে সাহাবাদের মধ্যে কোন মতানৈক্য নেই।
জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
حَدُّ السَّاْحِرِ ضَرْبَةٌ بِالسَّيْفِ
‘‘যাদুকরের শাস্তি তলোয়ারের কোপ তথা শিরশ্ছেদ’’। (তিরমিযী, হাদীস ১৪৬০)
জুনদুব (রা.) শুধু এ কথা বলেই ক্ষান্ত হননি। বরং তিনি তা বাস্তবে কার্যকরী করেও দেখিয়েছেন।
আবু ’উসমান নাহ্দী (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
كَانَ عِنْدَ الْوَلِيْدِ رَجُلٌ يَلْعَبُ، فَذَبَحَ إِنْسَانًا وَأَبَانَ رَأْسَهُ، فَعَجِبْنَا فَأَعَادَ رَأْسَهُ، فَجَاءَ جُنْدُبٌ الْأَزْدِيْ فَقَتَلَهُ
‘‘ইরাকে ওয়ালীদ্ বিন্ ’উক্ববার সম্মুখে জনৈক ব্যক্তি খেলা দেখাচ্ছিলো। সে আরেক ব্যক্তির মাথা কেটে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললো। এতে আমরা খুব বিস্মিত হলে লোকটি কর্তিত মাথা খানি যথাস্থানে ফিরিয়ে দিলো। ইতিমধ্যে হযরত জুনদুব (রা.) এসে তাকে হত্যা করলেন’’। (বুখারী/আততা’রীখুল্ কাবীর : ২/২২২ বায়হাক্বী : ৮/১৩৬)
তেমনিভাবে উম্মুল্ মু’মিনীন ’হাফ্সা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) ও নিজ ক্রীতদাসীকে জাদুকর প্রমাণিত হওয়ার পর হত্যা করে।
’আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
سَحَرَتْ حَفْصَةَ بِنْتَ عُمَرَ ـ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا ـ جَارِيَةٌ لَهَا، فَأَقَرَّتْ بِالسِّحْرِ وَأَخْرَجَتْهُ، فَقَتَلَتْهَا، فَبَلَغَ ذَلِكَ عُثْمَانَ فَغَضِبَ، فَأَتَاهُ اِبْنُ عُمَرَ ـ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا ـ فَقَالَ: جَارِيَتُهَا سَحَرَتْهَا، أَقَرَّتْ بِالسِّحْرِ وَأَخْرَجَتْهُ، قَالَ: فَكَفَّ عُثْمَانُ قَالَ الرَّاوِيْ: وَكَأَنَّهُ إِنَّمَا كَانَ غَضَبُهُ لِقَتْلِهَا إِيَّاهَا بِغَيْرِ أَمْرِهِ
‘‘’হাফ্সা বিন্ত ’উমর (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) কে তাঁর এক ক্রীতদাসী যাদু করে। এমনকি সে এ ব্যাপারটি স্বীকার করে এবং যাদুর বস্ত্তটি উঠিয়ে ফেলে দেয়। এতদ্ কারণে ’হাফ্সা ক্রীতদাসীকে হত্যা করে। সংবাদটি ’উসমান (রা.) এর নিকট পৌঁছুলে তিনি রাগান্বিত হন। অতঃপর আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) তাঁকে ব্যাপারটি বুঝিয়ে বললে তিনি এ ব্যাপারে চুপ হয়ে যান তথা তাঁর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। বর্ণনাকারী বলেন: ’উসমান (রা.) এর অনুমতি না নিয়ে ক্রীতদাসীকে হত্যা করার কারণেই তিনি রাগান্বিত হন’’। (’আব্দুর রায্যাক, হাদীস ১৮৭৪৭ বায়হাক্বী : ৮/১৩৬)
অনুরূপভাবে ’উমর (রা.) ও তাঁর খিলাফতকালে সকল যাদুকর পুরুষ ও মহিলাকে হত্যা করার আদেশ জারি করেন।
বাজালা (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
كَتَبَ عُمَرُ بْنُ الْـخَطَّابِ أَنِ اقْتُلُوْا كُلَّ سَاحِرٍ وَسَاحِرَةٍ، قَالَ الرَّاوِيْ: فَقَتَلْنَا ثَلاَثَ سَوَاحِرَ
‘‘’উমর (রা.) নিজ খিলাফতকালে এ আদেশ জারি করে চিঠি পাঠান যে, তোমরা সকল যাদুকর পুরুষ ও মহিলাকে হত্যা করো। বর্ণনাকারী বলেনঃ অতঃপর আমরা তিনজন মহিলা যাদুকরকে হত্যা করি’’।
(আবু দাউদ, হাদীস ৩০৪৩ বায়হাকী : ৮/১৩৬ ইবনু আবী শাইবাহ্, হাদীস ২৮৯৮২, ৩২৬৫২ আব্দুর রায্যাক, হাদীস ৯৯৭২ আহমাদ, হাদীস ১৬৫৭ আবু ইয়া’লা, হাদীস ৮৬০, ৮৬১)
’উমর (রা.) এর খিলাফতকালে উক্ত আদেশের ব্যাপারে কেউ কোন বিরোধিতা দেখাননি বিধায় উক্ত ব্যাপারে সবার ঐকমত্য রয়েছে বলে প্রমাণ করে।
যাদুকর কখনো সফলকাম হতে পারে না। দুনিয়াতেও নয়। আখিরাতেও নয়।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
« وَلاَ يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَى »
‘‘যাদুকর কোথাও সফলকাম হতে পারে না’’। (ত্বা-হা : ৬৯)
যাদুগ্রস্ত ব্যক্তির চিকিৎসা:
যাদুগ্রস্ত ব্যক্তির চিকিৎসা দু’ ধরনের:
১. যাদুগ্রস্ত হওয়ার আগে। তা হচ্ছে রক্ষামূলক। আর তা হবে শরীয়ত সম্মত দো’আ ও যিকিরের মাধ্যমে। যেমন: সকাল-সন্ধ্যা ও প্রতি ফরয নামাযের পর আয়াতুল কুর্সী এক বার এবং সূরা ইখলাস, ফালাক্ব ও নাস তিন তিন বার পাঠ করা। প্রতি রাতে শোয়ার সময় সূরা বাক্বারাহ্’র শেষ দু’ আয়াত পাঠ করা এবং বেশি বেশি আল্লাহ্’র যিকির ও নিম্নোক্ত দো’আ দু’টো পাঠ করা।
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
بِسْمِ اللهِ الَّذِيْ لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِيْ الْأَرْضِ وَلاَ فِيْ السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
২. যাদুগ্রস্ত হওয়ার পর। আর তা হচ্ছে, প্রথমতঃ আল্লাহ্ তা’আলার নিকট এ রোগ উপশমের জন্য সবিনয়ে আকুতি জানাতে হবে। দ্বিতীয়তঃ শরীয়ত সম্মত দো’আ ও যিকিরের আশ্রয় নিতে হবে। আর তা হচ্ছে নিম্নরূপ:
# সূরা ফাতিহা, কা’ফিরূন্, ইখ্লাস্, ফালাক্ব, নাস্ ও আয়াতুল্ কুরসী পাঠ করবে।
# নিম্নোক্ত যাদুর আয়াতসমূহ পাঠ করবে।
« وَأَوْحَيْنَا إِلَى مُوْسَى أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ، فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُوْنَ، فَوَقَعَ الْـحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ، فَغُلِبُوْا هُنَالِكَ وَانْقَلَبُوْا صَاغِـرِيْنَ، وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِيْنَ، قَالُوْا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ، رَبِّ مُوْسَى وَهَارُوْنَ »
(আ’রাফ : ১১৭-১২২)
« وَقَالَ فِرْعَوْنُ ائْتُوْنِيْ بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيْمٍ، فَلَمَّا جَآءَ السَّحَرَةُ قَالَ لَـهُمْ مُوْسَى أَلْقُوْا مَا أَنْتُمْ مُلْقُوْنَ، فَلَمَّا أَلْقَوْا ؛ قَالَ مُوْسَى: مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُ، إِنَّ اللهَ سَيُبْطِلُهُ، إِنَّ اللهَ لاَ يُصْلِحُ عَمَلَ الْـمُفْسِدِيْنَ، وَيُحِقُّ اللهُ الْـحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ، وَلَوْ كَرِهَ الْـمُجْرِمُوْنَ »
(ইউনুস্ : ৭৯-৮২)
« قَالُوْا يَا مُوْسَى إِمَّا أَنْ تُلْقِيَ وَإِمَّا أَنْ نَكُوْنَ أَوَّلَ مَنْ أَلْقَى، قَالَ بَلْ أَلْقُوْا فَإِذَا حِبَالُـهُمْ وَعِصِيُّهُمْ يُخَيُّلُ إِلَيْهِ مِنْ سِحْرِهِمْ أَنَّهَا تَسْعَى، فَأَوْجَسَ فِيْ نَفْسِهِ خِيْفَةً مُوْسَى، قُلْنَا لاَ تَخَفْ إِنَّكَ أَنْتَ الْأَعْلَى، وَأَلْقِ مَا فِيْ يَمِيْنِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوْا، إِنَّمَا صَنَعُوْا كَيْدُ سَاحِرٍ، وَلاَ يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَى » (ত্বা-হা : ৬৫-৬৯)
« قَالُوْا أَرْجِهْ وَأَخَاهُ وَابْعَثْ فِيْ الْـمَدآيِنِ حَاشِرِيْنَ، يَأْتُوْكَ بِكُلِّ سَحَّارٍ عَلِيْمٍ، فَجُمِعَ السَّحَرَةُ لِـمِيْقَاتِ يَوْمٍ مَعْلُوْمٍ، وَقِيْلَ لِلنَّاسِ هَلْ أَنْتُمْ مُجْتَمِعُوْنَ، لَعَلَّنَا نَتَّبِعُ السَّحَرَةَ إِنْ كَانُوْا هُمُ الْغَالِبِيْنَ، فَلَمَّا جَآءَ السَّحَرَةُ قَالُوْا لِفِرْعَوْنَ أَئِنَّ لَنَا لَأَجْرًا إِنْ كُنَّا نَحْنُ الْغَالِبِيْنَ، قَالَ نَعَمْ وَإِنَّكُمْ إِذًا لَمِنَ الْـمُقَرَّبِيْنَ، قَالَ لَـهُمْ مُوْسَى أَلْقُوْا مَا أَنْتُمْ مُلْقُوْنَ، فَأَلْقَوْا حِبَالَـهُمْ وَعِصِيَّهُمْ وَقَالُوْا بِعِزَّةِ فِرْعَوْنَ إِنَّا لَنَحْنُ الْغَالِبُوْنَ، فَأَلْقَى مُوْسَى عَصَاهُ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُوْنَ، فَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِيْنَ، قَالُوْا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ» (শু’আরা : ৩৬-৪৭)
# নিম্নোক্ত শিফার আয়াত ও দো’আসমূহ পাঠ করবে।
« يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَتْكُمْ مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَشِفَآءٌ لـِمَا فِيْ الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِيْنَ » (ইউনুস্ : ৫৭)
«وَلَوْ جَعَلْنَاهُ قُرْآنًا أَعْجَمِيًّا لَقَالُوْا لَوْلاَ فُصِّلَتْ آيَاتُهُ، أَأَعْجَمِيٌّ وَعَرَبِيٌّ، قُلْ هُوَ لِلَّذِيْنَ آمَنُوْا هُدًى وَشِفَآءٌ، وَالَّذِيْنَ لاَ يُؤْمِنُوْنَ فِيْ آذَانِهِمْ وَقْرٌ وَهُوَ عَلَيْهِمْ عَمًى، أُوْلآئِكَ يُنَادَوْنَ مِنْ مَّكَانٍ بَعِيْدٍ » (হা-মীম আসসাজদাহ্ : ৪৪)
اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبِ الْبَأْسَ، وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِيْ لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
بِسْمِ اللهِ أَرْقِيْكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيْكَ، وَمِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللهُ يَشْفِيْكَ، بِسْمِ اللهِ أَرْقِيْكَ
যাদুর সর্বোত্তম চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে এই যে, যাদু কর্মটি কোথায় বা কি দিয়ে করা হয়েছে তা ভালোভাবে জেনে সে বস্ত্তটি সমূলে বিনষ্ট করে দেয়া।
অপর দিকে যাদুর চিকিৎসা যাদু দিয়ে করা যা আরবী ভাষায় নুশরাহ্ নামে পরিচিত তা সম্পূর্ণরূপে হারাম। কারণ, তা শয়তানের কাজ।
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) কে নুশ্রাহ্ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন:
هُوَ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ
‘‘তা (নুশরাহ্) শয়তানি কর্মসমূহের অন্নতম’’।
(আবু দাউদ, হাদীস ৩৮৬৮ আহমাদ : ৩/২৯৪ আব্দুর রাযযাক্ব : ১১/১৩)
শরীয়তের দৃষ্টিতে যাদুকরের নিকট যাওয়াই হারাম। বরং তা কুফরিও বটে। চাই তা চিকিৎসা গ্রহণের জন্যই হোক অথবা যে কোন উদ্দেশ্যেই হোকনা কেন।
’আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাসঊদ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
مَنْ أَتَى كَاهِنًا أَوْ سَاحِرًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُوْلُ فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم
‘‘যে ব্যক্তি কোন গণক বা যাদুকরের নিকট গেলো এবং তার কথা বিশ্বাস করলো তৎক্ষণাৎ সে কাফির হয়ে গেলো’’। (ত্বাবারানী/কাবীর খন্ড ১০ হাদীস ১০০০৫)
’ইমরান বিন্ ’হুসাইন ও ’আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَطَيَّرَ أَوْ تُطُيِّرَ لَهُ، أَوْ تَكَهَّنَ أَوْ تُكُهِّنَ لَهُ، أَوْ سَحَرَ أَوْ سُحِرَ لَهُ
‘‘যে ব্যক্তি কোন কর্ম যাত্রার অশুভতা নির্ণয় করে অথবা যার জন্য তা করা হয় এবং যে ব্যক্তি ভবিষ্যদ্বাণী করে অথবা যার জন্য তা করা হয়। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি যাদু করে অথবা যার জন্য তা করা হয় এ সকল ব্যক্তি আমার উম্মত নয়’’। (বায্যার : ৩০৪৩, ৩০৪৪)
গণনার শির্ক বলতে যে কোন পন্থায় বা যে কোন বিষয়ে আগাম ভবিষ্যদ্বাণী করাকে বুঝানো হয়।
এর মূল হচ্ছে ঐশী বাণী চুরি। অর্থাৎ জিনরা কখনো কখনো ফিরিশ্তাদের কথা চুরি করে গণকদের কানে পৌঁছিয়ে দেয়। অতঃপর গণকরা এর সাথে আরো শত শত মিথ্যা কথা জুড়িয়ে মানুষকে বলে বেড়ায়। তাই তাদের কথা কখনো কখনো সত্য প্রমাণিত হয়।
’আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
سَأَلَ أُنَاسٌ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم عَنِ الْكُهَّانِ، فَقَالَ: إِنَّهُمْ لَيْسُوْا بِشَيْءٍ، فَقَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! فَإِنَّهُمْ يُحَدِّثُوْنَ بِالشَّيْءِ يَكُوْنُ حَقًّا؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: تِلْكَ الْكَلِمَةُ مِنَ الْـحَقِّ، يَخْطَفُهَا الْـجِنِّيُّ، فَيُقَرْقِرُهَا فِيْ أُذُنِ وَلِيِّهِ كَقَرْقَرَةِ الدَّجَاجَةِ، فَيَخْلِطُوْنَ فِيْهِ أَكْثَرَ مِنْ مِئَةِ كَذْبَةٍ
‘‘সাহাবায়ে কিরাম নবী (সা.) কে গণকদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন: তারা কিছুই নয়। তখন সাহাবারা বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল! তারা কখনো কখনো সত্য কথা বলে থাকে। তখন তিনি বললেন: সে সত্য কথাটি ঐশী বাণী। জিনরা ফিরিশ্তাদের মুখ থেকে তা ছোঁ মেরে নিয়ে মুরগির করকর ধ্বনির ন্যায় তাদের ভক্তদের কানে পৌঁছিয়ে দেয়। অতঃপর তারা এর সাথে আরো শত শত মিথ্যা কথা জুড়িয়ে দেয়।
(বুখারী, হাদীস ৫৭৬২, ৬২১৩, ৭৫৬১ মুসলিম, হাদীস ২২২৮ বাগাওয়ী, হাদীস ৩২৫৮ আব্দুর রায্যাক, হাদীস ২০৩৪৭ বায়হাক্বী : ৮/১৩৮ আহমাদ : ৬/৮৭)
গণনা বা ভবিষ্যদ্বাণী করা দু’টি কারণেই শির্কের অন্তর্ভুক্ত। কারণ দু’টি নিম্নরূপ:
১. এগুলো করতে গেলে জিনদের সহযোগিতা নেয়ার জন্য তাদের নামে মানত বা কোরবানি দিতে হয় কিংবা যে কোন ভাবে তাদের নৈকট্য লাভ করতে হয়। যা শির্কের অন্তর্গত।
২. গণকরা ইল্মুল্ গায়েবের দাবি করে থাকে। তাও একটি মারাত্মক শির্ক বৈ কি?
গণকের নিকট যাওয়াই শরীয়ত বিরোধী তথা হারাম কাজ। বরং কুফরিও বটে।
মু’আবিয়া বিন্ ’হাকাম (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
قُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! إِنِّيْ حَدِيْثُ عَهْدٍ بِجَاهِلِيَّةٍ، وَقَدْ جَاءَ اللهُ بِالْإِسْلاَمِ، وَإِنَّ مِنَّا رِجَالًا يَأْتُوْنَ الْكُهَّانَ، قَالَ: فَلاَ تَأْتِهِمْ
‘‘আমি বললাম: হে আল্লাহ্’র রাসূল! বেশি দিন হয়নি আমি বরবর ছিলাম। অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে মুসলমান হওয়ার তাওফীক দিয়েছেন। আর এ দিকে আমাদের অনেকেই গণকদের নিকট আসা যাওয়া করে। তাদের নিকট যেতে কোন অসুবিধে আছে কি? তখন রাসূল (সা.) বললেন: তাদের নিকট কখনো যেও না।
(মুসলিম, হাদীস ৫৩৭ আবু দাউদ, হাদীস ৯৩০, ৩৯০৯ ইবনু হিববান/ইহ্সান, হাদীস ২২৪৪, ২২৪৫ নাসায়ী : ৩/১৪-১৬ বায়হাক্বী : ২/২৪৯-২৫০ ইবনু আবী শাইবাহ্ : ৮/৩৩ আহমাদ : ৫/৪৪৭)
’আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাসঊদ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
مَنْ أَتَى كَاهِنًا أَوْ سَاحِرًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُوْلُ فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم
‘‘যে ব্যক্তি কোন গণক বা যাদুকরের নিকট গেলো এবং তার কথা বিশ্বাস করলো তখনই সে মুহাম্মাদ (সা.) এর প্রতি অবতীর্ণ বিধান তথা কুর’আন মাজীদকে অস্বীকার করলো অর্থাৎ কাফির হয়ে গেলো’’। (ত্বাবারানী/কাবীর খন্ড ১০ হাদীস ১০০০৫)
’ইম্রান বিন্ ’হুসাইন ও ’আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَطَيَّرَ أَوْ تُطُيِّرَ لَهُ، أَوْ تَكَهَّنَ أَوْ تُكُهِّنَ لَهُ، أَوْ سَحَرَ أَوْ سُحِرَ لَهُ
‘‘যে ব্যক্তি কোন কর্ম যাত্রার অশুভতা নির্ণয় করে অথবা যার জন্য তা করা হয় এবং যে ব্যক্তি আগাম ভবিষ্যদ্বাণী করে অথবা যার জন্য তা করা হয়। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি যাদু করে অথবা যার জন্য তা করা হয় এ সকল ব্যক্তি আমার উম্মত নয়’’। (বায্যার, হাদীস ৩০৪৩, ৩০৪৪)
গণককে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করলে জিজ্ঞাসাকারীর চল্লিশ দিনের নামায বিনষ্ট হয়ে যায়।
’হাফসা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:
مَنْ أَتَى عَرَّافًا فَسَأَلَهُ عَنْ شَيْءٍ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةُ أَرْبَعِيْنَ لَيْلَةً
‘‘যে ব্যক্তি কোন গণকের নিকট গেলো এবং তাকে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করলো তাতে করে তার চল্লিশ দিনের নামায কবুল করা হবেনা’’। (মুসলিম, হাদীস ২২৩০)
অপর দিকে গণকের কথা বিশ্বাস করলে বিশ্বাসকারী সাথে সাথে কাফির হয়ে যায়।
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
مَنْ أَتَى حَائِضًا، أَوْ امْرَأَةً فِيْ دُبُرِهَا، أَوْ كَاهِنًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُوْلُ، فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم
‘‘যে ব্যক্তি কোন ঋতুবতী মহিলার সাথে সহবাস করলো অথবা কোন মহিলার মলদ্বার ব্যবহার করলো অথবা কোন গণকের নিকট গেলো এবং তার কথা বিশ্বাস করলো তখনই সে মুহাম্মাদ (সা.) এর প্রতি অবতীর্ণ বিধান তথা কুর’আন মাজীদকে অস্বীকার করলো অর্থাৎ কাফির হয়ে গেলো’’।
(তিরমিযী, হাদীস ১৩৫ আবু দাউদ, হাদীস ৩৯০৪ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৬৪৪ ত্বাহাওয়ী/মুশকিলুল্ আ-সার, হাদীস ৬১৩০ ইবনুল্ জারূদ/মুনতাক্বা, হাদীস ১০৭ বায়হাক্বী : ৭/১৯৮ আহমাদ : ২/৪০৮, ৪৭৬)
জ্যোতিষীর শির্ক বলতে রাশি-নক্ষত্রের সাহায্যে ভূমন্ডলে ঘটিতব্য ঘটনাঘটনসমূহের আগাম ভবিষ্যদ্বাণী করাকে বুঝানো হয়। যেমন: আকাশের কোন লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বৃষ্টি, বন্যা, শীত, গরম, মহামারী ইত্যাদির আগাম সংবাদ দেয়া।
সর্ব সাকুল্য দু’টি কারণেই জ্যোতির্বিদ্যা শিক্ষা করা শির্কের অন্তর্ভুক্ত। কারণ দু’টি নিম্নরূপ:
১. জ্যোতিষীরা এ কথা দাবি করে থাকে যে, নক্ষত্রাদি স্বেচ্ছা স্বয়ংক্রিয়। যে কোন অঘটন এদেরই প্রতিক্রিয়ায় সংঘটিত হয়ে থাকে। এ জাতীয় ধারণা সর্বসম্মতিক্রমে কুফরি। কারণ, এটি হচ্ছে এক আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য আরেকটি কর্তৃত্বশীল সৃষ্টিকর্তা মানার শামিল।
২. গ্রহ-নক্ষত্রাদির কক্ষপথ পরিভ্রমণ, সম্মিলন বা বিক্ষিপ্ত অবস্থান পর্যবেক্ষণ করে কোন অঘটন প্রমাণ করা। এটিও একটি হারাম কাজ। কারণ, তা ইল্মুল্ গায়েবের দাবি বৈ কি? তেমনিভাবে তা যাদুরও অন্তর্গত।
আবু মিহজান্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
أَخَافُ عَلَى أُمَّتِيْ مِنْ بَعْدِيْ ثَلاَثًا: حَيْفَ الْأَئِمَّةِ وَإِيْمَانًا بِالنُّجُوْمِ وَتَكْذِيْبًا بِالْقَدْرِ
‘‘আমি আমার মৃত্যৃর পর আমার উম্মতের উপর তিনটি বস্ত্তর আশঙ্কা করছি। নেতৃস্থানীয়দের যুলুম-অত্যাচার, রাশি-নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাস ও তাক্বদীরে (ভাগ্যে) অবিশ্বাস’’। (ইবনু ’আব্দিল্ বার্ /জা-মি’উ বায়ানিল্ ’ইল্মি ওয়া ফায্লিহি : ২/৩৯)
আনাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
أَخَافُ عَلَى أُمَّتِيْ بَعْدِيْ خَصْلَتَيْنِ: تَكْذِيْبًا بِالْقَدْرِ وَإِيْمَانًا بِالنُّجُوْمِ
‘‘আমি আমার মৃত্যুর পর আমার উম্মতের উপর দু’টি চরিত্রের আশঙ্কা করছি। রাশি-নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাস ও তাক্বদীরে (ভাগ্যে) অবিশ্বাস’’। (আবু ইয়া’লা, হাদীস ১০২৩ ইবনু ’আদি’/কা-মিল: ৪/৩৪)
’আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
مَنِ اقْتَبَسَ عِلْمًا مِنَ النُّجُوْمِ ؛ اقْتَبَسَ شُعْبَةً مِنَ السِّحْرِ ؛ زَادَ مَا زَادَ
‘‘যে ব্যক্তি রাশি-নক্ষত্রের জ্ঞান শিখলো সে যেন যাদুর কোন একটি বিভাগ শিখে নিলো। সুতরাং যত বেশি সে রাশি-নক্ষত্রের জ্ঞান শিখলো তত বেশি সে যাদু শিখলো’’। (আবু দাউদ, হাদীস ৩৯০৫ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩৭৯৪ আহমাদ : ১/৩১১)
আল্লাহ্ তা’আলা এ গ্রহ-নক্ষত্রগুলোকে তিনটি উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। যা নিম্নরূপ:
১. আকাশের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য।
২. তা নিক্ষেপ করে শয়তানকে তাড়ানোর জন্য। যাতে তারা যে কোন বিষয়ে আল্লাহ্ তা’আলার সিদ্ধান্ত মূলক বাণী চুরি করে শুনতে না পায়।
৩. দিক নির্ণয় তথা পথ নির্ধারণের জন্য।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَآءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيْحَ وَجَعَلْنَاهَا رُجُوْمًا للشَّيَاطِيْنَ »
‘‘আমি দুনিয়ার আকাশকে সুশোভিত করেছি গ্রহ-নক্ষত্র দিয়ে এবং ওগুলোকে করেছি শয়তানের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ’’। (মুলক : ৫)
আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:
«وَهُوَ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ النُّجُوْمَ لِتَهْتَدُوْا بِهَا فِيْ ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ »
‘‘আর তিনিই তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন নক্ষত্ররাজিকে যেন তোমরা এগুলোর মাধ্যমে জল ও স্থলের অন্ধকারে সঠিক পথের সন্ধান পেতে পারো’’। (আন’আম : ৯৭)
তিনি আরো বলেন:
«وَبِالنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُوْنَ »
‘‘আর ওরা নক্ষত্রের সাহায্যে পথের সন্ধান পায়’’। (না’হল : ১৬)
তেমনিভাবে সূর্য ও চন্দ্রের অবস্থানক্ষেত্র সম্পর্কীয় জ্ঞানের সহযোগিতায় কিবলার দিক নির্ণয়, নামাযের সময় সূচী নির্ধারণ ও ষড় ঋতুর জ্ঞানার্জনে কোন অসুবিধে নেই। তবে তাই বলে এ গুলোর সহযোগিতায় ইল্মুল্ গায়েবের অনুসন্ধান বা দাবি করা কখনোই জায়িয হবে না।
চন্দ্রের অবস্থানক্ষেত্র অথবা অন্য কোন নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাসের শির্ক বলতে প্রতি তেরো রাত পর পর চন্দ্রের অবস্থানক্ষেত্রের পরিবর্তন বা অন্য কোন নক্ষত্রের উদয়াস্তের কারণে বৃষ্টি হয় বলে বিশ্বাস করাকে বুঝানো হয়।
আরবী ভাষায় প্রতি তেরো রাত পর পর চন্দ্রের অবস্থানক্ষেত্রের পরিবর্তন বা অন্য কোন নক্ষত্রের উদয়কে ‘‘নাউ’’’ বলা হয়।
জাহিলী যুগে আরবরা এ কথা বিশ্বাস করতো যে, প্রতি তেরো রাত পর পর চন্দ্রের অবস্থানক্ষেত্রের পরিবর্তন বা অন্য কোন নক্ষত্রের উদয়াস্তের কারণেই বৃষ্টি হয়ে থাকে। রাসূল (সা.) এ বিশ্বাসকে দৃঢ়ভাবে নস্যাৎ করেন।
আবু মালিক আশ্’আরী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:
أَرْبَعٌ فِيْ أُمَّتِيْ مِنْ أَمْرِ الْـجَاهِلِيَّةِ، لاَ يَتْرُكُوْنَهُنَّ: الْفَخْـرُ فِيْ الْأَحْسَابِ، وَالطَّعْنُ فِيْ الْأَنْسَابِ، وَالاسْتِسْقَاءُ بِالنُّجُوْمِ، وَالنِّيَاحَةُ
‘‘আমার উম্মতের মাঝে জাহিলী যুগের চারটি কাজ চালু থাকবে। তারা তা কখনোই ছাড়বে না। বংশ নিয়ে গৌরব, অন্যের বংশে আঘাত, কোন কোন নক্ষত্রের উদয়াস্তের কারণে বৃষ্টি হয় বলে বিশ্বাস এবং বিলাপ’’।
(মুসলিম, হাদীস ৯৩৪ ’হা-কিম : ১/৩৮৩ ত্বাবারানি/কাবীর, হাদীস ৩৪২৫, ৩৪২৬ বায়হাক্বী : ৪/৬৩ বাগাওয়ী, হাদীস ১৫৩৩ ইবনু আবী শাইবাহ্ : ৩/৩৯০ আহমাদ : ৫/৩৪২, ৩৪৩, ৩৪৪ ’আব্দুর রাযযাক : ৩/৬৬৮৬)
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল (সা.) কে এ হাদীসটি বলতে শুনেছি। তিনি বলেন:
أَخَافُ عَلَى أُمَّتِيْ ثَلاَثًا: اسْتِسْقَاءً بِالنُّجُوْمِ، وَحَيْفَ السُّلْطَانِ، وَتَكْذِيْبًا بِالْقَدَرِ
‘‘আমি আমার মৃত্যুর পর আমার উম্মতের উপর তিনটি বস্ত্তর আশঙ্কা করছি। রাশি-নক্ষত্রের উদয়াস্তের কারণে বৃষ্টি হয় বলে বিশ্বাস, নেতৃস্থানীয়দের যুলুম-অত্যাচার ও তাক্বদীরে (ভাগ্যে) অবিশ্বাস’’। (আহমাদ : ৫/৮৯-৯০ ইবনু আবী ’আসিম্, হাদীস ৩২৪ ত্বাবারানি/কাবীর : ২/১৮৫৩)
নবী যুগের কাফির ও মুশরিকরা এ কথায় বিশ্বাস করতো যে, একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাই বৃষ্টি দিয়ে থাকেন। তবে তারা উপরন্তু এও বিশ্বাস করতো যে, রাশি-নক্ষত্রের উদয়াস্তের কারণেই এ বৃষ্টি হয়ে থাকে। আর এটিই হচ্ছে ছোট শির্ক।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَّنْ نَّزَّلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ مِنْ بَعْدِ مَوْتِهَا لَيَقُوْلُنَّ اللهُ، قُلِ الْحَمْدُ لِلهِ، بَلْ أَكْثَرُهُمْ لاَ يَعْقِلُوْنَ »
‘‘আপনি যদি ওদেরকে জিজ্ঞাসা করেন যে, আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেছেন কে? যা কর্তৃক তিনি পৃথিবীকে সঞ্জীবিত করেছেন নির্জীবতার পর। তারা অবশ্যই বলবে: একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাই। আপনি বলুন: সুতরাং সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার জন্যই। তবে ওদের অধিকাংশই এটা বুঝে না’’। (আনকাবূত : ৬৩)
যায়েদ বিন্ খালিদ জুহানী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
صَلَّى لَنَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صَلاَةَ الصُّبْحِ بِالْـحُدَيْبِيَةِ، عَلَى إِثْرِ سَمَاءٍ كَانَتْ مِنَ اللَّيْـلَةِ، فَلَمَّا انْصَرَفَ، أَقْبَلَ عَلَى النَّاسِ فَقَالَ: هَلْ تَدْرُوْنَ مَاذَا قَالَ رَبُّكُمْ؟ قَالُوْا: اللهُ وَرَسُوْلُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: أَصْبَحَ مِنْ عِبَادِيْ مُؤْمِنٌ وَكَافِرٌ، فَأَمَّا مَنْ قَالَ: مُطِرْنَا بِفَضْلِ اللهِ وَرَحْمَتِهِ، فَذَلِكَ مُؤْمِنٌ بِيْ وَكَافِرٌ بِالْكَوْكَبِ، وَأَمَّا مَنْ قَالَ: مُطِرْنَا بِنَوْءِ كَذَا وَكَذَا، فَذَلِكَ كَافِرٌ بِيْ وَمُؤْمِنٌ بِالْكَوْكَبِ
‘‘রাসূল (সা.) আমাদেরকে নিয়ে ’হুদাইবিয়া নামক এলাকায় ফজরের নামায আদায় করলেন। ইতিপূর্বে সে রাত্রিতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছিলো। নামায শেষে রাসূল (সা.) মুসল্লিদের দিকে তাকিয়ে বললেন: তোমরা জানো কি? তোমাদের প্রভু কি বলেছেন। সাহাবারা বললেন: আল্লাহ্ ও তদীয় রাসূল এ ব্যাপারে ভালোই জানেন। রাসূল (সা.) বললেন: আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: সকাল পর্যন্ত আমার বান্দাহ্রা মু’মিন ও কাফির তথা দু’ ভাগে বিভক্ত হয়ে গেলো। যারা বললো: আল্লাহ্ তা’আলার কৃপা ও অনুগ্রহে বৃষ্টি হয়েছে তারা আমার উপর বিশ্বাস স্থাপন করলো এবং গ্রহ-নক্ষত্রের প্রতি অবিশ্বাসী হলো। আর যারা বললো: গ্রহ-নক্ষত্রের উদয়াস্তের কারণেই বৃষ্টি হয়েছে তারা আমার উপর অবিশ্বাসী হলো এবং গ্রহ-নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলো’’।
(বুখারী, হাদীস ৮৪৬, ১০৩৮, ৪১৪৭, ৭৫০৩ মুসলিম, হাদীস ৭১ আবু দাউদ, হাদীস ৩৯০৬ ইবনু হিববান/ইহসান, হাদীস ৬০৯৯ ইবনু মান্দাহ্, হাদীস ৫০৩, ৫০৪, ৫০৫, ৫০৬ বাগাওয়ী, হাদীস ১১৬৯ ত্বাবারানী/ কাবীর, হাদীস ৫১২৩, ৫১২৪, ৫১২৫, ৫১২৬ ’হুমাইদী, হাদীস ৮১৩ মা-লিক : ১/১৯২ আব্দুর রায্যাক : ১১/২১০০৩ আহমাদ : ৪/১১৭)
আর যারা এ বিশ্বাস করে যে, গ্রহ-নক্ষত্রের স্বকীয় প্রভাবেই বৃষ্টি হয়ে থাকে তারা কাফির।
বৃষ্টি একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলারই ইচ্ছায় হয়ে থাকে। এতে অন্য কারোর সামান্যটুকু ইচ্ছারও কোন প্রভাব নেই।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«أَفَرَأَيْتُمُ الْـمآءَ الَّذِيْ تَشْرَبُوْنَ، أَأَنْتُمْ أَنْزَلْتُمُوْهُ مِنَ الْـمُزْنِ أَمْ نَحْنُ الْـمُنْزِلُوْنَ »
‘‘তোমরা সর্বদা যে পানি পান করে থাকো সে সম্পর্কে কখনো চিন্তা করে দেখেছো কি? তোমরাই কি তা মেঘ হতে নামিয়ে আনো না আমিই তা বর্ষণ করে থাকি’’। (ওয়াকি’আহ্ : ৬৮, ৬৯)
আল্লাহ্ তা’আলার নিয়ামত অস্বীকার করার শির্ক বলতে যে কোন নিয়ামত একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার দান বা অনুগ্রহ বলে স্বীকার না করে তা নিজ বা অন্য কারোর কৃতিত্বের সুফল অথবা নিজ মেধা বা যোগ্যতার পাওনা বলে দাবি করাকে বুঝানো হয়।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
« يَعْرِفُوْنَ نِعْمَةَ اللهِ ثُمَّ يُنْكِرُوْنَهَا وَأَكْثَرُهُمُ الْكَافِرُوْنَ »
‘‘তারা আল্লাহ্ তা’আলার অনুগ্রহ সম্পর্কে জেনেও তা অস্বীকার করে। আসলে তাদের অধিকাংশই কাফির’’। (নাহল : ৮৩)
আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:
«وَمَا بِكُمْ مِّنْ نِعْمَةٍ فَمِنَ اللهِ »
‘‘তোমরা যে সব নিয়ামত ভোগ করছো তা সবই আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে’’। (নাহল : ৫৩)
বর্তমান যুগের সকল কল্যাণকে একান্ত আল্লাহ্ তা’আলার অনুগ্রহ না বলে আধুনিক প্রযুক্তির সুফল বলাও আল্লাহ্ তা’আলার নিয়ামত অস্বীকার করার শামিল তথা শির্ক।
তেমনিভাবে কোন সম্পদকে আল্লাহ্ প্রদত্ত না বলে বাপ-দাদার মিরাসি সম্পত্তি বলে দাবি করা এবং এমন বলা যে, অমুক না হলে এমন হতোনা, আবহাওয়া ভালো এবং মাঝি পাকা হওয়ার দরুন বাঁচা গেলো। নচেৎ নৌকো ডুবে যেতো, পীর-বুযুর্গের নেক নজর থাকার দরুন বাঁচা গেলো। নচেৎ মরতে হতো বলাও আল্লাহ্ তা’আলার নিয়ামত অস্বীকার করার শামিল তথা শির্ক।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«رَبُّكُمُ الَّذِيْ يُزْجِيْ لَكُمُ الْفُلْكَ فِيْ الْبَحْرِ لِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهِ، إِنَّهُ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا »
‘‘তোমাদের প্রভু তিনিই যিনি তোমাদের জন্য সমুদ্রে জলযান পরিচালিত করেন। যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ তথা রিয্ক অনুসন্ধান করতে পারো। নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু’’। (ইসরা/বানী ইস্রাঈল : ৬৬)
আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর নিয়ামত অস্বীকারকারী পূর্বেকার এক সম্প্রদায় সম্পর্কে বলেনঃ
«وَلَئِنْ أَذَقْنَاهُ رَحْمَةً مِّنَّا مِنْ بَعْدِ ضَرَّآءَ مَسَّتْهُ لَيَقُوْلَنَّ هَذَا لِيْ، وَمَآ أَظُنُّ السَّاعَةَ قَآئِمَةً، وَلَئِنْ رُّجِعْتُ إِلَى رَبِّيْ إِنَّ لِيْ عِنْدَهُ لَلْحُسْنَى، فَلَنُنَبِّئَنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِمَا عَمِلُوْا، وَلَنُذِيْقَنَّهُمْ مِّنْ عَذَابٍ غَلِيْظٍ »
‘‘আমি যদি মানুষকে অনেক দুঃখ-কষ্টের পর অনুগ্রহের স্বাদ আস্বাদন করাই তখন সে নিশ্চিতভাবেই বলবে: এটা আমারই প্রাপ্য (আল্লাহ্ তা’আলার একান্ত অনুগ্রহ নয়) এবং আমি মনে করি না যে, কিয়ামত সংঘটিত হবে। আর যদি আমি ঘটনাচক্রে আমার প্রভুর নিকট প্রত্যাবর্তিত হইও তখন তাঁর নিকট তো আমার জন্য কল্যাণই থাকবে। আমি কাফিরদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবশ্যই অবহিত করবো এবং তাদেরকে আস্বাদন করাবো কঠোর শাস্তি’’। (ফুসসিলাত/হা-মীম আসসাজদাহ্ : ৫০)
কারূন যখন আল্লাহ্ তা’আলার দেয়া ধন-ভান্ডারকে তাঁর একান্ত অনুগ্রহ বলে স্বীকার না করে বরং তার নিজ মেধার প্রাপ্য বলে দাবি করেছে তখন আল্লাহ্ তা’আলা তাকে ও তার প্রাসাদকে ভূগর্ভে তলিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«قَالَ إِنَّمَا أُوْتِيْتُهُ عَلَى عِلْمٍ عِنْدِيْ ... فَخَسَفْنَا بِهِ وَبِدَارِهِ الْأَرْضَ، فَمَا كَانَ لَهُ مِنْ فِئَةٍ يَّنْصُرُوْنَهُ مِنْ دُوْنِ اللهِ، وَمَا كَانَ مِنَ الْـمُنْتَصِرِيْنَ »
‘‘কারূন বললো: নিশ্চয়ই আমাকে এ সম্পদ দেয়া হয়েছে আমার জ্ঞানের প্রাপ্তি হিসেবে। ... অতঃপর আমি কারূন ও তার প্রাসাদকে ভূগর্ভে তলিয়ে দিলাম। তখন তার স্বপক্ষে এমন কোন দল ছিলোনা যারা আল্লাহ্ তা’আলার শাস্তি হতে তাকে রক্ষা করতে পারতো এবং সে নিজেও তার আত্মরক্ষায় সক্ষম ছিলো না’’। (কাসাস্ : ৭৮, ৮১)
আল্লাহ্ তা’আলা বনী ইস্রাঈলের কয়েকজন ব্যক্তিকে অঢেল সম্পদ দিয়ে পুনরায় তাদেরকে ফিরিশ্তার মাধ্যমে পরীক্ষা করেন। তাদের অধিকাংশই তা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার একান্ত অনুগ্রহ নয় বলে তাঁর নিয়ামত অস্বীকার করতঃ তা তাদের বাপ-দাদার সম্পদ বলে দাবি করলে আল্লাহ্ তা’আলা তাদের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে তাদের সম্পদ ছিনিয়ে নেন। আর যারা তা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার অনুগ্রহ বলে স্বীকার করলো তাদের উপর তিনি সন্তুষ্ট হন এবং তাদের সম্পদ আরো বাড়িয়ে দেন।
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন:
إِنَّ ثَلاَثَةً فِيْ بَنِيْ إِسْرَآئِيْلَ: أَبْرَصَ وَأَقْرَعَ وَأَعْمَى، أَرَادَ اللهُ أَنْ يَّبْتَلِيَهُمْ، فَبَعَثَ إِلَيْهِمْ مَلَكًا، فَأَتَى الْأَبْرَصَ فَقَالَ: أَيُّ شَيْءٍ أَحَبُّ إِلَيْكَ؟ قَالَ: لَوْنٌ حَسَنٌ وَجِلْدٌ حَسَنٌ وَيَذْهَبَ عَنِّيْ الَّذِيْ قَدْ قَذِرَنِيْ النَّاسُ، قَالَ: فَمَسَحَهُ فَذَهَبَ عَنْهُ قَذَرُهُ وَأُعْطِيَ لَوْنًا حَسَنًا وَجِلْدًا حَسَنًا، قَالَ: فَأَيُّ الْمَالِ أَحَبُّ إِلَيْكَ؟ قَالَ: الْإِبِلُ، أَوْ قَالَ: الْبَقَرُ ـ شَكَّ إِسْحَاقُ ـ إِلاَّ أَنَّ الْأَبْرَصَ أَوِ الْأَقْرَعَ قَالَ أَحَدُهُمَا: الْإِبِلُ وَقَالَ الْآخَرُ: الْبَقَرُ، قَالَ: فَأُعْطِيَ نَاقَةً عُشَرَآءَ، فَقَالَ: بَارَكَ اللهُ لَكَ فِيْهَا .
قَالَ: فَأَتَى الْأَقْرَعَ فَقَالَ: أَيُّ شَيْءٍ أَحَبُّ إِلَيْكَ؟ قَالَ: شَعْرٌ حَسَنٌ وَيَذْهَبَ عَنِّيْ هَذَا الَّذِيْ قَدْ قَذِرَنِيْ النَّاسُ، قَالَ: فَمَسَحَهُ فَذَهَبَ عَنْهُ وَأُعْطِيَ شَعْرًا حَسَنًا، قَالَ: فَأَيُّ الْمَالِ أَحَبُّ إِلَيْكَ؟ قَالَ: الْبَقَرُ، فَأُعْطِيَ بَقَرَةً حَامِلًا، فَقَالَ: بَارَكَ اللهُ لَكَ فِيْهَا.
قَالَ: فَأَتَى الْأَعْمَى فَقَالَ: أَيُّ شَيْءٍ أَحَبُّ إِلَيْكَ؟ قَالَ: أَنْ يَرُدَّ اللهُ إِلَيَّ بَصَرِيْ فَأُبْصِرَ بِهِ النَّاسَ، قَالَ: فَمَسَحَهُ فَرَدَّ اللهُ إِلَيْهِ بَصَرَهُ، قَالَ: فَأَيُّ الْمَالِ أَحَبُّ إِلَيْكَ؟ قَالَ: الْغَنَـمُ، فَأُعْطِيَ شَاةً وَالِدًا، فَأَنْتَجَ هَذَانِ وَوَلَّدَ هَذَا، قَالَ: فَكَانَ لِهَذَا وَادٍ مِنَ الْإِبِلِ وَلِهَذَا وَادٍ مِنَ الْبَقَرِ وَلِهَذَا وَادٍ مِنَ الْغَنَمِ .
قَالَ: ثُمَّ إِنَّهُ أَتَى الْأَبْرَصَ فِيْ صُوْرَتِهِ وَهَيْئَتِهِ، فَقَالَ: رَجُلٌ مِسْكِيْنٌ، قَدِ انْقَطَعَتْ بِيْ الْحِبَالُ فِيْ سَفَرِيْ، فَلاَ بَلاَغَ لِيْ الْيَوْمَ إِلاَّ بِاللهِ ثُمَّ بِكَ، أَسْأَلُكَ بِالَّذِيْ أَعْطَاكَ اللَّوْنَ الْحَسَنَ وَالْجِلْدَ الْحَسَنَ وَالْمَالَ بَعِيْرًا أَتَبَلَّغُ عَلَيْهِ فِيْ سَفَرِيْ، فَقَالَ: الْحُقُوْقُ كَثِيْرَةٌ، فَقَالَ لَهُ: كَأَنِّيْ أَعْرِفُكَ، أَلَمْ تَكُنْ أَبْرَصَ يَقْذَرُكَ النَّاسُ؟ فَقِيْرًا فَأَعْطَاكَ اللهُ؟ فَقَالَ: إِنَّمَا وَرِثْتُ هَذَا الْمَالَ كَابِرًا عَنْ كَابِرٍ، فَقَالَ: إِنْ كُنْتَ كَاذِبًا فَصَيَّرَكَ اللهُ إِلَى مَا كُنْتُ .
قَالَ: وَأَتَى الْأَقْرَعَ فِيْ صُوْرَتِهِ، فَقَالَ لَهُ مِثْلَ مَا قَالَ لِهَذَا، وَرَدَّ عَلَيْهِ مِثْلَ مَا رَدَّ عَلَى هَذَا، فَقَالَ: إِنْ كُنْتَ كَاذِبًا فَصَيَّرَكَ اللهُ إِلَى مَا كُنْتَ.
قَالَ: وَأَتَى الْأَعْمَى فِيْ صُوْرَتِهِ وَهَيْئَتِهِ، فَقَالَ: رَجُلٌ مِسْكِيْنٌ وَابْنُ سَبِيْلٍ، انْقَطَعَتْ بِيْ الْحِبَالُ فِيْ سَفَرِيْ، فَلاَ بَلاَغَ لِيْ الْيَوْمَ إِلاَّ بِاللهِ ثُمَّ بِكَ، أَسْأَلُكَ بِالَّذِيْ رَدَّ عَلَيْكَ بَصَرَكَ، شَاةً أَتَبَلَّغُ بِهَا فِيْ سَفَرِيْ، فَقَالَ: قَدْ كُنْتُ أَعْمَى فَرَدَّ اللهُ إِلَيَّ بَصَرِيْ، فَخُذْ مَا شِئْتَ وَدَعْ مَا شِئْتَ، فَوَاللهِ لاَ أَجْهَدُكَ الْيَوْمَ شَيْئًا أَخَذْتَهُ لِلَّهِ، فَقَالَ: أَمْسِكْ مَالَكَ، فَإِنَّمَا ابْتُلِيْتُمْ، فَقَدْ رَضِيَ اللهُ عَنْكَ وَسَخِطَ عَلَى صَاحِبَيْكَ
‘‘বনী ইস্রাঈলের তিন ব্যক্তি শ্বেতী রোগী, টাক মাথা ও অন্ধের নিকট আল্লাহ্ তা’আলা জনৈক ফিরিশ্তা পাঠিয়েছেন তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্যে। ফিরিশ্তাটি শ্বেতী রোগীর নিকট এসে বললেন: তোমার নিকট কোন্ বস্ত্তটি অধিক পছন্দনীয়? সে বললো: আমার নিকট পছন্দনীয় বস্ত্ত হচ্ছে সুন্দর রং ও মনোরম চামড়া এবং আমার এ রোগটি যেন ভালো হয়ে যায়। যার কারণে মানুষ আমাকে ঘৃণা করে। তৎক্ষণাৎ ফিরিশ্তাটি তার গায়ে হাত বুলিয়ে দিলে তার কদর্যতা দূর হয়ে যায় এবং তাকে সুন্দর রং ও মনোরম চামড়া দেয়া হয়। আবারো ফিরিশ্তাটি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: কোন্ ধরনের সম্পদ তোমার নিকট অধিক পছন্দনীয়? উত্তরে সে বললো: উট অথবা গরু। শ্বেতি রোগী অথবা টাক মাথার যে কোন এক জন উট চেয়েছে আর অন্য জন গাভী। বর্ণনাকারী ইস্হাক এ ব্যাপারে সন্দেহ করেছে। যা হোক তাকে দশ মাসের গর্ভবতী একটি উষ্ট্রী দেয়া হলো এবং ফিরিশ্তাটি তার জন্য দো’আ করলেন: আল্লাহ্ তা’আলা তোমার এ উষ্ট্রীর মধ্যে বরকত দিক!
এরপর ফিরিশ্তাটি টাক মাথা লোকটির নিকট এসে বললেন: তোমার নিকট কোন্ বস্ত্তটি অধিক পছন্দনীয়? সে বললো: আমার নিকট পছন্দনীয় বস্ত্ত হচ্ছে সুন্দর চুল এবং আমার এ রোগটি যেন ভালো হয়ে যায়। যার কারণে মানুষ আমাকে ঘৃণা করে। তৎক্ষণাৎ ফিরিশ্তাটি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে তার কদর্যতা দূর হয়ে যায় এবং তাকে সুন্দর চুল দেয়া হয়। আবারো ফিরিশ্তাটি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: কোন্ ধরনের সম্পদ তোমার নিকট অধিক পছন্দনীয়? উত্তরে সে বললো: গাভী। অতএব তাকে গর্ভবতী একটি গাভী দেয়া হলো এবং ফিরিশ্তাটি তার জন্য দো’আ করলেন: আল্লাহ্ তা’আলা তোমার এ গাভীর মধ্যে বরকত দিক!
এরপর ফিরিশ্তাটি অন্ধ লোকটির নিকট এসে বললেন: তোমার নিকট কোন্ বস্ত্তটি অধিক পছন্দনীয়? সে বললো: আমার নিকট পছন্দনীয় বস্ত্ত হচ্ছে আল্লাহ্ তা’আলা যেন আমার চক্ষুটি ফিরিয়ে দেয়। যাতে আমি মানুষ জন দেখতে পাই। তৎক্ষণাৎ ফিরিশ্তাটি তার চোখে হাত বুলিয়ে দিলে আল্লাহ্ তা’আলা তার চক্ষুটি ফিরিয়ে দেন। আবারো ফিরিশ্তাটি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: কোন্ ধরনের সম্পদ তোমার নিকট অধিক পছন্দনীয়? উত্তরে সে বললো: ছাগল। অতএব তাকে গর্ভবতী একটি ছাগী দেয়া হলো। অতঃপর প্রত্যেকের উষ্ট্রী, গাভী ও ছাগী বাচ্চা দিতে থাকে। এতে করে কিছু দিনের মধ্যেই প্রত্যেকের উট, গরু ও ছাগলে এক এক উপত্যকা ভরে যায়।
আরো কিছু দিন পর ফিরিশতাটি শ্বেতী রোগীর নিকট পূর্ব বেশে উপস্থিত হয়ে বললেন: আমি এক জন গরিব মানুষ। আমার পথ খরচা একেবারেই শেষ। এখন এক আল্লাহ্ অতঃপর তুমি ছাড়া আমার কোন উপায় নেই। তাই আমি আল্লাহ্ তা’আলার দোহাই দিয়ে তোমার নিকট একটি উট চাচ্ছি যিনি তোমাকে সুন্দর রং, মনোরম চামড়া ও সম্পদ দিয়েছেন যাতে আমার পথ চলা সহজ হয়ে যায়। উত্তরে সে বললো: দায়িত্ব অনেক বেশি। তোমাকে কিছু দেয়া এখন আমার পক্ষে সম্ভবপর নয়। ফিরিশ্তাটি তাকে বললেন: তোমাকে চেনা চেনা মনে হয়। তুমি কি শ্বেতী রোগী ছিলে না? মানুষ তোমাকে ঘৃণা করতো। তুমি কি দরিদ্র ছিলে না? অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা তোমাকে সম্পদ দিয়েছেন। সে বললো: না, আমি কখনো গরিব ছিলাম না। এ সম্পদগুলো আমি বংশ পরম্পরায় উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি। অতঃপর ফিরিশ্তাটি বললেন: তুমি যদি মিথ্যাবাদী হয়ে থাকো তবে আল্লাহ্ তা’আলা যেন তোমাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেন।
অনুরূপভাবে ফিরিশ্তাটি টাক মাথার নিকট পূর্ব বেশে উপস্থিত হয়ে তার সঙ্গে সে জাতীয় কথাই বললেন যা বলেছেন শ্বেতী রোগীর সঙ্গে এবং সেও সে উত্তর দিলো যা দিয়েছে শ্বেতী রোগী। অতঃপর ফিরিশ্তাটি বললেন: তুমি যদি মিথ্যাবাদী হয়ে থাকো তবে আল্লাহ্ তা’আলা যেন তোমাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেন।
তেমনিভাবে ফিরিশ্তাটি অন্ধের নিকট পূর্ব বেশে উপস্থিত হয়ে বললেন: আমি দরিদ্র মুসাফির মানুষ। আমার পথ খরচা একেবারেই শেষ। এখন এক আল্লাহ্ অতঃপর তুমি ছাড়া আমার কোন উপায় নেই। তাই আমি আল্লাহ্ তা’আলার দোহাই দিয়ে তোমার নিকট একটি ছাগল চাচ্ছি যিনি তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন যাতে আমার পথ চলা সহজ হয়ে যায়। উত্তরে সে বললো: আমি নিশ্চয়ই অন্ধ ছিলাম। অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা আমার চক্ষু ফিরিয়ে দিয়েছেন। অতএব তোমার যা ইচ্ছা নিয়ে যাও এবং যা ইচ্ছা রেখে যাও। আল্লাহ্’র কসম খেয়ে বলছি: আজ আমি তোমাকে বারণ করবো না যাই তুমি আল্লাহ্’র জন্য নিবে। ফিরিশ্তাটি বললেন: তোমার সম্পদ তুমিই রেখে দাও। তোমাদেরকে শুধু পরীক্ষাই করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য কিছু নয়। অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা তোমার উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তোমার সাথীদ্বয়ের উপর হয়েছেন অসন্তুষ্ট’’। (বুখারী, হাদীস ৩৪৬৪, ৬৬৫৩ মুসলিম, হাদীস ২৯৬৪)
উক্ত হাদীসে প্রথমোক্ত ব্যক্তিদ্বয় আল্লাহ্ তা’আলার অনুগ্রহ অস্বীকার ও তাঁর প্রতি অকৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের কারণে তিনি তাদের উপর অসন্তুষ্ট হন এবং তাঁর দেয়া নিয়ামত তিনি তাদের থেকে ছিনিয়ে নেন। অন্য দিকে অপর জন তাঁর নিয়ামত স্বীকার করেন এবং তাতে তাঁর অধিকার আদায় করেন বিধায় আল্লাহ্ তা’আলা তার উপর সন্তুষ্ট হন এবং তার সম্পদ আরো বাড়িয়ে দেন।
অতএব নিয়ামতের শুকর আদায় করা অপরিহার্য। নিয়ামতের শুকর বলতে বিনয় ও ভালোবাসার সঙ্গে অনুগ্রহকারীর অনুগ্রহ স্বীকার করাকেই বুঝানো হয়।
সুতরাং যে ব্যক্তি নিয়ামত সম্পর্কে একেবারেই অবগত নয় সে নিয়ামতের শুকর আদায় করেনি। আর যে নিয়ামত সম্পর্কে অবগত তবে নিয়ামতদাতা সম্পর্কে অবগত নয় সেও নিয়ামতের শুকর আদায় করেনি। আর যে ব্যক্তি নিয়ামত ও নিয়ামতদাতা সম্পর্কে অবগত তবে সে তা স্বীকার করে না সেও নিয়ামতের শুকর আদায় করেনি। আর যে ব্যক্তি নিয়ামত ও নিয়ামতদাতা সম্পর্কে অবগত এমনকি সে তা স্বীকারও করে কিন্তু তা বিনয় ও ভালোবাসা নিয়ে নয় তা হলে সেও নিয়ামতের শুকর আদায় করেনি। আর যে ব্যক্তি নিয়ামত ও নিয়ামতদাতা সম্পর্কে অবগত এমনকি সে তা বিনয় ও ভালোবাসার সঙ্গে স্বীকারও করে এবং সে তা নিয়ামতদাতার আনুগত্যেই খরচ করে তা হলে সে সত্যিকারার্থেই নিয়ামতের শুকর আদায়কারী।
কোন বস্ত্ত, ব্যক্তি বা প্রাণী দর্শনে বা উহার বিশেষ আচরণে কোন অমঙ্গল রয়েছে বলে বিশ্বাস করার শির্ক বলতে যাত্রা লগ্নে কোন ব্যক্তি, প্রাণী বা বস্ত্তর বিশ্রী রূপদর্শন অথবা এ গুলোর কোনরূপ আচরণ এমনকি কোন শব্দ বা ধ্বনির শ্রবণ অথবা কোন জায়গায় অবতরণ কারোর জন্য কোন অকল্যাণ বয়ে আনতে পারে বলে বিশ্বাস করাকে বুঝানো হয়।
এ জাতীয় কুলক্ষণবোধ ব্যাধি আজকের নতুন নয়। বরং তা অনেক পুরাতন যুগেরই বটে। তখন মানুষ নবী ও তাঁর সঙ্গীদেরকে অলক্ষুনে ভাবতো।
আল্লাহ্ তা’আলা মূসা (আ.) ও তাঁর সম্প্রদায় সম্পর্কে বলেন:
« فَإِذَا جَآءَتْهُمُ الْـحَسَنَةُ قَالُوْا لَنَا هَذِهِ، وَإِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَّطَّيَّرُوْا بِمُوْسَى وَمَـنْ مَعَهُ، أَلاَ إِنَّمَا طَآئِرُهُمْ عِنْدَ اللهِ، وَلَكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لاَ يَعْلَمُوْنَ »
‘‘যখন তাদের কোন সুখ-শান্তি বা কল্যাণ সাধিত হতো তখন তারা বলতো: এটি আমাদেরই প্রাপ্য। আর যখন তাদের কোন দুঃখ-দুর্দশা বা বিপদ-আপদ ঘটতো তখন তারা বলতো: এটি মূসা (আ.) ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের কারণেই ঘটেছে। তাদের জানা উচিত যে, তাদের সকল অকল্যাণও একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই এ কথা জানে না’’। (আ’রাফ্ : ১৩১)
আল্লাহ্ তা’আলা সা’লিহ্ (আ.) ও তাঁর সম্প্রদায় সম্পর্কে বলেন:
«قَالُوْا اطَّيَّرْنَا بِكَ وَبِمَنْ مَّعَكَ، قَالَ طَآئِرُكُمْ عِنْدَ اللهِ، بَلْ أَنْتُمْ قَوْمٌ تُفْتَنُوْنَ »
‘‘তারা বললো: আমরা তোমাকে ও তোমার সঙ্গী-সাথীদেরকেই সকল অকল্যাণের মূল মনে করছি। সা’লিহ্ (আ.) বললেন: তোমাদের সকল কল্যাণাকল্যাণ আল্লাহ্’র হাতে। মূলতঃ তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হচ্ছে’’। (নাম্ল : ৪৭)
আল্লাহ্ তা’আলা এক মফস্বল এলাকার অধিবাসী ও তাদের রাসূল সম্পর্কে বলেন:
« قَالُوْا إِنَّا تَطَيَّرْنَا بِكُمْ، لَئِنْ لَمْ تَنْتَهُوْا لَنَرْجُمَنَّكُمْ وَلَيَمَسَّنَّكُمْ مِنَّا عَذَابٌ أَلِيْمٌ، قَالُوْا طَائِرُكُمْ مَعَكُمْ، أَئِنْ ذُكِّرْتُمْ، بَلْ أَنْتُمْ قَوْمٌ مُسْرِفُوْنَ »
‘‘তারা বললো: আমরা তোমাদেরকে অমঙ্গলের কারণ বলেই মনে করি। যদি তোমরা নিজ তৎপরতা বন্ধ না করো তাহলে আমরা তোমাদেরকে অবশ্যই পাথর মেরে হত্যা করবো এবং আমাদের পক্ষ থেকে তোমাদের উপর অবশ্যই নিপতিত হবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। রাসূলগণ বললেন: তোমাদের অমঙ্গল তোমাদেরই কারণে। তোমরা কি মূর্খতার কারণে এটাই মনে করো যে, তোমাদেরকে উপদেশ দেয়া হয়েছে বলেই অমঙ্গল নেমে আসছে। বরং তোমরা একটি সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়’’। (ইয়াসীন : ১৮)
আল্লাহ্ তা’আলা মুহাম্মাদ (সা.) ও তাঁর সম্প্রদায় সম্পর্কে বলেন:
« وَإِنْ تُصِبْتُمْ حَسَنَةٌ يَقُوْلُوْا هَذِهِ مِنْ عِنْدِ اللهِ، وَإِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَقُوْلُوْا هَذِهِ مِنْ عِنْدِكَ، قُلْ كُلٌّ مِنْ عِنْدِ اللهِ، فَمَا لِـهَؤُلآءِ الْقَوْمِ لاَ يَكَادُوْنَ يَفْقَهُوْنَ حَدِيْثًا »
‘‘তাদের উপর যখন কোন কল্যাণ অবতীর্ণ হয় তখন তারা বলে: এটা আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে। আর যখন তাদের প্রতি কোন অকল্যাণ নিপতিত হয় তখন তারা বলে: এটা আপনারই পক্ষ থেকে তথা আপনারই কারণে। আপনি বলে দিন: সবই আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে। এদের কি হলো যে, তারা কোন কথাই বুঝতে চায় না’’। (নিসা’ : ৭৮)
সকল মঙ্গলামঙ্গল একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার হাতে। কোন ব্যক্তি, বস্ত্ত বা প্রাণীর বিশ্রী রূপদর্শন বা আচরণে এমন কোন অকল্যাণ নিহিত নেই যার অমূলক আশঙ্কা করা যেতে পারে। বরং সকল কল্যাণকে আল্লাহ্ তা’আলার একান্ত অনুগ্রহ এবং পুণ্যের ফল হিসেবে স্বীকার করতে হবে। আর সকল অকল্যাণকে আল্লাহ্ তা’আলার ইনসাফ ও নিজ গুনাহ্’র শাস্তি হিসেবে মেনে নিতে হবে।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«مَآ أَصَابَكَ مِنْ حَسَنَةٍ فَمِنَ اللهِ، وَمَآ أَصَابَكَ مِنْ سَيِّئَةٍ فَمِنْ نَفْسِكَ »
‘‘তোমার যদি কোন কল্যাণ সাধিত হয় তাহলে তা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকেই হয়েছে। আর যদি তোমার কোন অকল্যাণ সাধিত হয় তাহলে তা একমাত্র তোমার কর্ম দোষেই হয়েছে’’। (নিসা’ : ৭৯)
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
لاَ عَدْوَى وَلاَ طِيَرَةَ وَلاَ هَامَةَ وَلاَ صَفَرَ وَلاَ نَوْءَ وَلاَ غُوْلَ، فَقَالَ أَعْرَابِيٌّ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! فَمَا بَالُ الإِبِلِ تَكُوْنُ فِيْ الرَّمْلِ كَأَنَّهَا الظِّبَاءُ، فَيَجِيْءُ الْبَعِيْرُ الأَجْرَبُ فَيَدْخُلُ فِيْهَا، فَيُجْرِبُهَا كُلَّهَا، قَالَ: فَمَنْ أَعْدَى الْأَوَّلَ؟
‘‘ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছুই নেই। কুলক্ষণ বলতেই তা একান্ত অমূলক। হুতোম পেঁচা, সফর মাস, রাশি-নক্ষত্র অথবা পথ ভুলানো ভূত কারোর কোন ক্ষতি করতে পারে না। তখন এক গ্রাম্য ব্যক্তি বললো: হে আল্লাহ্’র রাসূল! কখনো এমন হয় যে, মরুভূমির মধ্যে শায়িত কিছু উট। দেখতে যেমন হরিণ। অতঃপর দেখা যাচ্ছে, চর্ম রোগী একটি উট এসে এগুলোর সাথে মিশে গেলো। তাতে করে সবগুলো উট চর্ম রোগী হয়ে গেলো। তখন রাসূল (সা.) বললেন: বলো তো: প্রথমটির চর্ম রোগ কোথা থেকে এসেছে?
(বুখারী, হাদীস ৫৭০৭, ৫৭১৭, ৫৭৭০, ৫৭৭৩ মুসলিম, হাদীস ২২২০, ২২২২ আবু দাউদ, হাদীস ৩৯১১, ৩৯১২, ৩৯১৩, ৩৯১৫ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩৬০৫, ৩৬০৬ আহমাদ : ২/২৬৭, ৩৯৭ আব্দুর রায্যাক : ১০/৪০৪ ত্বাহাওয়ী/মুশকিলুল্ আসা-র, হাদীস ২৮৯১)
উম্মে কুর্য (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি:
أَقِرُّوْا الطَّيْرَ عَلَى مَكِنَاتِهَا، فَإِنَّهَا لاَ تَضُرُّكُمْ
‘‘তোমরা পাখীগুলোকে নিজ স্থানে থাকতে দাও। ওদেরকে তাড়িয়ে কুলক্ষণ নির্ধারণ করার কোন মানে হয় না। কারণ, ওগুলো তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারে না’’। (আবু দাউদ, হাদীস ২৮৩৫ মুসতাদরাক্ : ৪/২৩৭)
‘‘তাত্বাইয়ুর’’ তথা কুলক্ষণবোধ ব্যাধি শির্ক এ জন্য যে, কেননা তাতে আল্লাহ্ তা’আলার সৃষ্টিকে ক্ষতিসাধক হিসেবে মেনে নেয়া হয়। অথচ সকল কল্যাণাকল্যাণের মালিক হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা। তিনি ভিন্ন অন্য কেউ নয়। অন্যদিকে তা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তর সাথে বান্দাহ্’র সুগভীর সম্পর্ক কায়েম করার শামিল এবং তা তাওয়াক্কুল তথা আল্লাহ্ নির্ভরশীলতা বিরোধীও বটে। এমনকি এ বিশ্বাসের কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অন্তরে প্রচুর ভয়েরও উদ্রেক ঘটে। বস্ত্ততঃ তা শয়তানের ওয়াস্ওয়াসা ভিন্ন অন্য কিছু নয়।
আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাসঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
الطِّيَرَةُ شِرْكٌ ـ ثَلاَثًا ـ وَمَا مِنَّا إِلاَّ ... وَلَكِنَّ اللهَ يُذْهِبُهُ بِالتَّوَكُّلِ
‘‘কুলক্ষণবোধ নিরেট শির্ক। নবী (সা.) এ কথাটি তিন বার বলেছেন। আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাসঊদ (রা.) বলেন: আমাদের প্রত্যেকেই কিছুনা কিছু এ ব্যাধিতে ভোগে থাকেন। তবে আল্লাহ্ তা’আলার উপর সত্যিকারের তাওয়াক্কুল থাকলে তা অতিসত্বর দূর হয়ে যায়’’।
(বুখারী/আদাবুল্ মুফরাদ্, হাদীস ৯০৯ আবু দাউদ, হাদীস ৩৯১০ তিরমিযী, হাদীস ১৬১৪ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩৬০৪ ত্বাহাওয়ী/মুশ্কিলুল্ আসা-র, হাদীস ৭২৮, ১৭৪৭ ইবনু হিববান/মাওয়ারিদ্, হাদীস ১৪২৭ হা-কিম : ১/১৭-১৮ বাগাওয়ী, হাদীস ৩২৫৭ বায়হাক্বী : ৮/১৩৯ ত্বায়ালিসী, হাদীস ৩৫৬ আহমাদ : ১/৩৮৯, ৪৩৮, ৪৪০)
আপনি যখন শরীয়ত সম্মত কোন কাজ করতে ইচ্ছে করবেন তখন তা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার উপর ভরসা করেই শুরু করে দিন। কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তর কুৎসিত রূপ দেখে অথবা কোন অরুচিকর বাক্য শুনে সে কাজ বন্ধ করে দিবেননা। যদি তা করেন তাহলে আপনি আপনার অজান্তেই শির্কে লিপ্ত হবেন।
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
مَنْ رَدَّتْهُ الطِّيَرَةُ عَنْ حَاجَتِهِ فَقَدْ أَشْرَكَ، قَالُوْا: فَمَا كَفَّارَةُ ذَلِكَ؟ قَالَ: أَنْ تَقُوْلَ: اللَّهُمَّ لاَ خَيْرَ إِلاَّ خَيْرُكَ، وَلاَ طَيْرَ إِلاَّ طَيْرُكَ، وَلاَ إلَهَ غَيْرُكَ
‘‘যাকে কুলক্ষণবোধ নিজ প্রয়োজন মেটানো থেকে বিরত রেখেছে বস্ত্ততঃ সে শির্ক করলো। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন: এর কাফ্ফারা কি হতে পারে? রাসূল (সা.) বললেন: তখন সে বলবে: হে আল্লাহ্! আপনার কল্যাণ ছাড়া আর কোন কল্যাণ নেই। তেমনিভাবে আপনার অকল্যাণ ছাড়া আর কোন অকল্যাণ নেই এবং আপনি ছাড়া সত্যিকারের কোন মা’বুদ নেই’’। (আহমাদ : ২/২২০)
মু’আবিয়া বিন্ ’হাকাম্ সুলামী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম:
وَمِنَّا رِجَالٌ يَتَطَيَّرُوْنَ، قَالَ: ذَاكَ شَيْءٌ يَجِدُوْنَهُ فِيْ صُدُوْرِهِمْ، فَلاَ يَصُدَّنَّهُمْ
‘‘আমাদের অনেকেই কোন না কোন কিছু দেখে বা শুনে কুলক্ষণ বোধ করেন। তখন রাসূল (সা.) বললেন: এটি হচ্ছে মনের ওয়াস্ওয়াসা। অতএব তারা যেন এ কারণে কোন কাজ বন্ধ না করে’’। (মুসলিম, হাদীস ৫৩৭)
তবে কোন ব্যক্তি কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তির বিশ্রী রূপ দেখে তার মধ্যে কোন অকল্যাণ রয়েছে বলে ধারণা করলে তার এ অমূলক ধারণার জন্য আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে শাস্তি সরূপ তার কোন ক্ষতি হতে পারে।
আনাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
لاَ طِيَرَةَ، وَالطِّيَرَةُ عَلَى مَنْ تَطَيَّرَ، وَإِنْ يَكُ فِيْ شَيْءٍ فَفِيْ الدَّارِ وَالْفَرَسِ وَالْـمَرْأَةِ
‘‘শরীয়তের দৃষ্টিতে কুলক্ষণ বলতে কিছুই নেই। তবে অলক্ষণ শাস্তি সরূপ ওর পক্ষে হতে পারে যে শরীয়ত বিরোধীভাবে কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তিকে অলক্ষুনে ভাবলো। শরীয়তের দৃষ্টিতে সত্যিকারার্থে যদি কোন বস্ত্তর মাঝে অকল্যাণ নিহিত থাকতো তা হলে ঘর-বাড়ি, গাড়ি-ঘোড়া ও স্ত্রীমহিলাদের মধ্যে তা থাকা যুক্তিসঙ্গত ছিলো’’। (ইবনু হিববান, হাদীস ৬০৯০)
আল্লাহ্ তা’আলা কখনো কখনো তাঁর একান্ত ইচ্ছায় কোন না কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তির মধ্যে অকল্যাণ নিহিত রাখেন যা একান্তভাবেই তাঁরই ইচ্ছায় উহার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কিছু না কিছু ক্ষতিসাধন করতে পারে। এরপরও শুরু থেকেই সতর্কতামূলক পন্থায় সে ব্যাপারে একনিষ্ঠভাবে একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার শরণাপন্ন হলে তা থেকে তিনি বান্দাহ্কে নিশ্চয়ই নিষ্কৃতি দিবেন ইনশা আল্লাহ্। তারপরও কোন অকল্যাণ ঘটে গেলে তা তাক্বদীরে ছিলো বলে বিশ্বাস করতে হবে। এ কারণেই নবী (সা.) কেউ কোন নতুন বিবাহ করলে অথবা কোন নতুন গোলাম বা পশু খরিদ করলে তার মধ্যে নিহিত কল্যাণ প্রাপ্তি ও তার মধ্যে নিহিত অকল্যাণ থেকে বাঁচার জন্যে সে ব্যক্তিকে একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার শরণাপন্ন হতে আদেশ করেছেন।
’আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আমর বিন্ ’আস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:
إِذَا تَزَوَّجَ أَحَدُكُمْ امْرَأَةً، أَوِ اشْتَرَى خَادِمًا ؛ فَلْيَقُلْ: اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَمِنْ شَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ، وَإِذَا اشْتَرَى بَعِيْرًا فَلْيَأْخُذْ بِذِرْوَةِ سَنَامِهِ، وَلْيَقُلْ مِثْلَ ذَلِكَ
‘‘তোমাদের কেউ বিবাহ করলে অথবা নতুন গোলাম খরিদ করলে সে যেন বলেঃ হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট এর ও এর মধ্যে নিহিত সকল কল্যাণ কামনা করি এবং আপনার নিকট আশ্রয় চাই এর ও এর মধ্যে নিহিত সকল অকল্যাণ থেকে। তেমনিভাবে কোন উট কিনলে উহার কুব্জ পৃষ্ঠশৃঙ্গ ধরে অনুরূপ বলবে’’। (আবু দাউদ, হাদীস ২১৬০ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ১৯৪৫ হা-কিম : ২/১৮৫ বায়হাক্বী, হাদীস ৭/১৪৮)
তবে দীর্ঘ প্রয়োজনীয় কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তির প্রতি (ঘর-বাড়ি, গাড়ি-ঘোড়া ও স্ত্রীমহিলা ইত্যাদি) বিরক্তি এসে গেলে তা প্রত্যাখ্যান বা বদলানো জায়িয। যাতে করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ঈমানটুকু শির্কমুক্ত থাকে এবং শরীয়ত অসম্মত কুলক্ষণবোধের দরুন তার উপর শাস্তি সরূপ কোন অকল্যাণ আপতিত না হয়।
আনাস্ বিন্ মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! إِنَّا كُنَّا فِيْ دَارٍ كَثِيْرٌ فِيْهَا عَدَدُنَا، وَكَثِيْرٌ فِيْهَا أَمْوالُنَا، فَتَحَوَّلْنَا إِلَى دَارٍ أُخْرَى، فَقَلَّ فِيْهَا عَدَدُنَا، وَقَلَّتْ فِيْهَا أَمْوَالُنَا، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : ذَرُوْهَا ذَمِيْمَةً
‘‘জনৈক ব্যক্তি বললো: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আমরা ইতিপূর্বে একটি ঘরে বসবাস করতাম। তখন আমাদের জনসংখ্যা বেশি ছিলো এবং সম্পদও বেশি। অতঃপর আমরা আরেকটি ঘরে বসবাস শুরু করলাম। এখন আমাদের জনসংখ্যা ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে এবং সম্পদও। তখন রাসূল (সা.) বললেন: এ ঘরটি ছেড়ে দাও। কারণ, তা নিন্দনীয়’’। (আবু দাউদ, হাদীস ৩৯২৪)
তবে কোন উত্তম ব্যক্তি বা বস্ত্ত দেখে অথবা কোন ভালো কথা শুনে যে কোন কল্যাণের আশা করা বা সুলক্ষণ ভাবা শরীয়ত বিরোধী নয়। কারণ, এতে করে আল্লাহ্ তা’আলার উপর ভালো ধারণা জন্মে এবং তাঁর উপর নির্ভরশীলতা আরো বেড়ে যায়। এমনকি সে কল্যাণ পাওয়ার জন্য আল্লাহ্ তা’আলার নিকট সাহায্য প্রার্থনার উদগ্র মানসিকতা তৈরি হয়। এ কারণেই রাসূল (সা.) কোন ভালো কথা বা শব্দ শুনে কল্যাণের আশা করতেন এবং তা তাঁর পছন্দনীয় অভ্যাসও ছিলো বটে।
আনাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
لاَ عَدْوَى وَلاَ طِيَرَةَ، وَيُعْجِبُنِيَ الْفَأْلُ، قَالُوْا: وَمَا الْفَأْلُ؟ قَالَ: كَلِمَةٌ طَيِّبَةٌ
‘‘ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছুই নেই। কুলক্ষণ বলতেই তা একান্ত অমূলক। তবে সুলক্ষণই আমার নিকট পছন্দনীয়। সাহাবাগণ বললেন: সুলক্ষণ বলতে কি বুঝানো হচ্ছে? তিনি বললেন: ভালো কোন শব্দ শুনে কল্যাণের আশা করা’’।
(বুখারী, হাদীস ৫৭৫৬, ৫৭৭৬ মুসলিম, হাদীস ২২২৪ তিরমিযী, হাদীস ১৬১৫ আবু দাউদ, হাদীস ৩৯১৬ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩৬০৩ বায়হাক্বী: ৮/১৩৯ ত্বায়ালিসী, হাদীস ১৯৬১ আহমাদ: ৩/১১৮, ১৩০, ১৭৩, ২৭৫ ২৭৬ ইবনু আবী শাইবাহ্: ৯/৪১)
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:
لاَ طِيَرَةَ، وَخَيْرُهَا الْفَأْلُ، قَالُوْا: وَمَا الْفَأْلُ يَا رَسُوْلَ اللهِ! قَالَ: الْكَلِمَةُ الصَّالِحَةُ يَسْمَعُهَا أَحَدُكُمْ
‘‘কুলক্ষণ বলতেই তা একান্ত অমূলক। তবে সুলক্ষণই হচ্ছে সর্বোত্তম। সাহাবাগণ বললেন: সুলক্ষণ বলতে কি বুঝানো হচ্ছে? তিনি বললেন: ভালো কোন শব্দ শুনে কল্যাণের আশা করা’’। (বুখারী, হাদীস ৫৭৫৪, ৫৭৫৫ মুসলিম, হাদীস ২২২৩)
যাদের মধ্যে কুলক্ষণবোধ নামক ব্যাধি বলতে কিছুই নেই বরং তাদের মধ্যে রয়েছে শুধু আল্লাহ্ তা’আলার উপর চরম নির্ভরশীলতা একমাত্র তারাই পরকালে বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
’আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:
فَقَيْلَ لِيْ: هَذِهِ أُمَّتُكَ، وَمَعَهُمْ سَبْعُوْنَ أَلْفًا يَدْخُلُوْنَ الْـجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ وَلاَ عَذَابٍ ... قَالَ: هُمُ الَّذِيْنَ لاَ يَرْقُوْنَ، وَلاَ يَسْتَرْقُوْنَ، وَلاَ يَتَطَيَّرُوْنَ، وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ
‘‘অতঃপর আমাকে বলা হলো: এরা আপনার উম্মত। তাদের সাথে রয়েছে সত্তর হাজার মানুষ যারা বিনা শাস্তি ও বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা ওরা যারা কখনো নিজেও ঝাঁড় ফুঁক করেনি এবং অন্যকে দিয়েও করায়নি। কোনভাবেই কখনো কোন কিছুকে অলক্ষুনে ভাবেনি। বরং তারা শুধুমাত্র নিজ প্রভুর উপর চরম নির্ভরশীল রয়েছে। অন্য কারোর উপর নয়’’। (বুখারী, হাদীস ৫৭৫২ মুসলিম, হাদীস ২২০)