লগইন করুন
চন্দ্রের অবস্থানক্ষেত্র অথবা অন্য কোন নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাসের শির্ক বলতে প্রতি তেরো রাত পর পর চন্দ্রের অবস্থানক্ষেত্রের পরিবর্তন বা অন্য কোন নক্ষত্রের উদয়াস্তের কারণে বৃষ্টি হয় বলে বিশ্বাস করাকে বুঝানো হয়।
আরবী ভাষায় প্রতি তেরো রাত পর পর চন্দ্রের অবস্থানক্ষেত্রের পরিবর্তন বা অন্য কোন নক্ষত্রের উদয়কে ‘‘নাউ’’’ বলা হয়।
জাহিলী যুগে আরবরা এ কথা বিশ্বাস করতো যে, প্রতি তেরো রাত পর পর চন্দ্রের অবস্থানক্ষেত্রের পরিবর্তন বা অন্য কোন নক্ষত্রের উদয়াস্তের কারণেই বৃষ্টি হয়ে থাকে। রাসূল (সা.) এ বিশ্বাসকে দৃঢ়ভাবে নস্যাৎ করেন।
আবু মালিক আশ্’আরী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:
أَرْبَعٌ فِيْ أُمَّتِيْ مِنْ أَمْرِ الْـجَاهِلِيَّةِ، لاَ يَتْرُكُوْنَهُنَّ: الْفَخْـرُ فِيْ الْأَحْسَابِ، وَالطَّعْنُ فِيْ الْأَنْسَابِ، وَالاسْتِسْقَاءُ بِالنُّجُوْمِ، وَالنِّيَاحَةُ
‘‘আমার উম্মতের মাঝে জাহিলী যুগের চারটি কাজ চালু থাকবে। তারা তা কখনোই ছাড়বে না। বংশ নিয়ে গৌরব, অন্যের বংশে আঘাত, কোন কোন নক্ষত্রের উদয়াস্তের কারণে বৃষ্টি হয় বলে বিশ্বাস এবং বিলাপ’’।
(মুসলিম, হাদীস ৯৩৪ ’হা-কিম : ১/৩৮৩ ত্বাবারানি/কাবীর, হাদীস ৩৪২৫, ৩৪২৬ বায়হাক্বী : ৪/৬৩ বাগাওয়ী, হাদীস ১৫৩৩ ইবনু আবী শাইবাহ্ : ৩/৩৯০ আহমাদ : ৫/৩৪২, ৩৪৩, ৩৪৪ ’আব্দুর রাযযাক : ৩/৬৬৮৬)
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল (সা.) কে এ হাদীসটি বলতে শুনেছি। তিনি বলেন:
أَخَافُ عَلَى أُمَّتِيْ ثَلاَثًا: اسْتِسْقَاءً بِالنُّجُوْمِ، وَحَيْفَ السُّلْطَانِ، وَتَكْذِيْبًا بِالْقَدَرِ
‘‘আমি আমার মৃত্যুর পর আমার উম্মতের উপর তিনটি বস্ত্তর আশঙ্কা করছি। রাশি-নক্ষত্রের উদয়াস্তের কারণে বৃষ্টি হয় বলে বিশ্বাস, নেতৃস্থানীয়দের যুলুম-অত্যাচার ও তাক্বদীরে (ভাগ্যে) অবিশ্বাস’’। (আহমাদ : ৫/৮৯-৯০ ইবনু আবী ’আসিম্, হাদীস ৩২৪ ত্বাবারানি/কাবীর : ২/১৮৫৩)
নবী যুগের কাফির ও মুশরিকরা এ কথায় বিশ্বাস করতো যে, একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাই বৃষ্টি দিয়ে থাকেন। তবে তারা উপরন্তু এও বিশ্বাস করতো যে, রাশি-নক্ষত্রের উদয়াস্তের কারণেই এ বৃষ্টি হয়ে থাকে। আর এটিই হচ্ছে ছোট শির্ক।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَّنْ نَّزَّلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ مِنْ بَعْدِ مَوْتِهَا لَيَقُوْلُنَّ اللهُ، قُلِ الْحَمْدُ لِلهِ، بَلْ أَكْثَرُهُمْ لاَ يَعْقِلُوْنَ »
‘‘আপনি যদি ওদেরকে জিজ্ঞাসা করেন যে, আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেছেন কে? যা কর্তৃক তিনি পৃথিবীকে সঞ্জীবিত করেছেন নির্জীবতার পর। তারা অবশ্যই বলবে: একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাই। আপনি বলুন: সুতরাং সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার জন্যই। তবে ওদের অধিকাংশই এটা বুঝে না’’। (আনকাবূত : ৬৩)
যায়েদ বিন্ খালিদ জুহানী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
صَلَّى لَنَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صَلاَةَ الصُّبْحِ بِالْـحُدَيْبِيَةِ، عَلَى إِثْرِ سَمَاءٍ كَانَتْ مِنَ اللَّيْـلَةِ، فَلَمَّا انْصَرَفَ، أَقْبَلَ عَلَى النَّاسِ فَقَالَ: هَلْ تَدْرُوْنَ مَاذَا قَالَ رَبُّكُمْ؟ قَالُوْا: اللهُ وَرَسُوْلُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: أَصْبَحَ مِنْ عِبَادِيْ مُؤْمِنٌ وَكَافِرٌ، فَأَمَّا مَنْ قَالَ: مُطِرْنَا بِفَضْلِ اللهِ وَرَحْمَتِهِ، فَذَلِكَ مُؤْمِنٌ بِيْ وَكَافِرٌ بِالْكَوْكَبِ، وَأَمَّا مَنْ قَالَ: مُطِرْنَا بِنَوْءِ كَذَا وَكَذَا، فَذَلِكَ كَافِرٌ بِيْ وَمُؤْمِنٌ بِالْكَوْكَبِ
‘‘রাসূল (সা.) আমাদেরকে নিয়ে ’হুদাইবিয়া নামক এলাকায় ফজরের নামায আদায় করলেন। ইতিপূর্বে সে রাত্রিতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছিলো। নামায শেষে রাসূল (সা.) মুসল্লিদের দিকে তাকিয়ে বললেন: তোমরা জানো কি? তোমাদের প্রভু কি বলেছেন। সাহাবারা বললেন: আল্লাহ্ ও তদীয় রাসূল এ ব্যাপারে ভালোই জানেন। রাসূল (সা.) বললেন: আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: সকাল পর্যন্ত আমার বান্দাহ্রা মু’মিন ও কাফির তথা দু’ ভাগে বিভক্ত হয়ে গেলো। যারা বললো: আল্লাহ্ তা’আলার কৃপা ও অনুগ্রহে বৃষ্টি হয়েছে তারা আমার উপর বিশ্বাস স্থাপন করলো এবং গ্রহ-নক্ষত্রের প্রতি অবিশ্বাসী হলো। আর যারা বললো: গ্রহ-নক্ষত্রের উদয়াস্তের কারণেই বৃষ্টি হয়েছে তারা আমার উপর অবিশ্বাসী হলো এবং গ্রহ-নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলো’’।
(বুখারী, হাদীস ৮৪৬, ১০৩৮, ৪১৪৭, ৭৫০৩ মুসলিম, হাদীস ৭১ আবু দাউদ, হাদীস ৩৯০৬ ইবনু হিববান/ইহসান, হাদীস ৬০৯৯ ইবনু মান্দাহ্, হাদীস ৫০৩, ৫০৪, ৫০৫, ৫০৬ বাগাওয়ী, হাদীস ১১৬৯ ত্বাবারানী/ কাবীর, হাদীস ৫১২৩, ৫১২৪, ৫১২৫, ৫১২৬ ’হুমাইদী, হাদীস ৮১৩ মা-লিক : ১/১৯২ আব্দুর রায্যাক : ১১/২১০০৩ আহমাদ : ৪/১১৭)
আর যারা এ বিশ্বাস করে যে, গ্রহ-নক্ষত্রের স্বকীয় প্রভাবেই বৃষ্টি হয়ে থাকে তারা কাফির।
বৃষ্টি একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলারই ইচ্ছায় হয়ে থাকে। এতে অন্য কারোর সামান্যটুকু ইচ্ছারও কোন প্রভাব নেই।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«أَفَرَأَيْتُمُ الْـمآءَ الَّذِيْ تَشْرَبُوْنَ، أَأَنْتُمْ أَنْزَلْتُمُوْهُ مِنَ الْـمُزْنِ أَمْ نَحْنُ الْـمُنْزِلُوْنَ »
‘‘তোমরা সর্বদা যে পানি পান করে থাকো সে সম্পর্কে কখনো চিন্তা করে দেখেছো কি? তোমরাই কি তা মেঘ হতে নামিয়ে আনো না আমিই তা বর্ষণ করে থাকি’’। (ওয়াকি’আহ্ : ৬৮, ৬৯)